#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১০+১১]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)
ইশতিয়াক কে কিছুক্ষণ আগে হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে দেখে খুবই অবাক হয়ে গেল আয়শি। এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছে সে, কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইশতিয়াক নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। আয়শি ওর চলে যাওয়ার পর পরই ওর রুমে চলে এলো, ইশতিয়াক কোথায় গেছে তার হদিস পাওয়া যায় কি না তার জন্য।ওর রুমে এসে সব কিছু তছনছ করে খুঁজতে শুরু করলো, কোনো না কোনো প্রুভ যেটা থেকে জানা যাবে যে ইশতিয়াক কোথায় গেছে। হঠাৎই আয়শির চোখ পড়ল ইশতিয়াকের ডেস্কের উপর, সেখানে একটা নোটবুক ওপেন করা আছে।ডেস্কের কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখে নোট বুকের একটা পাতা ছেঁড়া হয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু লেখা তারপরও বোঝা যাচ্ছে। ইশতিয়াকের বাজে অভ্যাস আছে, সেটা হচ্ছে পেন দাবিয়ে লেখা।নোট বুকে ও সে এইভাবেই লিখেছে আর সেটাই বোঝা যাচ্ছে। আয়শি আশে পাশে তাকালো কোথাও একটা পেন্সিল দেখা যায় কি না তার জন্য, একটা পেন্সিল দেখতে পেয়ে সেটাকে নিয়ে ও নোট বুকের উপর হালকা করে ঘষতে লাগলো। পুরো পাতা টা ঘষার পর, ইশতিয়াক যা কিছু লিখেছিল সব কিছু স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠলো।নোট বুক টা হাতে নিয়ে আয়শি পড়তে শুরু করলো,,,
প্রেয়সী,,,,,,
আমি জেনে খুব খুশি হয়েছি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমাকে সরি বলছি কারণ ওই দিন আমি না জেনে বুঝেই তোমার সাথে ব্যাড বিহেবিয়ার করেছিলাম। নিজের অজান্তেই তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম তার জন্য আমি তোমাকে আবার ও সরি বলছি ওকে? তুমি জানো আমার জীবনে তোমার খুব প্রয়োজন, তোমার মতো একজনকেই আমার চাই। আয়শি নামের একটি মেয়ে আমার জীবন টাকে তেজপাতার মতো শেষ করে দিচ্ছে, সেই উটকো ঝামেলা টাকে আমার জীবন থেকে দূর করে দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে আমার প্রয়োজন। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না কিন্তু তোমার আর আমার মাঝে দেয়ালের মতো একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়শি। তুমি তাকে আমার জীবন থেকে দূর করে দিয়ে নিজের জায়গা টা বুঝে নাও। সবশেষে একটা কথাই বলবো, আমি ও তোমাকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলতে শুরু করেছি,আই হোপ তুমি আমার কথা বুঝতে পারবে মেঘা।
ইশতিয়াক আহমেদ
লেখা গুলো পড়ে আয়শির রাগ টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে। ইশতিয়াকের এতো বড় সাহস ও ওকে ছেড়ে মেঘা নামের কোন রাস্তার মেয়ে কে ভালোবাসে।তার উপর আবার বলছে সে ওর জীবনের উটকো ঝামেলা একটা, ওকে সরিয়ে দিয়ে যেন মেঘা নিজের জায়গা টা বুঝে নেয়।ওয়েট ইশতিয়াক বেইবি ওয়েট,কে কাকে কার জীবন থেকে দূর করে দেয় সেটা তো সময়ই বলবে।মেঘা কে যদি আমি এই পৃথিবী থেকেই দূর না করেছি তাহলে আমার নাম ও আয়শি নয়। ইশতিয়াক শুধু মাত্র আমাকে ভালোবাসবে আর কাউকে নয়,যাকেই ইশতিয়াক ভালোবাসবে তাকেই আমি ওর জীবন থেকে দূর করে দিবো,ইট ইজ মাই প্রমিজ ইশতিয়াক বেইবি।নোট বুক টা হাতে নিয়ে আয়শি ইশতিয়াকের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এলো। রুমে এসে একটা নাম্বারে ডায়াল করলো আয়শি, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন রিসিভ করলো কেউ। ফোনের ওপাশের মানুষ টি কিছু টা ভীত সন্ত্রস্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,,,
