এক মুঠো প্রণয় (সিজন টু)পর্ব ১৩

0
65

#এক_মুঠো_প্রণয়
#সিজন_টু
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

জ্যোতি বাড়ি এসেই দাদীর থেকে জানত পারল সবটা। মেহেরাজের সে বিয়ের প্রস্তাবের কথাটা। দাদীর থেকে আরো জানতে পারল দাদীও নাকি সেই প্রস্তাবে রাজি। শুধু তার মতামত নেওয়া বাকি! অথচ সে এতদিন কিছুই জানত না। জ্যোতি তপ্তশ্বাস ফেলল। কিয়ৎক্ষন বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই মাথায় এল সামান্তার কথা। সামান্তার সাথে যদি মেহেরাজের কিছু থেকে থাকে তাহলে তার জন্য কেন বিয়ের প্রস্তাব দিল? আশ্চর্য! তৎক্ষনাৎ সে মোবাইলটা হাতে নিয়েই কল দিল মেহেরাজকে। অপেক্ষা করল ওপাশ থেকে কল তোলার। কিন্তু কল তুলল না মেহেরাজ। বরং কিয়ৎক্ষন পর নিজেই কল করল। জ্যোতি কল তুলেই সর্বপ্রথম বলল,

“ আপনি কোথায় মেহেরাজ ভাই? গ্রাম ছেড়ে শহরের জন্য রওনা দিয়েছেন? ”

গম্ভীর স্বরে উত্তরের বিনিময়ে প্রশ্ন ছুড়ল মেহেরাজ,

“কেন?”

“দেখা করব। সময় হবে আপনার? ”

ফের গম্ভীর গলায় উত্তর এল,

“ হবে৷ ”

জ্যোতি ছোট শ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি কি আপনাদের বাড়িতে?”

“হ্যাঁ। ”

“আমি আসছি তাহলে। ”

কথাটা বলেই জ্যোতি পা চালাল। কিয়ৎক্ষন পর পৌঁছেও গেল মেহেরাজদের বাড়িতে। নিচ থেকে মেহেরাজকে দেখা গেল ছাদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাই আর অপেক্ষা করল না। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে মেহেরাজের সামনে গিয়েই দাঁড়াল৷ হাত ভাজ করে বলল,

“ দাদী বলেছে আপনি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছেন। আপনি কি সত্যিই দাদীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন মেহেরাজ ভাই? ”

মেহেরাজ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল। কথাটা শুনে একদম স্বাভাবিকভাবেই তাকাল। যেন স্বাভাবিক একটা প্রশ্নই ছিল। ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,

“ তো আমার ভূত দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।”

জ্যোতি সরু চোখে তাকাল। শুধাল,

“ তার মানে দিয়েছেন?”

মেহেরাজ ডান ভ্রু উঁচু করল। প্রশ্ন ছুড়ল,

“দিয়েছি, তো? ”

জ্যোতি স্পষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করল,

“কেন দিয়েছেন? ”

মেহেরাজ এই স্পষ্ট গলায় প্রশ্নটাকে পাত্তা দিল না। গা ছাড়া ভাব নিয়ে উত্তর দিল,

“মন চেয়েছে তাই। ”

“ মানে? ”

এবারে দাঁতে দাঁত চাপল মেহেরাজ। বিয়ের প্রস্তাব দিলে কি এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়? আশ্চর্য! বিরক্তির স্বরে বলল,

“ মানুষ বিয়ের প্রস্তাব কেন দেয়? অবশ্যই বিয়ে করার জন্যই তাই না? ”

জ্যোতি এবারে সরু চোখে তাকাল। তার কাছে যেন বোধগম্য হলো না বিষয়টা। জিজ্ঞেস করল,

“ আপনি আমায় বিয়ে করতে চাইবেনই বা কেন? ”

মেহেরাজ ফের বিরক্ত হলো।ফোন পকেটে রেখে জ্যোতির দিকে দুই পা বাড়িয়ে হঠাৎই ঝুঁকে গেল। জ্যোতির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

“ তাহলে কি করতে চাইতাম? জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে?”

