উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব ১১

0
595

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১১
__________________

আজাদ চৌধুরী মেয়ের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। কিচেনে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে নওরিন। পায়ে ভীষণ চোট লেগেছে। নওরিনের দু চোখ জলে ল্যাপ্টানো। মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছে শারমিন আহমেদের দিকে। ইরতিজাও লিভিং রুমের এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নওরিন যখন মায়ের দিকে তাকায় তখন নওরিনের চোখে স্পষ্ট ক্রোধ দেখতে পায় সে। নওরিনের ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টি দেখে ইরতিজার কষ্ট অনুভব হয়। কেন তার মাকে এমন ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হবে?

নওরিনের রাগ ক্রমশ চড়া হয়ে উঠছে। সে শারমিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে শক্ত কণ্ঠে বাবাকে বললো,
“ওনার জন্য আজ আমি আঘাত পেলাম আব্বু। ওনাকে বলে দাও, যদি উনি কাজ করেন তাহলে যেন সেটা সাবধানে করেন। না হলে ওনার কাজ করার কোনো দরকার নেই।”

আজাদ চৌধুরী শীতল কণ্ঠে মেয়েকে শুধালেন,
“নিশ্চুপ থাকো নওরিন।”

“কেন নিশ্চুপ থাকবো? কিচেনে অয়েল পড়ে থাকলে সেটা সে পরিষ্কার করবে না? কেন করলো না? কেন ভুলে গেল সেটা করতে?”

ব্যান্ডেজ কমপ্লিট। আজাদ চৌধুরী মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সামান্য অয়েলে পা পিছলে পড়ে গিয়েছো, এটা নিয়ে কি সিনক্রিয়েট করা উচিত হবে?”

শারমিন আহমেদের কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
“ভুল হয়েছে আমার, এরপর থেকে অবশ্যই সাবধান থাকবো আমি।”

মায়ের এমন নীচু কথা শুনে হৃদয়ে কঠিন বৃহৎ পাথরের চাপ অনুভব করলো ইরতিজা। এটা সহ্য যোগ্য হলো না তার কাছে। সে এগিয়ে এসে বোনকে বললো,
“এমন ভুল তো যে কারোরই হতে পারে। তুমিও তো করতে পারতে এমন ভুল। এটা নিয়ে মাকে এমন করে কথা বলা কি উচিত হচ্ছে তোমার?”

নওরিন অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
“তুমি চুপ করো।”

“হ্যাঁ, আমার তো চুপ করে যেতেই হবে। কথা বলার অধিকার তো আমার নেই।”

মায়ের দিকে চাইলো ইরতিজা। মা তার দিকেই তাকানো। কঠিন মুখে তাকিয়ে আছে। কঠিন চোখ জোড়ার দৃষ্টি বোধগম্য হচ্ছে তার। মা তাকে চোখ দিয়ে সাবধান করছে,
‘চুপ করো। একটা কথাও বলো না আর।’

ইরতিজার কান্না পেল। হৃদয় ধ্বস হচ্ছে। চোখে অশ্রু আটক রেখে সে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। দু চোখে বারিধারা ঝরছে। এত তিক্ত, বিদঘুটে কষ্টটা কেন মাঝে মাঝে জেগে ওঠে বক্ষস্থলে? এটা তো একটা পরিবার। বাবা যেমন তার বাবা, মা যেমন মা, তেমনি তো তা নওরিনেরও। তবুও নওরিন এমন কেন করে?

বাসা থেকে বের হয়েই কান্নারত মেয়েটাকে দেখতে পেল রিশন। অবাকের ছোঁয়া লাগলো অন্তঃকরণে। কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কাঁদছো কেন টিজা?”

ইরতিজা কান্না আড়াল করলো না। জলের ধারা যেমনি নামছিল তেমনিই নামতে থাকলো। বললো,
“আমি এমনিই কাঁদছি।”

“বিনা কারণে কেউ কাঁদে?”

“পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা বিনা কারণেই কাঁদে। আমিও ওরকম।”
ইরতিজার হঠাৎ ক্যানিয়লের বলা ‘ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে’ কথাটা মনে পড়লো। বলে ফেললো,
“আমি ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে রিশন! বুঝলে? আমি ছিঁচকাঁদুনে!”

