ইচ্ছেপূরন পর্ব-২

0
1127

ইচ্ছেপূরন
পর্ব-২

“বুঝলেন আপা, হাতে নাতে ধরছি দুইজনকে। এখন তো ওনাকে কাপড় পড়া দেখতেছেন? যখন ধরছি তখন পুরাই উলঙ্গ ছিলো। ছি! ছি! কি লজ্জা গো আপা! শরমের কথা আর কি বলবো বলেন? বিবাহিত পুরুষ মানুষ এর এমন কাম কি মানায় নাকি আপা, আপনিই বলেন?”
বিভার কান ঝা ঝা করছে। লজ্জায়, অপমানে মনেহচ্ছে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে ও। এইদিনই দেখার বাকি ছিলো বুঝি? কোন জনমের পাপের শোধ যে নিচ্ছে আতিক, আল্লাহ জানে। বিভা মাথা নিচু করে বসে আছে সোফায়। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসতে চাচ্ছে, অনেক কষ্টে সেটা বারবার ভেতরে ঠেলে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছে বিভা। লোকটা আবার বলতে শুরু করলো-
“আপনেই বা কেমন বউ আপা? জামাই কি করে, কই যায় খোঁজ রাখবেন না? ওনাকে তো বেশ অনেকদিন ধইরা এইখানে আসতে দেখি। এতোদিন ভাবছি বেটি স্কুল মাস্টার, হয়তো কলিগ লাগে। আজকা বেটির জামাই চইলা আসছে সময় মতন। তাই না ধরা খায়ে গেছে।”
বিভার আর কিছু শোনার রুচি হচ্ছে না। সে জানে এরা এখন এসব কথা বলতেই থাকবে, থামবে না। বাধ্য হয়ে সে তার কান দুহাত দিয়ে চেঁপে ধরলো। প্রচন্ড ঘৃনা ভরে আতিকের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। এ যে তার হাজবেন্ড আতিক, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। তার বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলো আতিক? পরকীয়া করে বেড়ায় এতোদিন ধরে আর সে টেরই পেলো না? এতো বোকা কেন সে?মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলো বিভা। মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করে কথা বলতে চাইলো, কিন্তু গলাটা ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলো। ভাঙা গলায় জানতে চাইলো-
“খালি ওকে বেঁধে রেখেছেন কেন? দোষ কি ও একাই করেছে? ওর ক্রাইম পার্টনার কই? তাকেও তো সাজা দিতে হবে?”
“তাতো অবশ্যই আপা। সে কথা কি আর আমরা বুঝি না? আপনে বলার আগেই আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়ে নিছি।”
“তা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন শুনি?”
“এই মনে করেন, বেটি তো মোহাম্মদপূর স্কুলের মাস্টার, তার চাকরি নট কইরা দিসি। সে আর তার জামাই দুইজন মিলা মাফ চাইছে পায়ে ধইরা আর আজকেই এলাকা ছাইরা যাইবো গা কইছে। গেছেও গিয়া দেখেন?”
“বেশ, তবে আর ওকে আঁটকে রেখেছেন কেন? ও তো এই এলাকার না। আর মেরেছেন তো ভালোই। আরো শাস্তি দিতে চান?”
কথা বলা লোকটা হাসলো ফিকফিক করে। বিভার গা জ্বলে গেলো সেই হাসি দেখে।
“কি যে কন না আপা? ইসলামে হইলো গিয়া দোররা মারার হুকুম আছে। আর…আমরা তো…”
লোকটা কথা শেষ করার আগেই বিভা থামিয়ে দেয়-
“একজনকে যেহেতু মাফ করেছেন তাই ওকে মাফ করে দিন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এমন আর হবে না।”
“আপনি গ্যারান্টি দিলেই কি না দিলেই কি আপা! এই এলাকায় না করলো,অন্য এলাকায় করলে কি আমরা টের পাবো? বাদ দেন, এরচেয়ে আপনি হাজার পঞ্চাশেক টাকা দেন। দিয়া আপনের জামাইকে নিয়ে যান।”
বিভা লোকটার কথা শুনে কিছুক্ষণ হ্যা হয়ে তাকিয়ে থাকলো। বলে কি লোকটা? সুযোগ মতো দাও মারতে চাইছে? এখন পন্চাশ হাজার টাকা পাবে কোথায় ও? দুজনার চাকরি তে কোনোমতে সচ্ছল ভাবে সংসার চালিয়ে নিতে পারে ওরা। ঢাকা শহরের যে খরচ? একটু ভালোমতো চলতে গিয়ে ওদের আর কোনো টাকাপয়সা উদৃত থাকে না। সে বিরবির করলো-
“এতো টাকা এই মুহুর্তে কোথায় পাবো, ভাই? ”
“আরে পাবেন পাবেন! মনে করেন পোলাপান তো তারে মাইরাই ফালাইতো। আমরা ঠেকায়ে ঠুকায়ে রাখছি। এখন টাকা দিলে ওরা আর ঝামেলা করবো না।”
বিভা দুই মিনিট ভাবলো। এখানে এভাবে বসে থাকার কোনো মানে নাই। অসহ্য লাগছে তার। সে অনেক ভেবে নিয়ে তার দূর সম্পর্কের চাচা হাসনাত কে ফোন দিলো৷ চাচা পুলিশে চাকরি করে, আর ওদের বিয়ের সময় ওর লোকাল গার্জেন ছিলো।
“হ্যালো চাচা, খুব বিপদে পড়েছি। তুমি কি একটু মোহাম্মদপূর আসতে পারবো? সাথে হাজার পঞ্চাশেক টাকাও নিয়ে এসো।”
ওপাশ থেকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো মনেহয়। বিভা বললো-
“তুমি আগে এসো তারপর বলছি।”

