#আমি_ফাইসা_গেছি(০৮)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
আমরা তিনজনই ফাইসা গেছি স্যার।এই তিন কাল নাগিনী আমাদের ফাসিয়ে দিয়েছে।প্লিজ আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিন।
ইন্সপেক্টর শাহিনের কথা শুনে বললো, কি সব পাগলের মতো ভুলভাল বকছেন?কথা ক্লিয়ার করে বলেন।
তুহিন তখন বললো স্যার আগে কথা দিন আমাদের কে বাঁচাবেন তা না হলে বলবো না কিছু।
ইন্সপেক্টর তখন তার হাতের বন্দুক টি তুহিনের মাথায় ঠেকিয়ে বললো, ওই মিয়া,ফাজলামি করিস আমার লগে?যা বলার তাড়াতাড়ি বল।
তুহিন তার মাথায় বন্দুক ঠেকানো দেখেই তো ভয় পেয়ে গেলো।সে আর কি কথা বলবে?
মাহিন তখন বললো স্যার আগে বন্দুক টা নামিয়ে রাখুন তারপর আমরা ক্লিয়ার ভাবে বলবো।আসলে আমরা সবাই ভীষণ ভিতু।একটু উচ্চস্বরে কথা বললেই তো আমরা ভয় পাই।তার উপর কেনো এই বন্দুকের ভয় দেখাচ্ছেন স্যার?
শাহিন, মাহিন আর তুহিনের কথা শুনে ইন্সপেক্টর না হেসে পারলেন না।তিনি তার বন্দুক টি নামিয়ে বললেন,তোরা কি পুরুষ মানুষ?না অন্য কিছু? আমার কেনো জানি সন্দেহ হচ্ছে ভীষণ।
শাহিন তখন বললো স্যার,আমরা আগে এরকম ছিলেন না।এই বাড়ির জামাই হয়ে আসার পর থেকে আমরা এমন ভিতু হয়ে গেছি।
মাহিন তখন এগিয়ে এসে বললো,
আমাদের কে প্রতিদিন নানা রকম টর্চারের মধ্যে রাখে আমাদের বউয়েরা।যার কারণে আমরা অন্য কারো উচ্চস্বরে কথা শুনলেই ভয় পেয়ে যাই।
তুহিন তখন বললো, আপনাদের কাছে নিশ্চয় নারী নির্যাতনের মামলা যায়।কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের মামলা কি কখনো গিয়েছে?আমরা কিন্তু প্রতিদিন পুরুষ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছি?স্যার, যার কারনে আমাদের মেধাশক্তিও দিন দিন লোপ পেয়ে যাচ্ছে।আমরা কাপুরুষ দের মতো বেঁচে আছি।
ইরা, মিরা,লিরা হঠাৎ এগিয়ে এসে যে যার স্বামীর কাছে দাঁড়ালো।আর বললো,আসলে স্যার আমরা আমাদের স্বামীদের নিয়ে এই বাড়িতেই থাকি।এটা আমাদের বংশের একটা নিয়মের মধ্যে পড়ে।এরা সবাই জেনেশুনেই বিয়ে করেছে আমাদের।এই বলে ইরা শাহিন কে, মিরা মাহিন কে, আর লিরা তুহিন এর দিকে তাকিয়ে বললো,তাহলে আজ কেনো সেটা স্যার দের কাছে কম্পিলিন করছো?তোমরা তো জানতেই বিয়ের পর তোমাদের ঘর জামাই থাকতে হবে।
তিনজন তখন একসাথে বলে উঠলো হ্যাঁ জানতাম।কিন্তু রান্না করা,কাপড় ধোয়া,ঘর গোছানো,মেঝে মুছে দেওয়া এগুলোও তো করতে হয় আমাদের।এসবের কথা তো আগে বলো নি তোমরা?
ইন্সপেক্টর তখন শাহিন,মাহিন,তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললো,তোরা কি আর কিছু বলবি?না এটাই তোদের কম্পিলিন?
