আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৫

0
637

#আমি_ফাইসা_গেছি(০৫)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তোড়া কুশানের কপালে কিস করে তার মুখ মন্ডল ছুঁয়ে দিয়ে বললো,আর কতো ঘুমাবে?এবার তো একটু তাকাও।এই দেখো আমি কত সুন্দর করে সেজেছি।এদিকে কুশানের তো কোনো সাড়াশব্দই নাই।সে বেশ নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
তোড়া তখন তার ভেজা চুলগুলো দিয়ে বার বার কুশানের মুখে ছুঁয়ে দিতে লাগলো।এতোক্ষনে কুশান একটু নড়েচড়ে উঠলো।কারণ ঘুমন্ত কুশান বেশ ডিস্টার্ব ফিল করছিলো এতে।তোড়া আবার যখন কুশানের সাথে শয়তানি করছিলো তখন কুশান তার চোখ বন্ধ করেই তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অনবরত কিস করতে লাগলো।তোড়া তখন কুশানের মুখে হাত দিয়ে বললো সারারাত এতো আদর করলা তবুও মন ভরে নি?এই সকাল সকাল আবার আদর করতে ইচ্ছে করতেছে?
কুশান তোড়ার প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না।সে তোড়ার গলায় মুখ ডুবোতেই কুশানের ফোনে এলার্ম বেজে উঠলো।

আজ এলার্মের শব্দ টা শুনে কুশান বেশ বিরক্তই হলো।সে রাগ করে এলার্ম বন্ধ করলো।তবুও এলার্ম বন্ধ হলো না।কুশান তখন বললো তোড়া তুমি একটু বন্ধ করো না এলার্ম টা?কিন্তু তোড়া বন্ধ করলো না এলার্ম।এদিকে এলার্ম বেজেই যাচ্ছে।কুশান তখন চিৎকার করে বললো কেউ একটু বন্ধ করো না এলার্ম টা।তবুও কেউ কুশানের কথা শুনলো না।
কুশান তখন চিৎকার করতে করতে এক লাফে উঠে বসলো।তারপর তার চোখ ডলতে ডলতে এলার্মটি অফ করলো।

হঠাৎ কুশানের ঘুমন্ত তোড়ার দিকে চোখ গেলো।সে তোড়াকে তার বেডে ঘুমিয়ে থাকা দেখে হাসতে হাসতে বললো,
এতোক্ষণ ধরে সে স্বপ্ন দেখতেছিলো?এই বলে কুশান আবার শুইলো।যদি স্বপ্নের পরের পার্ট টি দেখতে পারে।কিন্তু এটা কি সম্ভব কখনো?স্বপ্ন তো স্বপ্নই।ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে যে স্বপ্নগুলোরও সমাপ্তি ঘটে।

কুশান এবার ধীরে ধীরে তোড়ার কাছে এগিয়ে গেলো।আর আলতো করে তোড়ার মুখমন্ডল স্পর্শ করে বললো, স্বপ্নটা কেনো সত্যি হলো না? বাস্তবে যদি এমন রোমান্টিক হইতে তুমি?তা না শুধু রাগ দেখাও সারাক্ষণ।মেয়ে মানুষের এতো রাগ কিন্তু ভালো না।ইসঃ তোড়া।আমি তো ভুলতেই পারছি না এ দৃশ্য। স্বপ্নে এতো সুন্দর করে প্রেম বিনিময় করতেছিলো আমি দ্বিতীয় বার আবার তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম তোড়া।

হঠাৎ তোড়া চোখ মেলে তাকালো।আর কুশানকে তার কাছাকাছি দেখামাত্র কুশানের হাত টি টেনে ধরে জোরে করে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
কুশান কামড় খাওয়া মাত্র চিৎকার করে বললো,উহঃ কি করতেছো তোড়া?ব্যাথা পাচ্ছি তো?
তোড়া সেই কথা শুনে এবার কুশানের হাতে চিমটি কাটলো।কুশান তখন তার হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,হচ্ছে টা কি?পাগল হয়ে গেলে নাকি?
কিন্তু তোড়া কোনো কথা না বলে গুনে গুনে একদম দশটা চিমটি কাটলো।

