#ইফ্রিতে_মুসনাত
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
ছেলেটার চোখের মণিগুলো গাঢ় নীল-কালো সংমিশ্রণ। দেখতে ভীষণ সুন্দর আর অদ্ভুত। এমন অদ্ভুত চোখজোড়া আয়ানা আর কখনো দেখেনি, চোখের পাপড়িগুলো অনেক ঘন আর লম্বা। ফর্সা সুন্দর, প্রচন্ড মায়াবী চেহারা। মাঝারি ভাবে ছাটা চুলগুলোও বাদামী-কালোর সংমিশ্রণ। এত সৌন্দর্যের মধ্যেও আয়ানার ভয় লাগার কারণ, ক্ষীণ আলোতে ছেলেটার চোখ জ্বলজ্বল করছে। যেন চোখ ঠিকরে আলো পড়ছে। ছেলেটা একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
” এভাবে চিৎকার করছেন কেন?” আয়ানার চিৎকার শুনে আশেপাশের দোকানে থাকা লোকগুলো অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ উঠে চলে এসেছে কি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে দেখার জন্য।
আয়ানা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ” নাহ একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। পিছনে কি একটা যেন চোখে পড়ল।” আয়ানা ইচ্ছে করেই মিথ্যা টা বলল, ছেলেটাকে যদি বলে ছেলেটার অদ্ভুত সুন্দর চোখ দেখে সে জ্বীন ভেবে ভয় পেয়েছে। ছেলেটার খারাপ লাগতে পারে, যাই হোক ছেলেটা তাকে সাহায্য করেছে। আসলে এতক্ষণ মনের মধ্যে জ্বীনের ভয় টা কাজ করছিল, তার উপর ছেলেটা মজা করে হলেও নিজেকে জ্বীন বলেছে। এইজন্য মুখ ফসকে চিৎকার করে ফেলেছে।
ছেলেটা পিছন দিকে ভালো করে কয়েকবার তাকিয়ে বলল, ” কোথাও কিছু নেই। ভয় পাওয়ার কারণ নেই, আমরা সেইফ জোনে আছি। আপনি এবার বলুন, কোথায় যাবেন? আপনার বাসা কোথায়?”
” আসলে আমি এখানে নতুন এসেছি, কিছুই চিনিনা। তাই বাসার ঠিকানাটা সঠিক বলতে পারছিনা।”
” আপনার সাথে কেউ আসেনি? একা একা ঘুরতে বেড়িয়েছেন?”
” এসেছিল, উনাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।”
” তাহলে কি করা যায়? আপনার হাতে তো ফোন আছে। কাউকে কল দিয়ে ঠিকানা বলতে বলুন। আমি আপনাকে পৌছে দিব।
আর আগে এখান থেকে সরে সামনের টঙ টায় বসি। আবার কি দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করেন। পরে লোকজন আমাকে বখাটে ভেবে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে!!”
আয়ানা ছেলেটাকে অনুসরণ করে টঙ দোকানের বেঞ্চিতে বসে, তাড়াতাড়ি ফোনের লক খুলে সায়মার নাম্বারে কল দিল।
এখনো “Network error” দেখাচ্ছে। আরো কয়েকবার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলনা। আয়ানা হতাশ হয়ে বলল, ” নেটওয়ার্ক পাচ্ছিনা।”
” কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় নেটওয়ার্ক উঠানামা করছে। তাই হয়ত পাচ্ছেননা। কিন্তু এখন ঠিকানা কিভাবে জানব। একটু পর কিন্তু রাস্তায় গাড়ি পাওয়া যাবে। শীতকাল তার উপর এই এলাকার রাস্তা উচু-নিচু পাহাড়ি ধরণের। দূর্ঘটনা এড়াতে বেশীরভাগ চালক রাতে গাড়ি চালাতে চায়না।”
এই কথা শুনে আয়ানার মুখ আরো কালো হয়ে গেল। তাহলে এবার সে কি করবে! ছেলেটা ই বা তার জন্য আর কতক্ষণ এখানে পড়ে থাকবে! ততক্ষণে ছেলেটা আয়ানার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে বলল,
” চা খাবেন? ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একটু পরে হয়ত নেটওয়ার্ক পেতে পারেন।”
আয়ানা হ্যা না কিছু বলার আগে ছেলেটা দোকানীকে ডেকে ২ কাপ মালাই চায়ের অর্ডার দিয়ে দিল। খানিকবাদে গরম গরম চা ও চলে এল। আয়ানা একটু একটু করে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে আপুদের বাড়ীর নামটা কি ছিল! সে আগে কখনো এখানে আসেনি। মাহমুদরা আগে আয়ানাদের শহরেই থাকতেন। পরে মাহমুদ সায়মাকে নিয়ে বিদেশে স্যাটেল হয়ে যাওয়ার পর উনার পুরো পরিবার দেশের বাড়ী সিলেটে চলে আসেন। তাই আয়ানার আগে কখনো আসা হয়নি।
আয়ানা মনে মনে ভাবছে, “মাহমুদ ভাইয়ের কথা বললে কি ছেলেটা চিনবে?”
ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করে বসল, ” মাহমুদ হকের বাসা চিনেন আপনি?”
” কোন মাহমুদ হক? যাদের নিজস্ব চা ব্যবসায় আছে?”
” নিজস্ব কিনা জানিনা, তবে উনার ছোট ভাই মাহবুব এখন সেই ব্যবসায় করছেন?” ছেলেটা একটু অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল,
” আপনি তাদের কি হন?”
” মাহমুদ ভাইয়ের স্ত্রী আমার বোন, আমি উনার শ্যালিকা হই।”
“আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি?”
” আমি এই প্রথমবার এখানে এসেছি।”
” আচ্ছা চলুন আপনাকে পৌছে দিই।” বলে চায়ের বিল মিটিয়ে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি খুজতে লাগল। ১০-১৫ মিনিট হওয়ার পর ও কোনো গাড়ি পেলনা ওরা। যে গাড়ী পাচ্ছে, তারা যেতে রাজি হচ্ছেনা। আয়ানা বলল,
” এখান থেকে খুব বেশী দূরে?”
” নাহ, ১৫-২০ মিনিটের পথ।”
” তাহলে তো হেটেই যাওয়া যায়।”
” এত নির্জন জায়গা একটা মেয়েকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা।”
” কিন্তু গাড়ি যেহেতু পাচ্ছিনা। আর তো কোনো উপায় নেই। আমার কোনো অসুবিধে হবেনা। যাওয়া যাক।” ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে আমাকে একটু সামনে হাটতে দিয়ে নিজে পিছন পিছন আসছিল। ছেলেটা এখন একদম চুপচাপ। এতক্ষণ ধরে আয়ানার মনে হচ্ছিল, ছেলেটা হয়ত খুব বাচাল। আর ছ্যাচড়াও হতে পারে। কিন্তু এখন সে প্রয়োজনের বাহিরে কোনো কথা বলছেনা। মাহমুদ ভাইয়ের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল নাকি! আয়ানা নীরবতার পতন ঘটিয়ে বলল
” চুপচাপ হয়ে গেলেন যে? এতক্ষণ তো অনেক কথা বলছিলেন!”
” আমি এমন ই। তবে এতক্ষণ আপনার ভয় কাটানোর জন্য ই গম্ভীর ভাব ছেড়ে সহজ হয়েছিলাম। নতুবা আপনি আমাকে ভরসা করতে পারতেননা।”
সারারাস্তা আর কোনো কথা বলল না ওরা। কিছুক্ষণ পর আয়ানা বাড়ীর সামনে পৌছে গেল। মাহবুব তখন বাড়ী থেকে বের হচ্ছিল, সায়মা-তার শ্বাশুড়ী মাহবুবের পিছন পিছন আসছিল। আয়ানা দেখে মাহবুব চমকে উঠে বলল,
” তুমি না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে?”
