ইভিল মিস্ট্রি,পর্ব-১
Riaz Raj
– অদ্ভুত তো! মাত্র ২ মাস চলে বাচ্চাটার।সে কিভাবে কথা বলবে?
– এইতো,জানতাম তুমি বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু আরিফ এইটাই সত্যি।আমাদের ২ মাসের বাচ্চাটা রুমে একা একা কথা বলে।আমি নিজের কানে শুনেছি।
– লোক হাসাবে? নাকি আমার ইজ্জৎ মাটিতে মিশিয়ে দিবে?
– আমাকে দেখে কি তোমার পাগল মনে হয়?
– না মেঘা।তা কখন বললাম।কিন্তু এইটা অবিশ্বাস্য। তোমার কোথাও ভুল হয়েছে হয়তো।
– আমার কোথাও ভুল হচ্ছেনা,আর এইটাই সত্য।বাড়িতে তো আমি একাই থাকি।অফিস থেকে ফিরেও তুমি অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো। তুমি কিভাবে জানবে এতো কিছু।
রাগ করে মেঘা চলে গেলো বেডরুমে।আরিফ মাথায় হাত দিয়ে সোপায় বসে আছে। অদ্ভুত কথা শুনিয়ে গেলো মেঘা।চিন্তিত হয়ে যায় আরিফ সাহেব।
এদিকে রাত ১২ টার বেশি বাজতে চলেছে।আরিফ ধীরে ধীরে বেডরুমে যায়। রুমের লাইট অফ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে। মেঘা বলে উঠলো,”খেয়েছো?। আরিফ কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতি হয়তো কেও মেনে নিতে পারবেনা।
পরেরদিন সকালে আরিফ অফিসে চলে যায়। মেঘা রান্নাঘরে ভাত বসিয়ে তরকারি কাটছে।হটাৎ উপর তলা থেকে এক অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। মেঘা কান খাড়া করে শুনতে চাইলো কিসের শব্দ।সেখানে মেঘা শুনতে পায় কোনো এক অচেনা পুরুষের মোটা কন্ঠ। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে মেঘার।কন্ঠটা ভারি ভয়ংকর। যেনো দেওয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে পুরো বাসায় ঘুরে ভেড়াচ্ছে। কাঁপুনি উঠতে দেরি হয়নি মেঘার।মনে পড়ে যায় তার বাচ্চার কথা।মেঘা রান্নাঘর থেকে এক দৌড়ে ২য় তলায় চলে গেলো। দরজা খুলবে, তখনি মেঘা কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পায়।সেখানে দুইটা মানুষের কন্ঠ। একটা হচ্ছে অনেক মোটা কন্ঠ,কোনো রাগি ব্যাক্তির কন্ঠের মতো।আরেকটি কন্ঠ একটা যুবক ছেলের। তাদের কথোপকথনে কান দিলো মেঘা।রাগি লোকটা বলল,
– যতদূর প্লানিং ঘনিয়ে এসেছে।এতে আমাদের সফলতার শিকড় খুবি নিকটে। গত ১২ বছর,অর্থাৎ পুরো এক যুগ ধরে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।আজ পুরোপুরিভাবে তুমি মুক্ত।এখন শুধু অর্জন করতে থাকো।অনেক শক্তি অর্জন করতে হবে। ডিওএমএম এর প্রথম মিশন এতোটা ভয়ংকর হবে তা জানা ছিলোনা কারো। আমরা ছাড়াও অনেক দল ঘটন হয়েছে। ওয়াইওসি,এনবিয়ার,এমএমএফ, এলডিএস ইত্যাদি। ওখানে সবার থেকে আমাদের ডিওএমএম উপরে রাখতে হবে।
– আপনি চিন্তিত হচ্ছেন কেনো।আমি এই বাচ্চার দেহের ভিতর তো আছি। এখনো মিশনে যেতে পারবো আমি।এই দেহ নিয়েই সম্ভব।কিন্তু এর মা-বাবা খুব সচেতন আর ভালো মানুষ। তাদের কোনো প্রকার হয়রান করা যাবেনা।
– সেটা ঠিক।কিন্তু তোমার জন্য তো এই বাচ্চা মৃত্যুর মুখেও পড়তে পারে।এইটা কি ঠিক হবে আমাদের?
