আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১২

0
661

#আমি_ফাইসা_গেছি(১২)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কুশান গোলাপ সাহেবের কথা রাখলো।সে তোড়াকে তাদের বাড়িতে এখনি নিয়ে যাবে না বলে ঠিক করলো।কিন্তু কুশান তোড়াকে ছাড়া থাকবে কি করে?এতোদিন সে তার প্রেমিকা ছিলো সেজন্য দুইজন আলাদা থাকাতে কিছু মনে হয় নি।কিন্তু এখন তো তোড়া তার ধর্ম আর আইন অনুযায়ী বিবাহিত স্ত্রী।বিবাহিত স্ত্রীকে একা রাখা কি ঠিক হবে তার?
গোলাপ সাহেব কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, কি হলো বাবা?বলো কিছু।তবে আমি তোমাকে আরেকটা অপশন দিতে পারি যদি তুমি চাও অপশন টা গ্রহন করতে পারো।
কুশান গোলাপ সাহেবের কথা শুনে ওনার দিকে তাকালো আর ভাবতে লাগলো কি অপশন দিতে চাচ্ছেন গোলাপ সাহেব?
কুশান কিছু বলার আগেই গোলাপ সাহেব বললো,তুমি চাইলে তোড়ার সাথে আমাদের বাড়িতেই থাকতে পারো।

গোলাপ সাহেবের মুখে এরকম প্রস্তাব শুনে কামিনী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।তিনি তখন উচ্চস্বরে বললেন,সেই থেকে ভুলভাল বকে যাচ্ছেন গোলাপ সাহেব। আমরা মানবতার খাতিরে কেউ কিছু বলছি না।কিন্তু এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।আপনি এতো বড় সাহস কোথায় পেলেন?কোন সাহসে আমার ছেলেকে নিজের বাড়িতে রাখতে চাচ্ছেন?

গোলাপ সাহেব কামিনীর এমন মেজাজ দেখে হেসে উঠলেন,আর বললেন,
এতো জ্বলছেন কেনো বিয়াইন?আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ঘর জামাই শব্দ টা আপনারা প্রথম শুনলেন?আপনার তিনজন জামাই ই তো ঘরজামাই থাকে।শুনেছি তাদের দিয়ে ঘরের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘর ঝাড়ু দেওয়া,মেঝে মোছামুছি করা এমনকি কাপড়ও ওয়াশ করে নেন।আর এখন শুনতিছি আপনার হাজব্যান্ড ও ঘরজামাই থাকে। তাহলে কুশান আমাদের বাড়িতে ঘরজামাই থাকলে সমস্যা টা কোথায়?আমরা অবশ্য আপনাদের মতো অতো টা পাষাণ নই।কুশানকে আমরা জামাই আদরেই রাখবো।

কামিনী গোলাপ সাহেবের কথায় কান না দিয়ে কুশানের কাছে দৌঁড়ে গেলো আর বললো,বাবা!তোড়ার বাবা এসব কি বলছে?আর তুই তবুও কিছু বলছিস না?তোকে আমার থেকে আলাদা করতে চাচ্ছে আর তুই চুপচাপ শুনছিস শুধু।এই তোর মায়ের প্রতি ভালোবাসা?তুই কি এখন আমাদের সাথে যাবি না এখানেই থাকবি ক্লিয়ার করে বলে দে তো সবাইকে।

কুশান তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,আমি এখন ক্লিয়ার করে একটা কথাই বলতে চাই যে আমি আমার আম্মুকে ছেড়ে কখনোই শশুড় বাড়িতে থাকতে পারবো না।ঠিক তেমনি তোড়াকে একা একা এখানে রেখে নিজের বাড়িতেও যেতে পারবো না।আমার ফ্যামিলিকেও প্রয়োজন আমার তার সাথে আমার বউ কেও চাই।এর পরেও যদি তোমরা আমার কথা বুঝতে না পারো তাহলে আমার কিছুই করার নাই।

