আছি তোমার পাশে পর্ব ৯+১০+১১+১২

0
1488

#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ৯+১০+১১+১২
লেখায়- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.

রায়ানের অসহায় কন্ঠে বলা কথাগুলোতে আমি কেমম রিয়েক্ট করবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। নিজেকেও অসহায় মনে হচ্ছে। শান্তনা কিভাবে দিতে তাও যেনো ভুলে গেলাম। রায়ান আমার দিকে তাকালো। আমার দু হাত তার হাতের মুঠোয় রেখে বলল, ‘আমায় কেউ বুঝে না রোদু, কেউ না। আজ তোমাকে সবকিছু বলে কেমন শান্তি লাগছে। তোমার সাথে বড্ড অন্যায় করা হয়েছে রোদু। ছেলে হয়ে মায়ের ইমোশনের কাছে হেরে যেতে হয়েছে আমাকে। মাফ করো আমায় রোদু। আমি সত্যি বড্ড অসহায়।’

আমি কিছু বললাম না। কেবল হাতটা শক্ত করে আকড়ে রাখলাম। এতেই যেনো রায়ান ভরসা পেলো।

সে বলতে লাগলো,
‘সে সময়টাতে বিপদ চারিদিক থেকে আমাকে ঘিরে ধরেছিলো। আমি ঠিক কার সাথে লড়বো তাই ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। একদিকে আমার বাবা-মা ভাই অন্যদিকে রোদুসি। রোদুসিকে দেখলেই আমি ভীষণ রকম প্রতিবাদী হয়ে উঠতাম। মন চাইতো সেই মুহুর্তেই অই জানোয়ারকে খুজে বের করে শেষ করে দেই।যে রোদুসির সত্ত্বা টাকে নষ্ট করে দিয়েছে।
যে রোদুসির হাসি ছাড়া ঠোটে বুলি ফুটতো না। সে রোদুসি হাসতে ভুলে গিয়েছিলো। সেই রোদুসি হারিয়ে গিয়েছিলো। যে রোদুসি আমার জন্য পাগল ছিলো। কত শত পাগলামু করে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিলো সেই রোদুসি আমাকে দূর দূর করে সে সময়টায় তাড়িয়ে দিত। বুঝতে পারছো রোদু! বুঝতে পারছো?’

রোদুসিকে হাসপাতালে নিয়ে সব ধরনের টেস্ট করানোর পর জানতে পারলাম রোদুসি প্রেগন্যান্ট। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। রোদুসির বাবা সাথে সাথেই ডিসাইড করে ফেললেন এবোর্সনের। বিশ্বাস করো রোদু আমি ঠিক কি চাচ্ছিলাম আমি জানি না। কথাটা শুনার পর ঠিক কতটা সময় নিজের মাঝে ছিলাম না তা আমার সত্যিই অজানা। আমার হুশ আসলো যখন রোদুসির চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ কর্ণদয়ে পদার্পণ করলো। ছুটে গেলাম রোদুসির কাছে। সে চিৎকার করে বলছে কেউ পারবে না তার কাছ থেকে তার সন্তান নিয়ে যেতে। সে দিবে না তার বাচ্চা নষ্ট করতে। এইটুক একটা মেয়ে। নিতান্তই বাচ্চা একটা মেয়ে কিনা নিজের বাচ্চার কথা বলছিলো। তুমি ভাবতে পারো রোদু?এর দুদিন আগেও সে কত রকমের পাগলামু করেছে আমার সাথে। কত ধরনের বায়না ধরেছে। প্রাণবন্ত কিশোরীর ন্যায় খিলখিলিয়ে হেসেছে। তার এই অবস্থা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কেবল চোখের পানি ফেলছিলাম। রোদুসির কান্না সেদিন হাসপাতালের প্রত্যেকটা সদস্যের হৃদয় নাড়িয়েছে। মুষ্টিবদ্ধ হাতে যখন রুমের ভেতর কান পেতে ছিলাম। কান্নারত মিষ্টি অসহায় এক মোলায়েম কন্ঠ এসে কানে ঠেকেছে। কত সুন্দর প্রাপ্ত বয়স্কদের মত সে বলছিলো,

‘মা মাগো দেখো ওরা আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলতে চাইছে। আমার এইটুকু বাচ্চাটাতো আমার পেটে মা। এখনো আসে নি। যার সাথে আমার রক্ত মিশে আছে মা। যে দুনিয়াতে এসে আমাকে মা বলে ডাকবে। আমি যখন তোমাকে প্রথম মা বলে ডেকেছিলাম তুমি তখন খুশি হও নি মা? তাহলে সে যখন আমাকে মা বলবে আমি কতটা খুশি হব ভাবতে পেরেছো? তুমি ওদের বলে দাও মা আমি আমার বাচ্চা দিব না ঠিকাছে?

ও মা কথা বলছো না কেনো? ও বুঝেছি। তুমি মনে হয় বুঝতে পারছো না। কিংবা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো তাই তো? আমি আর তোমার কোনো কথা ফেলবো না মা। আমি তোমার আর বাবার সব কথা শুনবো। আমি প্রতিদিন নিয়ম করে খাবো। আমি খেলে তো আমার বাচ্চাও খাবে তাই না মা আমি খাবো। বেশি বেশি খাবো। এই এত্ত এত্ত!. আর শুনো মা তুমার সব কথা শুনবো।
রা.. রায়া.. রায়ানের কাছেও যাবো না। ওর জন্য আর পাগলামু করবো না। ঐ যে সুমাইয়া আছে না? আমাকে হিংসা করতো? ওর সাথে তুমি রায়ানের বিয়ে দিয়ে দাও। ওরা সংসার করুক? হ্যাঁ? এই মা তুমি কাদছো কেনো? কথা বলো না’

রোদুসির বলা শেষের কথা গুলো শুনে আর থাকতে পারি নি। ভেতরে ঢুকে দেখি আন্টি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আমি এক টানে ওকে আমার দিকে এনে বললাম, ‘এই কি বললে তুমি?’

সে আমার চোখে চোখ রাখে নি রোদু। সে ভিতু ছিলো। কিন্তু আমাকে বুঝতে দিতে চায় নি। মুখে রাগের লালীমা এনে আমাকে কড়া কন্ঠে বলেছিলো,
‘যা চলে যা। কতবার বলেছি আমার কাছে আসবি না।’

আমি তার হাত ধরে শক্ত কন্ঠে বলেছিলাম। আসবো একশো বার আসবো। আমার হাত ছিটকে সরিয়ে ফেলে সে। ধস্তা ধস্তি হয় আমাদের। আন্টি এসে রোদুসিকে সরিয়ে নিলে সে টেবিলের ওপর থেকে ছুড়ি নিয়ে আমার উপর ছুড়ে মারে। তার টার্গেট আমি ছিলাম না। আর তাইতো আমার কপালে রক্ত দেখে দুহাতে মুখ ঢেকে হুহু করে কেদে দেয়। তার কান্নায় আমার ঠোটের কোণে হাসি এসেছিলো। যতই অস্বীকার করুক আমি তো জানি সে আমায় ছাড়া অসম্পূর্ণ। দুহাতে আগলে নেই তাকে। ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়ে আমার বুকেই পরে থাকে। আংকেল আন্টিকে নিয়ে বেরিয়ে যান।

রোদুসি আহ্লাদে কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠে, ‘চলে যেতে বলেছি’

আমি হেসে বললাম, ‘আর আমি নিয়ে যেতে এসেছি’

সে আমার কথার উত্তর দিলো, ‘আমি আর একা নই’

আমি আলতো মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, ‘ভালোবাসায় ভাগ বসানোর মানুষ আসছে সহ্য হবে তো?’