আয়ানা উত্তর দেওয়ার আগে সায়মা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” কোথায় চলে গিয়েছিলি? মাহবুব তোকে এত খুজেও পেলনা।”
” আমি তো মাহবুব ভাইয়ের সাথেই ছিলাম। হঠাৎ উনাকে কোথাও খুজে পেলামনা।” মাহবুব একটু আমতা আমতা করে বলল,
” আসলে আমার একটা জরুরী কল এসেছিল।”
ছেলেটার দিকে মাহবুবের চোখ পড়তেই বলল,
” আরে সাদ ভাই যে! আপনি ই তাহলে ওকে নিয়ে এসেছেন?”
ছেলেটা মুচকি হেসে বলল, “হ্যা। আমি তাহলে আসি, নামাযের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।” ছেলেটা চলে গেল। আয়ানা ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পেলনা। সায়মা আয়ানাকে নিয়ে বাড়ীর ভিতরে চলে এল।
.
মাহবুব সোফায় গা এলিয়ে ফোন টিপায় ব্যস্ত ছিল। আয়ানা আর সায়মা তার পাশের ডাইনিং এ বসে ফল কাটছিল। হঠাৎ সায়মা বলে উঠল,
” মাহবুব, তোর ভরসায় আয়ানা ছেড়ে ভুল ই করলাম।”
মাহবুব অপরাধী মুখ করে সায়মার দিকে তাকাল। কিছু প্রতিউত্তর করার সাহস পেলনা। সায়মা সেটা না খেয়াল করে আবার বলতে শুরু করল,
” আল্লাহর কি অশেষ কৃপা! ছেলেটা আয়ানাকে বাড়ী পর্যন্ত এসে পৌছে দিয়ে গেছে। নাহলে যে কি হত আল্লাহ মালূম। ছেলেটা তোর পরিচিত কেউ?”
” হ্যা, আমাদের পরিচিত। উনার নাম রেদওয়ান সাদ, আমরা সাদ ভাই বলেই ডাকি। খুব ভাল মানুষ, এলাকার সবাই উনাকে অনেক ভালোবাসে। মাস্টার্সে পড়ছেন, এখন পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসায় সামলাচ্ছেন।”
এমনসময় আয়ানার ফোনে কল এল। আয়ানার আব্বু কল দিয়েছে, আয়ানা উঠে বারান্দার দিকে চলে আসল। কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে শুনল,
” কেমন আছিস মা?”
” হ্যা আব্বু ভালো আছি। তুমি, মা, ভাই সবাই ভালো আছে তো?
” হ্যা সবাই ভাল। ওখানকার সব খবর ভালো তো?
তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?”
” না আব্বু, উনারা সবাই আমার খুব খেয়াল রাখছেন।”
” শোন, মা। তোকে একটা কথা বলার ছিল।”
” হ্যা বলো।”
” তোর জন্য খুব ভাল একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ডিফেন্সে জব করে, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও বেশ ভাল। দেখতেও বেশ ভালো।
এখন ভাবছি তুই ফিরতে ফিরতে পাকা কথা বলে রাখি। পরে তুই এলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করে নিব।” আয়ানার হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
আস্তে করে বলল, “আব্বু এসব নিয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছিনা। এখন আমি রাখছি। নিজের খেয়াল রেখো।” বলে লাইনটা কেটে দিল আয়ানা।
বিয়ের কথা উঠলেই ওর বুকটা ভার হয়ে আসে। কেউ কেন বুঝতে চাচ্ছেনা, ও আর নতুন করে এসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছুক নয়। নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখতে চায়। কাকে বুঝাবে ও এসব! সে তো নিজেই নিজেকে বুঝতে পারছেনা।
রাতে ছাদে একা একা বসে আছে আয়ানা। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। নিজেকে যুদ্ধে পরাজিত এক সৈন্য মনে হচ্ছে। যার বাচার-মরার আশা কোনোটাই নেই, শুধু আছে একরাশ হতাশা আর গ্লানি। পাশের বাসার ছাদে কোনো একটা অবয়ব দেখে একটু চমকে উঠল সে। এত রাতে ছাদে কে হাটাহাটি করসে? এখানকার বাসা গুলো সব পাশাপাশি। উচু-নিচু ভূমি হওয়ায় প্রায় প্রতিটি এ্যাপাটমেন্ট একটা আরেকটার সাথে লাগোয়া। পুরো জায়গাটা সায়মার দাদাশ্বশুড় অনেক বছর আগে কিনে রেখেছিলেন। সায়মার শ্বশুড় পুরোনো বাড়ী ভেঙ্গে দুটো দোতলা বাড়ী বানান, একটায় উনারা থাকেন আরেকটা ভাড়া দিয়েছেন। পাশের বাসায় এখনো অবধি কাউকে দেখেনি আয়ানা, সম্ভবত কেউ বাসায় নেই। তাছাড়া আয়ানা বাসা থেকে অত বের হয়না বলে কাউকে নাও দেখে থাকতে পারে।
যাই হোক, অবয়ব টা দেখে আয়ানা একটু উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কে ওখানে?” মিষ্টি কন্ঠে উত্তর এল,
” আমি এই বাসার ভাড়াটিয়া।” বলে ছাদের আলোটা জ্বালিয়ে দিল অবয়ব টা।
আলোতে মানুষটাকে দেখে আয়ানা বিস্মিত হয়ে বলল,
” আপনি এখানে?”
