#অ্যাসিড
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ২
নির্ভীক ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে বসে আছে একা। ওর মন খুব খারাপ। ওকে একা দেখে ওর বান্ধবী এ্যানি ওর পাশে এসে বসে। বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আমাদের ফটোগ্রাফারের কি মন খারাপ?”
ফটোগ্রাফার ডাকটা শুনে নির্ভীকের মন আরও খারাপ হয়ে গেল। এ্যানি আবার বললো,
“কিরে বলনা মন খারাপ?”
“হু” মৃদু কন্ঠে জবাব দেয় নির্ভীক।
“কেন?”
নির্ভীক আহত চোখে ওর দিকে তাকায়। মুখে কিছু বলে না। এ্যানি ওকে আগাগোড়া লক্ষ্য করে বলে,
“তোর ক্যামেরা কই রে?”
“নেই।” গোমড়া মুখে বলে নির্ভীক।
“নেই মানে?”
“নেই মানে নেই। ড্যাড নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।” বিরক্ত হয়ে বললো নির্ভীক।
‘“ওহ তাই মহারাজের মন খারাপ?”
“হুম।”
“আচ্ছা চল আমার সাথে।” হাত ধরে টান দিয়ে বলে এ্যানি।
“কোথায়?”
“গেলেই দেখতে পাবি।” বলে হাত ধরে ক্যাম্পাসের ভেতর নিয়ে গেলো নির্ভীককে।
আরিশা তরি-তরকারি কেটেকুটে রান্না বসায়। তার রান্না প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু রাফসান এখনো চাল নিয়ে আসেনি। আরিশা রান্না শেষ করে বাইরে এসে দাঁড়ায়। তখনই গাছ থেকে একটা বানরের বাচ্চা ওর কাঁধে লাফিয়ে পড়ে। আরিশা পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। তারপর বানরটার গায়ে হাত বুলিয়ে বললো,
“এ্যাঁই পুঁচকু! খুব দুষ্ট হয়েছিস তো তুই! আরেকটু হলেই পড়ে যেতাম আমি।”
বানরটা আরিশার মাথায় নিজের মাথা ঠেকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কলা কথা থেকে। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আরিশা।
জঙ্গলে থাকতে থাকতে জঙ্গলের পশু-পাখিদের সাথে গভীর মিতালি গড়ে উঠেছে আরিশার। ওর সাথে থাকতে থাকতে পশুপাখিরাও যেন ওর ভাষা বুঝতে পারে। সময় পেলেই ওদের সাথে কথা বলে, ওদেরকে সময়ে-অসময়ে খেতে দেয়। ওরাও যেন আরিশার ভালোবাসা প্রাণ দিয়ে অনুভব করে। আরিশার মতোই ভালোবাসে ওকে।
আরিশা দূর থেকে দেখতে পায় রাফসানকে। রাফসানের সাইকেলের ওপর চালের বড় একটা বস্তা। হেঁটে হেঁটে সাইকেল নিয়ে আসছে রাফসান। আরিশা সেদিকে খানিকটা এগিয়ে যায়। ওকে দেখে রাফসান বলে,
“তোর সব কাজ শেষ?”
“হ্যাঁ চাচ্চু। তুমি ভেতরে যাও। এটা আমি নিয়ে আসছি।” বলে সাইকেলের হ্যান্ডেলে হাত রাখে আরিশা। রাফসান সেটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
“বেশি কাজ দেখাবি না একদম। এমনিতেই এতসব রান্নাবান্না তুই করেছিস জানলে ভাইরা আমাকে কি করবে কে জানে। এখন আবার চালের বস্তা নিতে আসছে।”
আরিশা বাধ্য হয়ে সাইকেলের পিছু পিছু আসে। ও বলে,
“তোমরা আমাকে অতিরিক্ত কাজ করতে দাও না কেন? সবাই মিলে কাজ করলে তো সব কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হবে তাই না? তাছাড়া তোমরা তো সারাক্ষণ কত কাজ করো। আমি নাহয় রান্নাবান্না করলামই। তাতেও আবার তুমি সাহায্য করো।”
“হ্যাঁ সে তো তুই প্রায়ই করিস। পশুপাখি গুলোকেও তো তুই দেখে রাখিস।”
“তুমিই তো দেখে রাখো। আমি তোমাকে একটু সাহায্য করি আর কি। এটুকু করবো না?”