জ্যোতি স্পষ্ট চাহনি, স্পষ্ট কথা হঠাৎ নড়চড় হলো যেন। দ্রুত দুই পা পিঁছিয়ে বলে উঠল,

“ আমি সেভাবে বলতে চাইনি মেহেরাজ ভাই।”

জ্যোতির কাজ দেখে মেহেরাজ চাপা হাসল এবারে। অন্যদিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলে উঠল,

“ তো এখানে কেন এসেছিস? বিয়ে করবি না, বিয়েতে রাজি নোস এসব বলতে? শোন জ্যোত তুই রাজি হলেও বিয়েটা হবে, না হলেও হবে। এসব বলে লাভ নেই। ”

জ্যোতি নাবোধক মাথা দুলাল, যার অর্থ সে এসব বলতে আসেনি। জবাব দিল,

“আমি এসব বলতে আসিনি। ”

ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“তাহলে তুই বিয়েতে রাজি এটা বলতে এসেছিলি? ”

“সামান্তা আপুর সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল তো মেহেরাজ ভাই? তাহলে হঠাৎ আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব কেন? ”

মেহেরাজ গম্ভীর চাহনিতে তাকাল। হাত ভাজ করে উত্তর দিল,

“সামান্তার সাথে আমার যে সম্পর্ক আছে তাতে তো বিয়ের মতো কোন সম্ভাবনা দেখছিনা আমি,আর তোকে বিয়ের প্রস্তাব না দেওয়ারও কোন বিষয় চোখে পড়ছে না। তো?তুই কি এই বিষয়টা জানার জন্যই লাফিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসলি? আশ্চর্য! ”

কথাটা বলেই বিরক্তে কপাল কুঁচকাল মেহেরাজ। মুহুর্তেই পা বাড়িয়ে দ্রুত পাশ কাঁটিয়ে গেল জ্যোতিকে। জ্যোতি তখনই স্থির দাঁড়িয়ে। আধো স্পষ্ট উত্তর কি দিয়ে গেল মেহেরাজ ভাই?

.

সাঈমা নামের মধ্যবয়স্কা মহিলাটির পরনে সবুজ রাঙ্গা একটা শাড়ি আর কালো রাঙ্গা শাল। দেখতে তাকে এখনো কমবয়সী রমণীদের মতোই সুন্দরী বোধ হচ্ছে৷ অবশ্য বাহ্যিক রূপের দিক দিয়ে তাকে দেখে বোঝা যায় ও না তার সাঈদের বয়সী একটা ছেলে ও আছে। নিঃসন্দেহেই বলা চলে সে অতি সুন্দরী! শুধু যে সুন্দরী তাই নয়, রূপের দিক দিয়ে সে সত্যিই অপরূপা। আর বোধহয় সে রূপের কারণেই একই নারীতেই দুইভাই আসক্ত হয়েছিল গভীর ভাবে।একজন ছিল রমণীর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, অপরজন ছিল সে বন্ধুরই বড়ভাই।ভাগ্যের খেলায় ভার্সিটিতে পড়ার সময়ই তার বিয়ে হলো সে কাছের বন্ধুরই বড়ভাইয়ের সাথে। অন্য পরিচয় বললে রায়হান সাহেব অর্থাৎ সাঈদের বাবার সাথে। কিন্তু বিয়েটা বোধহয় তার জন্য সুখকর হলো না। সেই বিয়ের পরই হুট করে উপলব্ধি করল সে তার কাছের বন্ধুকেই ভালোবেসেছিল নিজেরই অজান্তে।তারপরই শুরু হলো সাংসারিক অশান্তি।রায়হান নামের মানুষটার সাথে স্বাভাবিক ভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক, শারিরীক সম্পর্ক গড়ে উঠলেও বোধহয় মন থেকে মেনে নিতে পারল না সে রায়হান সাহেবকে। এর মাঝেই জম্ম নিল ছোট্ট সাঈদ।দেখতে বোধহয় ছেলেটা তার মতোই ফর্সা আর সুদর্শন হয়েছে। তাকে দেখলে যেমন আর পাঁচ-দশটা ছেলে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকত তো তাকিয়েই থাকত ঠিক তেমনই তার ছেলেটাকেও মেয়েরা গিলে খায় চোখ দিয়ে। ছেলেটা রূপে তার মতোই সুন্দর ভেবে সাঈমা মনে মনে অল্প হাসল। কিন্তু মনের দিক থেকে কি আধৌ তার মতো? নিশ্চয় না। এত ভালোবাসা পাওয়ার পরেও তার ছেলে নিশ্চয় তার মতো করে কাউকে ঠকাবে না?সমুদ্রসমান ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে নিশ্চয় বিন্দু সমান ভালোবাসার পেঁছনে দৌড়াবে না মনকে প্রশ্রয় দিয়ে? সাঈমা চোখ বুঝে রাখল এসব ভেবেই। কেন জানি না হঠাৎই তার মনে হচ্ছে এই বৃহৎ জীবনে সে একা! কেবলই একা!সে বহুকাল আগে রায়হানকে ঠকিয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিল রায়হান সাহেবেরই ছোটভাই, অন্যদিকে নিজেরই কাছের ছেলে বন্ধু রাশেদ সাহেবের সাথে। রায়হানের অনুপস্থিতিতে একই বাড়িতে অবাধ মেলামেশাও করেছিল রাশেদের সাথে।কতদিন ছোট অবুঝ সাঈদের সামনেই দুইজন দুইজনকে চুমু খেয়েছিল, জড়িয়ে ধরিয়েছিল। এমনকি সবচেয়ে জঘন্যতম পাপ হিসেবে প্রেমে অন্ধ হয়ে শারিরীক সম্পর্কেও জড়িয়েছিল সে৷ তখনকার ছোট সাঈদ মায়ের সাথে তার চাচার এই অবাধ মেলামেশা, জড়িয়ে ধরা,চুমু খাওয়ার অর্থ না বুঝলেও এখন তার কাছে সেসবের অর্থ স্পষ্ট। সে দেখেছে মা চলে যাওয়ার পর বাবা কতোটা কষ্টে কাঁটিয়েছে একেকটা দিন, একেকটা রাত। সে দেখেছে বাবার চোখের পানি। সে বুঝেছিল তার বাবা কতোটা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছিল এই সাঈমা নামক মহিলাটিকে। অথচ দিনশেষে তার বিনিময়ে সে নিজের ভালোবাসার রমণীর থেকে পেল কেবল প্রতারণা, ছলনা!তার বাবা বোধহয় আজও এই মহিলাটিকে ভালোবাসে। নয়তো কেন এই মহিলা দেশে ফিরলে এই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও কিছু বলে না? কেন এইটুকুও অসম্মান করে না এই মহিলাটাকে? এতোটা সম্মান কি আসলেই এই মহিলার প্রাপ্য? প্রাপ্য নয়! এইটুকু সম্মানও তার প্রাপ্য নয় বোধ হয়।

