আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ১১

0
924

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১
_________________

রাতের অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। গাছের পাতা নড়ছে আনমনে আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে বারে বারে। যেন মেঘ কাঁপিয়ে আকাশ বেয়ে ঘন জোরে বৃষ্টি নামবে এমন। অপূর্ব এখনও আকাশ পথে তাকিয়ে আছে। শহর জুড়ে রাতের নিস্তব্ধতার ছোঁয়া, অপূর্ব আকাশের অবস্থা দেখে বেশ বুঝতে পেরেছে আজ বৃষ্টি নামবে আবার। বৃষ্টি, এই বৃষ্টি কিছু একটা মনে করায় অপূর্বকে। কখনো সেইভাবে বৃষ্টি নিয়ে ভাবা হয় নি অপূর্বের। কিন্তু হুট করেই আজ কেন যেন বৃষ্টি নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে তার। অপূর্ব কি ভেবে যেন তার চোখ বুঝিয়ে নিলো, রাতের আকাশে তাঁরা ছিল না কোনো। দূর আকাশ বেয়ে ঘন কালো মেঘের আড়ালে শুধু লুকিয়ে ছিল চাঁদ মামা। অপূর্ব চোখ বুঝে কিছু একটা ভাবতে লাগলো,

ঠিক কালকে কথা। আজকের এমন এই সময় সে বাসে ছিল বাস চলতে ছিল তার পাশে বসা ছিল এক কালো বোরকা পরিধিত মেয়ে। সে মেয়ের চোখে কি অদ্ভুত মায়া। ভয়ের চোটে তার হাতটা চেপে ধরে সাহায্য চেয়েছিল মেয়েটি। কি শীতল ভেজা কন্ঠ মেয়েটার। মায়া মায়া চোখ দুটোর কথা আবার মনে উঠলো অপূর্বের। সঙ্গে সঙ্গে অপূর্ব চোখ খুলে ফেললো না প্রিয়তার ওই চোখ দুটো নিয়ে বেশি ভাবতে পারছে না অপূর্ব। অপূর্ব আজও বুঝলো না প্রিয়তার ওই চোখ দুটোতে কি আছে যে সে বেশিক্ষণ ভাবতে পারছে না। কই এর আগেও তো আরো কত মেয়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলো অপূর্বের তখন তো তাদের চোখ দেখে এমন কিছু হয় নি। অপূর্ব আবারও আফসোসের স্বরে বললো,

‘ ইস তোমার নামটা যদি এক বার জিজ্ঞেস করতাম মেয়ে।’

এমন সময় অপূর্বের ফোনটা বেজে উঠলো তুহিন ফোন করেছে। অপূর্ব তার হাতের কোকের বোতলটায় আবার চুমুক দিলো। তারপর ফোনটা রিসিভ করে বললো,

‘ হুম বলো তুহিন?’

প্রতি উওরে অপরপ্রান্তে থাকা তুহিন বলে উঠল,

‘ ভাই লোকটার হদিস পাওয়া গেছে আমার লোকেরা ওকে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ধরে ফেলেছে। সকালের আগেই হয়তো ঢাকা পৌঁছে যাবে।’

তুহিনের কথা শুনে তেমন কোনো রিয়েকশন দিলো না অপূর্ব। শুধু বললো,

‘ গুড। ওকে আমাদের পুরনো সেই বাংলোতে নিয়ে যাও তুহিন। তারপর ভালো মতো সেবাযত্ন করো শুধু নামটা জিজ্ঞেস করো। না পারলে দুদিন পর আমি দেখছি।’

‘ আচ্ছা ভাই।’

উওরে আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল অপূর্ব। জোরে নিশ্বাস ফেলে আবারও আকাশ পথে তাকালো অপূর্ব। এরই মাঝে চোখের কোনায় এক ফোটা বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে পড়লো অপূর্বের। অপূর্ব উঠলো না বৃষ্টি, এই বৃষ্টিকে অপূর্ব ঠিক কতটা ভালোবাসে জানা নেই তার। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপূর্বের কাছে এই বৃষ্টির মানে হলো এক অদ্ভুত অনুভূতি। এমনই এক অনুভূতি যা এর আগে কখনো ফিল করে নি অপূর্ব।’

