এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ৩৫

0
348

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৩৫

-আজ তাকে আমি বলবো তাজ,তাকে ভালোবাসি।

দোয়ার মুখে কথাগুলো শুনে আটকে রইলো তাজীন। চোখের পলক ফেলা ভুলে গেছে ও। বড়বড় চোখে দোয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু। দোয়া লজ্জানত হয়ে মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে নিচদিক তাকিয়ে। তাজীন আস্তেধীরে ওর ফোনটা নিয়ে নিরবের নাম্বার ডায়াল করলো। কল রিসিভ করেই নিরব বললো,

-তোমার ক্লাস শেষ তাজ? আমি বেরিয়েছি কিন্তু!

-হু ক্লাস শেষ। আচ্ছা নিরব? তোমার সকালের চায়ে আমি চিনি দেইনি। কেমন ছিলো ওটা?

-ভ্ ভালো ছিলো তাজ। তুমি বানাবে আর সেটা খারাপ হবে,তা কি করে সম্ভব বলো? খুবই ইয়ামি ছিলো চা টা! খুব টেস্টি ছিলো!

নিরবের উত্তর শুনে নিরবে ফোন কেটে দোয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলো তাজীন। ফোনের ওপাশ থেকে নিরব ভয় পেয়ে মিথ্যে বললো। তারমানে এটা বাস্তব। দোয়া ওর পাশেই বসে। দোয়াই বলছে,ও কাউকে ভালোবাসি বলবে। নাহ্!কোনো ভুল নেই এতে। কোনো সন্দেহ নেই আর। মিনমিনে গলায় বললো,

-সত্যি বলছিস দোয়া?

দোয়া মাথা নিচু রেখেই আঙুলে ওড়না পেচাতে লাগলো। তাজীন খুশিতে জরিয়ে ধরলো ওকে। অনেকটা সময় পর ছেড়ে দিয়ে বললো,

-আমি এক্ষুনি আরাব ভাইয়াকে কল করছি!

আরাবের নাম শুনেই চোখ তুলে তাজীনের দিকে তাকালো দোয়া। আস্তেধীরে বললো,

-কল করতে হবে না। আমি জানি তার সাথে আজ দেখা হবে আমার।

ফোন কানে নিয়েও তাজীন থেমে গেলো। কলটা কেটে কৌতুহল নিয়ে বললো,

-মানে? কোথায় দেখা হবে? ভাইয়াকে আসতে বলেছিস কোথাও?

মুচকি হেসে উঠে দাড়ালো দোয়া। কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে বললো,

-জানিনা তাজ। কোথায়,কিভাবে দেখা হবে,জানিনা। শুধু এটুকো জানি,আজ তাকে আসতেই হবে। আজ তার সাথে আমার দেখা হওয়া,অনিবার্য। নিয়তি ঠিক তাকে আজ আমার সামনে এনে দাড় করাবে।

তাজীন মুগ্ধচোখে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই তো!নিয়তি! এই নিয়তিই কতো সুন্দরভাবে জুড়ে দিয়েছে দোয়া আরাবকে। কতো সুন্দর দুজনের কাছে আসা! কতো সুন্দর,কতো পবিত্র ওদের অনুভূতি। দোয়া হাতে থাকা বইটা বুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরলো। শত আধারের ভীড়েও আরাব আলোকিত করে দিয়ে গেছে ওর চারপাশ। ওর বেরঙ জীবনে হঠাৎই রঙের বর্ষনের জন্য দায়ী সে। হঠাৎই নানা বেসামাল অনুভূতি সৃষ্টির জন্য দায়ী সে। কতোভাবে তো আটকালো নিজেকে,সামলালো নিজেকে। পারেনি।

