আরোহী পর্ব ১৭

0
270

#আরোহী
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)

[১৭].

❝ যদি কখনো খুব করে মনে পরে আমার কথা তখম খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দুই হাত মেলে স্বরণ কোরো আমাকে। বাতাসের সাথে মিশে ছুঁয়ে দেবো তোমাকে। যখন তুমি বিষন্নতায় ডুবে যাবে তখন চোখ বন্ধ করে আপন মনে ডেকো আমায় ভালোবাসার স্নিগ্ধ পরশ এ্যঁকে দিবো তোমার কপালখানায়। কখনো একাকিত্ব অনুভব হলে দিঘীর জলে পা ভিজিয়ে বসো পানি হয়ে একাকিত্ব দূর করে দিবো। সর্বপরী মনে রেখো ছিলাম আছি আর থাকবো। তোমাকে কখনো একা করবো না। কখনো আমার শূন্যতা অনুভব হলে চলে যেও আমার ঠিকানায়, যেথায় শুঁইয়ে রেখে গেছে সকলে আমায়। হয়তো সেখানে আমার দেহটা আর নেই। সময়ের সাথে সাথে মাটির সাথে পঁচে গেছে কিন্তু আমার আত্মা টা আজও রয়েছে। যা শান্তি পায়নি তাই হয়তো ছুটে আসি তোমার টানে তোমার কাছে। ভালোবাসি প্রথম দিন থেকে ভালোবাসি! ❞

“ আরাফফফফ ” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসল আরোহী। দুই হাতে বিছানার চাদর খাবলে ধরে আছে। রুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছে সে এতক্ষণ। মাঝেমধ্যেই আরাফ তার স্বপ্নে আসে দু’জনে বসে অনেক গল্প করে। ঘুম ভাঙার পর আরাফকে কোথাও দেখতে পায়না কিন্তু প্রতিবারের মতো চোখের কোণে অশ্রু কণা গড়িয়ে পরে। বোঝে সে ঘুমের ঘোরে কান্না করেছে। প্রতিবার গালে ল্যাপ্টে থাকা জল মুছে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এবারও তার ব্যতিক্রম অন্য কিছু ঘটেনি। আজও দেখেছে আরাফকে কিন্তু অন্য ভাবে। সত্যিই কি আরাফ তাকে স্বপ্নে ভালোবাসি বলেছে নাকি সবটাই তার ভুল?

ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। আরোহী বেঁচে আছে এ খবর শুধু মাত্র নিভ ও আব্রাহিম জানেন। এবং আব্রাহিম আরোহী কে বাঁচানোর জন্য সবার থেকে খবর লুকিয়ে রেখেছে এবং আরোহীকে বাঁচার জন্য নতুন চেহারার সাথে নতুন নাম দিয়েছেন।
____________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার পর পর চা না খেলে জেনো দিন টাই মাটি। চায়ের সাথে খবরের কাগজ পড়ার খুব বাজে স্বভাব। লুঙ্গি কিছুটা উপরে তুলে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। উচ্চ স্বরে ডেকে বললেন, ‘ নূরি আমার চা আর খবরের কাগজটা দিয়ে যা। ‘

হল রুমে এসে পায়ের উপর পা তুলে বসার কিয়ৎক্ষণ পর এক জোড়া হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিলো এক হাতে এক রং কাপ চা ও অন্য হাতে খবরের কাগজ। হাত দু’টোর দিকে তাকিয়ে তিনি মেয়েটার মুখের দিকে তাকালেন। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন, ‘ সাব্রিনা মা তুমি কেনো চা আনতে গেলে? নূরি কোথায়? নিশ্চয়ই কাজে ফাঁকি দিয়ে চুরি করে কিছু খাচ্ছে। মেয়েটাকে নিয়ে কি যে করি? ‘

