এক কাপ চায়ে পর্ব ১৩

0
157

#এক_কাপ_চায়ে : ১৩
লেখনীতে : নাহিদা সানজিদ

এহসান সাহেবের কেসটার গতি হচ্ছে। হুজাইফা ছুটি কাটিয়ে বেশ ঝরঝরে হয়ে কাজে ধরা দিলো। এহসান সাহেবের সম্পত্তি বিষয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখলো, সম্পত্তি কোনো এক পরীর নামে। মাহবুবের আন্দাজে ঢিল নিশানা বরাবর লেগেছে। ও আমোদিত গলায় বলল,
— “স্যার, সেই লেভেলের সেন্স আপনার দেখুন। পরী বেরিয়ে এসেছে। কেস সলভড।”

মাহবুব কাগজপত্রগুলো দেখলো।
— “কেস সলভড কীভাবে?”

হুজাইফা চশমা চোখে দিলো, যদিও তার চোখে সমস্যা নেই। তবে এতে খুব বুদ্ধিমান দেখায়। মাহবুবের মতো গুরুগম্ভীর ভাব ধরে বলল,
— “ওই বাবলাটাকে ধরে ফেলুন স্যার। আমাদের এখানে বোবা এক রিকশাওয়ালা ছিলো। শালা, সবসময় ভাড়া বেশি চাইতো, প্রথমে তো আর বোবা বলে ভাড়া ঠিক করা যেতো না। পরে গাঞ্জা, সিগারেট টানতো। এদের যতটা অসহায় দেখা, ততটা অসহায় হয় না।”

মইনুলও একই কথা বলেছিলো সেদিন। মালিকে সুবিধার দেখাচ্ছিলো না। এরমধ্যে মইনুলের ফোন এলো,
— “মাহবুব, ওই বাবুলকে তো পাওয়া যাচ্ছে না।”
— “এটাই হওয়ার ছিলো।”
— “কাকে দয়া দেখাবো এবার বল?”

হুজাইফা তালি বাজালো। নিজের বুদ্ধি বাড়ছে বলে ধারণা করছে সে। পুলিশ বাবুলকে খোঁজার জন্য ফোর্স পাঠিয়েছে। মামলাটা আপাতত খালাস। রাবেয়া কল করলেন। মাহবুব নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। মনে মনে চাইলো, যা আশঙ্কা করছে তা না হোক।
.
.
পুষ্প অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে আজেবাজে কথা বলছে। নবীন ফোন কান থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে বলল,
— “পুষ্প, এসব বাজে কথা কোথায় শিখেছো? কোথায় আছো তুমি?”

পুষ্প শুনলো বলে মনে হলো না। দক্ষ অভিনেত্রীর মতো অভিনয় চালিয়ে গেলো সে। পুষ্প হেডফোন কানে লাগিয়ে একের পর এক স্ক্রিনশট নিজের ফোনে পাঠাতে লাগলো।

আজকাল প্রমাণ বলতে স্ক্রিনশটই ভরসা। সামনে বসে থাকা সীমা ভাবী মিটমিট করে হাসছেন। দেখে মনে হচ্ছে বেশ উপভোগ করছেন তিনি। পুষ্পর অনুশোচনা হতে লাগলো। নবীন নিশ্চয় ওকে খারাপ ভাববে!

আইডির পাসওয়ার্ড বদলে ক্ষান্ত হলো সে। সব প্রমাণ মুছে ফেলে নিশ্চিন্ত হলো। সীমা জগতের লীলাখেলায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারলেও ভার্চুয়াল জগত তেমন আয়ত্ব করতে পারেননি। গ্রামে শিক্ষিতরা ছাড়া এসব ব্যাপারে তেমন কেউই এখনও দক্ষ না। নবীনের সঙ্গে সেই দূর্ঘটনাকালীন সময়ে কেউই প্রমান চায়নি। নারী হওয়ায় চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেওয়া হয়।

নিরু চতুরতার সঙ্গে সারারাত গল্প চালিয়ে গেলো। পুষ্প রেকর্ডার অন করে নবীনকে ম্যাসেজ দিতে লাগলো। কিছুটা ভান করার চেষ্টা করে বলল,
— “ভাবী, ধরা খেয়ে গেলে কী করব?”
— “যে দেখবে তাকে ফাঁসিয়ে দেবে।”
— “কীভাবে, তুমি করেছো কখনও এমন?”

