আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ১২

0
917

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২
_________________

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। চোখে মুখে প্রখর রাগ আর বিরক্তির ছাঁপ তার। এত সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সময় যে তার ভাই তাকে কফি বানানোর হুকুম দিবে এটা সত্যি ভাবে নি অয়ন। এখনও বুকটার ধ্যাত করে ওঠার ভাবটা যায় নি অয়নের। অয়নের ইচ্ছে করছে কফির বদলে তার ভাইটাকে ১০ চামচ চা পাতা দিয়ে কড়া করে লিকার চা খাইয়ে দিতে। মানুষ কতটা ত্যাড়া হলে সিরিয়াস মুহূর্তেও কফি বানানোর কথা বলতে পারে। মাঝে মাঝে অয়ন নিজেও বুঝে পায় না তার ভাইটা এমন ত্যারা কেন? তপ্ত নিশ্বাস ফেললো অয়ন। রাগ তো হচ্ছে ঠিকই তারপরও মেয়েটা কে ছিল জিনিসটা না জানা পর্যন্ত মনটায় শান্তি মিলছে না অয়নের। প্রায় আধঘন্টার মতো সময় নিয়ে ভাইয়ের জন্য কফি বানালো অয়ন। তারপর দুইটা কাপে কফি ঢেলে আলতো পায়ে এগিয়ে গেল ভাইয়ের রুমটার দিকে। অয়নকে জানতেই হবে মেয়েটা কি হয় অপূর্ব ভাইয়ের। গুরুত্বপূর্ণ কেউই হবে হয়তো নয়তো তাদের গুপ্তজায়গায় কখনোই নিয়ে যেত না।’

এইরকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেল অয়ন তার ভাইয়ের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজায় নক করলো অয়ন। বললো,

‘ ভাই আসবো কফি এনেছি।’

অপূর্ব তখন তার রুমের বিছানার পাশে থাকা জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল। হাতে ছিল প্রিয়তার রেখে যাওয়া কানের দুলটা। অয়নের আওয়াজ কানে আসতেই সর্বপ্রথম কানের দুলটা পকেটে পুড়লো অপূর্ব তারপর বললো,

‘ হুম আয়।’

অয়ন ঢুকে পড়লো তারপর ঝটপট ভাইয়ের দিকে এককাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ ভাই এবার কিন্তু সব বলতে হবে আমায়।’

অপূর্ব জবাব দিলো না। অয়নের থেকে কফির কাপটা নিয়ে বিছানায় বসে শান্ত গলায় বললো,

‘ কি শুনতে চাস তুই একটু বলবি আমায়।’

ভাইয়ের কথা শুনতেই দ্রুত পায়ে ভাইয়ের সামনাসামনি বসলো অয়ন। নিজের হাতের কফির কাপটা রাখলো বিছানার উপর। তারপর উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ভাই হেয়ালি করলে কিন্তু চলবে না।’

অপূর্ব কফির কাপে চুমুক দিলো। কিছুক্ষন কফির সাধটা পর্যবেক্ষণ করে বললো,

‘ আরটু চিনি দিবি না।’

‘ কম হয়েছে খুব। আমি চিনির বোয়াম নিয়ে আসবো ভাই?’

‘ না তার দরকার নেই। এখন বল কি জানার আছে তোর রাত তো কম হয় নি, ঘুমাবি না?’

অয়নের আগ্রহ বাড়লো, চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটলো। বললো,

‘ ঘুমাবো পরে। আগে বল ভাই মেয়েটা কে ছিল? তোর সাথে পরিচয় কি করে হলো? নাম কি? আমাদের গুপ্তস্থানে কেন নিয়ে গেলি?’ মেয়েটা কি হয় তোর?’

অয়নের পর পর করা সব প্রশ্নগুলোই মন দিয়ে শুনলো অপূর্ব। কফির কাপে লম্বা চুমুক দিলো একটা তারপর কিছুক্ষন সময় নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

‘ মেয়েটা আমার কেউ হয় না ছোট ভাই আর তুই যেটা ভাবছিস সেটা তো একদমই নয়।’

অয়নের আশার আলো নিভে গেল এক মুহূর্তেই। ছ্যাকা খাওয়ার মতো বুকটা দক করে উঠলো। গরম পানি পড়ার মতো ছ্যাত করে উঠলো শরীর তার ভাইটা কি পাষাণ এতগুলো প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এটা কি জবাব দিলো এমনটা আশা করে নি অয়ন। শুধু শুধু এত কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে ভাইয়ের জন্য কফি বানালো। যদিও এমনি বললেও বানাতো কফি। অয়নের চোখে মুখে হতাশার ছোঁয়া। অপূর্ব দেখলো সেটা সাথে খুবই নীরব ভাবে বললো,

‘ এজন্যই বলে আগে ভাগে বেশি ভাবতে নেই।’

অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অয়ন ভাইয়ের দিকে। বিছানার উপর থেকে কফির কাপটা নিলো সে। তারপর এক চুমুক দিয়ে বললো,

‘ তুই খুব খারাপ ভাই।’

হাসলো অপূর্ব। বললো,

‘ যাহ বাবা আমি কি করলাম। তুই ভুলভাল ভেবে নিলে দোষটা কি আমার।’

‘ মিথ্যেও তো বলা যায় নাকি।’

‘ তোর ভাবি লাগবে এটা আগে বলবি তো।’

ভাইয়ের কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে খুশি মাখা মুখ নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ তুই আমার ভাবি আনবি ভাই?’

