আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ২

0
1212

আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* অধরা চোখ মেলতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। অধরা দেখতে পায় অয়ন তার ভিশন কাছাকাছি চলে এসেছে। অয়নের নিঃশ্বাসের শব্দ অধরার কানের উপর এসে পড়ছে। অধরা আনমনে অয়নের ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে অয়নকে! একদম নিঃপাপ শিশুর ন্যায় নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে অয়ন। অয়নকে এতোটা কাছ থেকে দেখেছে অধরা তাও প্রায় অনেক বছর হলো। আজ অয়নকে নিজের খুব কাছে পেয়েও তাকে স্পর্শ করার অধিকার টুকু নেই। বাধা পরে আছে অধরা কিছু বাধা নিয়মে। অধরা অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। জানালার পর্দার আড়াল থেকে সূর্যের প্রথম কিরণ এসে সরাসরি পড়ছে অয়নের মুখের উপর। সিল্কি লম্বা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ে এসে পড়েছে অয়নের মুখের উপর। গোলাপি রঙের ঠোঁট জোড়া একদম শুকনো হয়ে আছে তার। অধরা নিজের দৃষ্টি যেনো অয়নের দিক থেকে ফেরাতে পারছে না। আপন মনে ইচ্ছে করছে অয়নের গালের উপর নিজের হাত রেখে আলতো করে অয়নের ঠোঁটকে স্পর্শ করতে। অধরা অয়নকে নিয়ে কাটানো কিছু অতীতের মধুময় স্মৃতির কথা কল্পনা করতেই কিছু একটা ভেবে অয়নের পাশ থেকে উঠে পড়লো সে। বিছানার থেকে নেমে অধরা জানালার পর্দাটা টেনে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে অধরা সোজা চলে যায় অয়নের জন্য নাস্তা তৈরি করতে। রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াতেই অয়নের আম্মু ভিশন কর্কশ কন্ঠে পেছন থেকে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি? তোমাকে না বারণ করেছি রান্না ঘরে যেতে না। কথা কি কানে যায় না তোমার?

অধরা পিছন ফিরে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে অয়নের আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন স্যারের জন্য রান্না করতে যাচ্ছি আন্টি। আর আপনি আমায় বার বার রান্না ঘরে যেতে বারণ করেন কেনো? আমি কি কিছু ভুল করেছি!

— ভুল! তোমার কি কখনও ভুল হতে পারে? তোমায় যে বাবা মা এই দুনিয়াতে নিয়ে এসেছেন। তারা ভুল করেছে। তুমি করোনি। বেরিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। তোমাকে দেখলে আমার মাথাটা গরম হয়ে যায়। অপয়া মেয়ে একটা!

অয়নের আম্মুর বলা কথাটা এসে সজোরে যেনো অধরার কলিজাকে আঘাত করলো। ওনার কথার আঘাতে অধরার কলিজাটা ছিঁড়ে দুভাগ হয়ে যাবার ন্যায়। অধরা নিজের চোখের জলকে আড়াল করে মাথাটা নিচু করে রান্না ঘরের সামনে থেকে চলে আসে অয়নের রুমে। বাড়ির কেউ অধরাকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না। আর পাবেই বা কেমন করে? অয়নের পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ অয়নকে বদলে যেতে নিজের চোখে দেখেছে। দিনের পর দিন অয়নের কষ্ট গুলো তাদের চোখের সামনে দিয়ে গিয়েছে। অধরা এই বাড়িতে আছে শুধু মাত্র অয়নের জন্য। তা না হলে অধরার এক বাড়িতে এক মিনিট ও থাকতে পারতো না। অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হচ্ছে। অধরা রুমে ঢুকতেই অয়ন আয়নায় অধরাকে দেখতে পেলো। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সকাল সকাল মন খারাপ করে আমার রুমে আসার কি প্রয়োজন ছিলো? দিলে তো মুডটাই নষ্ট করে!

অয়নের কথার বিপরীতে অধরা কোনো উত্তর দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে। অয়ন অধরাকে নিশ্চুপ দেখে আবার ও বলতে লাগলো

— কি হলো কথা বলছো না কেনো?

— কি কথা বলবো? এই বাড়ির প্রত্যেকটা লোক আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে। কথায় কথায় তারা আমায় কষ্ট দেয়। এই সব সহ্য হচ্ছে না আমার।‌

— হাহাহাহা তাই নাকি! তুমি কি ভেবেছো আমার রক্ষিতা করে তোমায় এই বাড়িতে এমনি এমনি নিয়ে এসেছি? তোমার মতো একটা প্রতারক মেয়ের সাথে যতটাই বাজে ব্যবহার করা হোক না কেন। তা বড্ড কম হয়ে যায়।‌

— ওহহ হুম তাই তো! রক্ষিতা মেয়ের তো মন থাকতে নেই। তাদের কষ্ট পেতে হয় না। শুধু মাত্র মানুষকে খুশি করাই তাদের কাজ।

— একদম ঠিক বলেছো‌। এটাই তোমার কাজ।

অয়ন কথাটা বলতেই হনহন করে অধরার সামনে দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই অধরা আবার ও পেছন থেকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বলল

— স্যার আজ আমার টাকা লাগবে। আমার স্বামীর হসপিটাল বিল দিতে হবে আজ।

— ওহহ ওকে আমার অফিসে চলে‌ এসো। চেক সাইন করে রাখবো।

— ঘটা করে এখন অফিসেও নিয়ে যাবেন! রক্ষিতা মেয়েদের কি অফিসে গিয়েও সেবা করতে হয় নাকি?

