ইফ্রিতে মুসনাত পর্ব ৭

0
380

#ইফ্রিতে_মুসনাত
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আয়ানা ব্যালকুনিতে এসে দাড়াল। দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে চারিদিকটা দেখে নিল। আয়মান শাফি ছোট করে আয়ানার বিয়ের আয়োজন করলেও কোনোকিছুতেই কমতি রাখেননি। চারিদিকটা আলোয় ঝলঝল করছে, গেইটটা ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এসব দেখে নিজের অজান্তে আয়ানার চোখ বেয়ে দু-এক ফোটা পানি ঝরে পড়ল। বুঝ হওয়ার পর থেকে বিয়ে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিল! কিন্তু সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা ই পূরণ হলনা তার। নিজের মনমত মানুষটাকে বিয়ে করার স্বপ্ন। গাল বেয়ে আসা চোখের পানির ফোটাগুলো তাড়াতাড়ি মুছে নিল। কার জন্য কাদছে সে! যার কাছে তার সামান্য অনুরোধের কোনো মূল্য নেই। এমনসময় আয়ানা দেখল, আব্বুসহ আরো কয়েকজন গেইট দিয়ে বের হয়ে কোথাও যাচ্ছেন। আয়ানা ভাবল, এখন আব্বুরা কোথায় যাচ্ছে? সবার শেষে আয়াত ও বের হচ্ছে। আয়ানা আয়াতকে ডাকল। আয়াত নিচ থেকে বলল,
” হ্যা আপু।”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
” জানাযা পড়তে।” আয়ানা চমকে উঠল কার জানাযা পড়তে যাচ্ছে সবাই! সে আয়াতকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলনা। আয়ান বাবার ডাকে ছুটে গাড়িতে উঠে বসল।
আয়ানার মনটা ভীষণ খচখচ করতে লাগল। এখনি তাকে বিদায় দেবার কথা, কিন্তু সেটা না করে সবাই কার জানাযা পড়তে যাচ্ছে! কেউ মারা গেলে তো সে জানত বা কেউ তাকে বলত। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, রাতের ১০টা বেজে গেল। কিন্তু বরপক্ষ এখনো তাকে নিয়ে যাওয়ার তাগাদা দিচ্ছেনা। পুরো ব্যাপারটা ই গোলমেলে লাগছে। সায়মাকে জিজ্ঞেস করলে জানা যেত, কিন্তু সায়মা আয়ানার কাছেও আসছেনা আর। অগত্যা সবকিছু ভুলে আয়ানা ই রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যায়। সায়মা আর সালমা আরা মহিলা মেহমানদের অ্যাপায়ন করতে ব্যস্ত। সায়মার আয়ানার দিকে চোখ পড়তেই সে আয়ানাকে টেনে আড়ালে নিয়ে এসে বলল,
” তুই নিচে নেমেছিস কেন?”
” আপু, আমার কিছু কথা ছিল….
” আমি তোর খাবার নিয়ে আসছি, তুই এক্ষুনি উপরে যা।”
একরকম জোর করে সায়মা আয়ানাকে উপরে পাঠিয়ে দিল। আয়ানা উপরে যাওয়ার পর সায়মা একটু আশ্বস্ত হল। এই সময় আয়ানাকে এখান থেকে সরানোটা খুব জরুরী ছিল। আয়ানা মুখ ভার করে বিছানার উপর বসে পড়ল। সায়মার এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ সে বুঝতে পারলনা। কিছুই ঠিক লাগছেনা তার। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ও বর-কনে একসাথে বসানো হলনা, বিদায় দেওয়ার ও কোনো তাগাদা নেই।
সায়মা খাবারের ট্রে নিয়ে আয়ানার রুমে ঢুকল। সে আয়ানার পাশে বসে চুপচাপ সব মেখে নিয়ে বলল, হা কর। আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।
“আগে আমাকে বল, কি হয়েছে? কোনোকিছুই আমার ঠিক লাগছেনা। আব্বু ই বা এখন কোথায় গেল? বরপক্ষের কেউ এখনো পর্যন্ত আমার কাছে এলনা?”