গোলাপ সাহেব তখন বললো, কিন্তু আমি তো এখনি আমার মেয়েকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাতে পারবো না।তোমার আম্মু আর বোনদের আগে কথা দিতে হবে আমার মেয়ের সাথে তারা আর খারাপ আচরণ করবে না আর তার স্বাধীনতায় কোনো বাঁধা দিতে পারবে না।তোড়াকে তারা নিজের মেয়ের মতো মনে করবে।
কামিনী তখন গোলাপ সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে বললো,এটা জীবনেও সম্ভব না।আমার সংসার আমার কথামতো চলবে।অন্য কাউকে তাতে নাক গলাতেই দিবো না আমি।আর আপনার মেয়ে কখনোই আমার মেয়ে হতেই পারবে না।পর কখনো আপন হয় না এটা নিশ্চয় জানেন আপনি?

গোলাপ সাহেব তখন বললো তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকেও পাঠাবো না।

কামিনী তখন বললো, সেটা আপনাদের ব্যাপার।আপনাদের মেয়ে না গেলেও চলবে আমাদের।

কামিনী আর গোলাপ সাহেব একদম কাছাকাছি গিয়ে তর্কাতর্কি করতে লাগলো।কেউ এক চুল ছাড় দিতে রাজি নয়।
কুশান হঠাৎ চিৎকার করে বললো, তোমরা এবার থামবে প্লিজ।আমাকে নিয়েই তো সবার প্রবলেম তাই না?
তাহলে আমিই আর থাকি না।না আমি আমার নিজের বাড়িতে থাকতে চাই, না শশুড় বাড়িতে।না আমার মায়ের দরকার আছে,না আমার বউ এর।আমার কারো প্রয়োজন নাই।এই বলে কুশান চলে যেতে ধরলো।

কুশানকে চলে যাওয়া দেখে তোড়া দৌঁড়ে চলে গেলো কুশানের কাছে।আর বললো, কুশান কই যাচ্ছো?আমাকেও নিয়ে যাও।
কামিনী এবার নিজেও এগিয়ে গিয়ে বললো, বাবা কুশান!মাকে রেখে কোথায় যাবি?

কুশান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সত্যি সত্যি বেরিয়ে পড়লো।তার আর ইচ্ছা করছে না কারো সাথে কথা বলতে।
তোড়া কোনো উপাই না দেখে দৌঁড়ে গিয়ে কুশানের হাত ধরে বললো, আমিও যাবো তোমার সাথে।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,আমি কোথায় যাবো সেটা তো নিজেই জানি না।হয় তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হবে।

–আমিও তাহলে তোমার সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।যেখানে তোমার পরিবারেরও কেউ থাকবে না আর আমার পরিবারেরও কেউ থাকবে না।যেখানে আমরা দুইজন স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবো।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার হাতে হাত মিলিয়ে বললো হ্যাঁ চলো।দেখি কি আছে আমাদের ভাগ্যে?

কামিনী তখন দৌঁড়ে গিয়ে কুশানকে আটকালো।আর বললো, বাবা কই যাচ্ছিস?
কুশান তখন বললো দেখি কোন দিকে যাওয়া যায়।
কামিনী তখন বললো,কি বলছিস এসব?আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো?
কুশান তখন বললো তাহলে তুমিও চলো আমাদের সাথে।না খেয়ে আর না শুইয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবো।
কামিনী তখন বললো,ঠিক আছে বাবা।আমি গোলাপ সাহেবের শর্ত মেনে নিলাম।তবুও তুই আমাকে এভাবে একা করে দিস না?তোড়াকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চল।

কুশান তখন বললো এসব আমাকে বলে হবে না আম্মু।তোড়ার বাবাকে গিয়ে বলে আসো।তাদের মেয়েকে তারা কি কি শর্তে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।

ইরা মিরা লিরা হঠাৎ কামিনীর কাছে এসে বললো, আম্মু কি করছো কি?তুমি কি পাগল হয়ে গেলে?এই মেয়েটার কথামতো কি আমাদের এখন চলতে হবে?
কামিনী তখন বললো,তাছাড়া যে আর কোনো উপাই নাই।আমি আমার ছেলেকে এভাবে হারাতে পারবো না।আমার একমাত্র আদরের ছেলে সে।আমি থাকবো রাজ প্রাসাদে আর সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে?