সীমা থমকে গেল। নিজের আশঙ্কাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বলে ফেললো,
— “মেয়ে হওয়ার ফায়দা তুলে বিশ্বাস করিয়ে নেবে। ভালো লোকের জন্য দুনিয়া না। ওরা জান্নাতের বাসিন্দা, হা হা।”
উপহাসের সুর।

পুষ্প মনে মনে বলল, “মহিলারা নাকি পনেরো মিনিটের বেশি কথা লুকাতে পারে না। তুমি তো তাও বেশ অনেকদিন লুকাতে পেরেছো। ঠিক বলেছো, দুষ্ট লোকেরাও জাহান্নামের বাসিন্দা। দুনিয়াটাই তাদের জাহান্নাম।”
.
.
শুভ অসহায় গলায় বলল,
— “ভাইয়া, তুই নিজে আমাকে বিয়ে করিয়েছিলি। এখন বলছিস বৃষ্টি নামে কেউ নেই!”
ওর চোখমুখ দেখে মায়া লেগে গেলো সবার। আড়াল থেকে শুনেই তনুর চোখ ছলছল করে উঠলো। ও আগেই বলেছিলো ছেলেটার মনের খেয়াল রাখতে। মাহবুব গুরুত্ব দেয়নি। ডাক্তারের হাতে যেমন নিজের ঘরের লোক সুস্থ হতে চায় না — ঠিক তেমন।

মাহবুবের মুখটা শুকনো দেখালো। মোলায়েম স্বরে বলল,
— “শুভ, তোর বিয়ে কখন হয়েছিলো?”
— “পুষ্পর যেদিন বিয়ে ছিলো, সেদিন সকালে।”
— “একদিনে দুটো বিয়ে কীভাবে হয় শুভ? সেদিন বৃষ্টি ছিলো আরো। অনেকটা অসম্ভব।”
— “আমার সঙ্গে বাবাও গিয়েছিল, ভাইয়া। জিজ্ঞেস কর বাবাকে। আমরা বউ নিয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম।”

মাহবুব অস্বীকার করে বলল, “বাবা সেদিন তোর সঙ্গে কোথাও যায়নি। চাচাকে দাওয়াত দিতে মুরাদপুর গিয়েছিলো। পুষ্পর বিয়ে সন্ধ্যায় ছিলো।”

শুভ মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
— “পুষ্প আসুক। ও তোমাদেরকে বোঝাবে।”
মাহবুব হাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
— “আচ্ছা মানলাম তোর বউ। তোর বউটা কোথায়? বৃষ্টি কই? আমি নাহয় দেখব না। তোর মা ভাবীকে দেখা।”

শুভ ঢোক গিলে বলল, “ও বাপের বাড়ি গিয়েছে হয়ত।”
— “ফোন কর ওকে। আবার এটা বলিস না, ওর ফোন ব্যবহার করে না।”

শুভ চিৎকার করে উঠলো। টেবিলের কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে কয়েক টুকরো হলো।
— “বললাম না পুষ্প আসুক। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, কোনো জেরা শুনতে চাই না।”

দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো ওর চিৎকার। মাহবুব এই প্রথম ওকে রাগ করতে দেখলো। শুভ রাগ করতে পারে, কেউ কল্পনায়ও ভাবে না। শুভর আশেপাশের মানুষরা ধরেই নিয়েছিলো সে কষ্ট নেগেটিভ মানুষ। যে ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে, তারও অপমানবোধ থাকতে পারে তা অনেকেই জানতো না।

শুভর বহুকষ্টে গড়ে তোলা স্বপ্নের স্তূপ মুহূর্তেই ধ্বসে গেলো। আসলেই আশেপাশে কোনো বৃষ্টি নেই। স্বল্প রুজিরোজগার করা পুরুষদের ফড়িংয়ের মতো নেচে বেড়ানো কোনো বৃষ্টি থাকে না।

চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here