কথাটা শুনতেই দরজার অপরদিক থেকে মেঘা চমকে উঠে।তার বাচ্চার কোনোপ্রকার ক্ষতি সে চায়না।হুট করে দরজা খুলে ফেলে মেঘা। রুমে প্রবেশ করার পর মেঘার মাথাটা যেনো একটু চক্কর মেরে উঠে। তার বাচ্চা বিছানার উপর শুয়ে ঘুমাচ্ছে। এই ব্যতীত পুরো রুম ফাকা।তো এতক্ষণ কে কথা বলছিলো? আর কিসের ডিওএমএম। কিসের কথা বলছিলো তারা। বিছানায় নিজের বাচ্চার পাশে বসে কান্না করতে লাগলো মেঘা বেগম।
আরিফ সাহেব অফিস থেকে ফিরে কলিং বেল বাজায়।মেঘা ভিতর থেকে দরজা খোলে।আরিফ দরজার বাহির থেকেই খেয়াল করে মেঘা তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আরিফ সাহেব বাসায় প্রবেশ করলো। হাতের ব্যাগ টেবিলের উপর রেখে ২য় তলায় চলে যায়।মেঘা মনমরা হয়ে সোফায় বসে পড়ে।আরিফ এসে দেখে মেঘা সোফায় এখনো বসে আছে।আরিফ নিজেও মেঘার সাথে সোফায় বসে। আরিফ কিছু বলার আগেই মেঘা বলে উঠলো,
– তুমি কোন কোম্পানিতে চাকরি করো?
মেঘার কথা শুনেই আরিফ চমকে যায়।চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে। ভয়ার্ত আর কাপাকন্ঠে আরিফ বলল,
– হটাৎ এমন প্রশ্ন?এরকম তো কখনোই বলোনি।
– যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো।কখনো করিনি বলেই আজ করছি।জবাব দাও আমার।
– না মানে হিহি,কি দরকার এতো কিছুর।যাও খাবার প্রস্তুত করো।খেতে হবে।
– কথা এড়িয়ে যেতে পারবেনা আরিফ।আমার উত্তর চাই।
ধমক দিয়ে কথাটা বলল মেঘা।আরিফ চকমক করে যাচ্ছে।কপালের চুল বেয়ে ঘাম লেপিয়ে পড়ছে।মেঘা আবার কঠিন কন্ঠে প্রশ্ন করে,
– ডিওএমএম কোথায়? এরা কি করে?
– মানে? তুত.. তুমি এ..এসব কোথায় শুনলে?
– তুমি কি সে দলেই কাজ করো?
আরিফ এইবার মাথা নিচু করে থাকে। মুখ লাল হতে লাগলো।মেঘা অপলক দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিফ অনেক্ষণ পর স্থির হয়ে বলল,
– হ্যা, আমি ডিওএমএম এর সদস্য।একজন এজেন্ট আমি।কিন্তু আজ অব্দি আমি এইটাও জানিনা এরা কারা।এদের কি উদ্দেশ্য বা এরা কি অধোগামী মানুষ? নাকি কোনো এলিয়েন। আমাদের বিয়ের ৪ দিন পর এদের সাথে পরিচয় হয় আমার।কিন্তু সেটা সম্পুর্ন স্বপ্নের মতো।
– আমি বুঝিনি ঠিক।
– শুনো তবে। বিয়ের ৩দিন পর আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম হানিমুন করতে।মনে আছে?
– হুম,তো?
