আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১১

0
2735

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১১
অন্তী ছুটে ঘরে আসার সময় দরজার কাছে এসে হুরমুরিয়ে পড়তে নিলে কেউ একজন অন্তীর কোমর জড়িয়ে ধরে।অন্তী প্রথমে তূর্য ভাবলেও পড়ে বুঝতে পারে এটা তূর্যর ছোঁয়া নয়।অন্তী ঝটপট হাতটা সরিয়ে দেয়।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে সাগর দাত কপাটি বের করে হাসছে…. অন্তীর কাছে সাগরের এই হাসিটা কেমন একটা অস্বস্তিকর মনে হয়। অন্তী সাগরের পাশ কেটে যেতে নিলে সাগর আবার অন্তীকে ডাক দেয়,
-অন্তু….
-সাগর ভাই আপনাকে কতোবার বলেছি আমাকে অন্তু বলবেন না!
-বা রে ঐ তূর্য তো বলে,
-তূর্য ভাইয়া আপনারে চেয়ে বড়।বড়দের নাম ধরে ডাকতে নেই জানেন না!
-ওহ্ সরি তূর্য ভাইয়া এবার হইছে?
-হু।
-তো তূর্য ভাইয়া ডাকলে কোনো সমস্যা না আমি ডাকলেই যতো দোষ??
-আপনি আর তূর্য ভাইয়া এক হলেন বুঝি!
-তাই নাকি?
-হ্যা তাই!!
অন্তী কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলে সাগর অন্তীর পথ আটকে দাড়ায়,, -অন্তী তুমি তূর্য ভাইয়াকে কেন বিয়ে করলে?
-মানে?
-মানে তুমি না আমাকে ভালোবাসতে তাহলে ঐ তূর্য ভাইকে কেন বিয়ে….
-সাগর ভাই আপনার মাথা টাথা কি খারাপ হয়ে গেছে??
-কেন?
-কি বলছেন এইসব?
-অন্তী তোমাকে না বলছি আমাকে ভাই বলবা না…..(কথাটা বলেই সাগর অন্তীর বাহু চেপে ধরে) -শোনেন সাগর ভাই আমি মোটেও আপনাকে…..
অন্তী কথাটা বলতে গিয়ে কারো গলা ঝাড়ার আওয়াজে থেমে যায়।অন্তী পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে তূর্য দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে চোখ বড় বড় করে অন্তী আর সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অন্তী তূর্যর দিকে তাকাতেই অন্তীর গলা পর্যন্ত শুকিয়ে যায়। অন্তী তূর্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তূর্য বলতে শুরু করে.
-হয়ে গেছে তোমাদের গোপন কথা?
-না মানে আসলে…..
-এতো রাতে ঘর ছেড়ে বর ছেড়ে যখন কোনো মেয়ে তার প্রাক্তনের সাথে ঢলাঢলি করতে আসে তখন তাকে কোন শ্রেনীর মেয়েদের সাথে তুলনা করা হয় জানিস??(অন্তীর দিকে তাকিয়ে) _সাগর কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই তূর্য সাগরকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়। -অনেক সাহস বেড়ে গেছে তোর তাই না?সেদিনের পিটানির কথা ভুলে গেলি নাকি আবার মনে করিয়ে দিতে হবে?
-না?( সাগর মাথা নিচু করে উওর দেয়) -তাহলে যা হা করে দাড়িয়ে আছিস কেন?(ধমকিয়ে) সাগর মাথা নিচু করে সেখান থেকে একরকম পালিয়ে যায়।
এদিকে অন্তী চুপ চাপ মুখে তালা এটে দাড়িয়ে আছে…. তূর্য অন্তীর কাছে গিয়ে অন্তীর হাত চেপে ধরে, -তোর কলিজা আসলেই অনেক বড় হয়ে গেছে।না হলে আমি থাকা অবস্থায়….কি আর বলবো তোকে…আসলেই তোর সাহসের তারিফ করতে হয়!!
-তুমি…
-Just keep your mouth shut….
অন্তী আর কিছু বলে না।তূর্যও কথা বারায় না অন্তীকে টেনে ঘরে এনে বিছানায় শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়। অন্তী চুপ চাপ শুয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর তূর্য বিছানায় এসে ধপ করে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে। অন্তী তূর্যর কাছে এমনটা আসা করে নি সে ভেবেছিলো তূর্য হয়তো রাগের মাথা কিছু একটা করে বসবে হয়তো জোড় করবে আগের মতো কিন্তু তূর্য শান্ত হয়ে অন্যদিক ফিরে আছে….
অন্তী অনেক ক্ষন অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে।কিন্তু ঘুম আসছে না। বলতে গেলে উঠানে এমন কিছু দেখার পর থেকেই অন্তীর মাথা কাজ করছে না।
কবে এতো কিছু ঘটে গেছে দুজনের তা অন্তী কেন সবারই হয় তো অজানা।কিন্তু যা ঘটছে তা কি ঠিক?ফুপ্পি কি মানবে?? এমন হাজারো চিন্তা মাথায় ঘুরছে অন্তী,,, অন্তী বার কয়েক এপাশ ওপাশ করেও তূর্যকে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়।এবার, অন্তী শোয়া থেকে উঠে তূর্যর উপর ঝুকে পড়ে দেখার জন্য তূর্য ঘুমিয়েছে কি না।
অন্তী উবু হতেই তূর্য দুম করে এপাশ ঘুরে যায়।অন্তীও হুমরি খেয়ে তূর্যর গায়ের উপর পড়ে যায়। তূর্য মুচকি হেসে অন্তীর দিকে তাকায়, -মাঝ রাতে একা অসহায় ছেলে পেয়ে বেশ তো ঝাপিয়ে পড়েছিস….ঘরে তোর বাবা ভাই নাই?
