ইহান ভাই, পর্ব:২

0
501

#ইহান_ভাই
#সাদিয়া


“আসসালামু আলাইকুম।” মিষ্ঠ সুরে বলল মিহু। তার সুরেলা কন্ঠের মধুতে ইহান পাগল হলো ফের। ফুলে লুকিয়ে থাকা মধুর খুঁজে পাগল ভ্রমরের মতো তা গ্রহণ করতে প্রয়াস হচ্ছে। ইহান তখনো চুপচাপ ছিল। মিহু সালাম দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। সে সালামের জবাব আশা করে না। কারণ এই ছেলেটা হয়তো বিদেশ গিয়ে আরো বাজে হয়ে গিয়েছে। চুলের কি কাটিং। বকে যাওয়া ছেলেদের মতো আধুনিকার ছুঁয়া লোমে লোমে। আফজাল সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে মোটা স্বরে বলল
“ইহান বাবা কতবার না বলেছি সালামের জবাব দাওয়া ওয়াজিব। উত্তর নাও।”

“ও সরি আব্বু। ওলাইকুম আসসালাম।”

“জবাব টা দিতে মনে হয় দাঁত ভেঙ্গে পড়েছে।” মনে মনে মিহু বলল।

“চাচ্চু আমি এখন ঘরে যাই।”

আফজাল সাহেব কিছু বলার আগেই ইহান বলে উঠল
“আমাকেও রুমে যেতে হবে। শাওয়ার না নিলে শরীর কিচকিচ করা শুরু করে দিবে।”

রেহেলা বেগম বললেন “হ্যাঁ বাবা তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আই। আমি তোর জন্যে খাবার তৈরি করছি। তোর সব পছন্দের খাবার আছে। তুই গলদা চিংড়ির ভোনা খেতে পছন্দ করিস না? ওটা রান্না করেছি। আবার ডিমওয়ালা ইলিশ মাছও আছে। ছানার পায়েস তো আছেই যা যা তাড়াতাড়ি যা।”

“উফফ আই লাভ ইউ আম্মু।”
মুচকি হাসলেন তিনি। ইহান মিহুর দিকে তাকিয়ে দেখল সে যাওয়ার জন্যে পা বাড়িয়েছে।
“এই মিহু কুহু আমাকেও নিয়ে যা।”

রাগে মিহু দাঁত কিড়িমিড়ি করে আনল। আগের অভ্যাস মনে হয়না মুটেও পাল্টেছে। অভদ্র লোক একটা। মিহু কিছু বলল না। চুপচাপ হাটতে লাগল। লম্বা কদমে ইহান সিঁড়িতে উঠে ফিসফিস করে বলতে লাগল “তুই উপরে যা পরে বুঝবি।” ইহান আবার আগের মতো হাটতে লাগল। মিহুর শরীর জ্বলে যাচ্ছে। তার রুমটাও যে কেন ওপাশেই থাকতে হলো!

রেহেলা বেগম রান্না ঘরে গেলেন সাথে পপিও। স্বপ্না নিজের মেয়ের দিকে তাকাতেই সে ঠোঁট উল্টে ফোন টিপতে টিপতে চলে গেল।

মিহু নিজের রুমের থেকে একটু দূরে গেল। ইহানের রুমের কাছাকাছি গিয়ে বলল “ওই যে আপনার রুম।” তারপর পাশ কাটিয়ে আসতে চাইলে ইহান তার হাত ধরে নেয় শক্ত করে। এক টানে রুমের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিহু খানিক ভয় পেয়ে যায়। ইহান দাঁত কিটে মিহু কে দরজার পাশে দেওয়ালে চেঁপে ধরে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখে মেয়েটাকে। রাগে যেন লাল হয়ে যাচ্ছে।

“ছাড়ুন আমাকে। কি ধরনের অসভ্যতা এটা?”

“আমাকে ইগনোর করছিলি?”

“ছাড়ুন বলছি।”

“উত্তর দে।”

“আপনি এমন কেউ না যে আপনাকে নিয়ে আহামরি ভাবতে হবে।”

“হবে। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে। আর ভাববি।”

রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে মিহুর। এমন করে রাক্ষসের মতো ধরেছে ছাড়ানোও যাচ্ছে না।

“আমাকে যদি আবার এড়িয়ে যাস তো পরে মজা বুঝবি।”

ইহান ছেড়ে দিল মিহু কে। মিহু রাগি লুকে তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল। হাত দুটি খুব ব্যথা করছে।

—-
রাতের খাবার সবাই এক সাথে বসে খায়। শুধু তিন জা পরে বসে। ইহান খেতে এসে দেখতে পেলো মিহুর পাশের চেয়ার টা খালি। তিতাস বসতে যাবে তার আগেই ইহান এসে বসে পড়ল। তিতাস বোকার মতো তাকিয়ে রইল ইহানের দিকে। ইহান হেসে জিজ্ঞেস করল, “তিতাস কেমন আছিস?”

“ভালো আছি ইহান ভাইয়া তুমি?”

