উপন্যাসের সারাংশ প্রহর পর্ব ২

0
1520

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [২]
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)

মেঘা অহনার প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইল কিছু বললো না। অহনা মেঘার আপন খালাতো বোন সাথে বেস্ট ফ্রেন্ড ও।মেঘা জন্মানোর পর ওকে নিয়ে ওর মা হাসপাতাল থেকে ওর বড় খালার বাসায় চলে আসে,তার দুই বছর পরই একটা ভয়াবহ এক্সিডেন্ট এ ওর মা মেহের মা’রা যায়। মেহের মা’রা যাওয়ার পর পুরো পৃথিবীতে মেঘা শুধু একা, তখন ওর বড় খালা ওকে নিজের মেয়ের মতোই আদর যত্ন করে বড় করতে থাকে, কোনো অংশে নিজের মেয়ের থেকে কম আদর করে নি।বড় খালার মেয়ে অহনা মেঘার এক মাসের বড়, ওর সাথে মেঘার খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।সব কালো অতীত পিছনে ফেলে আজ মেঘা অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, এতো দিন পর্যন্ত মেঘা ওর বাবার ব্যাপারে কিছুই জানতো না। কয়েক দিন আগে মায়ের পুরোনো জিনিস ঘাঁটতে গিয়ে ধুলোয় মোড়া একটা ডায়েরি খুঁজে পায় মেঘা আর তাঁর পরই জানতে পারে ওর বাবার নোংরা চরিত্রের কথা।কেন ও বাবা ছাড়া বড় হয়েছে সেটা এতো দিন পর্যন্ত মেঘার কাছে অজানা ছিল,ও সবসময় চাইতো নিজের বাবার কাছে গিয়ে থাকতে, বাবা বলে ডাকতে, বাবার আদর পাওয়ার জন্য ওর মনটা ব্যকুল হয়ে থাকতো।তাই যখনই ও খালাকে বলতো বাবার কাছে যাওয়ার কথা তখনই খালা কেমন জানি একটা অদ্ভুত ব্যবহার করতো, বাবার কাছে যাওয়ার কথা শুনলেই খালা কেন আৎকে উঠতো তা আজ মেঘার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।মেঘা ওই ডায়েরি টা পড়ার পর থেকে ধরেই নিয়েছে যে ওর মায়ের মৃত্যুর কারণ শুধু মাত্র ওর বাবা নামক মানুষটি,ওই মানুষ টার কারণেই ওর মা ওকে ছেড়ে খুব তাড়াতাড়ি পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।ও কখনো বাবা নামের মানুষ টিকে ক্ষমা করতে পারবে না, কখনো না।যার জন্য ও ওর মাকে হাড়ালো, মায়ের আদর বুঝতে পারলো না আর যাই হোক তাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
মেঘা কে চুপ থাকতে দেখে অহনা ওর পাশে বসে ঘাড়ে হাত রেখে বলল,,, তোর কি হয়েছে বলতো মেঘা? আন্টির ডায়েরি টা তুই যখনি পড়িস তখন কেমন জানি একটা হয়ে যাস,অতীত নিয়ে কেন কষ্ট পাস তুই?
মেঘার চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছিল আবার কিন্তু ও সেটা মুছে নিয়ে বললো,,,
কই কিছু হয় নি তো আমার। আমি অতীত নিয়ে কষ্ট পাই না অহনা, কষ্ট পাই এটা ভেবে যে আমার মা জীবনের সবকিছু হাড়িয়েছে ওই লোকটার জন্য এমনকি নিজের প্রানটাও।বাদ দে ওসব কথা,নবীন বরণ অনুষ্ঠানে যেতে হবে তো চল রেডি হয়ে নেই তাড়াতাড়ি।
মেঘা অহনার পাশ থেকে উঠে ডায়েরি টা টেবিলের উপর রেখে রেডি হতে চলে গেল। অহনা মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,, আমি জানি মেঘু তুই আন্টির সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছিস কিন্তু চিন্তা করিস না,ওই লোকটা আন্টির সাথে যা যা করেছে তার শাস্তি ও ঠিক পেয়ে যাবে,অন্যায় করে ও শান্তি তে থাকতে পারবে না।
__________________________________

পুরো ভার্সিটি আজ লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে, হবে না কেন? নবীন বরণ অনুষ্ঠান বলে কথা। ছেলে মেয়ে রা নিজেদের মতো করে সেজে এসেছে ভার্সিটি তে নবীন বরণ উপলক্ষে, রংবেরং এর সাজে সবাই কে আজ খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।মেঘা আর অহনা ভার্সিটির গ্রাউন্ডের এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই কে দেখছে।মেঘা আর অহনা দু’জনেই আজ শাড়ি পরে এসেছে,মেঘা শাড়ি সামলাতে পারে না বলে পরতে চায় নি কিন্তু অহনার জোরাজুরিতে শাড়ির মতো একটা উটকো ঝামেলা সাথে নিয়ে ভার্সিটি তে এসেছে। মুখ কালো করে অহনা আবার মেঘাকে বললো,,,