– সাগর পাড়ে আমি একটা অদ্ভুত কলম পেয়েছিলাম। জ্বলজ্বল করছিলো সেটা।ভেবেছি কোনো অমূল্য রত্ন বা অলৌকিক কিছুর অবদান সেটা।নির্ভয় আর লোভের জোরে পকেটে গুজিয়ে নিয়েছিলাম।কিন্তু সেদিন রাত ১টায় আমি বুঝতে পারি কতটা ভুল করেছি।তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আমি বারান্দায় বসে পাহাড় দেখছিলাম। তখনি মাথাটা চক্কর দেয় আমার।আর সামনে হাজির হয় এক বৃদ্ধ লোক।তার বিশাল বড় দাড়ি ছিলো।পা ছিলোনা,তবে পায়ের অংশে সাদা ধোয়া ছিলো।এবং সে শূন্যে ভেসে ছিলো। অনেক মোটা আর ভয়ংকর একজন মানুষের মতো।কিন্তু সে মানুষ না,তবে সে মানুষ। মানে আমি এখনো জানিনা সে কি মানুষ? নাকি এলিয়েন বা জ্বীন-ভূত। যাইহোক, সে আমাকে………
কথা শেষ করার আগেই আরিফের মুখ থেকে হটাৎ রক্ত প্রভাবিত হতে থাকে। রক্তবমি শুরু হয় আরিফের। মেঘা আরিফ বলে চিৎকার দেয়।এতক্ষণে আরিফ রক্তবমি করতে করতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। মেঘা আরিফের পাশে দৌড়ে আসে। ওর পাশে বসতেই আরিফ স্তব্ধ হয়ে যায়।আরিফ আরিফ বলে ডাকতে লাগলো মেঘা।এদিকে নিশ্বাস ত্যাগ করে আরিফ। ফ্লোরেই মৃত্যু বরণ করে সে।মেঘা চিৎকার দিয়ে আশেপাশের লোক ঝড়ো করে ফেলে। কাদতে থাকে মেঘা। কেও বুঝলনা কি হয়েছে।হটাৎ করে এমন মৃত্যু কেনো হলো,সবার কাছে রহস্য।মেঘা আচ করতে পেরেছে,এইটার পিছনে নিশ্চয় ডিওএমএম এর হাত আছে।তাদের জন্যেই ওর স্বামীকে জীবন দিতে হয়েছে।
দুইদিন পর..
রিয়াজকে কোলে নিয়ে মেঘা সোফায় বসে আছে।২ মাসের এই বাচ্চাটা ছাড়া মেঘার এখন কেও নেই।গত ৪ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করে ওরা।ফ্যামিলি থেকে বঞ্চিত হয় মেঘা।আরিফের ফ্যামিলি বলতে কিছু নেই। মা-বাবাকে অনেক আগে হারিয়েছে সে। এতিম ছেলের ভালোবাসা নিয়ে মেঘা আরিফের সঙ্গ দিয়ে এসেছে।আজ আরিফও পাশে নেই। রিয়াজ ছাড়া মেঘার এখন পৃথিবীতে কেও নেই। ডিওএমএম এর সম্মন্ধে কোনো ক্লু নেই মেঘার কাছে।তবে পড়ালেখায় যোগ্যতা আছে বেশ।তাই কয়েকটা কম্পানিতে চাকরির জন্য এপ্লিকেশন পাঠিয়েছে।যদি একটা জব পায়,তো নিজেই ফ্যামিলি সামলাবে।এদিকে রিয়াজের বয়স মাত্র ২মাস।এইটুকু একটা ছেলেকে বাসায় একা রেখেও যেতে পারবেনা।তার উপর রিয়াজের দিকে ডিওএমএম এর নজর পড়েছে।এরা কারা,তা তো কিছু জানেনা মেঘা।শুধু এইটাই জানে,ডিওএমএম নামক কোনো কিছু আছে।সেটার থেকে তার বাচ্চাকে বাচাতেই হবে। এক সাথে অনেকগুলো ভাবনা করে শেষে মেঘা স্থির হয়।রিয়াজকে নিয়ে বেডরুমে চলে যায়। কান্না করছে সে আজ অনেক।তাই বিছানায় দুধ পান করিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে মেঘা।আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।
