#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ৭+৮
লেখায়- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
বহুদিন পর প্রতিক্ষিত এক সূর্যের দেখা পেলাম। ভোরের আলোয় তার লালছে আভা যেনো আমায়ও আলোকিত করছে।
সায়ান ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসার আজ দুদিন। সেদিন যখন কেন্দ্রীয় কারাগাড়ের সামনে রায়ান নিয়ে গেলো। বুকটা ধক করে উঠলো। আশ্চর্য রায়ান এখানে এসেছে কেনো? মনের মধ্যে কেবল এই কথাটাই বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো। আমার ভেতরে ভয় আতংক কৌতূহল সব একসাথে ধরা দিতে লাগলো। রায়ান পার্মিশন নিয়ে মাকে নিয়ে ভেতরে গেলো। আমি যেতে চাইলেও সে দেয় নি। নিয়ম নেই বলে ধমক দিয়ে বাইয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে। জেদ ধরে আমি তাদের সাথে গিয়েছিলাম। রায়ান কোনো ভাবেই সেখানে নিয়ে যেতে নারাজ। মা সায়ান ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসার পর কেমন মলিন মুখে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। আমি তাদের মা ছেলেকে বার বার লক্ষ্য করছিলাম। তুতুল বায়না ধরলো ‘আইত্তিম আইত্তিম’ বলে। সে আইসক্রিম খাবে। আইসক্রিম পার্লারটার পাশেই একটা হস্পিটাল। রায়ান আমাকে ইশারা করে বললো, ‘ঐ যে ঐখানে, হ্যাঁ ওখানেই। ওখানেই আমার তুতুলের মা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।’
আমি তাকালাম। আবার রায়ানের দিকে তাকালাম। তার চোখে মুখে হারানোর বেদনা। সেই মুহুর্তে আমি তাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। করতে ইচ্ছাও হলো না। তবে ভেতরে এক চাপা কষ্ট অনুভব করলাম। রায়ান কাউকে ভালোবাসতো? তাহলে কি তুতুলের মা’ই সে? কিন্তু কিভাবে? অজানা ভয় গুলো সেই মুহুর্তে আমাকে ঘায়েল করে যাচ্ছিলো।
রাতের বেলা তুতুলকে ঘুম পাড়ানোর পর। রায়ান নিজ থেকেই বলল, ‘অসমাপ্ত কথাগুলো শুনবে না?’
আমি সায় দিলাম। চাদের আলোয় বারান্দা একদম লাইটের মতই উজ্জ্বল ছিলো। স্পষ্ট ছিলো রায়ানের মুখমন্ডল। মলিন মুখে সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
সেদিন বাসে মেয়েটির কথা শুনে আমি যখন বেকুব বনে গেলাম। মেয়েটি হেসে চলে গেলো। যেনো কোনো জোকস বলে ফেললো সে আমায়। তবে যাওয়ার আগে আমার দিকে একটা কাগজ ছূড়ে গেলো। যাতে গোটা অক্ষরে লেখা ‘রোদুসি”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। রোদুসি? এটা তো আমার নাম? রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘বলেছিলাম না কোনো এক বিশেষ কারণে তোমাকে রোদু বলে ডাকি? কারণ রোদুসি নামে তোমাকে যতবার ডাকবো। ততবারই আমার তার কথা মনে পড়ে যাবে তাই’
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি চুপ করে রইলাম। সে বলল,
এর পর পরীক্ষা চলে আসলো। বেশ ভালো ভাবেই দিলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় মেয়েটিকে প্রায়ই ক্যাম্পাসে দেখতাম। একদিন আমাদের সিনিয়র একজন ভাই এসে আমাকে রিকুয়েস্ট করলো যাতে করে আমি তার মামাতো বোনকে পড়াই। ভাবলাম ভালোই হবে। হাত খরচের টাকাটাও চলে আসবে এ থেকে। তাই রাজি হয়ে গেলাম। গেলাম ভাইয়ের সাথে। বাট গিয়ে দেখি ছাত্রী আর কেউ না। সেই রোদুসি। ইন্টারে পড়ুয়া আবেগের ভেলায় ভাসা সদ্য কিশোরী মেয়ে ছিলো সে। তবে তার মায়াবী চেহারায় চটপট কথাগুলোয় আমি হাসতাম। খুব হাসতাম। এক বছর তার নানা রকম যন্ত্রনা সহ্য করে পরে বাধ্য হয়ে টিউশনিটা ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু সে এতটাই ডেসপারেট ছিলো যে আমায় ছাড়লো না। ক্যম্পাসে সিনিয়র ভাই যে বললাম উনার সাথে এসে আমার খোজ করতো। আমি হল থেকে বেরুলেই আমার পেছন পেছন আসতো। একদিন এক গাদা বাক্স বাটি নিয়ে এসেছিলো। আমি রাগে এসব ছূড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। এসে কি বলেছিলো জানো? জীবনের প্রথম সে আমার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছে। রাগের মাথায় খাবার গুলো ফেলে দেয়ার পর আফসোস করেছি। