#আরোহী
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
১৬.
শহর থেকে ফার্ম হাউজে আসতে সকলের বহুত সময় ব্যয় হয়। মালি রিয়াজের নাম্বারে কল দিয়ে তাকেও জানান দেয়। হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে ছুটে বের হয় রিয়াজ। সকলে ফার্ম হাউজে এসে দেখে হাউজ খুব খারাপ ভাবে পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আসার পূর্বেই আগুন নিভে গেছে। হাউজ বেশি বড় নয় সামান্য ছোট তাই জলদি পুড়ে ছাড়ছাড় হয়ে গেছে। মিডিয়ার লোকেরাও এসে পরেছে। সকলে নানা প্রশ্ন করছে পুলিশ ও এসেছে। সবাইকে নানান প্রশ্ন করছে পুলিশ অফিসার।
[ এর পর, যা ঘটেছে গল্পের চার নাম্বার পর্বে দেওয়া আছে,,,, ৪পর্বের পর থেকে শুরু গল্প]
____________
তিন দিন পর হাসপাতালে –
চেম্বারে বসে আছে ডাক্তার আব্রাহিম তিনি একজন পেসেন্ট দেখছেন। প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধ লিখে দিয়েছেন। ঔষধ গুলো টাইমলি খেতে বলেছেন এবং এক সপ্তাহ পর আবার এসে দেখা করতে বলেন। তখনই একজন চেম্বারে প্রবেশ করে পুতুল৷ তাকে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত করে আব্রাহিম। নার্স পুতুল হন্তদন্ত ছুটে এসেছেন বলে হাঁপাচ্ছে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে বলল, ‘ ডাক্তার ওই পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। ‘
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি ছুটে বের হলেন চেম্বার থেকে। কেবিনে পৌঁছে দেখলেন মেয়েটার দুই পাশে দুজন নার্স দু হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছ আর মেয়েটা নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে সর্ব শক্তি দিয়ে। আব্রাহিম ভারী নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসলো। ধীর কন্ঠে বলল, ‘ তোমার মুখের পনেরো দিন আগে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। এমন ভাবে ছোটাছুটি করলে তোমার সমস্যা হতে পারে চুপ করে স্থির হয়ে বসো। আমরা তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমি তোমার, ‘
ডাক্তার আব্রাহিমের কন্ঠ শুনেই মেয়েটা নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। উনার কথা বলা শেষ হয়নি। তার মধ্যেই উনাকে বিস্মিত করে দিয়ে মেয়ে টা বলে উঠল, ‘ আব্রাম আঙ্কেল? ‘
মেয়েটার মুখে আব্রাম আঙ্কেল শুনে বিচলিত হয়ে পরেন আব্রাহিম। চোখের ইশারায় নার্সদের কেবিনের বাহিরে চলে যেতে বলল। সবাই যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করে গেছে। আব্রাহিম শালিন কন্ঠে বলল, ‘ কি বললে তুমি? ‘
মেয়ে টা ভেজা কন্ঠে বলল, ‘ আঙ্কেল আমি! আমাকে চিনতে পারছো না? আমি আরু! ‘
আব্রাহিম কিছু বলার আগেই রুমে প্রবেশ করে ডাক্তার নিভ তিনি আরোহীর জ্ঞান ফিরার খবর এক নার্সের কাছ থেকে পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছে।
নিভকে দেখে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বললেন আব্রাহিম। মেয়েটা যে আরোহী তিনি বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। কিন্তু মন বলছে হ্যাঁ হতেই তো পারে সেদিন আরোহী মরেনি। তিনি শানিতকন্ঠে জানতে চাইলেন, ‘ তুমি আরোহী কিভাবে? আরোহী তো ফার্ম হাউজে…. ”
আরোহী আতআন্দাজি হাতিয়ে আব্রাহিমের হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ধরে সে বলতে লাগল, সেদিনের সব ঘটনা। রিয়াজ ও তার ফুপা ফুপি মিলে প্লান করে সব করেছে। তার বাবা মা’কে মেরে বুঝিয়েছে কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আরাফকেও রিয়াজ মেরেছে সব কিছু রিয়াজ করেছে শুধু আমার বাবার সম্পত্তির জন্য আর এসব কিছু সেদিন রিয়াজ নিজের মুখে আমাকে বলেছে।
ভারী কন্ঠে আব্রাহিম বললেন, ‘ তোমার ফার্মহাউজে আগুন লাগার এক সপ্তাহ আগে তুমি তোমার সমস্ত সম্পত্তি রিয়াজের নামে লিখে দিয়েছো। ‘
তার এমন কথায় চমকে যায় আরোহী। সে দুই পাশে ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে অস্ফুটস্বরে বলে, ‘ নাহহ, আমি এমন কিছুই করিনি আঙ্কেল। ‘