সাঈমা নামের ভদ্রমহিলা বসা ছেড়ে উঠল এবারে।কয়েকদিন পরই আবার ফিরে যেতে হবে এ দেশ ছেড়ে অন্যদেশে। এইদেশে সাঈদের জম্মদিনের আগে আগেই প্রতিবছর ফেরেন তিনি। আর যায় হোক, সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসাটা বোধহয় মিথ্যে নয়। তাই তো রায়হান সাহেবের কাছেও আকুতি মিনতি করে ছেলের সাথে সময় কাঁটানোর অনুমতি নিয়েছিল বছর কয়েক আগে। রায়হান সাহেব উনাকে সন্তানের মা হিসেবে সে অনুমতি দিতে দুইবারও ভাবেননি বোধহয়।ভদ্রমহিলা মাঝেমাঝে অনুতপ্ত হয়। মনে হয় তার আসলে রায়হান সাহেবকেই ভালোবাসাটা উচিত ছিল। এতোটা সহজ- সরল, এতোটা ভালোবাসতে পারা মানুষটাকে ঠকানো যায়? অথচ সে ঠকিয়েছে। জঘন্যতম ভাবে ঠকিয়েছে সে।

এসব ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসল। দু পা বাড়িয়ে সাঈদের রুমে গেলেন তিনি। রুমে না পেয়ে বেলকনিতে যেতেই দেখা মিলল। নরম গলায় বলে উঠলেন তিনি,

“ তোমার জন্য রান্না করেছি সাঈদ৷ খাবে না? ”

সাঈদ পিঁছু ঘুরে চাইল। মাথা চেপে চোখ বুঝল মুহুর্তেই। কেন জানি মা নামক মহিলাটিকে দেখলেই তার মাথায় আগুন জ্বলে৷ মেজাজ খারাপ হয়। চোখের সামনে ভেসে উঠে ছোটবেলায় মা-চাচার সে মাখোমাখো সম্পর্ক। সে সম্পর্ক অবশ্য উনাদের মতে ভালোবাসা, প্রেম নামে আখ্যায়িত হলেও সাঈদের চোখে তা একটা নোংরা সম্পর্ক, বিচ্ছিরি চিত্র ছাড়া কিচ্ছু নয়। তবুও সাঈদ রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাল। বলল,

“ কেন রান্না করেন? বলেছি আমি আপনাকে?আপনার রান্না করা খাবার খাওয়ার থেকে না খেয়ে মরে যাওয়া ভালো নয়? ”

ভদ্রমহিলা হাসলেন মৃদু। বললেন,

“ তুমি আমার সন্তান হও। তোমার জন্য রান্না করা যায় না?”