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা। তাকে বোঝানো প্রয়োজন। প্রিতম ভাই মানে সেই সিনিয়র ভাই। রোদুসির রিলেটিভ। তাকে বললাম খুলে সব। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না। উলটো আমাকে খুজে বের করার কাহিনী বললো সে। সেদিন বাসে আমাদের সাথের অনেকের গায়েই বুয়েটের টিশার্ট ছিলো। আরও অবাক করা বিষয় কি জানো? সে তখন আমার ছবিও তুলেছিলো। প্রিতম ভাইকে জালিয়ে সে আমায় খুজে বের করেছে।’ কথাটা বলেই রায়ান হাসলো।
বলল, ‘প্রিতম ভাইকে সব বলার পর উনি বলে রোদুসি নাকি তাকে সব বলেছে।উলটো আমাকে রোদুসির সাথে প্রেম করতে বলে। এও বলে মেয়েটা নাকি খুব বেশি জেদি। তার প্রমাণও পেলাম কিছুদিন পর।
সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল চলে তখন। খুব মনোযোগ দিয়েছি পড়ায়। হঠাৎ একটা ফোন কল আসলো। যা আমার কল্পনায়ও কোনোদিন ছিলো না। রোদুসির বাবা কল দিয়ে বলল রোদুসি সুইসাইড এটেমপ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমি যাস্ট কিছু বলার মত অবস্থায় ছিলাম না। তৎক্ষনাৎ ছুটে গেলাম।
হস্পিটালের বেডে শুয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। পরে বলে সবই নাকি তার প্ল্যান ছিলো। যদি রাজি না হই তাহলে আবারো নিজেকে শেষ করে দিবে। আবেগের বসে আবার কি করে ফেলে এসব ভেবে তখন চুপচাপ তার কথাগুলো শুনছিলাম।
তার বাবা আমাকে আবারো রোদুসিকে পড়ানো কনটিনিউ করতে বলে। তাদের একমাত্র মেয়ের ক্ষতি তারা কোনো ভাবেই চায় না। এমনকি এও বলে দরকার হলে এখনি তারা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে প্রস্তুত।
পড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু রোদুসির মনোযোগ থাকতো সম্পূর্ণ আমার উপর। তারপরও টেনে টুনে পাশ করে ফেলে। একটা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করাই। তখন থেকে আমি নিজেও রোদুসির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তার পাগলামু গুলো আমাকে বাধ্য করবছিলো তার প্রেমে পরতে। প্রতিদিন নিজ হাতে আমার জন্য রান্না করে আনতো। একগুচ্ছ লাল গুলাপ এনে বলতো দাও তো দাও এগুলো আমাকে দাও। তার কাছে এগুলোই ছিলো খুশি সুখ। আমার একটু ভালো ব্যাবহারে খুশিতে সে কেদে ফেলতো। ‘
আমার চোখে পানি চলে আসলো। এত ভালোবাসতো মেয়েটা রায়ানকে? রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে হাতে একটা টিস্যু দিলো। চোখের পানি মুছলাম।
রায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে লাগলো,
‘গ্রাজুয়েশনের পর আমার মাথায় বাইরে যাওয়ার ঝোক চাপলো। যেতে হবে মানে যেতেই হবে। সেই সময়টাতে বাবার ব্যবসার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বেশ ভালো একটা জবের অফারও আমি নাকোচ করেছি বিদেশ যাওয়ার আশায়। বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি চেষ্টা করবেন। তবে কথা দিতে পারছেন না। ভাই বললো সে টাকা দিবে। আমি তখন অন্য কোনো কিছু ভাবি নি ভাই টাকা দিবে শুনে এতই খুশি হয়েছিলাম যে সে টাকাটা কোথা থেকে পাবে তা একবারও চিন্তা করি নি।
ছয় মাসে সব ধরনের কাজ কমপ্লিট করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। রোদুসির মনটা প্রায়ই খারাপ থাকতো। সে আমাকে এ নিয়ে কিছু না বললেও হুট করে একদিন বললো ‘চলো বিয়ে করে ফেলি’