মাঝে আরো দুটো দিন আরাবের দেখা মেলেনি। সে রাতে চিলেকোঠার ছাদে আরাবের বলা কথাগুলো একমুহুর্তও স্থির থাকতে দেয়নি দোয়াকে। অতি ক্ষুদ্র স্বরে আরাব বলে তো গিয়েছিলো,টেক ইওর টাইম। কিন্তু সে সময় ওকেই কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। আরাবের অনুপস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে ওর কাছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে,পরিনতি যাই হোক,আর নিজের অনুভূতি লুকোতে পারবে না ও। আর দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় এদের। যার কাছে আসায় শিহরন,দুরে যাওয়ায় যন্ত্রনা,যার ভালোবাসি বলায় এক অন্য দুনিয়াতেই হারিয়েছে দোয়া,যাতে কঠোরতাও লাজুকতায় পরিনত হয়,তাকে ভালোবাসে ও। হ্যাঁ,আরাবকে ভালোবাসে দোয়া। ও স্বীকার করবে,সে মানুষটার কাছে ও স্বীকার করবে আজ সবটা। তার ভালোবাসায় গা ভাসাবে। যা হবে,হবে। কোনো কিছুর পরোয়া নেই আজ দোয়ার। কোনো কিছুর না!তাজীন বললো,

-যদি আজ আরাব ভাইয়া না আসে?

-সে আসবে!

তাজীন হাসলো। গাড়ির হর্ন শুনেই রাস্তায় তাকালো ও। নিরব এসেছে। দোয়া আরেকবার চারপাশে চোখ বুলালো। গাড়ি থেকে নেমে এসে নিরব দোয়াদের সামনে দাড়ালো। দোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

-কেমন আছেন ম্যাম?

-জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

-জ্বী ভালো। আপনি এখনো যাননি? আপনার বাস তো…

নিরব কথা শেষ করার আগেই তাজীন বলে উঠলো,

-আরাব ভাইয়া কোথায়?

দোয়া মাথা নিচু করে রইলো। নিরব একপলক তাজীনের দিকে তাকিয়ে একবার দোয়ার দিকে উকি‌ দিলো। তারপর বাকা হেসে বললো,

-স্যার নতুন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে অনেক ব্যস্ত আছেন। দুদিন হলো ল্যাব থেকেই বেরোননি! হয়তো আরো কয়েকদিনও বেরোবেন না ল্যাব থেকে।

তাজীনের মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো। আর দোয়ার চেহারায় থাকা হাসিটা আরো প্রসারিত হলো। নিরব উকিঝুকি দিয়েই ওর হাসিটা পরখ করলো। আগ্রহ নিয়ে বললো,

-ম্যাম হাসছেন?

দোয়া মাথা তুললো। হাসি খানিকটা কমিয়ে বললো,

-জ্বী না। আপনারা আসুন। আমিও এগোই। ভালো থাকবেন।

খানিকটা হা হয়ে গেলো নিরবের মুখ। দোয়া তাজীনকে ইশারায় আসছি বুঝিয়ে দু পা এগোলো। তাজীন পেছন থেকে ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো,

-আরাব ভাইয়া আসবে না,তুই খুশি হয়ে চলে যাচ্ছিস?

দোয়া তাজীনের পেছনে তাকালো। ওখানে ওদের কথা শোনার জন্য নিরব কান উচিয়ে আছে একপ্রকার। মুচকি হেসে ও এগিয়ে তাজীনের কানেকানে বললো,

-যদি এতো ব্যস্ততার মাঝে আমার সাথে দেখা করতে নাই পারে,কেমন প্রেমিকপুরুষ সে? তোমার বরকে বলে দিও তাজ,তার বলা নতুন এক্সপেরিমেন্টের ব্যস্ততাও আজ তাকে আমার সাথে দেখা করা থেকে আটকাতে পারবে না।

তাজীন হেসে দিলো। নিরব হতভম্বের মতো দুজনের ভাব বোঝার চেষ্টা করছে,তবুও কিছুই বুঝলো না। গলা ঝেরে বললো,

-চলো তাজ? বাসায় যাই?

