#ইফ্রিতে_মুসনাত
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
আয়ানার চড় খেয়ে সাদ বাচ্চা ছেলের মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। আয়ানা সেই দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল, সাদের এই নিষ্পাপ দৃষ্টিতে ও মূহুর্তে দূর্বল হয়ে যেতে পারে। আয়ানা ভাবতে পারছেনা, এতদিন ধরে যাকে ভালোবেসে আসছিল সে কিভাবে তার সাথে এতবড় গেইম খেলল। তখন লাইটের সুইচ অন করার সাথে সাথে সে খারাপ জ্বীনটাকে মূহুর্তে সাদের রুপ নিতে দেখেছে। আর সাদের হাতেও সেই তাজা কাটা দাগ টাই আছে।
কিন্তু আয়ানা বুঝতে পারছেনা, আয়ানার ক্ষতি করার জন্য সাদের এসব কিছু করার কি দরকার ছিল! সে যদি আয়ানা শরীর-এর প্রতি আর্কষিত থাকত তাহলে স্বামীরূপেই সে ওই অধিকার নিতে পারত। এত অভিনয়ের কি প্রয়োজন ছিল? আর কেন ই বা তাকে বিয়ে করল যদি সহজ পথে আয়ানাকে পাওয়ার সুযোগ টা গ্রহণ না করবে?”
আয়ানা সাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “এত অভিনয় করার কারণ কি? তোমার যদি আমার ক্ষতি করার ই হত খারাপ জ্বীন হিসেবেই করতে পারতে। আমাকে বিয়ে করে আমার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেনা এসব নাটকের কি দরকার ছিল? আচ্ছা তোমার আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করাটাই উদ্দেশ্য ছিল তাই তো? তাহলে এক্ষুনি নিজের সেই রুপে এসে অত্যাচার করে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করো!”
সাদ কিছু না বলে চুপচাপ আয়ানার কাছ থেকে সরে যেতে চাইল। আয়ানা সাদের হাত চেপে ধরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” এখন কেন পালাচ্ছো? আমাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে জোর করে উদ্দেশ্য আদায় করার সময় তো এত ইতস্তত ছিলনা তোমার! এখন তো আমি নিজেই তোমাকে সেই সুযোগ টা দিচ্ছি।”
সাদ আয়ানার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল। সাদের ভেজা চোখে এখনো অশ্রু টলমল করছে। সাদের নীরবতা আয়ানার রাগ বাড়িয়ে দিল।
” তুমি কি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবেনা?”
” আমার পক্ষে এখন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ই সম্ভব নয়।”
” তুমি যদি এখন প্রশ্নের উত্তর না দাও, তবে আমি এই সম্পর্কের ইতি টেনে এখান থেকে চলে যাব। এখন তুমি ভেবে নাও তুমি কি করবে?”
সাদ একবার করুনদৃষ্টিতে আয়ানার দিকে তাকিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আয়ানা হতাশ হয়ে বিছানার উপর বসে পড়ল। এসব ঘটনায় তার রিয়েকশান কি হওয়া উচিত তার সত্যিই জানা নেই। একদিকে সাদ একজন জ্বীন যে ওর ক্ষতি করতে চায় কিন্তু তাকে বিয়ে করেও কোনোরকম সুযোগ নিতে চায়নি। অন্যদিকে সাদের পরিবার ও জ্বীন নাকি সাদের ব্যাপারে কিছু জানে কিনা সেটাও আয়ানা নিশ্চিত নয়। সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে তার কাছে। সাদ তাকে কোনো উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে গেল, সাদ কি তার ভয়ংকর রুপ ধরে আবার আয়ানার কাছে আসবে? আয়ানা ভাবছে, সে এসবকিছুই বিশ্বাস করতে পারতনা। সে তো জানে জ্বীনরা অনেকরুপ ধরতে পারে। সাদের ব্যাপারটাও সেই একই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু যখন খারাপ জ্বীনটার হাতে সাদের আংটি দেখতে পেল তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল, তারপর সে যখন সাদের হাতে নিজের দেওয়া আঘাতটা দেখতে পেল সাদের প্রতি তার সব বিশ্বাস নিমিষেই ভেঙ্গে গেল। সাদ এটা কিভাবে করতে পারল? সন্ধ্যা থেকে এত আয়োজনের মানেই কি ছিল! ভেবে আয়ানার কান্নার সাথে রাগটা বেড়েই গেল।
.