ইরা তখন বললো তাহলে আমরা কি তোমার আদরের মেয়ে না?
মিরা তখন বললো আমাদেরকে কি তোমার সন্তান মনে হয় না?
লিরা তখন বললো,Ammu you always do Kushan Kushan, Why mom why? We are not your beloved children?

কামিনী তার মেয়েদের এমন প্রশ্ন শুনে চিৎকার করে বললো,তোরা প্লিজ থামবি এবার?আমার মাথা কিন্তু ভীষণ রকমের গরম আছে।প্লিজ আর গরম করিস না আমার মাথাটা। জামাইদের নিয়ে তোরা বাড়ি চলে যা।আমি কুশান আর ওর বউকে নিয়ে পরে আসতিছি।

ইরা, মিরা,লিরা তার মায়ের এমন কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ করলো।তারা আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।শাহিন,মাহিন আর তুহিনকে রেখেই তোড়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

কামিনী এবার গোলাপ সাহেবের কাছে এসে বললো, বিয়াই সাহেব আমার আর আমার মেয়েদের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।আমাদের তোড়ার সাথে এমন টা করা মোটেও উচিত হয় নি।এবারের মতো পাঠিয়ে দিন তোড়াকে।এখন থেকে তোড়া আমাদের বাড়িতে তার নিজের বাড়ির মতোই থাকবে।যেহেতু তোড়া কুশানের বউ আর কুশান আমাদের একমাত্র ছেলে সে হিসেবে আমাদের সংসারে তোড়ার পূর্ণ অধিকার আছে।আজ থেকে সে আমাদের বাড়িতে আমার মেয়ের মতোই থাকবে।

গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা ঠিক আছে বিয়াইন।আপনি যে আপনার ভুল বুঝতে পারছেন এটাই অনেক।আর আমাদের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন বিয়াইন।তোড়া আমাদের ও একমাত্র মেয়ে।সেজন্য ওকে নিয়ে আমাদেরও ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়।

–ওকে বিয়াই সাহেব।আসলে তোড়াও যেমন আপনার একমাত্র আদরের মেয়ে তেমনি কুশানও আমার একমাত্র আদরের ছেলে।এদের জন্য যে আমরা কত টা ভাবি এরা নিজেরাও সেটা জানে না।আমার ছেলেকে আমি বড্ড ভালোবাসি বিয়াই সাহেব। তার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।

কামিনীর এমন কথা শুনে চামেলি হেনা বেগম কে ফিসফিস করে বললো ব্যাপার কি আম্মা?কামিনী এতো সহজে কিভাবে নত হলো?এর পিছনে আবার অন্য কোনো রহস্য নাই তো?যদি ওরা তোড়ার কোনো ক্ষতি করে?
হেনা সেই কথা শুনে বললো, না,না।কিছু করতে পারবে না।আমাদের জামাই বাবাজি ঠিক আছে। ইসঃ এমন নাতি জামাই ই তো চাইছিলাম আমি।পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো বউ কে ছাড়বে না।দেখলে কিভাবে কামিনী কে হ্যান্ডেল করলো?
চামেলি তখন বললো আল্লাহ আমার মেয়েটাকে বাঁচাও আল্লাহ।এই কাল নাগিনীরা যেনো সত্যি সত্যি ভালো হয়ে যায়।