দোয়াকে বাই বলে নিরবের সাথে চলে গেলো তাজীন। ফুটপাত দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে পা বাড়ালো দোয়া। নিচদিক তাকিয়ে হাটলো অনেকক্ষন। বাস চলে গেছে আগেই। আরাব ল্যাবে ব্যস্ত। কেনো এভাবে হাটছে,নিজেও জানে না দোয়া। তবে উদ্দেশ্যহীন হয়ে হাটতে ভালো লাগছে ওর। কাধের ব্যাগটা আকড়ে ধরে নিচদিক তাকিয়ে আরেকপা হাটতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে দুপা পিছিয়ে গেলো দোয়া। মাথা তুলে তাকালো ও। মোবাইল কানে নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ফুটপাতের উপর দাড়িয়ে কথা বলছে আরাব। মুচকি হেসে ঘাড় বাকিয়ে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে রইলো ও আরাবের দিকে।

আরাব ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। ভাবখানা এমন,কারো সাথে ওর ধাক্কা লেগেছে,সেটা টেরই পায়নি ও। অন্যদিন হলে দোয়া ওর চাওনিতে লজ্জায় পরে যেতো। ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতো। আজ না আরাব তাকাচ্ছে,না দোয়ার লজ্জা করছে,নাইবা ওর চলে যেতে ইচ্ছে করছে। আরাব সামনে তাকিয়ে। আর সে সুযোগে দোয়া খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে ওকে। ব্যস্ত রাস্তার পাশের ফুটপাত,পথচারী কিছুই মনে পরছে না যেনো দোয়ার। আরাবের পরনে আকাশী রঙের শার্ট,হাতা কনুই অবদি গুটানো,হাতে বড় আকারের ঘড়ি,চুলগুলো বেশ এলোমেলো। হঠাৎই এক দমকা হাওয়ায় দোয়ার ওড়না উড়ে একদম আরাবের গায়ে গিয়ে লাগলো। বুকে এসে পড়া আকাশী ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে হুট করেই দোয়ার দিকে ফিরলো আরাব।

এসময় দোয়াকে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না আরাব। ব্যস্ততায় দেখা করতে পারে নি দু দিন। কিন্তু তাতে দোয়ার চাওনির পরিবর্তন লক্ষনীয়। আজকে সেই চিরচেনা লাজুকতা নেই। আরাব বুঝেই পায় না,ওর অনুপস্থিতে দোয়া যেনো আরো বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। ওই বা নিজেকে দুর্বল দেখাবে কেনো? সুন্দরভাবে ঘাড় বাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে ভ্রু নাচালো ও। হচকিয়ে গেলো দোয়া। আরাবের বাকা হাসি দেখে এতোক্ষনে হুশ ফিরলো ওর। বড়বড় চোখ করে ডানহাত উচিয়ে পাশে ইশারা করে বললো,

-তারা খসেছে মিস্টার আরাব!

ঠোট টিপে হেসে একপা এগোলো আরাব। দোয়া চোখ বন্ধ করে জিভ কাটলো। বিকেলের এ সময় তারা খসা ঘটনা বলার চরম মতো বোকামি আর কি হতে পারে? আবারো চোখ মেললো ও। আরাব সেভাবেই বাকা হাসছে। এবার বা হাত উচিয়ে পাশে দেখিয়ে ফট করে বলে ফেললো,

-কতোসুন্দর পদ্মপুকুর দেখুন মিস্টার আরাব!

আরাব হেসে আরো একপা এগোলো ওর দিকে। দোয়া কাচুমাচু হয়ে আরো একপা পিছোলো। পাশের পদ্মচত্বরটা দেখাতে গিয়ে পদ্মপুকুর বলে ফেলেছে ও। আরাব খানিকটা ঝুকে বললো,

-তুমি জানো আমার চারপাশে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলো এনে দিলেও সেদিকে তাকাবো না আমি। কারন তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে। তবুও উদ্ভট কথাবার্তা বলে চলেছো কেনো,জানতে পারি?

দোয়া মাথা নিচু করে রইলো। ধীর গলায় বললো,

-আপনি এখানে?

-একজনের সাথে বেরোবো। সে এখানেই দাড়াতে বলেছে। তা তুমি বাস ছেড়ে এখানে কেনো?