রোদুসির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি না করতে পারি নি। বরং এটাকে আমার যুক্তিযুক্তই মনে হয়েছে। মা’কে কথাটা জানালে মা না করেন। বাবাও সায় দেন না। সায়ান ভাইয়ের আগে আমার বিয়ে এটা বাবা মা মানতে নারাজ। তাই আমি আর রোদুসি লুকিয়ে কোর্ট ম্যারেজটা করে ফেলবো ভাবলাম। পরে ফিরে এসে সবাইকে জানাবো। দুদিন পর বিয়ের ডেইট ঠিক করলাম। কিন্তু হুট করে বিয়ের দিন সকাল থেকে রোদুসির ফোন সুইচ অফ আসছিলো। আমি কোনো ভাবেই তার কিংবা তার ফ্যামিলির কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাদের বাসায় গিয়েও দেখলাম যে তালা।
পাশের বাসার তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানায় তারা কাল মানে এর আগের দিন কোথাও গিয়েছে ফিরে নি। রোদুসি বলেছিলো সে তার গ্রামের বাড়ি যাবে। সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসবে। আমার সাথে আর কথা হয় নি। রাতে টায়ার্ড ছিলাম তাই একবারে সকালেই ফোন দিলাম। কোনো ভাবেই তার খোজ আমি পাচ্ছিলাম না। প্রিতম ভাইকে নিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে জিজ্ঞাসা করলেও পাই না। সবাই মোটামোটি টেন্সড ছিলো ব্যাপারটায়। যাবেটাই বা কই? এর মধ্যেই সায়ান ভাইও নেই। মা সায়ান ভাইয়ের জন্য পাগল প্রায় অবস্থা। এদিকে রোদুসির খবরও নেই। আমার যাওয়ার ডেইট ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগলো। এর মধ্যেই একদিন বাবা বুকের ব্যাথায় লুটিয়ে পরেন। হস্পিটালে নিয়ে যাই। যেতেই দেখি..
চলবে…
[ আমার একটা ছোট্ট গ্রুপ আছে। চাইলে আপনারা জয়েন হতে পারেন। লিংক কমেন্টে দিয়ে দিবো]
#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ৮
লেখায়- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
ওখানে যেতেই রোদুসির বাবার দেখা পাই। বাবাকে এডমিট করে উনার সাথে কথা বলতে গেলে উনি বারবারই আমাকে এড়িয়ে যেতে চান। আন্টি মানে রোদুসির মা কেদে কেদে বলতে থাকেন ‘আমার মেয়েটা শেষ বাবা। শেষ’
উনার কথা আমার বোধগম্য হচ্ছিলো না। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই উনি আমাকে হাতের ইশারা করেন। এগিয়ে যেতেই গ্লাসের ফাকে চার পাচেক রোগীর মাঝে একটা মুখ স্পষ্টভাবে ভেসে উঠে। সে আর কেউ না রোদুসি। হাতে ব্যান্ডেজ। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। সারা গায়ে সাদা কাপড়ে ঢাকা। চোখ বুজে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কি কিভাবে কেন তা মাথায় আসে নি এসেছে কেবল ‘মেয়েটা না জানি কতটা কষ্ট পাচ্ছে’
রায়ানের মুখে স্পষ্ট বেদনার ছাপ। মনে হচ্ছে সে তার চোখের সামনেই রোদুসির কষ্টটা উপলব্ধি করতে পাচ্ছে। আমি কাপা কাপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কিভাবে কি হলো? জিজ্ঞেস করেছিলেন? ‘
‘হু করেছিলাম। রোদুসির মায়ের দিকে তাকাতেই বললেন সেদিন সকালে রোদুসিকে নিয়ে উনারা গ্রামে যাওয়ার জন্য রৌনা দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে কয়েকটা ছেলে নাকি তাদের গাড়িতে হামলা করে। ছেলেগুলোর টার্গেডই ছিলো রোদুসি। তারা রোদুসির বাবা মাকে বেধে ড্রাইভারকে মেরে রোদুসিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশের সহায়তায় রোদুসিকে খুজে পেলেও…. ‘
রায়ান মুখে হাত দিয়ে কেদে দেয়। আমি প্রথমবারের মত এই শক্ত মনের মানুষটার চোখে পানি দেখলাম। কিভাবে শান্তনা দিতে হয় তার ভাষা পাচ্ছিলাম না। কাধে হাত রাখতেই রায়ান আমার দু হাত তার হাতের মুঠোয় এনে বলে, ‘আমায় কেউ বোঝে না রোদু। আমার পাশে কেউ নেই। তুমি থাকবে তো!’