চল না মেঘু ওই দিকটায় যাই,দেখ সবাই কত আনন্দ করছে আর আমরা দুজন একা একা এখানে দাঁড়িয়ে লোকজনের মুখ দেখছি।আর একটু পরেই তো নবীন বরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তখন তো সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়ই পাবো না।

তোকে কে বলেছিল আমাকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দিতে? তুই তো জানিস আমি শাড়ি পরে হাঁটতে পারি না তাই আমি কোথাও যেতে পারবো না,তোর মন চাইলে তুই যা।

অহনা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,,আজ আমাদের বরণ করবে ভার্সিটি আর আজ একটু সাজগোজ করে আসবি না তা হয় নাকি?চলনা স্টেজের ওখানে যাই।

মেঘা বিরক্ত মুখে অহনার দিকে তাকালো, এই মেয়ে টা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল খুব ভালো করতে পারে। বিরক্ত হয়ে বললো,, চল।

শাড়ির কুচি গুলো ভালো করে ধরে মেঘা আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো,ভয় হচ্ছে কখন না জানি আবার হুট করে কুচি গুলো খুলে যায়। ভয়ে ভয়ে হেঁটে স্টেজের সামনে যে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে ওখানে এসে মেঘা একটা চেয়ারে বসে পড়লো। অহনা ওকে বসতে দেখে বললো,,, তুই এখানে থাক আমি একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি।
অহনা চলে গেল।এদিকে অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে, সবাই একে একে এসে স্টেজের সামনে বসার জন্য রাখা চেয়ারগুলোতে বসেছে আর অনুষ্ঠান শুরুর অপেক্ষা করছে। চেয়ারে বসার পর শাড়িতে টান লেগে একটা পিন খুলে গেলো ওর, কিন্তু একেবারে সামনের চেয়ারে বসার জন্য না পারছে পিন ঠিক করে লাগাতে না পারছে উঠতে।উঠলেই শাড়ির কুচি গুলো সব খুলে যাবে, মনে মনে অহনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে কুচি গুলো শক্ত হাতে ধরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো, তার পর ভার্সিটির ওয়াশরুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। বারবার কুচি গুলো দেখছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে সে, নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটার জন্য ওর বিপরীত দিক থেকে আসা মানুষ টিকে দেখতে পেল না।ওয়াশরুমের সামনে আসা মাত্রই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিয়েও পড়লো না, নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে। ছেলেটার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ,মেঘার দিকে তাকিয়ে ছেলে টা হিসহিসিয়ে বললো,,,,

দেখে হাঁটতে পারো না মেয়ে,হাঁটার সময় চোখ কোথায় থাকে তোমার?
মেঘা ও কম যায় না,পাল্টা উত্তর দিলো,,,,

আমার চোখ হাঁটার সময় আকাশে থাকে কিন্তু আপনার চোখ কোথায় থাকে? আপনি দেখে হাঁটতে পারেন না কি,যেই দেখলেন ফাঁকা জায়গায় একটা মেয়ে একা একা আসছে ওমনি ধাক্কা খেলেন আর এমন ভাব করছেন যেন দোষ টা আমারি।

এক্সকিউজ মি, আমি কোনো থার্ড ক্লাস ছেলে নই যে যাকে তাকে দেখে ধাক্কা খেতে যাবো। এই ইশতিয়াক আহমেদ কে দেখে মেয়ে রা ধাক্কা খেতে আসে, ইশতিয়াক কাউকে দেখে ধাক্কা খেতে আসে না। আমার তো মনে হচ্ছে তুমিই ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়েছো আর এখন ভালো মেয়ে সাজার চেষ্টা করছো, আমাকে যে তুমি তোমার দিকে আকৃষ্ট করতে চাইছো সেটা কি আমি বুঝতে পারি নি ভেবেছো।ফারদার তোমাকে যেন আমি আর আমার সামনে না দেখি, এখন সরো সামনে থেকে, বলে ইশতিয়াক হনহন করে চলে গেলো ওখান থেকে।

ইশতিয়াকের কথা গুলো মেঘার মাথার উপর দিয়ে গেল,ও ছেলে টা কে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে চাইছে এই কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না।যাক ওই ছেলেটার কথা নিয়ে পরে ভাবা যাবে আগে নিজের শাড়ি টা ঠিক করতে হবে এই ভেবে যেই কুচি গুলো ঠিক করতে যাবে তখনি ওর মাথা ঘুরে উঠলো। কুচি গুলো সব খুলে নিচে পড়ে আছে আর,জীভে কামড় দিয়ে মেঘা ওভাবেই তাড়াতাড়ি করে একটা ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে গেল।

চলবে ইনশাইনশাআল্লাহ

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here