শাহিন তখন বললো,স্যার আমরা মুক্তি চাই এদের থেকে।আমরা আর ঘরজামাই থাকতে চাই না।
শাহিনের দেখাদেখি মাহিন আর তুহিনও সেম কথা বললো।
জারিফ চৌধুরী এতোক্ষণে মুখ খুললেন।তিনি এতোক্ষন চুপচাপ শুনছিলেন সব।
তিনি বললেন,এটা সম্ভব না কখনো।হয় তোমাদের আমার মেয়েদের ডিভোর্স দিতে হবে তা না হলে এই বাড়িতেই আমাদের মেয়েদের সাথে থাকতে হবে।
ইন্সপেক্টর তখন বললো,এটা আবার কি ধরনের নিয়ম জারিফ চৌধুরী?
জারিফ চৌধুরী তখন বললো হ্যাঁ এটাই নিয়ম এই পরিবারের।আর আমিও একজন ঘরজামাই।এই যে বিশাল বাড়ি,ফ্যাক্টরি আর সম্পদ দেখছেন সব আমার শশুড়ের।এগুলোতে আমার কোনো অধিকার নাই।আমি নিজেও কামিনী কে বিয়ে করে ফেসে গেছি।এখন না পারছি সরতে না পারছি থাকতে?
জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে তোড়া যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তার শশুড় এসব কি বলছে?সে তো ভেবেছে সবকিছু তার শশুড়ের। সেজন্য তোড়া সবসময় ভাবে এই সম্পদে কুশানের অধিকার সবার আগে।কিন্তু এ তো দেখছি পুরো উলটো।সবকিছু তাহলে কামিনীর?সেজন্য তার এতো বেশি অহংকার?আর সেজন্যই ওনার কথামতো পুরো সংসার চলে?
ইন্সপেক্টর তখন শাহিন,মাহিন আর তুহিন কে বললো, তাহলে তোমরা এখন কি করবে?ডিভোর্স দিবে না ঘর জামাই থাকবে?
ইন্সপেক্টরের কথা শুনে শাহিন,মাহিন আর তুহিন বললো,আমাদের আর কিছু বলার নাই স্যার।কারণ ডিভোর্স দিতে হলে ১৫ লক্ষ করে দেনমোহরের টাকা তাদের দিতে হবে।এতো টাকা আমরা কই পাবো?
ইন্সপেক্টর তখন বললো, এটা তোমাদের বিয়ের সময় ভাবা উচিত ছিলো।এখন কিছুই করার নাই।তবে আমি একটা উপকার করতে পারি তোমাদের তা হলো আজ থেকে তোমরা আর এসব ঘরের কাজ করবে না।হয় অফিসে যাবে তা না হলে ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকবে।এরপরও যদি কেউ তোমাদের দ্বারায় এসব কাজ করায় তখন আমাকে জানাবে।ওকে?
–ইয়েস স্যার।তিন জনই ভীষণ খুশি হয়ে গেলো।
ইন্সপেক্টর এবার তোড়াকে বললো,
তোড়া?তুমি যেহেতু এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছোই বড়দের মুখের উপর কোনো তর্ক করবে না।তারা যেভাবে চলতে বলবে সেভাবেই চলবে।তবে কেউ যদি বাজে কথা বলে বা তোমার উপর নির্যাতন করে তখন সেটা সাথে সাথে জানাবে।এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবো না আমরা।এইভাবে পুলিশ সবকিছু মিটমাট করে চলে গেলেন।
ইন্সপেক্টর চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইরা,মিরা,লিরা তোড়ার কাছে এসে বললো, শুনলি বাবা তখন কি বললো?এই বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক আমার আম্মু।আর তুই তার সাথেই পাঙ্গা নিতে চাস?আশা করি ভবিষ্যতে আর বেশি বাহাদুরি করবি না?চুপচাপ থাকার হলে থাকবি না হলে চলে যাবি।
তোড়া ইরা,মিরা লিরার কথা শুনে রাগে গজ গজ করতে করতে তার রুমে গিয়ে কাপড় গোছাতে লাগলো।সে ঠিক করলো আর কিছুতেই এ বাড়িতে সে থাকবে না।কারন এ বাড়িতে সে কামিনী আর ইরা,মিরা লিরার হুকুম মেনে কিছুতেই চলতে পারবে না।
তোড়াকে কাপড় গোছাতে দেখে কুশান এগিয়ে এলো।আর বললো, এখন বুঝলে কেনো তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি?কারণ আমি চাইতাম না তুমি আমার আম্মু আর বোনদের অপমান সহ্য করে এই বাড়িতে পড়ে থাকো।আমি তো নিজেও বন্দি হয়ে পড়ে আছি।না পারছি কিছু করতে না পারছি কোথাও চলে যেতে।
তোড়া তখন হঠাৎ করেই তার কাপড় গোছানো বাদ দিয়ে কুশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আর বললো,তুমি কি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসো?
