#অ্যাসিড
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৩
আরিশা আদর করে সাপটার গায়ে হাত বুলায়। সাপটা আরও শক্ত করে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। আরিশা ওর নরম হাতের ছোঁয়া দিয়ে সাপটাকে আদর করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সাপটা ওর গলা ছেড়ে কাঁধ বেয়ে ঝুলতে থাকে। আরিশা বড় বড় করে শ্বাস নেয়।
রাফসান পাশ থেকে বড় গাছের গুড়ি হাতে সাপটাকে মারতে তেড়ে আসে। আরিশা রাফসানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘মেরো না চাচ্চু।’
‘কেন? কাঁমড়ে দিতে পারে।’
‘কিচ্ছু করবে না।’
আরিশা সাপটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘চলে যা এখন। কাল সকালে কথা হবে।’
সাপটা সুড়সুড় করে জঙ্গলের ভেতর চলে গেল এবং মুহুর্তেই হারিয়ে গেল।
রাফসান অবাক হয়ে বললো, “কথা বলতেই চলে গেল?”
‘হুম চলে গেল। আমরাও যাই এবার?’ আরিশা তাড়া দেয় রাফসানকে।
ওরা আবার পাশাপাশি দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে। রাফসান বলে, ‘জঙ্গলের পশুপাখিগুলো কি তোর পোষ মানানো?’
আরিশা মুচকি হেসে বলে, ‘বোঝাতে জানলেই হয়। পোষ মানানোর কি দরকার?’
‘ওরা কি তোর ভাষা বোঝে?’ কিঞ্চিৎ অবাক হয় রাফসান।
‘হয়তো বোঝে। ছোটবেলা থেকে তো ওরাই আমার খেলার সাথী।’
“জঙ্গলে তো আমরাও থাকি। কই আমাদের ভাষা তো বোঝে না।’
‘তোমরা হয়তো বোঝাতে জানো না।’ ফিক করে হেসে বলে আরিশা।
সন্ধ্যা নামছে। চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। সাপের ঘটনাটা ঘটায় ওদের অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। রাফসান ও আরিশা দ্রুত পশুপাখিগুলো নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেয়। তাড়াহুড়ো করায় অল্প সময়েই পৌঁছে যায় বাড়িতে। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। পাখপাখালি সব আপন নীড়ে ফিরে গেছে। আরিশাও চটজলদি হাত-মুখ ধুয়ে নামাজ পরে পড়তে বসে। রাতের রান্নার দায়িত্ব রাফসানের। সে রান্নাঘরে যায় রান্না করতে।
খাবার টেবিলে বসে আছে নির্ভীক, ওর মা মিসেস শায়লা, বাবা হোসাইনুল আলম, দাদু রোকেয়া এবং দাদুভাই আহমদুল হক। সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। নির্ভীক তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। হোসাইনুল আলম গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
‘খাওয়া শেষ করো।’
‘খাওয়া শেষ আমার।’ নিচু কন্ঠে জবাব দেয় নির্ভীক।
‘আমার আলমারি থেকে ক্যামেরাটা কে সরিয়েছে?’ প্রসঙ্গ পাল্টান হোসাইনুল আলম।
মিসেস রোকেয়া জবাব দেন, ‘আমি সরিয়েছি।’
‘কেন মা?’
‘দাদুভাইয়ের সখের জিনিস তুই এভাবে নিজের কাছে রেখে দিতে পারিস না।’ চাপাকন্ঠে বলেন মিসেস রোকেয়া।
‘মা, এই ক্যামেরাটাই ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। কেন বুঝতে পারছো না?’
‘ও ক্যামেরা নিয়েই ভবিষ্যত গড়তে চাইছে আর তুই বলছিস এটা ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে?’
‘হ্যাঁ মা আলবাৎ নষ্ট করছে। ওকে বলেছি রাজনীতিতে…’
হোসাইনুল আলমের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিসেস রোকেয়া হাত তুলে তাঁকে থামালেন।
‘তুই কি ভাবিস, তোর ভবিষ্যত খুব উন্নতভাবে গড়েছিস? তুই জীবনে অনেককিছু করে ফেলেছিস?’
‘করিনি?’ আহত কন্ঠে বলে হোসাইনুল আলম
‘নাহ!’
