অস্তিত্বের খোজে part 34+35

0
715

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৪



– শুভ্র ওয়াসরুম থেকে এসে দেখে ও ভাবেই পরী সুয়ে কাঁদছে। আর জান্নাত আবার ঘুমিয়ে গেছে। এবার শুভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগল।


– পরীকে ২ বার ডাকল শুভ্র তবুও পরী কথা বলছেনা। শেষে শুভ্র ওকে কোলে করে সাওয়ার রুমে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে সাওয়ার চালু করল। এই বউ! অনেক মটু হয়ে গেছতো তুমি কথাটি শুভ্র মুচকি হেঁসে বলল।


– পরী কেঁদেই চলছে। কোন কথা বলছেনা।


– এত্ত কাঁদিস কেন হুম! খুব তো কাছে আসতে চাস,,,, আর আজ! কাঁদছিস কাছে আসাতে?
স্যরি সোনা! বলেই শুভ্র পরীকে কয়েকটা কিস♥♥♥♥ করল।


– জানোয়ার, পশু,কুত্তা, খাটাস্, খাবিস্, ইতর, বজ্জাত একদম আমার সাথে কথা বলবেনা।


– জানোয়ার গালি শুনে এবার শুভ্র রেগে গেল। এই মুখের ভাষা বদলাবি! এত্ত খারাপ ভাষা কিভাবে ইউস করিস। জান্নাত যদি তোর কাছ থেকে একটা খারাপ ভাষা শিখেছে তো তোর খবর আছে। সেদিন এর থেকেও খারাপ হাল করে ছাড়বো বলে শুভ্র টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়ে গেল সাওয়ার রুম থেকে।


– পরীও যা ইচ্ছা তাই করে গালি দিতে লাগল সাওয়ার রুম থেকে। শুভ্র শুনেও শুনলো না। বেশি আষ্কারা পেয়ে এধরনের আচরন শুরু করছে। কত্ত বড় বিয়াদপ মেয়ে,,,,, বিশ্রী ভাষায় গালি দেয়।



– আমি সাওয়ার রুম থেকে বের হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও তাহাজ্জুদ নামায পড়ছে। তাই আর কিছু বললাম না। চেঞ্জ করে আমিও নামাযে দাড়িয়ে গেলাম। ওর আগেই নামায শেষ করে এসে বেড শিট পরিবর্তন করে সুয়ে ফন্দি আটতে শুরু করলাম। কাল এরে জন্মের মত শাস্তি দিব। আমি কি জিনিস ওকে দেখাব এবার। পাইছেটা কি!



– শুভ্র আর না ঘুমিয়ে কোরআন তেলায়াত করতে বসে পড়ল। তারপর ফযরের আযান হলে নামায পড়ে পরীকে বিছানা থেকে তুলে বসিয়ে ইশারা করে বলল আযান হয়ে গেছে অনেক আগে গিয়ে নামায পড়। তারপর সুয়ে পড়ল শুভ্র সোফায়।


– কেবল একটু ঘুমাইছি এর মধ্য ঘুম নষ্ট করা সাড়া! ধুর,,,,,,, বলে ওযু করে এসে নামায পরে আবার সুয়ে পড়তেই ঘুম চলে এল।


– চোখ মেলে ঘড়িতে দেখি ১১ টা বেজে গেছে। “”আল্লাহ্”” এত্ত বেলা অবদি ঘুমাইছি!
শুভ্র কই,,,,, অফিসে চলে গেছে! তাহলে জান্নাত?



