একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি পর্ব ৪

0
91

একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -৪

অমিত লালমাটিয়ার ভেতরে গাড়ি থামিয়ে রিয়াজুলকে বলল, তোমার শার্টটা খোলো।

জি স্যার? রিয়াজুল বুঝতে পারল না।

অমিত বলল, তোমার শার্টটা খুলে দাও আমাকে। আর ব্যাগে একটা নতুন টিশার্ট আছে, ওইটা পরে নাও।

রিয়াজুল শার্ট খুলে দিতে দিতে বলল৷ সমস্যা নাই স্যার আমারও এক্সট্রা আছে গাড়িতে। আপনার সাথে কই না কই থাকা লাগে, আমার ব্যাগ গুছানো থাকে সব সময়।

রিয়াজুল মুচকি মুচকি হাসছে, তবে হাসির মত তেমন কোনো বিষয় নেই, আজকেও অমিত পরিচয় দিবে না। এমনি কিছুক্ষণ কথা বলে চলে আসবে। এবং আজকেই শেষ, এরপরে আর একবারো নওরিনকে ফোন করবে না।

অমিত গ্লাসে চুলটা এলোমেলো করে হাতের ঘড়িটা খুলে রাখল। এই ঘড়ি দেখেই বোঝা যায় দামী, ব্রেসলেটটাও ব্যাংকক থেকে নিয়েছিল, এটাও খুলে রেখে দিলো।

রিয়াজুল বলল, স্যার প্যান্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে এটাও ব্রান্ডেড মাল।

প্যান্টের নিচে হাফপ্যান্ট আছে, থাক, এটা খোলা লাগবে না, অন্ধকারে প্যান্ট বোঝা যাবে না।

গাড়ি থেকে বের হয়ে অমিত জিজ্ঞেস করল৷ আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে?

রিয়াজুল বলল, স্যার পারফেক্ট! সুদর্শন, হ্যান্ডসাম।

অমিত ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, এই মুহুর্তে চাপা মারার দরকার ছিল না।

বলে হেঁটে চলে গেল।

নওরিনকে ফোন করল মাঠের কাছে গিয়ে। নওরিন ফোন পিক করতে পারল না। দশ মিনিট অপেক্ষা করতে করতে অমিত বিরক্ত হয়ে গেল, সময় মোটে কাটছেই না, অসহ্য!

নওরিন ফোন করল বেশ কিছুক্ষণ পরে।

আপনি চলে এসেছেন?

হ্যা, আপনি কই?

রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, বাসে আমি। আসছি!

অমিত মনে করার চেষ্টা করল, বাসে উঠেছে বেশ কয়েক বছর আগে, অমিতের স্ট্রাগল পিরিয়ড কম ছিল, বাড়ির অবস্থাও বেশ ভালো থাকায় তেমন কষ্ট করতে হয় নি।

নওরিন এলো আরো পনের মিনিট পরে। অমিত বিরক্ত হয়ে গেল অপেক্ষা করতে করতে, কেমন কথা, হালের ক্রেজ, জাতীয় ক্রাশ অমিত রাজ একটা মেয়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে!

তবে নওরিন এসে অমিতকে দেখে হাসল। নওরিনের হাসিমুখ দেখে অমিতের এতক্ষণের বিরক্তি চলে গেল।
সেও হাসার চেষ্টা করল।

নওরিন কাছে এসে বলল, অনেকক্ষণ এসেছেন?

হুম, অনেকক্ষণ৷

সরি, জ্যামের জন্য যদিও আমি দায়ী না।

কি খাবেন বলুন?

কিছুই না।

কিছুই না! চলুন কোনো ফাস্টফুডে বসি?

কেন, মাঠে বসতে সমস্যা আছে?

না। আসলে আমারও খিদে পেয়েছে, সারাদিন ফ্লোরে ছিলাম!

কোন ফ্লোরে?

অমিত ইতস্তত করে বলল, না তেমন কিছু না। প্রচুর চাপে ছিলাম সারাদিন।

আচ্ছা। চলুন আপনার সাথে বসি তাহলে, আমি কিছু খাব না এখন।

কি শাড়ি কিনলেন?

