#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ১৩+১৪+১৫ #Last_Part
লেখা- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। সেই উত্তেজনায় হাজার খানেক টেনশন নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলাম। কারণ বিয়ের পর থেকে আমি পড়ালেখা থেকে শ’মাইল দূরে ছিলাম। রায়ান অফিস থেকে ফিরে আমাকে পড়তে বসা দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থেকে নিরবে প্রস্থান করলো। আবার ফিরে এসে বলল,
‘তুমি কি সত্যিই পড়তে বসেছো?’
আশ্চর্য এখানে সত্য মিথ্যার কি আছে? আমি ব্রু কুচকে বললাম,
‘চোখে কি কম দেখছেন?’
রায়ান মিটিমিটি হেসে বললো,
‘না বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো।‘
আমি মেকি রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘কি বললেন?’
রায়ান তুতুলের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
‘কিছু না’
কথাটা বলতেই রায়ানের হাসি হাসি মুখটা গায়েব হয়ে গেলো। চিন্তিত সুরে বললো,
‘আচ্ছা তুতুলের গা গরম হয়ে আছে কেনো? কখন ঘুমিয়েছে?’
আমি বললাম, ‘এই তো ঘন্টা খানেক আগে।‘
রায়ান আবারো তুতুলের কপাল স্পর্শ করে বললো,
‘মনে হচ্ছে জ্বর এসেছে, একটু দেখবে রোদু?’
রায়ানের অসহায় কন্ঠ। আমি এগিয়ে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই অবাক হলাম। সত্যিই তো গা বেশ গরম। কই ঘুম পাড়ানোর সময়ও তো এত গরম ছিলো না। হুট করেই গরম হয়ে গেলো। আজকে তুতুল বেশ যন্ত্রনা করেছে। টুনির মা আসতেই আমাকে বলেছিলো। আমি আসতেই আমার সাথে একদম মিশে রয়েছিলো বাচ্চাটা। একটু কোলে রাখতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রায়ান মেডিসিন নিয়ে এসে বললো,
‘ওকে উঠাও তো রোদু। মেডিসিন খায়িয়ে দেই। এমনিতেও অসুস্থ হলে একদম নিরব হয়ে যায়।‘
আমি আলতু হাতে ডাকলাম,
‘মাম্মা উঠো তো’
কিন্তু তুতুলের কোনো নড়চড় নেই। রায়ান আলতো থাপড় দিলেও সে কোনো সাড়া দেয় না। এবারে ভেতরে ভয় ঢুকে যায়। কি হয়ে গেলো?
রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না। তুতুলকে কোলে নিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে উঠে বললো,
‘রোদু চলো। হস্পিটালে যেতে হবে।‘
রায়ানের ভেতর ভয় হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি।আমার নিজের বুকের ধুকবুকানিও যেনো বেড়ে গেলো। কিছু না ভেবেই গায়ের জামার সাথে ওরনাটা ভালো ভাবে জড়িয়ে নিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিলাম। রায়ান ড্রাইভ করছে।
হস্পিটালে পৌছে ডাক্তার চ্যাকাপের পরই ভর্তি দিলো। সাথে কিছু টেস্ট। নার্স তুতুলের ব্লাড নিয়ে গেলো সাথে সেলাইন পুশ করে গেলো। এই টুকু শরীরে সুইয়ের ঘা’টা যেনো আমার বুকে লাগছিলো। চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি পরলো রায়ানের। আমি কাধে হাত রাখলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কি হয়ে গেলো তুতুলের রোদু?’
আমি আশ্বস্ত করলাম। বললাম, ‘আমাদের তুতুলের কিচ্ছু হবে না।‘
কথাটা বললেও টেনশন আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ডাক্তার সেলাইনের মাধ্যমে মেডিসিন পুশ করলো। রায়ান কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে বললেন,
‘চিন্তা করবেন না। কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। আপনারা অপেক্ষা করুন।‘
অপেক্ষা। বিপদের সময় এই অপেক্ষা নামক শব্দটা যেমন ভীষণ ভারী পরে যায়। আমি তুতুলের বেডে বসলাম। আর রায়ান পাশে একটা টুল টেনে বসলো।
রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কেনো তকদির আমাকে বার বার একই জায়গায় এনে দাড় করায় রোদু’
তার কথার মর্মাথ ধরতে আমার একটুও কষ্ট হয় নি । এই মুহুর্তে এসব নিয়ে কথা বললে রায়ান আরো বেশি ভেঙ্গে পরবে। তাই আমি কেবল আশ্বস্ত করলাম যে, ‘আমাদের তুতুলের কিচ্ছু হবে না’
রায়ান আবারো বললো, ‘আচ্ছা রোদু তুতুলের সত্যি কিছু হবে না তো!