ম্যাম আমি কিভাবে আপনার উপকারে আসতে পারি, আপনি শুধু মাত্র একবার হুকুম করুন, আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।(ওপাশের মানুষ টি)
তোমাকে শুধু একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।(আয়শি)
ক কি কাজ ম্যাম (ওপাশের মানুষ টি)
একটা মেয়ে কে খুঁজে বের করতে হবে। তার নাম হচ্ছে মেঘা। ইশতিয়াকের গার্লফ্রেন্ড সে, সকাল থেকে এই পর্যন্ত ইশতিয়াক কোন কোন মেয়ের সাথে দেখা করেছে, তাদের নাম কি, বাসা কোথায়, ফুল টু ফুল ডিটেইলস নিয়ে তুমি আমাকে দেবে। কিন্তু হ্যা, ইশতিয়াক যেন এইসব কিছুই ঘুর্নাক্ষরেও টের না পায়,ও যদি কিছু জানতে পারে তাহলে বুঝে নিও এই পৃথিবীতে তোমার সময় শেষ হয়ে এসেছে।আর শোনো, কোনো মেয়ের নাম যদি মেঘা হয় তাহলে ওর একটা ছবিও জোগাড় করে নিয়ে আসবে, ওকে?(আয়শি)
আপ আপনি কোন চিন্তা করবেন না ম্যাম,সব কাজ হয়ে যাবে এবং ইশতিয়াক স্যার ও কোনো কিছু জানতে পারবেন না। এখন রাখি ম্যাম,কাজে লেগে পড়ি?(ওপাশের মানুষ টি)
হুম রাখো, বলে আয়শি ফোন কেটে দিলো। ঠোঁটের কোণে একটা বীভৎস হাসি ফুটে উঠেছে তার,মেঘা কে খুঁজে পাওয়া গেলে ওর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়ে ইশতিয়াক কে বাধ্য করবে ওকে বিয়ে করতে। অনেক দিন ছাড় দেওয়া হয়েছে আর নয়, এরপরে আরো ছাড় দেওয়া হলে ইশতিয়াক ই না জানি কবে ওকে মে/রে দেয়। ভয়ঙ্কর শব্দ করে হাসতে হাসতে আয়শি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
_________________________________________
হসপিটালে লাবীব রহমানের সময় যেন কাটে না। মেয়ে টা কে জ্ঞান ফেরার পর থেকে একবারও দেখতে পারেন নি তিনি,নার্স কে কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছেন লিরার কথা কিন্তু নার্স খুব বুদ্ধি মত্তার সাথে ওনার প্রশ্ন টা এড়িয়ে গেছে।এ জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি, মেয়ে টার সাথে আবার খারাপ কিছু হলো না তো এই সঙ্কায় বুক টা কেঁপে উঠছে বার বার। কোথায় আছে যে তার লিরা মা কে জানে, বাসায় আর থাকতে পারবে না লিরা কারণ অনেক দিন বাসা ভাড়া দেওয়া হয়নি আর এখন তিনি ও এক্সিডেন্ট করেছেন।এর পরে তো আর লিরা কে ওই বাসায় থাকতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে আসে না বাড়ি ওয়ালার, খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন লাবীব রহমান। বেঁচেও ম/রে আছেন তিনি, না পারছেন উঠে বসতে, না পারছেন কিছু করতে।ডক্টর বলেছেন যে তিনি আর কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারবেন না,হুইল চেয়ারে বসে চলা ফেরা করতে হবে তাকে বাকি টা জীবন।এই সব কিছুই ভাবছেন তিনি, এমন সময় একটা নার্স এসে বললো ওনার সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।লাবীব রহমান নার্স কে বললেন তাকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য,নার্স চলে যাওয়ার পর পরই একটা ছেলে এসে ওনার কেবিনে ঢুকলো।বেডের পাশে একটা চেয়ারে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল তাকে,, আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল?