চমকে উঠে দেখে রিয়াজ মেঘার পাশে নেই।ঘড়ির দিকে নজর যেতেই বুঝতে পারে রাত ১:৩৪ মিনিট বাজে।সঙ্গে সঙ্গে খাটের নিছে চেক করে মেঘা।রিয়াজ কোথাও নেই।তখনি তার কানে আবার সেই রাগি ব্যাক্তির কন্ঠ ভেসে আসে।মেঘা আড় পেতে শুনতে চাচ্ছে।আওয়াজটা নিছ থেকে আসছে।দরজার পাশে কান রেখে মেঘা শুনতে পায় সেই যুবক ছেলের কন্ঠ।
– লোকটি তো ভালো ছিলো।আমাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলো।তাকে না মারলেও পারতেন।
– ডিওএমএম এর রুলস অমান্য করেছে আরিফ।তার বুঝা উচিৎ ছিলো এইটা সম্পুর্ন সিক্রেট একটা বিষয়।প্রথমেই বলা হয়েছে,এই ব্যাপারে কারো কাছে শেয়ার করা যাবেনা।যদিও এতো বছর সে রুলস মেনে এসেছে,কিন্তু সে বিপদের কথা জেনেও কেনো শেয়ার করতে গিয়েছিলো।শুধু আরিফ নয়,এজেন্ট এর লিষ্টে যাদের নাম আছে।তাদের যে কেও যদি রুলস অমান্য করে,তবে তাকেও ওপাড়ে যেতে হবে।
– রিয়াজ বাবা হারা হয়ে গেছে।এইটা নিশ্চয় ভালো দেখাচ্ছেনা।
– কয়দিন পর রিয়াজ নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করবে। বাবা কেনো,নিজের জীবনের প্রতি মায়া করা যাবেনা।এইটাই ডিওএমএম এর নিয়ম।
– কোনো এজেন্ট তো ইচ্ছে করে ডিওএমএম এ যুক্ত হয়না।জোরপূর্বক ভাবেই তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়।তাহলে কেনো তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করবে?
– ডিওএমএম কারো খারাপ করেনা।আমাদের কাজ হচ্ছে এই পৃথিবীতে যত অশুভ শক্তি আছে।তাদের বিনাশ করে। ডিওএমএম এর অর্থ জানো?
– না,এর অর্থ কি ?
– Destruction of miraculous mysteries অর্থাৎ অলৌকিক রহস্যের বিনাশ। আর এই অলৌকিক শক্তি কোনো সঠিক ব্যবহার কারী শক্তিকে বুঝানো হয়নি।অশুভ শক্তির কথা বুঝানো হয়েছে।
– আমি কি এই রিয়াজের দেহ ব্যবহার করে যাবো সারাজীবন?
– না। রিয়াজের যখন ২ বছর পূর্ন হবে।তখন রিয়াজ মুক্ত হয়ে যাবে।তোমার আলাদা একটা শক্তি হবে।আলাদা একটা দেহ তৈরি হবে।তুমি হবে সকল শক্তির রাজা।উপরওয়ালা কার কপালে কি রেখেছে,তা উনি জানেন।কিন্তু তুমি উপরওয়ালার শক্তির সাথে লড়তে পারবেনা।তোমার দেহ তৈরিকৃত হচ্ছে। শক্তির বিভিন্ন পদার্থমিশ্রিত মেডিসিন তৈরি হচ্ছে।তোমাকে দিয়ে আমরা সকল কাজ করাবো।শুধু এই দুই বছর রিয়াজের দেহে থাকতে হবে।এরপর তোমাকে জাগ্রতচিত্তে আনা হবে। ভূপৃষ্ঠতল তোমার হাতের মুঠে চলে আসবে।মিশন হবে তখন।ডিওএমএম হবে সকল শক্তির উপরে।যারাই কুকর্ম শুরু করার চিন্তা করবে,তাদের মনে আগে একটাই নাম প্রসারিত হবে।সেটা হলো ডিওএমএম।
– বুঝেছি।আচ্ছা রিয়াজের মা জেগে যাবে।তুমি যাও এখন।আমি তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ি।উনি টের পেলে কেলেঙ্কার হয়ে যাবে।
– হুম। শুভ বিদায়।
