#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অধরা অয়নকে অবাক করে দিয়ে বলল
— একটা সত্যি কথা বলবে তুমি! আমার কসম করে বলো তুমি কি এখনও আমায় ভালোবাসো?
অধরার কথাটা শুনে অয়ন খানেকটা চমকে যায়। কারন অয়নের কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। অয়ন অবাক হয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হঠাৎ করে এই সব কথা বলার কারন কি?
— কারন আছে বলেই প্রশ্ন করা হয়েছে। দয়া করে সত্যি করে বলো প্লিজ!
— আমার কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
— কেনো নেই? এমন কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়নি যার কোনো উত্তর হয় না। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর হয় অয়ন। প্লিজ! আমার প্রশ্নেথ উত্তর দাও।
অধরা খানেকটা ঝাড়ি মেরে কথাটা বলল। অধরা জানতে চায় সত্যিটা। যদিও অয়নের চোখ এক বার নয় বার বার এটাই বলে আজ ও অধরাকে সে ভালোবাসে। তবে চোখের কথা নয়। আজ অধরা অয়নের মনের কথাটা ও শুনতে চায়। অধরার কথাটা শেষ হতেই অয়ন নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিজের চোখ জোড়া ঢেকে নিয়ে তাচলছিল্যকর হাসতে লাগলো। অয়ন এমন ভাবে হাসছে মে মনে হচ্ছে অধরা হয়তো কোনো জোকস বলে ফেলেছে ভুল করে। অয়নের এমন হাসির কারন অধরার কাছে অজানা। অধরা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের হাসি থামিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ভালোবাসা কাকে বলে জানো তুমি? এক সাথে সংসার করলে, বিয়ে করলে, বাচ্চা হয়ে গেলে, এটাই ভালোবাসা? আরে ভালোবাসা হলো একটি অনুভূতি। যেটা বুকের বাম পাশে থাকে। আজ সেই অনুভূতি তোমার উপর আছে। আগামীকাল অন্য কারোর উপর চলে যাবে! এটা ভালোবাসা নয়। তোমার থেকেই শিখেছি কি করে ভালোবাসার নামে অভিনয় করতে হয়। তবে সেই অভিনয় এর প্রয়োগ করতে জানি না আমি। এটাই আমার ব্যর্থতা। মনে আছে সেই দিনটার কথা? যেই দিন আমি কান্না করে বলেছিলাম অধরা প্লিজ ফিরিয়ে দিও না আমায়! একটু অপেক্ষা করো। সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে আছে কি?
— হুম আছে মনে।
— ঐ দিন আরো বলেছিলাম একটিবার বুকে হাত রেখে বলো আমায় তুমি ভালোবাসো কি না? উত্তরে বলেছিলে ভালোবাসলেই কি হবে আর না বাসলেই কি হবে? সেই দিন আমার বোঝা হয়ে গেছে ভালোবাসার আসল মানে তোমার কাছে কি? আজ উত্তর চাই তোমার? বলে দিচ্ছি উত্তর, ভালোবাসি তোমায়। আজ ও ভালোবাসি। তোমার মতো অভিনয় জানি না আমি।
— হুম। ভালোবাসো কেনো এখনো? এমন একটা প্রতারক মেয়েকে ভালোবাসা কি আদৌ যায়? ঘৃণা করতে পারো না?
— ঘৃণা করার অনেক চেষ্টা করেছি। তবে সম্ভব হয় না। যতবার ভেবেছি তোমায় ঘৃণা করবো। ঠিক ততবার আরো বেশি করে তোমার কথা মনে করে কেঁদেছি।
— একটা কথা বলবো?
— অনেক কথাই তো বলছো। কখনও তো বারন করিনি আমি। আজ ও করবো না। বলো কি বলতে চাও।
— আমার জন্য তোমার মনের মধ্যে যেই ভালোবাসাটা আছে। সেই ভালোবাসার কসম ঈশাকে তুমি বিয়ে করে নাও। প্লিজ!
অধরার কথাটা শুনে অয়ন চমকালো না। কারন অয়ন জানতো অধরা এমন কিছুই একটা বলবে। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরাকে বলল
— আমি তোমার মতো জেনে শুনে কারোর জীবন নষ্ট করতে চাই না সরি। এখন আমার কাজ আছে আমায় আমার কাজ করতে দাও।
— অয়ন শোনো প্লিজ! তুমি জানো না ঈশা অনেক ভালো মেয়ে। ওর সাথে তুমি অনেক সুখি থাকবে। বিলিভ মি!
