#আমি_আপনিতে_আসক্ত (অন্তিম’পর্ব)
#ফারহানা_জান্নাত
–অপর পাশ থেকে কোনো কথা আসে না। কিন্তু নিঃশ্বাস এর ভাড়ি শব্দ আসে। মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করে কেও জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। আরুহি বিরক্ত হয়। এমন ছেঁচরামি করে কে!
“ছিঁচকাঁদুনে কাঁদছো কেনো?”
–আকস্মিক এমন কথায় আরুহি থতমত খেয়ে যায়। সে মোটেও ছিঁচকাঁদুনে না। তাছাড়া সে তো কান্না করতিছে না। আরুহি কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলে,
“হাত কেটে কি নেকা সাজতে আসছেন আমার কাছে? কে ভাই আপনি! আমাকে বিরক্ত করছেন কেনো? পাগল হয়ছেন বাসায় যানে?”
“না এখন ও বাসায় বলা হয়নি ‘মায়াবিনী’ তুমি একটু কষ্ট করে বলে দিবা প্লিজ? আমি তোমার হবু শাশুড়ির নাম্বার দিচ্ছি। একটু কষ্ট করে বলে দেও প্লিজ।”
“নাম্বার দেন কি মনে করেন আমাকে? বলতে পারবো না নাকি হ্যা! দেন ফাস্ট নাম্বার দেন।”
–কাব্য নামের ছেলেটা আরুহি’কে নাম্বার দেয়। আরুহি রাগের মাথায় ঐ নাম্বার এ ফোন করে চিল্লিয়ে বলে।
“দেখেন আন্টি আপনার ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছে। আপনার ছেলে পাগল হয়ছে, তাড়াতাড়ি উনাকে পাবনা রেখে আসেন প্লিজ। আর দেখছেন আপনার ছেলে হাত কেটে বসে আছে। গিয়ে আর একটু হাতটা কেটে দেন।”
“আমি তোমার আন্টি না মা, আমি তোমার হবু শশুর।”
–আরুহি থতমত খেয়ে যায়। সে কোন পাগল দের পাল্লায় পরছে? ছেলের নামে কমপ্লেন করছে, আর উনারা আবার সাধু সেজে এসে বলছে আমি তোমার শশুর।
“মা কিছু মনে করে না। আমার ছেলেটা একটু পাগল টাইপ এর। একটু সামলিয়ে রাখো কেমন? ধরো তোমার শাশুড়ির সাথে কথা বলো।”
“মা কেমন আছো? তুমি বুঝি দেখতে অনেক মিষ্টি তাই না। কারণ আমার বাঁদর ছেলেটা তো সহজে কাউকে পছন্দ করতে চায় না। তোমাকে পছন্দ করছে তার মানে তুমি খুব মিষ্টি দেখতে।”
“উফ কোন পাগলের পরিবারের পাল্লায় পড়লাম? দেখেন আন্টি আমি দেখতে মোটে ও মিষ্টি না। তার থেকে বড় কথা আমি অনেক খারাপ মেয়ে। আমার জামাই থাকতে ও আমি ছেলেদের সাথে কথা বলি। আমার ২টা বাচ্চা আছে রাখি কেমন!?”
–আরুহি ফোন কেটে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে। আর ভাবে কোন পাগল দের পাল্লায় পড়ছে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। আরুহি ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। এই দিকে কাব্য ফোন করে যায় কিন্তু কোনো রেসপন্স নাই।
“এই তোরে আমরা আদর করে বাঁদর বানাইছি তাই বলে হাত কেটে তুই কাউকে ব্লাকমেইল করবি!”
“বাবাই কিছু বলো না প্লিজ। তোমাদের বউ’মা ফোন ধরছিলো না সে জন্য একটু এমন করতেই হয়। পিক দেওয়া মাত্র কল ব্যাক করছিলো।”
“তাই বলে তুই এমন পাগলামি করবি কাব্য? বাপে মাথায় তুলে রাখছে আর কি হবে।”
“উফ তোমরা ঝগড়া করো আর আমার হাত দিয়ে রক্ত ঝরুক তাই না?”
–কাব্যের মা কাব্যের হাতটা সুন্দর করে বেন্ডেজ করে দেয়। তারপর তারা ঘুমাতে যায়। সকালে- আরুহি নিজেকে পরিপাটি করে আশার সাথে ভার্সিটিতে যায়। দরকারি নোটস নিয়ে সবাই মিলে বসে বসে গল্প করে।
“আরহাম তোর হাতে বেন্ডেজ কেনো!?”