আধাঘন্টা খানেক পর বিভার চাচা হাসনাত এলো। পুলিশে চাকরি করা লোক, পরিস্থিতি দেখেই মনেহয় কিছু একটা আঁচ করে নিয়েছেন। চাচাকে দেখে বিভা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যাক! বাবা, ওকে আর কথা বলতে হবে না! চাচা এবার সামলে নেবে ঠিকই।

যে লোকটা এতোক্ষণ বিভার সাথে কথা বলছিলো সে হাসনাত দেখে একটু দমে গেলো। পুলিশের লোক বলে অতোটা ঘাটাতে চাইলো না। তবুও হাজার বিশেক দিতেই হলো শেষ মেষ। হাসনাতও বেশি জোড়াজুড়ি করলো না। এমনিতেই মানসম্মান নিয়ে টানাটানি! এরকম ঘটনা বুঝে নিজেরই লজ্জা লাগছিলো। সেও টাকা পয়সা দিয়ে মিটমাট করে আতিককে ছাড়িয়ে নিয়ে এলো। নিজের গাড়িতে পৌঁছে দিতে চাইলো ওদের।
“চাচা, তুমি চলো বাসায়। ওর বোনদের কে ডাকি। আমার আর ওর সাথে সংসার করা সম্ভব না।”
“আহ, বিভা! এতো উত্তেজিত হোস না তো? আতিককে আগে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। ওর আগে শরীর ঠিক হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলিস।”
বিভা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু হাসনাত থামিয়ে দিলো ওকে। গাড়িতে ওঠার ইশারা করলো। আতিক তখন থেকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। হাসনাত আতিককে ডাকলো-
“আতিক, গাড়িতে বসো তো? সামনে কোন হাসপাতাল পেলে সেখানে যাই।”
আতিক অনেক কষ্টে মুখের জমানো রক্ত মেশানো থুথু ফেললো রাস্তায়-
“চাচা হাসপাতালে যাওয়া লাগবে না। বাসায় যেয়ে স্যাভলন লাগিয়ে নেবো আর একটা পেইন কিলার খেয়ে নেবো ঠিক হয়ে যাবে।”
“কি বলো? তোমার মুখ চোখ তো একদম ফুলে আছে! হাতটাত ভাঙেনি তো?”
“না না এতো সিরিয়াস কিছু না চাচা। আপনি বরং আমাদের অন্য একটা গাড়ি ঠিক করে তুলে দিন। আমরা বাসায় চলে যাই। আপনার কষ্ট করে যেতে হবে না।”
“আরে কষ্ট কিসের? চলো তবে আমিই পৌঁছে দিই। তুমি উঠে বসো গাড়িতে।”
আতিক আর কথা না বলে গাড়িতে উঠে বিভার পাশে বসলো। বিভার মনেহলো এরচেয়ে একজন খুনির পাশে বসা উত্তম। ওর এতোটাই ঘেন্না হলো যে বমি পেয়ে গেলো। ও আরেকটু চেপে বসে আতিকের উল্টো দিকে চেয়ে রইলো। আতিকও ওর দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। পুরোটা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বললো না। ওর