;হ্যাঁ অবশ্যই। কিন্তু তুমি তো বিশ্বাস করো না।
–আমার মাথা ছুঁয়ে বলো।
কুশান তখন বললো মাথা ছুঁয়ে বলতে হবে কেনো?আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।
তোড়া তখন বললো,তাহলে তুমিও তোমার কাপড় গুছিয়ে নাও।আজ থেকে তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে।
;মানে কি তোড়া?পাগল হইছো তুমি?
তোড়া তখন বললো কেনো?পাগল হবো কেনো?তোমাদের বাড়ির মেয়েরা যদি জামাই নিয়ে বাবার বাড়ি থাকতে পারে তাহলে আমি কেনো আমার জামাই রে নিয়ে আমার বাবার বাড়ি থাকতে পারবো না?
;ইম্পসিবল। এ হয় না তোড়া?
–কেনো হয় না কুশান?অবশ্যই হবে।আর হ্যাঁ, ভয়ের কোনো কারণ নাই।আমি তোমাকে দিয়ে রান্নাবানা করা,ঘর ঝাড়ু দেওয়া,মেঝে মোছা,কাপড় ধোয়ার কাজ করে নিবো না।তুমি একদম আরাম আয়াশে কাটাবে।উলটো আমি তোমার সেবা করবো।
কুশান সেই কথা শুনে বললো তা হয় না তোড়া।আমার আম্মু যত খারাপই হোক না কেনো মা তো মা ই।আমার আম্মুকে রেখে আমি কোথাও যাবো না।কারণ আম্মু আমাকে একদিন না দেখলে কিছুতেই থাকতে পারবেন না।
তোড়া তখন বললো শাহিন,মাহিন আর তুহিন দুলাভাই এর কি তাহলে কোনো ফ্যামিলি নাই?তোমার বাবার ও কি তাহলে কোনো ফ্যামিলি নাই?
তারা যেভাবে আপনজন ছেড়ে এ বাড়িতে এসে পড়ে আছে তুমিও ঠিক সেভাবেই আমাদের বাড়ি থাকবে।
;আমি পারবো না যেতে।এই বলে কুশান চলে যেতে ধরলো।
তোড়া তখন বললো ওকে।তাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি।আমি থাকবো না আর এ বাড়িতে।যে বাড়িতে আমার কোনো আত্নসম্মান বোধ নেই সে বাড়িতে আমি কি জন্য থাকবো?
কুশান তোড়ার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।আর তোড়ার হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বললো,কোথাও যাবে না তুমি।আর কেউ তোমাকে কিছু বলবে না।কথা দিলাম আমি এবার থেকে প্রতিবাদ করবো।
তোড়া তখন বললো তুমি বললে আর হলো নাকি?আমি যখন ঠিক করেছি এ বাড়িতে আর থাকবো না তাহলে থাকবোই না।কারো বাপের ক্ষমতা নাই আমাকে আটকানোর।আর হ্যাঁ,এটাই আমাদের কিন্তু শেষ দেখা।ঠিক সময়মতো তোমাকে আমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।
কুশান হঠাৎ তোড়ার মুখ টিপে ধরে বললো কি সব যা তা বলছো?ডিভোর্স?কিসের ডিভোর্স? তুমি আমার জীবনের না পাওয়া ধন,সেই ধন পেয়ে আমি হারাতে চাই না।আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোমাকে আমি বউ করে এনেছি।সেই তুমি কি করে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবলে?
তোড়া তখন কুশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো,তোর ঐ শুকনো কথায় আমার এই কঠিন মন কিছুতেই গলবে না।এই বলে তোড়া কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যেতে ধরলো।এদিকে কুশান বার বার তোড়াকে আটকাতে লাগলো।এক পর্যায়ে তোড়া কুশানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
কুশানকে পড়ে যাওয়া দেখে কামিনী যেনো চিলের মতো দৌঁড়ে এলো।আর বললো,বাবা,বাবা।আমার বাবু।ব্যাথা পাইছিস তুই?