সায়মা নতমুখে বলল, “আগে খেয়ে নে। তারপর সব বলব।”
আয়ানা জানে সে না খাওয়া অবধি সায়মাকে জোর করলেও সে কিছু বলবেনা। তাই সে লক্ষী মেয়ের মত খেয়ে নিল। খাওয়া শেষ করে আয়ানা করল,
“এবার তো বলবি।” সায়মা ধরা গলায় বলল,
” ফারিবের জানাযা পড়তে গেছে আব্বুরা।”
এই কথা শুনে আয়ানা বিস্ফোরিত চোখে সায়মার দিকে তাকিয়ে রইল। ফারিবের সাথেই আয়ানার আজ বিয়ে। ফারিব ডিফেন্সে জব করে, গত সপ্তাহে এসে আয়ানাকে পছন্দ করে বিয়ে ঠিক করে ফেলছিল ফ্যামিলিসহ। এখন সায়মা এসব কি বলছে, ফারিব মারা গেলে তার সাথে কার বিয়ে হয়েছে! কাকে সে কবুল বলল। আয়ানা সায়মার হাত দুটো ধরে বলল,
” ফারিব কখন মারা গেল? আর উনি মারা গেলে আমার বিয়ে কার সাথে হল?”
.
আয়মান শাফি জানাযা পড়া শেষ করে গাড়িতে উঠে বসলেন। তার মুখটা ভীষণ গম্ভীর। তার পাশে বসে ড্রাইভিং করছে তার আদরের মেয়ে আয়ানার বর। আয়মান শাফি আড়চোখে কয়েকবার ছেলেটির দিকে তাকালেন। ছেলেটা দেখতে মাশা আল্লাহ কিন্তু একটু অদ্ভুত ধাচের। কিন্তু আয়মান শাফি মন থেকে ওকে জামাই হিসেবে মানতে পারছেননা। কিন্তু আর কিছুই করার নেই। আয়মান শাফি চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে সেই সময়টার কথা ভাবতে লাগলেন।
সন্ধ্যা নামতেই যখন বরপক্ষ আসার সময় হয়ে গেল, তখন আয়মান শাফির ফোনে কল আসল ফারিবের বাসা থেকে। কাদতে কাদতে তারা জানাল,
” ফারিব ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মাথা থেকে ঘিলু-মগজ বের হয়ে গেছে। লাশের অবস্থা খুব খারাপ, তাড়াতাড়ি কবরস্থ করতে হবে।”
এটা আদৌ আত্মহত্যা নাকি খুন? নাকি দুর্ঘটনা? কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেনা। কিন্তু ফারিব আত্মহত্যা কেন করতে যাবে? যেখানে সে আয়ানাকে নিজে পছন্দ বিয়ে করতে চাচ্ছিল! মূহুর্তের মধ্যে পুরো বিয়েবাড়ীতে কথাটা রটে গেল। সব আত্মীয় ই বলাবলি করতে শুরু করল,
” মেয়েটা সত্যি ই অলক্ষ্মী-অপয়া! নাহলে কি যে ই ওকে বিয়ে করতে আসে, সেই প্রাণে মারা পড়ে। এই মেয়ের আর বিয়ে হবেনা।”
কানাঘুষায় এসব কথা আয়মান শাফির কানে আসে। উনি বুঝে গেলেন, আজ যদি তার বিয়ে না হয়, তবে আর কেউ ওকে বিয়ে করতে আসবেনা। পুরো সমাজের কাছে আয়ানার পরিচয় হবে অপয়া মেয়ে। আয়মান শাফির প্রেশার খুব বেড়ে গেল এসব চিন্তায়। এই মূহুর্তে কে বিয়ে করবে আয়ানাকে! সায়মা বাবার এই অবস্থা দেখে মাহবুবের কাছে হাত জোড় করে বলল,
‘ ভাই আমার। আমার বোনটা এই বিপদের হাত থেকে বাচাও। বিয়ে করে নাও ওকে। নাহলে যে আমার আব্বু আর বোন দুজনেই লোকসমাজে একঘরে হয়ে যাবে। আমার আব্বু এই লজ্জায় মরেই যাবে।”
আয়ানাকে এতদিন ধরে পছন্দ করা মাহবুব সেই মূহুর্তে মুখ ফিরিয়ে নিল। আয়ানাকে বিয়ে করে সে কি নিজের প্রাণের ঝুকি নিবে নাকি!! সে সায়মার মুখের উপর বলে দিল, ” আমাকে ক্ষমা করো ভাবী। নিজের প্রাণের ঝুকি আমি নিতে পারবনা।” সায়মার মাথায় হাত চলে গেল। মাহবুবের উপর তার শেষ ভরসা ছিল, আয়মান শাফিও এই উত্তর শুনে অবুঝ বাচ্চার মত কান্না জুড়ে দিল।