আর দাঁড়ালো না ইরতিজা, যেদিকে চোখ গেল সেদিকেই পা বাড়িয়ে দিলো সে।
রিশন অবুঝ মন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু বললো না। ব্যাপারটা আসলে কী সেটা যাচাইয়ের জন্য ইরতিজাদের বাসায় প্রবেশ করলো ও।
আজাদ চৌধুরী অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তৈরিই ছিল সে, নওরিন পায়ে চোট পাওয়ায় একটু সময় নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। শার্টের উপর কালো কোটটা চাপিয়ে নিলো সে।
নওরিন সোফায় বসে আছে। পায়ে ব্যান্ডেজ।

“পায়ে কী হয়েছে তোমার?” নওরিনকে প্রশ্ন করলো রিশন।

আজাদ চৌধুরী উত্তর দিলেন,
“পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।”

“কীভাবে?”

“কাজ না করতে জানা লোকজন ঘরের ভিতর থাকলে এটা সহজেই ঘটা সম্ভব।” গমগম করে উত্তর দিলো নওরিন।

কথাটা শুনতে অসহ্য লাগলো আজাদ চৌধুরীর। সে মেয়ের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
“এসো, তোমাকে রুমে নিয়ে যাই।”

নওরিন কোনো কথা না বলে বাবার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পায়ের উপর চাপ পড়তেই যন্ত্রণা করে উঠলো। আজাদ চৌধুরী রুমে নিয়ে গেল ওকে। শারমিনও অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি। তৈরি হওয়ার জন্য রুমে গিয়েছিলেন। লিভিং রুমে এসে রিশনকে দেখে হেসে বললেন,
“ব্রেকফাস্ট করেছো?”

রিশন ঠোঁটে বাধ্য হাসি ফুঁটিয়ে মাথা দোলালো। ভীষণ একটা গরমিল অনুভব করছে সে। এ বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। তার মনে দুটো প্রশ্ন ঘুরছে। ইরতিজা কাঁদলো কেন ওরকম? আর নওরিন ওই সময় কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছিল?

_____________________

সামুরা ছেলেটাকে ভালোই লাগে ইরতিজার। ছেলেটার সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে তিনদিন আগে। ক্লাসে সাক্ষাৎ হয়েছিল। ছেলেটা মিশুক, সরল প্রকৃতির। এই মুহূর্তে সে যেখানে আছে এটা সামুরার বাসা। বিকেলে একলা হাঁটতে বের হয়েছিল। রাস্তায় সামুরার সাথে দেখা হওয়ায় সামুরা এক প্রকার জোর করে তাকে বাসায় নিয়ে এলো। তাদের এরিয়া থেকে সামুরাদের বাসা এত কাছে জানতো না।
সে আছে এখন লিভিং রুমে। বিশাল বড়ো লিভিং রুম। সব জায়গায় চাকচিক্য আর আভিজাত্যের ছোঁয়া। এ যেন এক রাজপ্রাসাদ। দামি দামি সব আসবাবপত্র চোখে পড়ছে। ইলেকট্রিক লাইট জ্বলছে অনেকগুলো। ইরতিজা কথার ফাঁকে ফাঁকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে সব কিছু দেখছে। সামুরা যে ধনী পরিবারের এটা আগেই জেনেছিল সে। ইরতিজার এখানে বসে থাকতে একটু অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। এত চাকচিক্য প্রাচুর্যের মাঝে নিজেকে হঠাৎই বেমানান মনে হচ্ছে তার।
এ বাসায় আসার পর এ পর্যন্ত মোট আট জন মানুষের দর্শন পেয়েছে। এর মাঝে তিন জন ছিল মধ্য বয়স্ক মহিলা। দুই জন মাথায় হিজাব পরিহিত ছিল। হ্যাঁ, সামুরা মুসলিম পরিবারের। রেডমন্ড আসার পর তার দুইজন বিদেশি মুসলিমের সাথে দেখা হয়েছে। ক্যানিয়ল এবং সামুরা!
সামুরার বাবাকেও দেখেছে। তবে ইরতিজা বুঝতে পারছে না ওই তিনজন মহিলা কারা? একজন না হয় সামুরার মা, বাকি দুজন? কী হয় সামুরার? সামুরাকে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও একটা বাধা উপলব্ধি করেছে সে। বাকি যে চারজনকে দেখেছে তারা ছিল যুবক-যুবতী। মূলত সামুরার ভাই-বোন হবে। কিন্তু চারটা ভাই-বোন? অবশ্য চারটা ভাই-বোন তো থাকতেই পারে। সামুরার ঠিক কয়জন ভাই-বোন আছে সে জানে না।
যারা এই লিভিং রুম থেকে আসা যাওয়া করছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না ইরতিজার উপর। শুধু তিনজনের দৃষ্টি পড়েছিল। একজন নাইলা সালেম, দ্বিতীয়জন উইন্টার, তৃতীয়জন সোফিয়া রামি। নাইলা সালেমকে অহংকারী ধরনের মনে হয়েছে ইরতিজার। মহিলার কথাতেই সে অহংকারের ছোঁয়া অনুভব করেছে। ইরতিজাকে দেখেই সে চোখ বাঁকিয়ে বলেছিল,
“এটা কে সামুরা?”