আয়ানা সব ব্যাগপত্র গুছিয়ে শুয়ে পড়ল, সকাল সকাল ই এই বাড়ী থেকে আয়ানা বিদায় নিবে। মাঝরাত শেষ হতে চলল সাদ এখনো পর্যন্ত ফিরলনা। আয়ানার খুব পানির পিপাসা পেল। উঠে দেখে জগে পানি নেই, সারাদিন রুমে না আসায় পানি রাখতে ভুলে গেছে। আয়ানা রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্যে যেতে লাগল। রেশমা সুলতানার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ করে উনাদের রুমের আলো জ্বলছে। আয়ানা অবাক হল, এত রাতে উনারা আলো জ্বেলে কি করছেন? তাহাজ্জুদের নামায পড়তে উঠেছেন? একবার দেখে নিবে নাকি ভাবল আয়ানা। পরে উনাদের বিরক্ত করা ঠিক হবেনা ভেবে চলে যেতে উদ্যত হলে দরজার ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ পায় আয়ানা। দরজাটা ভেজানো ই ছিল, শুধু সামনে পর্দাটা টেনে দিয়েছে। কৌতূহল থেকে আয়ানা দরজার ফাক দিয়ে পর্দাটা হালকা সরায়। সরিয়ে সে অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, রেশমা সুলতানার কোলে মাথা রেখে সাদ কাদছে আর রেশমা সুলতানা শাড়ীর আচল মুখে চেপে কাদতে কাদতে সাদের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। সায়েদ জামিল অর্থাৎ তার শ্বশুড় গম্ভীর মুখে সাদকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আয়ানা ঠিক বুঝতে পারলামনা ব্যাপারটা। সে আরো কৌতূহল নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল।
সায়েদ জামিল একটু চুপ থেকে বলল,
” তার জানাযার ব্যবস্থা করেছো?” সাদ একটু শান্ত হয়ে বলল,
” নিজের হাতে দাফন করে এসেছি।”
” তাহলে এবার তোমার আয়ানাকে সব সত্য বলে দেওয়া উচিত।”
” আব্বু সে কি বিশ্বাস করবে এসব? ওর খুব বাজে ধারণা হয়েছে আমার ব্যাপারে।” রেশমা সুলতানা বলল,
” আয়ানা তোকে খুব ভালোবাসে। আমরা তোর আসল মা-বাবা নই তাও সব জেনে তোকে যেমন ভালোবাসি, সব জানার পর আয়ানাও ঠিক তোকে আগের মত ভালোবাসবে। অভিমান-রাগ থেকে সে এসব করছে।”
” আমি ওর সাথে সত্যিই বড় অন্যায় করেছি।”
” তুই ভেঙ্গে পড়িসনা, একটা বার আয়ানাকে সব খুলে বল। আমার বিশ্বাস ও ঠিক বুঝতে পারবে। একমাত্র সত্যটা বলেই ওর অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আটকানো যেতে পারে।”
এইটুকু শুনে আয়ানা নিজের রুমে চলে এল। সবকিছুর পিছনে কি সত্য রয়েছে যেটা জানলে আয়ানা তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে! সাদ নিজেই স্বীকার করেছে খারাপ জ্বীনটা ও। তাহলে আর কি রহস্য আছে ওর এই রুপের পিছনে।
কিছুক্ষণ পর সাদ রুমে আসল। এখন ওকে একদম স্বাভাবিক লাগছে, অনেকক্ষণ কান্না করায় ওর চোখগুলো লাল হয়ে আছে। নীল-কালো বর্ণের মণি আর ফ্যাকাশে লাল চোখের কোটরে ওকে অন্যরকম লাগছে। সন্ধ্যায় যখন আয়ানা সাদের চোখের দিকে তাকিয়েছিল, তখন সে সাদের চোখের মণিগুলো লাল বর্ণ ধারণ করতে দেখেছে। গাঢ় লাল মণি খারাপ জ্বীনটার চোখের অন্যতম চিহ্ন ছিল। সাদ আয়ানার পাশে এসে বসল এবং বলল,
” তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে রাজি। তার আগে আমি তোমাকে আমার সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে চাই।”
আয়ানা উত্তরে কিছু বললনা, শুধু একবার সাদের দিকে তাকাল।
সাদ সাবলীল ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল,
” তুমি ইফ্রিত জ্বীনের ব্যাপারে শুনেছো?