আমি তার দু হাত হাতের মুঠোয় এনে বললাম, ‘উহু কিচ্ছু হবে না।‘
‘আচ্ছা রোদু ভাই……ভাই যে তুতুলের কথা জানে না। না জানিয়ে কি আমি খুব অন্যায় করেছি। মা কেনো বার বার বলছে তুতুল সায়ান ভাইয়ের সন্তান আমার নয়। মা কেনো আমাকে বুঝতে চায় না রোদু। আমি মায়ের একটা কথাও তো ফেলি না তবে? তবে কি কারণে মায়ের পছন্দের ছেলের জায়গায় সর্বদা সায়ান ভাই থাকে?’
রায়ানের ভাঙ্গা স্বর। এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। তাই হাতটা কেবল আক্রেই ধরে রাখলাম। রায়ান হাত সরিয়ে তুতুলের কপালে আলতু চুমু খেলো। তুতুল নড়ে উঠলো। আমি সেলাইনের হাতটা ধরলাম। রক্ত না বেরিয়ে যায় এই ভয়ে।
ডাক্তার এসে বললো, ‘টেস্টের রিপোর্ট দেখে বুঝা যাচ্ছে, বাচ্চার নিউমোনিয়া, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা তুতুলকে চাইল্ড কেয়ারে স্থানান্তর করবো। কারণ যেকোনো মুহুর্তে অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে।‘
তারপর মুহুর্তেই তুতুলকে স্থানান্তর করা হলো। বাচ্চাটা পিটপিট করে তাকিয়েছে। কথা বলেছি। শরীর দুর্বল আর ঔষকের প্রতিক্রিয়ায় আবারো ঘুমিয়ে গেছে। সন্ধায় আম্মা এসেছিলো। জোর করে রায়ান তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই তুতুলকে পছন্দ না করা আম্মার চোখে আমি আজ পানি দেখেছি। আমি তাকিয়েছিলাম। নিশ্চুপ ছিলাম। কিছু বলি নি। রায়ান জোর করে আম্মাকে পাঠিয়ে দিলো বাসায়। হাসপাতালের পাশের টং থেকে ব্রেড আর কলা নিয়ে এসে জোর করে রায়ানকে খাওয়ালাম। আমি জানি সে সেই দুপুর থেকে কিছুই মুখে তুলে নি।
ঘড়ির কাটা টুং টুং শব্ধ করে গভীর রাতের জানান দিলো। রাত ১২টা বাজে। তুতুলকে এক পলক দেখে এসে রায়ানের পাশে বসলাম। আমি বসতেই রায়ান আমার কাধে মাথা দিয়ে রাখলো। আমি আলতু হাতে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম।
রায়ান হঠাৎ বললো, ‘রোদুসির মা ফোন দিয়েছিলো। তুতুলের কথা জানতে চেয়েছিলো। আমি তুতুলের অসুস্থতার কথা জানাই নি।‘
আমি বললাম, ‘আচ্ছা ভালো করেছো। এমনিতেও এই মহিলাকে আমার ভালো লাগেনি।‘
রায়ান উঠে বসে আমাকে বললো, ‘উনি আমার কাছ থেকে তুতুলকে কেড়ে নিতে চায় । আমি দিবো না।‘
আমি বললাম, ‘তুতুল আমাদের মেয়ে। কেনো দিবো? দিব না তো’
রায়ান খুশি হলো। বললো, ‘ তুতুলের জন্মের পর তুতুলকে এতিম খানায় পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আমার জন্য পারে নি। রোদুসিক্র নানা ভাবে ফোর্স করেছে এবর্শন করার জন্য। তাও পারে নি। এখন আবার কেনো এমন করছে বলো তো? ‘
আসলেই তো কেনো এমন করছেন । উনি কি চান? আমি রায়ানকে বললাম, ‘তুমি কি কিছু আন্দাজ করতে পারছো? মানে এক দিকে হিসেব করলে সায়ান ভাইয়ের সাথে কিন্তু রোদুসির বিয়ে হয় নি। তাই…’
রায়ান কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুতুল আমার মেয়ে রোদু।‘
আমি আলতো হেসে বললাম, ‘বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করো। উনি ঠিক কেনো এমন করছেন খুজার চেষ্টা করো। তাছাড়া দেখো রোদুর সাথে করা অপরাধের শাস্তি সায়ান ভাই পেলো। কিন্তু সায়ান ভাইকে দিয়ে কেনো রোদুসিকে তুলে নেয়া হয়েছিলো সেটা তো অজানা তাই না?’
রায়ান বললো, ‘অজানা নয় রোদু। অজানা নয়।‘
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘মানে?’
‘রোদুসির আপন চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো রোদুসির চাচা। কিন্তু তার চাচাতো ভাই ছিলো ড্রাগ এডিক্টেড নেশাখোর। তাই আংকেল না করে দেন। এথেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্কের মনমালিন্য শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিনই রোদুসিকে ছেলেটা উত্যক্ত করতো। রোদুসি আমার কাছে এসব কিছুই গোপন করে যায়।পরে কেইসের থ্রোতে জানতে পারলেও রোদুসিকে বলি না এসব আর।
রোদুসিকে একদিন চ্যাকাপে নিয়ে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। সে তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হাসপাতালের করিডোরে কাকে দেখে যেনো আমার হাত খামচে ধরে।আমি তাকালে দেখলাম ভয় পাচ্ছে। বাসায় গেলে বলে সে ফয়সাল। মানে তার সেই চাচাত ভাই। সাথে সাথে পুলিশে ইনফর্ম করি। বাট খুজে পাওয়া যায় নি।
সায়ান ভাইয়ের সাথের লোকগুলা থেকে কেইস চলাকালীন জানা যায় ঐ মেইন কালপ্রিট। সে’ই মোটা অংকের টাকা দিয়েছিলো তাদের দলের লিডারকে রোদসীকে ধরে আনার জন্য। পুলিশ অনেক খোজা খোজি করেও তাকে পায় নি। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো রোদুসিকে ফয়সালের হাতে তুলে দিবে। কিন্তু এর মধ্যেই সায়ান ভাইয়ের সাথে এতসব ঘটে যায়। আর ফয়সাল আর তার পুরো পরিবার পলাতক থাকে।‘
আমি বললাম, ‘এভাবে আসল অপরাধী পালিয়ে যাবে? আর তাছাড়া ঐ ফয়সালের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কিডনাপ করলে কেনোই বা সায়ান ভাইয়ের সাথে এমন করলো?’
রায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘সবগুলাই তো নেশায় বুধ ছিলো। আর নেশারত অবস্থায় তারা সায়ান ভাইয়ের সাথে এই বিকৃত মজা নেয় সায়ান ভাই রোদুসিকে বাচাতে চাইলে। তাও ভালো ছিলো রোদু , আমার রোদুসিটাকে জানোয়ার গুলো খুবলে খায় নি’
একজন প্রেমিক ঠিক কতটা অসহায় হলে এমন কথা বলতে পারে? ঠিক কতটা? রায়ান যতবার রোদুসির কথা বলে ততবার কাদে। একটা মানুষ নির্সার্থভাবে কেবল ভালোবেসেই গেলো। দুনিয়ায় পাপীরাই কেনো বেচে যায়? আর অসহায়রাই কেনো ভুগ্তভোগী হয়?
চলবে……
[এ পর্যন্ত গল্পটা পড়ার পর আপনাদের গল্পটা আসলেই কেমন লেগেছে আমি জানতে চাই। এবং গল্পটা সম্পর্কে আপনাদের মনে আশা সব প্রশ্ন গুলো জানতে চাই। আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এভাবে ভালোবেসে যাবেন। যাতে নিজের লেখার মান ধীরে ধীরে আরো উন্নত করতে পারি। এবং আপনাদের সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দিতে পারি।]
#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ১৪
লেখা – #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
সারারাত কেটে গেলো করিডোরে। রুমের ভেতরে ঢুকতেই আমার বাচ্চাটা আস্তে করে ডাকলো মাম্মা বলে। ধীরে ধীরে বাচ্চাটা আমার সুস্থ হতে লাগলো। আর তুতুলের সাথে আমার সম্পর্কের সাথে রায়ানের সাথে আমার সম্পর্কটাও গভীর হতে লাগলো। উপলব্ধি করতে পারলাম ভালোবাসার শক্ত এক অদৃশ্য বাধনে বাধা পরেছি আমি। কেমন সুখ সুখ অনুভূতিরা আমার সাথে খেলা করতে লাগলো।
তুতুলকে প্রায় আটদিন পরে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। এর মাঝে আমার দুটো পরীক্ষা মিস হয়েছে। রায়ান আমাকে বার বার বলেছে পরীক্ষাটা দিয়ে দাও রোদু৷ আমি শুনি নি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমার বাচ্চার আগে আর কিছুই না। তবে এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলাম।
‘মাম্মা দুক্কু’
তুতুলের কথা শুনে ধ্যান ভংগ হলো। এই বাচ্চাটার জন্য জীবনের সব কিছু ছাড় দেয়া যায়। তুতুলকে কোলে নিয়ে আম্মার কাছে গেলাম। সেই ঘটনার পর আম্মার সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমার তেমন একটা কথা হয় নি। আমি আম্মার পাশে বসে বললাম, ‘আম্মা আপনার শরীরের অবস্থা কেমন? ‘
আম্মা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলেন, ‘এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ’
আম্মা আমাকে পছন্দ করেন। আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারি। আমার আর রায়ানের সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার জন্য উনি ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক চেষ্টা করেছেন। আমি আম্মাকে বললাম,
‘আম্মা সেদিনের জন্য আমি মন থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে আমার সেরকম কোনো ইনটেনশন ছিলো না। কেনো যেনো এ সংসার আর তুতুলের গভীর এক মায়ায় পরে গেছি আমি। আমার উপর কষ্ট রাখবেন না’
আম্মা আমার কথা শুনে মুচকি হাসেন। বলেন, ‘আমি না বুঝে তোমাকে এ সংসারে নিয়ে আসি নি মা। রায়ান এ বিয়েতে রাজি ছিলো না। এ বিয়ে না মোটকথা বিয়েই করতে চাইতো না। এর একটাই কারণ তুতুল। আমি যতই না করি না কেনো তুতুল আমার কাছে অনেক কিছু। আমি নিজের চোখে তুতুলের মায়ের কষ্ট দেখেছি মা। তারপর থেকে কেনো যেনো তুতুলকে কাছে আনতেই সব হারিয়ে ফেলার দুঃখ গুলো এসে আমাকে ছুয়ে ফেলতো। মনে হতো এই মেয়েটার জন্যই সব কিছু। কিন্তু আমি কখনোই চাই না তুতুলকে এ বাড়ি এ সংসার থেকে সরিয়ে ফেলতে। রোদুসির মা’কেও কেমন রাগ দেখিয়েছি দেখো নি?