সামুরা সরল হেসে উত্তর দেয়,
“ও আমার ফ্রেন্ড, টিজা।”

উত্তরটা শুনেই সে মুখ গোঁজ করে বলে,
“বাসায় যাকে-তাকে নিয়ে আসবে না এটা তোমাকে বলা হয়েছিল কি না? কেন নিয়ে এসেছো এই মেয়েকে? তোমার ড্যাড এটা দেখলে নিশ্চয়ই খুশি হবে না।”

এটুকু বলে দাপটের সাথে হেঁটে অভ্যন্তরে চলে যায় নাইলা সালেম। ইরতিজা তখনই বুঝে গিয়েছিল এই মহিলা অহংকারী। আচ্ছা, বড়োলোক হলেই কি মানুষ অহংকারী হয়? না, হয় না তো। সামুরা তো অহংকারী নয়। সোফিয়া নামের মহিলাটাও অহংকারের বিপরীত। সে তো অহংকার দেখালো না। সে তো সুন্দর ভাবে কথা বলে গেল। তবে উইন্টার মেয়েটার মাঝে অহংকারের ধূসর একটা পর্দা জড়িয়ে আছে, সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামাকালীন সোফায় চোখ পড়তেই ঝটকা খেলো ক্যানিয়ল। চোখের পাতা বন্ধ করে আবার খুললো। হ্যাঁ, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। কফির মগ হাতে যে মেয়েটা তার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে এটা সেই ছিঁচকাঁদুনে মেয়েটা! আসলেই কি তাই? না কি ভ্রম হচ্ছে? না ভ্রম-ট্রম কিছু নয়, এটা বাস্তব। সিঁড়ির ধাপ দ্রুত গতিতে ভেঙে নিচে নামলো ক্যানিয়ল। ইরতিজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“ওহ মাই গড! তুমি আমাকে ফলো করতে করতে এখান অবধি চলে এসেছো? প্রথমে ইউনিভার্সিটি, এখন ইউনিভার্সিটি থেকে সোজা হোম। ইউ আর সো ডেঞ্জারাস!”
ক্যানিয়লের খেয়াল হলো সামুরা ইরতিজার পাশে বসে আছে। সে সামুরার হাত ধরে ইরতিজার পাশ থেকে উঠিয়ে বললো,
“তুমি কোন আক্কেলে এই মেয়ের পাশে বসেছো? তুমি জানো, সে খুব ভয়ানক? এর কাছ থেকে যত দূরে থাকবে ততই মঙ্গল। আমাকে ফলো করতে করতে সে বাড়িতে এসে গেছে!”