“এইতো।”

পাশ থেকে রেহেলা বেগম তিতাস কে তিতুনের পাশে গিয়ে বসতে বলল। তিতাস মিহুর দিকে তাকিয়ে তিতুনের পাশে গিয়েই বসল। আড় চোখে মিহু কে দেখছে সে। মুখের ভাব কেমন করে বসে আছে। দাঁত কিটমিট করছে। রাগি লুকে একবার ইহানের দিকে তাকাল। ইহান তাকে পাত্তা না দিয়ে মুখে ভাত দিতে বলল।

মিহুর গলা দিয়ে ভাত নামছেই না। ইহান কে সেও যে কোন সহ্য করতে পারছে না। সকালের জন্যে আরোই সহ্য হচ্ছে না। মুখে ভাত দিতেই পায়ে কিছু একটা ঠেকল। মুহূর্তে পায়ের উপর আরেকটা পা অনুভব করল। সে জানে এটা বজ্জাৎ লোকটা ছাড়া কেউ না। কারণ এমন এর আগে কখনো হয়নি। মুখের ভাত হঠাৎ গলায় গিয়ে আটকাল। বিশম খেয়ে কাশতে লাগল মিহু। গ্লাসটায় হাত বাড়াতেই ইহান টেনে নিয়ে গ্লাসে মুখে দিল। ওদিকে তার বেহাল অবস্থা।

রেহেলা বেগম বললেন, “ইহান বাবা পানিটা দে তাড়াতাড়ি মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।”

“আমি কেন দিতে যাবো আম্মু? ওরটা ও নিতে পারে না?”

মিহু রাগে ফেটে যাচ্ছে।

আফজাল সাহেব বললেন “এ কি কথা ইহান? পানিটা দাও ওকে।”

ঠোঁট বাকিয়ে মিহুর কাছাকাছি গিয়ে বলল “আব্বু আম্মু বলছে বলেই দিচ্ছি।”

ইহান দেওয়ার আগেই মিহু টান মেরে ওর হাত থেকে পানিটা নিয়ে টগটগ করে খেয়ে নিল। তারপর ইহানের দিকে তাকাল। সে কি সুন্দর অবুঝের মতো হাসল। মিহু নিজের পা তুলতে গিয়ে বুঝতে পারল অসভ্য ছেলেটা বেশ জোরেশোরে তার পা চেঁপে রেখেছে। এখন তো পায়ের চামড়া জ্বলা শুরু করে দিয়েছে। চোখ লাল করে তাকাল মিহু। ইহান নিজের মতো করে ভাত খাচ্ছে। যেন কিছু হয়ই নি। মিহু নিজের পা আবার টান দিল কিছুই হলো না এতে। ইহান তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। ইহান বিড়বিড় করল “বেশ মজা লাগছে তাই না?”

মিহুও তাল মিলিয়ে বলল “মজা তো এবার লাগবে ডেবিল মশাই। যখন আমি চাচ্চু কে বলব আমার খাবার শেষ আর আমি উঠে যাচ্ছি।”

ইহান এতে ভাবান্তর হলো না। মিহু রাগ কে দমিয়ে হাসি মুখে বলল “চাচ্চু আমার খাওয়া শেষ আমি পড়তে যাচ্ছি।”

“আজকাল কি পড়াশুনায় মন বসেছে নাকি মিহু মা?”

“জ্বি হ্যাঁ চাচ্চু।”

“ঠিক আছে যা।”

“….

অনেকটা সময় যাওয়ার পরও যখন দেখল মিহু বসে আছে তখন পপি বললেন “কিরে তুই কি আরো খাবি নাকি? বসে আছিস যে? খিদে মিটেনি?”

মিহু কি বলবে যানে না। তার পা এখনো বর্বর লোকটার দখলে। সে ইহানের দিকে তাকল। আফজাল সাহেব বললেন “কোনো সমস্যা মিহু?”

“আ আসলে চাচ্চু পা.”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই পা হাল্কা হয়ে গেল। খানিক ঝুঁকে দেখতে পেল ইহান পা সরিয়ে নিয়েছে। মুচকি হেসে বলল
“না চাচ্চু কিছু না। মনে হয়ে ছিল কোনো পাগলা কুত্তা কামড়ে দিয়েছে।” ইহানের দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা। সে বেশ বুঝেছে এটা তাকেই বলল মিহু।

“সেকি মিহু কুকুর আসবে কোথা থেকে?”

“এমনি বললাম তিতাস ভাইয়া।”

মিহু চলে গেল। দাঁত কিটে ইহান তাকিয়ে দেখল তার যাওয়া।

সবাই যখন যার যার ঘরে শুয়ে গেছে ইহান তখন মিহুর ঘরের দিকে রওনা হলো। দরজায় ধাক্কা দিতেই দেখল ভেতর থেকে লাগানো। সে এবার আস্তে করে টোকা দিল। ভেতর থেকে শব্দ শুনা গেল “কে?”

ইহান জবাব না দিয়ে আবার টোকা দিল। মিহু আবার বলল “কে ওখানে?”

ইহান এবার পরপর দুইটা টোকা দিল। মিহুর ধরালো গলা শুনা গেল “আরে কে ওখানে?”

“এত কথা না বলে দরজা টা খোল।”

মিহু ভ্রুকুঞ্চন করল।

“মিহু কুহু খুলবি দরজাটা?”

“ও আপনি? পারব না যান এখান থেকে।”

“মিহু তোকে দরজা খুলতে বলছি।”

“বললাম তো খুলব না।”

“আমি কিন্তু দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকব। তখন কিন্তু তুই..”

“ও তাই নাকি? আপনার গায়ে এত শক্তি? তো ভাঙ্গেন না। কে না করেছে? শব্দ পেয়ে যখন চাচ্চু আর মামুনি এসে দেখবে তার ছেলে..”
ভেতর থেকে হাসির শব্দ শুনা গেল। রাগে ইহান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। দাঁত চেঁপে বলল “কাল তোকে দেখে নিব দেখিস তুই।”

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here