–আরহাম নিজের হাত লুকানোর চেষ্টা করে বার্থ হয়। আশা ওর হাতটা সামনে টেনে নেয়। দেখে অনেকটা জায়গা জুড়ে বেন্ডেজ করা।
“কি হয়ছে আরহাম? কিভাবে কাটছিস!”
“আরে তেমন কিছু না। পেত্নি মাথায় ভর করছিলো সে জন্য কাটছি।”
“হোয়াট!!”
“আরে না, আমার ছোট বোন আছে ও রাগ করে কামড় দিসে সে জন্য আর কি। খারাপ দেখাচ্ছে বেন্ডেজ করছি।”
“ওহ, শোন তোদের একটা কাহিনি বলি।”
–আরুহি রাতের কাহিনি সব খুলে বলে। সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। তারপর দেখে রাহুলের ক্লাস সময়, সে জন্য ক্লাসে যায় সবাই। যাওয়ার সময় আরহাম লক্ষ্য করে আরুহি বসে আছে। আরহাম ও না গিয়ে আরুহির পাশে বসে।
“কিরে ক্লাস করবি না? কাল তো সব শুনলাম আমরা। থাক এসব নিয়ে ভাবিস না, যা হবার হয়ছে চল ক্লাস করি। স্যারের ক্লাস ভালো মিস করলে লস হবে।”
“আমি যাবো না আরহাম তুই যা। আমি এই সময় টা একটু ল্যাব এ কাজ করবো। একটা মেডিসিন এর উপর কাজ করছি আমি।”
“আমি তোকে হেল্প করবো? চল এক সাথে ল্যাব এ যাই।”
“আমার জন্য ক্লাস মিস করবি?”
“সমস্যা নেই চল”
–আরুহি আর আরহাম ল্যাব এ গিয়ে কাজ করতে থাকে। রাহুল পুরো ক্লাস এ একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর ক্লাস শুরু করে। ক্লাস, ল্যাব, কাব্য ছেলেটার সাথে ঝগড়া, এক্সাম সব মিলিয়ে আরো ৬টা মাস কেটে যায়। আরুহি ৩য় বর্ষে এবার। সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার প্লেন করে। আর ভার্সিটিতে আরহামের সাথে আরুহির আরো ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। আগে শুধু ফেন্ড ছিলো কিন্তু এখন দু’জন অনেকটা বেস্টফেন্ড বললে ভুল হবে না। আশা আজ আরুহি কে না নিয়েই ভার্সিটিতে যায়। আরুহি এসে সবাই কে খোঁজে কিন্তু কোথাও খুঁজে পায় না। তখন আশা মেসেজ করে-
“ছাঁদে আয়, আমাদের ল্যাব যে বিল্ডিং এ, সেই বিল্ডিং এর ছাঁদে।”
–আরুহি আশার কথা অনুযায়ী ছাঁদে যায়। দরজায় যাওয়ার পর আরহাম এসে চোখটা বেঁধে দেয়।
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আমাদের কলিজা। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। জীবনে অনেক সুখি হো। সব কষ্ট মিলিয়ে দি ঐ দূর আকাশে। হাসি খুশি থাক সারাজীবন। এগিয়ে যা নিজ লক্ষ্যে।”
–আরুহি অবাক হয়ে যায়। তার বার্থডে সে কখন ও পালন করে না। সে জন্য নিজে ভুলেই গেছিলো বার্থডে কথা। তবে হুট করে আজকের তারিখ দেখে তার মনে হয়। আজ তার আর রাহুল এর বিবাহ বার্ষিকী, এক সাথে দুইটাই। আরুহি সবার সাথে কেকটা কেটে কিছুক্ষণ আনন্দ করে। আরুহি সবাইকে নিচে যেতে বলে।
“তোরা যা আমি ৫ মিনিট এর মধ্যে আসছি। আর আমি এই ক্লাস করবো না জানিস তো৷ আমি ল্যাব এ যাবো।”
–সবাই চলে গেলে আরুহি ফোন বের করে নিজের ওয়ালপেপার এ তাকায়। ফোনটা বুকে জরিয়ে কান্না করে দেয়। কাঁদে না সে, ৬ মাস পর রাহুলের জন্য আজ প্রথম কান্না করলো। তখন আরুহির ফোনে মেসেজ আসে। মেসেজ ওপের করে চোখের পানি মুছে, মেসেজটা পড়ে।
”মায়াবিনী” কেঁদো না তুমি। তোমার চোখের পানির মূল্য আছে, কার জন্য চোখের পানি ঝরাচ্ছো তুমি? আজ তোমার বার্থডে আনন্দ করো। মায়াবিনী তুমি কি আমার হবে না?”
