আপনিময় বিরহ পর্ব ৬

0
412

#আপনিময়_বিরহ (০৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________

প্রিয়মের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা। দেখতে দেখতে প্রিয়তার ফাইনাল এক্সাম চলে এসেছে। আজ ফিরবে তারা আবারও চেনা শহরে। প্রিয়তাদের সাথে প্রিয়মও যাচ্ছে ওদের বাড়ি৷ ৩ মাস অনেক জ্বালিয়েছে প্রিয়ম প্রিয়তাকে। এখন আবার ওদের সাথে যাচ্ছে বলেই এই বিরক্তিকর দৃষ্টি। সেদিনের পর অনেকগুলো চিঠি পাইছে প্রিয়তা। সেগুলো অবশ্য সে পাত্তা দেয় না। তনিমা যে উদয়কে ভালোবাসে এটা জানার পর থেকেই প্রিয়ম আরো বেশি জ্বালিয়ে মারতেছে দুজনকে। প্রিয়তা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিশিরের জন্য মনে কষ্ট থাকলেও আর আগের মতো ততটা চুপচাপ থাকে না। শুধু শুধু অন্যের জন্য নিজের পরিবারকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? তার থেকে কিছু অভিনয়ে যদি মানুষ ভালো থাকে তাতে দোষ কি? প্রিয়ম প্রিয়তা দৃষ্টি খেয়াল করেও পাত্তা দিলো না। হাই তুলতে তুলতে বললো, ‘কি সমস্যা? ওমন রা’ক্ষুসি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমি একটা নিষ্পাপ ভদ্র বাচ্চা ছেলে। তোর ওই ভয়ংকর চাহনি দেখলে হার্ট অ্যাটাক চলে আসে আমার। আজব!’

প্রিয়তা কটমট দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়মের দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘নিজেকে ভদ্র বাচ্চা ছেলে বলে বাচ্চা ছেলেদের অপমান করবেন না। আর রা’ক্ষসী দৃষ্টি কি হ্যাঁ?’

‘রাক্ষসীদের মতো তাকিয়ে আছিস আবার বলিস রা’ক্ষসী দৃষ্টি কি! হাউ ফানি।’

ব্যস দুজনের ঝগড়া লেগে গেলো। উদয় আর তনিমা নিজেদের কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। এই দুইটা ভাই বোন তো দুর একে অপরের শত্রু। সাপে বেজিতে সম্পর্ক এদের। এর মধ্যেই ট্রেন পৌছে গেলো গন্তব্যে। ট্রেন থামতেই প্রিয়তা চুপ হয়ে যায়। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখে বড় বড় অক্ষরে লিখা, ‘কমলাপুর স্টেশন’। ৩ মাস পর নিজের শহরকে দেখে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। আশেপাশে তাকাতেই চোখ যায় দুরে দাঁড়ানো শিশিরের দিকে। সাথে সাথেইই চমকে উঠে সে। আক্ষিযুগল ভিজে আসে। ঝাপসা চোখেই সেদিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়ম প্রিয়তার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজেও তাকায় সেদিকে৷ সাথে সাথে হাাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে৷ রাগে চোয়াল শক্ত হয়। এতদিনে শিশিরের সব খোঁজ তার নেওয়া শেষ তাই স্বাভাবিক ভাবেই শিশিরকে চিনতে তার বেগ পেতে হয়নি। রাগে হুট করেই করে বসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ। খপ করে প্রিয়তার হাত শক্ত করে ধরে। প্রিয়তা অবাকের চরম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়মের দিকে তাকাতেই তার কলিজা কেঁপে ওঠে। চোখ মুখের অবস্থা ভীষণ ভয়ংকর। হঠাৎ করেই প্রিয়ম কেন রেগে গেলো তা আশ পাশ হাতড়েও কিছু খুঁজে পেলো না। কিছু বলতে যাবে তার আগেই কানে ভেসে আসে প্রিয়মের গম্ভীর স্বর..

‘যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি এখানেই বসে কিছু কু’কুরকে দেখার ইচ্ছা আছে!’

