#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_৮
#সাহেদা_আক্তার
এখন নামতে ইচ্ছে করতেসে না। তাই যেভাবে পাউরুটি খাইতেসিলাম, ওভাবেই খাইতে লাগলাম। ক্রাশের জ্বালায় জীবন একেবারে ত্যানা ত্যানা।
দুপুরে খেয়েই শুয়ে রইলাম। বিকালে আর যাওয়া হইলো না। বলতে গেলে আম্মাই যাইতে দিল না। কত সাধ ছিল। ক্রাশের বাসায় যামু। তা আর হইল কই? মুখ বোঁচা করে একটা গল্পের বই নিয়ে বসে রইলাম। হেইডি। বইটা এই নিয়ে দশবার পইড়া ফেলসি। আবার পড়তেসি। নিজেকে হেইডির মতো মনে হইতেসে। হেইডি শহরের বাড়িতে বন্দী ছিল আর আমি নিজের রুমে। দাঁড়া, এই খাঁচা থেকে আমি বের হমুই। কেউ আমারে আটকাইতে পারবো না। আমি মাত্র পাটা নামাইতে ছিলাম। হঠাৎ আম্মার ডাক, ছোঁয়া, পা নামাবি তো খবর আছে। আমি আশেপাশে তাকাই ভাবলাম সিসি ক্যামেরা লাগাইসে নাকি! পরে দেখি আম্মা দরজার সামনে দাঁড়াই আছে। আমি আবার পা উঠাই ফেললাম। বইটা চোখের সামনে মেইলা ধইরা মনে মনে কইলাম, জামাই, আমারে নিয়া চলো। আর ভালা লাগে না।
একটু পরে আম্মারে অনেক বুঝাইয়া সুঝাইয়া বারান্দায় আইসা বসলাম। যাক অন্তত এক পলক পরাণ পাখিটা রে দেখমু। অনেকক্ষণ খেলা দেখলাম কিন্তু ক্রাশ তো নাই। এই আসবো, এই আসবো কইরা বিকাল গড়াই সন্ধ্যা হই গেল। আমি মশার কামড় খাইয়া বইসা আছি। আম্মা ভেতর থেইকা চিল্লাইতেসে, তুই ভেতরে আসবি? নাকি ডেঙ্গু হয়ে কয়েকমাস বিছানায় পড়ে থাকার ইচ্ছা আছে? শুনেই আমি ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। সত্যিই যদি তাই হয়!!! ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বিছানায় এসে বসলাম। মনটা খারাপ। আজকে কিছুতেই ক্রাশরে দেখতে পারতেসি না।
সাতটার দিকে কলিং বাজল। আমি তখন হেইডি একবার পড়া শেষ কইরা ভাবতেসি আবার পড়মু কি না। আম্মা গিয়া দরজা খুলল। গলার স্বর শুইনা আর থাকতে পারলাম না। বিছানা থেকে ল্যাংচাইতে ল্যাংচাইতে বসার ঘরে চলে আসলাম। আন্টি জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো, ছোঁয়া?