–না আম্মু।এই বলে কুশান আবার উঠলো।আর তোড়াকে আটকানোর চেষ্টা করলো।
তোড়া তখন বললো কুশান!প্লিজ আমাকে বাধা দিও না।তা না হলে আবার কিন্তু ধাক্কা দিবো।
কামিনী সেই কথা শুনে তোড়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ তোড়াকেই একটা ধাক্কা দিলো।আর বললো,তোর এতো বড় সাহস?আমারই চোখের সামনে আমারই ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিস।যে ছেলেকে আমি জীবনেও একটু আঁচড় দিয়ে দেখি নি?
কুশান তোড়াকে পড়ে যাওয়া দেখে তুলতে ধরলো।তোড়া তখন কুশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো লাগবে না ধরা।আমি একাই পারবো উঠতে।তুমি বরং তোমার মায়ের আঁচলের তলে গিয়ে লুকাও।এই বলে তোড়া বেরিয়ে গেলো।
কুশান তখন চিৎকার করে বললো, তোড়া প্লিজ যেও না।শোনো আমার কথা।
ইরা,মিরা,লিরা তোড়াকে চলে যাওয়া দেখে দৌঁড়ে তাদের ভাই এর কাছে এসে বললো, যে চলে যাচ্ছে তাকে যেতে দে ভাই।ঐ মেয়ে তোর একটুও যোগ্য না।এই পরিবারের সাথে মানায় না ঐ মেয়েকে।আমরা তোকে আবার বিয়ে দেবো।তুই দেখিস সেই মেয়ে অনেক ভালো হবে।তোকে অনেক ভালোওবাসবে।
কুশান তার বোনদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।সত্যি তার মাথাতেই খেলছে না তার এখন কি করা উচিত?
কামিনী ও সাথে সাথে কুশানের রুমে প্রবেশ করলো।কিন্তু কুশান টেনশনে শুধু পায়চারি করতে লাগলো।কামিনী তা দেখে বললো, বাবা কি হয়েছে তোর?এমন কেনো করছিস?
কুশান তখন বললো, আম্মু তুমি দেখলে না তোড়া চলে গেলো আমাকে ছেড়ে।সে আর নাকি আসবে না এ বাড়িতে।আর আমাকে কিছুদিন পর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো তাহলে তো ভালোই হবে।আপদ এমনি এমনি বিদায় নিলো।আমাদের কে আর কিছুই করতে হলো না।তোকে এবার অনেক ভালো একটা মেয়েকে দিয়ে বিয়ে দেবো।বল তো তুই কাকে বিয়ে করতে চাস?তোর যামিনী আন্টির মেয়ে যুথিকে না তোর আব্বুর বন্ধুর মেয়ে রুবাইয়াকে?
কুশান তখন কামিনী কে জড়িয়ে ধরে বললো আম্মু আমি তোড়াকেই প্রচন্ড ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার ওকেই চাই।তোমরা কেনো ওর সাথে এমন ব্যবহার করতেছো?তুমিও দেখতে পারো না,আপুরাও দেখতে পারে না।অথচ তোমরা নিজেরাই ওকে পছন্দ করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছো।
কামিনী তখন বললো আমরা কি আর জানতাম এই মেয়ে এমন হবে?আমরা তো ভেবেছিলাম সহজ সরল মেয়ে সে।কি সুন্দর সাবলীল ভাবে কথা বলছিলো সেদিন।আর এখন বিয়ের এক দিন পরেই আমার সংসারের ভালোমন্দ বিচার করতে আসে?
কুশান তখন বললো আমি অতোসব বুঝি না।আমার তোড়াকে এনে দাও।
কামিনী তখন কুশানকে ধমক দিয়ে বললো, তোকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।তুই হলি আমার সবচেয়ে আদরের সন্তান।কিন্তু তাই বলে তোর এই আবদার আমি মেনে নিতে পারলাম না।কারন তোড়াকে আমার সুবিধের মেয়ে মনে হচ্ছে না।ও যদি নিজের থেকে নাও যাইতো আমি তবুও ওকে পাঠাতাম।এই বলে কামিনী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
?