মেঘা হালকা দরজা সরিয়ে চোখ দেয় নিছে।দেখতে পায়,২ মাসের বাচ্চা রিয়াজ হেটে হেটে উপরে আসছে।তাও সিঁড়ি বেয়ে।ধুকপুকানি বেড়ে যায় মেঘার।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর।কিন্তু এখন কিছুই করা ঠিক হবেনা।রিয়াজের বিপদ হতে পারে।মেঘা বুঝেও না বুঝার ভান করে দৌড়ে বিছানায় চলে যায়।এদিকে রিয়াজ হেটে এসে দরজা খোলে।এরপর বিছানায় শুয়ে যায় নিজের মতো।একদম ছোট নিষ্পাপ একটা বাচ্চা।বুঝাই যায়না তার ভিতর এতো ক্ষমতা। মেঘা চোখ দুটো বন্ধ করে দেয়।তলিয়ে যায় ঘুমের ঘোরে।
আচমকা রিয়াজ বলে চিৎকার দেয় মেঘা। রিয়াজ নিছের ফ্লোর থেকে দৌড়ে আসে। দৌড়ে গিয়ে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– কি হয়েছে মা? আবার খারাপ স্বপ্ন দেখেছো নিশ্চয়।
মেঘা রিয়াজকে শক্ত করে ধরে বলল,
– হুম। খুব খারাপ স্বপ্ন।
-তুমি আমাকে এতো বছর হয়ে গেলো,আজ অব্দি বললেনা কি দেখো স্বপ্নে।আজ বলতেই হবে।বলো মা।
– তেমন কিছুনা। আমাকে একটু পানি দে। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
– হুম,এক্ষুনি আনছি।
রিয়াজ এখন ২৩ বছরের একটা যুবক। গত ২৩ বছর থেকে এই একই স্বপ্ন দেখে আসছে মেঘা। ২ মাস পর থেকে রিয়াজের দেহে অদ্ভুত সেই লোক ছিলোনা ঠিকই।কিন্তু অদ্ভুত এই স্বপ্ন মেঘার মস্তিষ্ক চেপে বসেছে। তখন থেকেই মেঘা ঘটে যাওয়া সমস্ত ভয়ংকর ঘটনা স্বপ্নে দেখে। এই ডিওএমএম আর আরিফ সাহেবের বিষয় রিয়াজের কাছে এখনো অজানা। রিয়াজ জানে তার বাবা কোনো এক কার এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। এরপর থেকে চাকরি করেই মেঘা পরিবার সামলিয়ে আসছে। এর বেশি রিয়াজ কিছুই জানেনা। অজানা হাজারো ঘটনা সামনে না আসাটাও এক ভাগ্যদয়।রিয়াজ বারান্দায় বসে আছে।
কিছু মুহূর্তে এমন কিছু ঘটনা সামনে ভেসে উঠে,তা বুঝে নিতেই লাগে রহস্য। রহস্য দিয়ে শুরু কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে রহস্য দিয়েই।আবার রহস্য দিয়ে চলতে থাকা ঘটনা,হটাৎ রহস্য নিয়েই শেষ হয়। রহস্য নিয়ে শেষ হওয়া ঘটনা কোনো একদিন আবার রহস্যরুপে শুরু হয়। আবার চলতে থাকে রহস্য।নিয়তি এমনই।শেষ থেকে শুরু আর শুরু থেকে শেষ করে।তার অস্তিত্ব নামক একটা শব্দ হচ্ছে রহস্য।
বারান্দায় বসে কথাটা কল্পনা করলো রিয়াজ। এই রহস্যের প্রবাদটা সে জানতে পারে আরিফ অর্থাৎ রিয়াজের বাবার ডায়েরি থেকে। পুরো ডায়েরি ফাকা,শুধু প্রথম পৃষ্টাতে এই প্রবাদটা লেখা। এই প্রবাদের অর্থ রিয়াজ আজো খুজে পায়নি।কি বুঝিয়েছে এই প্রবাদে। রিয়াজ মাঝে মাঝে তার বাবার রুম থেকে ঘুরে আসে। রুমে অদ্ভুত অনেক জিনিষ দেখে সে। অন্তত এইটা বুঝেছে তার বাবা রহস্য প্রেমি ছিলো। কেনো তার বাবা রহস্য প্রেমি ছিলো,তা জানতে রিয়াজের খুব আগ্রহ। দিনে দিনে রিয়াজও রহস্য প্রেমি হয়ে যাচ্ছে।রহস্য নিয়ে ভাবতে তার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি জেগে তোলে।
