#উপসংহারে_ভালোবাসা
#পর্ব_৬
#তিয়াশা_জেরিন
আর কয়দিন পরেই তিশপি আপুর বিয়ে।আমরা সবাই আরো আগেই চলে এসেছি।খালামণি বার বার করে বলে দিয়েছিল আমাকে যেন আমি অনেকদিন আগেই চলে আসি।কিন্তু ভার্সিটি,প্রাইভেটের জন্য আসা হয়ে উঠে নি তবু এক সপ্তাহ আগেই চলে এসেছি।এ বাড়িতে আসা থেকে প্রিয়ার চোখ দুটো শুধু মেহেরাবকে খুঁজে চলছে।সেদিন মানুষটার সাথে বড্ড বাজে ব্যবহার করে ফেলেছে সে।
সেদিম যখন মেহেরাব ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রিয়ার কাছে আসে প্রিয়ার যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।প্রিয়া মেহেরাবকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহেরাব প্রিয়ার কোমড় ধরে তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,
-“দেখ দরজা বন্ধ করে দিয়েছি এখন আর কেউ আসতে পারবে না।”
মেহেরাবের এমন কথায় প্রিয়া ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।প্রিয়া নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠে,
-“মেহেরাব ভাইয়া ছা..ছাড়ো।কিসব বলছো তুমি প্লিজ এখান থেকে যাও আমার..”
প্রিয়া আর কিছু বলার আগেই মেহেরাব তাকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তারপর তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,
-“হুশ।কিচ্ছু বলিস না প্রাণপ্রিয়া আজ আমি বলবো তুই শুনবি।”
এই বলে মেহেরাব প্রিয়াকে নিজের কোলে তুলে নেয় এরপর বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়।নিজেও ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাত দুটোকে নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নেয়।প্রিয়ার যেন কোনো কথা বলার শক্তিই হারিয়ে যাচ্ছে।কি করছে এসব তার মেহেরাব ভাইয়া।প্রিয়ার যে ভীষণ ভয় করছে সে বুঝতে পারছে না।মেহেরাব অপলকভাবে প্রিয়াকে দেখে যেতে লাগলো।
-“তোর মধ্যে কি আছে বলতো প্রাণপ্রিয়া,আমাকে এতটা তোর দিকে টানে।তোকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে,তোর সাথে নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে নিজেকে কন্ট্রোল করতে ভীষণ কষ্ট হয়।”
এরপর প্রিয়ার গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলে উঠে,
-“জানিস কত মেয়ে কতভাবে আমাকে তাদের দিকে টানার চেষ্টা করে।আমার কারো প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না কিন্তু তোকে দেখলে অনুভূতিগুলো কেমন যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।কেন এমন হয় প্রাণপ্রিয়া?তোকে ভালোবাসি বলে।”
মেহেরাবের এমন নি:সঙ্কোচ স্বীকারোক্তিতে প্রিয়া যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।তার হার্টবিট অস্বাভাবিক আকারে বেড়ে যেতে লাগলো।কি বললো তার মেহেরাব ভাইয়া,সে তাকে ভালোবাসে।
মেহেরাব হঠাৎ প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“তোকে কাছে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।আমাকে বাঁচা প্রাণপ্রিয়া।”
মেহেরাব কথাটা বলেই প্রিয়াকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।প্রিয়া কেঁপে উঠে।প্রিয়া দুর্বল হাতে মেহেরাবকে সরিয়ে দিতে চেয়েও পারলো না।মেহেরাবের স্পর্শগুলো যেন ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে প্রিয়ার যে আর সহ্য হচ্ছে না।প্রিয়া আর সহ্য করতে না পেরে মেহেরাবের চুল খামছে ধরে।প্রিয়া অসম্ভবভাবে কাঁপছে।প্রিয়া বুঝতে পারছে যা হচ্ছে মোটেও ঠিক হচ্ছে না।প্রিয়ার মস্তিষ্ক বলছে বাঁধা দিতে মেহেরাবের সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করতে কিন্তু মন মানছে না।
প্রিয়ার এমন চুল খামছে ধরাতে মেহেরাবের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।সে তার হৃদয়ের এই দহন মেটাতে একটুখানি তার প্রাণপ্রিয়ার সান্নিধ্য চায় ব্যস।সে এর চেয়ে বেশি গভীরে যাবে না।এখনও যে তার প্রাণপ্রিয়াকে সম্পুর্ণ নিজের করে নেয়ার অধিকার হয়নি তার।