তোড়া তার বাড়ি পৌঁছে গেলো।
তোড়াকে এভাবে হঠাৎ করে দেখে চামেলি বেগম দৌঁড়ে এলেন।কারণ কোনো মেয়েই বিয়ের পরের দিনই এভাবে শশুড় বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি একা একা যায় না।
চামেলি বেগম এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলেন।তিনি কাউকেই দেখতে পেলেন না।তখন তিনি বললেন, মা জামাই কই?জামাইকে দেখছি না যে?
তোড়া তার মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে সোজা তার নিজের রুমে চলে গেলো।আর কাপড়ের ব্যাগ টা মেঝেতে ফেলে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে রুমে বসে কাঁদতে লাগলো।তোড়াকে ঘরের দরজা দেওয়া দেখে চামেলি তোড়ার নাম ধরে ধরে ডাকতে লাগলো।মা তোড়া?দরজা খোল মা।
কিন্তু তোড়া কিছুতেই দরজা খুললো না।
এদিকে চামেলি বেগমের ডাকাডাকির শব্দ শুনে তোড়ার কাজিন স্বর্ণা এগিয়ে এসে বললো, চাচি তোড়া এসেছে?আপনি তোড়া তোড়া করছেন কেনো?
চামেলি তখন বললো হ্যাঁ এসেছে।আর এসেই কেন জানি ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো।
তোড়ার চাচি মিসেস শিউলি বেগম তখন হুইসেল দিয়ে উঠলো,আল্লায় জানে শশুড়বাড়িতে কোন অঘটন ঘটে এসেছে সে।কারণ তোড়ার রাগ আর জিদের কথা পুরো এলাকার লোক জানে।এক বাপের এক মেয়ে হওয়ায় সে যখন যেটা চাইতো সেটাই তার বাবা পূরণ করে দিতো।অতিরিক্ত আহ্লাদে তোড়া এরকম হয়েছে।
চামেলি বেগম তখন শিউলিকে ধমক দিয়ে বললো কি যা তা বলছিস?নিজের ঘরেও কিন্তু মেয়ে আছে তোর।সব সময় পরের মেয়েকে নিয়ে দুই চার লাইন বলার আগে একটু ভেবেচিন্তে বলিস।তোড়া এতোদূর থেকে এসেছে সেজন্য বোধ হয় রেস্ট নিচ্ছে এই বলে চামেলি তার কাজে চলে গেলো।
শিউলি তখন স্বর্ণাকে বললো, কি রে তোড়া কি একা একাই এসেছে?না ওর জামাই ও এসেছে?
স্বর্ণা তখন বললো, তা কি আমি দেখেছি? এই বলে স্বর্ণাও চলে গেলো।
চামেলি এবার কুশানের কাছে কল করলো।কুশান তার শাশুড়ীর কল পেয়েই বুঝতে পারলো কেনো তিনি কল দিয়েছেন?
কুশান সেজন্য চামেলির কল রিসিভ করে বললো হ্যালো আম্মু,তোড়া কি পৌঁছেছে?
চামেলি সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ বাবা পৌঁছেছে।তা তোড়া একা একা এসেছে কেনো বাবা?তুমি আসলে না কেনো?
কুশান তখন বললো আমার একটা জরুরি কাজ ছিলো আম্মু।সেজন্য ওকে আগে পাঠিয়ে দিলাম।
চামেলি তখন বললো তা তুমি আসবে না বাবা?
কুশান চামেলির প্রশ্নের কি উত্তর দেবে সেটাই ভাবতে লাগলো।
এদিকে তোড়ার দাদি হেনা বেগম বললো এই কোন আজগুবি কথা বউ?বিয়ের পরের দিনই নতুন বউ একা একা কি করে বাপের বাড়ি আসে?তোড়া আবার ওর শশুড় বাড়িতে কারো কিছু করে আসে নি তো?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে রাগ করে বললো আম্মা আপনিও আবার এসব কথা বলা শুরু করলেন?জামাই এর দরকারী কাজ আছে সেজন্য আসে নি।
হেনা বেগম তখন চামেলি বেগমের থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে বললো,কি এমন কাজ রে তোর?যা তোর বউ এর থেকেও দরকারী?এমন করে একা একা তোড়াকে পাঠানো তোর ঠিক হয় নি।নতুন বিয়ে তোদের,এখন তোরা সবসময় একসাথে থাকবি।তুই যেখানে থাকবি তোড়াও সেখানে থাকবে।তুই এখন এই মুহুর্তেই চলে আসবি।বুঝলি?