ইরতিজা হা হয়ে দেখছে। এটা কি সত্যিই ক্যানিয়ল? কিন্তু ক্যানিয়ল এখানে কীভাবে থাকতে পারে? এটা তো সামুরার বাসা। সামুরার বাসায় ক্যানিয়ল…মানে ক্যানিয়ল কীভাবে… ইরতিজার চিন্তাধারা সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ক্যানিয়লও কি সামুরার ভাই হয় না কি? ইরতিজার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। এই পাজি ছেলেটার ভাই সামুরা?

ভাইয়ের কোথাও ভুল হচ্ছে বুঝতে পেরে সামুরা বললো,
“ও তোমাকে ফলো করে কীভাবে বাড়িতে আসবে? ও তো নিজ ইচ্ছায় আমাদের বাড়িতে আসেনি। আমি ওকে নিয়ে এসেছি।”

ক্যানিয়ল সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুমি?”

“হ্যাঁ, ও আমার ফ্রেন্ড। ভার্সিটিতে আমাদের মিট হয়েছিল।”

ক্যানিয়ল অবাক হয়ে তাকালো ইরতিজার দিকে। ইরতিজার মাঝে দাপট ভাব কাজ করছে। সামুরা দিয়েছে নিজের ভাইয়ের মুখ বন্ধ করে।

“তুমি এসো আমার সাথে।”
ক্যানিয়ল সামুরার হাত ধরে টেনে আনলো ওকে লিভিংরুমের এক কর্ণারে। ইরতিজার থেকে দূরে সরে এসেছে আরকি।
ক্যানিয়ল উচ্চৈঃস্বরে বললো,
“এটা তুমি কী করেছো সামুরা? ওই নীচু মন মানসিকতার মেয়েটাকে বাড়িতে এনেছো কোন আক্কেলে? সে সামান্য একটা টুপির জন্য কাঙালপনা করেছে। সে কতটা নীচু মন মানসিকতার বুঝতে পারছো? তুমি ভুলে যাও কেন আমরা বড়োলোক? যাকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা আমাদের শোভা পায় না।”

ক্যানিয়লের প্রতিটা কথা স্পষ্ট কানে এসেছে ইরতিজার। ভাইকে নিয়ে দূরে সরে গেলেও মূলত সে ইরতিজাকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলছে কথাগুলো। অপমানে ইরতিজার মাটির সাথে মিশে যাওয়ার অবস্থা। ইচ্ছা করছে এক দৌড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে এখানে ঠাঁয় বসিয়ে রাখলো। মনে মনে বললো সে,
‘ভাইকে নিয়ে যখন দূরেই সরে গেলি তাহলে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো কেন বলছিস পাজি ছেলে? শুনিয়ে শুনিয়েই যখন কথাগুলো বলবি তখন দূরে যাওয়ার কী দরকার ছিল? সামনে বসেই বলতি!’

সামুরা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভাইয়ের এক হাতে মৃদু চাপ দিয়ে কণ্ঠ নিচু করে বললো,
“এটা তুমি কী করছো? আস্তে বলো। শুনতে পাবে ও।”

“তো? এখন ওর জন্য কি আমার ফিসফিস করে কথা বলতে হবে? এটা আমার ক্যারেক্টারের সাথে যায় না। যে মেয়ে সামান্য একটা টুপির জন্য কাঙাল, সে মেয়ের জন্য আমি ফিসফিস করে কথা বলতে পারবো না। তুমি ওকে বাড়িতে নিয়ে এসে মোটেও উচিত কাজ করোনি। তাড়াতাড়ি ওকে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দাও।”

সামুরা লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। তার ভাই হঠাৎ এমন কেন করছে বুঝতে পারছে না। জীবনে কখনও তো এমন করতে দেখেনি। তাহলে হঠাৎ কী হলো?
ক্যানিয়লের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। সামুরাকে এমন করতে দেখেও কোনো পরিবর্তন সাধিত হলো না তার মাঝে। সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দুই ধাপ উঠে কী মনে হতেই থামলো আবার। ইরতিজার দিকে তাকালো। মেয়েটা অপমানে রিক্ত হয়ে বসে আছে। ক্যানিয়ল ডাকলো,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল!”