কুশান তখন তোড়ার দুই হাত শক্ত করে ধরে বললো,
তোড়া?সবসময় এরকম ফাজলামি কিন্তু ভালো লাগে না।আগে তুমি আমার প্রেমিকা ছিলে সেজন্য কিছু বলি নি তোমাকে।কিন্তু এখন তুমি আমার স্ত্রী আর আমি তোমার স্বামী।সেজন্য এখন তোমার আমাকে রেস্পেক্ট করা উচিত।এভাবে যখন তখন আমার উপর টর্চার করা কিন্তু আমি মোটেও সহ্য করবো না।

তোড়া তখন কুশানের হাত এক ঝাটকায় সরে দিলো আর মুখ ভেংচিয়ে বললো,
স্বামী?আমি তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে মানি না।তুমি কখনোই আমার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না।আর কখনো যদি আমাকে এভাবে পারমিশন ব্যাতিত স্পর্শ করেছো তখন একদম হাত দুটিই ভেঙ্গে ফেলবো।এই বলে তোড়া বেড থেকে নেমে গেলো।
কিন্তু কুশান তখন তোড়ার সামনে গিয়ে বললো,
তুমি কি আমার জীবন টা এমন তছনছ করার জন্য এসেছো এ বাড়িতে?

–হ্যাঁ।শুধু তছনছ না,এর থেকেও বড় শাস্তি পাবে তুমি।

কুশান তখন বললো, ওকে।তাহলে আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি যে তুমি আমার সাথে কি কি অন্যায় করতেছো।আর আমাকে কি জন্য বিয়ে করেছো।এই বলে কুশান দরজা খুলে বের হতেই তোড়া বললো,তুমি যদি এই কথা সবাইকে বলে দাও তাহলে আমিও বলে দিবো তোমার আমার রিলেশনের কথা।তুমি যে দীর্ঘ এক বছর ধরে প্রেম করতেছো আমার সাথে সেটাও সবার জানা উচিত।

কুশান তোড়ার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।সে আর এক পাঁ ও এগোতে পারলো না।
তোড়া কুশানকে দাঁড়ানো দেখে বললো, কি হলো যাও?সবাইকে বলে এসো যে আমি তোমাকে কিভাবে নির্যাতন করতেছি।সবাই একটু শুনুক স্বামী নির্যাতনের কথা।

কুশান তখন আবার তোড়ার কাছে এগিয়ে আসলো।আর হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো,
তোড়া!তুমি যদি আমাকে এতটুকু ভালোবাসতে তাহলে আমাকে বিশ্বাস করতে।কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ভালোই বাসো নি কখনো।সেজন্য আমার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই।

তোড়া এবার নিজেও কুশানের কাছে এগিয়ে গেলো আর বললো,শুধু বিশ্বাস না তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবো আমি।আর কখনোই কোনো ফাজলামি করবো না।যদি ঠিক ঠিক ভাবে আমার প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দাও তুমি।
এক নাম্বার প্রশ্ন, বলো কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইতে না?দুই নাম্বার প্রশ্ন,কেনো দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলেছো আমাকে?তিন নাম্বার প্রশ্ন,এতো ভালোবাসার পরেও কেনো আমাকে ঠকাতে ধরেছিলে?

কুশান তোড়ার প্রশ্ন শুনে বললো, এসব প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে না।এমনিতেই পেয়ে যাবে তুমি এই বলে কুশান তাড়াতাড়ি করে তার এক্সারসাইজের ড্রেস পড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়া কুশানকে চলে যাওয়া দেখে বললো পালাচ্ছো কোথায়?উত্তর দিয়ে যাও আমার।
কিন্তু কুশান আর ফিরে তাকালো না।

এদিকে কুশান রুম থেকে বের হতেই দেখে তার বাবা আর মা দাঁড়িয়ে আছে।কুশান কে দেখামাত্র কামিনী চৌধুরী চিৎকার করে বললো,
এই যে আমার বাবু এসে গেছে।আমি জানতাম সোনা ছেলেটা কখনোই ভুলবে না এটা।