ধরপর করে বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বাহির হয়ে দেখলাম শুভ্র জান্নাত কে পাশে রেখে টিভিতে নিউজ দেখছে।
শুভ্র অফিসে যায় নি? তাহলে যে প্লান করলাম! সেটা তো জলে যাবে?
না না শুভ্রকে তো উচিত শিক্ষা আজ দিয়েই ছাড়বো। রুমে এসে মাথার সমস্ত মেধা খাটিয়ে ভাবতে শুরু করলাম কি করা যায়।

নাহ্ ওর যে মেধা সব বুঝে ফেলবে। স্বাভাবিক ভাবে সব কিছু করতে হবে। এবার আর প্লান ফল্প হলে চলবে না।

আমিও আমাদের পাড়ার মধ্য সেই বিচ্ছু মেয়ে ছিলাম শুভ্র। শয়তানি বুদ্ধিতে লিডার হুম। এত্ত দিনের অভিঙ্গতা মাঠে মারা যাবেনা নিশ্চয়।



– শুভ্র রুমে এসে দেখল পরী গভীর চিন্তায় মগ্ন। ২ বার ডাকল তবুও কোন সাড়া নেই। শেষে কাছে গিয়ে বলল,,,,,, এত্ত ডাকছি কথা কানে যাচ্ছেনা?


– আমি কোন কথা না বলে ইশারা করলাম সমস্যাটা কি!


– জান্নাতকে ফিডিং করাও বলে পরীর কোলে ওকে
দিল শুভ্র।


– জল্লাদ মেয়ে কোথাকার খাওয়ার আর সময় পাস না! এখুনি তোর খুদা লাগতে হবে?


– এবার শুভ্র এসে পরীর মুখ শক্ত করে ধরে বলল,,,, আর একবার যদি এধরনের বিশ্রী ভাষায় কথা বল তাহলে গাল ফাটিয়ে ফেলব। শেষে এই সুরত নিয়ে বাহিরে যাইতে পারবানা। বার বার বলছি ওর সামনে খারাপ শব্দ একদম ব্যবহার করবানা তাও কথা কানে যায় না!

মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি একজন খুব খারাপ একটা মা। তোমার মা হওয়ার কোন যোগ্যতাই নাই।
অপাত্রে ঘি ঢালার মত কাজ আর কি বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– শুভ্র আমাকে এভাবে বলল,,,,,, আমি অপাত্র। আমার কোন যোগ্যতা নেই! মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমার ভাষা নিয়ে কথা বলে! খুবই খারাপ লাগছিল। আজকে যদি এর বিহিত না করছি তো আমার নাম পরী না বলেই জান্নাতকে ফিডিং করাতে লাগলাম। আর মনে মনে ফন্দি আটছি। আমাকে চালেঞ্জ করছে গতকাল রাতে। সেটার জবাব দিতে হবে না!



– শুভ্রও বেশ চিন্তায় পরে গেছে পরীকে দেখে। ও মনের ভিতর কিছুতো একটা ভাবছে। যা ওর কুবুদ্ধি তাতে চুপ করে থাকার মেয়ে না পরী। ফোনটা হাতে নিয়ে কাকে যেন কল করল শুভ্র। কোন রিক্স নেওয়া যাবেনা।



– জান্নাত ঘুমিয়ে গেছে। আমার মেয়ের যা ঘুম!নিম্নে ২ ঘন্টা ঘুমাবে। এর মধ্য আমাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু শুভ্র ওকে কি করব?


– শুভ্র রুমে এসে গোসল করতে ডুকল। তখন প্রায় সাড়ে ১২ টা বাজে। কাজ হইছে বলে চট করে থ্রী পিস পড়ে হাতে বোরখাটা নিয়ে রুম থেকে বের হলাম।

শুভ্রকে আজ উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব। মেইন গেট দিয়ে বের হওয়া যাবেনা তাই পাঁচিল টপকাতে হবে। আগে বোরখাটা ফেলে দিলাম দেয়ালের উপর দিয়ে। তারপর দেয়াল ঘেষে আম গাছটা দাড়িয়ে আছে সেটাতে উঠলাম। বাহ্ পরী গাছে উঠা এখনো ভুলিস নি তোহ্। তবে পাক্টিস্ না থাকার কারনে একটু কষ্ট হল। হাত কয়েক জায়গায় ছিলে গেল।

এবার দড়িটা গাছে বেঁধে দেয়াল বেয়ে নেমে পড়লাম।
এমা! আমার বোরখা কই?
অনেক খুজলাম কিন্তু পেলাম না। এর মধ্য চুড়ি হয়ে গেল! ব্যাটা বজ্জাত চোর কোথাকার আমার সখের বোরখাটা চুরি করে নিয়ে গেল! শুভ্রের দেওয়া বিয়েতে প্রথম গিফট্। না পড়তেই হারিয়ে গেল…….