কেঁপে ওঠে প্রিয়তা। এতো গম্ভীর স্বরে প্রিয়ম কখনোই কথা বলেনি তার সাথে। বরং সবসময়ই নরম ছিলো। প্রিয়মের কথা নিজে কয়েকবার আওড়াতেই বুঝতে পারলো কথাটার মানে। সাথে সাথেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়ম তার হাত টেনে নেমে যেতে লাগলো। প্রিয়তা বুঝতে পারে অনেক বেশি রেগে আছে প্রিয়ম তাই চুপ হয়ে তার পিছন পিছন যেতে থাকে। হাতটা ছাড়তে বলতেও সে ভয় পাচ্ছে। যতটা শান্ত, মজার প্রিয়ম রেগে গেলে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। তাহেরা বেগম বলেছিলেন একবার। প্রিয়তা মন দিয়ে দিয়ে না শুনলেও এটা মনে আছে প্রিয়ম রেগে গেলে সবথেকে বেশি ভয়ংকর হয়ে যায়। প্রিয়মের চোখ মুখের অবস্থা দেখে উদয়ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়। সামনে এগিয়ে বসে,

‘কি রে তোর চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? কি হয়ছে?’

প্রিয়ম শুধু রাগী চোখে তাকালো। কোনো উত্তরই দিলো না। সেসময় হাজির হয় শিশির। উদয়ও সাথে সাথে রেগে যায়। কিন্তু পাবলিক প্লেস হওয়ায় কোনো প্রকার সিনক্রিয়েট করে না। শিশির সরাসরি পলক সাহেব আর তাঁরা বেগমকে সালাম দিয়েই এগিয়ে আসে প্রিয়তার কাছে। উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কেমন আছো প্রিয়তা? সেদিন আমাকে না বলে চলে গেলে কেন? তোমার একটুও কষ্ট হয়নি আমাকে ছেড়ে যেতে!’

প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকাায় শিশিরের দিকে। মানে সে ছেড়ে গেছে! সিরিয়াসলি? কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা এবং গম্ভীর গলায় প্রিয়ম বললেন,

‘মানুষ কতটা নির্লজ্জ হয় তা আপনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না মিষ্টার শিশির আহমেদ। ছোট বোনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বড় বোনকে বিয়ে করলেন। আবার এখন আসছেন ছোট বোনকে বলতে যে সে কেমন আছে! আপনাকে ছেড়ে যেতে তার কষ্ট হয়ছে কি না! মানে সব মজা লাগে আপনার কাছে? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আসছেন!’

শিশির যেনো জ্বলে উঠলো। এতক্ষণে খেয়াল করলো প্রিয়ম প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে। রেগে গিয়ে বললো, ‘আপনি কে এসব বলার? আর কোন সাহসে প্রিয়তার হাত ধরে আছেন? ছাড়ুন ওকে।’

প্রিয়মের শান্ত গলার শান্ত উত্তর, ‘সি ইজ মাই ওয়াইফ। এনি কোয়েশ্শেন?’

উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে তাকায় প্রিয়মের দিকে। শুধু উদয় আর তনিমা স্বাভাবিক। প্রিয়তা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ম এমন কিছু বলবে তার ধারণার বাইরে ছিলো। বার বার যেনো কথাটা তার মাথায় বাজতেছে। কিছু বলবে সে কথাটাও গলায় আটকে আছে। শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়মের দিকে। শিশির অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তার দিকে। প্রিয়ম কাউকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ প্রিয়তার হাত ধরে হেঁটে যায়।

প্রিয়তারা বাড়ি ফিরতেই অনিমাও বাড়ি চলে আসে৷ তনিমার বাবা মা এখানে থাকেন না আর। অনিমা এগিয়ে এসে খুশিমনে প্রিয়তা, উদয় আর তনিমাকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছে? উত্তর দেয় না উদয় আর তনিমা। প্রিয়তা স্বাভাবিক ভাবে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সব স্বার্থপরদের থেকে দুরে গিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বাঁচতে শিখেছি।’

অনিমা হাসে। প্রিয়তা অপমান গায়ে লাগায় না। সে তো অপরাধী তাই তাকে অপমান করায় যায়। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিড়ির দিকে তাকায়। নিজের রুমে যায় না অনেকদিন। ধুলো পড়ে গেছে নিশ্চয়ই তার রুমে। যেমনটা তার জীবনে পড়ে গেছে। নিঃশব্দে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। উদয় হেঁসে বলে, ‘ভালো একটা কথা বলেছিস।’

প্রিয়তা ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হু।’

পলক সাহেব আর তাঁরা বেগম নিজেদের রুমে আসতেই পেছন পেছন প্রিয়মও আসে। রাগের মাথায় সবার সামনে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে। তাই কথা বলতে এসেছে। প্রিয়ম রুমের বাইরে এসে নক করে। ভেতর থেকে তাঁরা বেগম উত্তর দেয়, ‘আসো।’

প্রিয়ম সব কথা ছেড়ে মাথা নিচু করে বলে, ‘মামনি আ’ম এক্সট্রেমলি সরি। আমি শিশিরকে দেখে রাগের মাথায় বলে ফেলেছি ওসব। তোমরা প্লিজ….