কিছুক্ষনের মাঝেই ধরনী জুড়ে ঝিরিঝিরি শব্দ করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল সব কিছু। অপূর্বদের বাড়ির ছাঁদ, ছাঁদের এক কর্নার জুড়ে থাকা ফুলের বাগান। এই বাগানটা অপূর্ব মায়ের তৈরি বেশ যত্ন নিয়ে গড়েছে এগুলো। অপূর্বদের বাড়ির চারপাশ জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন ফুলের ছড়াছড়ি। বাড়ির ভিতর ঢোকায় সময় সেই ফুলের সুভাষ প্রায় সবার নাকেই আসে।’

অপূর্ব ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টি নামক আল্লাহর দেওয়া প্রাকৃতিক সুন্দর সৃষ্টি তাকে চরমভাবে ভিজিয়ে দিচ্ছি। অপূর্বের গায়ে জড়ানো কালো শার্টটাকে ভিজিয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে দিচ্ছে। চুল ভিজিয়ে নামিয়ে দিচ্ছে কপালে। ফর্সা শরীরটায় বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে আরো যেন জ্বল জ্বল করছে। ইস! বৃষ্টিতে ভেজা এই কালো শার্ট পরিধিত সুদর্শন যুবককে মারাত্মক সুন্দর লাগছে যেন। নির্ঘাত এই অবস্থায় তাকে কোনো মেয়ে দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হতো। অপূর্ব বিড় বিড় করে বলে উঠল,

‘ সেদিন বৃষ্টির ভিড়ে আসা পাশে বসা মেয়েটি
আজ আমায় এত জ্বালাচ্ছে কেন?’

….
বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ কানে বাজতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়তা। বৃষ্টি প্রিয়তার ভীষণ পছন্দের। এই মুহূর্তে বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণভাবে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু শরীরের যা অবস্থা তাতে বৃষ্টিতে ভিজলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া লাগবে না। প্রিয়তা বেলকনির দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু পরক্ষণেই কি ভেবে যেন গেল না। আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে। প্রিয়তা ডিনার সেরে মাত্রই রুমে বসেছিল। আরোহীও এসেছিল সঙ্গে কিছুক্ষন গল্প করে চলে গেছে তার রুমে। প্রিয়তা নীরবেই চুপটি করে কাঁথা জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বুঝিয়ে নিলো নিমিষেই সঙ্গে সঙ্গে অপূর্বের ফেসটা ভাসলো তার সামনে। আনমনেই হাসলো প্রিয়তা তবে চোখ খোলে নি অভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো আনমনে। তবে বিড় বিড় করে বলেছে শুধু,

‘ আপনি হলে আমার জীবনের প্রথম সেই পুরুষ অপূর্ব। যাকে প্রথম দেখায় আমার ভালো লেগেছে। ঝড় উঠেছে বুকের মাঝে, বৃষ্টি ঝড়ছে বারে বারে। তবে বেশি ভাববেন না এই ভালো লাগা কোনোদিনও প্রকাশ করার মতো মেয়ে প্রিয়তা নয়। আর হয়তো আমাদের দেখাই হবে না ভালো থাকবেন অপূর্ব।’

তপ্ত নিশ্বাস ফেললো প্রিয়তা তারপর বেশি না ভেবেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো সে।’

___

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা ছাড়িয়েছে তখন। এখনও ঝিরিঝিরি শব্দের বৃষ্টিরা ভিজিয়ে দিচ্ছে অপূর্বকে। অপূর্ব এখনও বসে আছে চুপচাপ। কেন যেন এই মুহূর্তে উঠে নিজ রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। এমন সময় হঠাৎই ছাতা মাথায় তার দিকে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসলো অয়ন। বিস্ময়কর কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ভাই, এতরাতে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিস কেন ঠান্ডা লেগে যাবে তো?’

অপূর্ব ফিরে তাকালো অয়নের দিকে। বললো,

‘ তুই এখানে?’

‘ রুমে চল ভাই, বৃষ্টিতে ভিজে কি অবস্থা করেছিস নিজের চল জলদি।’

অপূর্ব শুনলো অয়নের কথা। বেশি কিছু না বলেই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। অপূর্ব দাঁড়াতেই অয়ন বলে উঠল,

‘ এভাবে কেউ বৃষ্টি ভেঁজে ভাই, বাবা না বললে তো জানতামও না।’

প্রতি উওরে অপূর্ব আর কিছু বললো না শুধু নিশ্চুপে ছোট ভাইটার মুখপানে একপলক তাকালো সে।’