‘মা! কি করিনি তোমাদের জন্য?’ আর্তনাদের সুর হোসাইনুল আলমের।
‘কি করেছিস সেটা বল? তুই তোর রাজনীতির খপ্পরে পড়ে না নিজের বাবা-মাকে সময় দিয়েছিস, না তোর বউ-বাচ্চাকে সময় দিয়েছিস। তুই একজন রাজনীতিবিদ হতে পেরেছিস বটে কিন্তু একজন ভালো ছেলে, ভালো স্বামী কিংবা ভালো বাবা তুই হতে পারিসনি। পারিসনি হতে। ভালো রাজনীতিবিদও তুই হতে পারিসনি৷ হয়েছিস তথাকথিত রাজনীতিবিদ। সেই রাজনীতিতে না আছে ইসলামের ছোঁয়া আর না আছে মানবতা। রাজনীতিতে পা দেওয়ার আগে তোর ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানা উচিত ছিল। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে রাষ্ট্র চালিয়েছে সেসব খতিয়ে দেখা উচিত ছিল, জানা উচিত ছিল। এখন তোর ছেলেকেও তোর মতো বানাতে যাস না। ওকে ওর মতো হতে দে।’
“মা, ইসলাম আর রাজনীতিকে এক করো না। ইসলাম ইসলামের জায়গায়, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়।”
“অসভ্য! তোর শিক্ষাদীক্ষা দেখে আমি বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছি। ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। অর্থ বুঝে কুরআন পড়েছিস কখনো? আল্লাহ তো কুরআনে সবকিছু বলে দিয়েছেন। কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে সব কুরআনে বলা আছে। এমনকি ছোট্ট পিঁপড়া সম্পর্কেও কুরআনে বর্ণনা এসেছে। কিভাবে জীবন চালাতে হবে সে সবকিছুর বর্ণনা দেওয়া আছে এই পবিত্র কুরআনে। খতিয়ে দেখেছিস কখনো? ইসলামী শাসনামলে যখন রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছিলো তখনকার সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এখন আছে কিনা দেখ। নেই তার একমাত্র কারণ হচ্ছে তোদের মতো অস্বাস্থ্যকর রাজনীতিবিদদের অসুস্থ চিন্তাধারা। রাজনীতি এবং যাবতীয় সবকিছু ইসলাম থেকে আলাদা করে ফেলা।”
কথা শেষ করে মিসেস রোকেয়া উঠে চলে গেলেন।
নির্ভীকও বিনাবাক্যে দাদুর পিছু নিলো। দাদুর পেছন পেছন এসে বললো,
‘দাদু, একটা কথা বলার ছিলো।’
মিসেস রোকেয়া বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বললেন,
‘বলে ফেলো।’
‘কাল সকালে আমরা বন্ধুরা মিলে একটা জঙ্গলে যাচ্ছি বেড়াতে। ওখানে ফটোগ্রাফিটা জোশ হবে।’ খুশিতে চোখ চিকচিক করছে নির্ভীকের।
‘সাবধানে যেও। তার খোঁজ পাও কিনা দেখো।’ মিসেস রোকেয়া বললেন।
“সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমার।”
“পেয়ে যেন যাও সেই দোয়া করি।”
নির্ভীক মাথা নেড়ে সায় দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ওর মনে তখন কাল্পনিক একটা বনের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। চারপাশে পাখপাখালির কিচির মিচির শব্দ, থেকে থেকে বাঘের ডাক ভেসে আসে, গাছে বানরেরা ঝুলছে। হঠাৎ ঘাসের শনশন আওয়াজ, হরিণের ছুটে চলা। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে নির্ভীক ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিবারই কোনো জঙ্গলে যাওয়ার আগের রাতে সে এভাবেই বন-জঙ্গল ও পশুপাখি নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
খুব ভোরে আরিশা সবার জন্য নাস্তা তৈরী করেছে। আজকে বাড়িতে কেউ থাকবে না। সবাইকে বেরুতে হবে। যেদিন পুকুর থেকে মাছ তোলা হয় সেদিন বাড়িতে আরিশা একাই থাকে। রাফসান মাছ নিয়ে দূরের বাজারে যায়, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা কিংবা রাত হয় তার। এমন দিনে আরিশা সাধারণত সারাদিন একাই থাকে। তবে আজকে রাফসানসহ সবাই চলে যাওয়ায় আরিশার লাভই হয়েছে। ও এখন নিশ্চিন্তে মাটির নিচের ঘরটা বানাতে পারবে।