– দেরি না করে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে রেল স্টেশনের দিকে চললাম।


– শুভ্রর ফোনে কল বেজেই চলছে। শুভ্র বের হয়ে কল রিসিভ করতেই একটা মেয়ে বলল,,,,,, স্যার! মেডাম তো বাসা থেকে বের হয়ে গেল।


– কিহ্,,,,, দাড়ায়ান কে নিষেধ করা সত্বেও ওকে বের হতে দিছে!


– কি আর বলব স্যার,,,,,মেডাম যে এরকম কাজ করবে জিবনেও ভাবতে পারিনি। গাছে চড়ে ওয়াল টপকে পালিয়েছে। আমি ওনার পিছেই যাচ্ছি। মনে হয় রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছে।


– ওকে আমি আসছি। বাসে বা অন্যদিকে গেলে ওকে ধরে ফেল। আর যদি রেলস্টেশনে যায় তাহলে আটকিয়ো না। কারন এই সময় কোন ট্রেন নেই। আমি এখুনি বের হচ্ছি।


– শুভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে ওর মেয়েকে একটা কিস♥ করে বলল,,,,, মা! তুমি এমন এক মায়ের পেট থেকে বের হইছো তার কান্ডগুলোর জন্য গ্রিনিস্ বুকে নাম দেওয়া অবদি যাবে। আমাকে নাস্তহাল করে ছাড়ছে না জানি তোমার কি হাল করে।
শুভ্র আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বের হল।


– আমি রেলস্টেশনে এসে ভাড়া মিটিয়ে ট্রাক্সি থেকে নামলাম। যাহোক এসে পড়ছি। একজনকে জিঙ্গাসা করলাম ট্রেন নাকি দেরিতে আসবে। উফ্ মহা ঝামেলা তো! শুভ্র যদি চলে আসে তাহলে কি হবে?


– অনেকক্ষন ওয়েট করার পর ট্রেন আসলো। আমি ট্রেনে উঠতে যাব অমনি আমার হাত পিছন থেকে কেউ ধরে ফেলল।

আমি পিছন ফিরে শুভ্রকে দেখে টাষ্কি খেয়ে যাই। ও কিভাবে জানল আমি এখানে! তার মানে ও এতক্ষন অবদি আমায় ফলো করছিল। আমি হাত ঝিটকানি দিয়ে দৌড়ে ট্রেনে উঠে পড়লাম। এত্ত দুর এসে হেরে যাব? কক্ষোনা না।


শুভ্রও পিছন পিছন ট্রেনে উঠে পড়ল। এত্ত ভিড়ের মাঝে ওকে খুজবে ক্যামনে। “”আল্লাহ্”” সাহার্য্য কর দয়া করে। পুরো কামরা খুজলো শুভ্র কিন্তু পরীকে কোথাও পেল না। অন্য কামরায় যাবে এমন সময় দেখল লিমা পরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।


– শুভ্রর বুকে যেন প্রান ফিরে এল। শুভ্র ট্রেন থেকে নেমে পড়ল।


– এই আপু আমার হাত ধরছেন কেন! ছাড়ুন বলছি। কিন্তু মেয়েটা কোন কথাই বলছেনা। আচ্ছা ঝামেলাতো,,,,,,, ডিক্সো পাগলের পাল্লায় পারলাম না তো! যে সাজগোজ মেয়েটার। পাগল নিশ্চয় হবে না।


– লিমা পরীকে শক্ত করে ধরে আছে। শুভ্র দৌড়ে এসে একটা জায়গায় বসে বলল,,,,,,, পরী! তুমি যা দৌড়াও আমি ভাবছি এবার তোমায় দৌড় প্রতিযোগিতায় participate করাব বলেই শুভ্র চোখমুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকালো।



