আড়ালে অন্তরালে পর্ব ৫

0
462

#আড়ালে_অন্তরালে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বঃ৫

শুক্রবার হওয়ায় আজ অফ ডে ফাহিমের। বাসায় শুয়ে বসে যখন অলস সময় কা টা চ্ছি ল তখনই মিলনের নামটা ভেসে তার মুঠোফোনের পর্দায়। কালক্ষেপণ না করে কলটা রিসিভ করলো ফাহিম। মিলন জানালো গ্রাম থেকে তার বাবা-মা আর ছোট বোন এসেছে। ভালোমন্দ রান্না হবে, সে যেন তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায়।
যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও তাকে যেতে হবে কারণ এই শহরটায় মিলন ছাড়া কারো সাথেই সখ্যতা হয়নি তেমন। আড়মোড়া ভে ঙে শরীরটা ঝেড়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য গেল সে। পানির ঝা প টা দিয়ে মুখ ধোয়ার কারণে কিছু পানি কপালে থাকা চুলগুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছে নিলেও কপালে থাকা চুলগুলো অবাধ্য শিশুর মত লেপ্টে আছে। বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে খানিক পেছনে ঠেলে সাদা পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেই ফাহিমের মনে হলো বোতামগুলো লাগানোর জন্য একটা বউ দরকার। কথাটা ভেবে আনমনে হেসে উঠলো সে।নিজের ভাবনার গণ্ডিতে ফুলস্টপ টেনে একে একে সব বোতাম লাগিয়ে আবার টপ বাটনটা খুলে দিলো। আতরটা খুব পছন্দ ফাহিমের। হালকা একটু আতর মেখে মুঠোফোনটা পকেটে গুঁজে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মূল দরজায় তালাটা ঝুলিয়ে দিয়ে সদর্পে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই বাড়িওয়ালার সাথে চোখাচোখি হলো ফাহিমের। লোকটাকে কথা বাড়াতে না দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসে মনে হলো আগে এক কাপ চা খাওয়া দরকার। চায়ের দোকানটায় বসে বলল – চাচা, কড়া করে এক কাপ চা বানানতো।
ফাহিমকে দেখেই হাসি ফুটলো তারেকের মুখে। সহাস্যে সে বলল – এহনতো আমার কথা বেমালুম ভুইলাই গেছো চাচা মিয়া।
তারেকের মুখে অভিমানের সুর শুনে কপট অনুতপ্ত হওয়ার ভান করে ফাহিম বলল – অফিসে এত প্রেসার চাচা, খাওয়ার সময়ও হয়না। আজকাল আপনার সাথে আড্ডাও দেয়া হয়না। সেজন্য….
ফাহিমের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেলিভিশন থেকে নারীকন্ঠটা বলছে – পরকীয়ার জেরে তিনবছরের শিশু বাচ্চাকে গ/লা টি*পে খু ন করে আমেনা বেগম নামের এক নারী। পরে তিনি পরকীয়া প্রেমিকের সহযোগিতায় নিজের স্বামীকেও শ্বাসরুদ্ধ ক রে খু//ন করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ জানায় আমেনা বেগমকে ও তার পরকীয়া প্রেমিকের সন্ধানে খোঁজ শুরু করেছে তারা।
এতটুকু শোনার পর দৃষ্টিটা চায়ের কাপে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে সে বলল – মায়েরাও বুঝি এত খারাপ হয়!
তারেক আফসোস করে বলল – আহারে তুই পালাইতি কিন্তু মাসুম বাচ্চাটারে কেন মা র লি?
তারেকের কথার পিঠে আর কথা বাড়ালো না ফাহিম, এক চুমুকে চা’টা শেষ করে দাম চুকিয়ে হাঁটা ধরলো।
বাড়ির মূল ফটকে আসতেই জামশেদ রহমানের সাথে দেখা হয়ে গেল ফাহিমের।
খানিকটা ভ্রু কুঁচকে জামশেদ বললেন – তোমাকে কখনো এ বাড়িতে দেখেছি বলে মনে হয় না।
জামশেদের কন্ঠে সন্দেহের সুর। ফাহিম ভ্রান্ত না হয়ে বলল – মিলনের বাসায় এসেছি। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞেস করুন, অযথা সময় নষ্ট একদম অপছন্দ আমার।
ফাহিমের কা/ট/কা/ট জবাবটা মোটেই মনপুত হলো না জামশেদের। গলা চড়িয়ে বলল – এই ছেলে! তুমি জানো আমি কে? আমার….
কথাটা শেষ করতে না দিয়ে ফাহিম বলল – এই ছেলে নয়, আমার নাম ফাহিম মির্জা। নেক্সট টাইম মনে রাখবেন আর আপনি কে তা জানার অপ্রয়োজনীয় সময় আমার নেই।
জামশেদকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে লম্বা পা ফেলে ভেতরে চলে গেল ফাহিম। ফাহিমের আচরণ জামশেদের নিকট বিরাট রকমের ঔদ্ধত্য মনে হলো।
তৃতীয় তলায় উঠতেই ফাহিমের কানে এলো – বাজারের টাকা মে/রে কোন না গ র কে দিয়েছিস। সব বাজার ঠিকমত আনিসনি কেন?
ফাহিম শুনতে পেলো চা পা আর্তনাদ। দরজাট ফাঁকা অংশটা দিয়ে ফাহিম দেখতে পেল মায়ার ফর্সা পিঠের কাছে মোটা লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করার কারণে জায়গাটা নীল বর্ণ ধারণ করেছে। ধাতব লাঠিটা দিয়ে আবার আঘাত করার ফলে মায়া বেশ জোরেই আর্তনাদ করে উঠল। আল্লাহগো শব্দটা তার মুখ থেকে বে হওয়ার সাথে সাথে তার পিঠে আঘাত করে রাশেদা বলছে – যত নাটকবাজিই করস আজ আমার হাত থেকে তোর নিস্তার নেই। টাকা কারে দিছিস তাড়াতাড়ি বল। বাজারের সব উপাদান লিস্টি মিলিয়ে কেন আনিস নাই।
মায়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলল – দাম বেশি ছোটমা, সব কিছুর দাম বেশি। চড়া দামে কেনা লাগে সব। কাউকে টাকা দেইনিগো।
মায়ার কথা শুনে আরো চেঁচিয়ে রাশেদা বলল – আমাকে কথা বুঝাতে আসিস না। আজকে তোর সব ফ ষ্টি ন ষ্টি বের করব।
কথাটা বলেই মায়াকে লাথি মে রে ফ্লোরে ফেলে আবার লাঠি উঠাতেই দরজা ঠেলে ফাহিম বলল – আরেকটা আঘাতও ওকে করবেন না।
আচমকা পুরুষালী কন্ঠে খানিক ভড়কে গেলেও নিজেকে ধাতস্থ করে রাশেদা বলল – কিরে এই তোর না/গ/র? আমার টাকা ওকে দিছিস তাইনা?
রাশেদার কথায় মেজাজটা দপ করে চড়ে গেল ফাহিমের। সেও চেঁচিয়ে বলল – আপনাকে ডোমেস্টিক ভা য়ো লে ন্সে র মামলায় শ্বশুরবাড়ি ঘুরিয়ে আনতে পারি, তা কি আপনি জানেন!

