আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৩

0
387

#আবেগময়_সম্পর্ক
#৩৩তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

প্রমি আজকে একটা নিউজ রিপোর্টিং করে ফিরছিল। পথিমধ্যে তাদের ভাড়া করা গাড়ি খারাপ হয়ে যায়, তখন সে কোন উপায় না পেয়ে রাজীবকে একটি ক্যাব ভাড়া করে পাঠিয়ে দেয়। প্রমি রাস্তার পাশে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। সে ভাবে, “অনেক দিন থেকে ভালো মন্দ কিছু খাই না। আজ একটু খেয়ে নেই। ভালোই হবে।”

যেই ভাবা সেই কাজ। প্রমি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে এবং বেছে বেছে একটি টেবিলে গিয়ে বসে। যেই টেবিলের মাথার উপরেই ফ্যান ছিল। প্রমি এরপর কিছু অর্ডার করতে যাবে তখনই দেখতে পায় রায়ানও সেই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করছে। রায়ানকে দেখে প্রমি একপ্রকার ছুটে যায় তার কাছে। রায়ানের কাছে গিয়ে বলে,“আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে খুব খুশি হলাম মিস্টার রায়ান। আপনাকে ধন্যবাদ জানানো বাকি ছিল। কেননা, শুধুমাত্র আপনার জন্যই আমার ক্যারিয়ার বেচে গেল। নাহলে আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে, সব বোধহয় শেষই হয়ে গেল, আমার ক্যারিয়ার, আমার লাইফ, এভরিথিং।”

রায়ান একটু ভাব নিয়ে বলে, “এটা তেমন কিছু না। আমারও ভালো লেগেছে আপনার উপকার করে।”

প্রমি মৃদু হেসে বলে, “ আমি তো এখানে খেতেই এসেছিলাম, আর এখন ভাগ্য ক্রমে আপনিও যখন এসেই পড়েছেন
তাহলে চলুন আজকে আমি আপনাকে ট্রিট দেই। যদি আপনি রাজি থাকেন আরকি….”

রায়ান বলে, “রাজি কেন থাকবোনা? আপনি যদি ট্রিট দিতে যান তাহলে আমিও ট্রিট নিতে রাজি৷ শুধু একটাই রিকোয়েস্ট একটু হেলদি ফুড অর্ডার করবেন। আমি বেশি অয়েলি ফুড আবার খেতে পারি না।”

প্রমি বলে ওঠে, “এই নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই। আপনার যা পছন্দ অর্ডার করুন, বিল আমি পে করবো।”

“তা কি করে হয়? আপনি যখন আমায় ট্রিট দেবেন তখন নিজে পছন্দ করে দিন সেটা বেটার হবে।”

প্রমি কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “ওয়েল আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে চিকেন ফ্রাই আর ফ্রাইড রাইস খান। এগুলো অয়েলি ফুড বাট আই থিংক একদিন খেলে এমন কোন ক্ষতি হবে না। যদি আপনি রাজি থাকেন তো আমি অর্ডার করি!”

রায়ান কিছু সময় ভেবে বলে, “ঠিক আছে। চলুন বসি৷ আপনি যা চান তাই খাবো নাহয়।”

দুজনে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করে নেয়। খাওয়ার সময় রায়ান এবং প্রমি অনেকবার লুকিয়ে লুকিয়ে একে অপরকে দেখে। দুজনেরই তো লাভ এট ফাস্ট সাইট হয়ে গেছিল। কিন্তু তারা কেউ কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না।

দুজনের মধ্যে এই জড়তা কা*টানোর উদ্যেগ রায়ানই নেয়। সে বলে ওঠে,“আপনার ফেসবুক,ইন্সট্রাগ্রাম,হোয়াটসঅ্যাপ কিছু নেই?”

“আমার সবই আছে।”

“আমি কি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার পেতে পারি?”

“হ্যাঁ, এই নিন ০১৮*******। এটা আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার।”

রায়ান মুচকি হাসে। দুজনে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। রায়ানের একটি জরুরি অপারেশন আছে জন্য সে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে প্রমিকে বলে যায়,“খুব শীঘ্রই হয়তো আমাদের দেখা হবে।”
_________________________
কয়েক মাস পর,
রায়ান এবং প্রমির মধ্যে নিয়মিত ফোনে কথা হয়৷ তাদের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে৷ দুজনেই দুজনের সাথে কথা বলতে বলতে একে অপরের প্রেমে পড়ে গেছে কিন্তু কেউই কাউকে কিছু বলতে পারছে না। যার কারণে তাদের মধ্যে নরমাল কথাবার্তার বেশি কিছু এগোয়নি এখনো অব্দি।

এদিকে রায়ান ডেসপারেট হয়ে যাচ্ছে প্রমির সাথে সম্পর্কে জড়ানোর জন্য। তাই আজ সে সাহস করে প্রমিকে ম্যাসেজ করে, “আজ রাতে কি আমরা দেখা করতে পারি?”