লাবীব রহমান ছেলেটার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে ভালো করে পরখ করতে লাগলেন ছেলে টা কে। দেখে মনে হচ্ছে বেশ বড় ঘরের ছেলে, পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের ছেলে হবে। বিধ্বস্ত মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত খুব ছেলে টা, ছেলেটার মুখ দেখে খুব মায়া হলো তার। থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলেন,, তোমার কি হয়েছে বাবা,এই রকম দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
ইশতিয়াক লাবীব রহমানের প্রশ্ন শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না। বেচারা নিজেই ম/র/তে ম/র/তে বেচে আছে আবার সেই কি না জিজ্ঞাসা করছে তার কি হয়েছে। হঠাৎ ই কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে ইশতিয়াকের, অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললো, না আমার কিছু হয় নি আঙ্কেল। আপনি এখন কি ঠিক আছেন?
লাবীব রহমান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললেন।তার পর জিজ্ঞেস করলেন,, আচ্ছা তুমি কি জানো আমার মেয়ে টা কোথায়? আমার মেয়ের নাম লিরা,লিরা রহমান। দেখতে উজ্জ্বল ফর্সা গড়নের, পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি আমার মেয়ের হাইট। গালে একটা কাঁটা দাগ রয়েছে তার,বলো না তুমি কি আমার মেয়ে টাকে দেখেছো?
আপনার মেয়ে অনুমেঘা রহমান নামের একটা মেয়ের সাথে ওর বাসায় চলে গেছেন।এই কথা টা বলতে বলতে লাবীব রহমানের ডক্টর আই সি ইউ তে ঢুকলেন, ইশতিয়াক ওনার কথা শুনে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে আধ বয়স্ক এক জন ডক্টর দাঁড়িয়ে। ওনাকে দেখে ইশতিয়াক বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
লাবীব রহমান ডক্টরের কথা শুনে চমকে উঠলেন,অনু মেঘা রহমান মানে?এই নাম তো তিনি আর মেহের মিলে ঠিক করেছিলেন তাদের অনাগত সন্তানের জন্য।মেহেরের যখন প্রেগনেন্সির ছয় মাস চলে তখন তিনি আর মেহের মিলে বাচ্চার নাম ঠিক করেছিলেন।যদি তাদের ছেলে বাচ্চা হয় তাহলে নাম হবে মাহমুদ রহমান আর মেয়ে বাচ্চা হলে নাম হবে অনু মেঘা রহমান। সেই নাম ডক্টরের মুখে শুনে তিনি ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন। অতীত এসে আবার হানা দেয় নি তো তার জীবনে? কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, মেয়ে টা কে দেখতে কেমন ছিল?
ডক্টর তার প্রশ্ন শুনে কিছু না বলে একটা ছবি ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার চেনার সুবিধার্থে আমি অনু মেঘা রহমানের একটি ছবি ওনার কাছ থেকে নিয়ে রেখেছি যাতে পরবর্তীতে আপনার ওনাকে চিনতে অসুবিধা না হয়।এই নিন দেখুন, আপনার মেয়ে এনার সাথেই গেছেন।লাবীব রহমান কাঁপা কাঁপা হাতে ছবি টা নিয়ে তাকালেন ছবি টার দিকে,,, ছবি টা দেখে নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। ছবির মেয়েটার চেহারা হুবহু তার মতো, হুবহু তার সাথে মিলে যাচ্ছে মেয়েটার চেহারা। এই ছবি দেখে আর লাবীব রহমান কে দেখে এখন যে কেউ ই চোখ বন্ধ করে বলে দিবে যে এদের মধ্যে রক্তের কোনো সম্পর্ক আছে।লাবীব রহমানের হাত থেকে ছবি টা পড়ে গেল, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা উঠলো ওনার। ছবি টা দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন এই হচ্ছে মেহেরের মেয়ে অনু মেঘা রহমান।যাকে জন্মের সময় তিনি ফেলে দিয়ে এসেছিলেন আজ সে তার আরেক মেয়ে কে নিয়ে চলে গেল, হয়তো তার পাপের শাস্তি তার মেয়ে লিরা পাবে।আর কিছু ভাবতে পারলেন না তিনি, বুকে হাত দিয়ে একটা চিৎকার করে জ্ঞান হারালেন। ইশতিয়াক মাটিতে পড়ে থাকা ছবি টা হাতে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে আই সি ইউ থেকে বেরিয়ে গেল,ডক্টর লাবীব রহমানের এই ভাবে হঠাৎ জ্ঞান হারানোর কারণ ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না।
?