সে আমার গলা জড়িয়ে হুহু করে কেদে দিলো। তার কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারলেও সে মুহুর্তে তাকে ভেংে যেতে দেওয়া যাবে না কেবল একটা কথায় মাথায় বাজছিলো। যতটুকু পারি বুঝ দিলাম। আমি তার পাশে আছি। কেউ কিচ্ছু বলতে পারবে না। আমার বউ কেবল সেই হবে। মেয়েটা আমার কথা বিশ্বাস করলেও আমি আমার কথা রাখতে পারি নি রোদু’

রায়ান শব্দ করে কেদে দিলো। মুহুর্তের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে তার চোখের কার্নিশ বেয়ে পরা জলে আমার পিঠ ভিজিয়ে দিলো। আমার কাধে মুখ গুজে সে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। প্রিয়জনের চোখের পানিটাই সহ্য করতে পারছি না আর সে কিভাবে রোদুসিকে ঐ অবস্থায় সহ্য করেছে ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।

রায়ান আমার সাথে মিশে আছে। আমাদের মধ্যে এক ইঞ্চি পরিমাণও দূরত্ব বিদ্যমান নেই। তবুও মনের মধ্যে কোনো রকম অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে না। কেবল একটাই ইচ্ছা জাগছে ইশ কোনো ভাবে রায়ানের কষ্ট গুলো যদি দূর করে দিতে পারতাম। কোনো এক অদৃশ্য ম্যাজিকের সহায়তায় যদি সম্পূর্ণ অতীতকে মুছে দিতে পারতাম। এসবের কোনটাই সম্ভব নয় আফসোস। তবে রায়ানের পাশে থেকে তার সাপোর্ট হয়ে ভালোবেসে বেচে থাকা সম্ভব। হ্যাঁ সম্ভব। থাকবো আমি তোমার পাশে। তোমার অস্তিতে নিজেকে বিলীন করবো ভালোবেসে। আছি তো, আমি আছি তোমার পাশে। মনে মনে কথাগুলো আওরালাম। অটোমেটিক আমার হাত রায়ানের পিঠ ছুলো। রায়ান আমাকে আরো শক্ত বাধনে বেধে ফেললো।

আস্তে করে সোফার বালিশটা এনে পিঠে দিলাম। রায়ান আমার উপর হ্যালান দিয়েই চোখ বুজে আছে। আলতো করে বললাম, ‘রুমে গিয়ে শুই?’

‘উহু’ -রায়ানের ভাঙ্গা গলা। বাধা দিলাম না। থাক কিছু সময় এভাবে। আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। রায়ান উঠে বসলো। আমার উড়না নিয়ে মুখ মুছে বললো, ‘দেখো তো আমার চোখ মুখ কি ফুলে গিয়েছে?’

আমি মাথা দিয়ে বুঝালাম হ্যা। সে মলিন হেসে বলল, ‘রোদুসি দেখলে হাসতো। খুব হাসতো। আমাকে নাকি এভাবে খুব পচা লাগে দেখতে।’

আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, ‘কই নাতো এভাবে অনেক আদুরে আদুরে লাগছে।’

রায়ান চকিতে আমার দিকে তাকালো। কিছু বললো না। কেবল মুচকি হাসলো। আমি কথা ঘুড়িয়ে বললাম, ‘তারপর তারপর কি হয়েছিলো? রোদুসির বাচ্চাটাই কি তুতুল?’

রায়ান এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘হ্যা’

তারপর বললো, ‘রোদুসিকে সেদিন মেডিসিন খায়িয়ে ঘুম পারিয়ে সায়ান ভাইয়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরুলাম। রোদুসি শারীরিক মানসিক দুদিক থেকেই দুর্বল থাকায় ডাক্তার কয়দিন হাসপাতালে রাখার সাজেস্ট করলে আমরা আর বাধা দেই নি। রোদুসির বাবার দুহাত ধরে কেবল অসহায় আবদার রেখেছিলাম রোদুসির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেনো কোনো রকমের পদক্ষেপ নেয়া না হয়। সেদিন সেই মুহুর্ত থেকে রোদুসির সমস্ত দায়িত্ব আমার।

সায়ান ভাইয়ের কাছে গেলে উনি আমার কপালের ক্ষত দেখে ঘাবড়ে যান। আমি তাচ্ছিল্য হাসি। উনি আমার কপালের ব্যান্ডেজ দেখে আমার ব্যথার আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। অথছ দেখো আমার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণের বণ্যা বয়ে যাচ্ছিলো তা একটা বারও বুঝার চেষ্টা করেন নি। আমি উনার কাছ থেকে সত্য জানার আসায় একটু কঠোর ভাবেই প্রশ্ন করি,

‘কেনো এই পাপের সাথে জড়ালে ভাই? কেনো এমন জঘন্য একটা কাজে নিজের নাম লাগালে?হুয়াই?’

আমি ভেবেছিলাম ভাই সব কিছুই অস্বীকার যাবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাই সব স্বীকার করে নেয়। আমার পায়ের তলা থেকে সেদিন মাটি সরে গিয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো দুহাতে ভাইকে মেরে ফেলি। কেনো সে এমন জঘন্য একটা কাজ করলো? তার মস্তিষ্ক এতটা বিকৃত কিভাবে হলো? বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ব্যাতিত এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে কেউ পারে বলো? বলো না রোদু? পারে?’

রায়ানের কান্না গুলো আমি আর নিতে পারছিলাম না। তাই ঠোটে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম। কপালে কপাল ঠেকিয়ে দুজন কেবল চোখের পানি ঝড়াচ্ছিলাম…

চলবে….

[ খুব সুন্দর করে গুছিয়ে আজকের পর্বটা সাজিয়েছিলাম। ছোট একটা ভুলের কারণে পুরো পর্বটাই হারিয়ে গেলো। সেইভের জায়গায় ডিস্কার্ড দেয়াতে কোথায় যে লেখা গুলো গেলো আর পেলাম না। যাই হোক পুনরায় লিখলাম। যা যা লিখেছিলাম তা আনার চেষ্টা করলেও কিছু সুন্দর সুন্দর বাক্য মাথা থেকেও হারিয়ে গিয়েছে। সেজন্য খুবই দুঃখ দুঃখ পাচ্ছে।

গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি। ভালো দিক খারাপ দিল উভয় দিক তুলে ধরবেন। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। লেখালেখিতে কাচাই বলতে গেলে। মিডিলে লম্বা টাইমের ব্রেকে ছিলাম। তাই এবারে পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি। ভালোবাসা]

#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ১০
লেখা- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
রায়ান উঠে বসে দম নিলো। কিছু বলতে চাইলে আমি বাধা দিলাম। কিন্তু সে শুনলো না বলল,

‘আমি এই কাহিনীর সমাপ্তি ঘটাতে চাই রোদু। এই কষ্ট আর বয়ে বেড়াতে পারছি না। আমার খুব করে পাশে কাউকে প্রয়োজন। যার সাথে সব দুঃখ শেয়ার করা যাবে। তোমাকে সুখের রাজ্যে ঘুরাতে না পারলেও আমার অল্প সুখ আর দুঃখের সঙ্গী করতে চাই। হবে তো?’

মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এভাবে বললে কি কভু ফিরিয়ে দেয়া যায়? না। অতটুকু সুখই যে আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে লিখে রেখেছেন এই বা কম কিসে? স্বামীর সুখ দুঃখে পাশে থাকতে পারাটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার।

রায়ান তার দু হাতের মুঠোয় আমার হাত রেখেই বলল,

‘জানো রোদু ভাই বাউন্ডুলে ছিলো। কিন্তু বখাটে নয়। আমি স্বচক্ষে কখনো তাকে কোনো রকমের কোনো অন্যায় করতে দেখি নি। বরং বড়দের সম্মান করতে দেখেছি আর ছোটদের স্নেহ। আমাকে তো কখনো কোনো বিপদ দূর ছোট ব্যাথার আছরও আসতে দেয় নি। আমাকে কখনো ছোট করে নি। সে পড়ালেখায় বলতে গেলে জিরো ছিলো। অথচ আমি বুয়েটের মত জায়গা থেকে নিজের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। ভাই চাইলেই এ নিয়ে মন কষাকষি করতে পারতো। কিন্তু তা করে নি উল্টো আমাকে নিয়ে গর্ব করতো। বাবার হাজার বকা খেয়েও আমাকে নিয়ে মাতামাতি করতো। আমার রেসাল্টে খুশি হত। কি থেকে কি হয়ে গিয়েছিলো সে সময়টাতে ভাবলে এখনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাই সব কিছু।

সেদিন ভাইয়ের সাথে দেখা করে আমি অবাক হয়েছিলাম। আমি জানতাম ভাই আমাকে সত্য টাই বলবে। তবে এত জঘন্যতম সত্যের প্রকাশ ঘটাবে তা ছিলো কল্পনাতীত।

ভাইয়ের কাছে আমি ছিলাম প্রিয়। খুব প্রিয় কেউ। আমার আবদার গুলো কিভাবে যেনো ভাই পূরন করে ফেলতো। আমি কখনো ভাবি নি আমার আবদার মেটাতে গিয়েই ভাই এত নোংরা এক খেলায় মেতে উঠবে। আচ্ছা রোদু টাকাই কি সব? ভাইয়া আমাকে সেদিন কি বলেছিলো জানো?

বলেছে, তুই ছোট রায়ান। তুই দুনিয়ার কঠিন সত্য গুলো এখনো উপলব্ধি করতে পারবি না। যেদিন নিজের উপরে ঝড়ের তাণ্ডব দেখবি সেদিন বুঝবি দুনিয়া কত কঠিন।

আমি তাচ্ছ্যিল্য হেসে বললাম,
এর পরও কি আর কোনো ঝড়ের বাকি আছে ভাই বলতে পারো? বাবা হাসপাতালে , মায়ের অবস্থাও ভালো না। আর আমার ভালবাসা? সে বেচেও মরার পথে। সবকিছুর জন্যই দায়ী তুমি ভাই তুমি।

ভাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। তর ভালোবাসা মানে?

আমি চোখ মুখ শক্ত করে বললা, রোদুসি।

ভাই তারপরেও চিনলো না। পরে তুতলিয়ে বললো, ঐ মেয়েটা? বলেই দুহাতে মুখ ঢেকে উচ্চারণ করলো, শিট!!

ভাই রোদুসির নামটা পর্যন্ত জানে না। ব্যাপারটায় আমার কেমন খটকা লাগলো। আমি ভাইয়ের হাত জোর করে বললাম, প্লিজ ভাই আমাকে খুলে বলবে সবটা।

এর ভিতরই ভিসিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেলো। কন্সটেবল পরিচিত হওয়ার রিকুয়েস্ট করলাম আরেকটু সময়ের জন্য। ভাই বলতে চাইলো না কিছুই । শুধু বলল, যা এখনি চলে যা। আমি ইচ্ছে করেই করেছি সবটা । এবারে আমার ফাসি টাসি হবে নাকি রে? হয়ে গেলেই ভালো। এমনিতেও আর কারো সামনেই মুখ দেখাতে পারবো না।

ভাইয়ের পায়ে ধরতে বাধ্য করেছে ভাই যখন কোনো ভাবেই আমার কথা শুনছিলো না। এদিকে বাবা মায়ের অবস্থাও খারাপ। চারিদিকের মানুষের কথায় বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পরছিলো। এত বড়ো অপারেশনের পর বাবাকে নিয়ে টেনশন ছিলো সবচেয়ে বেশি। এদিকে সব সত্য না জেনে ভাইকে সাজা দিতেও মন মানছিলো না। আমি কেনো যেনো কোনো ভাবেই মানতে পারছিলাম না যে ভাই এসবে জড়িত। আমি জানি ভাইকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করলে সে মানবে। হলো ও তাই। থার্ড ক্লাস ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলাম। যদি ভাই সবকিছু খুলে না বলে সবছেড়ে ছূরে নিজেকে শেষ করে দেবো। এই পেইনগুলো আমি আর যাস্ট নিতে পারছি না। ভাই আমার কথা গভীর ভাবে বিশ্বাস করে। সে কেদে দেয়।
আমার হাত ধরে বলে, তুই বাইরে এদিকে বাবার বিজনেসের অবস্থাও খারাপ। আমিও পড়াশুনা করিনি। মায়ের ওষুধপত্র বাড়িভাড়ার টাকা। সবকিছুর জন্য বাবা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমাদের কিছুই জানায় নি। প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরতেই বাবার সাথে আমার ঝামেলা হত। নানা রকম গালি দিত বাবা আমাকে। আমি বাবাকে বুঝতে চেষ্টা করি নি। উল্টো বাবার উপরও রাগ দেখাতাম। বাবাকে বলেই ফেলি একদিন বাবা টাকার গরম দেখাচ্ছে এরকম দু-কড়ি রোজগার করা আমার জন্য কোনো ব্যাপার না। কিন্তু সত্যিটা বুঝার চেষ্টা করিনি। বাহিরের জাগজমকতাটা যতটা সুন্দর যতটা উজ্জ্বল আমার ভবিষ্যৎ টা ঠিক ততটাই অন্ধকার সেটা সেদিন উপলব্ধি করলাম যেদিন বুঝলাম আমার মত অশিক্ষিতদের কেউ চাকরি দিবে না। দোকানের কর্মচারী হওয়ার অফার দিলো এক বন্ধু এটা আমার খুব ইগোতে লাগলো। আশ্চর্য আমি কিনা দোকানের কর্মচারী হবো?জিনিসটা মানতে পারিনি। এ নিয়ে বন্ধুর সাথে বিরাট ঝামেলা হয়।

