#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃঅন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন বরের আসনে বসার সাথে সাথেই হঠাৎ করে একজন লোক অয়নের দিকে ছুটে এগিয়ে এলো। লোকটি অয়নের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু বলার পর অয়ন তাকে চলে যেতে বলল। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে ঠাঁই বসে আছে। ঐ দিকে ঈশাকে নববধূর রূপে বেশ সময় নিয়ে সাজানো হলো। ঈশা যদিও জানে না অয়নের থেকে ভালোবাসা সে পাবে কি পাবে না! তবে ঈশা অয়নের মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে উঠে পড়ে লাগবে। ঈশার এক তরফা ভালোবাসাকে দুই তরফা করেই ছাড়বে সে। ঈশাকে সাজিয়ে গুছিয়ে অয়নের সামনে নিয়ে আসা হলো। অয়ন মাথাটা নিচু করে বসে আছে। ঈশার দিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। ঈশা অয়নের পাশে এসে বসলো। ঈশা লক্ষ্য করলো তার হুবু স্বামীর দৃষ্টি তার উপর পড়ছে না। ঈশা অনেক আশা করে এসেছে। সে ভেবেছে হয়তো তার স্বামী তার দিকে তাকিয়ে নিজের দৃষ্টিকে আর ফেরাতে পারবে না। অথচ এমন কিছুই তার সাথে হলো না। ঈশার ও মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— কি হলো অয়ন? এমন করে মুখ গোমড়া করে রেখেছো কেনো? কত লোক আছে এখানে! আজকের জন্য হলেও একটু মুখে হাসি রাখো প্লিজ!
— দেখো ঈশা আমি কখনও হাসবো আর কখনও কাঁদবো সেটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমার পার্সোনাল কিছু নিয়ে তুমি কিছু না বললেই আমি খুশী হবো।
— হুম বলবো না। তবে শুধু মাত্র আজকের জন্য আমার কথাটা শোনো। প্লিজ!
— মেজাজটা খারাপ আছে আমার। দয়া করে আর খারাপ করো না। দেখো আবার এমন যেনো না হয় যে বিয়েটাই মাঝ পথে থেমে যায়।
অয়নের কথাটা শুনে ঈশার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। ঈশা আর কোনো শব্দ করলো না। অয়ন ও নিজের মতো করে বসে আছে। অধরার কথা মাথায় চেপে বসেছে তার। ভিশন মনে পড়ছে অধরার কথা। মেয়েটি রাগ করে কোথায় চলে গেলো? একটিবার কি অয়নের কথা তার মনে পড়ছে না? একটু কি আসতে পারে না অয়নের কাছে! অয়ন অধরার ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। ঐ দিকে বিয়ের সময় ও এগিয়ে আসছে। এখনি অয়ন আর ঈশার বিয়ে পড়ানো হবে। কাজী সাহেব অয়নের পাশে বসে কিছু কথা বলল। অতঃপর অয়নকে রেজিঃ কাগজে সাইন করতে দিলো। অয়ন সাইন করতে কলমটা হাতে নিতেই কেনো জানি অয়নের হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো। অয়নের চোখের সামনে যেনো আঁধার নেমে এসেছে। চোখের পাতার নিচে নোনা জল এসে ভিড় করেছে। এখনি হয়তো পলক ফেললেই টুপ করে পড়ে যাবে মাটিতে। অয়নের দিকে বিয়েতে আশা সকলেই তাকিয়ে আছে। সবাই বেশ কৌতূহলী হয়ে আছে। বিয়ে করতে এসে কোনো পুরুষের চোখের কোনে জল! এটা সত্যি একটু অবাক করার বিষয়। অয়ন পেনটা সাইডে রেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক জনের দিকে তাকালো। অয়নের অশ্রুসিক্ত ছলছল চোখ জোড়া ভিশন ব্যাকুল হয়ে একটি পরিচিত মুখকে খুঁজে চলেছে। হুম অধরাকে খুঁজছে সে। অয়নকে থমকে যেতে দেখে ঈশা খানেকটা ভারী কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— নাটক করতে এসেছো এখানে? সাইন করতে কি শুভ মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছো? বিয়ে যদি না করার হয় তবে এই নাটক করার কি আছে?