“দেখা দেন। কে আপনি? আড়ালে কেনো থাকছেন।”
“দেখা দিলে আমার হবে বলো?”
“আমি আপনাকে দেখতে চাই”
“যদি আমার হতে চাও তাহলে দেখা দিবো। কারণ কি যানো?”
“কিহ!”
“তুমি আমাকে এখন ভালোবাসো না। আরহাম এর সাথে তুমি চলাফেরা বেশি করতিছো। আচ্ছা তুমি কি কোনো ভাবে আরহাম কে ভালোবাসো?”
“আরহাম আমার ফেন্ড আমি ওকে ভালোবাসি না। আমি বিবাহিত আপনাকে বলছি।”
“তুমি ডিভোর্সি”
“মা-মা-মানে আপনি সব জানেন।”
“আমি সব জেনে তোমাকে ভালোবাসি। আচ্ছা তুমি কি কখন ও আর বিয়ে করবে না?”
“ভালোবাসা সস্তা না কাব্য। আপনি যেমন আমাকে ভালোবাসেন, আমি ঠিক তার থেকে দিগুণ আমার জামাই কে ভালোবাসি। আমার প্রথম ভালোবাসা উনি।”
“আমি তোমার চোখে তার জন্য ৬ মাসে একটা বার ও কষ্ট দেখি নাই।”
“কষ্ট দেখিয়ে কি লাভ? তাতে কি উনি আমার কাছে ফিরে আসবে?”
“আরহাম ছেলেটা ও তোমাকে ভালোবাসে।”
“হোয়াট!”
“আমি সত্যি বলতেছি।
” আমাদের বন্ধুত্ত্ব নষ্ট করতে চান?”
“রাখি”
–কাব্য ফোন কেটে দেয়। আরুহি ফোনটা ছুঁড়ে মারে। রেগে ফোন না নিয়েই নিচে ল্যাবে যায়। গিয়ে দেখে আরহাম আগে থেকেই বসে আছে। আরুহি ওর সামনে গিয়ে রেগে বলে-
“আরহাম সবাই তো ক্লাস করে তুই ক্লাস করিস না কেনো?”
“তুই একা থাকিস সে জন্য তোর সাথে আমি ও থাকি।”
“তোর মনে হয় না এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে? তুই কাল থেকে ক্লাস করবি।”
“তুই কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছিস?”
“আমি রাহুল কে এখন ও ডিভোর্স দেই নি। রাহুল সই করছে বাট আমি সই করি নাই। আমি উনাকে বড্ড ভালোবাসি। রাহুল ছাড়া আমার লাইফ এ আর কখন ও কেও আসবে না। আমি নিজেকে শেষ করে দিবো, তবুও উনাকে ছাড়া আর কারো হবো না।”
–আরুহি রেগে কথা গুলো বলে ল্যাব থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আরহাম দরজার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। দরজার রাহুল স্যার দাঁড়িয়ে আছে। আরুহি যেতে গেলে রাহুল এর সাথে ধাক্কা খায়।
“সরি”
“ইট’স ওকে। আরহাম বলে আসলো আপনারা নাকি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত। বারবার টেস্ট করার পর ও নাকি হচ্ছে না। সে জন্য আমি দেখতে আসলাম কি সমস্যা।”
“আমি তো জয় স্যার কে আসার কথা বলছিলাম আপনাকে না।”
“ভিতরে যান।”
–রাহুল এর কথায় আরুহি কিছু কেমিক্যাল রাখছে সেখানে গিয়ে দাড়ায়। আরহাম সেখান থেকে চলে যায়, রাহুল সেটা দেখে আরুহি কে বলে।
“আজ একটু আমাদের বাসায় যেও তো। মাহি’ অসুস্থ তোমার জন্য কান্না করছে।”
–রাহুল সংকোচ নিয়েই কথাটা বলে। কারণ ৬টা মাস হচ্ছে একটা বার ও কেও কারো সাথে কথা বলে নাই। আর আরুহি তো সামনে ও আসে নি কখন ও। আরুহি সব সময় পালিয়ে পালিয়ে থাকতো। রাহুল আরুহিকে দেখে, মেয়েটা শুঁকিয়ে গেছে আগের থেকে।
“আমি কেনো যাবো স্যার? মাহি’ আমার কে হয়!!”