তোমাকে বার বার পরীক্ষা করেছি। নানাভাবে। তুমি সব পরীক্ষায় পাশ’
বলেই মা হেসে দিলেন। হাসলাম আমিও। তুতুলও কি যেনো বুঝলো। হাত তালি দিয়ে হাসলো। মা তুতুলকে কাছে ডাকলে সে গেলো না। আমার কোমড় পেছিয়ে রাখলো। মা টেনে নিয়ে গেলে চিৎকার দিয়ে কেদে দিলো। এমনিতে সে মায়ের সাথে হাজার দুষ্টুমি করে। কিন্তু কখনো মায়ের কাছে যায় না। মায়ের থেকে তুতুলের ভয় সরাতে মায়ের হাতে একটা বারবি ডল দিয়ে বললাম,
‘মা এটা দেখান হয়তো বা ভয় কাটতে পারে। খুশি হবে’
হলোও তাই। মা পুতুলের লোভ দেখানো মাত্রই তুতুলের চেহারা পালটে গেলো। ডল টা হাতে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সে দু নয়ন মেলে তাকিয়ে রইলো। মা বললো, ‘আগে দাদুর গালে একটা চুমু দাও দাদুভাই তারপর দিবো।’
তুতুল কিছু সময় চিন্তা করলো। আমার দিকে তাকালো আবার ডল টার দিকে। তারপর হুট করেই আম্মাকে একটা চুমু দিয়ে ছু মেরে পুতুলটা নিয়ে দৌড় দিলো। আমি আর আম্মা একসাথে হেসে দিলাম। যাক দাদী নাতনির সম্পর্কটা ঠিক হলো। তুতুলকে ভয় পেতে নয় লড়তে শিখাবো। জীবন কাকে কখন কোন মূড়ে নিয়ে দাড় করায় কেউ বলতে পারে না। আমার মেয়ের সাহস হবো আমি।
_________
দেখতে দেখতে বিয়ের দেড় বছর পেরিয়ে গেলো। কিভাবে যেনো সংসার সামলাতে সামলাতে পাক্কা গৃহীনি হয়ে গেলাম। সারা বাড়িতে তুতুল টই টই করে ঘুরে বেড়ায়। মারাত্মক জেদী মেয়েটার সব কিছুই হাতের নাগালে পাওয়া লাগবে।
আজকে তার স্কুলের প্রথম দিন। সাদা শার্ট সাথে নেভেব্লু স্টার্ট পরিয়ে। দুদিকে দুটো ঝুটি করে দিলাম। বার বার আয়নায় গিয়ে সে নিজেকে দেখছে। আর একটু পর পর খিলখিলিয়ে হেসে বলছে, ‘মাম্মা সুন্দর’
আমি দুগালে চুমু খেয়ে বললাম, ‘উহু মাম্মার পরীটা সুন্দর’
তুতুলের রাগ হলো। সে বললো, ‘আমিতো এটাই বলেছি মাম্মা। আমি সুন্দর’
আমি হেসে দিলাম। পাগলিটা আমার। রায়ান অফিসের ড্রেসাপে এসে তারা দিলো। আমি রেডি হয়ে বেরুনোর সময় আমাকে কাছে টেনে গিয়ে কপালে গভীর চুমু একে দিয়ে বললো, ‘জীবনে হয়তো কখনো কোনো ভালো কাজ করেছিলাম রোদু। যে তোমার মত এমন একজন জীবন সঙ্গী পেয়েছি।’
আমি আলতো হেসে বললাম, ‘জীবনে তুমি অনেক পূণ্য করেছো রায়ান। আমি তোমার কাছে ঋনী। আমাকে তুমি সুন্দর স্বাভাবিক একটা জীবন দিয়েছো। যাতে ভালোবাসা কাণায় কাণায় পরিপূর্ণ’
রায়ান আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘চলো’
জীবন মানুষকে অনেক রকমের পরিস্থির সম্মুখীন করে। জীবনে সব কিছু হারিয়ে নতুন উদ্দমে শুরু করা কঠিন ভীষণ কঠিন। আমি জানি রায়ানের চাওয়া একটাই আমার কাছে যেনো তাকে ছেড়ে কখনো না যাই। মা হারা তুতুলটাকে কখনো বুঝতে না দেই তার মা নেই। মায়ের মত ঢাল হয়ে থাকি তার পাশে৷
রায়ান এখনো গম্ভীর। তবে শুধু অফিসে আর তার এমপ্লোয়িদের কাছে। বাড়িতে তার রাগ আর গম্ভীরতা এখন আর কাজে আসে না। আর তার সম্পূর্ণ ক্রেডিটটাই আমার তুতুলের।
