#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৩]
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)
ওয়াশ রুমে এসে মেঘা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ভয়ঙ্কর এক বিপদে পড়েছে সে। এই শাড়ি ও নিজে কখনো ঠিক করে পড়তে পারবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত কেউ ওয়াশ রুমে না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে এই অবস্থায় এখানে থাকতে হবে। ইচ্ছে হচ্ছে অহনাকে কান ধরে পুরো ভার্সিটি তে ঘুরাতে,নিজে তো মজা করছে শুধু মাঝখান থেকে ওর সব মজা নষ্ট করে দিয়েছে।আজ শাড়ি পরে না আসলে ও অহনার মতো ঘুরে বেড়াতে পারতো,যা কিছু হয় ওর জীবনে সব দোষ অহনার।
এদিকে অহনা পুরো ভার্সিটি জুরে মেঘা কে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।একে ওকে জিজ্ঞেস করল কিন্তু কেউ মেঘার কোনো খোঁজ দিতে পারলো না,মেঘার ফোন টাও বন্ধ দেখাচ্ছে। শেষে ওর ধারণা হলো মেঘা হয়তো রাগ করে বাসায় চলে গেছে আর ফোন টাও বন্ধ রেখেছে যাতে অহনা ওকে খুঁজে না পায়। অহনা ওকে আর না খুঁজে অনুষ্ঠান দেখতে বসে পড়লো, অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে এখন।
প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো কারো দেখা পেল না মেঘা,আর দেখা পাবে কি করে সবাই তো অনুষ্ঠান দেখতে ব্যাস্ত। হঠাৎ করে বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল ও, মনে হচ্ছে কোনো মেয়ে আসছে, হিলের টকটক শব্দ হচ্ছে। আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উকি দিয়ে দেখলো ওদের ক্লাসের লিরা এই দিকেই আসছে। ওকে আসতে দেখে মেঘা ডাকলো,লিরা মেঘার ডাক শুনে ওই ওয়াশ রুমে ই এলো। এসে মেঘার অবস্থা দেখে বললো,,,
তুমি এই ভাবে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো মেঘা আর আমাকেই বা ডাকলে কেন?
আমি না শাড়ি টা ঠিক করে পড়তে পারছি না তাই ওয়াশ রুমে আটকে আছি। তুমি কি আমাকে একটু শাড়ীটা পড়িয়ে দিবে প্লিজ?(মেঘা)
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি।(লিরা)
কিছুক্ষণের মধ্যেই লিরা মেঘা কে সুন্দর করে শাড়িটা আবার পরিয়ে দিলো।শাড়ি পড়া শেষ হওয়ার পর মেঘা ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে দেখে অহনা বেশ চিল মুডেই আছে ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে, মনে হচ্ছে মেঘা কে নিয়ে অহনার বিন্দু মাত্র চিন্তা ভাবনা নেই।মেঘা পা টিপে টিপে অহনার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,, খুব হাসাহাসি হচ্ছে তাই না অহনা?
অহনা পিছন থেকে মেঘার গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো,মেঘা বাসা থেকে আবার চলে এলো কেন? ঘুরে তাকিয়ে দেখে মেঘা ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।মেঘার গায়ে শাড়ি রয়েছে তার মানে মেঘা বাসায় যায় নি, অহনা মেঘার লুক দেখে একটু কষ্ট করে হাসার চেষ্টা করে বললো,,,
না হাসাহাসি হবে কেন?আমি তো তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম বাসায় যাবি না তুই?
আচ্ছা, তুই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি?কই তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি, আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দিব্যি ভালো মজা করছিস।(মেঘা)
অহনা মেঘার কথা শুনে ওকে ওখান থেকে টেনে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো। তারপর বললো,,সরি মেঘু, আমি ভাবছিলাম তুই বাসায় চলে গেছিস, আমি তো তোকে ফোন ও করেছিলাম কিন্তু তোর ফোন টা বন্ধ ছিল।
ওয়াশ রুমে নেটওয়ার্ক আছে কি যে ফোন বন্ধ দেখাবে না?(মেঘা)
তুই ওয়াশ রুমে কি করতে গিয়েছিলি মেঘু?(অহনা)
নাচ করতে গিয়েছিলাম ওয়াশ রুমে। তুই কিভাবে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলি আমাকে একটু পরেই খুলে পরেছিল,তাই শাড়ি ঠিক করতে ওখানে গিয়েছিলাম আর ওখানে গিয়ে,,,(মেঘা)
ওখানে গিয়ে কি?নিজে নিজেই শাড়ি পরে ফেললি না কি?(অহনা)
চুপ কর তুই। নিজে নিজে শাড়ি পরিনি একটা অসভ্য ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়েছি আর কতগুলো উল্টো পাল্টা কথা শুনে এসেছি শুধু মাত্র তোর জন্য। তুই আজ বাসায় চল খালামনির হাতে যদি তোকে বকা না খাইয়েছি তাহলে আমার নাম ও অনুমেঘা রহমান না হুহ।(মেঘা)
মেঘা কথা গুলো বলে হনহন করে হেঁটে চলে গেল, জোরে যাওয়ার কারণে একবার শাড়িতে প্যাচ লেগে পড়তে গিয়েও পড়লো না। পিছনে ঘুরে অহনার দিকে একবার আগুন চোখে তাকিয়ে আবার হাঁটতে লাগলো। অহনা মেঘার এই রাগের কারণ কিচ্ছু বুঝতে পারলো না,ও আবার কি করলো যে মেঘা ওই ভাবে রিয়েক্ট করলো?