সেদিন রাতেই একটা আননোন নাম্বারে কল আসে। লোকটা জানায় সে একটা বেসরকারী কোম্পানির ম্যানেজার। বিশ্বাস না হওয়ার মত কথাবার্তাগুলোকেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। কারণ আমার মাথায় তখন টাকার চিন্তা চলছিলো। যেকোনো ভাবেই একটা না একটা চাকরির ব্যাবতস্থা করতেই হবে। লোকটি দেখা করতে বললে আমি এর পরের দিনই দেখা করি তার সাথে। কথায় কথায় বুঝতে পারি কাজগুলো সম্পূর্ণ বেয়াইনি। তবে তারা ডাইরেক্টলি কিছু বলে নি। আমার মন কিছুতেই সায় দিলো না। তবে উনারা বার বার আমাকে বুঝিয়েছে যে আমাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। যাস্ট মাল আনা নেয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এর মধ্যে কেমন মাল থাকবে না থাকবে ভেবে আমি নাকোচ করে দেই।

বাড়িতে ফিরে এসে দেখি মালিক এসে মা’কে যা নয় তা বলে অপমান করে যাচ্ছে। বাবা বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন না নাকি গত তিনমাস যাবত। বাবার অবস্থা এত খারাপ তা বুঝতে পারি নি। মায়ের থেকে জানলাম বাবার ব্যাবসা শেষ। আর পঞ্চাশ লাখ টাকা লস হওয়ার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো। সেদিন রাতেও বাবার বুকে পেইন উঠলো। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ঔষধের সাথে কিছু টেস্ট করতে দিলেন। বাবাকে হাজার বার জোর করলেও কোনো রকম টেস্ট করালেন না। আমারও জোর করানোর মত অবস্থা ছিলো না। কারণ কমপক্ষে হলেও সে মুহুর্তে ২০-২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিলো। ভাবলাম ক’টা দিন পর হাতে টাকা আসলে বাবার ট্রিটমেন্ট করাবো। এর ভিতর ঐ লোকের সাথে যোগাযোগ করি। বলি যে আমি কাজটা করতে রাজি। তবে কোনো ধরণের অনৈতিক কাজে আমি জড়াতে চাই না। লোকটা আমাকে ভরসা দেয়। তাদের বসের অর্ডার মত মাল সাপ্লাই দিতাম। একজায়গা থেকে একজায়গায় নিয়ে যেতাম। এই কাজের জন্য বেশ মোটা অংকের টাকা দিত। বাড়ি ভাড়া বাবা মায়ের ঔষধ সব পরিশোধ করলাম। একদিন পুলিশ আমাদের ট্রাক ধাওয়া করলো। জংগলে লুকালাম। তিন্, চারদিনের মত পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আমার উপর বাবার সন্দেহ বাড়তে থাকলো। বাবা মা’কে দিয়ে আমাকে নিষেধ করলো তোকে যেনো এসব কিছুই না জানাই। তোর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটুক বাবা তা চান না। সিদ্ধান্ত নেই এই কাজ ছেড়ে দেবো।

এর পরেই তুই বাসায় আসিস। বাহিরে যাওয়ার কথা বলিস। তোর আবদারে নাকোচ করতে বাবার কষ্ট হয় আমি তা দেখি। বাবার প্রিয় পুত্র যে তুই। তাই তো হাজার কষ্টের ছিটেফোটাও তোকে জানাতে দেয় নি। তাছাড়া তুই আমার একমাত্র ভাই তোর আবদার পূরণের ইচ্ছা আমারও জাগে। তবে আমার সাধ্য ছিলো না। বাবা টেনশনে পরে যান । আমার কাছে প্রথমবারের মত বাবা এসে বলেন,’সায়ান কিছু কি করা যাবে? বাড়িতে যে জমি আছে তা বিক্রি করলে লাখ খানেক পাওয়া যাবে। আমি হাসলাম লাখ খানেক টাকায় কিছুই হবে না। বাবাকে বুঝতে দিলাম না। বললাম তুমি জমি বিক্রির ব্যাবস্থা করো। বাকিটা আমি দেখছি। বাবা আমার কথায় কেমন ভরসা পেলেন। চোখ মুখ চকচক করে উঠলো। মনে মনে বললাম শেষ বারের মত অন্যায় কাজটা করে ফেলবো । তারপরে এই পথ থেকে সরে আসবো।

কথাটা বলেই ভাই বিশ্রি ভাবে হাসে। যে হাসিটে ঠাট্টা কষ্ট উভয়ই লোকায়িত ছিলো।

ভাইকে বলি? তারমানে?

ভাই আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠে,
‘হ্যা আবারো ঐ লোকের কাছে যাই। তোর যাওয়া আসা মিলিয়ে আর বাবার চিকিৎসার কথা ভেবে আনুমানিক ২৫ লাখ টাকা ধরে রেখে টাকা চাই তাদের কাছে। ম্যানেজার জানায় এতটাকা দেয়া সম্ভব না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে যেনো তাদের বসের সাথে কথা বলি। আমি রাজি হই। ওদের দলের লিডার খুব ধুরন্দর টাইপের লোক। মারাত্মক চালাক। আমাকে শর্ত দেয়। এতটাকা তো আর এমনি এমনি দিবে না। দুই বছরের এগ্রিমেন্ট চায়। এই দুই বছরে উনাদের কথামত সব ধরনের কাজ করতে হবে। আদারওয়াইস এর ফল ভালো হবে না। একটা এগ্রিমেন্ট প্যাপারে সাইন করায়। তাদের কথামত সাইন করি। এর পর থেকে শুরু হয় কাজ আর কাজ। তোর টাকাটা বাবাকে আর তোকে বুঝিয়ে দিয়ে ভাবি এর পরে বাবার চিকিৎসায় মন দিব। বাবার ব্যাথাটা দেখেছিলাম ক্রমশ বাড়ছে।
প্রায় প্রতিদিনই তারা আমায় এক ধরনের ইঞ্জেকশন পুশ করতো আমিও তাল মাতাল হয়ে পরে থাকতাম। বাধ্য ছিলাম। কিছুই করার ছিলো না আমার। গাঞ্জা সেবন করতাম।তাদের সাথে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে এসবে অভ্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

একদিন বসের ডাক পরে। একটা মেয়েকে কিডনাপ করে আনতে বলে। আমি নাকোচ করলে স্কিনে বাবা মার ছবি এনে বিশ্রি ভাবে হাসে। বুঝতে আর বাকি রইলো না উনি কি বুঝাতে চাইছেন। নানা ভাবে বুঝালেও শুনেন না। উল্টো আমাকে ভয় দেখান। বাধ্য হয়ে তাদের দলের লোকদের সাথে রৌনা দেই। কিডনাপ করি। কিন্তু এর পরের ঘটনাটা ছিলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাসিত। আমি কখনো এমনটা চাই নি। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা ছিলো। বিশ্বাস কর আমার নিজের উপরই নিজের ভীষণ রকমের ঘৃনা হচ্ছে।

কথাটা বলেই ভাই দেয়ালে জোড়ে ঘুষি দিলো।কন্সটেবল এসে বললেন আর টাইম দেয়া সম্ভব না। চলে যেতে হবে। আমি বাকি কথাটাও শুনতে চাচ্ছিলাম। এর পরে কি হয়েছিলো। তাহলে কি ভাই নির্দোষ। আর বাবা কি ভাইয়ের কাজ কর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। সব কিছুই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো কেবল। আচ্ছা রদু তারা আমাকে কিছু জানায় নি কেনো বলো তো? সংসারের হাল ধরার মত পর্যায়ে কি আমি গিয়েছিলাম না? কেনো রোদু কেনো? বলো? ‘

আমি কোনো রকমে বললাম, ‘তারপর , তারপর কি হলো?’

