আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ৯

0
2753

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:৯
মাইয়া তোর কপাল ম্যাল্যা ভ্যালা আমার নাতীর মতো ভালা জামাই পাইছোস।ওমন সোনার টুকরা জামাইরে মানুষ মাথাই তুইলা রাখে আর তুই তো তারে পায়ে ঠেইলা দিতাছোস??
অন্তী দীদুনের কথার উওর দিতে গিয়েও থেমে যায়।এইসব কথা বলতে তার রুচিতে বাঁধছে।
অন্তী নিঃশব্দে সেখান থেকে উঠে যেতে নিলে অন্তীর মা এসে অন্তীকে আবার সেখানে বসিয়ে দেয়।
তারও একটাই কথা –
সংসারে এমন অনেক কিছুই ঘটে।স্বামীর সাথে টুকটাক মনোমালিন্য হবে এটাও স্বাভাবিক তাই বলে এভাবে বাপের বাড়ি চলে আসতে হয় নাকি।মেয়েদের এমন অনেক কিছুই সহ্য করতে।সব কিছু সহ্য করে মানিয়ে নিতে
অন্তীর মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে অন্তীর দাদী আবার বলতে শুরু করে,, আল্লাহ ম্যায়্যা মানুষ গো অনেক ক্ষমতা দিছে সহ্য করার ক্ষমতা।এইসব টুকটাক ঝগড়া ঝাটি সহ্য করতে হয়।হাজার হোক সোয়ামী তো
হ্যা স্বামী তো!সে আমার স্বামী কিন্তু শুধু স্বামী বলেই সে যা খুশি করবে আর আমি মেনে নেবো এটা ভাবা ভুল।সে যেমন একজন মানুষ আমিও মানুষ।যা তার সহ্য করার ক্ষমতা নেই তা যে আমার ও সহ্যের বাহিরে
অন্তী আর কথা বাড়ায় না সেখান থেকে উঠে যায়।
এদিকে অন্তীর মা দাদী দুজনেই অবাক।যে অন্তী সাত চড়ে রা কাটে না সেই মেয়ের মুখে এতো কথা!তা ও আবার তূর্যর মতো ছেলেকে নিয়ে।এদিকে তমশা বেগম ও অন্তীর মাকে ফোন দিয়ে যা নয় তাই বলেছে।
সবচেয়ে বড় কথা ওনি অন্তীর মাকে একে বারে সাফ সাফ করে জানিয়ে দিয়েছে,,
যে মেয়ে গুরুজনদের মানে না সামান্য কি হয়েছে না হয়েছে বলে বাড়ি ছেড়েছে সে মেয়েকে ওনি আর ঘরে তুলবেন না।বউ মানুষরা নাকি ঘরের বাহুরে পা রাখলেই তাদের নাকি আর কোনো জাত থাকে না
সেদিন সারা দিন তূর্যর দাদীর কথার শেষ নেই।
কতো কি করে ওমন ছেলের সাথে এ মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করলো সেই মেয়ে নাকি এক মাস ও ছেলের সাথে সংসার করতে পারলো না।
আসলেই বোধয় এই মেয়েরই চরিত্রর দোষ আছে।
নাহলে যে ছেলে অন্তী বলে পাগল সে ছেলেই তার চরিত্রর দোষ দিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়