‘ সমস্যা কি? বাড়িতে তো তুমি আমার আর নূরি ছাড়া আর কেউ নেই। নূরিই একজন আছে যে আমাদের সকল দিক সামলে নেয়। বাড়ির কাজকর্ম তো সেই করে। সে সুবাদে একটুআধটু খেলে কি এমন হবে? তাছাড়া সে চুরি করে খায়না কিছুই আমিই তাকে বলেছি যা ইচ্ছে হবে খাওয়ার জন্য বুঝেছো। ‘

‘ তোর আহ্লাদেই সে এত বার বেড়েছে। ‘

বলেই তিনি আবারও কাগজ পড়ায় মন দিলেন। নিউজ পড়তে পড়তে একটা নিউজে এসে তার চোখ আঁটকা পরলো। তিনি অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ সাব্রিনা খবর টা দেখ। ‘

সাব্রিনা খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে খবরটায় চোখ বুলালো। পরক্ষণেই লাফিয়ে উল্লাসিত কন্ঠে বলল, ‘ আমি যাবো ইন্টারভিউ দিতে। ‘

‘ কিন্তু? ‘

‘ প্লিজ প্লিজ রাজি হয়ে যাও প্লিজ। তুমি তো জানোই সে আমার আইডল আর তার সাথে কাজ করা হচ্ছে আমার ড্রিম। আর এবার সেই ড্রিম পূরণ করার একটা সুযোগ এসেছে প্লিজ তুমি না কোরো না। ‘

মেয়ের এত বায়না শুনে তিনি আর না করতে পারেননি তিনি রাজি হয়ে যান।

দশটার মধ্যে আরোহী ইন্ডাস্ট্রিতে পৌঁছাতে হবে সাব্রিনার ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য সকালে নাস্তা খেয়েই ছুটে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। বাসস্ট্যান্ডে এসে প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোনো বাসে উঠতে পারছে না। কিছু বাসে সিট নেই তো কিছু বাসে মানুষের ঠেলাঠেলির জন্য উঠতেই পারছে না। মনমরা হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।

কালো রঙের একটা মাইক্রো এসে সাব্রিনার সামনে দাঁড়ালো। সাব্রিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের মডার্ন মেয়ে সে বর্তমানে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে আছে। দেখতে চেহারা সুন্দর ও গায়ের রং সাদা। তাকে প্রথম দেখেই যে কেউ প্রেমে পরে যাবে। হাতে সোনালী রঙের ঘড়িতে বারবার সময় দেখে চলেছে সে। হঠাৎ সামনে এসে গাড়ি থামায় ভরকে উঠে সাব্রিনা। ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক কষলে ফ্রন্ট সিটে বসে থাকা লোক কাচ নামিয়ে মাথা কিছুটা বের করে সাব্রিনার উদ্দেশ্য বলল, ‘ কোথায় যাচ্ছেন? ‘

সাব্রিনা তেজি কন্ঠে বলল, ‘ দেখে গাড়ি ব্রেক করতে পারেন না। নাকি গাড়ি ব্রেক করার জায়গার অভাব পরেছে? দেখে দেখে আমার সামনে এসে ব্রেক করলেন আর একটু হলেই তো আমার পায়ের উপর তুলে দিতেন। ‘

লোকটা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলল, ‘ পায়ের উপর তো আর তুলে দেইনি। এখন বলো কোথায় যাচ্ছো? ‘

সাব্রিনা রাগী গলায় বলল, ‘ আরোহী ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টারভিউ দিতে কেনো আপনার কোনো সমস্যা? ‘

লোকটা মেকি হেসে বলল, ‘ নো! কোনো সমস্যা নেই চলো তোমাকে আমি ড্রপ করে দেই। ‘

সাব্রিনা গাড়ির দরজায় লাত্থি দিয়ে বলল, ‘ কোন দুঃখে আমি আপনার সাথে যাবো? কাইল্লা কু’ত্তায় কামড়াই নাই আমারে যার জন্য আপনার সাথে যেতে হবে আমাকে। যাবো না আমি যান এখান থেকে। ‘