আমরা মাঝে মাঝে জোছনা বিলাশ করি। সুখ দুঃখের গল্প বলি। আমার মনের দুঃখগুলো রায়ানকে বলতে পারলে যেনো তৎক্ষনাৎ শান্তিরা উড়ে এসে মন প্রাণ দখল করে নেয়। ভালো লাগে। ভালোবাসায় সিক্ত অনুভূতিরা পাখা মেলে উড়ে। আমি রায়ানের কাধে মাথা রেখে মাঝে মাঝে দুফোটা অশ্রু ফেলি। এইতো! রায়ান কেয়ারিং হাসব্যান্ড। ছোট থেকে ছোট জিনিশগুলাও খুব সুক্ষ ভাবে লক্ষ্য রেখে দায়িত্বের সহীত পালন করে।
একদিন আমি বলেছিলাম। আমার একবার বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। পাত্রপক্ষ বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে যায়। রায়ান আমাকে আর বলতে দেয় নি। কেবল বলেছে, ‘কিছু কথা স্মরণে না আনায় শ্রেয়।’
আমি মাথা নেড়ে সায় দেই। এইতো আমার রায়ান। আমি জানি রায়ান সব জানে। ভাইয়া তাকে সব বলেছে। কিন্তু আমি আমার নিজের মুখে বলতে চাচ্ছিলাম। রায়ানের এক কথা আমার মনে পেখম মেলেছে। শ্রদ্ধাবোধ বেড়েছে। আমি রায়ানকে যত দেখি অবাক হই। একটা মানুষ এত কিছু সহ্য করেও কিভাবে সব কিছু সামাল দেয়?
দেখতে দেখতে অনেক দিন, না না বছর পেরিয়ে গেলো। ভরা পেট আমার। তুতুলের সারাদিন এক প্রশ্ন, ‘মাম্মা বাবু কখন আসবে?’
আমি হাসি। রায়ান উত্তর দেয়। এইতো মা আর কিছুদিন। তুতুলের প্রত্যেকটা কথা এখন স্পষ্ট। কিন্তু আমি আমার তুতুলের মাঝে আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকেই খুজে পাই। তুতুল আমার প্রথম সন্তান। আমায় প্রথম মা ডাকার অনুভূতি দিয়েছে সে। এই সংসারে না পাওয়ার ভান্ডারি থেকে পূর্ণতা বেশি। আমি বা রায়ান কেউই বাচ্চা নিয়ে কোনোরকম পরিকল্পনা করি নি। তুতুল থাকতে দ্বিতীয় সন্তান নিব এরকমের কোনো চিন্তা মনে এসে উকি দেয়নি কখনো। তবে আমি যেদিন জানতে পারি যে আমি কনসিভ করি আমি একটু ভয়ে ছিলাম। রায়ান ঠিক কেমন রিয়েকশন দিবে তা নিয়ে। রায়ান সম্পূর্ণটাই বেশ নর্মাল ভাবে নিয়েছে। খুশি হয়েছে। একটা আবদার রেখেছে তার এবারে রাজপুত্র চাই। আমি জানিনা আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছে। তবে আমি চাই খুব করে চাই রায়ানের চাওয়াটা পূর্ণ করতে।
আগামীকাল সায়ান ভাইয়ের বেল। ভালো ব্যাবহার আর শান্তশিষ্ট ভাবে থাকার কারণে দু-বছর মৌকুফ করা হয়। রায়ানও এ নিয়ে কম দৌড়াদৌড়ি করে নি। কাল সায়ান ভাইকে বাসায় নিয়ে আসা হবে।
রায়ান যখন সায়ান ভাইকে তুতুলের কথা জানায়। সায়ান ভাই কোনো রকমের কোনো প্রতিক্রিয়া করেন নি। রায়ান এ নিয়ে চিন্তায় আছে। সায়ান ভাই তুতুলকে গ্রহণ না করা নিয়ে নয়। যদি কোনো কারণে তুতুলকে এ বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতে চায়? এ নিয়ে।
_______
আম্মার শরীর ইদানিং বেশিরভাগই খারাপ যায়। সায়ান ভাই আসছে শুনে সে কি খুশি। টুনির মা’কে নিয়ে ধরে ধরে ড্ররিংরুমে এসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আখিযোগল ছেলেকে দেখার তৃষ্ণায় আছে।
সায়ান ভাই আসলো। মা এলোপাথারি সারামুখে চুমু খেয়ে চোখের পানি ছাড়লো। আমি দেখলাম মা ছেলের ভালবাসা। সায়ান ভাই চোখ তুলে তাকালো। তুতুলের দিকে। তুতুল আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,
‘কে উনি মা?’