–আরুহি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে। রাহুল সেই দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“তোমাকে যেটা বলছি করবা। আর না গেলে যাবা না সেটা তোমার ব্যাপার। খুব তো আমার জন্য কান্না করতে। এখন!?”
“এখন কি হ্যা?”
“আরহাম ছেলেটার সাথে তো সব সময় লেগে থাকো। কখনো কখনো হাত ধরে ঘোরো, বাপরে আগে তো নিজস্ব গাড়িয়ে আসতে। এখন আরহাম এর বাইকে তোমাকে বেশি দেখা যায়। এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলো? আসলে তোমার মতো মেয়েরা এমনি। একজনের থেকে ভালোবাসা না পেলে অন্য কারো কাছে দৌড় দেয়। অপেক্ষা করে না।”
“মুখ সামলে কথা বলুন রাহুল। আমি আপনার থেকে শুনতে যাবো না, আমাকে কি করতে হবে আর, কি করতে হবে না।”
“শোনবা কেনো? এখন নতুন নতুন প্রেম করতিছো যে। এমনি এমনি ডিভোর্স দিছি নাকি? মাহি’ তোমার জন্য কতো কান্না করে। কই একটা বার তো নিজে খোঁজ নেও নি। ৬টা মাস মা হয়ে উঠার নাটক করছিলা। আসলে কি জানো? সৎ মা কখন ও মা হয়ে উঠতে পারে না।”
“রাহুল”
–আরুহি রাগে মাথার চুল খামচে ধরে চিল্লিয়ে উঠে। রাহুল সেই দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। তার অযথা আরুহিকে আরহাম এর পাশে দেখলে রাগ লাগে। সে জন্য আজ সুযোগ পেয়ে কথা শুনাতে ছাড়ে না। ল্যাবে এই সময় কেও নেই সে জন্য রাহুল সুযোগ পেয়ে যায়।
“আসলে কি জানেন? কুকুরের পেটে কখনো ঘি সয় না।”
“কি বলতে চাচ্ছো?”
“কি আবার! কিছু না। আপনি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। আবার আপনি নিজে নিয়ে যেতে চান। ব্যাপার কি?”
“সত্যি বলি?”
“বলেন!”
“মাহি অনেক অসুস্থ, দু’দিন হসপিটালে ছিলো। ফিহা’র বাচ্চা হয়ছে, কাকে সামলাবে? আর মা…”
“হ্যা! মা তো আছে। আমি আর ও বাড়ি যেতে চাই না। আমাদের সাথে আপনার আর কোনো সম্পর্ক নাই যানেন তো। আপনি নিজে সব সম্পর্ক শেষ করছেন।”
“মা মারা গেছে দু’মাস আগে আরুহি।”
–আরুহি এতোক্ষণ রেগে থাকলেও এখন চুপসে যায়। আবার পরক্ষণেই কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলে,
“এই কথাটা কি আগে বলতে পারতেন না! একটা বার বলার প্রয়োজন মনে হয় নি আপনার?”
“তোমাকে ফোন করছিলাম। তুমি তো ফোন রিসিভ করো নাই। আর সে জন্য বলা হয়নি।”
“ভালো করছেন, মাহি বাসায় থাকে, ওকে সামলায় কে?”
“ফিহা দেখে, এখন তো কিছু করার নাই।”
“এখন আমাকে মনে পড়ছে?”
“তুমি মাইশার বোন, সেই হিসাবে তোমার একটা দ্বায়িত্ব আছে।”
“বাহ”
“আজকে একবার যেও প্লিজ। মাহি সুস্থ হলে চলে এসো।”
“দেখা যাক”
–রাহুল ও আর কিছু বলে না, ল্যাবে কিছুক্ষণ আরুহিকে সাহায্য করে। তারপর ক্লাস নিতে চলে যায়। ক্লাস শেষে আরুহি বাসায় যায়। মা-বাবা কেউ এখন বাসায় নেই। মাহির’কে সাথে নেয়, আর মা-বাবাকে ও ফোনে জানিয়ে দেয় ব্যাপার টা।
“মামুনি”
–মাহি উপুর হয়ে শুয়ে আছে। আরুহিকে দেখে উঠতে চায়, আরুহি বিছানায় বসে মাহি”কে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
“এই তো মামুনি চলে আসছে। আমার মাহি সোনা এখন সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি কি কিছু খাবা মামুনি?”