মাথা তুলে আরাবের দিকে তাকিয়ে রইলো দোয়া। কারন যাই হোক,দেখাটা হলোই। আবারো মাথা নামিয়ে নিয়ে বললো,

-আপনাকে কিছু বলার ছিলো।

চকচকে চোখে তাকালো আরাব। দোয়ার লাজুকতায় ওর বুঝতে বাকি নেই,দোয়া কি বলতে চায়। তখনই একটা গাড়ি এসে দাড়ালো ওদের সামনেই। দোয়া শুকনো মুখ করে তাকালো গাড়িটার দিকে। আরাব দুষ্টু হেসে বললো,

-তোমার কিছু বলার আছে? আর আমার তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে দোয়া। তবে তা এখানে,এই কোলাহলে নয়! কাল কৃষ্ণচূড়াতলায় অপেক্ষা করবো। বলবো বলে,শুনবো বলে! দেখা হচ্ছে তবে? আমার জীবনের সবচেয়ে রাঙা গোধুলীতে,যার সাথে আমার জীবন রাঙাতে চাই,তার সাথে!

এটুকো বলে থামলো আরাব। আরো এগিয়ে দোয়ার দিকে ঝুকলো অনেকটাই। দোয়া আড়চোখে আশেপাসে তাকলো। কোনোরুপ ভ্রুক্ষেপ না করে আরাব একদম ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-তোমার সাথে!

দোয়া অতি ধীরে মাথা উপরেনিচে নাড়ালো। মুচকি হেসে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলো আরাব। দোয়া নিজেও হাসলো। আরাবের বলা ওই রাঙা গোধুলীতে এক অন্যরকম পাগলামি অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ও জানে। ঠোটের কোনের লাজুক হাসিটা লুকিয়ে পা বাড়ালো বাড়ির দিকে।

কোমড়ে দুহাত দিয়ে সরু চোখে স্বস্তিকের দিকে তাকিয়ে তন্নি। স্বস্তিক ক্যামেরা হাতে ভাষাহীনভাবে চুপচাপ দাড়িয়ে। তৃষা একবার তন্নির দিকে তাকাচ্ছে,তো একবার স্বস্তিকের দিকে। বেশ ভালোমতোই দুজন একসাথে হেটে ফিরছিলো বাসস্টপ থেকে। হুট করেই দৌড় লাগিয়ে স্বস্তিকের পথ আগলে দাড়িয়েছে তন্নি। তন্নি কড়া গলায় বললো,

-আপনার ক্যামেরা চেইক করবো আমি!

-আমার পার্সোনাল জিনিস আপনাকে কেনো চেইক করতে দেবো?

-আপনার পার্সোনাল জিনিসে আমি নামক পার্সোনটার ছবি আছে তাই!

স্বস্তিক হতাশার শ্বাস ফেললো। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো এক মেয়ে লাফিয়ে কোনো এক গাছ থেকে ফুল তুলছে। দেখতে ভালো লাগছিলো বলে পেছনদিক থেকে মুখ না দেখে ছবিটা তুলে ফেলেছে ও। সেটা যে তন্নি ছিলো না তা বুঝেছিলো,আর তন্নি ওর ছবি তোলাটা দেখে নেবে,না তা বুঝেছিলো। চুপচাপ ক্যামেরাটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

-না জানিয়ে ছবি তোলার জন্য সরি। আমি জানতাম না ওটা আপনি ছিলেন।

ভ্রুকুচকে তাকালো তন্নি। বিলেতি বাবুর এতো নম্র ব্যবহার,ধারনায় ছিলো না ওর। বললো,

-তো আমি ছিলাম না ঠিকাছে,অন্য মেয়েরই বা কেনো ছবি তুলবেন আপনি?

-সবার তো আপনার মতো সমস্যা নাও থাকতে পারে!

-সব বাঙালী মেয়েরই সমস্যা হবে! এটা আপনার বিলেত না,যে যার তার,যেমন খুশি ছবি তুলে ফেলবেন আর সে কিছু মনে করবে না!