কুশান তার মায়ের কথা শুনে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি আম্মু।আমার ব্যবহারে যদি তুমি একটু কষ্ট পেয়ে থাকো প্লিজ মাফ করে দিও।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনোই কষ্ট দিতে চাই নি।

–ঠিক আছে বাবা।এখন চল বউকে নিয়ে।এই বলে কামিনী নিজেই তোড়ার হাত ধরলো।তিনি এক হাতে তোড়াকে আর অন্য হাতে কুশানকে নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।

কামিনীর এমন রুপ থেকে সবাই ভীষণ আশ্চর্য হলো।গোলাপ সাহেব খুশিতে গদগদ হলেও চামেলি বেগম খুশি হতে পারলেন না।তিনি শুধু ভাবতে লাগলেন একজন ডেঞ্জারাস মহিলা কি করে এক সেকেন্ডের মধ্যে পালটে যেতে পারে?

তোড়ার চাচী বিড়বিড় করে বললো, এতই কান্ডকারখানা ঘটালো এই তোড়া।আল্লাহই জানে আরো কত কাহিনি দেখাবে সে?
স্বর্ণা তা শুনে বললো আম্মু তুমি একটু বাজে কথা বলা বন্ধ করবে?তুমি তোড়া আপুকে সহ্য করতে কেন পারো না?তোড়া আপু তো তোমার মেয়ের মতোই। তাই না?
স্বর্ণার আম্মু সেই কথা শুনে মুখ ভেংচিয়ে বললো মেয়ের মতো!মেয়ে তো নয়।এই বলে তিনি তার রুমে চলে গেলেন।

স্বর্ণা আর সায়ক দুইজনই খুশি হলো যে তোড়া আবার তার শশুড় বাড়ি চলে গেলো।এবার তোড়া নিশ্চয় আর কোনো অঘটন ঘটাবে না।কারণ কামিনী যদি বাড়াবাড়ি না করে তাহলে তোড়াও আর অতিরিক্ত কিছু করবে না।কারণ তোড়াকে তারা ভালো ভাবেই চেনে।যে তার সাথে খারাপ আচরণ করে সেও তার সাথে খারাপ আচরণ করে।আর যে তার সাথে ভালো আচরণ করে সে তার সাথেও ভালো আচরণ করে।
?
কামিনী তোড়াকে বাড়ি নিয়ে গিয়েই তার কিছু গহনা তুলে দিলো তোড়ার হাতে।আর বাড়ির চাবিটা তোড়ার হাতে দিয়ে বললো, আজ থেকে এই চাবিটাও তোমার।

তোড়া কামিনীর এমন ব্যবহারে সত্যি আশ্চর্য হলো।সে বুঝতে পারছে না এটা কি কামিনীর অভিনয় না সে সত্যি সত্যি ভালো হয়ে গেছে?

তোড়াকে চুপচাপ থাকা দেখে কামিনী বললো,কি হলো তোড়া?অবাক হয়ে যাচ্ছো নাকি?অবাক হওয়ার কিছুই নাই।এসব কিছু করছি শুধুমাত্র আমার কুশানের জন্য।আমি ভাবতেও পারছি না কুশান তোমাকে এতো টা ভালোবাসে?তোমার জন্য সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় থাকতেও রাজি।সত্যি তুমি যাদু জানো তোড়া।এক দিনেই কিভাবে আমার ছেলেকে বশ করে ফেলাইছো?