ইরতিজা রক্তিম চোখ জোড়া মেলে তাকালো।

“এখনও এরকম বসে আছো কীভাবে? তোমার তো এতক্ষণে কেঁদে দেওয়া উচিত ছিল। ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে!”
কথাটা বলে ক্যানিয়ল আর দাঁড়ালো না।

ইরতিজা সত্যি সত্যি এবার কেঁদে দিলো। এই অপমান সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। এক মুহূর্ত আর এখানে বসে থাকা যায় না। ইরতিজা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই সামুরা পিছন থেকে টেনে ধরলো তার এক হাত।
“স্টপ টিজা।”

“হাত ছাড়ো সামুরা। আমি আর এক সেকেন্ডও এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। এমন অপমান বোধ আমি আর কোনোদিন করিনি! অপমান করবে বলেই কি আমাকে নিয়ে এসেছিলে এখানে? ছাড়ো হাত। আমি যদি জানতাম ওই বেয়াদব, পাজি ছেলেটা তোমার ভাই, তাহলে ভুলেও পা রাখতাম না এখানে। চরম ভুল করেছি এখানে এসে!”

“স্যরি টিজা! আমি বুঝতে পারছি এটা খুব অপমানজনক একটা বিষয় ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার ভাই এরকম নয়। জানি না হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করলো! তুমি প্লিজ এরকম ভাবে চলে যেয়ো না।”

“হাত ছাড়ো।”

ইরতিজা হাত ছাড়িয়ে যাওয়া দিলে আবারও সামুরা হাত টেনে ধরলো।
“তুমি এরকম ভাবে চলে যেতে পারো না টিজা। তুমি এরকম ভাবে চলে গেলে সেটা আমার আত্মসম্মানে লাগবে। কারণ আমি তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম। তুমি যাবে ঠিক আছে, আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো। একা একা যাবে না তুমি। এমনিতেও এখন রাত হয়ে গিয়েছে। একা যেতে অসুবিধা হবে তোমার।”

ইরতিজা একটু নরম হলো। সামুরা সেটা বুঝতে পেরে বললো,
“আমি তোমাকে নিয়ে যাব, ও কে?”

“সামুরা…”
পিছন থেকে নাইলা সালেমের কণ্ঠ শোনা গেল।

সামুরা পিছন ফিরলে সে বললো,
“এদিকে এসো, ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।”

“পরে। আগে ওকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি।”

নাইলা অসন্তোষ হয়ে বললেন,
“সব কিছু তোমার কেন করতে হবে? এসব কাজের জন্য কি তোমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?”

ক্যানিয়ল সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছিল। কিচেনের দিকে পা বাড়ালেই ডাকলেন নাইলা,
“ক্যানি!”

ক্যানিয়ল দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কোনো প্রয়োজনে ডাকছো মাদার সালেম?”

“এই মেয়েটাকে ওর বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে এসো।”

“দুঃখিত, এটা পারবো না আমি।”
বলে কিচেন নয়, বাসা থেকে বের হয়ে গেল ক্যানিয়ল।

নাইলা সালেমের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো রাগে। ক্যানিয়ল ছেলেটা কথার অবাধ্য হওয়ারও দুঃসাহস করছে ইদানিং। সে সামুরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার সাথে এসো।”

“কিন্তু টিজা…”

“আমি একা চলে যাব।” এত অপমানের পর আর সত্যিই দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না ইরতিজার পক্ষে। সে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দিলো। সামুরা ডাকলো,
“টিজা…”

থামলো না ইরতিজা। দু চোখ বেয়ে উষ্ণ অশ্রু নেমে যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করছে, আর কখনও যেন ক্যানিয়ল অথবা এই নাইলা সালেমের সাথে তার দেখা না হয়। কিন্তু আদৌ কি তার এই প্রার্থনা কবুল হবে?
বিশাল ঘরটা পেরিয়ে কেবল বাইরে পা রাখলো ইরতিজা। এর মাঝেই হাত ধরে কেউ একজন হ্যাঁচকা টান দিলো। হৃৎপিণ্ড গলার কাছে উঠে এলো ইরতিজার। একটা বলিষ্ঠ হাত তার মাথাটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। বললো,
“একা একা যাওয়ার চেষ্টা করলে পা ভে/ঙে দেবো মেয়ে!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here