‘ইটস ওকে বাবা। আমরা কিছু মনে করিনি। বুঝতে পেরেছিলাম। আর তাছাড়া তুমি না ভেবে কিছু করো না বা বলো না৷ রাগের মাথায় হলেও একটা ঠিক কাজ করেছো। তার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।’

প্রিয়মের কথা শেষ হওয়ার আগেই তাঁরা বেগম তাকে উপরিউক্ত কথাগুলো বলে। প্রিয়ম তবুও চোখ নামিয়ে রাখে। না জানি সবাই কি ভাবছে! পলক সাহেব মুচকি হেঁসে বলে, ‘জেন্টলম্যান এতে মাথা নিচু করে রাখার কি আছে! তুমি মানে তোমরা এতগুলো দিন যেভাবে আমাাদের পাশে ছিলে তাতে এটুকু ব্যাপার কিছু না। ছাড়ো এসব আর যাও ফ্রেশ হও।’

প্রিয়ম মুচকি হেঁসে চলে যায়। একটা রুমে এসে শরীর এলিয়ে দেয়। তাড়াহুড়োতে কার রুমে ঢুকেছে খেয়াল করেনি। মাথাটা ব্যাথা করছে ভীষণ। শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে কিন্তু তার আগে লাগেজ আনতে হবে। তার ভাবনার মাঝেই কারো কন্ঠ ভেসে আসে,

‘আপনি এখানে?’

প্রিয়ম চোখ মেলে দেখে প্রিয়তা। প্রিয়ম শোয়া থেকে উঠে বসে বলে, ‘কেন? এখানে আসা কি মানা?’

প্রিয়তা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, ‘এটা আমার রুম।’

প্রিয়ম কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। তারপর কিছুটা পিছিয়ে এসে প্রিয়তার কানের কাছে চুলে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কেঁপে উঠে প্রিয়তা। তাকানোর আগেই প্রিয়ম যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
‘এখন না হয় তোর রুম বলে চলে যেতে হচ্ছে। ক’দিন পর এটা আমারও রুম হবে।’

প্রিয়তার কান অবদি সে কথা গেলো না। প্রিয়মের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা লাগিয়ে দেয় প্রিয়তা। লাগেজ থেকে কাপড় বের করে শাওয়ার নিতে যায়। এখন তার কোনোকিছুতে মন দেওয়া যাবে না। কাল থেকে এক্সাম আজ শুধু পড়তে হবে।

_____________

সন্ধ্যার পর রুমে ভালো লাগছিলো না বলে ছাঁদে চলে এসেছে প্রিয়তা। তনিমা নিজের রুমে ঘুম দিচ্ছে। কে বলবে ওর কাল এক্সাম! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো ছাঁদে চোখ বুলায় প্রিয়তা। কত শত স্মৃতি এ ছাঁদে। শিশির আর তাদের ছাঁদটা অনেকটাই কাছাকাছি। একবার রাত ২টার দিকে প্রিয়তার ভীষণ আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিলো। রাত জেগে কথা বলার দরুণ তখনো শিশির আর প্রিয়তার ফোনালাপ হচ্ছিলো। শিশিরকে আবদারের স্বরে বলে, ‘আমার না অনেক আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।’

‘না। এতো রাতে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷ কাল খেয়ো।’

প্রিয়তা জিদ ধরার বদলে চুপচাপ মেনে নিলো। কিন্তু সে আইসক্রিম খেতে পারবে না ভেবে মন খারাপ হয়ে গেছিলো। ঠিক আধাঘন্টা পর শিশির কল দিয়ে বললো, ‘ছাঁদে আসো তো।’

প্রিয়তা অবাক হয়ে শুধালো, ‘এতো রাতে ছাঁদে যেতে যাবো কেন? ভুত ধরবে আমাকে। যাবো না।’

‘আরে আসো তো। কিছু হবে না।’

প্রিয়তা আর তর্ক না বাড়িয়ে সাবধানে ভয়ে ভয়ে ছাঁদে চলে আসে। সামনে তাকিয়ে দেখে পাশের ছাদে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারে ওটা শিশির। এগিয়ে এসে বলে, ‘এতো রাতে ছাঁদে ডাকলেন কেন শিশির ভাই? কেউ দেখলে খবর আছে।’

প্রিয়তার কন্ঠে আতঙ্ক। মুচকি হাসে শিশির। প্রতিউত্তরে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে ব্যাগ নিয়ে ওটা খুলেই হা হয়ে যায়। অনেকগুলো আইসক্রিমের বক্স। খুশিতে ভয় টয় ভুলে গিয়ে বাচ্চাদের মতো ওখানেই বসে পড়ে। শিশির প্রিয়তার কান্ড দেখে হাসতে থাকে।

অতীত মনে পড়তেই অজান্তে হেঁসে উঠে প্রিয়তা। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। চোখের কোণের জল মুছতেই উপস্থিত হয় প্রিয়ম। হালকা কাশি দিয়ে বলে, ‘এক্সের জন্য কাঁদছিস টুনটুনি?’