” কিছুটা জানি।”
” এটা একটা জ্বীনগোত্র। এরা জ্বীনজাতির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী এবং খারাপ জ্বীন। যারা বিভিন্ন খারাপ কাজেই নিয়োজিত থাকে, আর এদের অন্যতম কাজ হচ্ছে মানুষের ক্ষতি করা এবং নারীদের সাথে সঙ্গম করা। এদের নারীদের প্রতি অনেক লোভ। আর একটা জ্বীনজাতি আছে যারা ইফ্রিত জ্বীনের সমান শক্তিশালী, তাদের গোত্রের নাম মারিদ। মারিদ জ্বীন সবচেয়ে ভালো জ্বীন হিসেবেই পরিচিত। যদিও মারিদ গোত্রের কিছু জ্বীন হিংসা-বিদ্বেষ এ পরিপূর্ণ ছিল। প্রায়ই এই দুই গোত্রের সংঘর্ষ লেগে থাকে যেমনটা দুনিয়ায় ভালো আর খারাপের মধ্যে লেগে থাকে।
সেই সংঘর্ষ আর বিভেদের দেয়াল পেরিয়ে এক ইফ্রিদ পুরুষ জ্বীন বিয়ে করল এক মারিদ নারী জ্বীনকে। মারিদ জ্বীনের সংস্পর্শে এসে ইফ্রিদ জ্বীন তার গোত্রের সব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে ভালো জ্বীন হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিল। কিন্তু তাদের এই জুটিকে ইফ্রিদ বা মারিদ গোত্রের কেউ মেনে নিতে পারেনি। তাদেরকে গোত্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল সেই সাথে দুজনকে দুই গোত্রের কিছু স্বার্থবিদ্বেষী জ্বীনরা কঠোর ভাবে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই দুইজন জ্বীন জ্বীনজগত ছেড়ে মানুষের মাঝে আশ্রয় নিয়েছিল। এর মধ্যে তাদের ২টো সন্তান হয়েছিল। একজন ছেলে আর একজন মেয়ে।
অনেকগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী দুজন ই ভেবেছিল তাদের গোত্রের সংঘর্ষ মিটে গেছে। এখন তারা তাদের গোত্রে ফিরে শান্তিতে থাকতে পারবে। এই ভেবে তারা দুজনেই মারিদ গোত্রে ফিরে গিয়েছিল তাদের ১০ আর ৬ বছরের সন্তানাদিকে সঙ্গে করে।
কিন্তু এই শত্রুতার রেষ কখনোই কাটার নয়, মারিদ গোত্রে ইফ্রিদ জ্বীনকে দেখে তাদের বিদ্বেষীভাব জেগে উঠল এবং খুব কঠোর শাস্তি দিয়ে ইফ্রিদ জ্বীনকে হত্যা করল। মারিদকন্যার কোনো আকুতি ই তাদের থামাতে পারেনি। ইফ্রিদহত্যার এই খবর ইফ্রিদ গোত্রের কাছে যেতেই তারা মারিদকন্যা কে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। আর তাদের সন্তানদের নিয়ে দুই গোত্রে আবার সংঘর্ষ বাধে। এদের কোন গোত্রে অধীনে পালিত হবে তা নিয়ে বড় রকম ঝামেলা হয়।”
এইটুকু বলে সাদ থামল। আয়ানা অস্ফুটস্বরে বলল,
” তাদের সন্তানদের নিয়ে কেন এত টানাহিচড়ে?”
” কারণ তারা ইফ্রিত আর মারিদের মিলিত শক্তি। ইফ্রিদ আর মারিদ জ্বীনের সব গুণ এদের মাঝে অন্তর্নিহিত, এদের হাতে রাখলে যেকোনো জ্বীনগোত্র যুদ্ধে লাভবান হবে।তাই এদের আলাদা করে নাম দেওয়া হয় ইফ্রিতে মুসনাত রাখা হয়। বলাবাহুল্য, মারিদকন্যার নাম ছিল মারিদে মুসনাত।”
“আর আমি হচ্ছি সেই ইফ্রিতে মুসনাত।”
” তার মানে তুমি সেই ইফ্রিত-মারিদ জ্বীনের ছেলে?”