সাঈদের রাগ যেন আকাশ ছুঁয়ে গেল। তবুও দাঁতে দাঁত রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালিয়ে বলল,

“ না যায় না, রান্না করবেন না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি, শুধু এবং শুধুই ঘৃণা করি। বুঝতে পারছেন না? ”

ভদ্রমহিলা এবারে মৃদু হাসল৷ উত্তরে বলল,

“ তুমি আমায় ঘৃণা করো আর কবার বলবে পাগল ছেলে? জানি তো সেটা আমি৷ কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি। মায়েরা কি তাদের ছেলেমেয়েদের ভালো না বেসে পারে সাঈদ? ”

সাঈদের মুখ টানটান হলো৷ চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল যেন। রাগে হাত মুঠো করে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন উত্তর ছুড়ে দেওয়ার আগেই তার মা নামক মহিলাটির ফোনে কল আসল। ভদ্রমহিলা ফোনের স্ক্রিনে তাকাল তৎক্ষনাৎ। সাঈদ সে দৃশ্য দেখে তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। বলল,

“ আপনার প্রিয় প্রেমিক কল করেছে নাকি? আচ্ছা আপনার লজ্জ্বা করে না একবারও? কি করে এই মুখটা দেখান আপনি মিসেস সাঈমা? এক প্রেমিকের সাথে জীবন কাঁটাতে সব ছেড়ে পালিয়ে গেলেন, তারপর সে থাকা অবস্থাতেও আবার প্রাক্তন স্বামী-সন্তানের কাছেও ফিরে আসেন সন্তানস্নেহ দেখাতে। আশ্চর্য! এই সন্তানস্নেহ আগে কোথায় ছিল? আর আপনার বর্তমান স্বামীই বা কেমন মানুষ? আশ্চর্য! ”

সাঈদ কথাগুলো বলে আর একমুহুর্তও দাঁড়াল না। রুমের ভেতরে এসেই চোখের সামনে যা পেল তাই ছুড়ে মারল ফ্লোরে। রাগে দুঃখে চোখ লাল করে নিজের চুল টেনে ছেড়ার প্রচেষ্টা চালাল। কিছু্টা সময় আগেও সে মেহুর কথাই ভাবছিল। মেহুর ভালোবাসার আকুতি,চোখের দৃষ্টি! একবার মনে মনে ভেবেছিলও বোধহয় মেহুর অনুভূতিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা। কিন্তু এই মুহুর্তে এসে আবারও সেই ভাবনা বাতিল করল সে৷ সে মেয়েজাতিকে ঘৃণা করে।এসব সম্পর্কে ঘৃণা করে।শুধু এবং শুধুই ঘৃণা! যদি মেহুও ঠকিয়ে যায় তাকে? তার পরিণতিও কি তার বাবার মতোই হবে?বাবার মতোই মৃতের মতোই বাঁচতে হবে তাকে?সাঈদ চোখ বুঝল। সে প্রশ্রয় দেবে না, কিছুতেই না। দূরে পালাতে হবে তাকে, মেহুর থেকে অনেকটা দূরে। কিশোর বয়সের মতো প্রেম-ভালোবাসায় অস্থিরতা তাকে মানায় না। মেহু যখন সত্যিই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার থেকে তারও উচিত মেহুর দিকে না ঝোঁকা।একটুও না!

.