“কিছু খাওয়াতে পারলে খাওয়াও, কিছু মুখে দেয় নি সকাল থেকে।”
“কেনো! মেয়ে একা মানুষ করবেন। তো পাড়ছেন না কেনো?”
“কথা শুনচ্ছো সুযোগ পেয়ে?”
“যা ভাবেন।”
–রাহুল বিরক্ত নিয়ে রুম ছেড়ে বাহিরে যায়। আরুহি মাহির’কে বলে মাহি’র জন্য কিছু নিয়ে আসতে। মাহির রাহুলের কাছে গিয়ে বললে, রাহুল প্লেটে খাবার উঠিয়ে দেয়। আরুহি অনেক কষ্ট মাহি’কে খাইয়ে দেয়। রাত লেগে আসছে, মাহি আরুহির বুকেই ঘুমিয়ে যায়। রাত ৯টার সময় আরুহির মা-বাবা একবার এসে দেখা করে যায়। সাথে মাহির বাসায় যায়, আরুহি থেকে যায়।
“আসবো?”
“আপনার রুম আপনি আসতেই পারেন।”
“তবু ও, মাহি কি ঘুমিয়ে গেছে?”
“হ্যা”
“তাহলে তুমি অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি মাহি’র পাশে ঘুমিয়ে পড়ছি।”
“এই একদম না, বের হোন রুম থেকে। আমি এখানে থাকবো, আপনি অন্যরুমে যান।”
“আমি মাহি’কে ছাড়া থাকবো?”
–আরুহি মাথা নাড়ায়, রাহুল যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সে মাহি’কে একলা রাখতে ভয় পায়, আর রাতে সাথে থাকবে না! এটা ভাবতেই তার বুক লাফিয়ে উঠে। তড়িঘড়ি বলে,
“না না আমি মাহি’কে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি মাহি’কে মাঝখানে রাখো, আমি এই পাশে শুয়ে পড়বো।”
“একটা মেয়ের সাথে একই বেডে থাকবেন?”
“তোমার আপু যে বিশ্বাস করতো, সেটা কখনো ভঙ্গ করবো না। শুয়ে পড়ো, আলাদা নজর তোমার উপর আমার নেই।”
“একটা কথা বলি?”
“বলো,”
“একটা বিয়ে করেন, আমাকে বিয়ে করতে হবে না। ভালো একটা মেয়ে দেখেন, আমি মাইশা আপুনির বোন এতে আপনার সমস্যা বেশি। কিন্তু মাহি? ওর পাশে কারো থাকা দরকার। আপনি সারাদিন বাহিরে থাকেন, ওকে দেখার জন্য কাউকে চাই।”
“তুমি থেকে যাও, কারো প্রতি আমার সেই বিশ্বাস নাই। সৎ মা এসে অধিকার চাইবে যা আমার দ্বারা অসম্ভব।”
“আমাকে তো ডিভোর্স দিছেন।”
“আমি তো পেপারে সই করার সুযোগ পাইনি, তুমি পেপার নিয়ে চলে গেছো। আর তুমি নাকি সই করো নাই?”
“হলেই হলো”
“চাইলে মাহি’র মামুনি হয়ে থেকে যেতে পারো সারাজীবন। তবে আমার ভালোবাসা পাওয়ার আশা করতে পারবে না। এটুকু কথা দিতে পারবো, তোমাকে অপমান করবো না কখনো।”
“আচ্ছা থেকে না হয় যাই।”
–আরুহি হেঁসে অন্য পাশে শুয়ে পড়ে। দুূ’দিনে মাহি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়। এখন দৌড়ে খেলা করতে পারছে। সারাক্ষণ আরুহির সাথে মিষ্টি ঝগড়ায় ব্যাস্হ সে। আরুহি গালে হাত দিয়ে মাহি’কে বলে,
“এই পিচ্চি, তুই এতো ঝগড়ুটে কেনো! আমার আপুনি তো ঝগড়ুটে ছিলো না। তুই বাপের মতো হয়ছিস নাকি রে!”
“আমি ও ঝগড়া করি না, মেয়েকে কি শিক্ষা দিচ্ছো?”
