#ইরিনা_ইরিন
পর্ব ঃ- ০৩
সকাল সকাল নাস্তা সেড়েই বেড়িয়ে পড়লাম কাজে। আজকের দিনের প্রধান কাজ হচ্ছে পিয়াসার সম্পর্কে যতটুকু জানা আছে তার চেয়ে একটু বেশি খুঁজে দেখা। পিয়াসার পরিবারের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ওদের কথাবার্তা থেকে কিছুই জানা যায় নি। ওরা আগের স্টেটমেন্ট অনুযায়ীই কথা বলেছে৷ পিয়াসা হয়তো পরিবারের সাথে ব্যাক্তিগত কোনো আলাপ করতো না। না করাটাই স্বাভাবিক কারন যেসব মেয়েরা নিজে পছন্দ করে বিয়ে করে তারা সাধারণত বরের বা শ্বশুরবাড়ির দোষগুলো নিজের পরিবারের কাছে প্রকাশ করতে সংকোচ করে।
আমি পিয়াসার কিছু কাছের মানুষের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। এরা ঠিক কতোটুকু কাছের জানি না তবে পিয়াসা এদের কাছে সুখ-দুঃখ শেয়ার করতে পারে।
প্রথমে আমি একটি কফিহাউজে ঢুকলাম। এখানে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে পিয়াসার তিন বন্ধু শিহাব, পিকু, প্রিহা।
” আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার কথায় দেখা করতে আসার জন্য ধন্যবাদ।”- ইরিন।
” না সময় ব্যয় কেন হবে! আমরাও চাই আমাদের বন্ধু কেন আত্মহত্যা করলো তা জানতে।”
” হুম, আপনার নাম?”
” আমি প্রিহা”
” আচ্ছা আপনাদের সাথে পিয়াসার যোগাযোগ কেমন ছিল আর ও কখনো ওর খারাপ লাগা শেয়ার করেছিল কিনা কিছু নিয়ে? ”
” আমি পিকু। আমার সাথে পিয়াসার কথা হতো মাঝে মধ্যে। বিয়ের প্রথম দিকে নতুন সংসারে ওর মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। প্রথম দিকে ওদের একটু ঝগড়াঝাটিও হতো অবশ্য সেসব কোনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ছিল না। রিয়াদ ভাই ওকে সত্যিই অনেক ভালবাসে। বছর খানেক পর ওদের আর তেমন ঝগড়া হতে শুনি নি। একে অপরকে ওরা ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছিলো । সবমিলিয়ে ও সুখিই ছিল।”
” আচ্ছা মি.রিয়াদের আগে ওর কী আর কারো সাথে সম্পর্ক ছিল?”
“ছিল একজন, তবে বেশি দিন না ৪/৫ মাসের মতো হবে। তারপর ছেলেটাই ওকে ছেড়ে চলে যায়।”- প্রিহা।
“সেই ছেলেটা কী আর পরে ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল?”
” না, সেরকম কিছু পিয়াসা কখনো বলে নি।”- শিহাব।
” আচ্ছা ওর এক বন্ধু ছিল রিয়া। ওকে আপনারা চিনেন?”
” না, রিয়া ওর কলেজ ফেন্ড ছিল যার কারণে আমরা ওকে তেমন চিনি না। কিন্তু রিয়া যখন ওর বাসায় থাকতো পিয়াসা একদিন বলেছিল।রিয়াকে নিয়ে অনেক ঝামেলায় আছি। বাসায় এনে ভুল করলাম কিনা কে জানে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন? তখন বলেছিল ওর নাকি ব্রেক আপ হয়েছে তার পর থেকে অনেক পাগলামি করছে। ঠিকমতো খায় না, ঘুমায় না, কখন কোনো উলটা পালটা কাজ করে বসে কিনা কে জানে।”- পিকু।
” হুম বুঝেছি। আচ্ছা রিয়ার এড্রেস কিংবা পরিচিত কারো ফোন নাম্বার দিতে পারবেন?”
” না সেরকম কিছু নেই তবে নিউমার্কেট ওর এক ভাইয়ের দোকান ছিল একদিন পিয়াসা আমাকে নিয়ে গেছিল। দোকানটার নাম গিফট গ্যালারি এরকম কিছু ছিল।”
” আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাদের।”
বিকেল বেলা রিয়াদ সাহেবের বাসায় যাব বলেছিলাম তার আগে আরও কয়েকটা কাজ সেড়ে নিতে পারলে ভালো হতো। দেখি কতোদূর কী হয়।
বিকেল ৫ টা,
রিয়াদ সাহেবের বাসায় বসে আছি। উনি নাকি বাইরে আমি এসেছি শুনে আসছেন এরকমই বললেন উনার মা। উনি আসার আগে না হয় উনার মায়ের সাথেই কথা বলে নিই।
” আন্টি আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে?”
” জ্বি কইন।”
” আপনার বৌমা কেমন ছিল?”