— সুখে তো তোমার সাথেও থাকতে চেয়েছিলাম। দিয়েছিলে থাকতে সুখে? আর কারোর থেকে সুখের প্রত্যাশা আমি করি না। আর বাকি থাকলো বিলিভ! কোনো এক সময় করতাম এখন আর করি না।
অয়ন কথাটা বলতেই নিজের কেবিনে থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অয়নকে আটকাতে গিয়েও পারলো না। নিজের প্রিয়জন যখন পুরনো সেই অতীতের কথা গুলো বলে আঘাত করে বুকে। তখন কতটা কষ্ট হয়! তা হয়তো তাকে বোঝানো সম্ভব নয়। অধরার সোফার উপর বসে পড়লো। ইচ্ছে করছে তার চিৎকার করে কান্না করতে। নিজের একটা ভুলের কারনে আজ অয়নের চোখে সহ পুরো দুনিয়ার চোখে সে অতি নগন্য একটা জীব হয়ে বেঁচে আছে। মৃত্যুটাও যেনো আজ অধরাকে স্পর্শ করতে ভয় পায়। কারন অধরা মনে প্রানে মৃত্যুর প্রত্যাশা করলেও সেটা তার কাছে ধরা দিতে চাইছে না।
* কিছু সময় বাহির থেকে ঘুরে অয়ন পুনরায় নিজের কেবিনে ফিরে এলো। কেবিন আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অধরা নিজের জায়গায় বসে আছে। হয়তো কোনো কাজ করছে সে। অধরার চোখ জোড়ার দিকে তাকাতেই অয়ন বুঝতে পেরে যায় যে অধরার চোখ জোড়া রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। আজ কাল প্রচুর কান্না করে মেয়েটা। যদিও এটাই অধরার নিয়তি। তবে আফসোস তো হয় অয়নের। অয়ন অধরার দিকে থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে নিজের কাজ শুরু করলো। কিছু সময় ফাইল চেক করার পর অয়নের কেবিনের মধ্যে দুম করে চলে আসে ঈশা। ঈশা এসে অয়নের সামনে বসে পড়লো। অয়ন ফাইলের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ঈশার দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ঈশা হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সরি পারমিশন নিলাম না দুম করেই চলে আসলাম। রাগ করেননি তো?
— পারমিশন নেয়ার প্রয়োজন ছিলো। তবে এই ছোট্ট কারনে আমি রাগ করিনি। কি প্রয়োজনে এসেছেন সেটা বলুন।
অয়নের কথাটা শেষ হতেই ঈশা আশেপাশে তাকিয়ে অধরাকে দেখতে পেয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হ্যালো ম্যাম। স্যারের সাথে আমার একটু পার্সোনাল কথা আছে। আপনি দয়া করে একটু বাহিরে যাবেন?
ঈশার কথাটা শুনে অধরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আচমকা অধরাকে ঈশা এমন কথা বলবে হয়তো অধরা আশা করেনি। অধরা এক বার অয়নের দিকে আবার একবার ঈশার দিকে তাকালো। অতঃপর ঠোঁটের কোনে মিছক হাসির রেখা টেনে অধরা নিজের জায়গা থেকে উঠে দাড়াতেই অয়ন বেশ শক্ত গলায় বলে উঠল
— ওয়েট। তুমি কেনো নিজের জায়গা থেকে উঠে দাড়ালে? আমি বলেছি তোমায় বাহিরে যেতে? যেখানে বসে আছো ওখানেই বসো। আর মিস ঈশা আপনার সাথে পার্সোনাল কোনো কথা যদিও আমার জানা মতে থাকতে পারে না। আর অফিসিয়াল কথা সকলের সামনে বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বলুন কি কথা আপনার?
— আহা আপনি বুঝতে পারছেন না একটা বাহিরের মেয়ের সামনে আমি আর আপনি এই বিষয়ে কথা বলতে পারি না। বুঝুন ব্যাপারটা..!
ঈশার কথা শেষ হতেই অয়ন বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
— বাহিরের মেয়ে! ওহ হ্যালো মিস আপনি কাকে বাহিরের মেয়ে বলছেন? মাথা ঠিক আছে তো আপনার? অধরা বাহিরের মেয়ে নয়। আর যদি বাহিরের মেয়ের কথা বলি তবে তো সেটা আপনি। অধরা নয়।
— স্যার, আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার মাথা হয়তো ঠিক নেই। একটা বাহিরের লোকের সামনে আপনি আমায় অপমান করছেন।
— ওপস তাই! বার বার বাহিরের মেয়ে বলে যেই মেয়েটাকে আপনি অপমান করছেন তার কথা কি ভেবে দেখছেন? অন্যকে কিছু বলার আগে নিজের দিকটা একটিবার ভেবে দেখা উচিত।
— তাই নাকি? আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে স্যার। উনি কোন অধিকারে আপনার বাড়ি আছে সেটা আমি জানি না। আর না জানতে চাই। তবে আমার মনে হচ্ছে আমার থেকেও ওনার গুরুত্ব আপনার কাছে অধিক। তাই তো আপনি…!
— ওয়েট অধরা কোন অধিকারে আমার বাড়ি আছে সেটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার। আর আপনার সাথে বিয়ের কথা চলছে! এটা আমার ফ্যামেলি ম্যাটার। আমার মত নেই।
— থাকবে কি করে? বিয়ে করা ছাড়াই যখন কোনো মেয়েকে নিজের বিছানায় পাওয়ার যায়। তখন আর বিয়ে করার ইচ্ছা কেনো জাগবে?