তোড়া কামিনীর কথা শুধু শুনছে।কিন্তু সে কিছুই বলতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার ঠোঁট দুটি কেউ যেনো সুপারগ্লু দিয়ে আঁটকিয়ে দিয়েছে সেজন্য সে কথা বলতে পারছে না।
কামিনী এবার তোড়ার হাত ধরে বললো, তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার ছেলেটার শুধু যত্ন নিবে।আজ থেকে সম্পূর্ণভাবে ওকে আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম।ওর যেনো কোনো অযত্ন না হয়।আমার কুশান কি কি খেতে পছন্দ করে?কিভাবে চলাফেরা করে?কখন কোন ড্রেস পড়ে? কখন কি করে? সব রুটিন করা আছে।রুটিন অনুযায়ী আজ থেকে তুমি ওর খেয়াল রাখবে।এখন রুমে যাও।ছেলেটা আমার একা একা আছে।

তোড়া কামিনীর কথা শুনে বেকুবের মতো চলেও যাচ্ছে।কারণ তার যে কোনো বোধ শক্তিই নাই।এই কোন কামিনী কে সে দেখছে?
কামিনী হঠাৎ আবার তোড়ার হাত ধরে বললো, তোড়া!বার বার বলছি একমাত্র সন্তান আমার।ওর যেনো কোনো অবহেলা না হয়।কারণ আজ থেকে আমি আর ওকে নিয়ে মাথা ঘামাবো না।

তোড়া তখন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

তোড়া চলে যাওয়ার পর কামিনী ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।তার আজ কেনো জানি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।সে তো ভাবতেই পারে নি এরকম দিন তাকে দেখতে হবে।তার ভালোবাসার সন্তানকে এভাবে অন্য আরেকজনের হাতে তুলে দিতে হবে।কামিনী সব সহ্য করতে পারে কিন্তু কুশানের প্রতি অন্য কারো অধিকার সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।কিন্তু এটাই যে বাস্তবতা।একজন ছেলে তার মাকে যতটুকু ভালোবাসে ঠিক ততটুকু ভালোবাসা যে তার বউকেও দিতে হয়।যেসব ছেলে এই ব্যালেন্স রক্ষা করে চলতে পারে সেই হলো আসল পুরুষ।কারন মা আর বউ এর ভালোবাসা সম্পূর্ণই আলাদা।মা থাকবে মায়ের জায়গায় আর বউ থাকবে বউ এর জায়গায়।দুইজন কেই তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী সমানভাবে ভালোবাসতে হবে।শুধু মা আর বউ না।সবার ভালোবাসাই আলাদা।বাবাকে এক ভাবে ভালোবাসতে হয়,আবার বোনদের ও তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী ভালোবাসতে হয়।এইভাবে ফ্যামিলির প্রতিটা সদস্য কে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী সমানভাবে ভালোবাসলে কোনো সংসারেই আর কোনো অশান্তির সৃষ্টি হতো না।তবে এটা সবাইকে বুঝতে হবে।
?
কামিনীর দেওয়া গহনা গুলো এক এক করে পড়তে লাগলো তোড়া।এ যেনো তার কাছে এক অমূল্য ধন।কারণ তার শাশুড়ী তাকে ভালোবেসে গহনা গুলো দিয়েছে।আজ দিয়ে মনে হচ্ছে সে এ বাড়ির বউ।কুশান বিছানায় শুয়ে থেকে শুধু দেখছে।
হঠাৎ কুশান বিছানা থেকে নেমে এলো।আর তোড়াকে এমন সাজগোছ করা দেখে বললো,
মাথা থেকে কি সব ভূত বের হয়ে গেছে?না এখনো কিছু বাকি আছে?
তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে বরং গহনা গুলো খুলে রাখলো।
কুশান তা দেখে বললো আরে আরে খুলছো কেনো?পড়েই থাকো।শাশুড়ী ভালোবেসে দিয়েছে।কিছুক্ষন একটু থাক সে ভালোবাসা।
তোড়া তখন বললো,আচ্ছা কুশান! এগুলো কি আম্মুর বিয়ের গহনা?
–হ্যাঁ।
তোড়া তখন বললো তাহলে আম্মু সেগুলো আমাকে দিলো কেনো?
–তা আমি বলতে পারলাম না।তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আজ থেকে আম্মু আমার মতো তোমাকেও ভীষণ ভাবে ভালোবাসবে।
তোড়া তখন বললো কুশান আম্মু কি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসবে?
–না,মিথ্যে মিথ্যে ভালোবাসবে।এখন ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে একটু ভাবো না?
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তোমার কথা কি ভাববো?এই বলে তোড়া চলে যেতে ধরলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত টেনে ধরে তাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,এক বছর রিলেশন করেছি একটা দিন এই গোলাপি রঙের নরম ঠোঁটদুটি স্পর্শ করেও দেখি নি,আর দুই দিন হলো বিয়ে হয়েছে এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও স্বামীর অধিকার ফলায় নি।আমার জন্য কি তোমার একটুও মায়া দয়া হয় না?একবারের জন্যও কি মনে হয় না এই ছেলেটা তার বউ এর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তুমি যে বেকুব,একটা হাদারাম ছেলে এজন্য বউ এর আদর সোহাগের অপেক্ষায় বসে আছো।গাধা কোথাকার। ছাড়ো আমাকে।এই বলে তোড়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