আরোহীর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকালো নিভ সে মুখ খুলে কিছু বলার জন্য কিন্তু হাতের ইশারায় তাকে আবারও চুপ করিয়ে দেয় আব্রাহিম। সে আরোহীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ‘ তোমাকে আমি পেয়েছি তোমার ফার্মহাউজ থেকে অনেক দূরে। তোমার অবস্থা তখন অনেক নাজুক ছিলো। তোমাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে তোমার কাছে যাই। রাস্তার পাশে শুকনো ঘাসের উপুড় হয়ে পরে ছিলে। তোমার পাশে বসে তোমাকে সোজা করে শুয়ালে দেখতে পাই, তোমার মুখ খুব বাজে ভাবে পুড়ে গেছে। কিন্তু তোমার মধ্যে জীবন বাকি ছিলো। তুমি নিশ্বাস নিচ্ছিলে। তখনই উল্টো পথে তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি। তোমাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। তোমার চেহারা খুব বাজে ভাবে খসলে গেছিলো সেজন্য আমরা তোমাকে এক নতুন চেহারা দিয়েছি প্লাস্টিক সার্জারি করে। ‘
আব্রাহিমের কথাগুলো শুনে কিছুটা নড়েচড়ে বসে আরোহী। আব্রাহিম আবারও বলে, ‘ একটা কথা, তুমি যদি আরোহী হও, তাহলে ফার্ম হাউজ থেকে জঙ্গলের রাস্তা অব্ধি পৌঁছালে কিভাবে? ‘
তখন আরোহী মলিনকন্ঠে বলল, ‘ আমাকে আরাফ বাঁচিয়েছে। ‘
আরাফের কথা শুনে উঠে আব্রাহিম এক মূহুর্তের জন্য তিনি ভেবে নেয় মেয়েটা আরোহী নয় সে মিথ্যে বলছে। কেননা আরাফ সে তো মারা গেছে।
আরোহী থমথমে কন্ঠে বলল, ‘ চারপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে ঘাবড়ে উঠি মৃত্যু কে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন কানের কাছে আরাফের কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পাই। পাশে ফিরে তাকালে আমি স্পষ্ট আরাফকে দেখতে পাই। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। ‘
আব্রাহিম বলল, ‘ আরাফকে কি তুমি সেদিনই প্রথম দেখেছো? ‘
আরোহী তখন বলল, ‘ না আরাফকে প্রথম আমি আমার বিয়ের পর বাসর রাতে দেখেছি। ও আমাকে বলেছিলো বিয়ে করে ঠিক করোনি। আচমকা আরাফের প্রতিবিম্ব দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করি আর সেখানেই জ্ঞান হারাই। তারপর থেকেই আমি আরাফকে দেখতে পাই এবং ওর উপস্থিতি অনুভব করি। আরাফ প্রায়ই আমাকে বলতো, ভয় পেয়ো না আমি আছি। সর্বদা রক্ষা করবো তোমায়। ফার্মহাউজের অগ্নিকান্ডের পূর্বে আমি সেখানে আরাফের উপস্থিতি অনুভব করি আর তার কিছুক্ষণ পর সে নির্মম ঘটনা ঘটে। ‘
সেদিনের সব বিস্তারিত ঘটনা আব্রাহিম কে জানায় আরোহী সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়। মেয়েটাই যে আরোহী তা যাচাই করার জন্য তিনি আরোহীর ছোটো বেলার কিছু ঘটনা সে তাকে জিজ্ঞেস করল। যা শুধু তিনি আর আরোহী-ই জানতেন। আশ্চর্য বিষয় হলো মেয়েটা সব কিছু বিনা আটকে নির্দ্বিধায় বলে দেয়। আরোহীর পিঠে ওর একটা সবুজ রঙের বার্থ মার্ক রয়েছে এটা শুধু তার কিছু কাছের মানুষ জানে। বাহিরের মানুষ জানার কোনো কথাই নাই। তিনি মেয়েটার উদ্দেশ্য কথাটা বললেন, মেয়েটাও রাজি হলো। নিভকে সঙ্গে নিয়ে আব্রাহিম বাহিরে চলে গেলেন। বাহিরে এসে নার্স পুতুল কে বলেন ভেতরে গিয়ে মেয়েটার পিঠে মার্ক আছে কি না দেখতে বললেন।
পুতুল কেবিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করল৷ ও ডাক্তারের কথামত আরোহীর পিঠে চেক করল বার্থমার্ক রয়েছে কি না। অবাক করা বিষয় হলো আরোহীর পিঠের বা পাশটায় মাঝারি সাইজের একটা গোলাকার বার্থমার্ক সেটাও সবুজ রঙের। পুতুল বাহিরে এসে জানালো মেয়েটার পিঠে সেম একটা বার্থমার্ক রয়েছে। আব্রাহিম খুশির তাগিদে কান্না করে দেয়। উনার চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। তিনি হন্তদন্ত হয়ে কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করে ছুটে গিয়ে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে।
_______________
এক মাস পর,,,,,
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]