#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১৬]
#Sadiya_Jannat_Sormi ( লেখিকা)
আধ ঘন্টা ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাহদীর জন্য অপেক্ষা করছে মেঘা। সেই কখন বলেছে সে আসছে কিন্তু এখনো আসার কোনো খোঁজ খবর নেই, রাস্তার অন্য পাশে কিছু বখাটে টাইপের ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছে আর নিজেদের মধ্যে কি যেন কথা বলছে। অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো মেঘা, না পারছে সামনে এগিয়ে যেতে না পারছে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। ছেলেগুলো চারপাশে একবার দেখে নিয়ে মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো, আশপাশের এলাকা টা পুরো ফাঁকা। ছেলে গুলো কে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘার ভয় করতে শুরু করলো, এরকম একটা ফাঁকা জায়গায় কেউ নেই ও ওকে সাহায্য করার,মাহদী ও তো এখনো আসছে না। ছেলে গুলো এগিয়ে আসতে আসতে একেবারে মেঘার কাছে এসে দাড়ালো, মুখে একটা বিশ্রী হাসি ঝুলিয়ে একটা ছেলে জিগ্গেস করলো,,
কি ব্যাপার মেডাম, বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি? কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ড তো এখনো আসছে না, আহ্ বেচারি কত কষ্টই না পাচ্ছো তুমি তার জন্য। এইভাবে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কষ্ট পাবে সেটা তো আমরা আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পারি না,চলো তোমার বয়ফ্রেন্ডের অভাব টা আমরা সবাই মিলে পূরণ করে দেই, তোমার ও মজা হবে সাথে আমাদের ও,,কি বলো বন্ধুরা?
ছেলেটার কথায় সায় দিয়ে বাকি ছেলে গুলো বিশ্রী এক শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। ছেলেটার কথা শুনে মেঘার রাগ যেন ঠিকরে উঠলো, ঘৃন্য একটা কথা শুনে মন থেকে ভয় পাওয়া হয়ে প্রচন্ড রাগ জায়গা নিলো। হাতের মুঠো শক্ত করে মেঘা দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো ছেলেটার দিকে,তখনো ছেলে গুলো হেসেই চলেছে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে অন্য একটা ছেলে বলে উঠলো,কি মেডাম আমাদের কথা শুনে তোমার রাগ হচ্ছে কি নাকি ভালো লাগছে? এই এই তোরা দেখ,মেডাম আমাদের কথা শুনে কেমন রেগ,,,বাকি কথা টুকু শেষ হওয়ার আগেই মেঘা সজোরে ছেলেটার নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।মেঘার এমন আকস্মিক আক্রমনে একটু ভয় পেয়ে গেল ওরা, এমন শান্ত চেহারার একটা মেয়ে হঠাৎ করে এমন অশান্ত রূপ ধারণ করবে এটা যেন ওরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। কিন্তু ততক্ষণে ওদের দেরি হয়ে গেছে, পাশেই একটা লাঠি পরে ছিল, সেটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে মেঘা দুম করে সামনের আরেক টা ছেলেকে মা/র/লো। তারপরেই কোনো কিছু না দেখে এলোপাথাড়ি ভাবে ছেলে গুলোর উপর লাঠি চালালো মেঘা, এরকম হঠাৎ আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিল না ওরা তাই মেঘার মা/র খেতে লাগল। উল্টো আক্রমণ করার কোনো সুযোগই পেলো না ছেলে গুলো, মাটিতে পড়ে পড়ে তিন টা ছেলে একটা মেয়ের হাতে মা/র খেতে লাগল। কিছুক্ষণ মা/রা/র পর মেঘা হাত থেকে লাঠি টা পাশে ফেলে দিয়ে বললো,,
তোদের মতো জানোয়ার দের মে/রে আমার খুব মজা হয়েছে এখন, তোদের কি মজা হয়েছে মা/র খেয়ে?বাসা থেকে কি ভালো শিক্ষা পাস নি তোরা যে রাস্তায় একা একটা মেয়ে কে দেখে বাজে প্রস্তাব দিতে চলে এসেছিস। ঘরে কি তোদের কারো মা বোন নেই, তোদের মা বোন কে যদি এইভাবে রাস্তায় আটকিয়ে কেউ বাজে প্রস্তাব দেয় তাহলে তোরা কি করবি বল? মেয়েদের কে একটু সম্মান দিতে শেখ, তাহলে জীবনে অনেক ভালো কিছু করতে পারবি নাহলে মান সম্মান সব হারাতে হবে সবার সামনে।যা এখন আমার সামনে থেকে, আর হ্যা কোনো মেয়ের ইনোসেন্ট মুখ দেখে তাকে সহজ সরল ভাবিস না,সে ভয়ঙ্কর হতে পারে, খুব ভয়ঙ্কর।