কুশান বুঝতে পারলো না তোড়ার ভাব সাব? সে কি তাকে আদর করতে বলছে না এখনো রাগ করেই আছে?
এজন্য কুশান আবার চলে গেলো তোড়ার কাছে আর বললো, এই তোড়া!ক্লিয়ার করে বলো না?আমি তোমার মতো অতো প্যাঁচগোছ বুঝি না।
তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে মনে মনে হাসতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো একজন ছেলে মানুষ এতো টা সরল কি করে হতে পারে?সে এখন বউকে আদর করবে না বসে থাকবে সেটাও নাকি এখন তাকেই বলে দিতে হবে?

–তোড়া?কিছু বলছো না কেনো?

তোড়া এবার উঠে বসলো বিছানায়,কি বলবো?

–না মানে তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?

–না।এই বলে তোড়া আবার শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো এতো ভদ্র স্বামী দিয়ে আমি করবো টা কি?যে বউকে টাচ করার আগেও পারমিশন চায়।

কুশান এখনো বোকার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।কারণ তোড়ার যে তেজ যদি তাকে আদর করতে ধরে আর সে উলটো রাগ করে তখন কি হবে?তখন তো আবার তার রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই আজকের রাত টাও শেষ হয়ে যাবে।

তোড়া এবার আর চুপ করে না থেকে বললো,ওভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?লাইট অফ করে দিও শুয়ে পড়ো।

–তুমি না অন্ধকারে ভয় পাও।

তোড়া তখন বললো আগে পাইতাম।এখন আর পাই না।

কুশান সেই কথা শুনে লাইট অফ করে দিয়ে তোড়ার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে শুরু করবে সে?

তোড়া এবার নিজেই কুশানের পাশ হলো।ডিম লাইটের নীল আলোয় দুইজনকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তোড়া তখন বললো অত দূরে কেনো তুমি কুশান?এই কিছুক্ষন আগেই তো একেবারে প্রেম ভালোবাসা উছলে পড়তেছিলো।এখন এরকম দূরে দূরে কেনো?

–না মানে আমি একটু নার্ভাস ফিল করতেছি বাবু।কিভাবে তোমাকে লাভ করা শুরু করবো বুঝতে পারতিছি না।

তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে চিৎকার করে বললো, আরে গাধার বাচ্চা এটাও কি এখন আমাকেই বলে দিতে হবে?আমার কিন্তু এবার ভীষণ রাগ উঠতেছে কুশান।জানোই তো রেগে গেলে আমাকে কেউ কন্ট্রোল করতে পারে না।

—-Ok, ok.রাগ কইরো না কলিজা।প্রথমবার তো।ভীষণ ভয় লাগছে।

তোড়া তখন নিজেই কুশানকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো তো আমার কি দ্বিতীয় বার?এই বলে তোড়া নিজেই কুশানকে জড়িয়ে ধরলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here