সাদ হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল,
” হুম, আর আমার মধ্যে ইফ্রিত-মারিদ জ্বীনের সব গুণ এবং শক্তি সমন্বিত আছে। তাই তুমি আমাকে দুটো রুপেই দেখতে পাও। খারাপ জ্বীনে ইফ্রিত, আর সাদের রুপে মারিদ।”
” আর তোমার বোন?”
” আমার বোন সেই গোত্রের রেষের শিকার হয়ে অর্ধেক বিকলাঙ্গ। সেই সাথে ও কোনো কথা বলার শক্তিও হারিয়েছে। তাকে কেউ দেখেনা কারণ জ্বীনরা যতক্ষণ নিজে থেকে মানুষকে দেখা না দেয় তাকে কেউ দেখতে পায়না। আমার বোন নিজে থেকে কারো কাছে দৃশ্যমান হতে চাইতনা। মা-বাবার নির্মম হত্যা সে মেনে নিতে পারেনি তাই সে মানসিক সমস্যায় ভুগত। তাই তাকে আমি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার জন্য সিলেটে ভাড়া বাসা নিয়ে থেকেছিলাম।”
“তার মানে, সেদিন তোমার বাসায় যে ওড়না-কানের দুল দেখেছি তা তোমার বোনের?”
“হুম।”
” তাহলে এটাই আসল কথা, তুমি তোমার ইফ্রিত জ্বীনের গুণাবলির তাড়নায় আমার ক্ষতি করতে চেয়েছো?”
.
সাদ আয়ানার পাশ থেকে সরে এসে চোখ মুছে জানালার পাশে দাড়াল।
” আমি সবসময় মারিদ জ্বীনের গুণাবলি ই নিজের মাঝে প্রজ্জ্বলিত করেছি। কখনো আমার ইফ্রিত রুপ সামনে আসতে দিইনি, যখন আসত নিজেকে কঠোর ভাবে দমন করতাম। তাই তোমার ক্ষতি করার কোনো কারণ নেই আমার।
তবে করতে বাধ্য হয়েছি নিজের অজান্তে।”
“মানে?”
” দুইগোত্রের রেষারেষির জোরে যখন আমরা নিষ্পতিত, তখন আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে রাফেজী গোত্রের সর্দার জ্বীন।
রাফেজী জ্বীন হচ্ছে জ্বীনজাতির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জ্বীন। এরা শক্তিতে ইফ্রিত-মারিদের ধারে-কাছে না থাকলেও বদবুদ্ধিতে ইফ্রিতের চেয়ে বেশী এগিয়ে।
সেদিন সে আমাদের মানুষের আড়ালে আত্মগোপন করতে সহায়তা করেছিল। আর আমাদের সবরকম সাহায্য প্রদান করেছিল।
যখন মানুষসমাজে এসে আমি ছোট্ট বোনটাকে নিয়ে বিপাকে পড়ে বিভিন্ন মসজিদ-মাজারে ঘুরতে থাকি একটু আশ্রয়ের জন্য। তখন এই দম্পতি আমাদের আশ্রয় দেন যাকে আমি নিজের মা-বাবা ই মনে করি। আমি উনাদের কাছে কিছুই গোপন করিনি, সব ই বলে দিয়েছিলাম। উনারা সব জেনেও আমাকে নিজের ছেলের মত আদর করেন এবং মানা করেন আমি জ্বীন এই কথা যাতে কখনো কেউ জানতে না পারে।
যখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হই, তখন রাফেজীর সর্দার জ্বীন তার বিনিময় দাবি করেন। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে, কারণ আমাকে কাজে লাগানোর জন্য ই রাফেজী জ্বীনের এত প্রচেষ্টা। তখন সে আমার কাছে বিনিময় হিসেবে আমার ইফ্রিত রুপ চালনা করার অধিকার চাইল। আমি তাতে রাজি হইনি, তাই সে আমার বোনকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আমাকে হুমকি দেয়। সে তার গোত্র থেকে দুজন নারীকে আমার ছোট থেকে আমার বোনকে দেখাশুনা করার জন্য রেখেছিল। তারা ই বুঝতে পেরেছিল আমার একমাত্র দূর্বলতা আমার বোন।
আর সেই আমার ইফ্রিত রুপ দখল করে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আর যা করেছে তা আমার অজান্তে, আমি বুঝতেও পারতামনা আমি কি করতে যাচ্ছি! কিন্তু আমার মারিদ রুপের জন্য বেশী খারাপ কিছু করতে পারতনা। আমার ভিতরের দ্বৈতসত্তার বাধা চলত ইফ্রিতসত্তার খারাপ কাজে।”
” কিন্তু সে আমার ক্ষতি করতে চাচ্ছিল কেন?”