“আপনার মেয়ে আমাকে বদমাইশ বলছে।”
–রাহুল হেঁসে দেয়, এই টুকু মেয়ে আরুহির সাথে সারাক্ষণ লেগে থাকে। রাত লেগে আসছে, কিন্তু না ঘুমিয়ে দু’জন ঝগড়া করতে ব্যাস্হ। রাহুল পাত্তা দেয় না, এদের জন্য সে ঘুম নষ্ট করবে কেনো? বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে। আরুহি মাহি’কে কোলে বসিয়ে বলে,
“এই তোর বাবাই এমন বদমাইশ কেনো?”
“বাবাই পঁচা তাই”
“ঠিক বলছিস, তোর বাবাই পঁচা। শোন কালকে বাবাই যখন বাহিরে যাবে, তখন বাবাই কে বলবি যে, তোর একটা ভাইয়া লাগবে আচ্ছা?”
“আচ্ছা”
–দুজনে শুয়ে পড়ে, রাহুল এবার চোখ মেলে তাকায়। কি সাংঘাতিক মেয়ে! মাহি’কে উলটা পালটা জিনিস শিখিয়ে দেয়। অপর দিকে আরহাম কাব্য, দেবদাস হয়ে বসে আছে৷ কাব্য সেজে আরুহির সাথে ঝগড়া করতে করতে প্রেমে পড়ছে ও। যখন শুনছে রাহুল স্যার আরুহিকে ফিরিয়ে নিছে, তখন থেকে মন ভালো নেই তার। বুকটা হাহাকার করছে। আজ খুব ভোরে আরুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। মনটা কু ডাকছে তার, কিছু যেনো না হয়। ভয় পেয়ে যায়, রাহুলের দিকে একবার তাকায়। খুব গোপনে কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। বিরবির করে বলে উঠে,
“#আমি_আপনিতে_আসক্ত। আপনি আমাকে ভালো না বাসলে ও আমি আপনাকে ভালোবাসি। হোক না ভুল মানুষ, কিন্তু ভালোবাসা তো ভুল না। আপনাকে ভেবে কেটে যাক আমার সারাজীবন। আপনাকে ভালোবেসে কেটে দিবো প্রতিটা প্রহর।”
–আরুহি উঠে মাইশার কবরস্থানে যায়। এখানে আসার পর থেকে একবার ও আসে নাই। কবরস্থান দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। আজানের শব্দ কানে পৌঁছে যায় তার। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে অযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে নেয়। নামাজে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে সে। চারদিকে ভালোভাবে চোখ মেলায়, একটা কোরআন শরিফ দেখতে পেয়ে সেটা নিয়ে, সুরা রাহমান, ইয়াসিন, হাসর, আরো কিছু সুরা তেলওয়াত করে। কুরআন পড়া শেষে বুকের সাথে কুরআন জড়িয়ে নিয়ে আবারো কেঁদে উঠে। রাহুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়, আরুহিকে কান্না করতে দেখে বিছারা ছেড়ে উঠে। উঠে ওয়াশরুম থেকে অযু করে আসে, আজকে আরুহি তাকে ডাকে নাই! এতোটা সময় পেরিয়ে গেছে। পিঠে হাত পড়তে আরুহি কান্না কমিয়ে দেয়। রাহুল তার পাশে বসে বলে,
“কান্না করছো কেনো?”
“মাইশা আপুনি কেনো আমাদের ছেড়ে গেলো রাহুল? আপুনি বেইমান।”
“এসব ভেবো না, কখনো ভাবি নাই। আমার জীবনের দাঁড় এভাবে ঘুরে যাবে।”
–আরুহি কুরআন রেখে রাহুলকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। রাহুলের মন কিছুটা নরম হয়, হালকা ভাবে সে ও জড়িয়ে নেয় আরুহি’কে। আরুহি চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,
•আমার প্রতিটা প্রহর আপনাকে ভেবে কাটিয়ে দেই। আমার প্রতিটা নিশ্বাস আপনাকে মনে পড়ার সাক্ষী। আকাশের তারা গুলো জানে, কতোটা আপনাকে ভাবি আমি।•
•সমাপ্ত•
[বিদ্র: আমি গল্পটা আরো ১.৫/২ মাস আগে লিখে রাখছিলাম। সে জন্য আগের মতই বানান ভুল থাকতে পারে। পরবর্তী যে গল্প দিবো, আশা করি আপনারা ভুলটা ধরিয়ে দিবেন। গল্পের কোন জায়গায় কোনটা বসালে ভালো হবে ইত্যাদি। তাহলে নিজের ভুলটা ঠিক করে নিতে পারবো।]