‘ ভাবি যদি বাজারে কিনতে পাওয়া যেত তাহলে ঠিক নিয়ে আসতাম।’

চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো অয়ন। বললো,

‘ মজা নিচ্ছিস ভাই।’

‘ তোর মতো ভাই থাকলে মজা নিতে হয় আমার। মজা তো এমনি হয়ে যায়।’

জবাব দিলো না অয়ন। হয়তো সত্যি বেশি বেশি ভাবা৷ ঠিক হয় নি তার। অয়ন প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো,

‘ যাক গে ওসব বাদ দে আগে বল মেয়েটা কে ছিল আমাদের গোপনীয় জায়গায় কেন নিলি ভাই তুই তো জানিস ওই জায়গাটা তুই, আমি, আকিব তিনজন ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।’

অপূর্ব পুনরায় কফির কাপে চুমুক দিলো। তারপর তার সাথে হয়ে যাওয়া প্রিয়তার সাথে ঘটা কাহিনির পুরোটাই বললো সে অয়নকে। অয়ন সব শুনে অবাক হলো, চমকালোও খুব। সাথে বললো,

‘ সবই ঠিক আছে ভাই। কিন্তু মেয়েটার নামটার কি ছিল?’

অয়নের এবারের কথা শুনে বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ কি জানি কি ছিলো। কিছু একটা হবে হয়তো।’

অয়ন বেশ অবাক হলো ভাইয়ের কথা শুনে। মেয়েটাকে এত সাহায্য করলো অথচ মেয়েটার নামটাই জানলো না। অবশ্য তার ভাই তো, হেল্প করার পর আর থোড়াই কিছু জিজ্ঞেস করে। অয়ন উঠে দাঁড়ালো তার কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে আর খাওয়া যাবে না। অয়ন দাঁড়াতেই অপূর্ব বললো,

‘ এখন গিয়ে ঘুমা মাথার কিলবিল কমেছে তো।’

উওর দেয় না অয়ন। উল্টো বলে,

‘ বিয়েটা করে নে না ভাই।’

উওরে স্ট্রিট জবাব অপূর্বের,

‘ যাতে তুই অহনাকে খুব দ্রুত বিয়ে করতে পারিস।’

অপূর্বের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় অয়নের। অহনার কথা অপূর্ব ভাই জানলো কি করে? অয়ন ভয়ানক চমকানোর চাহনীর নিয়ে বললো,

‘ তুই অহনার কথা জানিস ভাই?’

উওরে কফির কাপটা অয়নের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বাকি কথা পরে বলবো।’

অয়নও আর জোর করে নি। ভাইয়ের হাত থেকে খালি কফির কাপটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে সেও চলে যায় তার রুমের দিকে। অয়ন বুঝেছে এখন আর তার ভাইকে দিয়ে কিছু বলানো যাবে না।’

অয়ন বের হতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অপূর্ব। আচ্ছা বেঁচে থাকার জন্য অয়নের ভাবি আনা কি খুব জরুরি। একদমই নয়। ভেবেই বিছানায় শুতে নিলো অপূর্ব পরক্ষণেই পকেট থেকে প্রিয়তার কানের দুলটা বের করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ আজ শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার ভাইটা আমায় নিয়ে ভুলভাল ভাবলো। এই অলংকার ফেলে যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল। দিলে তো মেয়ে আবার এক ঝামেলায় ফেলে। এখন এটা দিতে হলেও তো তোমার কাছে যেতে হবে। আচ্ছা আমাকেই কি যেতে হবে নাকি আকিবকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো। অভিমান হবে তোমার, রাগ করবে কি এতে।’

হেঁসে ফেলে অপূর্ব। নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজে মাথা গেছে তার নয়তো এইরকম ভুলভাল কথা বলার মানুষ তো অপূর্ব নয়। অপূর্ব আর ভাবলো না দুলটা তার রুমের ডান দিকের ড্রয়ারটার ভিতর থেকে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এবার তার ঘুম দরকার, বড্ড ক্লান্ত লাগছে এখন। জীবনটা একদিন ক্লান্তিতে ক্লান্তিতেই শেষ নিশ্বাস ফেলে চলে যাবে দুনিয়া ছেড়ে। এই দু’দিনের দুনিয়ায় কতই না ক্লান্তি আসে সত্যি অদ্ভুত এই জীবন আর অদ্ভুত তার কাহিনি।’

____

মাঝপথে কাটলো দু’দিন। এই দু’দিন অনেকটা ব্যস্ত থাকায় প্রিয়তার খোঁজ খবরটা ঠিক নিতে পারে নি অপূর্ব। ব্যস্ত জীবনটা বড্ড প্যারা দেয় অপূর্বকে।’

দুপুর দুটো। রোদ্দুরে ঘেরা চারপাশ গরমের তোলপাড় চলছিল খুব। অপূর্ব তার ক্লান্ত মাখা শরীরটা নিয়ে এসে বসলো গাড়িতে। আকিব বসা ছিল ড্রাইভার সিটে। অপূর্ব বসতেই তার দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিল আকিব। বললো,

‘ খুব ক্লান্ত লাগছে ভাই?’