মেহেরাব যখন এসব ভাবছিল তখন হঠাৎ একটা প্রচন্ড ধাক্কায় সে বেশ দূরে সরে যায়।মেহেরাব অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকাতে দেখে প্রিয়া রক্তলাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেরাব কিছু বলবে তার আগেই প্রিয়া বলে,
-“এতটা অধ:পতন কবে থেকে হলো তোমার?আজ সারাটাদিন তুমি আমার সাথে এমন নোংরা ব্যবহার করছো।আর এখন তো লিমিটই ক্রস করলে।”
প্রিয়ার এমন কথাতে মেহেরাব একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।তবে কি তার প্রাণপ্রিয়া তাকে ভুল বুঝছে সে তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে স্পর্শ করেনি।মেহেরাব প্রিয়াকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় প্রিয়া বলে উঠে,
-“বেরিয়ে যাও এখান থেকে।আর সত্যি কথা বলতে দোষ তো তোমার একার নও আমারও আমি তোমাকে প্রশ্রয় দিয়েছি বলেই তুমি এমনটা করার সাহস পেয়েছো।তুমি প্রথমবার যখন এমনটা করেছিলে আমার তখনই তোমাকে কিছু বলা উচিৎ ছিল।এখন নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে।”
প্রিয়ার এমন কথায় মেহেরাবের কেমন একটা কষ্ট লাগে।তার ছোঁয়ায় তার প্রাণপ্রিয়ার ছোট মনে হচ্ছে নিজেকে।মেহেরাব প্রিয়ার কাছে এসে প্রিয়াকে শান্ত করতে করতে বলে উঠে,
-“প্রিয়া দেখ,আমি বুঝতে পারছি তোর কাছে হয়তো বিষয়টা খারাপ লেগেছে।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তোর কাছে যায় নি।শুধু একটু ভালোবাসতে..”
প্রিয়া মেহেরাবের কথা শুনে বলে উঠে,
-“ব্যস,মি.মেহেরাব।কি বললেন যেন,ভালোবাসতে।এভাবে শরীর ছোঁয়াটাকে আপনার কাছে ভালোবাসা মনে হলো।অবশ্যত আপনার কাছে এমনটা মনে হতেই পারে,শুনেছিলাম আগে নাকি আপনি বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মিশতেন,তাদের সাথে পার্টি করতেন।তারপর হঠাৎ কি এমন হলো যে,একদম রাতারাতি বদলে গেলেন।”
প্রিয়ার কথায় মেহেরাবের এবার রাগ উঠে যায়।মেহেরাব রেগে শক্ত করে প্রিয়ার বাহু ধরে বলে উঠে,
-“আর একটা কথা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু প্রিয়া।অনেক বেশি ভেবে ফেলছিস তুই।আর তুই এমন করছিস কেন আমি তোকে ভালোবাসি প্রাণপ্রিয়া।”
মেহেরাবের এমন ব্যবহারে প্রিয়ারও এবার ভীষণ রাগ উঠে যায়।প্রিয়া মেহেরাবকে আবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,
-“একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না,চরিত্রহীন লোক কোথাকার।আপনি ভাবলেন কি করে,আপনার মতো একটা বাজে লোককে আমি ভালোবাসবো।বলা তো যায় না,নিজের চাহিদা শেষ হয়ে গেলে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলবেন আমাকে আর ভালো লাগে না।”
প্রিয়ার এমন কথায় মেহেরাবের যেন মনে হলো তার ভেতরটাতে কেউ ছুরিকাঘাত করে চলেছে।মূহুর্তেই তার চোখ দুটো ভিজে উঠলো।যে ছেলেটা হাজারো কঠিন পরিস্থিতিতেও কাঁদে না নিজেকে শক্ত রাখে আজ সেই ছেলেটাই কাঁদছে।সত্যি প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে পাওয়া আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কারো থাকে না।সে আস্তে করে বললো,
-প্রিয়া
-“দরজাটা ওদিকে,বেরিয়ে যান।আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।”
মেহেরাব কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে চলে গেল।মেহেরাবের এমন চলে যাওয়াতে প্রিয়ারও খারাপ লাগলো।সে তো জানে তার মেহেরাব ভাইয়ার এখন কোনো মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই কেন সে অতীতের কথা টানতে গেল।কিন্তু সে এটা জানে না,তার মেহেরাব ভাইয়ার হঠাৎ কি এমন হয়েছিল যে সে এভাবে মেয়েদের সাথে মেশা,মদ সিগারেট খাওয়া এ সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়েছিল।
প্রিয়া ধপ করে যেয়ে বিছানায় বসে পড়ে..
চলবে..
[ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর আজকের পর্বটা ছোট হয়ে গিয়েছে এর জন্য দু:খিত আমি।একটু ব্যস্ততায় আছি।আর গল্পটি নিয়ে আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাকে জানাবেন।ধন্যবাদ[