.
.
চলবে….

[কি মনে হচ্ছে আপনাদের? এ থেকে কি শিক্ষা নেয়া যায় বলুন তো? জীবনে যত ধরনের ঝড় তুফান আসুক না কেনো কখনো অনৈতিক ভাবে টাকা উপার্জনের আশায় পাপ করতে নেই। কারণ পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না। নিজে সহ পরিবারকেও ধংস করে দেয়।

হ্যাপি রিডিং <3 ]#আছি_তোমার_পাশে পর্ব ১১ লেখা- #Anjum_Tuli [কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ] . . আমি কোনো রকমে বললাম, 'তারপর , তারপর কি হলো?'‘সময় শেষ শুনার পর কনস্টেবল আমাদের দুই ভাইয়ের ক্রন্দন্ রত চেহারা দেখে হয়তো বা মায়া হয়। বলে আর পাচ মিনিট এর পরে আর কোনো সময় দেয়া হবে না। কৃতজ্ঞতার চেহারায় তাকাই। ভাইকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করি এরপরে কি হয়েছিলো। কেনো তুমি আজ এখানে। কেনো তুমাকেই দোষী বলা হচ্ছে।ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কিডনাপ করার পর তাদের এক পরিত্যাক্ত আস্তানায় নিয়ে যায়। বলে রাখি সেখানে এর আগে আমি আর কখনো যাই নি। মেয়েটাকে বেধে রেখে পেছনে একটা রুমে রেখে দেয়। আর আমরা সামনের রুমে থাকি। রুম বলতে তেমন কিছুই না। পুরোনো নোংরা টিনের ঘর। মেয়েটার হুশ ছিলো না তখন। অচেতন হয়ে পরে ছিলো। বস আসার অপেক্ষায় ছিলাম সবাই। হুট করে আমাদের দলের একজনের কাছে ফোন আসে। সে জানায় বস পরেরদিন সকালে আসবে। কথাটা শুনে আমি বলি, সকালে আসবে মানে। মেয়েটাকে না ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা। কথাটা বসই আমাকে বলেছিলো। লোকগুলো বিশ্রি ভাবে হাসে। বিশ্রি ইংগিতে কথা বলে আমাকে জানায়, ‘তোর এত চিন্তা যখন তোর কাছেই ছেড়ে দেই? সবগুলো একসাথে হেসে আমাকে ঘিরে ধরে মুখ বেধে ফেলে। তারপর কতগুলা ইঞ্জেকশন পুশ করে আমাকে নিয়ে মেয়েটার পাশে ছেড়ে দেয়। আমি তখনো ঝাপ্সা চোখে দেখেছিলাম মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। হাত মুখ বাধা অবস্থায়। তারপর তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে আমার পাশেই মেয়েটাকে পাই। রুম তখনও লক করা। মেয়েটার জ্ঞান ছিলো না। আমি কাপড় পরে নিয়ে মেয়েটাকে তার উড়না দিয়ে ঢেকে দেই। আলতো থাপড় দেই কিন্তু সাড়া পাই না। বাধ্য হয়ে পাজাকোলে করে বেড়িয়ে যাবার জন্য দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করি। সফলও হই। দিক বেদিক হারিয়ে হাটতে থাকি। ভেতরে অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। কেনো এই পথে পা বাড়িয়েছিলাম এসব আফসোসের মাঝেও একটা কথাই মাথায় বাজছিলো মেয়েটাকে বাচাতে হবে। কাছাকাছি একটা সরকারী হাসপাতালে নিয়ে মেয়েটাকে রেখে চলে আসি। তখন ভোর। সূর্যের আলো কেবল ফুটেছে। আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখি দেখি কিছু নার্সরা মিলে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এর আধ-ঘন্টা পরেই পুলিশের গাড়ি আর মেয়েটার বাবা মার দেখা মিলে। বুঝতে পারি হয়তো বা জানানো হয়েছে তাদের। এর পর আবার পালিয়ে যাই। আমার মাথা ঠিক নেই রায়ান। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার কঠিন সাজা পাওয়া প্রয়োজন কঠিন। তাদের বল না আমাকে দ্রুত যেনো ফাসি দিয়ে দেয়। আমি কি করলাম এটা রায়ান কি করলাম।‘এসব কথা শুনে আমি যাস্ট বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাইকে কি আর কি প্রশ্ন করবো? এখানে ভাইয়ের দোষ আছে আর সেটা একটাই সে অন্যায় পথে পা বাড়িয়েছিলো। আর এই অন্যায় তার পিছু ছাড়ে নি। ভাই বার বার আমাকে বলেছে সে কোনো একটা চক্রান্তের স্বীকার। তাদের দলের লিডারের যে নাম ভাই বলেছে হাজার চেষ্টা করেও পুলিশ কিংবা আমাদের পক্ষের উকিল এর কোনো হদিস খুজে পায় নি। ভাইয়ের দোষ কতটুকু তা বাজ বিচার করতে এখনো ইচ্ছে হয়না রোদুসি । কেবল রাগে দুঃখে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে।আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন কেবল তুতুল। ভাই আজ পর্যন্ত জানে না তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে । যে তার মিষ্টি মিষ্টি কথায় সবার মন ভালো করে দিতে পারে। ‘আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সেদিন কি শুধু সায়ান ভাই-ই রোদুসির সাথে…’আমার কথা শেষ হবার আগেই রায়ান বললো, ‘হ্যাঁ শুধু ভাই-ই। এটাও কনফার্ম করেছে রোদুসি। রোদুসির মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে ডেভলাপ করে। কৌর্টের সুনানির দিন রোদুসিকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয় আদালত। সমস্ত প্রমাণ আর রোদুসির বয়ানের ভিত্তিতেই সায়ান ভাইয়ের সাত বছরের কারাদন্ড হয়। সায়ান ভাইয়ের উপর করা সমস্ত কিছু স্বীকার করে তাদের দলের বাকি লোকজন। এদের হয় পাঁচ বছর আর সাথে আরো পাঁচ বছর আর কিচু অর্থদন্ড দেয়। তাদের চরাকার্বারির কিছু প্রমাণ আমাদের পক্ষের উকিল পেশ করায়। এসব কিছুতেই জড়িত ছিলো ভাই। ভাইয়ের সাজা শুনে রোদুসি খুশি ছিলো না। এর পরের কিছু দিন মন খারাপ করে থাকতো। বাড়িতে সায়ান ভাইয়ের কথা জানাজানির পর মা প্রচন্ড ভাবে ভেঙ্গে পরেন। বাবা আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলেন। ‘রায়ান মেয়েটিকে এ বাড়িতে নিয়ে আয়। শুনলাম সে অন্তসত্তা! কথাটা কি সত্য?’ বাবা সায়ান ভাইয়ের সম্পর্কে সব কথাই জানতো। তবে এখানে সায়ান ভাইয়ের দোষ কতটুকু আর কি সে সম্পর্কে বাবার কতটুকু ধারণা ছিলো আমার জানা নেই। আমি অনেক বার বলার চেষ্টা করলেও বাবা আমাকে সরাসরি নিষেধ করে দেন, ‘সায়ানের নাম এই বাড়িতে কেউ যেনো উচ্চারণ না করে’ রোদুসিদের বাড়িতে বাবা মা নিজে যান তাকে নিয়ে আসার জন্য। রোদুসির মা আমার বাবা’কে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেন। বাবা সবটাই সহ্য করে নেন। আমি সেই মুহুর্তে রোদুসিকে বিয়ের কথা বলি। বাবা আমার কথা শুনে অবাক হন। সাথে গর্ব বোধ করেন। এসব কিছুর পরেও আমি রোদুসিকে বিয়ে করবো বাবা ভাবেন নি। ঝামেলা আরো বাড়ে। রোদুসির মা জানায় বাচ্চা টা পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই নাকি আমাদের দিয়ে দিবেন। আমাদের মত থার্ড ক্লাস মানুষের কাছে উনারা উনাদের মেয়েকে তুলে দিবেন না। আংকেল সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে রোদুসির মত নেন। রোদুসির মতামতের ভিত্তিতে সেদিনই তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। আন্টি প্রায়ই এসে ঝামেলা করতো। জানো? তবুও মেয়েটা আমাকে ছেড়ে যেতো না। মায়ের কত শত কথাও হজম করেছে তার হিসেব নেই। আমি তাকে বুঝাতাম দুনিয়া উলটে গেলেও আমি কখনো তাকে ছেড়ে যাবো না। অথছ দেখো সে’ই চলে গেলো। বাবা কঠিন এক সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর আগ অবদি সায়ান ভাই মুখ দর্শন করবেন না। আমি আরাল থেকে মা বাবার কথোপ কথন শুনি। সেদিন বাবার চোখে প্রথম জল দেখতে পাই। বাবা নিজেকে ব্যার্থ বাবা হিসেবে দাবী করেন। সেদিন আমি খুব অসহায় ছিলাম রোদুসি। পরিবারের বিপদের সময় কেনো আমি পাশে ছিলাম না। কেনো আমি অন্যায় আবদার করেছিলাম। বাবার ব্যবসা লসের কথা না জানলেও এটা তো জানতাম অবস্থা ভালো না তবুও কেনো নিজের ভেতরে জেগে উঠা ইচ্ছাটাকে চাপা দিতে পারলাম না!এর পরের দিনই বাবা স্ট্রোক করেন। বাবা চলে যাওয়ার পর মা আরো বেশি ভেঙ্গে পরেন। কথাবার্তা কমিয়ে ফেলেন। সব কেমন যেনো ফাকা ফাকা লাগতো। রোদুসিও দুর্বল হয়ে পরে। কান্না কাটি করতো। বাবা স্নেহ করতো খুব রোদুসিকে। এর ভিতর ভাইয়ের সাথে আর দেখা হয় না। ভাইয়ের প্রতি ধীরে ধীরে মনের ভেতর রাগ বাড়তে থাকে। ভাই বাবার লাশ দেখার অনুমতি পেলেও আসে নি। এটাই হয়তো বা তার করা ভুলের চরম শাস্তি ছিলো।মা রোদুসিকে কোনো রকম পছন্দ না করলেও রোদুসি যখন আট মাসের অন্তসত্তা। তখন তার হাটা চলায় বেশ অসুবিধা হত। ওকে আমি ধরে ধরে নিয়ে আসতাম যেতাম। মা একদিন আমাকে বাধা দিয়ে বলেন, বিয়ের আগ অবদি এত কাছাকাছি না থাকায় ভালো। ‘সেদিন প্রথম মা আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেন। রোদুসির সাথে ভালো আচরণ করলেন। এর পর থেকে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হলো। আমিও খুশি হলাম।ধীরে ধীরে ডেলিভারীর ডেইট যত এগিয়ে যেতে লাগলো রোদুসি দুর্বল হতে থাকলো। তার মনে ভয় লাগতে লাগলো। প্রতি রাতেই মা আর আমি নির্ঘুম কাটাতাম। কোনো একদিন মিস যেত না যে খারাপ স্বপ্ন দেখতো না সে। সেই কাল রাত্রির কথা রোদুসির বার বার স্মরণ হতে থাকলো।সায়ান ভাইয়ের কোনো কিছু বাসায় দেখলেই মেজাজ খারাপ করে নিজেকে আঘাত করতো। তখন বলে বলে বুঝাতাম এসব কিছুই আমার। আগে থেকেই সায়ান ভাইয়ের সব ছবি সরিয়ে ফেললেও মায়ের রুমের ড্রয়ারে একদিন সে পেয়ে যায়। আর নিজেকে আঘাত করতে শুরু করে। পেটে আঘাত করে। পাগলের মত আচরণ করে। সেদিন তাকে কোনো ভাবে আটকাতে পারি নি। ডাক্তার বার বার নিষেধ করেছিলো এমন কোনো কিছু ঘরে রাখা যাবে না যাতে তার পুরোনো কথা স্মরণে আসে। সেদিনই রোদুসির ওয়াটার ফল শুরু হয়। দৌড়ে ছুটে যাই হাসপাতাল।নরমাল ভাবে তুতুল পৃথিবীতে আসলেও রোদুসির প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। সে আমার এই হাত ধরে শেষ একটা কথাই বলেছিলো রোদুসি, তুতুল তার মেয়ে। তুতুলকে যেনো কখনো কষ্ট না দেই। সে না থাকলে তুতুলের আর কেউ নেই কেউ নেই। আমি কথা দিয়েছিলাম রোদুসিকে। তুতুলের আমি আছি। সারাজীবন থাকবো। তুতুলের আপন হয়ে। খুব আপন কেউ।তুতুলের বাবা হয়েছি আমি রোদু। তুতুলের বাবা। তুতুলের মুখে সর্ব প্রথম বাবা ডাক শুনেছি আমি রোদু। সে আমার সন্তান। সেদিন রোদুসিকে কথা বলতে দেই নি আমি রোদু। সে কষ্ট পাচ্ছে আমি নিজের চোখে দেখছিলাম। তার প্রত্যেকটা কথার সাথে চুয়ে চুয়ে চোখের পানিও নির্গত হচ্ছিল। আমি নিজের চোখে তার কষ্ট দেখতে পারি নি রোদু। তাকে থামিয়ে দিয়েছিলাম। দেখো আমি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম আর সে অভিমান করে চলে গেলো। চলেই গেলো রোদু। আমার রোদুসি আমাকে ছেড়ে আমাদের তুতুলকে ছেড়ে চলে গেলো। সেদিন ছোট তুতুলটা আমার কোলে থেকে চিৎকার করে কান্না করছিলো। অথছ তার মা আরামে ঘুমাচ্ছিলো। বাচ্চা মেয়েটার কান্নাও তার ঘুম ভাঙ্গাতে পারে নি রোদু। পারেনি। আমি কতটা অসহায় ছিলাম। ঠিক কতটা আমি তুমাকে বুঝাতে পারবো না রোদু । কিছুতেই পারবো না। ‘চলবে…(বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৬১টি ধর্ষণের মামলার সাজা পায় মাত্র ৬৮ জন ধর্ষক। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ৬টি জেলায় ৪৩৭২টি মামলায় মাত্র ৫ জন ধর্ষকের শাস্তি হয়।এসম্পর্কে আমার যতটুক ধারণা আর গোগল সার্চ করে গল্পের স্‌বার্থে এভাবে লিখেছি। আর তাছাড়া সায়ানের নিজের উপর কোনো কন্ট্রোল ছিলো না তখন। সে সজ্ঞানে কিছু করে নি। গল্পের কথা বিবেচনা রেখে এভাবে লিখেছি, তাই আইন নিয়ে ভুল ধরবেন না প্লিজ, আমি আইনের স্টুডেন্টও নই। বাকি আপনাদের মতামত জানাবেন। গল্প নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন গঠন মন্তব্য করেন । ধৈর্য রেখে গল্প পড়েন। আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার করা হবেঅ্যান্ড সেকেন্ড থিং - The Maaliki, Hanbali scholars and Abu Yusuf from the Hanafi school of jurisprudence said: “ It is not permissible to marry her (i.e. the pregnant woman) before she gives birth to the child, as the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, said: “One should not have sexual intercourse with a pregnant woman until she gives birth to the child. প্রেগন্যন্ট অবস্থায় বিয়ে সম্ভব নয়। তাই এটাও স্কিপ রাখা হয়েছে।)#আছি_তোমার_পাশে পর্ব ১২ লেখা- #Anjum_Tuli [কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ] . . মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে যায় তা আসলে কেউ বলতে পারে না। কখনো কখনো এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় যা মাঝে মাঝে জীবন লন্ডভন্ড করে দেয়।বেচে থাকার লড়াইয়ে কেউ বা ক্লান্ত হয়ে যায়। কেউ চাহিদার সাগরে ভাসতে থাকে। যা চাই তা এখুনি চাই। কেউ বা চাহিদা পূরণে নিজের জীবনের শেষ সম্বল টুকু বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। সংসার নামক খেলায় কেউ বা জয়ী কেউ বা অসহায়। কারো জীবন সুখ ক্ষনস্থায়ী তো কারো জীবনে সুখের দেখাই মিলে না। জীবনটা সত্যি অদ্ভুত।তুতুলের ডাকে আমি তাকাই। রায়ানের কোলে বসে লাফালাফি করছে। বেচারা কাজটাও ঠিক মত করতে পারছে না। আমি ইচ্ছে করেই তুতুলকে ডেকে আমার কাছে নিয়ে আসছি না। আমি চাই রায়ান নিজের মুখে আমাকে বলুক। কিন্তু না বান্দার ধৈর্যের মাত্রা অত্যাধিক। কিছুতেই আমাকে বলছে না। আমিও কম কিসে। আনবো না তুতুলকে। দেখি ঠিক কতক্ষন নিজের কাছে রাখতে পারে।রায়ানের সাথে আমার সম্পর্কটা এখন বেশ স্বাভাবিক। প্রথম দেখায় গম্ভীর মনে হওয়া এই লোকটা আসলে চমৎকার। সে চমৎকার একজন প্রেমিক, দায়িত্ববান ছেলে, আর বেস্ট বাবা। রায়ান আমার সব রকমের প্রয়োজন মেটায়। বলার আগেই আমার দরকারী সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে যাই। রায়ানের দিকে আমি তাকিয়ে থাকি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। আমি তাকে স্বামী রুপে আমার কাছে পাওয়ার আগে তাকে প্রেমিক হিসেবে পেতে চাই। তার সাথে আমি জ্যোৎস্না বিলাশ করতে চাই। আমার না বলা কথাগুলো বলতে চাই। আদৌ তা কখনো সম্ভব কি না আমি তা জানি না। আমার কাছ থেকে ভালোবাসার কথা শুনে আমি জানি না রায়ানের রিয়েকশন কেমন হবে। আমি চাই না রায়ানের মন থেকে রোদুসি মুছে যাক। আমি কেবল নতুন করে রায়ানের মনে রোদু নামক আরেকটি ফুল ফটাতে চাই। যে সবসময় তার পাশে থাকবে। রায়ানের দুঃখ বিলাশে হাতে হাত রেখে বলবে ‘ এত চিন্তা কিসের বলোতো, আছি তোমার পাশে। আর থাকবো আজীবন।‘রায়ান আমাকে কথা দিয়েছে সে একজন ভালো স্বামী হয়ে দেখাবে। সেদিন রাতে আমাকে তার অতীত বলতে পেরে রায়ান ঠিক কতটা শান্তি পেয়েছে তা রায়ানের চোখে মুখেই প্রকাশ পেয়েছে। রায়ান সময় চেয়েছে। সম্পর্কটা সুন্দর ভাবে শুরু করার জন্য। আমি দিয়েছি। আমিও চাই আমাদের সুন্দর সম্পর্কে পুরোনো অতীতের কোনো ছায়া না পরুক।তুতুলের দুষ্টুমিতে বিরক্ত হয়ে রায়ান বলে ফেললো, ‘রোদু তুতুলকে নাও তো। ইম্পোর্টেন্ট কাজ করছি।‘আমি হেসে দিলাম। আমার প্রচন্ড দম ফাটানো হাসি আসলো। রায়ান ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেলো। কারণ সে তো কোনো কৌতুক বলে নি। সামান্য তুতুলকে কোলে নিতে বলেছে। তুতুলও আমার দেখা দেখি খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করলো। আর বলতে লাগলো, ‘মাম্মা যাব না, যাবো না’রায়ান বিরক্ত হয়ে বললো, ‘এসব কি হচ্ছে রোদু?’আমি ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে বুঝালাপ চুপ। সে বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে তুতুলকে নিচে নামিয়ে হনহনিয়ে হেটে চলে গেলো। আশ্চর্য এবারেও আমার হাসি পেলো। খুব হাসি। উফ কতদিন পর এভাবে প্রাণ খুলে হাসলাম। ধন্যবাদ মিঃ রায়ান।রায়ান উঠে যাওয়ার সাথে সাথে তুতুলও পেছন পেছন ছুটলো। একদম বাপের ন্যাওটা। সব সময় বাবার কাছাকাছি থাকা চাই। হুট করেই আমার মনে অদ্ভুত এক ইচ্ছা জাগলো। আচ্ছা রোদুসি দেখতে কেমন ছিলো? রায়ানের ফোনটা হাতে নিলাম। নিশ্চই এতে রোদুসির ছবি পাবো? বাট ফোন লক।