এই মুহূর্তে অহনাদের বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে ইশতিয়াক। উদ্দেশ্যে যদি একবার মেঘা ম্যাডামের দেখা পাওয়া যায়, তার সাথে লিরার ও।মেঘা ম্যাডাম যা রাগি মানুষ, না জানি ওকে দেখে আবার কি রিয়েক্ট করে। তবে যাই করুক না কেন আজ ইশতিয়াক মেঘার বাবা মায়ের নাম জেনেই ছাড়বে।ছবি তে যেই মেয়ে টা আছে সেটা মেঘা ই কিন্তু ও যেই লোকটার ট্রিটমেন্টের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে সেই লোকটির সাথে তার চেহারা হুবহু মিলে যাচ্ছে। এদিকে সেই লোকটি মানে লাবীব আঙ্কেল বলছেন যে তার একটাই মেয়ে আর সেটা হচ্ছে লিরা রহমান। তাহলে মেঘা আর লাবীব আঙ্কেলের সম্পর্ক টা কি, ওর তো মনে হচ্ছে এরা বাবা মেয়ে কিন্তু কোনো না কোনো এক কারণে এরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাখছে।প্রায় আধ ঘন্টা ধরে পায়চারি করার পর ইশতিয়াকের পা ব্যাথা হয়ে গেল কিন্তু তারপরেও রাগি ম্যাডামের দেখা পেল না। বাসার সামনেই একটা বসার জায়গা আছে, ইশতিয়াক সেখানে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো তার রাগি ম্যাডামের জন্য।
বিকাল চারটার দিকে অহনা শপিং মলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে এলো। শপিং মলে যাওয়ার কথা টা শুধু মাত্র একটা বাহানা ছিল, ওর আসল উদ্দেশ্য ওই লাবীব রহমানের সাথে দেখা করা।ওর জন্য ও ওর খালামনি কে হারিয়েছে,মেঘু হারিয়েছে তার মা’কে,আজ কয়েক টা দিন ধরে মেঘু কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে তাও ওই লাবীব রহমানের অবৈধ মেয়ে টার জন্য। আজকে যাও একটু হাসিখুশি ছিল কিন্তু বাইরে থেকে আসার পর সেই যে রুমে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে তার আর বের হওয়ার কোনো খোঁজ খবর নেই। নিশ্চয়ই বাইরের লোকজন মেঘুর বাবার ব্যাপারে কিছু জানতে চেয়েছে আর তাতেই মেঘুর মন খারাপ হয়ে গেছে আর ও রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। এইসব কিছুর মূলে তো ওই লাবীব রহমান, ওর একটা না একটা ব্যাবস্থা ও আজকে করেই ছাড়বে।মেঘুর মতো এতো স্ট্রং মনোভাবের ও হতে পারবে না,যা করার ও নিজেই করবে। দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে অহনা বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু বাইরে এসে যাকে দেখলো তাকে দেখে ওর সব হাওয়া শেষ হয়ে গেল।ওর স্বপ্নের মানুষ টা ওর বাসার সামনেই বসে বসে ঘুমাচ্ছে,ব্যাপার টা খুব সুন্দর ওর কাছে।লাবীব রহমান কে শাস্তি দেওয়ার ভাবনা ওর মন থেকে মুহূর্তের মধ্যেই উবে গেল, ইশতিয়াক কে প্রান ভরে দেখতে লাগলো অহনা।