– যাহ্ কোন প্লানই কাজে দিল না,,,,,,, শেষে ধরাই পরে গেলাম! কপালে যে কি আছে আজ সেটার সংকেত এখন থেকেই বুঝতে পারছি। তাই এক হাতে গাল ধরে আছি। অন্য হাত মেয়েটি ধরে আছে তাই একটা হাত দিয়েই এক গাল সেভ করতে হল।

(“লা -ইলা-হা ইল্লা-আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ্ জোয়ালিমীন”)

“” আল্লাহ্ “” রক্ষা কর। আজ আমাকে আর আস্ত রাখবে না শুভ্র। আমি কি জানতাম এভাবে ধরা পড়ব! তাহলে কখনও এই কাজটা করতাম না।


– শুভ্র এবার উঠে এসে এত্তগুলো মানুষের সামনে ঠাশশশ্ করে চড় বসিয়ে দিল পরীর গালে।


– আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। এখানে এত্ত লোকের সামনে তাই বলে মারবে,,,,,,,, বাসায় গিয়ে মারলে কি হত! আমার কি মান- সম্মান নাই,,,,,,??


– একজন এসে বলল,,,,, ভাই মেয়েটাকে মারছেন কেন?


– বউ বিয়াদপী করেছে তাই শায়েস্তা করছি। বিয়াদপ আর জংলী বউকে এভাবেই শায়েস্তা করতে হয় বলে লোকটির দিবে রাগী ভাবে তাকালো শুভ্র।


– লোকটি আর কিছু না বলে চলে গেল। ট্রেন ছেড়ে দিছে। পুরো ট্রেনের মানুষ মনে হয় আমাকে দেখছে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে।


– শুভ্র আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর পিছনে লিমা মেয়েটা আসছে। এমন সময় দেখলাম একটা ১২ বছর বয়সি ছেলের হাতে আমার বোরখা।


– আমার বোখরা! বলেই শুভ্রের থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিয়ে ছেলেটাকে ধরে ফেললাম।

ঐ আমার বোরখা তুই চুরি করেছিস! দে বলছি আমার বোরখা বলেই ছেলেটির হাত থেকে বোরখা কেড়ে নিলাম। জিবনে প্রথম আমার বর গিফট্ করছে আর তুই সেটা চুরি করছিস!


– আপা এটা আমার মায়ের বোরখা দেন বলেই আমার হাত থেকে কেড়ে নিতে আসতেই আমি শুভ্রর কাছে দৌড়ে চলে গেলাম। ছেলেটিও আমার পিছে দৌড়ে এসে বলল,,,,, আপা বোরখা দেন বলছি।


– এই ছেলে থাপ্পড় চিনোস! এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিব। পাঁচিলের ওপার থেকে বোরখা চুরি করিসনি তুই। আর একটা কথা বললে জেলের ভাত খাওয়াই ছাড়ব। চুরি তো চুরি তার উপর সিনা চুরি!


– পরী! ওটা দিয়ে দাও। আবার কিনে দিব।


– বোরখা দিবে কিন্তু আবার তো আর হোটলে গিয়ে আমাদের বিয়ে হবে না। ঐ রকম মুহুত্বও আসবেনা তাই এটাই আমার চাই বলে ছেলেটার দিকে তেড়ে গেলাম।



– এবার ছেলেটা ভয় পেয়ে এক দৌড় মেরে চলে যায় সামনে থেকে। শুভ্র দাড়িয়ে থেকে সব কান্ড গুলো দেখে তাজ্জব হয়ে গেল। একটা বোরখার জন্য কি ব্যবহার তার। “”আল্লাহ্”” এই পাগলকে হেদায়াত দান কর………


– শুভ্র গাড়িতে উঠে লিমাকে বলল,,,,, তুমি যাও এবার বাকিটা আমি সামলিয়ে নিব বলেই গাড়ী স্টার্ট দিল।