“পারলে তোকে দিয়ে আমরা কিছুই করাতাম না।” চালের বস্তাটা সাইকেল থেকে নামিয়ে বলে রাফসান।
“কেন?” আরিশাও হাত লাগায় বস্তায়। বস্তাটা ঘরে তুলতে সাহায্য করে।
“তুই যে আমাদের একমাত্র রাজকন্যা রে। তুই কেন কাজ করবি?” বস্তাটা ঠেলে ভেতরে নিয়ে যায় রাফসান।
“বা-রে আমি রাজকন্যা হলে তোমরা তো রাজা। তাহলে রাজা কেন কাজ করবে?”
আরিশার কথায় থতমত খেয়ে যায় রাফসান। চট করে কথা খুঁজে পায় না। ও চালের বস্তাটা জায়গামতো তুলে রেখে বললো,
“অতশত জানিনা বাপু। তোমার অত কাজ না করলেও চলবে। শুধু পড়াশোনায় মন দাও তুমি।”
“পড়াশোনাও তো রোজ করি তোমার কাছে। কিন্তু কাজও তো করতে হবে বলো?”
আরিশার কথায় ধৈর্য্যহারা হয়ে রাফসান বলে,
“আচ্ছা আচ্ছা যা খুশি করিস তো। এখন আমাকে একটু বাতাস কর। কিছুক্ষণ বাতাস খেয়ে চুলোয় ভাত বসাবো।”
“তুমি বরং গোসল করে নাও। আমি ভাত বসিয়ে দিচ্ছি।”
রাফসান রাগীচোখে তাকিয়ে বললো, “যেটা বললাম সেটা কর।” অগত্যা আরিশা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে রাফসানকে।
“এখানে নিয়ে এলি কেন আমাকে?” বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে নির্ভীক।
এ্যানি আচমকা সিটি বাজায়। নির্ভীক চমকে ওর দিকে তাকায়। মুহুর্তেই ওদেরকে ঘিরে একটা ভীড় জমে যায়। প্রায় দশ-বারোজন ছেলেমেয়ে নির্ভীককে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সবাই নির্ভীকের বন্ধু। ওরা নির্ভীককে টেনে নিয়ে সিঁড়িতে বসায়। নির্ভীক মুখ গোমড়া করে থাকে।
নির্ভীকের বেস্টফ্রেন্ড রাহি বলে,
“তোকে একটা গুড নিউজ দেয়ার আছে দোস্ত।”
“কি সেটা?” মুখ ভার করে জানতে চায় নির্ভীক।
“কালকে খুব ভোরে আমরা একটা গহীন জঙ্গলে যাবো পিকনিক করতে।” অনিক বলে।
“তো?” বিরস মুখে বলে নির্ভীক।
“তো মানে? ওখানে তুই ইচ্ছেমতো ফটোগ্রাফি করতে পারবি৷ দোস্ত, কি যে সুযোগ ভাব তুই।” অয়ন বলে।
নির্ভীক সিঁড়ির পানে তাকিয়ে পা দিয়ে পাথর খুঁটতে থাকে। ওকে অন্যমনস্ক দেখে সানজু ওর গা ঘেঁষে বসে বলে,
“তোমার কি হয়েছে ডার্লিং?”