ফাহিমের কথার জবাব ফাহিমকে না দিয়ে মায়ার বুক বরাবর আরেকটা লাথি বসিয়ে রাশেদা বলল – ভালোইতো জুটিয়েছিস। তোর কোন র সে র প্রেমিক আমার হাত থেকে তোরে বাঁ চা তে পারবে না। ওকে বলে দে।
লাথি খেয়ে ছিটকে পড়া মায়াকে এগিয়ে এসে হাত ধরে উঠিয়ে ফাহিম বলল – এক্ষুণি, এই মুহূর্তে তোমাকে এই ন র ক থেকে মুক্ত করতে চাই। তুমি কি রাজি?
নিভুনিভু দৃষ্টিতে ফাহিমের দিকে তাকালো মায়া। গতকালের আঘাতগুলোর পর আজকের চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিশ্বাস নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।
মায়ার অসহায় চাহনি ফাহিমকে আরো ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। সে আবারো বলল – তুমি কি রাজি?

ফাহিমের কথা শুনে রাশেদা বাজপাখির মত ছোঁ মে:রে মায়াকে টেনে নেয়ার আগেই ফাহিম তাকে সরিয়ে নিয়ে বলল – লিমিটে থাকুন। নয়লে আমার হাত থেকে আজ আপনাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
ফাহিমের রক্তচক্ষু রাশেদার ভয়ের কারণ হলেও সে থেমে থাকলো না। দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে আশেপাশের সকলকে জড়ো করে বললেন এই ছেলে জোর করে ঘরে ঢুকে মায়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মোটেও ঘাবড়ালো না ফাহিম কিন্তু মায়ার চোখে যেন বরষার বারিধারা। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মেয়েটা আজ নিজের সম্মানহানি হওয়ার ভয়ে গুমরে ম র ছে।
ফাহিম বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলল – আপনারা আশেপাশে থাকার পরও এই মেয়েটার উপর দিনের পর দিন যে অ ত্যা চা র হচ্ছে তা দেখেও প্রতিবাদ না করার কারণস্বরূপ আপনাদেরও মামলায় অভিযুক্ত করে ডা ন্ডা মে/রে ঠান্ডা করা উচিত নয়?
আমি সেদিকে যাবোনা। শুধু এই মেয়েটাকে এখন এই মুহূর্তে বিয়ে করে এই অভদ্র মহিলার হাত থেকে র ক্ষা করতে চাই। আপনারা চাইলে পুলিশি উপস্থিতিতে সকল প্রকার দায়িত্ব নিয়ে ওকে বিয়ে করতে চাই। চারতলায় আমার বন্ধু মিলন আছে, তাকে ডেকে আমার সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব জেনে নিন।

ফাহিমের কথায় সবাই বলল – সব শুনেও কিছু বলতে পারিনা কারণ দেখানো হয় এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। আজ তুমি প্রতিবাদ যখন করছো তাহলে তোমার কথাই থাক। এই কেউ উপর তলা থেকে মিলনকে ডেকে নিয়ে আসো।
নিজের মতে সকলের আস্কারা পেয়ে মায়ার দিকে একনজর তাকালো ফাহিম। কপালের ডানপাশটা বেয়ে র ক্তে র ফোঁটাগুলো ভ্রুঁতে বাঁধা পেয়ে চোখের পাশ দিয়ে গাল পর্যন্ত এসেছে।
ফাহিম অনুভব করছে তার বুকের বামপাশে থাকা মাংশল পিন্ডটার অবাধ নাচুনি। এত তাড়াতাড়ি এই দিনটা তার জীবনে আসবে সে কস্মিনকালেও ভাবেনি। এই বুঝি নিয়তি!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here