রায়ানের চোখের পানি হৃদয়ের ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে আমার চোখের পানিও হার মেনে ঝড়তে লাগলো। মুখে বলতে পারলাম না আছি। আছি তোমার পাশে। সর্ব পরিস্থিতিতে। তবে চোখের ইশারায় আস্থা দিলাম।
রায়ান দম ফেললো। হাত ছাড়লো না। হাত ধরে রেখেই বলল, ‘সি ওয়াজ রেপড।’
কথাটা শুনতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
‘পুলিশের ধারণা মতে যারা তুলে নিয়েছিলো কাজটা তাদেরই। বাবার অসুস্থতা রোদুসির অবস্থা সব কিছু মিলিয়ে আমি ভীষণ অসহায় হয়ে পরেছিলাম। ধীরে ধীরে রোদুসি রেসপন্স করতে শুরু করলো। তাকালেই কেবল দু-চোখ দিয়ে পানি পরতো। আমার চোখে চোখ রেখে তাকাতো না। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত।
এদিকে বাবার হার্ট ব্লক ধরা পরে। ডাক্তার ইমিডিয়েট অপারেশনের কথা বলেন। এত টাকা কি করে ম্যানেজ করবো না করবো ভেবেই মাথায় বাশ পরে। সেদিনই বেড়িয়ে পরি। এক ফ্রান্ডের সহায়তায় লোন তোলার চেষ্টা করি। সেদিন একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। কলটা ছিলো ভাইয়ের। উনি আমাকে বলেন টাকা নিয়ে চিন্তা যেনো না করি। আমার একাউন্টে উনি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন বাবার চিকিৎসায় যেনো কমতি না পরে৷ কথাটা বলেই সে কল কেটে দেয়। যেনো প্রয়োজনের বেশি কিছু বলে ফেলেছে।
সেদিনই বাবার অপারেশনের ব্যাবস্থা করি। অন্য হস্পিটালে ট্রান্সফার করি। এদিকে রোদুসির কথাটা ধীরে ধীরে স্প্রেড হতে থাকে। তাদের আত্মীয়স্বজনরা দেখতে আসে। আমাকে দেখে নানা রকমের প্রশ্ন করে। রোদুসি একদিন রেগে আমাকে বলে, ‘আর কতবার যাওয়ার কথা বলবো? এত বেহায়া কেন তুই? যাহ চলে যা। আমি আর তোর যোগ্য নই। আমি অপবিত্র’
কথাটা আমাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দেয় নি। রোদুসি আমাকে একশ বার তাড়িয়ে দিলেও আমি তার পায়ের কাছে পরে থাকতে রাজি ছিলাম। কিন্তু দিন দিন তার পাগলামু কেবল বেড়েই চলছিলো। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখতো। কারো সাথে কথা বলতো না। তাদের বাড়িতে গেলেই মনে হত যেনো কোনো মৃত্যু পুড়িতে গিয়েছি।
বাবার অপারেশনের পর ডাক্তার বাবাকে রেস্টে থাকতে বললো। বাবাকে বাড়িতে রেখে সেদিন কিছুটা সস্থি পেয়েছিলাম। বাবাকে সুস্থ দেখে একটা টেনশন কমেছে ভেবে সস্থি নিতে চাইলেও ভাগ্য মানে নি।
পরেরদিন থেকে চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করলাম। রেসাল্ট ভালো হওয়াতে আর পরিচিত বড় ভাইয়ের সহায়তায় একটা ব্যাসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাই। সকাল টু সন্ধ্যা ডিউটি করে রোদুসিকে দেখে। বাবার চেকাপ লাগলে করাতাম অথবা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ। এক সপ্তাহেই হাপিয়ে উঠেছিলাম। সায়ান ভাইকে মনে মনে ডাকছিলাম। যেনো খুব করে সে সময়টাতে ভাইয়ার অভাব বোধ করছিলাম।
ভাইয়া এসেছিলো। তবে একা নয়। সাথে তার পাহাড়সম অন্যায় সাথে নিয়ে। রোদুসির বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে ছিলাম। অধীর অপেক্ষায় বসেছিলাম। একটিবার তার মুখ দর্শন করার আসায়। কিন্তু না। সে নাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আমার সামনে আর আসবে না। হাজার বার ডাকার শর্তেও সে আসে নি। তাও অপেক্ষায় ছিলাম যদি দরজা খুলে টুক করে ঢুকে যাবো। তাকে দেখার তৃষ্ণায় মন বেকুল ছিলো। সে সময়টাতেই পুলিশের কল আসে। রোদুসির কেইসের সাথে জড়িত আসামীরা ধরা পরেছে। আমি আর রোদুসির বাবা দুজনই আর বসে থাকি নি৷ সাথে সাথেই যাই।