– ভালো। (মনে মনে) আর কেমন আছি। আপনার পোলারে না দেইখা আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
– তুমি বলেছিলে আসবে। দেখলাম আসোনি। ভাবলাম পায়ের অবস্থা খারাপ কি না।
– না আন্টি, আমি ঠিক আছি।
– ভাবি, মেয়েটা যে কি করে না। পায়ের হাড় একটু নড়ে গেছে। প্লাস্টার করিয়ে আনিয়েছে ওর আব্বু। ডাক্তার বলেছে বেড রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
– সে তো ভালো কথা।
– ভালো কথা তো ঠিক কিন্তু মেয়ে কি কথা শোনে? দিনে একশবার ওয়াশরুম যাবে।
– আম্মু……
হায় হায় রে!!!! শ্বাশুড়ির সামনে আমার মান সম্মান সব ডুবাই দিল!!! আম্মার তো থামার নামই নাই। বলতেই আছে।
– একবার বারান্দা যাবে। একবার শেলফের কাছে যাবে। একবার এখানে যাবে আবার ওখানে যাবে। কোথাও স্থির হয়ে বসার মেয়ে নাকি।
– আরে, এই বয়সে এমন ছটফটে হয়। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তবে রেস্ট নেবে তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
– জ্বি আন্টি। (মনে মনে) লাভ ইউ শ্বাশুড়ি আম্মা।
– ও… তুমি না বড়া খেতে চেয়েছিলে। তাই বানিয়ে এনেছি।
– শিখতেও তো চেয়েছি।
– কিহ্!!!! যে মেয়ে রান্নাঘরে যেতে চায় না সে বড়া বানাতে চাইছে।
আম্মা, দোহাই তোমার। আমারে আর ছোট করিও না। তাইলে একসময় অদৃশ্য হই যামু। আর দেখতে পাইবা না। আমি সরমে লাল হইয়া খাঁড়াই আছি। আন্টি আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বললেন, ভালো হলে বাসায় আসতে। আমি তো আটাইশ দাঁত বের করে দেখাইলাম। এই ব্যাপারে আমি এক পায়ে খাঁড়া।
একদিন পরই আমার প্লাস্টার খুলে ফেলল। আমি হাজির ক্রাশের বাসায়। বিকাল বেলা। তাই ক্রাশ নাই। আমি আন্টির থেকে আপাতত চা বানানো শিখলাম। তারপর আম্মা আমাকে দমাই রাখলো এই বইলা, যদি আমি বান্দরের মতো লাফালাফি করি তবে ঘরে বাইন্ধা রাখবো। আমিও চুপ কইরা ঘরে পইড়া রইলাম। অবশেষে আমার পা সারলো।
.
.
.
.
কয়দিন পর স্কুল থেকে আইসা শুনলাম চেরির বাসায় মেহমান আসছে। আমার সন্দেহ হইল। তাই বিকালে একটু সাজুগুজু কইরা হাজির হইলাম পাশের বাসায়। গিয়া দেখি আমার সন্দেহ ঠিক। শুঁটকি মাছের পোনা আসছে। তার সাথে দুইটা পোলা। আমার ক্রাশ তাদের লগে সোফায় বইসা কথা বলতেছিল। আমি নক করতেই সে দরজা খুলে বলল, তুমি? আমি কিছু না বলে ঢুইকা পড়লাম। বললাম, আপনার নাকি ঠান্ডা লেগেছে। তাই দেখতে এলাম। প্রতিবেশি হিসেবে তো একটা দায়িত্ব আছে। তাই না? ক্রাশ আমার দিকে এমন কইরা তাকাই আছে যেন আমি আজব চিড়িয়া আকাশ থেইকা টুপ কইরা পড়সি তাদের বাসায়। আন্টি রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করলেন, কে রে?
– আম্মু, গাজরের হালুয়া এসেছে।
আমি রেগে তার দিকে তাকাইলাম। ফের গাজরের হালুয়া!!!! ওর বন্ধুরা শুনে হাসতে লাগল। মেজাজ সেই লেভেলের গরম হইতেসে। আমি গটগট করে হেঁটে রান্নাঘরে আন্টির কাছে চলে গেলাম। আন্টি আপেল কাঁটছে। আমি যেতেই বললেন, কি খবর ছোঁয়া মা। পায়ের কি খবর?
– ভালো, আন্টি। চা বানাবেন?
