#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১৫]
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)
চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলো মেঘা, তারপরেই হঠাৎ গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার করে বললো,,অহনা।
মেঘার এমন হঠাৎ চিৎকারে অহনা কিছু টা কেঁপে উঠল সাথে লিরা ও, হঠাৎ কি হলো মেঘার?মেঘা রাগে শুধু সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে, মনে হচ্ছে কাউকে যেন মে/রে ফেলবে। মিনিট দশেক পর মেঘা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, তুই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা অহনা,তোর মুখ টাও আমি আর দেখতে চাই না।
কেন কি করেছি আমি, আমি তো আগেই বলেছি তোরা আমাকে আমার কথা শুনে কিছু বলতে পারবি না।(অহনা)
অহনা তুই এবার যাবি নাকি আমি এখান থেকে চলে যাবো,লিরা তুই ও যা এখন আমার সামনে থেকে।(মেঘা)
মেঘার এমন রাগ দেখে অহনা আর লিরা দু’জনেই মেঘার রুম থেকে সুরসুর করে বেরিয়ে গেল। অহনার উপর এখন রাগ হচ্ছে মেঘার, প্রচুর রাগ হচ্ছে।ওর সাহস হয় কি করে ওর ভালোবাসার পরিমাপ করার,যার জন্য ও এখন সবকিছু করতে পারে তাকেই নাকি ও ভালোবাসেনা এই কথা আজ অহনার কাছ থেকে শুনতে হলো। অহনা খুব ভালো করেই জানে যে মেঘা মাহদী কে ভালোবাসে তারপরও ও কি করে ওই থার্ড ক্লাস ছেলে টাকে ওর জন্য পছন্দ করলো। কালকে বিকালে ও নিজের চোখে দেখেছে অহনা ইশতিয়াকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আজকে বলছে ও ওর প্রতি কোনো রকম ফিলিংস নেই।ও ওর জন্য ওই ছেলে টা কে পছন্দ করেছে, এই সবকিছু অহনার মিথ্যে কথা, সাজানো কথা। অহনা যখনই কোনো কিছু পছন্দ করে তখনই সেটা মেঘার নামে চালিয়ে দিয়ে সেটা আদায় করে নেয়, এখনো সেটাই করতে চাইছে। সবসময় তো এটাই করে এসেছে তার সাথে, খালামনির কাছে ওর পছন্দের জিনিস মেঘুর নামে চালিয়ে দিয়ে আদায় করেছে কারণ ও জানে খালামনি মেঘার কোনো ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। এখনো তাই ভাবছে অহনা,মেঘার নাম করে সে ওই ছেলে টা কে নিজের কাছে টানবে,সেখান থেকে ওর তো ফায়দা হবেই সাথে মেঘার জীবনটাও শেষ করবে। ইশতিয়াক কে অহনা তো নিজের করবেই সাথে মাহদী কেও মেঘার জীবন থেকে দূর করে দেবে। মাহদী ছাড়া মেঘার জীবন অচল এখন, রুম থেকে বেরিয়ে গেল মেঘা, আজকে কিছু একটা করতেই হবে ওকে নাহলে অহনা ওর সবকিছু শেষ করে দিবে।
সময় কাটছে সাথে জীবনের সবকিছুর পালা বদল হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা খুব নিষ্ঠুর হয়, বিশেষ করে সেটা যদি প্রিয় মানুষের কথা হয় তো।কেউ কখনো তার প্রিয় মানুষ টা কে হারাতে চায় না, তেমনি মেঘা ও চাইলো না। খালামনি কে বলে সে একটা ছাত্রী হোস্টেলে এসে উঠেছে,ওই বাসায় ও আর থাকতে পারছে না অহনার জন্য। লিরা কেও সাথে নিয়ে এসেছে, কারণ খালামনি ওকে বিশেষ পছন্দ করেন না।আজ এক মাস হলো ওদের হোস্টেলে আসার, এখানকার সমস্ত খরচ অবশ্য খালামনিই চালাচ্ছেন। এখানে আসার পর অহনার সাথে আর কোনো রকম যোগাযোগ রাখেনি সে, খালামনি মাঝে মাঝে ওদের মধ্যে কি হয়েছে তা জানতে চাইলেও অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে মেঘা, কিছু বলেনি খালামনিকে। এখানে হোস্টেলের সামনে একটু হাঁটাহাঁটি করার জায়গা আছে, ছোট খাটো একটা আঙ্গিনা বলা চলে। বিকেলে মেঘা সেখানেই হাঁটাহাঁটি করছিল আর হুমায়ূন আহমেদের মেঘ বলেছে যাবো যাবো বই টা পড়ছিল তখন হঠাৎ দেখলো মাহদী বিধ্বস্ত মুখে আসছে এদিকেই।বই টা বন্ধ করে মেঘা এগিয়ে গেল সামনের দিকে, ততক্ষণে মাহদী ও মেঘার সামনে এসে দাড়ালো। কঠিন মুখ করে মাহদীর দিকে তাকিয়ে রইল মেঘা,অন্য দিন মাহদী আসলে মুখে হাসি যেন ধরে না মেঘার কিন্তু আজকে মেঘে ঢাকা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে আছে ওর মুখ টা। মাহদী কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ মেঘার হাত ধরে বললো,,
সরি মেঘ পাখি। আমি হসপিটালে কাজের চাপে বিজি ছিলাম খুব তাই তোমার ফোন উঠাতে পারিনি।প্লিজ আর রাগ করে থেকো না, তুমি তো জানো তুমি এরকম আমার উপরে রাগ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।প্লিজ মেঘ পাখি, তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো,(মাহদী)