গাড়ির পেছনের সিটে বসে রয়েছে রিয়াজ। শাহাদাত আঙুল মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দাঁত দ্বারা আলতো চাপ দিয়ে মুচকি হাসছে। মেয়ে টাকে তার বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।

রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়াজ নিজেই মহিতকে বলেছে ড্রাইভার কে গাড়ি ব্রেক কষতে বলতে। আর মেয়েটাকে গাড়িতে উঠে বসার কথা। কিন্তু মেয়েটা সে তো তেজ দেখিয়ে হাঁটা শুরু করল। মহিত সরু চোখে পেছনে তাকালো। রিয়াজ সশব্দে হেসে উঠল আর বলল, ‘ কোনো ব্যাপার না ইন্টারভিউতে এই মেয়েি সিলেক্ট হবে। সে তো সেখানেই যাচ্ছে, চলো অফিসের দিকে যাওয়া যাক। ‘
.
.
.
হাসতে হাসতে সোফা থেকে ফ্লোরে পরে যায় সাব্রিনা। তার এ হাসি দেখে সামনে বসে থাকা দুজন ব্যক্তি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোনো মতে হাসি দমিয়ে সাব্রিনা বলল, ‘ আরে তোমরা বিশ্বাসই করবে না ইন্টারভিউ তে যে কেউ এত সহজ সহজ প্রশ্ন করে তা আমি এই ইন্টারভিউ না দিলে জানতেই পারতাম না। তোমরা বিশ্বাস করবে না এত সহজ সহজ প্রশ্ন শুনে আমার তখন যা হাসি পাচ্ছিলো খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছি।

সাব্রিনার কথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে যায়। কেননা কোনো বড় কোম্পানির CEO এর সেক্রেটারি নিয়োগ এর জন্য ইন্টারভিউ রাখা হলে তা অনেক কড়া হয়। আর সেটা সাব্রিনার জন্য অনেক সহজ ছিলো। মনে খুদখুদ করছে উনার।
তবুও মেয়ের খুশির নিচে দামাচাপা পরে যায়।
………..
এক সপ্তাহ পর~

অবাক করা বিষয় হচ্ছে অফিসে সাব্রিনা কে সবাই অফিসের মালিকের মতো ট্রেট করছে। এক সপ্তাহ ধরে সাব্রিনা সেটাই লক্ষ্য করেছে। জয়েন্ট করার পরেরদিন অফিসে এসে সাব্রিনা ধাক্কা খায় মহিতের সাথে। মহিতকে অফিসে দেখে চমকে যায় সাব্রিনা। তখন মহিত তাকে গত কালের ঘটনা বলে। সাব্রিনা গাড়িতে তারই বস রিয়াজ ছিলো শুনে ধ্রুত মহিতের কাছে ক্ষমা চায়। এবং রিয়াজের কাছ থেকেও ক্ষমা চায়।

সাব্রিনা যখনই রিয়াজের দিকে তাকাচ্ছে তখনই দু’জনের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। সাব্রিনার মনে হচ্ছে সে, রিয়াজের সামনে থাকলে রিয়াজ শুধু তাকেই দেখে চলেছে। রিয়াজের সাথে চোখাচোখি হলে জোরপূর্বক মুচকি হাসার চেষ্টা করে সাব্রিন।
রিয়াজ দেখতে মাশা আল্লাহ আগেই বলেছি। সে জন্য সাব্রিনা ও তার দিকে মাঝেমধ্যে তাকাচ্ছে। কিন্তু তাকানোর পরপরই লজ্জায় পরে যাচ্ছে।
__________
সাব্রিনা ও রিয়াজ দু’জনে দু’জনের সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছে এতদিনে। রিয়াজ তার কাজকর্মের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সাব্রিনার উপর বিশ্বাস করে তাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে।

দুই দিন পর তাদের মিটিং এর জন্য কোলাপুর যাওয়ার কথা। সাব্রিনা যাবে না বলেছিলো কিন্তু রিয়াজের সেক্রেটারি হওয়ায় তাকে বাধ্যতা মূলক যেতেই হবে। বহু কষ্টে বাড়িতে বলে ও রাজি করায়।