কথাগুলো অন্তীর হৃদয়ে বিঁধলে ও অন্তী মুখে রা কাটে না। এভাবে নানা কথার মাঝে কেটে যায় একটা সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে তূর্যর সাথে একবারও অন্তীর যোগাযোগ হয় নি।তবে নানুমুনী আর মামীর সাথে তার দিব্যি কথা হচ্ছে।
আজ সকালেই তিয়াশ হাজির।তিয়াশ এসেই অন্তীকে তৈরী হতে বলে।কোনো কারণ ছাড়াই তিয়াশের এমন আবদারে সবাই অবাক।প্রথমে সবাই ভেবেছিলো তিয়াশ হয়তো অন্তীকে নিতে এসেছে কিন্তু তিয়াশ সবাইকে অবাক করে দিয়ে অন্তীকে কলেজে ইউনিফর্ম পড়ে তৈরী হতে বলে।
অন্তীও কোনো প্রশ্ন না করেই তৈরী হয়ে যায়। অন্তী জানে তার তিয়াশ ভাইয়া যা করবে তাতে তারই ভালোই হবে।
তিয়াশ অন্তীকে নিয়ে সোজা কলেজ চলে যায়।অন্তীকে ক্লাসে ঢুকিয়ে দিয়ে অফিস রুমে চলে যায়।অন্তী গত কয়েক মাসের বেতন বাকি সাথে রেজিষ্ট্রেশন ফি সহ কলেজের সকল ফি পরিশোধ করে দিয়ে রওনা হয় নিজের কলেজের উদ্দেশ্যে।
অনেক দিন পর কলেজ বন্ধুবান্দব পড়াশোনা সব মিলিয়ে অন্তীর সারা দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে।তবে তূর্য সাথে অন্তীর বিয়ে নিয়ে সব বন্ধুদের মাঝে একটা উওেজনা ছিলো তবে সেটা সাময়িক।
অন্তী ক্লাস শেষ করে বাড়ি এসেই আগে বাবার কাছে চলে যায়।এটা অন্তীর বরাবরই অভ্যেস।আজও অন্তী বাবার ঘরে এসে একরকম চমকে যায়।ঘরটা খালি।বিছানাও ফাকা পরে আছে বাবা নেই।
অন্তী একরমক ভয় পেয়েই দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসে।মা তখন রান্না ঘরে রান্না করছিলো।পাশেই দাদী মাকে হেল্প করছিলো।অন্তীকে দেখে অন্তীর দাদী মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
বিয়ে হওয়া মে মানুষের আবার কিসের এতো নেখা পড়া! আমরা তো এতো নেকাপড়া করিনাই তাই বলে আমাগো কি বিয়া হয় নাই আমরা কি সংসার করি নাই নাকি বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করি নাই?
অন্তী দাদীর কথায় কান দেয় না।বরাবরই অন্তীর দাদীর এই বিষয়গুলো নিয়ে বড্ড সমস্যা ছিলো।
অন্তী বেশ উদ্বীগ্ন কন্ঠে মাকে প্রশ্ন করে,, -আম্মু ঘরে তো বাবা নাই বাব কই গেছে? অন্তীর মা অন্তীকে একটা ধমক দেয়।
-বলছি না কলেজ থেকে এসে জামা কাপড় না ছেড়ে বাবার ঘরে যাবি না,,
-কিন্তু আম্মু বাবা!!