সায়মার মুখে এইটুকু শুনে আয়ানা অশ্রুভরা চোখে সায়মার দিকে তাকাল। সায়মা নিজের চোখের পানি মুছে বলল,
” তোর এতবড় সর্বনাশ আমরা কি করে হতে দিই বল! তাই বেহায়ার মত আমি ই সবাইকে উদ্দেশ্য করে আকুতি মিনতি করলাম, কেউ কি নেই তোকে বিয়ে করে এই অপয়া উপাধি থেকে মুক্তি দিবে?”
আয়ানা চুপ হয়ে রইল। কতটা অসহায় হলে তাদের মত সম্ভ্রান্ত পরিবার সবার কাছে এভাবে আকুতি করে। নিজেকে আয়ানার সত্যিই আজ অপয়া মনে হচ্ছে, নাহলে বার বার তার সাথে এমন কেন হবে? কেন যে তাকে বিয়ে করতে আসবে, সে মানুষটি প্রাণ হারাবে। খুব চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। সআয়মা আয়ানাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে এনে বলল,
” জানিস, পুরো বিয়েবাড়ীতে একজন বিপদের সঙ্গী এসে আমাদের পাশে দাড়ালেন। ছেলেটি রাজি হল তোকে বিয়ে করতে। আর সাথে সাথে আমরা তোদের বিয়ে পড়িয়ে দিলাম।” আয়ানা সায়মার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
” একজন অচেনা-অপরিচিত ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলি? আমাকে কেন জানাস নি!”
” আর কোনো উপায় ই ছিলনা রে। একটা ঘটনার পর তোর উপর যা গিয়েছিল, আবার একই ঘটনা শুনলে তোর মনের অবস্থা কি হত আমরা সবাই বুঝতে পেরেছিলাম। নিচে তোকে দেখলে আন্টিরা এসবকিছু বলত তাই আমি তোকে সরিয়ে দিয়েছি ওখান থেকে। আমি চাইনি তুই এসব ওদের কাছ থেকে শুনে কষ্ট পাস।”
এমনসময় নিচের ড্রইংরুম থেকে আয়মান শাফির কন্ঠে ভেসে এল। উনি ফিরে এসেছেন এবং এসেই সায়মাকে ডাকছেন, সায়মা সবকিছু গুছিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে নিচে চলে গেল। আয়ানা ওইভাবেই বসে রইল। এতকিছু হয়ে গেল আর তাকে কেউ কিছু জানাল না পর্যন্ত। নিজের অজান্তে অজানা-অচেনা একটা ছেলের জীবনসঙ্গী হয়ে গেল সে।
আয়মান শাফি নিস্তেজ শরীরে সোফার উপর বসে পড়লেন। সায়মা সবার খাওয়ার-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। সালমা আরা এগিয়ে আসতেই আয়মান শাফি বললেন, “ওদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আয়ানাকে নিচে নিয়ে এসো। ওর সত্যটার সামনে মুখোমুখি হয়ে সবকিছু মেনে নেওয়া প্রয়োজন।”
কিছুক্ষণের মধ্যে আয়ানাসহ সায়মা নিচে নেমে এল। আয়ানার মুখের সামনে বড় ঘোমটা টেনে দেওয়া হয়েছে, ঘোমটার নিচে থাকা মানুষটার মনের দ্বন্দ এর কথা কেউ টের পেলনা। ভেবেই আয়ানা ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
আয়ানাকে ছেলেটার পাশে বসানো হল। আয়মান শাফি তাড়া দিলেন বাকি নিয়মগুলো সেরে নেওয়ার জন্য। সায়মা বাবার কথা শুনে টাটকা ফুলের মালার থালা নিয়ে আসল। এখন একে অপরকে মালা পড়াবে। দুজন দুজনকে মালা পড়াল। তারপর একটা বড় আয়না এনে দুজনের সামনে ধরা হল।
” এইবার দুজনে বলুন, আয়নায় কে কি দেখতে পাচ্ছেন?