__________________________________________
বাসায় এসে মেঘা খালামনির কাছে বসে কাঁদতে শুরু করল, খালামনি শায়লা বেগম বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু মেঘা কিছু না বলে কেঁদেই চলেছে। শায়লা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন মেঘার কান্না দেখে, এইভাবে কাঁদার মেয়ে তো মেঘা নয়। নিশ্চয়ই কেউ মেঘা কে খুব বাজে কথা বলেছে যার দরুন ও এইভাবে কাঁদছে, অহনা ও এখনো বাসায় আসেনি তাই শায়লা বেগমের চিন্তা আর কমলো না। চিন্তিত মুখে তিনি মেঘার পাশ থেকে উঠে গেলেন, ওনার উঠে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘা চোখ মুছে মুচকি হাসি হাসলো।ওর কাজ হয়ে গেছে, এখন অহনা বাসায় আসার পর খালামনি ওকে আচ্ছা করে বকবে, ওকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার শাস্তি অহনা ঠিক ঠাক পেয়ে যাবে।
একটু পরেই অহনা বাসায় চলে এলো,মেঘার ভাবনা মতো অহনা বাসায় আসার সাথে সাথে শায়লা বেগম অহনার খেয়াল না রাখার জন্য বকতে শুরু করলেন। অহনা বেশ বুঝতে পারছে মেঘা নিশ্চিত কিছু চাল করেছে যার কারণে মা এতো বকছে। শায়লা বেগম বকাবকির এক পর্যায়ে অহনাকে জিজ্ঞেস করলেন,,,,
মেঘা এতো কাঁদছে কেন, কে ওকে কি বলেছে ঠিক করে বল তুই।
অহনা মায়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে,মেঘা কাঁদছে এই ব্যাপারটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেল। মাকে কিছু না বলে অহনা মেঘার রুমে এসে দেখে ও নিজের মনে বই পড়ছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অহনা, এই মেয়ে টা ভয়ঙ্কর বিপদজনক, অন্য কে শাস্তি দেওয়ার খুব ভালো উপায় জানে সে।ও ওকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলো, ওর জন্য মেঘা কোনো ছেলের কাছ থেকে কথা শুনেছে, সেটা তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না।তাই মিথ্যেমিথ্যি কান্না করে মায়ের হাতে বকা খাওয়ালো ওকে।
________________
অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে ইশতিয়াক। কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা সে, ভার্সিটি থেকে আসার পথে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর।ওর বিশেষ কিছু হয় নি কিন্তু যেই লোকের সাথে ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ইশতিয়াক নিজেই লোকটাকে হাসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে, ওর বাবার বয়সী হবে লোকটা। গাড়ি তে থাকা লোকটার কাগজ পত্র দেখে জানতে পারে ওনার নাম লাবীব রহমান। এখন ওর চিন্তা হচ্ছে লোক টা আবার মরে না যায়,মরে গেলে ওকে বিপদে পড়তে হবে।ডক্টরকে বলে এসেছে যাই হোক না কেন লোক টা কে সুস্থ করে তোলা চাই মানে চাই। হঠাৎ করে ই রুমের দরজা খুলে গেল, একটা অপরুপা সুন্দরী মেয়ে রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে ইশতিয়াকের কাছে এগিয়ে এলো আর আদুরে গলায় বললো,,,,
কাম ডাউন বেবি, এতো টেনশন করছো কেন তুমি?যার এক্সিডেন্ট হয়েছে ও তো তোমার কিছু হয় না তাহলে ওকে নিয়ে এতো চিন্তা করছো কেন?
মেয়েটার কথা শুনে ইশতিয়াক রাগি চোখে তাকালো ওর দিকে। এই মেয়ে টা হচ্ছে ওর হবু বউ আয়শি, প্রচুর ন্যাকা একটা মেয়ে। সবসময় চিপকে চিপকে থাকে ওর সাথে,ও যেইসব জিনিস পছন্দ করে না ওগুলোই ও বেশি করে। দাঁতে দাঁত চেপে ইশতিয়াক বললো,,,
Get out of the room right now, I don’t want to talk to anyone right now. Please leave me alone please.
আয়শি ইশতিয়াকের কথা শুনে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