-ওনি কি একা কোথাও যেতে পাড়ে সব জায়গায় তো ধরে নিয়ে যেতে হয়।। এবার অন্তী চুপ হয়ে যায়,,
পাশ থেকে অন্তীর দাদী বলে উঠে…. -পোলাখান কপাল গুনে জামাই পাইছে।ওমন সোনার মতো জামাই।এক বার ফোন করা মাত্রই সব কাজ ফেলে শ্বশুর আব্বাকে দেখার জন্য ছুইটা আইছে।
অন্তীর দাদী কথার মাথা মুন্ডু না বুঝে মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
এবার অন্তীর মা বলতে শুরু করে,,
-তুই বেরিয়ে যাবার পরপরই হটাৎ করেই তোর বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।কোনো কূলকিনারা না পেয়ে তোর দাদী তূর্য বাবাকে ফোন করে সাথে সাথে ও ছুটে আসে আর তোর বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
এবার আর অন্তী কিছুই বলে না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যায়।প্রায় দুপুর তূর্যর গাড়ি অন্তীদের বাসার সামনে থামে।অন্তী ছুট লাগায় দরজা খোলার উদ্দেশ্যে।
দরজা নক করার আগেই অন্তী দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার সাথে সাথেই অবাক হয়ে যায়।তূর্য আর তিয়াশ দুজনই অন্তীর বাবাকে ধরে রেখেছে আর ঠিক তূর্যর পাশেই জিনিয়া দাড়িয়ে আছে।
অন্তী একবার তূর্যর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।অন্তী দরজা সামনে থেকে সরে দাড়াতেই দুই ভাই মিলে মামাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয়। এরই মধ্যে অন্তীর দাদী,মা আর বোনেরা বেরিয়ে এসেছে।তূর্য তিয়াশ আর জিনিয়াকে বেশ আপ্যায়ন করতে শুরু করে দেয় সবাই।
কিন্তু অন্তী সেই তখন থেকে বাবার মাথার কাছেই বসে আছে।অন্তীর দাদী অন্তীকে বেশ কয়েকবার ডাকে তূর্যর কাছে বসার জন্য কিন্তু অন্তী দাদীর কথায় কোনো জবাব দেয় না উল্টো সবার মুখের সামনে দুম করে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
সব শেষে বাড়ি যাবার সময় তূর্যর দাদী তূর্যকে চেপে ধরে অন্তীকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য কিন্তু তূর্যর একটাই কথা ওর যেদিন মনে হবে ওর আমার কাছে আসা উচিত সেদিন নিজে থেকেই ফিরে আসবে
তূর্য এইটুকু বলেই জিনিয়াকে নিয়ে বিরিয়ে যায়। তিয়াশ বর্তমানে নিরব দর্শক মাত্র।
এরই মাঝে অন্তীর ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়ে যায়।পরীক্ষার আগের দিন অন্তী একবার ওই বাড়িতে গিয়েছিলো তিয়ায়ের সাথে।
যেকোনো পরীক্ষার আগেই ফুপ্পি নিজে এসে অন্তীর সাথে দেখা করে যেতো।আবার পরীক্ষার দিন নফল রোজা ও রাখতো।তবে এখন এর কোনোটাই হবে না এটা অন্তী জানে তাতে কি অন্তী তো একবার যেতেই পারে তার ফুপ্পির কাছে।শুধু ফুপ্পির কাছে ফুপ্পি শ্বাশুড়ির কাছে না।
অন্তীকে তিয়াশ ও বাড়িতে নিয়ে আসে।অন্তী বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখে প্রভা ভাবি আর জিনিয়া ড্রইং রুমে বসে আছে। অন্তীকে দেখেই দুজনেরই মুখ কালো হয়ে যায়।প্রভা তো একরকম তেড়েই আসে…
-তুমি না বেশ দেমাগ দেখিয়ে চলে গিয়েছিলে আবার নাকি মায়ের মুখের উপর বলেছো আর কখনো ফিরবে না তাহলে!!কি তিয়াশ তোমার আদরের বোন কে আবার ফিরিয়ে আনলে কেন?
তিয়াশ কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়।আপাতোতো সে চাইছে না অন্তীকে কোনো মেন্টাল প্রেশার দিতে।
-বড় ভাবি তোমার সাথে কোনো কথাই আমি বলতে চাইছি না।দয়া করে বলো আম্মু কই??
প্রভা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিনিয়া বলে উঠে,, -তিয়াশ তুমি না কি বেশ ভদ্র তোমার ভাইয়ের কাছে শুনেছি তা বড় ভাবির সাথে কিভাবে কথা বলছো তুমি?