আরিশা কোদাল হাতে চটজলদি বাড়ির পেছনে চলে যায়। শাড়ির আঁচল পেঁচানোর মতো করে ওড়নাটা পেঁচিয়ে মাটি খোঁড়া শুরু করে ও। ওর পাশে বানরের বাচ্চাটা বসে আছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে আরিশার কর্মকাণ্ড।
অন্ধকার থাকতেই বাড়ি ছেড়েছে নির্ভীক। নির্ভীক ও তার বন্ধুরা যখন জঙ্গলে পৌঁছেছে তখন ফকফকা রোদ। জঙ্গলে ঢুকেই ওরা পাটি পেতে তাতে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। খাওয়া-দাওয়ার পর জঙ্গলটা ঘুরে দেখবে।
রাহি ও নির্ভীক সবার পেছনে হাঁটছে। নির্ভীক জঙ্গলে ঢুকে পাগলপ্রায় হয়ে গেছে। এত সৌন্দর্য ও আগে কখনো দেখেনি। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জঙ্গলে ভ্রমণ করলেও নিজের দেশের গহীন জঙ্গলে এত সৌন্দর্য লুকানো ছিল এটা সে আগে জানতো না। কখনো উপলব্ধি করেনি। ওর মনে হচ্ছে জঙ্গলটা সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে নিরিবিলি। এমন জঙ্গল এর আগে নির্ভীক কখনো দেখেনি। নির্ভীক তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, এই জঙ্গলে ও আবার আসবে, একা। নির্ভীক ও রাহি ফটোগ্রাফি করতে করতে বাকিদের চেয়ে অনেকটাই পেছনে পড়েছে।
ভোরবেলা পাতার ওপর শিশির বিন্দু জমেছে। নির্ভীক মুগ্ধ হয়ে দেখে সেটা। ও ক্লিক করে পাতার ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর ছবি তুলে নিলো। তখনই পাতার আড়াল থেকে ছোট্ট সাদা একটা তুলতুলে খরগোশ উঁকি দিলো। প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণেই পরম মমতায় আদর করে দিলো খরগোশটাকে। ওটারও কয়েকটা ছবি তুললো। তারপর হেসে বললো,
‘রাহি, আমরা বোধহয় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। তুই দেখ ওরা কোথায় গেল।’
রাহি মাথা নেড়ে সামনে এগিয়ে গেল। নির্ভীকও সামনে অগ্রসর হলো। পথিমধ্যে আরও হাজার রকমের মুগ্ধতার দেখা পেলো ও। ক্যামেরাভর্তি করে নিলো সেসব।
সূর্য মাথার ওপর হেলে পড়েছে। আরিশা গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে অনেকটা গভীরে চলে গিয়েছে। ও বামপাশে গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে উপরে উঠতে থাকে। এই গর্তটা খোঁড়া হলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। গর্ত খুঁড়তে গিয়ে আরিশা আবিষ্কার করলো ওর হাত-পা কাঁপছে। প্রচন্ড খুদা পেয়েছে ওর। আরিশা কোদাল হাতে হামাগুড়ি দিয়ে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। চোখ পিটপিট করে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ কচলে চারপাশে তাকায়। কড়া রোদে ফকফক করছে চারপাশ।
আরিশা হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খাওয়ার জন্য বাড়িতে যায়। অথচ সমস্ত বয়াম ঘাঁটাঘাঁটি করেও ও কোথাও কোনো শুকনো খাবার পেলো না। আশ্চর্য! সবকিছু আজকেই শেষ হয়ে গেল? রাতের খাবার আছে কিনা দেখতে ও রাতের বাসি পাত্রের ঢাকনা তুললো এবং হতাশ হয়ে দেখলো ওখানেও কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। অগত্যা বাধ্য হয়ে আরিশা বিষন্ন ও ক্ষুদার্ত হয়ে গর্তের কাছে এসে বসে।
তখনই কোথা থেকে ৫/৬ টা পেয়ারা ও আপেল নিয়ে বানরের বাচ্চাটা আরিশার সামনে লাফিয়ে পড়ে। ফলগুলো ঢেলে দেয় আরিশার কোচায়। আরিশা উত্তেজিত হয়ে বানরটাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘এগুলো কোথায় পেলি, পুঁচকু?’
বানরটা মাথা নেড়ে ইশারায় কিছু বললো। আরিশা হেসে বললো,
‘তাই?’
বানরটা আবার মাথা নাড়ে। আরিশা পেয়ারা খেতে গিয়ে থেমে গেল। মুখ গোমড়া করে বললো,
‘পেয়ারা খেলে যে আরও খুদা পায়।’
পুঁচকু ওর দিকে পেয়ারা এগিয়ে দেয়, এরপর আপেল। এরপর আবার মাথা নেড়ে কিছু একটা বলে। আরিশা খিলখিল করে হেসে বললো,
‘বুঝেছি। আগে পেয়ারা খাবো তারপর আপেল। তাহলে আর খিদে লাগবে না তাই তো?’