কিন্তু জারিফ চৌধুরীকে দেখে কুশান বেশ অবাক হলো।কারণ তারা শুধু মা ছেলে ডেইলি ডেইলি হাঁটতে বের হয়।যেহেতু কামিনী চৌধুরীর ডায়াবেটিস সেজন্য ওনার বেশি বেশি হাঁটা প্রয়োজন।
কিন্তু আজ হঠাৎ তার বাবা কেনো?
কুশান কে দেখামাত্র জারিফ চৌধুরী বললো,আমি ভেবেছিলাম তুই আজ যাবি না।সেজন্য তোর আম্মুর সাথে আজ আমিই যেতে চাইছিলাম।
কুশান তখন কামিনী চৌধুরীর গলা ধরে বললো,মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মনে থাকবে এটা আমার।দুনিয়ার সবকিছুর ঊর্ধ্বে আগে আমার আম্মু।চলো এখন তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এই বলে কুশান তার মায়ের হাত ধরে বেড়িয়ে যেতে ধরলো।

জারিফ চৌধুরী তখন বললো তাহলে আমি আর কেনো যাই?তোরা দুইজনই যা।
কুশান তখন বললো আজ যখন তুমি সকাল সকাল উঠেছোই তাহলে চলো না আব্বু আজ আমাদের সাথে।
জারিফ চৌধুরী অনেক ভেবেচিন্তে বললো,ওকে চল।এই বলে জারিফ চৌধুরীও চলে গেলো আজ কুশানদের সাথে।
?
সাতটার সময় কুশান,জারিফ চৌধুরী আর কামিনী তাদের মর্নিং ওক শেষ করে বাসায় ফিরলো।আর সবাই যে যার রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কুশান রুমে গিয়ে দেখে তোড়া রুমে নাই।সেজন্য সে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ রুমে ঢুকে তোড়া চিৎকার করে বললো, জুতা ঘরের ভিতর আনছো কেনো?
কুশানের চোখ টা একটু লেগে এসেছিলো।কিন্তু সে তোড়ার চিৎকার করা দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠলো আর বললো কি হয়েছে?
তোড়া তখন আবার বললো নোংরা জুতা ঘরের মধ্যে কেনো এনেছো?
আর এটা কি?এই বলে তোড়া ভেজা টাওয়াল টা দেখিয়ে দিয়ে বললো ভেজা টাওয়াল কি বিছানায় রাখার জিনিস?

কুশান সেই কথা শুনে বললো প্লিজ তোড়া,চেঁচামেচি কম করো।বাসার সবাই কিন্তু শুনবে।
তোড়া তখন বললো টাওয়াল ঠিক জায়গায় রেখে আসো আর জুতা জায়গামতো রেখে আসো।তাহলেই আর চেঁচামেচি করবো না।
কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো,পারবো না রাখতে।তোমার অসুবিধে হলে তুমি নিজে গিয়ে রেখে আসো।এই বলে কুশান আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো।

তোড়া যখন দেখলো কুশান শুনলো না তার কথা তখন সে জুতা আর টাওয়াল বাহিরে গিয়ে ফেলে দিলো।
কুশান তা দেখে এক লাফে বিছানা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি করে বাহিরে চলে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে তার বড় দুলাভাই শাহিনের মাথায় টাওয়াল টি।কুশান তখন নিজে গিয়ে শাহিনের মাথা থেকে টাওয়াল টি নিয়ে নিলো।আর জুতাগুলো কুড়িয়ে নিতে ধরলো।

শাহিন তখন বললো কুশান এগুলো কে ফেলে দিয়েছে?
কুশান কোনো উত্তর দিলো না।
তখন শাহিন হঠাৎ কুশানের হাত ধরে বললো, ভাই ঠিক আছিস তুই?না আমাদের মতো তোরও অবস্থা?