মেঘা মাহদীর থেকে ওর হাত টা সরিয়ে নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছলো। সকাল থেকে এই পর্যন্ত বিশ বারের মতো মাহদী কে ফোন করেছে মেঘা কিন্তু একবারও ওকে ফোনে পায় নি। কতটা টেনশনে ছিল মেঘা সে খেয়াল কি আছে তার,সে তো তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।তার জন্য টেনশন করতে করতে আরেকজন এইদিকে শেষ হয়ে যাবে সেটা ও খেয়ালই করবে না। কিছুক্ষণ পর মেঘা বললো,,
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কতটা ব্যস্ত।
রাগ করে বললে কথা টা?(মাহদী)
মেঘা প্রতি উত্তরে কিছু বললো না, অন্ধকার মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। মাহদী আর মেঘার উত্তরের অপেক্ষা করলো না, ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে চললো সামনের দিকে। বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো মেঘা, বলিষ্ঠ হাতে যেই ভাবে ওর হাত ধরেছে মাহদী,এই হাত ছাড়ানো ওর মতো মেয়ের পক্ষে অসম্ভব। অগত্যা বাধ্য হয়েই মাহদীর সাথে সাথে গেল মেঘা, না গিয়ে আর কোনো উপায় ও নেই।রাগ করেছে মেঘা কিন্তু এখন যদি সে মাহদীর সাথে না যায় তাহলে মাহদীই গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।
বেশ কিছুদূরের একটা পার্কের একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে মাহদী আর মেঘা।এক ঘন্টা আগেই ওরা এসেছে এখানে,মেঘা কে নিয়ে এসে মাহদী অনেক কিছুই বলেছে ওকে।ওর মায়ের ব্যাপারে, ওর ব্যাপারে ওর পরিবারের ব্যাপারে। সম্পর্কের এক মাস হলেও এখনো অনেক কিছুই জানানো হয়নি মেঘা কে তাই মাহদী ওকে একটা নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে এসে সবকিছু বললো।মেঘা মাহদীর কথা গুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর বললো,,
তুমি এখন কি চাও, তোমার মা তো তাহলে আমাকে আর মেনে নেবেন না। যেহেতু আমার অপরাধ আমি একটা এতিম মেয়ে,অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়েছি, নিজের একটা পরিবার নেই আমার।(মেঘা)
তুমি বিষয় টাকে এইভাবে নিচ্ছো কেন মেঘ পাখি?এতে তোমার তো কোনো দোষ নেই, পরিবার তো আর তুমি ইচ্ছে করে হারাওনি।ভাগ্য তোমাকে পরিবারের থেকে আলাদা করে দিয়েছে তাই বলে এখানে তোমার কোনো দোষ হতে পারে না। সেজন্য আমি চাই তোমাকে একবার মায়ের সাথে দেখা করাতে, মা যদিও তোমাকে এক্সেপ্ট করবেন না তারপরও আমি একবার দেখা করাতে চাই। তুমি কি দেখা করবে মায়ের সাথে, তুমি যদি না চাও তাহলে দেখা করাবো না.(মাহদী)
আমি দেখা করবো ওনার সাথে, তোমার ইচ্ছের জন্য হলেও আমি ওনার সাথে দেখা করবো।(মেঘা)
আচ্ছা, তো ঠিক আছে, তুমি তাহলে কালকে বিকেলে রেডি হয়ে থেকো আমি হসপিটালে থেকে ফেরার পথে তোমাকে নিয়ে যাবো, ওকে?(মাহদী)
মেঘা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। এরপর কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ, কারো মুখে আর কোনো কথা নেই।মেঘা অনেক্ষণ মাহদীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, এই ছেলেটা কে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না সে। মুখের ভাবভঙ্গি সবসময় অন্যরকম হয়ে থাকে, মনে হয় হাসছে তারপরেও হাসি দেখা পাওয়া কষ্টকর। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির মত হাইট হবে মাহদীর, গায়ের রং হালকা ফর্সা, যেটুকু ফর্সা হলে একটা ছেলে কে সুন্দর লাগে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বোঝা যায় না খুব একটা, মাথায় চুল খুব অল্প। মনে হয় আর কিছুদিন পরেই টাক পড়ে যাবে মাহদীর, চোখে একটা ব্লাক ফ্রেমের গ্লাস থাকে সবসময়।এই অল্প একটু সৌন্দর্যেই মাহদী কে অসম্ভব রকমের ভালো লাগে মেঘার কাছে, কেন জানি না অদ্ভুত একটা মায়া কাজ করে তার প্রতি।সে যখন তার দিকে তাকিয়ে হাসে, তখন মনে হয় যেন সারাজীবন এই হাসি দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবে সে। ছেলেদের হাসি ও যে এতো সুন্দর হয় সেটা মাহদীর প্রেমে না পড়লে মেঘা কখনো জানতে পারতো না। মাহদী কে খুব বেশি ভালো লাগার মতো কোনো কারণ নেই কিন্তু তারপরেও মনে হয় যেন হাজার টা কারণ রয়েছে মাহদী কে ভালো লাগার, তার প্রেমে পড়ার, তাকে ভালোবাসার।
#চলবে