-মানে??
-মানে আমি একা একটা ছেলে মানুষ একা ঘরে আমার উপর…. (তূর্য কথা গুলো বলে দাঁত কেলিয়ে হাসি দেয়)
-আমার বয়েই গেছে তোমাকে….ছি ছি আপনি আসলেই খুব খারাপ!! অন্তী রাগে ফসফস করতে করতে উঠতে নিলে তূর্য অন্তীর মাথাটা তার বুকের উপর চেপে ধরে,
তূর্য মুচকি হেসে জবাব দেয়,, -তোর ছোটবেলার স্বভাব আর গেলো না!
-মানে?
-এই যে তুই মাঝে মাঝে আমাকে তুমি আপনি সব মিলিয়ে গুলিয়ে আমার উপর মানে ঐ আরকি!!
-ধূর
-অন্তু
-হু?
-কিছু বলবি???
এবার অন্তী বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।তূর্যকে বলবে কি না।কথাগুলো তূর্যকে বলা ঠিক হবে কি না তা ওর মাথায় ঠুকছে না।
[তখন….
অন্তী কান্না করতে করতে বাড়ির উঠানে আসতেই চোখ যায় উঠানের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা দুজন ছায়া মূর্তির দিকে…. মৃদু চাঁদের আলো আফছা সবকিছু….অন্তী দেখতে পায়,, দুজন ছায়া মূর্তী একে অপরের সাথে লেপ্টে দাড়িয়ে আছে অন্তী ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে।একটু এগোতেই অন্তীর কাছে ছায়া মূর্তীদুটো একটু একটু করে স্পষ্ট হতে থাকে।
মৃদু চাঁদের আলোতেও দুজনকে চিন্তে একটুও কষ্ট হলো না অন্তীর।
অথৈ আর তিয়াশ।
অথৈ তিয়াশের বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে আছে।আর তিয়াশ অথৈকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
অথৈ একটু সরে আসতেই তিয়াশ অথৈকে আবার কাছে টেনে নেয়।অথৈয়ের কপালে একটা গভীর চুমু একে দেয়। অন্তী আর সেখানে দাড়ায় না ছুট লাগায় ঘরের দিকে….
তখনই সাগর অন্তীর দেখা হয়।তারপর উটকো ঝামেলা।] তূর্য অন্তীকে চুপ থাকতে দেখে এবার তূর্য মুখ খোলে,, -কি হলো তাড়া তাড়ি বল।কাল কিন্তু তোক খুব ভোরে উঠতে হবে।নামাজ পড়ে পড়তে বসা লাগবো!
অন্তী মুখ কালো করে জবাব দেয়
-হু
-কি হলো বল?
-আসলে ভাইয়া আর অথৈকে…..
-কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার স্বভাব তোর কখনো যাবে না তাই না??
-মানে
-ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।অনেক আগে থেকেই…..
-কিহ্??(অবাক হয়ে)
-হু আপাতোতো তোর এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।ঘুমাই যা,,
-কিন্তু
-চুপ।শুভ রাত্রি!!
-হু শুভ রাত্রি
অন্তী তূর্যকে এইটুকু বলেই তূর্যর গায়ের উপর সবটুকু ভর ছেড়ে দেয়।তূর্যও অন্তীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,, আমার সবটুকু যাতনা আমি জমিয়ে রেখেছি।সব টুকু অভিমান জমিয়ে রেখেছি,,
জমিয়ে রেখেছি সব টুকু ভালোবাসা।একদিন সব উপচে পড়বে।ভেঙ্গে যাবে সেই ধৈর্যের বাঁধ
এইটুকু বলেই তূর্যও চোখ বুজে নেয়। খুব ভোর বেলা তূর্য অন্তী দুজনেই জেগে যায়।দুজনেই একসাথে ওজু করে নামাজ পড়ে নেয়।তূর্য অন্তীকে পড়তে বসিয়ে বাহিরে চলে যায়।
বরাবরই তূর্যর স্বভাব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খোলা আকাশের নীচে হাটা। অন্তী পড়তে পড়তে হটাৎ ই তার ফোনটা বেজো উঠে।মেসেজ এসেছে।অন্তী সেদিকে গ্রাহ্য না করে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয় কিন্তু এবার পর পর বেশ কয়েটা মেসেজ একসাথে আসে।
এবার আর অন্তী কৌতূহল ধরে রাখতে না পেড়ে পড়া থেকে উঠে পড়ে।ফোনটা হাতে তুলে নেয়। একটা আননোন নাম্বার থেকে বেশ কয়েকটা এমএমএস এসেছে।অন্তী বেশ অবাক হয়েই এমএমএস গুলো ওপেন করতেই অন্তীর বুকটা ধক করে উঠে।
এমএমএসে কেউ একজন বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছে।ছবিগুলো তূর্য আর জিনিয়ার বেশ ক্লোজ পিক।সব গুলো ছবিতেই দুজন বেশ কাছাকাছি যতোটা কাছাকাছি স্বামী স্ত্রীর থাকা উচিৎ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here