কুশান কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে ধরলো।
তখন শাহিন বললো,কুশান দাঁড়া।
কুশান সেই কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।
শাহিন তখন বললো বউকে প্রথম থেকেই একটু শাসনে রাখবি,তা না হলে কিন্তু মাথায় উঠে নাচবে।পরে আর নামাতে পারবি না।তখন ছেড়েও যেতে পারবি না।আবার ধরে রাখার সহ্য ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলবি।

কুশান তখন বললো না, না,তোড়া মোটেও সেরকম মেয়ে নয়।
–ভালো হলেই ভালো।অন্তত তোর বোনদের থেকে যেনো ভালো হয়।

কুশান তার জুতা আর টাওয়াল নিয়ে ঘরে চলে গেলো।তারপর টাওয়াল টি বেলকুনিতে টাঙ্গানো রশির উপর মেলে দিলো।আর জুতা গুলো সু র‍্যাকে রাখলো।

তোড়া বিছানায় শুয়ে মোবাইল দেখছে।আর আড় চোখে কুশানের দিকে তাকাচ্ছে।কুশানের এমন বিরক্তভরা মুখখানা দেখে তার বেশ আনন্দই লাগছে।

হঠাৎ ডাইনিং রুম থেকে ইরা মিরা লিরার চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শোনা গেলো।তারা তিনজই চিৎকার করে করে বলছে এখনো কেনো নাস্তা রেডি হয় নি তাদের।ঘরে এতো গুলো লোক?আবার নতুন আরেকজন এসেছে তবুও কেনো এতো দেরি হচ্ছে নাস্তা বানাতে?

তোড়া তার রুমের মধ্যে থেকেই কথাটা শুনলো।সে তখন কুশানকে বললো,নতুন আরেকজন এসেছে মানে?আমাকে কি তোমরা কাজের মেয়ে হিসেবে এনেছো?
কুশান তখন বললো তোমাকে আবার কখন কে কাজের মেয়ে বললো?
তোড়া তখন তার মোবাইল টা বিছানায় রেখে সোজা নিজেও ডাইনিং রুমে চলে গেলো।

তোড়াকে দেখে হঠাৎ কামিনী চৌধুরী বললো,তা তুমি ঘর থেকে কেনো বের হইছো?ঘরেই বসে থাকো।যখন নাস্তা রেডি হবে তখন তোমাকে টুনি ঘরে গিয়ে তোমার নাস্তা দিয়ে আসবে।

তোড়া কামিনী চৌধুরীর এমন ব্যবহার দেখে বেশ আশ্চর্য হলো।সে তখন বললো, আম্মু, নাস্তা আমার ঘরে দিতে হবে না।আমি এখানেই খেতে পারবো।

কামিনী চৌধুরী তখন চিৎকার করে বললো,শাট আপ।তুমি এ বাড়ির বউ,আমার মেয়ে নও।সেজন্য মেয়ের মতো আচরণ না করে বউ দের মতো আচরণ করতে শেখো।

তোড়া তার শাশুড়ির ব্যবহারে খুবই শকড হলো।সে খারাপ কি বললো?হঠাৎ কামিনী এতো ক্ষেপে গেলো কেনো?
তোড়া তখন চুপ করে না থেকে বললো, আম্মু আপনি আমার উপর রাগ করতেছেন কেনো?কি করলাম আমি আবার?

কামিনী তখন বললো রাগ করবো না মানে?তুমি সেই সকাল থেকে ঘরের মধ্যে শুয়ে আছো।একবারের জন্যও কি মনে হলো না তোমার একবার রান্নাঘরে আসা উচিত।তোমার শাশুড়ী কি কি নাস্তা খাবে, তোমার শশুড়ের কি প্রয়োজন তোমার ননদেরা কি কি খাবে সেগুলোর খোঁজ নেওয়া উচিত?