“মুখের সামনে এত বড় ঘোমটা থাকলে কি করে বলব!” কন্ঠটা শুনে আয়ানার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। সে সাথে সাথে ঘোমটা সরিয়ে আয়নার দিকে তাকাল। এই যে আর কেউ নয়, তার ভালবাসার সাদ।
সাদের চোখগুলো দেখে নিজের অজান্তেই সে বলে ফেলল, “ভয়ংকর সৌন্দর্য”
” আমার আসমানের চাঁদ।” সাদের মুখে কথাটা শুনে আয়ানা শরীরটা কেপে উঠল। আয়মান শাফি বললেন,
” তোমরা কাল কখন রওয়ানা দিচ্ছো?”
” আপনারা অনুমতি দিলে খুব সকালেই।”
” ঠিক আছে, তুমি একবার আমার রুমে আসো। সায়মা, আয়ানাকে রুমে নিয়ে যা। চেঞ্জ করে রেস্ট নিয়ে নিক। কাল খুব সকালে জার্নি করতে হবে।”
আয়ানাকে নিয়ে সায়মা উপরের চলে যাচ্ছে। আয়ানা পিছন ফিরে সাদকে দেখতে লাগল। সাদ ও তার জ্বলজ্বল করা নীল চোখে আয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল। আয়ানা চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ল। সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, সাদকে সে এভাবে তার জীবনে পেয়ে যাবে। আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। নিজেকে আজ ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। কিন্তু সাদ কোথায়? সে কি তার কাছে আসবেনা! খুব খুশি তার। আজ থেকে সাদ তার জীবনসঙ্গী।
.
সকালে আয়ানাকে রেডি করে সালমা আরা বাহিরে নিয়ে আসলেন। এখনি আয়ানাকে নিয়ে চলে যাবে। আয়ানা আর সাদ সবাইকে সালাম করল। আয়মান শাফি আয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
” আব্বুর উপর কোনো মনে কষ্ট রাখিসনা মা। বাপ হলে এমন অনেক কিছুই করতে হয় মেয়ের ভালোর জন্য। এক অজানার পথে তোকে ছেড়ে দিলাম আমি। আমি জানি, আমার আয়ানা সেখানে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ভালো থাকবে।”
আয়ানা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা, আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে বসল সে। সাদ ও সবাইকে বিদায় বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল। আয়ানা বারবার হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছছে। সাদ এক হাতে নিজের রুমালটা বাড়িয়ে দিল আয়ানার দিকে।
আয়ানা সাদের দিকে তাকিয়ে রুমালটা নিল। এতক্ষণ হয়ে গেল, কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছেনা। আয়ানার মনটা ভীষণ খারাপ, সে চুপচাপ গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়েই বসে রইল।
সালমা আরা চা নিয়ে আয়মান শাফির পাশে গিয়ে বসল। আয়মান শাফি বিষন্ন চেহারায় তার আরাম কেদারায় বসে উদাসপানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কি এত ভাবছো গো?”