প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘ওভাবে তাকানোর কিছু হয়নি। সত্যিটাই তো বললাম।’

‘হ্যাঁ সত্যি বলে আমাকে একদম উদ্ধার করে দিয়েছেন। তা সত্যের উড়োজাহাজ এখানে আপনার কি কাজ?’

প্রিয়ম প্রিয়তার অলক্ষ্যে হাসে। মেয়েটার হয়তো মনেই নেই স্টেশনের ব্যাপারটা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ‘হাঁটতে যাবি? তোরও মন ভালো নেই আমারও কিছু ভালো লাগতেছে না। যাবি?’

প্রিয়মের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো যার ডাকে না চাইতেও সাড়া দিয়ে ফেলে প্রিয়তা। মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘কোথায় যাবেন?’

‘চল একদিকে চলে যায়। রাতের শহর পুরোটাই সুন্দর।’

প্রিয়তা মাথা নাড়ায়। এই মানুষটাকে নিঃসন্দেহে ভরসা করা যায়। এই মানুষটার মনে কোনো রকম খাারাপ উদ্দেশ্য, চিন্তা নেই তা এতদিনে বোঝা শেষ। প্রিয়ম আর প্রিয়তা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা সরু রাস্তায় হাঁটতে থাকে। দুজনেই নিশ্চুপ। দুজন শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনছে। নিরবতা ভেঙে প্রিয়মই প্রথমে বলে, ‘স্টেশনের ঘটনার জন্য সরি।’

সাথে সাথেই প্রিয়তার হাঁটা থেমে যায়। তাকায় প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম স্বাভাবিক। প্রিয়তা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। আশ পাশ হাতড়েও যখন কোনো উত্তর পেলো না তখন নিশ্চুপ হয়েই আবার হাঁটতে লাগলো। প্রিয়মও চুপই থাকলো। কিছুদুর আসতেই একটা আইসক্রিম পার্লার দেখে প্রিয়ম বললো, ‘আইসক্রিম খাবি?’

প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। প্রিয়ম সেগুলো পাত্তা না দিয়ে আইসক্রিম পার্লারের দিকে যেতে যেতে বলে, ‘না খেলে চুপচাপ বসে থাকিস। আমি খাবো। আয়।’

প্রিয়ম জানে আইসক্রিম প্রিয়তার ফেভারিট। তাই মুচকি হেঁসে নিজের মতো যেতে থাকে। প্রিয়তাও পিছু পিছু যায়। প্রিয়ম আইসক্রিম অর্ডার করে ফোন স্ক্রল করতে থাকে আর প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। আইসক্রিম আসলে প্রিয়ম নিজের মতো খেতে থাকে। প্রিয়তাকে কিছু বলছে না দেখে মনে মনে প্রিয়মের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলে।

‘একবার খাবে না বলেছি বলে আর একবারও বলবে না নাকি আজব। উগান্ডার দাদা।’

প্রিয়ম নিঃশব্দে হেঁসে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘মনে মনে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার না করে চাইলে আইসক্রিম খেতে পারিস।’

আরেকটা আইসক্রিম প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিতেই সে ছিনিয়ে নিলো। ভেংচি কেটে খেতে শুরু করলো। আশে পাশে সিডর হয়ে গেলেও তার যায় আসবে না এই মুহুর্তে। প্রিয়ম ঠোঁট কামড়ে দেখতে থাকে প্রিয়তার বাচ্চামো। কতদিন পর মেয়েটা এমন বাচ্চামো করতেছে।

খাওয়া শেষে আরো প্যাক করে নেয় প্রিয়ম। এবার আর দুজনে নিশ্চুপ না। প্রিয়তা নিজে থেকেই অনেকটা কথা বললো। প্রিয়ম শুধু মনোযোগ দিয়ে শোনার কাজ করলো। বাড়ির কিছুটা কাছে আসতেই শিশির সামনে আসে প্রিয়তার। সাথে সাথেই মুখটা মলিন হয়ে যায় প্রিয়তার। শিশির শান্ত কন্ঠে বলে,

‘তোমার সাথে আমার কথা আছে প্রিয়তা।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here