স্বস্তিক ক্যামেরাটা নাড়িয়ে বললো,

-আপনার একটাই ছবি ছিলো। বাকিসব অন্যসবার। ভেবেছিলাম আপনার হাতে ক্যামেরাটা দেবো,শুধু আপনার নিজের ছবিটা ডিলিট করবেন। কিন্তু এখন আর ভরসা পাচ্ছি না! আপনি নিজের সাথে পুরো নারীজাতির সমস্যার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন। সবগুলো ছবিই হয়তো ডিলিট করে দেবেন। বিশ্বাস নেই আপনাকে। তাই ক্যামেরাটা আপনি পাচ্ছেন না!

বড়বড় চোখে তাকালো তন্নি। এই লোককে ভদ্র ভাবাই ওর ভুল হয়েছে। তৃষার দিকে তীক্ষ্মচোখে তাকিয়ে বললো,

-তুই কিছু বলবি না?

তৃষা মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,

-স্ স্বস্তিকদা? ব্ বলছি যে…

-তোমাকে ভদ্র,সভ্য বলে মনে হচ্ছে। তুমি নাও ক্যামেরাটা।

স্বস্তিক ক্যামেরাটা তৃষার দিকে এগিয়ে দিলো। তন্নি যেইনা এগোতে যাবে,দুজনের মাঝখানে এসে দাড়ালো স্বস্তিক। তৃষা ক্যামেরাটা নিয়ে তন্নির ছবিটা বের করলো। মুখ দেখা যাচ্ছে না। ছবিটায় তন্নি লাফিয়ে ফুল পারার চেষ্টা করছে গাছ থেকে। ছবিটা এতো সুন্দর এসেছে,ও বলেই উঠলো,

-তন্নিপু! ছবিটা অনেক সুন্দর গো!

-হতেই হতো। স্বস্তিক মুখার্জী তুলেছে বলে কথা!

ভাব নিয়ে বললো স্বস্তিক। তন্নি চেচিয়ে বললো,

-ডিলিট কর তৃষা!

আতকে উঠে ছবিটা ডিলিট করে দিলো তৃষা। তন্নি ফুসতে ফুসতে বললো,

-ভালো হয়েছিলো কারন ছবিটা আমার ছিলো!

-নিজেকে এতো সুন্দরী ভাবার কারন?

-নিজেকে এতো ভালো ফটোগ্রাফার ভাবার কারন?

বুকপকেট থেকে একট কার্ড বের করে তন্নির সামনে ধরলো স্বস্তিক। কার্ডে স্বস্তিকের নাম লেখা। আর পেশার জায়গায় লেখা,ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। ওটা দেখে তন্নি দমে গেলো অনেকটাই। একটু ধীরস্থিরভাবে বললো,

-ও্ ও হতে পারেন আপনি পশুপাখির ফটোগ্রাফার,তা বলে মানুষের ছবি ভালো করে তুলতে পারেন না। আমার ছবি ভালো হওয়ার কারন,ওটা আমার ছবি!

-হ্যাঁ,মানুষের ছবি ভালো করে তুলতে না পারলেও আপনার মতো উল্টো কথা বলা জীবটার ছবি ভালো আসা আবশ্যক ছিলো।

তৃষার হাত থেকে ক্যামেরাটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো স্বস্তিক। ওর কথা শুনে রাগ নিয়ে পা ছুড়লো তন্নি। তৃষা এতোক্ষনভর ওদের অকারন ঝগড়া শুনে আহম্মকের মতো বলে উঠলো,

-এসব কি ছিলো? কেনো ছিলো?

টুইঙ্কেলদের বাসায় পৌছাতেই দোয়াকে জরিয়ে ধরলো টুইঙ্কেল। খুশি আজ উপচে পরছে ওর চোখেমুখে। দোয়া ওর গাল টিপে দিয়ে বললো,

-আজ টুইঙ্কেল এতো হ্যাপি কেনো?