চাচা ওদেরকে আদাবরে ওদের ছয়তলা বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এই বাড়ির চারতলার এক ফ্লাটে ভাড়া থাকে ওরা। গাড়ি থেকে নামা মাত্রই বিভা আতিককে রেখেই দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। আতিক কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো বিভার যাওয়ার পথের দিকে তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজেও এগুলো। আশেপাশের বিল্ডিং গুলো থেকে মানুষজন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। অবশ্য ওদের দোষ নেই কোন? আতিকের অবস্থাই এমন যে, যে কেউ ওর দিকে তাকাবে এখন। আতিক ওসব পাত্তা না দিয়ে খোরাতে খোরাতে ভেতরে ঢুকলো। সিড়ি বেয়ে চারতলায় উঠে দেখে ওদের ফ্লাটের দরজা হাট করে খোলা। ঘরে ঢুকে আস্তে করে গেটটা লাগালো আতিক। এঘর ওঘর উকি দিয়ে বিভাকে খুঁজলো। পরে বাথরুমে পানি পড়ার আওয়াজ শুনে বুঝলো ও বাথরুমে আছে। আতিক বেডরুমে ঢুকে নিজের গায়ের কাপড়গুলো খুলে ফেললো। পুরো শরীর নীলচে রং ধারন করেছে। যায়গায় যায়গায় কেটে গেছে, রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। আতিক খুঁজে খুজে স্যাভলন আর তুলো বের করলো তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাটা জায়গাগুলোতে স্যাভলন দিতে শুরু করলো। উফ! জ্বলে যাচ্ছে! ব্যাথায় মুখ দিয়ে আওয়াজ বেড়িয়ে গেলো আতিকের। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলো সে ব্যাথা, মনে মনে অকথ্য ভাষায় গালি দিলো লোকগুলোকে। এইভাবে অমানুষের মতো মারে কাউকে? নিজেই যেন নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে! সামনে দেওয়া শেষ হতেই পিছন ঘুরলো, পিঠের কিছু যায়গায়ও কেটে গেছে। কিন্তু হাত তো অতো দূর পৌঁছাবে না। অসহায় চোখে আর একবার তাকালো বাথরুমের দরজার দিকে। বিভা এতোক্ষণ ধরে বাথরুমে কি করে? অবশ্য বেরুলেই বা কি? বিভা এখন মরে গেলেও ওকে ওষুধ লাগিয়ে দেবে না, এটা আতিক ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। আতিক মনে মনে হিসাব কষছে কিভাবে বিভাকে ঠান্ডা করবে? ওর বোনদের কোনোভাবেই ঘটনাগুলো জানানো যাবে না। না হলে দুলাভাইদের কাছে মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে ওর।