আমি কিছু বললাম না। রায়ান এগিয়ে এসে বললো, ‘একটা আংকেল’
আমাদের অবাক করে দিয়ে সায়ান ভাই বলে উঠলো, ‘আংকেল নয়। বাবা’
কথাটা শুনে আমার বুক ধ্বক করে উঠলো। বাবা! রায়ানের দিকে তাকালাম। তার মধ্যে কি চলছে এই মুহুর্তে বুঝার চেষ্টা করলাম।
চলবে…
[আগামী পর্বে অন্তীম পর্ব আসছে]
[গল্প সম্পর্কিত মতামত দিতে ভুলবেন না]
#আছি_তোমার_পাশে
অন্তিম পর্ব
লেখা – #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
সায়ান ভাই আবারও বলে উঠলেন বড় বাবা! তুতুল কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠলো,
‘বড় পাপা’
রায়ান হেসে বলল, ‘হ্যা বড় পাপা’
সায়ান ভাইও হাসলো। এগিয়ে আসলো তুতুলের কাছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভালো থাকো মা’
কথাটায় হয়তো গভীর মায়া মেশানো ছিলো। সায়ান ভাই আর বেশিক্ষন অপেক্ষা করেন নি। চলে গেলেন।
চেয়ে দেখলাম। লম্বা দাড়ি বড় চুলেও যেনো মানুষটাকে খারাপ লাগলো না। কিংবা এক মুহুর্তের জন্যও মনে হলো না যে মানুষটা খারাপ।
সায়ান ভাই আসার পর থেকে বাড়িটা কেমন যেনো আনন্দে ভরপুর হয়ে গেলো। আম্মা সারাক্ষন ঘরটা মাতিয়ে রাখেন। সারাদিন সায়ান রায়ান করে উনার সময় পার হত। ছেলেরাও মায়ের এক কথাতেই সামনে এসে হাজির।
দেখতে দেখতে আমার ডেলিভারীর ডেইট এগিয়ে আসতে লাগলো। আট মাসের সময়ই ডাক্তার সিজারিং করার পরামর্শ দেন। বাচ্চার পজিশন দেখে। রায়ান ভয় পেলেও আমাকে একটুও বুঝতে দেন না। আমাকে উলটো সাহস দেয়।
আমি মানুষটার দিকে তাকাই। আমার সংসারের দিকে তাকাই। এই মুহুর্তে যেনো পৃথিবী থমকে গেছে মনে হচ্ছে। আমি এই সুন্দর পৃথিবী। আমার সংসার আমার পরিবার আমার তুতুলকে ছেড়ে যেতে চাই না। কিছুতেই এত তাড়াতাড়ি যেতে চাই না। পেটে হাত রাখলে মনে হয় আমি কিছু অনুভব করতে পারছি। আমার বাচ্চার অস্তিত্ব আমি টের পাই। চোখ থেকে দু ফোটা পানি নির্গত হয়। যদি! যদি কোনো কারণে অপারেশন থিয়েটার থেকে আমার জ্ঞান না ফিরে? তখন কি হবে? আমার বাচ্চা, আমার তুতুলের কি হবে? আচ্ছা রায়ান কি আরেকটা বিয়ে করবে?
তুতুল হুট করে এসেই আমায় জড়িয়ে ধরলো। পেটে একটু চাপ অনুভব করতেই মৃদু আওয়াজ বেড়িয়ে এলো মুখ থেকে। তুতুল সাথে সাথেই সরে গেলো। ভয় পেয়ে গেলো। পাপা দাদু বলে চিৎকার করতে থাকলো। হুট করে কি হয়ে গেলো বুঝলাম না। আমার দুনিয়া যেনো অন্ধকারে পরিণত হয়ে গেলো। ঝাপসা চোখে দেখলাম সায়ান ভাইকে। তারপর তারপর সব কিছু অন্ধকার…..