তোড়া তখন বললো, আম্মু আমি মাত্র কাল আসলাম এ বাড়িতে।এই একদিনেই কিভাবে জানবো কার কি পছন্দ?ধীরে ধীরে জানিয়ে নিবো।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,মুখে মুখে একদম তর্ক করবে না।আমি তর্ক করা মোটেও পছন্দ করি না।যাও এখন। আর সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসো।আর এখন থেকে টুনি,আর জয়ার সাথে তুমিও থাকবে রান্নাঘরে।ওদের থেকে অবশ্যই শুনে নিও কার কি পছন্দ।

তোড়া কামিনী চৌধুরীর কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।সে তো মোটামুটি ভালো ভেবেছিলো কামিনী কে।কিন্তু আসল শয়তান যে কামিনী সেটা তোড়া এতোক্ষন দিয়ে টের পেলো।তোড়া বুঝে গেলো সেজন্যই বোধ হয় ওনার মেয়েগুলোও এমন হয়েছে।আসলে মা খারাপ হলে যে তার ছেলেমেয়েও খারাপ হয় তার দৃষ্টান্ত এই কামিনী।

কিন্তু তোড়া আজ আর কোনো তর্ক করলো না।যেহেতু এটা তার শশুড় বাড়ি।আর সে বাড়ির একমাত্র বউ সে জন্য তাকে এই কাজগুলো তো করতেই হবে।সবার খেয়াল রাখা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।এই ভেবে তোড়া চুপচাপ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

তোড়া রান্নাঘরে গিয়ে দেখে শাহিন,মাহিন, তুহিন আর মিসেস লতিফা চৌধুরী রান্না ঘরে।শাহিন রুটি সেকছে,তুহিন সবজি রান্না করছে, আর মাহিন ফল কাটছে। আর লতিফা দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছে।মোটামুটি রেডি হয়েছে সবার নাস্তা।
সেজন্য টুনি আর জয়া সবার জন্য প্লেট সাজাচ্ছে।

তোড়া তখন টুনিকে বললো,আমার শাশুড়ির নাস্তা কোনগুলো?
টুনি তখন বললো, ভাবি, খালামনির জন্য দুইটি রুটি আর এক বাটি সবজি।
–ওকে।এই বলে তোড়া তার শাশুড়ীর খাবারগুলো আগে নিয়ে গেলো।
তারপর তিন বোনের জন্য নয়টা পরোটা আর তিন বাটি বুটের ডাল আর তিনটা অমলেট আর এক বাটি সালাদ নিয়ে গেলো।
লতিফা তখন বললো আমার সুমন আর সনিয়ার খিচুড়ি টা আগে দিয়ে এসো।ওরা কলেজে যাবে কিছুক্ষন পর।

তোড়া সেই কথা শুনে সুমন আর সনিয়ার খাবারগুলোও নিয়ে গেলো।

এদিকে এক এক করে বাকি সবাই উপস্থিত হতে লাগলো ডাইনিং টেবিলে।
তোড়া সেজন্য বাকি সবার নাস্তা টেবিলে নিয়ে আসলো।সে টেবিলে নাস্তা নিয়ে যেতে যেতে একদম হাঁপিয়ে উঠলো।সে ভাবতেই পারছে না একটা পরিবারে এতো গুলো মেম্বার একসাথে থাকতে পারে?

মোট ১৩ জন সদস্য কুশানদের ফ্যামিলিতে।তোড়াকে নিয়ে হচ্ছে ১৪ জন।অন্যদিকে টুনি আর জয়া তাদের পারমানেন্ট কাজের লোক।ওদের কে নিয়ে হচ্ছে ১৬ জন।আরো দুইজন লোক আছে যারা কুশানদের বাড়ি পাহারা দেয়।ওরা সহ সর্বমোট ১৮ জন মানুষের রান্নাবান্না হয় তিনবেলা।

সবার জন্য রান্নাবান্না টুনি,জয়া,শাহিন,মাহিন, তুহিনই করে।লুতফা চৌধুরী শুধু দিকনির্দেশনা দেয়।মাঝেমধ্যে তিনিও হেল্প করেন এদের।অন্যদিকে কামিনী চৌধুরী ইউটিউবে খাবারের ভিডিও দেখে মাঝেমধ্যে শখের বশে করে থাকেন রান্না।

কুশানদের পরিবারের বড় লিডার হলো কামিনী। যার কথামতো সবাই ওঠাবসা করে।অন্যদিকে ইরা,মিরা,লিরা কিন্তু তাদের মায়ের থেকে কম যায় না।তারা তাদের বাবার ব্যবসা সামলায়।কারণ জারিফ চৌধুরী বর্তমানে অবসরে আছেন।
মা সামলাচ্ছে বাড়ি আর মেয়েরা সামলাচ্ছে ব্যবসা বানিজ্য।