নির্ভীক বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়। বলে,
“প্লিজ এখনই ন্যাকামো শুরু করো না। এসব ডার্লিং-ফার্লিং ভাল্লাগে না। মুড অফ আমার।”
সানজু নাক-মুখ ফুলিয়ে নির্ভীকের পাশ থেকে সরে গেল। নির্ভীককে সানজু নিজের বয়ফ্রেন্ড দাবি করে। সানজুর অসংখ্য বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে নির্ভীকও একজন। তবে নির্ভীক ওকে গার্লফ্রেন্ড তো দূরের কথা ফ্রেন্ডের কাতারেও ফেলে না। ওকে দেখলে অজান্তেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যায় নির্ভীকের।
“দোস্ত আমাদেরকে অন্তত বল কি হয়েছে?” রাহি বলে।
এ্যানি সকালের ঘটনা খুলে বলে ওদেরকে। সব শুনে রাহি হাসতে হাসতে বলে,
“এটার জন্য তোর মন খারাপ? এটা কোনো ব্যাপার? আরে আঙ্কেল তো তোর ক্যামেরা একেবারে নিয়ে নেয়নি তাই না?”
“একেবারে নেয়নি তার গ্যারান্টি আছে? নিতেও তো পারে। হয়তো আর দিবেও না।” নির্ভীক বলে।
“আরে দিবে দিবে। নো টেনশন। সেরকম হলে তুই আরেকটা ক্যামেরা কিনে নিবি। সিম্পল ইয়ার।’
“এত্তো ইজি না। নতুন ক্যামেরা আমার চাইও না। আমার সেই পুরোনো প্রিয় ক্যামেরাটাই চাই। জানিস না, পুরোনো জিনিসের মায়া ছাড়া যায় না?”
“আচ্ছা আন্টিকে বললেই তো উনি ম্যানেজ করে দিবেন তাই না? তুই অযথা টেনশন নিচ্ছিস।”
“আচ্ছা বাদ দে এসব। এখন বল কাল কে কে যাচ্ছি?” অয়ন বলে।
“এই তো আমরা সবাই।” রাহি বলে।
এতক্ষণে নির্ভীক জানতে চায়, “জায়গাটা কোথায়?”
“এখান থেকে কিছুটা দূরে। তবে আমরা রাতের মধ্যে ফিরে আসবো শিউর।”
“ওকে ডান। আজকে তাহলে আমি আসি।” বলে বেরিয়ে গেলো নির্ভীক। ওর এখন একটাই কাজ। ওর প্রিয় ক্যামেরাটা উদ্ধার করা।
“এজন্যই বলি বিয়েটা করে নে। তাহলে তো আর এত কথার দরকার নেই।”
বহুবছর আগের পুরোনো ছোট্ট গোলটেবিলের চারপাশে পুরোনো চারটে চেয়ার জুড়ে আছে। তারমধ্যে একটা খালি পড়ে রয়েছে, বাকিগুলোয় মানুষ বসা। টেবিল ভর্তি নানান শাক-সবজী ও ভর্তা সাজানো।
দুপুরে আরমান বাদে বাকিরা খেতে বসেছে। আরমান তখনো পুকুরে। আরিশা আশফাক আহমেদের প্লেটে ভাত তুলে দিচ্ছে।
আরিশার হাত থেকে চামচটা নিজের হাতে নিয়ে আশফাক আহমেদ বললেন,
‘তুই বস খেতে। নিজেরটা নিজে নিয়ে নিচ্ছি।’
‘আপনারা খান, আমি সেঝচাচ্চুকে ডেকে নিয়ে আসছি।’ আরিশা বললো।
‘ডাকতে হবে না, চলে এসেছি।’ বালতি ভর্তি কাঁচা কাপড় নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আরমান হেসে বললো।
আরিশা গিয়ে বালতিটা নিতে হাত বাড়ালো। সাথে সাথে আরমান সেটা সরিয়ে বললো,
‘তুই খেতে বস। আমি এগুলো শুকোতে দিয়ে আসছি।’
‘আমি শুকোতে দিয়ে দিবো। আপনি খেতে বসুন।’
‘বললাম তো তুই খেয়ে নে।’
আরিশা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশফাক আহমেদ বললেন,