দুইদিন পর,,,,

মেরুন রঙের একটা শাড়ি পরে অফিসে চলে আসে।
তাদের মিটিং শেষ করে আজকের মধ্যেই তারা গাজীপুর ফিরে আসবে। সাব্রিনা রিয়াজের চেম্বারে প্রবেশ করার পরপরই রিয়াজের চোখ জোড়া সাব্রিনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত লক্ষ্য করতে লাগে। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হেসে বলল, ‘ সুন্দর লাগছে তোমাকে! ‘

প্রত্যত্তরে সাব্রিনা ছোট করে বলল, ’ থ্যাঙ্কিউ ‘

তারপর দু’জনে একসাথে বেরিয়ে পরল।

রাস্তায় যাওয়ার পথে হাজারও ফুলে সজ্জিত একটা গার্ডেনে গাড়ি নিতে বলল রিয়াজ। গাড়ি গার্ডেনে এসে থামলো। গাড়ি থেকে রিয়াজ নিচে নামলো ও সাব্রিনা কে নামতে বলল।

সাব্রিনা ভ্রু কুঁচকে গাড়ি থেকে নামলো। আশেপাশে হাজারও রঙের ফুল দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে সাব্রিনা। প্রতিটা ফুল ছুঁয়ে দেখতে লাগে। হঠাৎ পেছন থেকে রিয়াজ সাব্রিনার হাত ধরে নিলো। সাব্রিনা পাশে তাকিয়ে চরম অবাক হলো। রিয়াজ তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে রয়েছে। সাব্রিনা কিছু বলার আগেই রিয়াজ বলল, ‘ কিছু বলো না। এখন আমি বলবো তুমি শুনবে। হয়তো তুমি বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এটাই সত্যি,, আমার ওয়াইফ সুমাইরা বিনতে আরোহী মারা যাওয়ার পর আমি অনেক ভেঙে পরেছিলাম। সে চলে যাওয়ায় আমার সব কিছু তার সাথে চলে যায়। জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম এতদিন। কিন্তু তোমায় প্রথম যেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম সেদিন মনে হয়েছিল। তুমি হ্যাঁ তুমিই পারবে আমার বুকের ক্ষত স্থানে মলম লাগাতে। আমার তোমাকে চাই। তাইতো ইন্টারভিউ’র সকল প্রশ্ন তোমার জন্য সহজ করতে বলি। তোমাকে আমার সেক্রেটারি চয়েস করি। সব সময় তোমাকে আমার কাছাকাছি রাখার জন্য আমি তোমাকে এ কথা কখনো জানাতাম না। কিন্তু আজ তোমাকে দেখার পর আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলাম না। তাই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি সাব্রিনা। তুমি কি আমার একাকিত্বের সঙ্গী হবে? ”

সাব্রিনা এক দৃষ্টিতে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে ছিলো। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। সে জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ হুম হবো,,, তোমার জীবনের সকল একাকিত্ব দূর করে মুক্ত করবো তোমাকে। ভালোবাসি আমিও যে তোমাকে ‘

রিয়াজ তৃপ্তিময় হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
এক হাত দিয়ে সাব্রিনার কোমড় চেপে ধরলো। অন্য হাত সাব্রিনার এক গালের উপর রাখলো। কোমড় ধরে টান মেরে নিজের অতি কাছে নিয়ে আসলে সাব্রিনা কে। সেও কোনো বাঁধা দিলো চোখের পলকে রিয়াজ নিজের ঠোঁট জোড়া সাব্রিনার ঠোঁট জোড়ার সাথে মিশিয়ে দিলো।
সাব্রিনা চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো। দুই হাত দিয়ে রিয়াজ কে ঝাপ্টে ধরলো। রিয়াজ সাব্রিনা কে নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে নিলো!
ভুলক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষে দেখবেন। এত গুলো শব্দ লেখার পর আর রিচেইক দিতে ইচ্ছে করে না।

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here