সুতি শাড়ি, ভাইভা আছে সেভ দ্য ন্যাচারে।

কবে?

বৃহস্পতিবার।

মাঠ অন্ধকার, অমিত টেকনিকালি অন্ধকারে দাঁড়িয়েছে, নওরিনের মুখে এসে আলো পড়েছে, এত ছিমছাম আর মিষ্টি লাগছে, ক্লান্ত কিন্তু বিষণ্ণ সুন্দর। অমিত চোখ ফেরাতে পারছে না।

অমিত আপনার বেশি খিদে পেয়েছে?

হ্যা কেন?

ডিম সিদ্ধ খাবেন? ওই কোনে ডিম সিদ্ধ পাওয়া যায়।

ডিম!!

হ্যা, মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন?

আপনি খেতে চান?

এত কষ্ট করে দেখা করতে এসে আমরা কেবল খাবার নিয়ে কথা বলছি, বিষয়টা হাস্যকর না?

অমিত বলল, হ্যা কিছুটা হাস্যকর তো বটেই।
আপনি পড়াশোনা শেষ করেছেন?

হ্যা, এই তো মাস্টার্স শেষ হলো, নওরিন কলেজের নাম বলল। এখন জবের চেষ্টা করছি আমি৷

আর বিয়ের কথা বলেছিলেন?

বাবা চাচ্ছেন বিয়ে দিতে।

ভালো। চলুন ডিম সিদ্ধ খাই।

নওরিন বলল, চলুন!

অমিত নওরিনকে নিয়ে ডিমওয়ালার কাছে এলো।
নওরিন দুটো ডিম নিয়ে এসে অমিতকে দিলো।

জানেন৷ আমার মনে হয় এই শহরে মানুষ ডিম বেচেও সংসার চালায়, কি অদ্ভুত! তাই না?

হ্যা, খুবই অদ্ভুত।

আমার জব না হওয়া অবধি যে কোনো কাজ দেখেই মনে হচ্ছে, এইটাও তো করা যায়!

আপনি ডিম বেচতে চান?

নওরিন হেসে ফেলল। বাদামও বেচতে মন চাচ্ছে। সত্যি। সেদিন জানালা দিয়ে দেখলাম বাদামওয়ালা যাচ্ছে, তখন ভাবলাম, বাদাম বেচেও তো কিছু টাকা পায় এরা!

আপনার কি খুব প্রবলেম হচ্ছে? আর্থিক?

আমার জব হওয়া প্রয়োজন, দুটো টিউশনি করি, বাসা থেকেও টাকা আনি। তারপরেও পায়ের নিচের জমিন শক্ত হচ্ছে না৷

বিয়ে করলে তো সব সমস্যা সমাধান।

একজনের কাঁধে বোঝা হওয়াটা আমার কাছে সমাধান না। আমি নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে চাই।

ডিম শেষ হওয়ার পরে ঝুরি পেঁয়াজু খাওয়া হলো। আটটা বেজে গেছে, অমিতের যেতে হবে।

নওরিন, আজ যেতে হবে।

হ্যা চলুন।

কোনো ভনিতা না করেই নওরিন চলে যেতে চাইল।

আপনাকে ড্রপ করে দেই, কোথায় থাকেন আপনি?

এই তো কাছেই, না আপনাকে ড্রপ করতে হবে না৷ আমি চলে যেতে পারব।

ওকে। তাহলে আবার দেখা হবে আমাদের?

নওরিন হেসে বলল, আপনার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা করা ঠিক হয় নি। তৃতীয় বার দেখা করাটা মনে হয় উচিত হবে না। সেভ দ্য ন্যাচারে আমি জিজ্ঞেস করব, কেন একজন প্রার্থীর তথ্য বাইরে ফাঁস করা হলো।
আমার কোনো বিপদ হতে পারত! একেবারে সম্ভবনা নেই, সেটাও বলা যাচ্ছে না।

অমিত বলল, ঠিক আছে, আপনার সাথে আর দেখা করতে চাইব না। ডিমের জন্য ধন্যবাদ।

নওরিন হেসে চলে গেল। অমিত গেল অমিতের লাইভ শো তে।

নওরিন আজও অমিতকে চিনতে পারল না।

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here