” তুমি একটু খোজ নিলে জানতে পারবে তোমার বাবার আপন বোন ছিল, যিনি কালোজাদুসহ বিভিন্ন খারাপ জ্বীন এর সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। অনেক জ্বীনের সাথে তার স্বেচ্ছায় শারীরিক সঙ্গম হত, কেবল মাত্র জ্বীনদের সন্তুষ্ট করে কালোজাদু করার জন্য। তাদের মধ্যে রাফেজী গোত্রের জ্বীন সর্দার ও ছিলেন। তোমার দাদু এসব জানতে পেরে তাকে তাজ্য করে সব সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দিয়েছিলেন। এইজন্য তার সব রাগ-ক্ষোভ তোমার উপর। নিজের বাবাকেও উনি জ্বীনের মাধ্যমে মেরে ফেলেছিলেন। আর তোমার ক্ষতি করার দায়িত্ব দিয়েছেন রাফেজী জ্বীনের উপর। যাতে সে তোমার সাথে প্রতিনিয়ত শারীরিক সঙ্গম করে। রাফেজী তার শক্তি দিয়ে এতটা এগোতে পারবেনা জেনে তার দুষ্টবুদ্ধি দিয়ে আমার ইফ্রিত রুপ ব্যবহার করেছে। তোমাকে বিয়ে করতে আসা সবাইকেও সে ই হত্যা করেছে।”
” আমিও শুনেছিলাম আমার এক ফুপু ছিল, কিন্তু তার ব্যাপারে বিস্তারিত কেউ কিছু কখনো বলেনি।”
” তোমাকেও আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু ইফ্রিতে মুসনাতের জন্য ভালোবাসা আর বিয়ের ফল খুব মারাত্মক হবে, তাই তোমাকে বার বার অবজ্ঞা করে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাদের মিল করিয়ে দিলেন।
তাও আমার মন সায় দিলনা, আমি খারাপ কিছুর মুখোমুখি হতে চাইনি বলেই তোমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমার সত্যিটা তুমি জেনে যাওয়ার পর জ্বীনসর্দার আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। কিছুক্ষণ আগে আমি নিজের হাতে তাকে দাফন করে এসেছি।”
বলে সাদ কাদতে লাগল। আয়ানার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতে লাগল। সবটা না জেনে কতই না ভুল বুঝেছে সাদকে। আয়ানা কিছু না বলে সাদকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
” তোমার শেষ পিছুটান ও চলে গেছে। এখন তুমি তোমার ইফ্রিত রুপের সঠিক ব্যবহার করো। আর কোনোকিছুর পরোয়া না করে সেই জ্বীন আর মহিলাকে হত্যা করো যাদের জন্য তোমার এত ভোগান্তি।”
” কিন্তু আমার পরিবার আর তুমি!”
” আল্লাহ ভরসা, এসব ভেবোনা। তুমি শুধু খারাপের বিনাশ করো।”
সাদ দৃঢ়প্রত্যয়ে আয়ানার দিকে তাকিয়ে আয়ানার কপালে ছোট একটা স্পর্শ দিয়ে বেরিয়ে গেল। আয়ানা ভাবতে লাগল, আর যাই হোক সাদের হাত সে কখনো ছাড়বেনা। ইফ্রিতে মুসনাতের পরিচয় যতই ভয়ানক হোক সাদের সাথে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবে।
(চলবে…..)