– হুম।
– আন্টি, আমি বানাই? ঐদিন যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন।
– বানাবে? বানাও। আমি এগুলো দিয়ে আসি।
– আচ্ছা।
আন্টি নাস্তা দিতে চলে গেলেন। আমি চা বানানোর জন্য দুধ দিলাম চুলায়। এমন সময় কেউ একজন বলল, তুমি এখানে এতোবার আসো কেন? আমি তাকাই দেখলাম শুঁটকি খাঁড়াই আছে। আমি পাত্তা দিলাম না। গান ধরলাম, পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়। সে কাছে এসে বলল, এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না, এইটুকু পুঁচকে মেয়ে, নাক টিপলে দুধ বের হবে, আমাকে পাগল বলছো।
– আমি কি কাউকে ইঙ্গিত করেছি? আমি তো গান গাইছি।
আমি চা পাতা আর চিনি দিয়া কাপ পিরিচ ধুতে গেলাম। সে যেখানে ছিল সেখানে দাঁড়াই একটু পরে চলে গেল। আমি মনের আনন্দে চা ঢেলে নিয়া গেলাম বসার ঘরে। মনে রঙ লাগছে। আজ নিজে হাতে বানানো চা ক্রাশরে খাওয়ামু। আমি সবাইকে চা দিলাম। আন্টি রান্নাঘরে গেলেন আবার। আমি দাঁড়াই আছি। শুঁটকি কইল, আজকে গাজরের হালুয়া আমাদের জন্য চা বানিয়েছে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে কইলাম, আমার নাম গাজরের হালুয়া না। ছোঁয়া। চাঁদনি মেয়েটা পাত্তাও দিল না। সবাই চা মুখে দিতেই উৎসুক চোখে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন হইসে? কারো মুখে কোনো কথা নাই। একটু পরে ক্রাশ বলল, নিজেই খেয়ে দেখো। আমি এত কিছু চিন্তা না কইরা ক্রাশের হাত থেকে কাপ নিয়ে ঢকঢক করে পুরো চাটা খাইয়া ফেললাম। তারপর আমি শ্যাষ!!!! আমার হূদয়টা খান খান হইয়া গেল চায়ের স্বাদে। কাপটা রাইখা কইলাম, আমি বাসায় যাই। আমার কাজ আছে। বলেই দৌঁড়। আসার সময় শুনলাম কেউ বলতেসে, মেয়েটা কেমনে চাটা খেল!? আমি মনে মনে কইলাম, ক্রাশের ঠোঁটের ছোঁয়া থাকলে লবণ মেশানো চাও এই ছোঁয়ার কাছে মধুর থেকেও মিষ্টি লাগবে।
বাসায় এসে মধুর রিয়েকশান বের হইতে লাগল। ইচ্ছা মতো বমি করলাম। বমি শেষে ক্লান্ত শরীরটা বিছানাই দিয়া মনে মনে বললাম, এই কাজ নিশ্চয়ই ঐ শুঁটকির। ইস্, আমার এত শখের চাটায় লবণ মিশাই নষ্ট কইরা দিল। আমি চোখ বন্ধ করে আছি, আম্মা সন্দিহান চোখে এসে আমার কাছে বইসা বলল, কি হইসে রে তোর?
– মাথা ঘুরাই বমি হইসে।
আম্মা শুইনা আঁতকে উইঠা কইল, কি বলিস!? আমিও কইলাম, হ, এখন কি টক খাইতে দিবা? আমার কথা শুইনা আম্মা ওখানেই আইটকা গেসে। আমি বিরক্ত হই আবার কইলাম, ধুর বাবা, কি হইসে? আরে, আমি একগাদা লবণ চা খাইসি। তাই এই অবস্থা। তুমি কি মনে করসিলা? আমি ইয়ে?
মুখ দিয়া আর শব্দটা বাহির করলাম না। আমার কথা শুনে আম্মার মনে হয় রুহ ফিরে আসছে। আমাকে বলল, এমন চা কোথা থেকে খাইলি?
– খাইসি এক জায়গা থেকে। সব হইসে ঐ শুঁটকির জন্য।
– শুঁটকি আবার কে?
– তুমি চিনবা না। এখন কি খাওয়া যায় সেটা বলো। মুখ একেবারে নুনে তেেতা হয়ে গেছে। আম্মু, আব্বু আসে নাই?
– না, কেন?
– আব্বুকে বলো না জিলাপি আনতে।
– এখন? না না। দেখবি পরে নিজেই দশটা খেয়ে ডায়াবেটিস বাড়াই রাখসে।
– তুমি আনতে বলবা না আমি আবার বমি করমু?
আম্মা বিরক্ত হয়ে উঠে বলল, যা খুশি কর। বাপে ঝিয়ে একেবারে জ্বালাই খাইলো।
চলবে…
বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?