” আমি এই বাসায় থাকি। ”
” না মানে তখন বললেননি তো! তাছাড়া আপনাকে আগে কখনো ছাদে দেখিনি।” সাদ সাহেব কিছুটা উদাসীনকন্ঠে বললেন,
” তখন বলার মত কোনো কারণ দেখিনি। আমি ছিলামনা কিছুদিন তাই দেখেননি।” আয়ানা আর বলার মত কিছু খুজে পেলনা তাই চুপ হয়ে গেল।
আগ বাড়িয়ে অপরিচিত কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার অভ্যাস নেই আয়ানার।
অপরপাশের জন নিজে থেকেই বললেন,
” মন খারাপ করে বসে ছিলেন কেন?”
আয়ানা চোখ বড় বড় করে সাদের দিকে তাকাল। আসলে সে ঠিক বুঝতে পারলনা খানিকটা দূরত্বে থাকা মানুষটা তার মন খারাপের খবর কি করে পেল।
” মন খারাপের জন্য কোনো কারণ লাগেনা।”
” হাসার জন্য কারণ লাগে?”
“হয়ত, সেই কারণ পাচ্ছি না বলেই মন খারাপ।”
” কারণ কিন্তু নিজেই খুজে নেওয়া যায়?”
” জানা ছিলনা তো।”
” জানতে চান? ছাদ টপকে এই ছাদে আসতে পারবেন?”
” যদি লাফ দিতে গিয়ে পড়ে যাই!”
” চেষ্টা করে দেখুন।” আয়ানা কোন এক টানে সাদের কথামত ছাদের রেলিং টপকে অন্য ছাদের রেলিং এ পা রাখল। কিন্তু অন্য ছাদের রেলিং এ দাঁড়িয়ে নামতে পারছেনা। সাদ একটু চিন্তা করে আয়ানার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল, আয়ানা ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে অবশেষে ধরে নিল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আয়ানাকে ধরতেই সাদ একটু ঝটকা খেয়ে দূরে সরে গেল। ততক্ষণে আয়ানা রেলিং থেকে নেমে ছাদে দাঁড়িয়ে পড়েছে। এত ঠান্ডার মধ্যেও ছেলেটার হাতের স্পর্শ কেমন যেন উষ্ণ, অথচ ছেলেটার গায়ে চাদর বা হুডি কিছু নেই। সাধারণ একটা সাদা গেঞ্জি আর অফ হোয়াইট থ্রি কোয়ার্টার পড়ে আছে।
সাদা গেঞ্জিতে সুক্ষ্ম আলো পড়ে ছেলেটার বুকের রঙটা তীব্র হয়ে আছে, কেমন একটা লালচে-সাদা রঙ। ছেলেটা মৌনতা ভেঙে বলল,
“আসুন এইদিকটায়।” আয়ানা ছেলেটার কথামত ছাদের পশ্চিমকোণের দিকে যাচ্ছে। অদ্ভুত ভাবে তার কোনো সংশয় কাজ করছেনা, একটা ছেলে তাকে এভাবে একা নির্জন ছাদে মাঝরাতে আসতে বলেছে। সেও কোনো রকম ইতস্তত ছাড়াই চলে এসেছে।
পশ্চিমকোণে এসে এক মৃদু মোহনীয় সুগন্ধ পেল আয়ানা। সুগন্ধের উৎস কি সেটা ঠিক খুজে পেলনা। এক কোণে বিস্তর ফুলের গাছ, তাতে ফুটে আছে অজস্র ফুল। কিন্তু একটাও তার পরিচিত মনে হলনা, ফুলগুলোর গন্ধটাও আলাদা ধাচের। কয়েকটা ফুল চোখের সামনেই ধীরে ধীরে পাপড়ি মেলছে, হঠাৎ সাদ ছাদের আলোটা নিভিয়ে দিলেন। আয়ানা একটু হুমড়ি খেয়ে গেল, এমন কেন করল ছেলেটা। তার মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই তো! এভাবে কোনো দ্বিধা ছাড়া চলে আসার জন্য এখন সে নিজেকে নিজে বকছে। সাদ আস্তে করে বলল