পুঁচকু সজোরে মাথা নাড়ে। আরিশা ওর মাথায় হাত বুলায়।
খাওয়া-দাওয়া শেষে আরিশা আবার গর্তের ভেতর ঢুকে পড়ে। আর একঘন্টার মতো কাজ করতে পারবে ও। এরপর রান্না সামলাতে হবে। আরিশা দ্রুত হাত চালায়।
নির্ভীক ছবি তুলতে তুলতে কখন যে বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে সে খেয়ালই করেনি। পথ হারিয়ে নির্ভীক গহীন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। জঙ্গলে ঢুকেও সে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলো। ওর সামনে কিছু দূরে বিশাল এক হাতি শুঁড় দিয়ে গাছসমেত কলা উপড়ে নিচ্ছে। প্রথমে ভয় পেলেও পরক্ষণেই সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে নির্ভীক। পাশ থেকে রাহীকে ডাকতে গিয়ে আচমকা খেয়াল করে রাহী কিংবা ওর বন্ধুরা কেউ আশেপাশে নেই। ঘাবড়ে যায় নির্ভীক। হাতিটার কাছ থেকে খানিকটা দূরে সরে এসে জোরে জোরে সবার নাম ধরে ডাকতে থাকে। কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। ওর ডাক প্রতিধ্বনিত হয়ে ওর কাছেই ফিরে আসে।
নির্ভীক ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যায়। হঠাৎ মোবাইলের কথা মনে পড়ে ওর। মোবাইল নিয়ে রাহীর নাম্বারে ডায়াল করে। কিন্তু কল ঢোকে না। ওরা বর্তমানে নেটওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করেছে। নির্ভীক দীর্ঘশ্বাস ফেলে জঙ্গলের ভেতরে এলোমেলো হাঁটতে থাকে। আর উপভোগ করে চারপাশের সৌন্দর্য।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ধুসর সাদা রংয়ের একটা বাড়ি দেখতে পায় নির্ভীক। ও অবাক হয়ে বাড়িটার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখে। জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে এমন একটা বাড়ি থাকতে পারে এটা নির্ভীক স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেনি। এটা কি ভূত-প্রেতের বাড়ি? খানিকটা চুপসে যায় নির্ভীক। ভূতে খুব ভয় ওর। নির্ভীক ভাবে, বাড়িটার এবং এর চারপাশের কয়েকটা ছবি তুলে ওর দাদুকে দেখাবে। তিনিই ভালো বলতে পারবেন, এটা ভূত নাকি মানুষের বাড়ি। ভাবতে ভাবতেই কয়েকটা ছবি তুললো সে।
নির্ভীক বাড়ির পেছনে হাঁটতে থাকে। পেছনে বেশ সুন্দর বড় একটা পুকুর। পুকুরে অনেকগুলো হাস ভেসে বেড়াচ্ছে। পাড়ে অনেক হাঁস-মুরগির ছানা মাটি থেকে ঠুকরে ঠুকরে কিছু খাচ্ছে। কয়েকটা ছাগলও চড়ে বেড়াচ্ছে। নির্ভীক মনে মনে ভাবে, ভুতের বাড়ি হলে তো পশুপাখি থাকার কথা না। নির্ভীক খানিকক্ষন সেসব দেখে। এই ছোট ছোট গ্রাম্য দৃশ্যগুলো ওর ক্যারিয়ারে অনেক সাফল্য বয়ে আনতে পারে। আজকাল সবাই আধুনিক ফটো দিয়ে ফ্যামাস হচ্ছে। এই গ্রাম্য দৃশ্যগুলো এখন বিলুপ্ত প্রায়। এগুলো যদি নির্ভীক পাবলিশ করতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই ওর অনেক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে যেতে পারে ও। ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায় নির্ভীকের। ও পাড় ঘেঁষে সামনে এগিয়ে যায় ছবি তোলার জন্য। ক্যামেরা তুলে ক্লিক করতেই আচমকা একটা গর্ত থেকে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় এক কিশোরী।
গায়ে হালকা হলুদ রংয়ের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত, পেছনে চুলগুলো লম্বা বেণুনি করা, কপালের দু’পাশে এলোচুল এসে পড়েছে। মেয়েটার হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করা। হাতে-পায়ে কাদা লেগে আছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মেয়েটার কাঁধে একটা বানর বসে মনের আনন্দে কলা ছিলে ছিলে খাচ্ছে।
নির্ভীক ঢোক গিলে ক্যামেরায় এলোমেলো কয়েকটা ক্লিক করলো। ওর দক্ষ হাতে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। কিসের ছবি উঠলো ও জানে না। ক্যামেরা নামিয়ে ও ফ্যালফ্যাল করে সামনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো মেয়ে এতো সুন্দর হতে পারে? নির্ভীককে আরও বিব্রত করতেই যেন মেয়েটা নিজের কর্দমাক্ত হাত দিয়ে কপালের চুল সরালো। তখনই ওর সারা কপালে কাদা লেগে একাকার হয়ে গেলো। নির্ভীক হা করে দেখতে থাকে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অপূর্ব সুন্দরী, রূপসী পরীর মতো মেয়েটাকে। এমন সুন্দর মেয়ে সে জীবনে কখনো দেখেনি। এ যেন কোনো মেয়ে নয়, বেহেশত থেকে নেমে আসা কোনো হুর কিংবা এই জঙ্গলের পরী। যেন ছুঁতে গেলেই অদৃশ্য হয়ে যাবে।
#Be_Continued_In_Sha_Allah ❣️