#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৯]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)
মাহদী এই মুহূর্তে কনফিউজড হয়ে গেছে,কি করা উচিত তার। চলে যাওয়া উচিত নাকি মেঘ পাখির সামনে পড়ে আরো ভীষণ রকম লজ্জায় পড়া উচিত তার কিছুই ঠিক করতে পারলো না সে। ওখানে দাঁড়িয়ে ও ইশতিয়াক আর মেঘার যা কথা শুনলো,,,,
আপনি কি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন নাকি হ্যা? আমার ঠেকা পরেছে নাকি যে আমি আপনার মতো একটা ছেলে কে চিরকুট দিতে যাবো তা-ও আবার রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে। আপনি নিজেই এই চিরকুট টা লিখেছেন আর তারপর আমার সাথে কথা বলার আল খুঁজতে আপনি বলছেন আমি এই চিরকুট টা আপনাকে দিয়েছি।(মেঘা)
এই যে মিস মেঘা,,ইউ জাস্ট শাট আপ ওকে? আমার ও ঠেকা পরে নি যে তোমার মতো একটা ফালতু ঝগরুটে মেয়ে কে আমি চিরকুট দিতে যাবো। চিরকুট টা রিপোর্টের ভিতরে ই ছিল আর সেটা তুমিই লিখেছো তার প্রমাণ চিরকুটের ভিতরে লিখা শব্দ গুলি।(ইশতিয়াক)
এই মি.আপনি কি আমার সাথে ফাজলামি করতে আসছেন না কি? আমি আপনাকে চিরকুট কেন দিতে যাবো আর যদি দেওয়ার হতোই তাহলে হাতেই দিতাম না, এইভাবে লুকিয়ে কেন দিতাম? আমি আপনাকে কোনো চিরকুট দেই নি, আপনিই উল্টো পাল্টা কথা সাজাচ্ছেন আমার সাথে।(মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ইশতিয়াক কিছু টা চিন্তিত হলো। সত্যিই তো,মেঘার যদি চিরকুট দেওয়ার ই হতো তাহলে তো ও সামনাসামনি ই দিতো,ও যা মেয়ে এইভাবে ও লুকিয়ে চিরকুট কেন দিতে যাবে? কিন্তু ও হার মানার পাত্র নয়,মেঘার কথা চুপচাপ মেনে নিবে কেন। কিছু টা তোতলাতে তোতলাতে বললো,,,
বুঝতে পারলাম যে চিরকুট টা তুমি দাও নি। তুমি আমাকে ভালোবাসো না, এমন কি তুমি চিরকুটের ব্যাপারে কিছুই জানো না। তাহলে বলো এই চিরকুট টা আমাকে কে দিয়েছে, তোমার রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে চিরকুট টা কে রেখেছে? আচ্ছা এমন ও তো হতে পারে যে তোমার ওই সঙ্গিনী আমাকে এই চিরকুট টা দিয়েছে। হয়তো ও আমাকে ভালোবাসে তাই আমাকে এইভাবে জানিয়েছে, কিন্তু আমি তা না বুঝে তুমি আমাকে ভালোবাসো সেটা বুঝেছি,হতেও তো পারে এটা।(ইশতিয়াক)
এই যে ইশতিয়াক আহমেদ, আপনার মাথার স্ক্রু কি ঢিলা নাকি হ্যা? প্রেমের ভূত আপনার ঘাড়ে এমন ভাবে চেপেছে যে আপনি আপনার যুক্তিই আমাকে দেখিয়ে যাচ্ছেন আমার কোনো কথাই আপনি কানে নিচ্ছেন না।বলি অহনা আপনাকে কেন ভালোবাসতে যাবে ওর কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই।আর ও আপনাকে আমার রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে চিরকুট দিবে কেন,দিলে ওর রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে দিবে। আরেক টা কথা,ও চিরকুট টা লিখলো কখন হ্যা?ও তো আর হসপিটালে খাতা কলম নিয়ে যায় নি যে আমার রিপোর্ট ওর হাতে আসার সাহস সাথেই ও আপনার জন্য চিরকুট লিখতে বসে যাবে। আমি ড. মাহদীর কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওর হাতে রিপোর্ট টা দিয়ে চলে গেছি আর তার পর পরেই আপনি এসে রিপোর্ট নিয়ে গেছেন। এখন আপনিই বলুন আমি বা অহনা আপনাকে চিরকুট টা লেখার মতো সময় পেলাম কোথায়!(মেঘা)
ইশতিয়াক এবার সত্যিই চিন্তিত হলো সাথে ব্যাথিত ও হলো।ওই আয়শির হাত থেকে বাঁচার একটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিল শেষে কি না সেই আলোটাই মিথ্যে হলো।মেঘা যদি ওকে ভালোবাসতো তাহলে এই মেঘা ই ওই আয়শি কে ওর জীবন থেকে দূর করে দিতে পারতো,ওই আয়শি কে দূর করে নিজের জায়গা টা ঠিক বুঝে নিতো সে। কিন্তু এখন তো হলো উল্টো ঝামেলা,ওই চিরকুট ওকে না মেঘা দিয়েছে আর না অহনা। তাহলে ওই চিরকুট টা ওকে কে দিয়েছে নাকি ওই চিরকুট টা ওর জন্য ছিলোই না, ছিল মেঘার জন্য। যেহেতু মেঘা বলছে যে সে ড.মাহদীর কেবিন থেকে বের হয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে গিয়েছিল তার মানে কি ড. মাহদীই মেঘা কে? আর কিছু ভাবার আগেই ইশতিয়াকের চোখ পড়ল মেঘার পিছনে, দেখে ওখানে ড. মাহদী মাথায় হাত দিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল ওদিকে,আর কিছু বুঝতে বাকি নেই তার। ইশতিয়াক কে ভ্রু কুঁচকাতে দেখে মেঘা ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
কি হলো মি. ইশতিয়াক আহমেদ কিছু বলুন এবার?