এই মুহুর্তেই রায়ান তুতুলকে কোলে নিয়ে এসে ধুপ করে আমার কোলে তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো, ‘যাও মা মেয়ে মিলে আমার জন্য রান্না বান্না করো গিয়ে।‘হুহ আমার বয়েই গেছে তার জন্য রান্না করবো। আমি মুখ ভেংচি কেটে তুতুলকে বললাম, ‘তুমার পাপাকে বলে দাও শুনা, মাম্মা রান্না করবে না’তুতুলও আঙ্গুল নাচিয়ে নাচিয়ে বললো, ‘মাম্মা নান্না কব্বে না’রায়ান হেসে বলে উঠলো, ‘তাহলে কে করবে সোনা?’তুতুল দাড়িয়ে গেলো। দুহাতে মুখ চেপে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললো, ‘আমি কব্বো’বলেই দৌড় দিলো। সত্যি সত্যি রান্না ঘরে চলে গেলো না তো? ভয়ে আমিও পিছু পিছু গেলাম। না সে তার খেলনা রান্না বাটি নিয়ে এসে বেডে রায়ানের পাশে বসলো। আমি মুচকি হেসে কিছু ফ্রুটস কেটে এনে রায়ানকে আস্তে করে বললাম, ‘একটা আবদার করবো রাখবেন?’রায়ান সিরিয়াস হয়ে তাকালো। বললো, ‘হ্যাঁ বলো’আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, ‘আমাকে রোদুসির একটা ছবি দেখাবেন?’রায়ানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। বললো, ‘শুধু শুধু কষ্ট পাবে।‘আমি বললাম, ‘উহু। একদম না। আমি তুতুলের মা’কে দেখতে চাই।‘রায়ান আস্তে করে বললো, ‘দেখাবো’ __________________________ আমি ভার্সিটিতে যাওয়া আসা শুরু করলাম । রায়নও অফিসে যায় সকালে রাতে আসে। তুতুলের দেখা শুনার জন্য টুনির মা থাকেন সব সময়। আমি একদিন বাড়িতে এসে দেখি তুতুল পরে গিয়ে চিৎকার করে কাদছে। কাছে গিয়ে দেখি পা ছিলে গেছে। সোফায় আম্মা বসা। অথচ আম্মা উঠে এসে তুতুলকে না ধরছে না শান্তনা দিচ্ছে না আদর।আমার প্রচন্ড রকমের রাগ উঠে যায়। একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে আম্মা এমন কেনো করে বুঝি না। আমি একটু রাগ দেখিয়েই আম্মাকে বলি, ‘একটা বাচ্চা মেয়ে পরে ব্যাথা পেয়েছে। আর আপনি বসে আছেন। বাচ্চাটার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তো মানবতার খাতিরে এগিয়ে আসা যায়। আপনার ভেতর কি মায়া দয়া কাজ করে না? নিজের রক্তকে কিভাবে এত কষ্ট দেন আম্মা?আম্মা আমার কথায় তেঁতে উঠেন। আমাকে শাসিয়ে বলেন, ‘দেখো বউমা সত্যটা যত তারাতাড়ি গ্রহণ করবে ততই ভালো। তুতুল তোমার কেউ না।‘আমি তাচ্ছিল্য হাসলাম। বললাম,’ ঠিক বলেছেন আম্মা। তুতুল আমার কেউ না। কিন্তু সে আপনার ছেলের করা অন্যায়ের ফসল। আর এর দায়িত্ব আপনার। সো সে হিসেবে সে এই বংশের মেয়ে’আম্মা রেগে গেলেম। আমাকে আঙ্গুল উচিয়ে বললেন, ‘খুব মুখে খই ফুটেছে তাই না? তোমার মত অপয়া মেয়েকে সব জেনে শুনে ঘরে তুলে এনেছি এই দিন দেখতে?’রাগে কষ্টে অপমানে আমার মুখ থম্থমে হয়ে গেলো। আমি বলে ফেললাম, ‘অপয়া তা তো জেনে শুনেই এনেছেন আম্মা। তাহলে ? আর তাছাড়া আপনার পরিবারও ধোয়া তুলসি পাতা নয়। এক ছেলে জেলে তো আরেক ছেলে প্রেমিকার সন্তান নিয়ে আছে’না চাইতেও আমার মুখ দিয়ে কথাটা বেড়িয়ে গেলো। কি হয়ে গেলো আমি বুঝলাম না। যে তুতুলের জন্য আম্মার সাথে লড়লাম। সেই তুতুলকে নিয়েই আম্মাকে এমন কথা কি করে বললাম। তুতুলকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলাম। আম্মার দিকে আর তাকালাম না। আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে ড্রেসিং করিয়ে ঘুম পাড়ালাম। বুকের সাথে চেপে রেখে বললাম, ‘তুই আমার মেয়ে। শুধু আমার। আর কখনো মাম্মা এমন কথা বলবে না শুনা। মাম্মাকে মাফ করে দে।‘রায়ান ফিরে আসলে দেখলো ঘরের পরিবেশ নিরব। সে যখনই বাসায় আসে এক পলক আম্মাকে দেখে তার পর রুমে আসে। আজ আমার বুক ধুকবুক করতে লাগলো। রায়ান নিশ্চই কষ্ট পাবে। আর আম্মা ! উনিও নিশ্চই কষ্ট পেয়েছেন। মনে মনে স্থির করে নিলাম। রায়ান আসতেই রায়ান সহ আম্মাকে সরি বলে ফেলবো।রায়ান নিরবে রুমে এসে বললো, ‘রোদু আছো?’আমি জবাব দিলাম,’ হু’আমার এমন আস্তে বলা কথায় রায়ানও ফিসফিসিয়ে বললো, ‘এভাবে লাইট অফ কেনো? আর এ অসময়ে তুতুল ঘুমাচ্ছে যে?’আমিও ফিসফিসিয়ে বললাম, ‘না মানে তুতুল হালকা ব্যাথা পেয়েছে পরে গিয়ে’ কথাটা যথেষ্ট ভয়ে ভয়ে বললাম।রায়ান স্বাভাবিক। সে বলল, ‘মেয়েটা দিন দিন বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে কি করি বলো তো। টুনির মা বলেছে খেলতে গিয়ে পরে গেছে। তুমি ঠিক সময়ে না আসলে আরো কান্না কাটি করতো’বুঝলাম টুনির মাই বলেছে রায়ানকে সব। আচ্ছা আম্মা কি কিছুই বলে নি? টুনির মাকে আমি অনেক বকাঝকা করেছি। বেচারিরও কোনো দোষ নেই। একা হাতে কত সামলাবে। রান্না রান্না সহ তুতুলের দেখাশোনা প্রায় সব টাই করে। আমি রায়ানকে বললাম, ‘আম্মার সাথে কথা হয়নি আপনার?’রায়ান গম্ভীর মুখে বলল, ‘হু হয়েছে।‘তারপর বললো, ‘আচ্ছা রোদুসি সায়ান ভাইকে যদি কখনো না জানাই তুতুলের কথা তাহলে কি খুব অন্যায় হবে?’আমি তাকালাম রায়ানের দিকে। অসহায় ভাবে সে কথাটা বলেছে। কিন্তু কেনো? আর বললেই বা কি হবে? সে কিসের ভয় পাচ্ছে এত?চলবে কি?[আগামী দু-দিন গল্প দিবো না। পরের পর্ব দু-দিন পরে পাবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here