ঠিক ঐ সময় বিভা বাথরুমের দরজা খুলে বের হলো। ওর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আওয়াজ করে পাশের রুমের দরজা লাগালো বিভা। তারমানে আজ রাতে আর এদিকে আসবে না বিভা? আতিক কোনোরকমে ওষুধ লাগিয়ে কাপড় পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ওদিকে বিভা রুমে ঢুকেই কাঁদতে শুরু করলো। এ কোন দুশ্চরিত্রের লম্পটকে ও ভালো বাসলো? ভেবে কুল পায়না বিভা। কষ্টে বুক ফেটে যায় ওর। না পারতে মাকে ফোন লাগায় বিভা। দুবার বাজতে না বাজতেই ফোন তুললো বিভার মা বিলকিস বানু-
“হ্যা,বিভু! কি খবর? ভালো আছিস?”
“মা, চাচা ফোন দিয়েছিলো তোমাকে?”
কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে প্রশ্ন করে বিভা। মেয়ের কান্না শুনে কেবল একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরোয় তার।
“হুম, শুনলাম তো জামাইয়ের কাহিনি। ”
“মা, আমি আর ওর সাথে সংসার করবো না। এমনিতে তো সারাক্ষণ উঠতে বসতে মারে তার উপর আজকে এই ঘটনা?”
“জামাই তোকে কিছু বলছে আজকে?”
“ও কি বলবে? আমি ওর সাথে কোনো কথা বলি নাই। মা, আমি বাড়ি চলে আসি?”
“দেখ বিভু, তোর বাপ মেনে নিবে না জানিস তো? এমনিতেই তোদের কোনো ভাই নাই এই জ্বালায় লোকটা সারাজীবন আমাকে জ্বালায় গেলো। তার উপর তোর যেভাবে বিয়ে হইছে, সে তো তোকে সহ্যই করতে পারে না! আমি কি করবো বল? সে সব শুনে বললো যে, পুরুষ মানুষ ওরকম একটু আধটু করবেই!”
“আমি মরে যাবো মা। এইসব কিভাবে সহ্য করবো?”
“সহ্য করা ছাড়া গতি নাই রে মা! কি করবি?”
“তোমরা খুব খারাপ মা! খুব খারাপ! বাবা মা হইছো কেন তাইলে? সন্তানের বিপদে যদি পাশেই না থাকতে পারো?”
ওপাশে বিলকিস চুপ করে থাকেন। বিভা রাগের চোটে ফোন কেটে দিয়ে বালিশে মুখ গোজে। একটা ভুল না হয় করে ফেলছে জীবনে! তাই বলে কি সারাজীবন সাফার করে যাবে? কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পরে বিভা।

রাত আটটার দিকে ঘুম ভাঙলো বিভার। খিদের জ্বালায় পেটের নাড়িভুড়ি উল্টে আসছে। দরজা খুলে বের হলো বিভা। বেডরুমে উকি দিয়ে দেখলো আতিক তখনো ঘুমে। ও ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে খেয়েদেয়ে আবার রুমে ঢুকে গেলো। ঔ হারামীটার মুখ দেখতে ইচ্ছা করছে না। ব্যাগ থেকে ওষুধের কৌটা বের করে দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। কোনো কিছু চিন্তা করতে চায় না বিভা। এখন জেগে থাকলেই মাথার মধ্যে সব চিন্তারা ভীর জমাবে। এরচেয়ে ঘুম ভালো।

ওদিকে আতিক ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং এ এসে দেখে পুরো টেবিল ফাঁকা। এমনিতেই শরীরের ব্যাথায় জ্বর এসেছে, তার উপর লেগেছে খিদে! আতিক বিভার রুমের দরজায় কিছুক্ষণ নক করলো কিন্তু বিভা সারা দিলো না। ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসলো। ফ্রিজ খুলে দেখলো খাবার আছে কিন্তু বেড়ে নিতে ইচ্ছে হলো না। পাশেই পাউরুটি দেখতে পেলো। ওখান থেকে দুপিস পাওরুটিতে বাটার লাগিয়ে খেয়ে নিলো। এবার ওর রাগ উঠছে বিভার উপর। ওর এই অবস্থা দেখেও এতোটা নির্লিপ্ত থাকে কিভাবে মেয়েটা? গরম মেজাজ নিয়ে দুটো জ্বর আর ব্যাথার ওষুধ গিলে নিলো। তারপর ঘুমাতে গেলো নিজেও। ভেবে নিলো কাল কথা বলবে বলবে বিভার সাথে।