মেঘার কথা গুলো শুনে ছেলেগুলো হুড়মুড় করে উঠে খোড়াতে খোড়াতে দৌড় লাগালো, যেখানে সেখানে মে/রে/ছে মেঘা, কোনো কিছু দেখে মা/রে/নি। ওদের দিকে এক নজর তাকিয়ে মেঘা, ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। ঘেমে গেছে খুব,ওড়নার আঁচল দিয়ে কপালের আর মুখের ঘাম মুছে নিয়ে সামনের দিকে তাকালো মাহদীর অপেক্ষায়।
আরো দশ মিনিট পর মাহদী প্রচন্ড স্পীডে গাড়ী ড্রাইভ করে মেঘার সামনে এসে ব্রেক করলো, অনেক দেরী হয়ে গেছে তার। কি করবে সে, ইমার্জেন্সি পড়ে গিয়েছিল তাই হসপিটালে আটকে গিয়েছিল। না জানি মেঘ পাখি এতো লেইট দেখে কি রিয়েকশন করে, আল্লাহ বাচাইয়ো আমাকে। মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে চাইতে মাহদী গাড়ির দরজা খুলে দিল, মাহদী কে অবাক করে দিয়ে মেঘা কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। মাহদী কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করতে লাগলো।
___________________________________________________________________
ইলিনা আহমেদের কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, ইশতিয়াক কে নিয়ে খুব চিন্তিত তিনি। ছেলেটার যে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারেন না তিনি, একেতো আয়শি ঝামেলা টার জন্য সবসময় মন খারাপ থাকে ইশতিয়াকের। নিজের ছেলের দিকে তাকাতেও লজ্জা পান ইলিনা আহমেদ আয়শির জন্য, তার কথা রাখতেই তো আয়শি কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে ইশতিয়াক, এখন মনে হচ্ছে যেন নিজের হাতে নিজের ছেলের সুখ নষ্ট করে দিলেন তিনি। বেশ কয়েকদিন ধরে ইশতিয়াক শুধু রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে, খাবার সময় হলে অনেক ডাকাডাকি করলে রুম থেকে বের হয় যদিও, তখন ওর চোখ মুখ থাকে ভেজা। কোন গোপন যন্ত্রণায় ভুগছে ছেলে টা, সেটা তিনি মা হয়েও জানতে পারছেন না। শুধু বসে থাকলেই হবে কি মামনি, আমার আর ইশতিয়াকের বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে হবে তো তোমাকে,, বসার রুমে সোফায় বসে হাতে কফির মগ নিয়ে ভাবছিলেন ইলিনা আহমেদ, হঠাৎ আয়শির ডাকে সম্বিত ফিরে পেলেন।ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আয়শির দিকে,মেয়ে টা বিয়ের জন্য এতো পাগল হয়েছে কেন? আয়শি ইলিনা আহমেদের পাশে পায়ের উপর পা তুলে নিয়ে বসে বললো,,যাও তো মামনি, আমার জন্য এক কাপ ব্লাক কফি করে নিয়ে এসো। তারপর তুমি আমি দুজনে মিলে আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করি। ইলিনা আহমেদ আয়শির কথায় বিরক্ত হয়ে নিজের হাতের কফির মগ টা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,
এই যে নাও তোমার ব্লাক কফি। আমি এখনো ছুঁয়েও দেখিনি, তুমি এটাই নিতে পারো আর হ্যা এতো বিয়ে বিয়ে করে আমার মাথাটা খেয়ো না তো তুমি।একে তো আমার ছেলে টা শান্তি তে নেই, তার উপর ম/রা/র উপর খাঁড়ার ঘা, অসহ্য।
হনহন করে উঠে চলে গেলেন ইলিনা আহমেদ, মাথা টা একটু বেশিই গরম হয়ে গেছে ওনার।যেদিন তিনি এই আপদ টাকে নিজের ছেলের জীবন থেকে দূর করতে পারবেন সেই দিন শান্তি পাবেন তিনি।
ইলিনা আহমেদের এই ব্যবহার টা দাঁতে দাঁত চেপে হজম করলো আয়শি, এখন তো তার মাথা গরম করলে চলবে না। এইসব কিছুর রিভেঞ্জ নিবে সে, একবার এই বাড়ির বউ হয়ে আসুক আগে তার পর। কফির মগ টা রেখে উঠে দাঁড়ালো আয়শি,মেঘা নামের মেয়েটার সাথে দেখা করতে হবে এখন।মেয়ে টা কে বেশ কয়েকদিন আগেই লোক পাঠিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ইশতিয়াকের নাম করে।কি মেয়ে এটা কিছুতেই বুঝতে পারলো না আয়শি, ওকে শুধু বলা হয়েছিল ইশতিয়াক ওকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য বাইরে ঘুরতে যেতে চায়।আর মেয়ে টা তাৎক্ষণিক রাজী হয়ে গেছে,আর কিছু বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝতে পেরেছে যে মেয়েটা ছ্যাছড়া টাইপ। ইশতিয়াক দের বাসা থেকে বের হয়ে নিজের গাড়ি টা নিয়ে আয়শি পুরোনো একটা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল, ওখানেই বন্দি করে রাখা হয়েছে মেয়ে টা কে।
#চলবে