‘আর তর্কাতর্কি করিস না আরমান, খেতে বস। খাওয়ার পর ভাবা যাবে কে শুকোতে দিবে।’
আরমান আরিশার হাত ধরে নিজের পাশের চেয়ারে বসালো ওকে। আরিশার দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে নিজের প্লেট টেনে নেয় আরমান। তখনই আশফাক আহমেদ তার রোজকার বাক্যটি ছুঁড়ে দেয়।
”এজন্যই বলি বিয়েটা করে নে। তাহলে তো আর এত কথার দরকার নেই।”
‘আর কতবার বলবো বিয়ে আমি করব না। করতে পারব না।’ আরিশার প্লেটে ভাত তুলে দিতে দিতে বললো আরমান।
‘কেন পারবি না?’ আশফাক আহমেদ প্রশ্নের তীর ছুঁড়েন আরমানের দিকে।
‘সেটা তো আপনি জানেন বড়ভাই। তাহলে প্রতিদিন একই কথা বলেন কেন? রোজ এক বিষয় নিয়ে এত কথা ভাল্লাগে না আর।’
আশফাক আহমেদ দমবার পাত্র নন। তিনি বলেন,
‘সবাই তো এক না। হয়তো দেখা গেলো তোর বউই আরিশাকে মাথায় করে রাখলো। আরিশার একজন সঙ্গী তো হবে।’
আরমান বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকালো। তারপর বললো,
‘রাফসানের সাথে আরিশার সময় ভালোই কাটে। তাছাড়া বনের সকল পশুপাখিই তো ওর সাথী।’
‘পশুপাখি আর মানুষ এক হলো? এছাড়া রাফসান বন্ধু হবে কি করে? হলেও একটা মেয়ের কখন কি দরকার সেসব তো আর আমরা ছেলেরা বুঝবো না। ওসব একজন মেয়েই বুঝবে। তাই বলছি…’
আরমান এবার চরম বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার খাওয়ার মানসিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে আসলেই রোজ এই বিয়ের প্যাঁচাল ভাল্লাগে না আর। আরমান শান্তস্বরে বললো,
‘তাহলে আপনি একটা বিয়ে করে নিন। আরিশা একটা মা পেয়ে যাবে তাহলে।’ বলেই পাশ থেকে বালতিটা নিয়ে ছাদে চলে গেলো আরমান।
আশফাক আহমেদ হতভম্ব হয়ে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেম। আরমানের কাছ থেকে এমন ব্যবহার কখনোই আশা করেননি আশফাক আহমেদ।
আরিশা ও রাফসান ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। না পারছে খেতে, না পারছে উঠে যেতে। বাড়ির ছোটরা ঝগড়া করলে বড়রা শাসন করে। আর বড়রা ঝগড়া করলে কারা শাসন করবে? আরিশার মাথায় প্রশ্নটা বারবার ঘুরপাক খায়। তাহলে কি বড়দেরও বড় কেউ থাকা দরকার?
”দাদু, কি করবো বলো না? ক্যামেরাটা যে নিয়ে নিলো?’ মিসেস রোকেয়ার কোলে মাথা রেখে বলে নির্ভীক।
মিসেস রোকেয়ার বয়স সত্তরের কাছাকাছি। এই বয়সেও তার বেশ ফর্সা, সুন্দর, ছিমছাম চেহারা ও শরীরের গঠন। চামড়াগুলো খানিক কুঁচকানো বটে, তবে ওগুলোতেই তাকে দারুণ মানায়। তিনি গল্প পড়তে খুব ভালোবাসেন। তার রুমভর্তি গল্পের বই। আজও তিনি গল্পের বই পড়ছিলেন তখনই হঠাৎ নির্ভীক এসে তাঁর কোলে মাথা রেখে উপরোক্ত বাক্যটি ব্যয় করে।
মিসেস রোকেয়া নির্ভিকের মাথায় হাত বুলিয়ে কপট রাগার ভান করে বললেন,
‘কে নিয়েছে আমার দাদুভাইয়ের ক্যামেরা? কার এতবড় সাহস?’