আকাশে চাঁদ উঠেছে। বারান্দায় চাঁদের রশ্নী ছিটকে পড়ছে।রিয়াজ ভাবছে।সে এক গভীর ভাবনা। হটাৎ রিয়াজ দেখে, রাস্তায় দুটো লোক ঝগড়া করছে। প্রচন্ড হাতাহাতি চলছে তাদের মাঝে।রিয়াজ ঝগড়া থামানোর জন্য নিছে নামতে চাচ্ছে।নামার সময় হাতের ঘড়িতে তাকায় একবার।মাত্র ০৯:৪০ বাজে। বেশি রাত হয়নি।বেশি রাতে বের হলে মেঘা রেগে যায়।
রিয়াজ দৌড়ে নিছে আসে। লোক দুটো একটা মাইক্রো এর সামনে দাঁড়িয়ে মারামারি করছে।রিয়াজ তাদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দেখে,দুটো লোকের মাঝে একজনকে অন্যজন ছুরি মেরে দিয়েছে পেটে।রিয়াজ ঐ বলে চিৎকার দিতেই,খুনি লোকটা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।রিয়াজ নিহত হওয়া লোকটার কাছে গিয়ে উনাকে সোজা করে।এরপর পেট থেকে ছুরি বের করে নিতেই,রিয়াজের মুখে কেও লাইটের আলো ছড়িয়ে দেয়। রিয়াজ লোকটির সামনে,হাতে ছুরি।এদিকে ঘটনা এমনভাবে ঘটে যাচ্ছে,যেনো খুনি রিয়াজ। লাইটের আলো দেখে রিয়াজ পালানোর চেষ্টা করলে,দেখে তার সামনে কয়েকজন পুলিশ। পিছনে তাকিয়ে দেখে,সেদিকেও পুলিশ।পালানোর কোনো গতি নেই রিয়াজের।রিয়াজ তাদের ব্যাপারটা খুলে বলার জন্য যখন এগিয়ে যায়।তখন একটা পুলিশ রিয়াজের মাথার পিছন থেকে আঘাত করে। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো রিয়াজ।ধীরে ধীরে জ্ঞান হারায়।
চোখ মেলতেই রিয়াজ নিজেকে কোনো এক অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে।এইটা কোথায়,তার নিজেরই অজানা। রিয়াজ উঠে দাঁড়াতেই অনুভব করে,ওর মাথায় কোনো পাতার স্পর্শ লাগলো।রিয়াজ চোখ ভালোভাবে মুছে চারদিক ভালো করে দেখে। আর বুঝতে বাকি নেই,সে একটা জঙ্গলে আছে।
কোন জায়গা এইটা,তাও জানেনা।যাবে কোথায়,সেটাও অজানা। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চারিপাশ হাবলার মতো দেখে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে তার কানে একটা আওয়াজ ভেসে এসেছে।একটা হুংকার এর শব্দ। যেনো কিছু একটা রিয়াজের আশেপাশে আছে।ডান দিকে তাকাতেই রিয়াজ দেখতে পায়, কালো জামা,কালো চাদর পড়ে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখ দেখা যাচ্ছেনা।চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে দেওয়া।চাদর টুপির মতো লাগছে। চাদের আলোয় দেহটা দেখা যাচ্ছে মানে কালো জামাটা।আর মুখ অন্ধকারে না দেখা গেলেও,হটাৎ একটা আশ্চর্য ঘটনা রিয়াজের চোখে বাজে। লোকটির চোখ দুটো আচমকা লাল বর্ণে তৈরি হয়ে গেছে।যেনো লাল দুটো লাইট জ্বলছে তার চোখে।ভয়ে এক চিৎকার দিয়ে রিয়াজ সামনের দিকে দৌড় শুরু করে।পিছন থেকে গর্জনের শব্দটা আরো জোরে আওয়াজ করা শুরু করেছে।
চলবে……