প্রতিদিনের মতো আজও ছয়টার দিকেই ঘুম ভাংগো বিভার। ঘুমের ওষুধের রেশটা তখনো কাটেনি ওর। এইজন্যই মনেহয় মাথাটা বড্ড ভার হয়ে আছে। বিছানা ছাড়লো বিভা। রান্নাঘরে যেয়ে চুলায় ভাত চাপিয়ে দিলো। প্রতিদিন সাড়ে সাতটার মধ্যেই বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়তে হয় ওর। আদাবর থেকে গুলশান দুই যেতে প্রায় সময়ই দের দুই ঘন্টা লেগে যায়। তাড়াহুড়ো করে আরেক চুলোয় প্রেসারে আলু চাপিয়ে দিলো। একঘন্টার মধ্যেই ভাত, ডাল, আলুভর্তা আর গতদিনের রান্না করা মাংস গরম করে টেবিলে দিয়ে দিলো। রান্নাঘরের টুংটাং আওয়াজে আতিকেরও ঘুম ভেঙে গেছে। সে হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং এ এলো। খাবার দেখে রাতের খিদেটা মাথাচাড়া দিলো। বিভা তখন নিজের জন্য টিফিন বাড়ছিলো। ও আতিককে দেখেও দেখলো না। আতিক একবার চোরা চোখে বিভার দিকে তাকালো। তারপর একটা প্লেট টেনে নিতে নিতে প্রশ্ন ছুরে দেয় বিভার দিকে-
“তুমি খাবে না?”
বিভা কোনো জবাব না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।
“তুমি কি অফিসে যাবা?”
জবাব নেই।
“আজ অফিসে না গেলে হয় না?”
তাও জবাব নেই।
“তুমি কি কথা বলবা না আমার সাথে? ”
বিভা এবারও চুপ। আতিকের মেজাজের পারদ চরছিলো যেন! বিভা যে ওকে দেখছেই না এতেই ওর মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে!
“তুমি যদি এবার কথা না বলো তবে কিন্তু খুব খারাপ হবে?”
বিভা তারপরেও চুপ। আতিকের এবার ধৈর্য্য ছুটলো। সে তার ভাতের প্লেটটা ছুরে মারলো মেঝেতে।
“ঐ শালী, খা…কী…মা…কথা বলিস না কেন রে হারা…..দী? এতো কিসের দেমাগ তোর?”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আতিক। বিভা তখন অপর পাশে স্থির হয়ে আছে। আতিকের এই মেজাজ ওর চেনা। ওকে মারার আগে আতিক এরকম গালাগালি ছুড়ে।
“কথা বল, মা…”
বিভা একটু কেঁপে ওঠে আতিকের চিৎকারে।
“তোর মতো লম্পটের সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না হয়। ঘরে বউ রেখে পরকীয়া করিস? লজ্জা করে না তোর? আমি কথা বলতে চাই না তোর সাথে, বুঝিস না তুই?”
বিভা এই প্রথম সাহস করে কিছু বলে আতিককে। ওর কথা যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে। আতিক আরো খেপে গেলো ওর কথা শুনে-
“মা…,সাহস বাড়ছে তোর? দুইদিন চাকরি করে সাহস বাড়ছে, তাই না! তোর চাকরি বন্ধ আজ থেকে। ”
“ঐ শালা হারামি, দুশ্চরিত্র, তোর কথা শুনবো আমি? দ্বারা তোর বোনদের ফোন দিতেছি। তোর বোন জামাইরা যখন এইরকম আকাম করবে তখন না বুঝবি কেমন লাগে?”
আতিক এবার এগিয়ে এসে ফট করে বিভার চুল মুঠি করে ধরলো-
“মা…, আমি পরকীয়া করবো না তো কে করবে? তুই করবি? কে পুঁছবে তোকে? নিজেকে দেখেছিস আয়নায়? গায়ে গতরে এট্টুও মাংস আছে তোর? কাঙালিনী মেয়ে মানুষ কোথাকার?”
চুলের মুঠি ধরে দুবার ঝাঁকি দিয়ে দূরে ধাক্কা দিলো বিভাকে। দেয়ালে মাথা বাড়ি লেগে ওখানেই পরে রইলো বিভা।

চলবে—–
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here