ঈশার কথাটা শুনতেই অয়নের মাথায় আগুন লেগে গেলো। মুহুর্তের মধ্যেই অয়নের চোখ মুখ রক্ত বর্ণ ধারন করলো। অধরাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে অয়ন সহ্য করতে পারে না। খুন চেপে যায় তার মাথায়। অয়ন দুম করেই সজোরে ঈশার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়টা বেশ জোরে পড়ে যাওয়ার পুরো কেবিনটা যেনো কেঁপে উঠল। অধরা অয়নের দিকে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে। ঈশা গালে হাত দিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে তার। অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ছিঃ ভাবতেই অবাক লাগছে আপনিও একটা নারী। একটা মেয়ে কি পরিস্থিতিতে পড়ে আমার বাড়ি আছে সেটা বোঝার মতো মানুষিকতা আপনার নেই। গেট আউট। এখনি আর এই মুহূর্তে আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবেন। অন্যথার আমি কি করে বসবো তা আমিও জানি না। গো আউট
* অয়ন কথাটা চিৎকার করে বলল। ঈশা আর বসে থাকতে পারলো না। নিশ্চুপ হয়ে দৌড়ে অয়নের কেবিনে থেকে বেরিয়ে যায় সে। ঈশা চলে যেতেই অয়ন নিজের জায়গায় বসে পড়লো। রেগে গেলে অয়নের মাথা ঠিক মতো কাজ করে না। অয়ন নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে এতোক্ষণ নিশ্চুপ ছিলো। তবে এখন আর সে নিরব থাকতে পারলো না। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যার আপনি ওকে থাপ্পড় দিলেন কেনো? ওতো ভুল কিছু বলেনি। একটা অবিবাহিত পুরুষের রুমে একটা মেয়ে কোনো সম্পর্ক ছাড়া কি কারনে থাকে? ওকে না হয় চুপ করালেন তবে সমাজকে কি বলবেন?
— শার্ট আপ অধরা। আমার মাথা গরম আছে। একটাও কথা তুমি বলবে না। চুপ থাকো একটু।
— সকলকে ঝাড়ি দিয়ে চুপ করানো যায় না স্যার। আমি শুধু আপনার কাছে নয় সকলের কাছেই রক্ষিতা হয়ে গেছি। বিশ্বাস করুন স্যার আমার অপরাধের সাজা এতোটা ভয়াবহ হবে আমার জানা ছিলো না। ইচ্ছে করে এখন মরে যেতে। আত্নসম্মানকে বিসর্জন দিয়েছি অনেক আগেই। তবে এখন আর পারছি না নিতে। হাঁপিয়ে উঠেছি ভিশন।
— তোমায় আমি চুপ করতে বলেছি অধরা। প্লিজ! চুপ হয়ে যাও।
— উহু আজ আমি আর চুপ থাকবো না। আপনাকে আজ থেকে আমায় মুক্তি দিতে হবে। আর যদি আপনি আমায় মুক্তি না দেন তবে আমি নিজেই মুক্তি নিয়ে নিবো।
— মানে? তুমি নিজেই মুক্তি নিবে মানে কি?
— মানেটা না বোঝার মতো অবুঝ আপনি নন। আমায় মুক্তি দিয়ে দিন প্লিজ!
অধরার করুন কন্ঠে বলা কথাটা শুনে অয়ন একটা রহস্যজনক হাসির রেখা ঠোঁটের কোনো একে বলতে লাগলো
— মুক্তি তো বললেই দেয়া যায় না। তোমায় আরো অনেক কষ্ট দেয়ার বাকি আছে আমার। সেই সব দিয়ে নেই। তারপর মুক্তি পাবে।
— তার মানে আপনি এটাই চাইছেন আমি নিজেই কিছু করে ফেলি!
— চেষ্টা করে দেখতে পারো অধরা। সফল হলে তুমি বিজয়ী। অয়ন চৌধুরী কখনও হেরে যেতে শিখেনি।
* সারাদিন অফিস করে রাতে অধরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো অয়ন। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো দুজন। অয়নের মনে ঈশাকে নিয়ে যদিও কোনো ফিলিংস নেই। তবে ঈশার বলা কথা গুলো যেনো অয়নের কানে বেজে চলেছে। অয়ন সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। মাঝ রাতে হঠাৎ করেই অয়নের আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন নিজের চোখের পাতা মেলে বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে যায়। এক মিনিটের জন্য যেনো অয়নের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেকে যেনো আর স্থির রাখা সম্ভব হচ্ছে না তার। অয়নের মনের মধ্যে অজানা ভয়ের উদয় হলো। অয়ন বিছানার দিকে তাকাতেই দেখতে পায়……………………
#চলবে………………