—-
ঘড়ির কাঁটা সুর সুর করে বাড়ছিল, রাত হচ্ছিল গভীরও থেকে আরো গভীরত অপূর্ব রুমে ঢুকে ভেজা শরীর নিয়ে ঢুকে পড়ে ওয়াশরুমের দিকে। বৃষ্টিতে ভেজার পর গোসল না করলে কেমন ইরিটেশন হয় তার। আধঘন্টা পর ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় অপূর্ব। অয়ন তখনও অপূর্বের বিছানায় বসে ছিল। অপূর্ব অয়নকে এখনও নিজের রুমে বসে থাকতে দেখে বিস্মিত কন্ঠে বললো,

‘ এখনও রুমে যাস নি কেন নাকি আজ রাতে ভাইয়ের রুমে থাকারই ফন্দি আঁটছিস মনে।’

প্রতি উওরে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা বললো অয়ন,

‘ গুপ্তচরে নিয়ে যাওয়া মেয়েটা কে ছিল ভাই?’

অপূর্ব চমকালো, বেশ অবাকও হলো অয়নের কথা শুনে। তবে প্রকাশ করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জেনেও না জানার ভান করে বললো,

‘ কোন মেয়েটা?’

ভাইয়ের উওরে চোখে মুখে বিষন্নতা ধেঁয়ে আসলো অয়নের মুখমন্ডলে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তক্ষৎনাত। বললো,

‘ এখন তো না চেনার ভান করবি তাই না ভাই।’

‘ সত্যি ভান করলাম নাকি বুঝলাম না তো।’

অপূর্বের ত্যাড়া উওরে অয়ন হতভাগ তবে দমলো না পকেট থেকে একটা সোনার কানের ভাড়ি ঝুমকা বের করে অপূর্বকে দেখিয়ে বললো,

‘ এই কানের অলংকারটা যার আমি তার কথা বলছি ভাই এখন নিশ্চয়ই মনে পড়েছে আমি কোন মেয়ের কথা বলছি।’

অপূর্ব অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো একবার অয়ন তো একবার কানের অলংকারটার দিকে। অতঃপর চোখ মুখ কুঁচকে অয়নের হাত থেকে কানের অলংকারটা তেড়ে নিয়ে বললো,

‘ এটা তুই কোথায় পেলি?’

‘ যেথায় তুই মেয়েটাকে রেখেছিলি? মেয়েটা কে ছিল ভাই? কি হয় মেয়েটা তোর?’

প্রতি উওরে নিজ মনে বললো অপূর্ব,

‘ এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি খুব জরুরি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর অপূর্বের কাছে নেই।’

অপূর্বের ভাবনার মাঝেই আবারও প্রশ্ন ছুড়লো অয়ন। বললো,

‘ কি হলো ভাই কথা বলছিস না কেন?’

অয়নের প্রশ্নের জবাব দিলো না অপূর্ব। উল্টো নিজে প্রশ্ন করলো অয়নকে। বললো,

‘ সেসব বাদ দে আগে বল এটা তুই কিভাবে পেলি?’

উওরে বেশি না ভেবে বললো অয়ন,

‘ সন্ধ্যার অনেক পরে আমি গুপ্তচরে গেছিলাম ভাই, তখনই ওটা টেবিলের উপর পেয়েছিলাম। তখন সন্দেহের বসে আকিবকে ফোন করি আর তখনই ও সব বলে আমায়।’

অয়নের কথা শুনে আকিবকে চরম লেভেলের একটা ধমক দিতে মন চাইলো অপূর্বের কিন্তু দিলো না। এই কথাটা অয়নকে বলাটা কি খুব জরুরি ছিল? এখন হাঁটতে বসতে মেয়েটাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে অয়ন। আর প্রশ্নে প্রশ্নে বাবার কানে কথাটা গেলে তো কাম সারছে। তাকে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল ভাবতে দু’মিনিটও সময় নিবে না। অপূর্বের ভাবনার মাঝেই অয়ন আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো অপূর্বকে। বললো,

‘ এবার তো বল ভাই মেয়েটা কে ছিল?’

উওরে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ কফি খাবো বানিয়ে নিয়ে আয়?’

অপূর্বের কথায় থতমত খেয়ে গেল অয়ন। এমন জরুরি মুহূর্তে এমন কথা একদমই আশা করে নি সে। অয়ন ভেবেছিল এবার হয়তো ভাবির দেখা মিলবে তার কিন্তু কি হলো। তার ভাইটা এমন কেন? এমন একটা মুহূর্তে এই কথা বলে কেউ। বুকটা যেন হুট করেই ছ্যাত করে উঠলো।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here