— শার্ট আপ। এই সব ফালতু কথা বলে আমার মাথা গরম করবে না। যেটা বলা হয়েছে তাই করবে।

* অয়ন কথাটা শেষ করতেই বেরিয়ে যায়। অধরা অয়নের চলে যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আজকের এই দিনে গুলোতে জন্য অধরা নিজেই দায়ী। বিকেলের একটু আগে অধরা অয়নের অফিসে চলে যায়। অয়ন অফিসে ছিলো না। তবে ম্যনেজারের কাছে চেক সাইন করে দিয়ে গেছে অয়ন। অধরা চেক নিয়ে ব্যাংকে চলে যায় আর টাকা নিয়ে সোজা হাসপাতালে। হাসপাতালে এসে রিসিপসনে টাকা জমা করে দিয়ে অধরা রোহান এর কেবিনে চলে আসে। রোহানের জন্য কিছু ফল নিয়ে অধরা কেবিনে আসতেই দেখতে পায় রোহান বিছানায় শুয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। অধরা রোহানের পাশে বসে রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল

— রোহান কেমন আছো তুমি? শরীরটা এখন কেমন?

অধরার কথার বিপরীতে রোহান বাকা হাসি দিয়ে বলল

— আছি তো ভালোই। তোমার কি অবস্থা?

— আমি আর কি করে ভালো থাকি বলো? তুমি অসুস্থ। যেদিন সুস্থ হয়ে যাবে সেই দিন আমি ভালো থাকবো।

— তাই নাকি? তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে তো এখন অবাধে মেলামেশা করতে পারো। তবে কেনো‌ ভালো নেই তুমি!

রোহানের কথাটা শুনে অধরা মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়লো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে অধরার। রোহানের জন্য আজ অধরা নিজের প্রাক্তন প্রেমিকের বাড়িতে রক্ষিতার উপাধি নিয়ে আছে। তা তো নিজের প্রয়োজনে নয়। বরং এই হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা রোহানের জন্য। আর আজ কি না সেই রোহান অধরার উপর আঙ্গুল তুলছে! অধরা রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল

— রোহান আমি তোমার জন্য এতো কিছু করছি আর সেই তুমি কিনা আজ আমায় এই কথাটা বলতে পারলে! তোমার হাসপাতালের বিলের টাকা পরিশোধ করে তোমার চিকিৎসা চালানোর জন্য আমি অন্যের বাড়িতে স্ত্রীর মতো পরে আছি। আর তুমি কি না!

— চুপ করো একদম। আমি কখনও বলেছি তোমায় আমার জন্য দেহ ব্যবসা করে টাকা দিয়ে এসো? আমি বেঁচে থাকলে থাকলাম আর মরে গেলে গেলাম। তোমায় কেনো নিজের শরীরকে বিলিয়ে দিয়ে টাকা আনতে হলো? উত্তর আছে কোনো?

রোহানের কথা শুনে অধরা ভিশন অবাক হয়ে যায়। রোহান তবে এতোদিন তাকে নিয়ে এই সব ভেবে এসেছে। আজ পর্যন্ত তো অয়ন তাকে স্পর্শ করেও দেখেনি। নাম মাত্র রক্ষিতা করে রেখেছে। এর থেকে বেশি কিছু নয়। অধরা রোহানকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না‌। বাক শক্তি আজ মনে হচ্ছে তার হারিয়ে গেছে। রোহান অধরাকে নিরব দেখে তাচলছিল্যকর একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— আমার জন্য ফল নিয়ে এসেছো! এটাকি গতকাল রাতে তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডেকে খুশি করে পেয়েছো? এই পাপের খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না‌। দয়া করে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। এই পাপি মুখটা আমায় আর দেখাবে না। প্লিজ!

অধরা কি বলবে আর কি করবে কিছুই ভেবে পেলো না। মানতেই কষ্ট হচ্ছে এই তার স্বামী যার জন্য নিজের আত্নসম্মানকে বিসর্জন দিয়ে রক্ষিতা হয়ে আছে সে। আজ সেই স্বামী তাকে অবিশ্বাস করে এতো গুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছে। অধরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর রোহান এর কথা গুলো ভাবছে। চোখ থেকে অনবরত নোনা জলের বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। কিছু দূর পথ চলার পর হঠাৎ করে অধরাকে………………….

#চলবে……………………

[একজন নারী একটা পুরুষের জন্য যতটাই ত্যাগ স্বীকার করুক না কেনো। দিন শেষে সকল অভিযোগ এর স্বীকার একজন নারীই হয়। এটা সত্যি। কমেন্টে নেক্সট লিখার প্রয়োজন নেই। কারন পরবর্তী পর্ব আসবে। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। বেশি বেশি রিয়েক্ট করুন। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here