পা টিপে টিপে ইশতিয়াকের কাছে এগিয়ে এসে ওর পাশে বসল অহনা, তার পর গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ঘুমন্ত অবস্থায় ইশতিয়াক কে পুরো একটা বাচ্চা ছেলের মতো লাগছে, হঠাৎ করে অহনার কেন জানি ইচ্ছে হলো ইশতিয়াক কে ছুঁয়ে দেওয়ার। খুব ইচ্ছে হলো খুব, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের ইচ্ছে টাকে দমন করলো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ও ঘুমিয়ে গেছে,আহ্ বেচারা। কোন না কোন শা/ক/চু/ন্নি/র জন্য অপেক্ষা করছিল কে জানে, ওর জন্য অপেক্ষা করলেও তো পারতো। মনের সুপ্ত ইচ্ছা টাকে বেশীক্ষণ আটকে রাখতে পারলো না অহনা, আলতো করে ইশতিয়াকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আর এই দৃশ্যটা দূর থেকে আয়শির ঠিক করা লোকটা ক্যামেরা বন্দি করে নিলো। লোকটির ধারণা হলো যে এই মেয়েটাই মেঘা, যেহেতু আয়শি ম্যাম বলেছিলেন যে ইশতিয়াকের গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে মেঘা।আর এই মেয়েটাও গার্লফ্রেন্ড এর মতোই বিহেবিয়ার করছে,এতে আর কোনো সন্দেহই নেই যে এই মেয়ে টা মেঘা নয়।আর কাউকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার হলো না ওই লোকটার, ছবি টা তুলে নিয়ে দ্রুত সেই জায়গা থেকে কে/টে পড়লো সে। মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল ইশতিয়াকের, চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে হসপিটালের ওই মেয়েটি ওর পাশে বসে আছে।মেঘার কাছে শুনেছিলো এই মেয়েটার নাম অহনা, কিন্তু মেয়েটা ওর পাশে বসে কি করছে? ঠিক হয়ে বসে ইশতিয়াক অহনার দিকে কাঠ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল,, তুমি এখানে বসে কি করছো শুনি? তুমি তো ওই মেয়েটাই না যে আমাকে ভুল রিপোর্ট দিয়েছিলে।
ইশতিয়াকের প্রশ্ন শুনে অহনা লাজুক হাসি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। হঠাৎই খুব লজ্জা পাচ্ছে অহনার, লজ্জাবতী গাছের মতো লজ্জায় নুয়ে পড়েছে একেবারে। অহনার এই হঠাৎ লজ্জা পাওয়ার সাইন্স বুঝতে পারলো না ইশতিয়াক,বোকার মতো অহনার দিকে তাকিয়ে রইল সে।
?
মায়ের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাহদী।এই মুহূর্তে ওর মায়ের সামনে মাহদী ড. মাহদী নয়, পাঁচ বছরের ছোট একটা বাচ্চা মাত্র। পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে কে যেভাবে শাসন করা হয় ঠিক সেই ভাবেই আফরোজা চৌধুরী মাহদী কে শাসন করছেন। এতো বড় একটা ধেড়ে ছেলে কি না হবু বউ কে বিয়ের কথা বলতে পারে না, রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে চিরকুট দিয়েছে তা-ও আবার সেটা কোন ছেলে পেয়েছে। তার ছেলে এতো ভিতু হবে এটা তো তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি,যেই ছেলে এতো ক্রিটিক্যাল অপারেশন নির্ভয়ে করে সেই ছেলে একটা মেয়েকে ভয় পায়।কি লজ্জার ব্যাপার, ছিঃ!
#চলবে