ঈশার কথাটা শুনে অয়ন নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। আপন মনে অয়ন বিধাতার কাছে সহ্য শক্তি প্রার্থনা করছে। শরীরে মনে হচ্ছে আগুন লেগে গেছে ঈশার কথায়। ঈশার কোনো কথাই অয়নের সহ্য হচ্ছে না। ঈশা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন সামনে দাড়িয়ে থাকা লোক গুলোর দিকে তাকাতেই আচমকা দুম করে বসা থেকে উঠে পড়লো। অয়ন দুম করে বিয়ের আসর থেকে উঠে পড়তেই সবাই চমকে যায়। ঈশা অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের জায়গা থেকে দুম করে নেমে পড়লো। দৌড়ে সামনে থাকা লোক গুলোর মাঝে দিয়ে চলে যায় অয়ন। অয়ন কোথায় যাচ্ছে? আর কেনোই বা এমন করছে? কেউ বুঝতে পারছে না। সবাই অয়নের দিকেই দৃষ্টিপাত করে আছে। অয়ন দৌড়ে একদম সকলের পিছনে চলে আসে। ঈশার বাড়ি আসার পর থেকে অয়ন একটা জিনিস লক্ষ্য করছে। এই সকলের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বেশ রহস্যজনক ভাবে এখানে এদিক ওদিক লুকিয়ে চলছে। অয়ন সেই রহস্যময় লোকটার কাছে এসে বলল
— এই আপনি কে? আর মুখ ঢেকে রেখেছেন কেনো? আমি অনেক সময় ধরে আপনাকে লক্ষ্য করছি। আপনি আমায় ফলো করছেন তাই না?
মেয়েটি অয়নকে কিছু বলছে না। অয়নের দিক থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। অয়ন মেয়েটির পালিয়া যাওয়ার চেষ্টা বুঝতে পেরে দুম করে মেয়েটির হাত ধরে ফেলল। এর মধ্যেই অয়নের কাছে ঈশা ছুটে আসে। ঈশা অয়নের অন্য হাত ধরে নিচু স্বরে বলতে লাগলো
— অয়ন তুমি কি ঠিক আছো? পাগল হয়ে যাওনি তো! এতো মানুষ এর মাঝে তুমি এখানে এসে এই মেয়েটাকে ধরে রেখেছো? চলো আগে বিয়েটা হোক তারপর দেখবো এই মেয়ে কে!
— শার্ট আপ। আমি এখনি দেখবো এই মেয়ে কে। এই মেয়ে মুখের উপর থেকে চাদরটা সরাও বলছি।
— অয়ন কন্ট্রল ইউওর সেল্ফ। বিয়ে করা বাদ দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করা মোটেও তোমার সুট করছে না। চলো আমার সাথে।
ঈশা কথাটা বলতেই অয়নের হাত ধরে টানতে লাগলো। অয়নের কথার মানে ঈশা বুঝতে পারছে না। ঈশার এমন আচরনে অয়নের রাগ উঠে যাচ্ছে। অয়নের রেগে গিয়ে ঈশার হাত থেকে নিজের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। অয়ন নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বেশ শক্ত গলায় বলল
— তোমার কি মাথায় কোনো সমস্যা আছে? বলেছি না বিয়ের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এই মেয়ের মুখটা দেখা। কথা কি কানে যায় না?
— অয়ন তুমি আমায় সকলের সামনে অপমান করছো? এই ছিলো তবে তোমার মনে…!
— শার্ট আপ। তোমার সাথে বাজে বিষয় নিয়ে তর্ক করার কোনো সময় আমার নেই।
অয়ন কথাটা বলতেই সামনে থাকা মেয়েটির মুখের উপর থেকে চাদরটা এক হেঁচকা টানে খুলে ফেলল। মেয়েটার মুখের উপর থেকে চাদরটা সরে যেতেই অয়ন চমকে উঠলো। অয়ন দেখতে পেলো অয়নের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অধরা। অধরার চোখে নোনা জল। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে বলল
— অধরা তুমি এখানে!
— সরি স্যার আপনার বিয়েতে আসাটা আমার উচিত হয়নি। তবে নিজের বেহায়া নির্লজ্জ মনটাকে আটকে রাখতে পারিনি। জীবনে শেষ বারের জন্য আপনাকে দূর থেকে একটু খুশি দেখার জন্য ছুটে এসেছি।
অধরা কথাটা বলতেই কান্না করতে লাগলো। ঈশা অধরার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। শেষ সময়ে এসে অধরা আবার ও ঈশার থেকে অয়নকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করছে। ঈশা নিজের রাগকে সামলাতে পারলো না। দুম করে অয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অধরার চুল গুলো দুম করে নিজের মুষ্ঠি বদ্ধ করে নেয় সে। অধরাকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে ঈশা বলতে লাগলো
— তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি। একবার এই ছেলের মন ভেঙ্গে দিয়ে এখন আবার এসেছিস নাটক করতে? তোর না বিয়ে হয়ে গেছে। একটা অপবিত্র মেয়ে হয়ে বার বার অয়নের কাছে আসতে চাস কেনো?
— ঈশা আমার লাগছে ছেড়ে দাও। আমি তোমাদের বিয়ে আটকাতে আসিনি। আমি একটু অয়নকে দেখতে এসেছি। প্লিজ ছাড়ো আমায়…!
— দেখতে এসেছিস নাকি করতে এসেছিস সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। তোকে তো আজ আমি…!
ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে অধরা গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে হাত উপরে তুলল। অয়ন দুম করে এসে ঈশার হাত ধরে ফেলল। ঈশার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ঈশাকে নিজের দিকে মুখোমুখি করে অয়ন সজোরে ঈশার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ঈশার গালে থাপ্পড় পড়তেই সকলে চমকে উঠলো। অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে বলল
— নির্লজ্জ অধরা নয় বরং তুমি নিজে। বার বার বলার পরেও তুমি অধারার জায়গাটা দখল করতে চলে আসো। আমি অধরাকে ভালোবাসি। আর ওকে নিয়ে সারা জীবন থাকতে চাই। তোমায় নিয়ে নয়। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
ঈশা কথাটা শুনতেই অয়নের দিকে দৌড়ে এসে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো
— ভালোবাসি বলে বার বার তোমার কাছে ছুটে এসেছি অয়ন। বুঝলে না আমার মনটা। এই প্রতারক রাস্তার মেয়েটা এক বার তোমায় ঠকিয়েছে। এখন আবার এসেছে তোমায় ঠকাতে। ওর ছলনায় ভুলে গিয়ে আবার ও তুমি প্রতারিত হবে। কথাটা মিলিয়ে নিও মিস্টার অয়ন চৌধুরী।
— প্রতারনা করেনি অধরা। আমার থেকে বেশি ওর পরিবারকে গুরুত্ব দিয়েছে। যার ফলাফল ও নিজের চোখের দেখেছে। অধারার একটা বিয়ে নয়। হাজারটা বিয়ে হয়ে গেলেও আমি ওকে ভালোবাসি আর তাকেই আমার চাই।
ঈশা কান্না করতে করতে অয়নের সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। অয়ন অধরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরা কান্না করছে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে। ভুল সিদ্ধান্ত মানুষের দ্বারা হয়। কারন মানুষ ভুল করে। তবে একবার। যদি মানুষ ভুল না করতো তবে সে আর মানুষ থাকতো না। অধরা ও ভুল করেছে। তার পরিনামে যথেষ্ট অবহেলা, অপমান সহ্য করেছে সে। একটা মানুষের উপর প্রতিশোধ তখনি নেয়া যায় যখন তাকে ঘৃণা করা হয়। ভালোবাসায় ঘৃণার ঠাঁই নেই। ভালোবাসা ক্ষমা করে শিখায়। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে আসলো কিছুটা। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে নিজের মাথাটা অয়নের বুকের সাথে চেপে ধরলো। অয়ন আলতো করে অধরাকে জড়িয়ে ধরতেই অধরা কান্না করে অয়নের পাঞ্জাবী ভিজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। প্রিয়জনকে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে কতটা কষ্ট বুকে এসে আঘাত করে সেটা আজ অধরা ভালোই বুঝতে পারছে। অয়ন অধরার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তবে অধরা থামছে না। অয়ন অধরার কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিয়ে বলতে লাগলো
— এই পাগলি ভালোবাসি তো আর কান্না করে না।
— সারা জীবন আপনার পাশে থাকতে দিবেন তো স্যার?
— উহু আমি আপনার পাশে থাকবো ম্যাম। তাও সব সময় একদম মৃত্যুর আগ উবদি।
* অয়ন অধরাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বাহু ডোরে। অধরার ভুলের মাশুল অবশেষে শেষ হলো। অনেক কষ্ট গিয়েছে মেয়েটার উপর দিয়ে। নিজের জায়গা থেকে বোঝার চেষ্টা করলে হয়তো বুঝতে পারবেন। “ভালোবাসা” এটা একটা নিছক শব্দ নয়। এটা এক অনুভূতির নাম। যেটা কখনও অস্বীকার করা যায় না। ভালোবাসায় হাজারটা বাধা আসবে। প্রিয়জনকে আপন করে পাওয়াটা কি এতো সহজ নাকি? আপনাকে ধৈর্য্য ধারন করতে হবে। প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন পরিবার আপনাকে সুখী দেখতে চায়। ভালোবাসার মানুষটি যদি হয় বিশ্বাস যোগ্য। তবে আপনি সুখী। সো পরিবারের জন্য প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলা নিছক বোকামি মাত্র। অয়ন অধরার জন্য দোয়া করবেন। তারা যেনো সব সময় ভালো থাকতে পারে।
————————— সমাপ্ত———————
[গল্পটা শুরু থেকে এই শেষ পর্ব উবদি যারা সাথে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সাপোর্ট সব সময় আমাদেরকে ভালো কিছু লিখতে উৎসাহিত করে। যদিও দুই একটা বিতর্কিত মন্তব্যের দেখা পেয়েছি। তবে সেটা আপনাদের ভালো ফিডব্যাকের কাছে অতি নগন্য। আবার হয়তো দেখা হয়ে যাবে নতুন কোনো গল্প নিয়ে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন। আর হ্যাঁ প্রিয়জনের পাশেই থাকুন। ঈদ মোবারক 🥰 ধন্যবাদ 😊♥️♥️]