অপূর্ব জবাব দেয় না। চোখ বন্ধ করে থাকে কতক্ষণ তারপর বলে,

‘ ছেলেদের কি ক্লান্ত হলে চলে আকিব।’

আকিব থমকে যায়। কথাটা সহজ লাগলেও এর মাঝে লুকিয়ে আছে এক রক্তিম বাস্তবতা। আকিব চুপ থাকে কিছু বলতে পারে না। উল্টো প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,

‘ বাড়ি যাবেন ভাই?’

‘ আজ কি আর কোথাও যাওয়ার আছে আকিব? মিটিং সিটিং আচ্ছা মুখার্জি মশাই তোমায় কি কোনো ফোন করেছিল।’

‘ না ভাই তিনদিন আগে আপনি ঢাকা আসার পর করেছিল আমি ধরি নি।’

‘ কেন?’

‘ ধরে কি করতাম ভাই ফোনটা আমায় করলেও চাইতো আপনায় আর সেদিন আপনি ছিলেনও না আমার সাথে।’

‘ ওহ,

‘ ভাই আজকের পত্রিকা দেখে ছিলেন?’

‘ না তো কেন?’

‘ শুনেছি আবু তালেব মানে আশকোনার ছাত্রদলীয় নেতা নাকি পদত্যাগ করে ওনার ছেলেকে সেই আসনে বসাতে চাচ্ছেন। মানে সামনের ইলেকশনে আবু তালেব দাঁড়াবে না তার বদলে ওনার ছেলে দাঁড়াবে।’

‘ ভালো তো বয়স তো কম হয় নি। কতদিন আর থাকবে।’

‘ একটা সিকরেন্ট কথা কি ভাই আবু তালেবের ছেলে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে বেআইনি পদে লিপ্ত আছেন। আপনার উপরও নাকি কড়া নজর রাখছেন।’

‘ সেটা কেন?’

‘ হয়তো আপনি রাজনীতিতে আছেন এটা মানতে চাইছে না ওই ছেলে। আপনার জায়গাটা নিতে চায় ভাই।’

উওরে অপূর্ব কিছু বলে না। গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকে। হঠাৎই বলে অপূর্ব,

‘ গাড়ি ঘোরাও আকিব তোমার গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি যাবো?’

আকিবের বুকটা কেঁপে ওঠে। এই এক জ্বালা না আজই আরোহীর সাথে ব্রেকাপ করবে আকিব। এইসব কাঁপাকাঁপি একদমই সহ্য হয় না আকিবের। কচুর পিরিতি এইসব মানসে করে। এর চেয়ে অপূর্ব ভাইয়ের মতো সিঙ্গেল থাকাই ভালো। আকিব নিজেকে শান্ত করলো। বললো,

‘ এখনই যাবেন ভাই?’

‘ হুম চলো কুইক একজনের ফেলে যাওয়া জিনিস ফেরত দিতে হবে।’

আকিব আর কিছু বলে না। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে তার গার্লফ্রেন্ডের বাড়ির উদ্দেশ্যে।’
____

কলিংবেল বাজতেই আরোহী এসে দরজা খোলে। সামনেই আকিবকে দেখে খানিকটা অবাক স্বরে বলে,

‘ তুমি?’

‘ হুম আমি সরো জলদি অপূর্ব ভাই এসেছে?’

এরই মাঝে অপূর্ব হাজির। আরোহীর সামনে এগিয়ে এসে বলে,

‘ কেমন আছো আরোহী?’

উওরে মুচকি হাসলো আরোহী। বলে,

‘ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো ভাইয়া?’

‘ হুম ভালো মেয়েটাকে ডাকো আরোহী আমি ভিতরে ঢুকবো না দুটো কথা বলেই চলে যাবো।’

সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে কালো ছায়া নেমে আসে আরোহীর মাঝে। আরোহীর চেহারা দেখে অপূর্ব বেশ হতাশা নিয়ে বলে,

‘ কি হয়েছে আরোহী?’

অপূর্বের কথা শুনে আরোহী বেশ নিরাশ হয়ে বলে,

‘ ওহ তো নেই।’

আরোহীর কথা শুনে এবার আকিব বলে,

‘ নেই মানে কোথায় গেছে?’

‘ ও তো চলে গেছে। আজ সকালেই গেছে।’

আরোহীর কথা শুনে অপূর্বের অবস্থা বোঝা গেল না। সে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে অপূর্ব,

‘ তুমি না বলেই চলে গেলে মেয়ে।’

___

‘তন্দ্রা বিলাস’ নামের এক আলিশান একতলা ছাঁদ বিশিষ্ট বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here