অন্যদিকে শাহিন,মাহিন,তুহিনের কোনো কাজকর্ম নাই।সারাদিন ঘরে বসে থেকে কি করে তারা?সেজন্য তারাই বাজার করে,রান্নাবান্না করে, কুশানদের যে জমিজমা আছে সেগুলো দেখাশোনাও করে।
?
কুশান এখনো আসে নি নাস্তার টেবিলে।

কামিনী তখন তোড়াকে বললো, কুশান কই?সে এখনো আসলো না কেনো?যাও,ওকে গিয়ে ডেকে আনো।
তোড়া কামিনীর কথা শুনে কুশানকে ডাকতে গেলো।কিন্তু কুশান জানালো সে খাবে না কিছু।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো আপনার আম্মু আমাকে পাঠিয়ে দিলো।
কুশান তার মায়ের কথা শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো নাস্তার টেবিলে।

কুশানকে আসা দেখে কামিনী বললো যাও আমার বাবুর জন্য এবার নাস্তা নিয়ে এসো।
তোড়া সেই কথা শুনে যেতে ধরলে কুশান বললো,আম্মু টুনি কে বলো না আনতে।

কামিনী তখন বললো, কেনো?ও আনলে কি সমস্যা?

কুশান তখন বললো সমস্যা নাই।নতুন মানুষ না সেজন্য বললাম।

ইরা সেই কথা শুনে বললো বাড়ির বউদের আবার নতুন পুরাতন কি?প্রথম থেকেই সবটা শিখে নিতে হবে।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, ওকে।নো প্রবলেম।আনতেছি আমি।

কুশানের সকাল বেলার নাস্তা দুটি রুটি,এক বাটি সবজি,একটি ডিম,ওটমিল,এক গ্লাস দুধ।আর ফলের সালাদ।
তোড়া কুশানের নাস্তা আনতেই কুশান বললো,তুমিও বসো।তুমি আবার কখন খাবে?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, হ্যাঁ মা তুমিও বসো।

তোড়া তখন বললো, না আব্বু,আমি এখন খাবো না।আপনারা খান।

কুশান তখন বললো পরে আবার কখন খাবে?এই বলে কুশান তোড়ার হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসালো।

মিরা তা দেখে বললো,ওকে কি এখনিই খেতে হবে?ওরা তো সারাক্ষণ বাসাতেই থাকবে।পরে খেয়ে নিবে ওরা।

মিরার কথা শুনে তোড়ার পুরো শরীরে যেনো রক্ত টগবগ করে ফুটতে লাগলো।খাওয়া নিয়ে এতো বড় কথা বললো মিরা?

তোড়া সেজন্য রাগ মরে নাস্তা না খেয়ে সোজা রুমে চলে গেলো।
কুশান তা দেখে বললো,তোড়া?কই যাচ্ছো তুমি?এই বলে কুশানও তোড়ার পিছনে পিছনে চলে গেলো।

ইরা তখন বললো, দেখছো আম্মু তোমার ছেলের কান্ড?এক দিনেই কেমন বউ পাগল হয়ে গেছে?বউ চলে গেলো দেখে সেও চলে গেলো?

জারিফ চৌধুরী এবার তার মেয়েদের উপর রাগ হলেন।তিনি বললেন,এটা তোমাদের কি ধরনের আচরণ?খাওয়ার সময় কেউ কি কাউকে এইভাবে বলে নাকি?

লিরা তখন বললো, ঠিকই হইছে।ওই মেয়েকে প্রথম থেকে শিক্ষা না করলে মাথায় উঠে ডান্স করা শুরু করে দিবে।

কামিনী তখন বললো, তোমরা চুপ করবে এবার?আটটা পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।তাড়াতাড়ি খেয়ে অফিস চলে যাও।আমি কুশানকে ডেকে আনছি।ছেলেটা আমার এখন পর্যন্ত কিছুই খায় নি।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here