পিটপিট করে তাকালাম যখন তখন চোখ দেয়ালে ঠেকলো। সাদা ওয়াল। পাশ ফিরে তাকালেই রায়ানকে দেখলাম। চেহারায় টেনশন। আমার হাতে ক্যানোলা লাগানো। মুহুর্তেই আমার বাচ্চার কথা মনে হতে পেটে হাত দিলাম। রায়ানের দিকে তাকালে সে বলে, ‘কিচ্ছু হয়নি। বাবু ঠিক আছে’
তুতুল ভয়ে সিটিয়ে আছে। আমি হাতের ইশারায় ডাকলাম। আসলো না। বিড়বিড়িয়ে যেনো কি বলল। রায়ান টেনে আনলো। ডান হাত দিয়ে গাল ছুলাম। মেয়েটা আমার ঝড়ঝড়িয়ে কেদে দিলো। আলতো করে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম, ‘কি হয়েছে সোনা। মাম্মা ঠিকাছি তো’
‘না মাম্মা আমি ছুলেই তুমি দুক্কু পেয়ে যাবে’ -কান্নার জন্য কথাগুলো যেনো অস্পষ্ট শুনালো।
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করলাম। এর ভিতরেই নার্স এসে বলল, ‘অপারেশন থিয়েটার রেডি। রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। ‘
আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সায়ান ভাই তুতুলকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন কেবিন থেকে। রায়ান এসে আমার মাথায় আলতু চুমু খেয়ে বলল, ‘আছি তো আমি। কিচ্ছু হবে না। টেনশন নিও না। আল্লাহ ভরসা।’
কি জানি আমার কি হলো। হুহু করে কেদে দিলাম৷ রায়ানের হাত ধরে বললাম, ‘আচ্ছা আমি যদি মরে যাই?’
রায়ান বাধা দিলো। বলল, ‘শু.. এমন কথা বলে না। থাকতে হবে তুমায়। আজীবন থাকতে হবে। আমার পাশে। ভালোবাসি রোদু। অনেখানি। যতখানি বাসলে কাউকে গভীর থেলে উপলব্ধি করা যায়। ‘
ট্রেজারে করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। মুহুর্তেই কি হয়ে গেলো। পৃথীবি আলো করে আমার কোলজোরে আমার রাজপুত্র এলো। রায়ানের খুশি দেখে কে। আমার প্রাণ ভরে গেলো তার খুশি দেখে। তুতুল বার বার কোলে নেয়ার বায়না করলো।
আমার ছেলেটার বয়স দেড় মাস। হেসে খেলেই দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। সায়ান ভাই এসে রায়ানকে বলল তিনি তুতুলকে নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে চান। এই কথাটা শুনার জন্য আমরা কেউই মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। রাতে আর এ নিয়ে টেনশনে দুজনের কারো ঘুম হলো না। তবে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলাম। তুতুলকে সব জানতে হবে। যদিও তার বয়সটা খুব কম। তবুও তার ছোট্ট মস্তিষ্কে এটা ঢুকাতেই হবে সায়ান ভাই তার বাবা।
রায়ান রোদুসির একটা ছবি প্রিন্ট করে এনে তুতুলের হাতে দিলো। তুতুল ছবিটা নেড়ে চেড়ে দেখে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কে পাপা’
রায়ান মুচকি হেসে বলল, ‘তোমার মা’
তুতুলের চেহারা মলিন হয়ে গেলো। আমার কোল ঘেষে বসে বলল, ‘উহু আমার একটাই মাম্মা।’
আলতু হেসে আমার মেয়েটাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললাম,
‘দেখো মাম্মা তুমি না ব্রেভ গার্ল। আর ব্রেভ গার্লদের কখনো দুঃখ পেতে নেই। তারা তো স্ট্রং। আর স্ট্রংরা সব সময় হাসি খুশি থাকে।
এই যে ছবিটা দেখছো না? এটা তোমার একটা মাম্মা। আর আমি আরেকটা।
তোমার মা পৃথীবি থেকে অনেকখানি দুঃখ নিয়ে চলে গেছেন সোনা। অনেকখানি। কিন্তু একজন রয়ে গেছেন। যার দুঃখ গুলি তুমি চাইলেই দূর করতে পারো…!’
‘কে মাম্মা’
তুতুলের কথা শুনে আমি রায়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার পাপা, বড় পাপা’
তুতুলকে বুঝালাম তার বাবা সায়ান ভাই। সে ধানাই পানাই করলেও। সায়ান ভাই সামনে আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। কাদলো সায়ান ভাইও। কাদলাম আমিও। মুহুর্তটা ভীষণ বেদনা দায়ক। এক বাবা থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে আড়েক বাবাকে দিয়ে দিয়েছি বলে কি আকাশে বাতাসে দুঃখের ফোয়ারা বইছে?