-আজ আমার রেজাল্ট দিয়েছে উইশমাম! আমি তো টপ করেছি ক্লাসে!

অসম্ভব খুশিতে দোয়া জরিয়ে ধরলো টুইঙ্কেলকে। চোখেমুখে চুমো দিয়ে ওর দুগাল ধরে বললো,

-আমি জানতাম তো! আমার লিটল স্টার টপ করবে ক্লাসে! এতো কষ্ট করেছে কি না সে!

-উহুম। কষ্ট তো করেছে টুইঙ্কেলের উইশমাম! তাইতো টুইঙ্কেল এতো ভালো রেজাল্ট করেছে!

তৌফিকা মিষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসলো। দোয়াকে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে বললো,

-তুমি জানো দোয়া,তুমি আসার পর সবকিছু অনেক সুন্দর ভাবে বদলাচ্ছে।

দোয়া মৃদ্যু হেসে ওর হাতের উপর হাত রেখে বললো,

-এভাবে কেনো বলছেন আপু? আপনারাও তো কম কষ্ট করেন নি!

-তবুও তোমার ভুমিকা অস্বীকার করবো কি করে?

দোয়াকে মিষ্টি নিজহাতে খাইয়ে‌ দিলো তৌফিকা। অল্প কিছুক্ষন টুইঙ্কেলের সাথে কথাবার্তা বলে উঠে আসছিলো ও। আসার পথে ওর‌ হাতে সুন্দর একটা খাম গুজে দিলো ও। দোয়া বুঝলো ওতে ওর বেতন। সুন্দরমতো হেসে‌ বেরিয়ে আসলো ও।
বাসার নিচে নেমে পাশের দোকানে থাকা চকলেটের বক্সগুলোতে চোখ গেলো দোয়ার। টুইঙ্কেলের এতো ভালো রেজাল্ট,ওর উচিত ওকে কিছু উপহার দেওয়া। ব্যাগ থেকে তৌফিকার দেওয়া বেতনের খামটা বের করলো ও। খাম খুলতেই কিছু বাড়তি টাকা দেখলো ওতে দোয়া। মেয়ের ভালো রেজাল্টের জন্য খুশি হয়ে হয়তো তৌফিকা সেগুলো দিয়েছে ওকে। কিন্তু তা নেওয়াটা সমাচীন মনে হলো না ওর। গুটিগুটি পায়ে আবারো সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো টাকাটা ফেরত দেবে বলে। কয়েকসিড়ি উঠতেই শুনতে পেলো,

-তুমি জানো না তৌফিকা! তোমার ভাই আরাব এই দোয়া নামের মেয়েটার জন্য ঠিক কি ধরনের পাগলামি শুরু করেছে! টুইঙ্কেলকে পড়ানোর জন্য ওকে আনা,সবসময় সবরকমভাবে ওকে হেল্প করা অবদি ঠিক ছিলো। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি আরাব! তোমার ভাই ওর জন্য,শুধুমাত্র ওর জন্য ভার্সিটিতে তোমার বাবাকে দিয়ে স্কলারশিপ এমনকি বাস অবদি গ্রান্ট করিয়েছে! একজনের হাতে বেইস ঢেলে তার হাত ঝলসে দিয়েছে! একজনের এগেইনিস্টে হাত ধুয়ে পরে আছে! তাকে পুলিশে দেবে বলে! এই মেয়েটাকে নিয়ে উন্মাদ হয়ে গেছে তোমার ভাই! নিজের ‌মা,বাবা,বোন,বোনজামাইয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করছে এই রেপড্ মেয়েটার জন্য!

দোয়ার পা থেমে গেলো। সিড়ি আকড়ে ধরে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো ও। স্টপ ইট মুফতাহির!- বলে দরজা ধরাম শব্দে লাগিয়ে দিলো তৌফিকা। টপটপ করে পানি পরতে লাগলো দোয়ার চোখ দিয়ে। আস্তেআস্তে অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো ওর চারপাশ।

#চলবে…

[ রিচেইক হয়নি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here