প্রমি বলে, “জ্বি, কোথায়?”

“আগের বার যেই রেস্টুরেন্টে দেখা করছিলাম ঠিক সেখানে।”

প্রমি সম্মতি জানায়। রায়ান অপেক্ষা করতে থাকে প্রমির সাথে দেখা করার জন্য।

অবশেষে সেই শুভ সময় এসেই যায়। মানে এখন প্রমির সাথে রায়ানের সাক্ষাৎ হয় সেই রেস্টুরেন্টে। প্রমি এসেই রায়ানকে জিজ্ঞাসা করে,“হঠাৎ আমাকে এখানে ডাকলেন যে? কোন কিছু কি বলতে চান?”

রায়ান কিভাবে কি বলবে কিছু বুঝতে পার ছিল না। এর আগে কোন মেয়েকে সে প্রপোজ করে নি। সে এসবে অভ্যস্তও নয়। তাই তার মধ্যে অনেক সংকোচ কাজ করছিল।

কিছু সময় নিয়ে রায়ান তার পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে এবং প্রমির হাতে সেটা পড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে, “আই লাভ ইউ প্রমি। আই লাভ ইউ। উইল ইউ বি মাই গার্লফ্রেন্ড?”

প্রমির হার্ট দ্রুত বিট হতে থাকে। সবটা যেন তার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছিল। কারণ সে তো নিজেও রায়ানকে পছন্দ করতো। কিন্তু কখনো নিজের পছন্দের কথা বলতে পারে নি। আজ যখন রায়ান নিজে থেকে তাকে প্রপোজ করছে তখন সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারছে না।

যদিও মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় কিন্তু রায়ান বুঝলো উল্টোটা। সে প্রমিকে চুপ থাকতে দেখে মনে করে সে হয়তো রায়ানকে পছন্দ করে না। তাই রায়ান উঠে চলে যেতে নেয়। তখনই প্রমি তার হাত আটকে ধরে বলে,“প্লিজ যাবেন না। আমিও আপনাকে লাইক করি৷ আই লাভ ইউ টু।”

রায়ানের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে তো এটাই শুনতে চেয়েছিল। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রায়ান বলতে ওঠে, “তার মানে আজ থেকে আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড তাই তো?”

প্রমি দ্বিমত করার সুযোগ পায় না। শুরু হয় তাদের রিলেশন।
___________________________
মায়ান কয়দিন থেকে লক্ষ্য করছে রায়ান অনেক বদলে গেছে। সে মুচকি মুচকি হাসে। কারো সাথে যেন কথা বলায় ব্যস্ত থাকে সারা দিন।

মায়ান একদিন রায়ানকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে,“আচ্ছা ব্রো তুই সত্যি করে বল তো তুই কি প্রেম করছিস?”

রায়ান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। যার অর্থ সে প্রেম করছে। মায়ান মন খারাপ করে বলে, “দ্যাসট নয় ফেয়ার ব্রো। তুই প্রেম করছিস আর আমাকে বলিস নি৷ তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখাও করাল না! আমি তাকে দেখলামও না!”

“মন খারাপ করতে হবে না,তুই চিনিস তাকে।”

“কে সে?”

“রিপোর্টার প্রমি।”

মায়ানের সব খুশি মিলিয়ে যায়। সে বলে ওঠে, “ঐ মেয়েটা যে আমার নামে ফেইক নিউজ করেছিল। ব্রো তুই কি করলি এটা? আমার তো এখন মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটা একটা গোল্ড ডিগার। না এই রিলেশনে জড়িয়ে তুই ঠিক করিস নি। তুই আজই ব্রেক আপ কর।”

রায়ান রাগী স্বরে বলে,“তুই ভুল ভাবছিস। প্রমি মোটেও অমন মেয়ে নয়। ও অনেক ভালো মেয়ে। আমি কিছুতেই ওর সাথে ব্রেকাপ করব না। বরং খুব শীঘ্রই আমি ওর বাড়িতে বিয়ের কথা বলতে যাব এবং ওকে বিয়ে করে নিবো।”

মায়ান হাতের মুঠো শক্ত করে বলে,“আমিও দেখব তুমি কি করে ঐ মেয়েটাকে বিয়ে করো। আমি কিছুতেই ঐ মেয়েটার সাথে তোমার মিল হতে দেবো না। কারণ আমি জানি ঐ মেয়েটা ভালো নয়। ওর নিশ্চয়ই কোন বাজে ইন্টেনশন আছে। তোমার অনেক টাকা দেখেছে তাই তোমায় টাকার জালে ফাঁসাতে চাইছে। আমি তোমাদের ব্রেকাপ করা বোই। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here