গভীর রাত। মেঘের চোখে ঘুম নামল না। অস্থিরতায় ছটফট করল প্রতিটা মুহুর্তে। যন্ত্রনা!বুকের ভেতরে জ্বলন্ত দহনের যন্ত্রনা। নিজেরই ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা জানার পর অবশ্য যন্ত্রনা না হওয়াটা অস্বাভাবিক। মেঘ আজও ঘুমাতে পারল না তাই। যন্ত্রনায় ছটফট ছটফট করতে করতেই হঠাৎ মোবাইলটা হাতে নিল। অস্থিরতা কমাতে মেহুর নাম্বারে ম্যাসেজ দিল,

“ আমি এসেছিলাম সুখ কুড়াতে।
কে জানত তুমি আমায় এতোটা দুঃখ উপহার দিবে?এমনটা জানা থাকলে তো আমি কখনোই তোমাকে আমার সাথে জড়ানোর চিন্তা করতাম না। কখনোই না৷ আমার সুখটাই কেড়ে নিলে যে তুমি। এই নিষ্ঠুর তম কাজটা করার আগে কি একবারও ভাবতে পারতে না তুমি? কেন ভাবলে না আমার কথা? ”

অপরপ্রান্তে মেহুর চোখেও তখন ঘুম নেই। হঠাৎ ম্যাসেজ টোন শুনে মোবাইলে হাতে নিয়ে দেখল সেই আননোন নাম্বারটা। হঠাৎই কেন জানি নিজের অজান্তেই মেঘের নামটাই মাথায় আসল। অস্ফুট স্বরে বলল,

“মেঘ! ”

ঠিক তখনই সে নাম্বারটায় কল করল মেহু। ওপাশে অস্থিরতায় ছটফট করা ব্যাক্তিটা কল তুলতে দেরি করল না অবশ্য। কিন্তু কল তুলেও নিশ্চুপ থাকল। অপেক্ষা করল নিজের ভালোবাসার রমণীর কণ্ঠ শোনার। ঠিক তখনই মেহু বলল,

“ আপনি মেঘ, তাই না? ”

মেঘ উত্তর দিল না। চুপচাপ শুনে উপলব্ধি করল মেহুকে৷ চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই ফের কানে আসল মেহুর কন্ঠ,

“ হ্যালো, শুনছেন আপনি? ”

মেঘ ধরে আসা গলায় উত্তর দিল,

“শুনছি।”

“আপনি মেঘ?”

“হ্যাঁ। ”

মেহু ফের প্রশ্ন করল,

“ পরিচয় গোপণ রেখে ম্যাসেজ দিতেন কেন? ”

মেঘের আহত গলায় উত্তর আসল,

“ পরিচয় দিয়ে প্রেমবাক্য শোনানোর তো অনুমতি নেই মেহু।যায় হোক, ঘুমাওনি এখনো? ”

“ না, আপনি ও তো ঘুমাননি। ”

মেঘ আবারও নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিয়ৎক্ষন নিরব থেকেই হঠাৎ আকুল স্বরে বলে উঠল,

“ মেহু? আমি পারছি না। আমি সত্যিই পারছি না। আমায় কি একটিবার সুযোগ দেওয়া যায় না মেহু? তোমার হৃদয়ে এইটুকুও ভালোবাসা কি আমার নামে হবে না? প্লিজ!আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো ভাবলেই। আমি বাঁচতে পারছি না মেহু। বাঁচতে পারছি না।যাকে নিয়ে সবটা স্বপ্ন সাঁজিয়েছিলাম তাকে ভুলা এতোটাই সহজ? আমি সত্যিই পারছি না। প্রতিটা মুহুর্তই মৃত্যুযন্ত্রনা অনুভব করছি আমি মেহু। ”

মেহু কেঁপে উঠল ওপাশের আকুল স্বর শুনে৷ লোকটা কি কাঁদছে? ছেলেমানুষ হয়েও লোকটা কাঁদছে?তার জন্যই কাঁদছে? মেহু শুকনো ঢোক গিলল এবারে। সেও তো নিরুপায়। সত্যিই নিরুপায় সে। তারপর হঠাৎই মনে পড়ল নিজেরই সেদিনকার আকুল হয়ে সাঈদের কাছে ভালোবাসা ভিক্ষে চাওয়ার কথা! স্নরণে এল সেদিনকার যন্ত্রনা, কান্না সবটাই! মেঘেরও কি একই কষ্টটাই হচ্ছে এখন? নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তারই মতো? মেহুর শ্বাস ঘন হলো ক্রমশ। ওপাশের লোকটার আকুল স্বর শোনা সত্ত্বেও কোন উত্তর না দিয়ে কাঁপা হাতে দ্রুত কল কাঁটল সে৷

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here