রায়ানের দিকে তাকালাম। কি সুন্দর দৃশ্য। চোখে জল অথছ ঠোটের কোণে চমতকার এক হাসি। দুচোখ বুজে অশ্রু গুলোকে ফেলে দিলাম। আর কাদবো না। সুখের প্রহর গুনবো কেবল তুমি আমি মিলে।
রায়ান ভাই আর তুতুলের মিষ্টি সম্পর্কটা দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এই মানুষটা জীবনে কিছুই পায় নি। নিজের সন্তানকে চেয়ে কি খুব স্বার্থপরের মত কাজ করেছেন? রায়ানের দিকে তাকালে হাজারো কষ্টেরা জমলেও মনে হয় এই মানুষটুকুর এইটুক সুখ প্রাপ্ত। সে ডিসার্ভ করে।
______
শতেক ঝামেলার পর ফাইনালি আজ সায়ান ভাই তুতুলের ফ্লাইট। উহু শুধু তাদের দুজনের না। সাথে আম্মাও যাচ্ছেন। কেবল মাস ছয়েকের জন্য পিছিয়ে গিয়েছি আমি রায়ান আর আমার ছেলেটা। এই ছমাসই যেনো আমার কাছে অনেক অনেক দিন মনে হচ্ছে। বাচ্চা মেয়ে আর রায়ানকে বুঝ দিলেও মনে হচ্ছিলো আমার সন্তানকে কেউ আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তুতুলকে কাছে এনে সারা মুখে চুমু একে দিলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে দেশ ছাড়ার আগে শেষ বাক্য বলল, ‘মাম্মা পুচুন আর পাপার খেয়াল রেখো, হ্যা?’
বাচ্চা মেয়েটা আমাকে কত বড় এক দায়িত্বের পাহাড় দিয়ে গেলো। রায়ান কাদছে। খুব কাদছে। আরে! বাচ্চা নাকি? এভাবে কেউ কাদে।
সিড়ির কাছে গিয়ে দুজন বসলাম। রায়ান আমার কাধে মাথা রেখে সুধালো,
‘থেকো মোর কাছে প্রিয়
সারাটিজীবন ধরে।
বিষন্নতার এই শহরে
ইট পাথরে ধুলো জমে
তবুও তুমি শেষ রাত্রি ভোরে
বলিও একটি বুলি
যেই বুলিতে প্রাণো মোর
শান্তিতে দুচোখ বুজে’
আমি হাসলাম বললাম,
‘আছি তো আছি, থাকবোও। তোমারি পাশে। আজীবন ভর। কাছে থেকো, ভালোবেসো ঠিক এমনি করে!’
____
এয়ার্পোরটের টিভির নিউজচেনেলে রেড এলার্ট দিয়ে হেডলাইন আসছে। শেষ পর্যন্ত ধরা পরলো অশ্র মামলায় পাচার কারী দল। সাথে তাদের লিডার।
হাতে নাতে ধরা ফয়সাল। সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর।
এবার কি হবে? এত এত অন্যায়ের বিচার কি হবে এই দেশে? নাকি আবারো পরিস্থিতি আর সমাজের যাতাকলে রোদুসি আর সায়ানের মত আরো কারোর জীবনে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় বয়ে যাবে।
রায়ানের দিকে তাকালাম। সে বিদঘুটে একটা হাসি দিলো। কি আশ্চর্য এসবের পেছনে কি সে আছে? থাকলে মন্দ নয়। বরং আমি আমার প্রিয়তমকে নিয়ে গর্ব করবো। বাসর রাতে বসে ভাবা বদরাগী বিরস সেই মানুষটাকে নিয়ে গর্ব করে বলবো, ‘তুমি সৈনিক, তুমি প্রেমিক, তুমি দায়িত্ববান স্বামী। তুমি ভাই, তুমি বাবা তুমিই মায়ের ছেলে। ছিলাম, আছি, থাকবো আজীবন তোমার পাশে’
সমাপ্ত
[গল্পটা একটা নির্দিষ্ট থিমে সাজিয়েছিলাম। হয়তো বা আমার কাচা হাতের লেখা সবার মন ছুতে পারে নি। তবে আমি আমার লেখার হাত ভালো করার চেষ্টায় আছি। এই ছোট লেখালেখির সখটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। অনেক আশা। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার ইরেগুলার গল্পটাও এত ভালোবেসে পড়ার জন্য অনেক ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। ভালোবাসবেন। ভালোবাসা নিবেন। শেষ পর্যন্ত কেমন লেগেছে তা বলতে ভুলবেন না।]