কুশান তখন বললো,আজকে কি যেতেই হবে?না গেলে হয় না দাদী?
দাদী তখন হেসে হেসে বললো, দূর বজ্জাত টা?আয় তাড়াতাড়ি।বউকে একা একা রাখতে নেই।অন্যজনের কিন্তু নজর লাগে তাতে।এই বলে হেনা কল কেটে দিলো।
?
কুশান একবার ভাবছে কামিনী কে বলে বের হবে।আরেকবার ভাবছে সে না বলেই চলে যাবে।কোনটা এখন করবে সে?কামিনী এক সেকেন্ডের জন্য ছেলেকে চোখের আড়াল করতে চায় না।এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কুশান রেডি হয়ে নিলো।
কুশান তার রুম থেকে বের হয়ে সোজা কামিনীর কাছে গেলো।আর বললো, আম্মু কিছু টাকা দাও তো?
–টাকা?টাকা কি করবি বাবা?
কুশান তখন বললো দরকার আছে।একটু বাহিরে যাবো।
কামিনী তখন তার ব্যাগ থেকে টাকা বের করে কুশানের হাতে দিতে দিতে বললো, বাবা যেখানেই যা বেশি যেনো রাত না হয়।তোর কিন্তু শত্রুর অভাব নাই।
কুশান তখন বললো রাতে আসবো না আজ আম্মু।তুমি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িও।
কামিনী সেই কথা শুনে কুশানের হাত থেকে টাকা গুলো নিয়ে বললো,তোড়াদের বাড়ি যাচ্ছিস নাকি আবার?
কুশান তখন বললো হ্যাঁ।গেলে কি হবে?
কামিনী সেই কথা শুনে বললো, আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।যা আমার সামনে থেকে।
কুশান তখন কামিনী কে জড়িয়ে ধরে বললো, এতো রাগ কেনো আম্মু মেয়েটার উপর?আমাকে কত ভালোবাসো?আর তোড়ার নাম শুনলেই তোমার মাথায় আগুন উঠে যায়।কেনো আম্মু?
কামিনী তখন বললো আমার যাকে ভালো লাগে না তার নাম শোনামাত্র আমার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে।ওই মেয়ে এসেছে একদিন হলো আর এসেই আমার সংসার নিজের আয়ত্তে নিতে চায়।কত বড় সাহস দেখছিস?ও আমার এখন সবচেয়ে বড় শত্রু।ওকে দূর না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না।
হঠাৎ চামেলি বেগম আবার কল দিলেন।কুশান সেজন্য সাথে সাথে কল কেটে দিয়ে কামিনী কে বললো,আম্মু দাও টাকাগুলো।আমি একটু বেড়াতে যাবো।
কামিনী তখন বললো আমি বিশ্বাস করি না।
কুশান তখন কামিনীর কথা শুনে রাগ করে বললো দরকার নেই তোমার টাকার।আমার বন্ধুরা পিকনিকে গিয়ে আনন্দ ফূর্তি করবে আর আমি চুপচাপ বসে থেকে ওদের আনন্দ দেখবো।আজ যদি নিজে ইনকাম করতাম তাহলে আর কারো কাছে এভাবে হাত পেতে টাকা চাইতে হতো না।কালকেই আমি চাকরি তে জয়েন করবো।চাকরি না পেলে দরকার হলে রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করবো।তবুও এভাবে হাত পেতে কারো কাছে টাকা চাইবো না।
কামিনী কুশানের কথা শুনে বললো, বাবা রাগ করতেছিস কেনো?তুই যে পিকনিকে যাবি সেটা বলবি না আগে?এই নে ধর আরো বাড়িয়ে দিলাম।এই বলে কামিনী তার ব্যাগ থেকে আরো কিছু টাকা বের করলো।
কুশান তখন কামিনী কে আবার জড়িয়ে ধরে বললো এই না হলো আমার লক্ষ্ণী আম্মু।শুধু তার রাগ আর জিদ টা বেশি।
আম্মু ঔষধ গুলো সময় মতো খেয়ে নিও।তা না হলে কিন্তু ক্ষত শুকাতে দেরি হবে তোমার।
এই বলেই কুশান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
চলবে,