“ভয় পাবেননা, মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বেরিয়ে এসেছে। এই দৃশ্যটা চাদের ভরা জ্যোৎস্না দেখতেই বেশী ভাল লাগবে।” আয়ানা চোখ মেলে চারিদিকটা দেখল, সত্যি আজকের চাদটা উজ্জ্বল ভরা জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে। সেই আলোতে ছাদটাকে ছোটখাটো সাজানো নন্দিত কানন লাগছে। মৃদুমন্দ বাতাস ও বইসে চারিদিকে। আয়ানার ঠোটের কোণে নিজের অজান্তেই মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
সাদ বললেন, ” হাসার জন্য কারণ নিজেই খুজে পেলেন।”
কথাটা শুনে সাদের দিকে তাকাল আয়ানা। সাদের চোখগুলো জ্যোৎস্নার আলোতে আরো বেশী চকচক করছে যা সাদের সৌন্দর্য বহুগূণ বাড়িয়ে দিল, সে লক্ষ্য করল মোহনীয় সুগন্ধটা সাদের গায়ে থেকেই ছড়াচ্ছে।
সাদ আয়ানার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল। আয়ানা তা বুঝতে পেরে একটু অস্বস্তিবোধ করল, সে এতক্ষণ ছেলেটার দিকে ছ্যাচড়ার মত তাকিয়ে ছিল। খানিকবাদে সাদ জিজ্ঞেস করলেন, চা খাবেন?
” না, আমার চা খাওয়ার অভ্যাস নেই। বলতে গেলে, একদম ই চা খাইনা। তখন টেনশনের চোটে খেয়ে ফেলেছিলাম আর কি!”
সাদ সুক্ষ্মভাবে ছোট্ট করে হাসল, তা আয়ানার চোখ এড়ালনা। ভালোলাগা অনুভূত হল বরং। সাদ বলল,
” অনেক রাত হয়ে গেছে। আপনি বাসায় ফিরে যান।”
আয়ানার কেন জানি তাতে মন সায় দিলনা, তাও হেসে বলল,
” ধন্যবাদ। আসি তাহলে।”
” গভীররাতে আর কখনো একা ছাদে বসবেননা।
আর চুলগুলো বেধে মাথায় ওড়না টেনে রাখবেন।”
আয়ানার এতক্ষণ হুশ হল, তার সাধারণভাবে বেধে রাখা খোপাটা কখন জানি খুলে গেছে। রেশমী কালো চুলগুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। আয়ানা আর কিছু না বলে ছাদ টপকে চলে এল। যতক্ষণ না আয়ানা নামছিল, সাদ একই জায়গায় একই ভাবে দাঁড়িয়ে আয়ানার চলে যাওয়া দেখছিল। ব্যাপারটা এমন যেন, আয়ানা না নামা পর্যন্ত সে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
নিচে নামার আগে আয়ানা আরেকবার সাদের দিকে তাকালাম। সাদের চোখগুলো এখনো জ্বলজ্বল করছে। এই দৃশ্যকে ভয়ানক সৌন্দর্য বলা যেতে পারে।
যাতে ভয় আর ভালোলাগা দুটোই মিশ্রিত।
(চলবে…..)