একের পর এক ধাক্কা যেনো আমি কোনো ভাবেই নিতে পারছিলাম না রোদু। পুলিশ স্টেশনে সায়ান ভাইকে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। তার মাঝে এ আমি কোন সায়ান ভাইকে দেখছিলাম আমি জানি না। বিদ্ধস্ত অবস্থা। চুল মুখ উষ্কোখুষ্ক। পাগল উন্মাদের ন্যায় বসে আছে। শরীরের হাড়গুলা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিলো। যেনো সে কতদিনের অনাহারী।
পুলিশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই সে গ্যাং। যারা রোদুসির রেইপ কেইসে জড়িত। এখন রিমান্ডে নিলেই বাকি সব তথ্য বেড়িয়ে আসবে। রোদুসির বাবার সাথে আরো কথা হলো। আমি চুপ করে ছিলাম।
সায়ান ভাইয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কি ভাই? তুমি?’
ভাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। একটা কথাও বলেনি। আমি পুলিশকে বললাম। আপনাদেত হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। মানে উনি আমার আপন বড় ভাই। সে যতই খারাপ হোক এমন নিকৃষ্ট কাজে কখনোই সে জড়িত থাকবে না।
উনারা নাকি যথেষ্ট ইনফরমেশন কালেক্ট করে তাদের ধরে এনেছে। এবং সেখানে যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে এসব কাজের। তবে রিমান্ডে নিলে বাকি তথ্য বেড়িয়ে আসার আগে কিছু বলতে পারছেন না।
কোর্টে চালান দিবে। কথাটা ভেবেই আমি কূলকিনারা হারিয়ে ফেললাম। এবার আমি কার জন্য লড়বো। আমার ভাই? নাকি প্রেমিকার জন্য?
সায়ান ভাই আমার ভাই জানার পর থেকে রোদুসির বাবা মাও আমার সাথে আর ভালো ব্যাবহার করে নি। তাদের ধারণা মতে বড় ভাই এমন হলে ছোটটার উপর তারা কিভাবে ভরসা করবে? কথাটা যথেষ্ট যৌক্তিক হলেও আমাকে তো তারা চিন্তো তাই না বলো? তবুও আমাকে তাদের বাসায় যাওয়া আসা করতে সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ করে দিলো। বাবার অবস্থার কথা চিন্তা করে বাবা মা’কে সায়ান ভাইয়ের কথা না জানাতে চাইলেও এসব ব্যাপার কখনো গোপন থাকে না। মা জেনে যায়।
মা জেনেই যেকোনো উপায়ে সায়ান ভাইকে উনার কাছে ফিরিয়ে আনতে বলে। আমি অথৈ সাগরে পরি।
অনেক ভাবার পর সিদ্ধান্ত নেই। সায়ান ভাই আমার ভাই হলেও সে যদি সত্যি এসবে জড়িত থাকে তাহলে সে একজন অপরাধী। আর অপরাধ করে সে পার পেয়ে গেলে এমন অপরাধ করতে আর কারো গায়েও লাগবে না। একটা মেয়ের জীবন ধংস করে অপরাধী মুক্ত হয়ে ডানা মেলবে কেনো? হুয়াই। প্রকৃত অপরাধীকে সাজা পেতেই হবে।
এভাবেই প্রায় মাসখানেক চলে গেলো। রিমান্ডের শুনানি শুনে ভাইয়ের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। এর মাঝেই রোদুসি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পরলো। আংকেল আমার হাতে ধরে রিকুয়েষ্ট করলো রোদুসিকে বিয়ে করার জন্য। হুট করে এমন বিহেভে অবাক না হয়ে বিয়েতে মত দিয়ে দিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম। দূরে কোথাও গিয়ে দুজনে সংসার পাতবো। এ দুনিয়ার হিংস্র পশুগুলো থেকে আগলে রাখবো। বিয়ে করে পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হবো দুজন।’
চলবে….