তোমার পিছনে তাকিয়ে দেখো, তোমার পিছনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেই তোমাকে এই চিরকুট টা দিয়েছে কিন্তু ভুল করে সেটা আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।এই নাও তোমার চিরকুট,ধরো বলে ইশতিয়াক মেঘার হাতে ওই চিরকুট টা ধরিয়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হনহন করে চলে গেলো। ইশতিয়াকের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না মেঘা, একটু ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। পিছনে ড. মাহদী দাঁড়িয়ে, এটা কি করে সম্ভব?ব. মাহদী তাকে চিরকুট দিয়েছে এটা তো ও ভাবতেই পারছে না। একবার হাতের চিরকুট টার দিকে তাকালো আরেক বার ড. মাহদীর দিকে তাকালো মেঘা, নিজের চোখ, কান কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।মেঘার ওমন অদ্ভুত বিহেবিয়ার দেখে মাহদী কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর হঠাৎই প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়ির কাছে চলে এলো। গাড়িতে উঠে ফার্স্ট ড্রাইভ করতে করতে ওখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল মাহদী। হার্টবিট খুব দ্রুত কাজ করছে তার, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে,তার চেয়ে ভালো সেইফলি বাসায় চলে যাওয়া। বাসায় গিয়ে ব্যাপার টা নিয়ে ভাবা যাবে তার আগে মেঘ পাখির নজর থেকে আড়াল হতে হবে তাকে। এদিকে মাহদীর ওভাবে দৌড়ে চলে যাওয়া দেখে বেচারি মেঘা ভ্যাবচেকা খেয়ে হা করে ওদিকে তাকিয়ে রইল, কোনো রকম রিয়েকশন করলো না।
_________________________________________
চিরকুট টা পড়ছে আর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে মেঘা। এতো সাধারণ একটা চিরকুট ওর কাছে অসাধারণ হয়ে গেছে, হবে না কেন? মাহদী হচ্ছে ওর সব চেয়ে পছন্দের মানুষ প্লাস ভালোবাসার মানুষ। পছন্দের মানুষ টির কাছ থেকে কোনো ভালোবাসাময় চিরকুট পাওয়া তো কম কথা নয়, অনেক ভাগ্যের ব্যাপার এটা।পেশেন্ট হিসেবে মাহদীর কাছে যাওয়ার আগে থেকেই ওকে ওর ভালো লাগতো কিন্তু কখনো কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলেনি মেঘা। ভালো লাগাটা কে ও সযত্নে বুকের মাঝে আগলে রেখেছে, এটা ভেবে নিজেকে শান্তনা দিয়েছে যে ওর মাহদী কে ভালো লাগলেও ওকে মাহদীর ভালো নাও লাগতে পারে। তাছাড়া ওর অতীত জানার পর মাহদী কেন, কোনো ছেলেই ওকে চাইবে না এটা ও নিশ্চিত, তাই ভালো লাগা, ভালোবাসা কে লুকিয়ে রেখেছে নিজের মাঝেই। ঘটনাক্রমে যখন মাহদীর পেশেন্ট হতে হলো তাকে তখন ও কেন জানি এতো টা খুশি হয়েছিল যতটা ও এর আগে কখনো হয়নি। হয়তো এটা ভালোবাসার মানুষ টিকে কাছে থেকে দেখার আনন্দে ই খুশি হয়েছিলো সে।আর আজ সেই মানুষ টা ওকে ওর ভালোবাসার কথা জানালো।মেঘা যেমন চুপিচুপি ওকে ভালোবাসতো তেমনি তাহলে ওই ডক্টর সাহেব ও ওকে ভালোবাসে এটা ভাবতেই ওর লজ্জা লজ্জা করছে। একবার নয় দুই বার নয় কমপক্ষে পনেরো বার চিরকুট টা পড়লো মেঘা।এক রাশ ভালোবাসা নিয়ে মাহদীর লিখা চিরকুট টা সত্যিই আজ স্বার্থক হয়েছে, তার মেঘ পাখি তার চিরকুট টা পেয়েছে, তার মতোই ভালোবাসা নিয়ে চিরকুট টা পড়েছে। সবগুলো লাইন ইতিমধ্যে মুখস্থ হয়ে গেছে ওর,ডক্টর সাহেব চিরকুট এ বলেছেন যে উনি তার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবেন। তার মানে হচ্ছে এখন মেঘা কে একটা ফিরতি চিরকুট লিখতে হবে আর সেটা ডক্টর সাহেবের জন্য। তিনি তার চিরকুটের অপেক্ষায় থাকবেন আর সেটা জেনেও মেঘা তার জন্য একটা চিরকুট লিখবে না এটা কি কখনো হয়?
[ ?]