” বড় ভালা বউ আছিল গো আমার। কিতা থাকি যে কিতা হই গেল! পুয়াটার মুখোর বায় চাওয়া যায় না। কতো করি বুঝাইলাম আরকখান বিয়া করতো, আমার কথাই হুনে না। ইলা দিন যাইবো নি কউ চাইন গো মাই। আমি আইজ আছি কাইল নাই। ছোট পুরি ইগুরে কে দেখতো। তুমি কে আমি চিনরাম না, তাও কই একটু বুঝাইও গো মাই আমার পুয়াগুতারে নিজর পুরির মুখা চাইয়া হইলেও যেন একখান বিয়া করে। ”
” ভদ্রমহিলার কথা সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। উনি হয়তো বুঝাতে চাইছেন উনার ছেলের আবার বিয়ে করার কথা। আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না তবুও একটা প্রশ্ন না করলেই নয়। তাই করেই দেখি- আচ্ছা আপনি তো এখানে মাঝে মধ্যে এসে থাকতেন, পাশের বাসার কেউ কি পিয়াসার কাছে গল্প করতে আসতো।”
” হয় আইতো তো, উপরর তালার তিতির ওর মা আইতো দেখতাম প্রাইদিন। কিতা কিতি মাততো তারা বাক্কা সময়।”
” ও, উনি কী এখনো এ বাসায় থাকেন?”
” হয়, থাকেন তো আমি ডাক দিতাম নি?”
” জ্বি একটু ডেকে দিলে ভালো হতো।”
” আইচ্ছা বও তুমি আমি ডাকিয়া আইরাম।”
মহিলা চলে যাওয়ার পর পুনরায় মনে করার চেষ্টা করলাম উনি ঠিক কি কি বলেছিলেন। কিন্তু না তা আমার দ্বারা হলো না। তবে এরকম আঞ্চলিক ভাষা শুনতে ভালোই লাগে।
ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে উনি আরেকজন মহিলাকে নিয়ে হাজির হলেন। ওই মহিলাকে দেখে কিছুটা নার্ভাস লাগছিল। আমি উনাকে বললাম-
“আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে কি?”
“জ্বি বলেন।”
” ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এখানে এসে বসেন।”
” না আমি এখানেই ঠিক আছি।”
” কিন্তু আমার ঠিক লাগছে না। বসুন আপনি।”
অবশেষে মহিলা এসে বসলেন-
“আপনার নাম কি?”
” তমালিকা।”
” পিয়াসার সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক? ”
” ভালো। ”
” ঘটনার দিন কী আপনি এই বাসায় এসেছিলেন?”
“না।” – কথাটি উনি অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন। আমার কেমন খটকা লাগলো।
” আমি যদি বলি ওইদিন রাতেও আপনি এসেছিলেন।”
” না না আমি আসি নি।”
” দেখুন মিথ্যা কথা বললে কিন্তু অপরাধ না করলেও শাস্তি পেতে হবে।”
” ম্যাডাম আমি কিছুই করি নি। আমি শুধু সন্ধ্যা পরে চিনি নিতে এসেছিলাম।আমার বাসার চিনি শেষ হয়ে গেছিলো। তখনতো পিয়াসা ঠিক ভাবেই কথা বলছিলো।”
এরমধ্যেই মি রিয়াদ চলে আসলেন। মহিলাকে প্রশ্ন করলে আরও কিছু বেড়িয়ে আসতে পারে কিন্তু মি রিয়াদ এর সামনে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।
” আপনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যান। প্রয়োজন হলে আমি যোগাযোগ করবো।”
” আচ্ছা।”
মহিলাটা ফোন নাম্বার একটি কাগজে লিখে চলে গেলেন।
” সরি ম্যাডাম আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।”- মি.রিয়াদ।
” সমস্যা নেই।”
” কতটুকু কী জানতে পারলেন ম্যাডাম?”
“আপনি যদি কিছু কথা আড়াল করেন তাহলে কীভাবে জানতে পারবো?”
“আমি কী আড়াল করলাম?”
” রিয়ার সাথে আপনার কী সম্পর্ক? ”
” বিশ্বাস করুন ম্যাডাম রিয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“আমি আপনার দুবছর আগের কল রেকর্ড চেক করেছি মি. রিয়াদ। সেখানে অসংখ্য বার আপনি রিয়া নামের একটি কন্টাক্ট নাম্বারে কথা বলেছেন।”
” আমি কথা বলেছি ঠিক ম্যাডাম কিন্তু ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি আপনাকে খুলে বলছি সবটা।”
” তার আগে এটা বলুন আমি যে রিয়ার সাথে কথা বলবো বলেছিলাম। আপনি কী ব্যাবস্থা করেছেন?”
” আমি একবার ওকে ফোনে পেয়েছিলাম কিন্তু ও বললো ওখানে ওর অনেক কাজের চাপ তাই পরে সময় বের করে জানাবে।”
” এইতো আবারও আপনি খুব সুন্দর করে মিথ্যা কথা বললেন।”
“কীভাবে ম্যাডাম?”
” রিয়া এখন দেশেই আছে আর আপনি এই মাত্র ওর সাথে দেখা করে ফিরলেন।”
আমার কথা শুনে মি.রিয়াদ এতোটাই চমকে উঠলেন যে উনার হাতে একটি চাবির গোছা ছিল সেটি নিচে পরে গেল।
আঁখি দেব তৃপ্তি