” মেয়েটার কথা ভাবছি সালমা। মানসম্মান বাচাতে গিয়ে একটা অজানা-অচেনা ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিলাম। ঠিকমত জানিওনা ছেলেটা কেমন! আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, আমার মেয়েটা সুখে থাকবে তো!”
” আমার কিন্তু ছেলেটাকে অনেক ভালো লেগেছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার ব্যবহার। তুমি চিন্তা করোনা, তাকে আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন।
তোমার মেয়েকে দেখেছো কত খুশিমনে শ্বশুড়বাড়িতে গেল।”
” সে তো দেখলাম। কিন্তু মনটা খচখচ করছে, সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু মেনে নিল না তো! তাহলে তো আমি বাপ হয়ে সারাজীবন মেয়ের কাছে অপরাধী হয়ে থাকব।”
” আল্লাহ ওদের জুটি বেধে দিয়েছেন। যা হয়, ভালোর জন্য ই হয়। কাল তো মেয়েকে দেখতে যাচ্ছোই, তখন তুমি আমার কথা মিলিয়ে নিও। আমার মন বলছে, আয়ানা খুব সুখী হবে। ছেলেটাও খুব ভালো।”
” তোমার কথা ই যেন সত্যি হয় সালমা।”
আয়ানা গাড়ি থেকে নেমে একটা সুন্দর ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে নামল। বাড়ির গেইট থেকে বাড়ীর সামনে পর্যন্ত পাকা রাস্তা। একপাশে ফুলের বাগান, অন্য পাশটা খেলার মাঠের মত। হয়ত খেলাধুলার জন্য ই রাখা হয়েছে।
বাড়ীর ভিতর ঢুকে আয়ানা বেশ অবাক হয়ে গেল। সবকিছু ই সুন্দর আর বেশ আভিজাত্যপূর্ণ। আয়ানা সাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” এটা আপনার বাড়ী?” সাদ কিছু বলার আগেই একজন সুশ্রী অল্পবয়সী মেয়ে ছুটে এল। চিৎকার করে বলল, “মা-বাবা কে এসেছে দেখে যাও।”
আরেকজন বয়স্ক সুশ্রী মহিলা, একজন লোক আর একটি ছেলে ভিতর থেকে বেরিয়ে এল। মহিলা বলল, “এই আমাদের বউমা? মাশা আল্লাহ কত্ত সুন্দর।”
” কেমন আছো মা?” আয়ানা আস্তে করে উত্তর দিল,
” জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভাল, আপনি?”
” আমরাও খুব ভালো আছি। আমি তোমার শ্বাশুড়ীমা, এই তোমার শ্বশুড় আর তোমার ভাসুর-জা। আচ্ছা পরে পরিচিত হওয়া যাবে। অনেকদূর থেকে এসেছো তোমরা, একটু জিরিয়ে নাও। আসমা তুমি ওকে সাদের ঘরে নিয়ে যাও।”
সুশ্রী মেয়েটি আয়ানা নিয়ে চলে এল। মিষ্টি ভাষায় রুম দেখিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। আয়ানা তব্দা খেয়ে গেল, সাদের এত সুন্দর একটা পরিবার আছে কেউ জানত ই না। কিন্তু সাদ এত সুন্দর বাড়ী-পরিবার ছেড়ে পাহাড়ী অঞ্চলের ভাড়া বাসায় কেন পড়ে থাকে! তাছাড়া সাদ তো তাকে পছন্দ করেনা, তাহলে বিয়ে করল কেন? আয়ানা কিছুই মিলাতে পারছেনা, শুধু এটা উপলব্ধি করতে পারল সাদ পুরোটাই রহস্যময়।
(চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here