নির্ভীক কাঁচুমাচু করে জবাব দেয়, ‘তোমার ছেলে।’
‘আচ্ছা? তুমি একটু উঠে বসো তো দাদুভাই। আজকে তোমার বাবার হচ্ছে।’
নির্ভীক উঠে বসতে বসতে বললো, ‘কি হবে দাদু? বাবা তো বাড়িতে নেই।’
মিসেস রোকেয়া জবাব না দিয়ে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। আলমারি থেকে একটা ক্যামেরা বের করে নির্ভীকের সামনে এনে বললেন,
‘দেখতো এটা তোমার কিনা?’
নির্ভক সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এটাই তো আমার। আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্যামেরা। মাই লাইফ, মাই এভরিথিং।”
মিসেস রোকেয়া হাসলেন।
‘ক্যামেরাই যদি তোমার এভরিথিং হয় তো আমরা কি?’
‘তোমরা তো আমার পুরো পৃথিবী।’ মিসেস রোকেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে নির্ভীক।
মিসেস রোকেয়া আবার হাসলেন। নির্ভিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“এবার গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নাও। যাও।”
নির্ভীক খুশিমনে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে গেল। খুব যত্ন করে ক্যামেরাটা আলমারিতে তুলে রাখে ও।
আরিশা ওর বাবা ও চাচ্চুদের চোখের আড়ালে খুব গোপন একটা কাজ করছে। ওদের বাড়িটার ডানপাশে বিশাল একটা ঝোপ রয়েছে। আরিশা বেশ কিছুদিন যাবৎ লুকিয়ে সেই ঝোপ পরিষ্কার করেছে। এখন সে রোজ দুপুরবেলা সবাই যখন নিজেদের ঘরে বিশ্রাম নেয় তখন এসে মাটি খোঁড়া শুরু করে। মাটি খুঁড়ে মাটির তলায় সে একটা ছোটখাটো বাড়ি তৈরী করার পরিকল্পনা করছে। যে বাড়িতে ঢুকলে মনে হবে সে এই পৃথিবীর কেউ না। অন্য রাজ্যের বাসিন্দা।
আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আরিশা মাটি খুঁড়েই চলেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। দূরের মসজিদ থেকে আযান ভেসে আসছে। আরিশা তাড়াতাড়ি পুকুরে নেমে হাত-পা ধু্য়ে পরিস্কার হয়ে নিলো। এখনই রাফসান ওকে ডাকতে আসবে। বিকেলে জঙ্গলের আরও গহীন থেকে পশুপাখিগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। আরিশা দ্রুত নামায পড়ে নিলো।
যথারীতি রাফসান এসে ওকে ডেকে নিয়ে গেল দূরের মাঠে। রোজ বিকেলবেলা ঘন জঙ্গলের মাঝখানের রাস্তা ধরে হাঁটতে আরিশার বেশ ভালো লাগে। তাই তো ও সবসময় অপেক্ষায় থাকে কবে পশুগুলোকে ছাড়তে যাবে, আবার কবে আনতে যাবে। আরিশা ও রাফসান আপনমনে পাশাপাশি হাঁটছে। হঠাৎ ওদের সামনেই লম্বা কিছু একটা ঝুলে পড়ে গাছ বেয়ে। আচমকা চোখের সামনে লম্বা জিনিসটা দেখে আরশি চেঁচিয়ে ওঠে। জঙ্গলের গহীনে সূর্যের আলো ঢুকতে না পারায় জায়গাটা অন্ধকার বললেই চলে। আলো-আঁধারির মধ্যে মুহুর্তেই লম্বা সাপটা আরিশার কাঁধ বেয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে। আরিশার দমবন্ধ হয়ে আসছে। গলা দিয়ে কথা আসছে না। ও কোনোমতে সাপটাকে গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। রাফসানও কি করবে ভেবে পায় না। ও ভয়ে ভয়ে আশেপাশে আশার আলো খুঁজতে থাকে।
#Be_Continued_In_Sha_Allah ❣️