-আমি কি তা আপনার না দেখলেও হবে আপনি যাকে দেখার জন্য এখানে আসেছেন তাকেই দেখুন!! তিয়াশ আরো কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়।অন্তীর সামনে আর কিছু না বলাই ভালো।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তিয়াশ অন্তীকে নিয়ে যায় মায়ের কাছে। তমসা বেগম তখন রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি বান্নাচ্ছিলো প্রভা আর জিনিয়ার জন্য।হটাৎ অন্তীকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যায়।
-অন্তী তুই।শেষ মেষ ফিরে এলি তাহলে। -হুহ এসেছি তবে ফিরে আসি নি আমি এসেছি আমার ফুপ্পি আম্মুর কাছে। তমসা বেগম অন্তীর কথার উওরে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।
-ফুপ্পি কাল থেকে আমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।প্রত্যেক বার পরীক্ষার আগের দিন তুমি আমাকে দোয়া পড়ে দিতে।এবার তো তুমি আসলে না তাই আমিই চলে এলাম।
কথাগুলো বলে অন্তী ফুপ্পির কাছে চলে যায়।ফুপ্পিকে সালাম দেয়।তমসা বেগম না চাইতেও মনে মনে দোয়া পড়ে অন্তীর মাথায় হাত রেখে ফু দিয়ে দেয়।
অন্তীর চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছে।
অন্তী এবার তমসা বেগমকে চুলার পায় থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজে কফির পানি বসিয়ে দেয়..
-ফুপ্পি আমার আম্মু আমাকে ভালোই কফি বানাতে শিখিয়ে দিয়েছে।আমি তোমাদের কফি বানিয়ে দিয়ে আসছি তুমি যাও… তমসা বেগম আর কোনো কথা না বারিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।অন্তী সবার জন্য কফি বানিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে যার যার হাতে কফির মগটা তুলে দেয়।
টেবিলে পড়ে রয়েছে শুধু তূর্যর কফিটা।
অন্তী এবার ব্যাগ পত্র নিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে উল্টো পথে বাড়ির সদর দরজার দিকে হাটা ধরে,, পেছন থেকে জিনিয়া বলে উঠে,,
-বাহ্ অন্তী তুমি তো ভালোই কফি বানাও.
-ধন্যবাদ
-বাই দ্যা ওয়ে এখন আবার কই যাচ্ছো?
-বাড়ি!
-বাড়ি মানে?কিন্তু কেন?এখনই তো এলে আবার এখনই যাবে?
-হুহ।আমি না গেলে তুমি আসবে কি করে?
-মানে?
-মানে আমি যতো তাড়াতাড়ি যাবো তুমি ততো তাড়াতাড়ি আসবে! এইটুকু বলেই অন্তী মুখ ফিরিয়ে নেয়।জিনিয়া বেশ বুঝতে পেরেছে অন্তীর কথার মানে।
অন্তী আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে সোজা বাহিরে বেরিয়ে যায়। বাহিরে তিয়াশ আগে থেকেই অন্তীর জন্য অপেক্ষা করছিলো।তিয়াশ অন্তীকে নিয়ে বাইকে করে বেরিয়ে যায়।
ঘরের বারান্দা থেকে তূর্য অন্তীর আশা যাওয়া দুটোই দেখছিলো।তূর্য অপেক্ষায় ছিলো অন্তীর অন্তী হয়তো একবার আসবে তার তূর্য ভাইয়ার কাছে আসবে।গাল ফুলিয়ে বলবে, -দেখো ভাইয়া আমি এবার ঠিকিই ফেল করবো,, -পড়লে তো পাস করবি তুই তো পড়তেই বসিস না। -তুমি আগের মতো পড়ালে ঠিকিই আমি তোমার মতো রেসাল্ট করতাম কিন্তু,, -দেখিস অন্তু তুই আমার থেকেও ভালো রেসাল্ট করবি!!
কথোপকথন গুলো শুধু কল্পনাতেই রয়ে গেলো।অন্তী আসে নি।একবারও আসে নি।
অভিমানগুলো যেনো তূর্যর গলায় এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।ওরা চাইছি বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে কিন্তু ঐ যে পুরুষ মানুষদের কাঁদতে নেই তাতে নাকি তাদের জাত,মান দুটোই যায়!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here