– শুভ্র এবার পরীর দিকে তাকিয়ে বলল আমাকে ছেড়ে যাওয়া খুব সখ না! চল দুজনেই দুনিয়া থেকে বিদায় হই। জান্নাত এতিম হয়ে যাক। তুই যেরকম ভাবে মানুষ হইছিস এতিম হয়ে মেয়েটাও হোক। তোর কথাই আমি রাখব বলেই গাড়ীর গিয়ার বাড়িয়ে দিল শুভ্র।


– পরী ভিষন ভয় পেয়ে গেল। শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল স্যরি। এই কাজটা আর কখনও করবনা। শুভ্রের বুকটা তখনও ধক ধক করছিল। যেটা পরী স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল। তাই চুপ করে ওভাবেই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে রইল।


– মরার সময় সব বিয়াদপ গনই হেদায়াত হয় যেমনটা তুই হচ্ছিস বলেই গাড়ী ব্রেক করল শুভ্র। কারন বাসায় এসে পড়েছে।


– পরীকে রুমের ভিতর এনে শুভ্র সোফায় বসে পড়ল। শুভ্রর গায়ে প্রচন্ড রাগ উঠে গেছে। যেকোন সময় কিছু করতে পারে। বৃষ্টি আসার আগে যেমন আকাশ গুম হয়ে থাকে তেমনটা। এটারই সুযোগ নেয় পরী।



– মেয়েটা কে ছিল শুভ্র! আমাকে রেখে বাহিরে এগুলো করে বেরাও তুমি! তাইতো বলি এত কাছে আসার চেষ্টা করি কিন্তু আমায় দুরে রাখে কেন! অসভ্র, ইতর, চরিত্রহীন কোথাকার।


– পরী! মুখ সামলিয়ে কথা বলো। আমার রাগ চরম মাত্রায় পৌছাইও না। শেষে বড় রকম ক্ষতি হয়ে যাবে কিন্তু তোমার। বাসায় কেউ নেই যে তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাবে।


– জানোয়ার! আমাকে বিয়ে করে অন্য মেয়ের সাথে পরকিয়া করিস! বলেই ড্রেসিং টেবিলের সব জিনিস হাতের বাড়ি দিয়ে নিচে ফেলে দেয় পরী।


– শুভ্র ভাল করেই জানে বিভিন্ন কথা বলে ইচ্ছা করে পরী ওকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। তাই চুপ করে বসেই রইল শুভ্র।


– আমাকে দিয়ে হয়না তোর! তাই অন্য মেয়েদের কাছে যাস্? কতজন মেয়ের সাথে এভাবে থাকিস।কতদিন আমাকে আটকে রাখবি এভাবে। আমিতো যাবই। তোর আর তোর মেয়েকে ছেড়ে। সময় তো আমারও আসবে। তোদের কারও আমার প্রয়োজন নাই। কেন আমার পিছু ঘুর ঘুর করিস? রেলস্টেশনে অত গুলো মানুষের সামনে মারার শোধ নিচ্ছে পরী।


– এবার আর শুভ্র নিজেকে কন্টোল করে রাখতে পারেনা। শুভ্র উঠে গিয়ে পরীর চুল ধরে ইচ্ছা মত ওকে ফাটাল। যতক্ষন না পরীর মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল।


– পরীর মুখ দিয়ে রক্ত বের হতেই শুভ্র ওকে ছেড়ে দিল। শুভ্রর এখনও রাগে গা কেঁপে যাচ্ছে।



– পরী এবার হেঁসে বলে উঠল,,,,,,শুভ্র! এতটুকু তেই তোমার দম শেষ? মারো! আরও মারো,,,,,,, আরে মারো না….. বলেই হাতের কাছের ফুলদানি টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বলল কতক্ষণ এভাবে রাখবে আমায়। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে। আমি আর কোন অবস্থায় এখানে থাকব না।


– ওকে পরী! তোকে চির দিনের জন্য আমাদের জিবন থেকে মুক্তি দিচ্ছি বলেই শুভ্র মেডিসিন বক্স নিতে গেল। আর পরী ক্লান্ত হয়ে খাটের কাছে বসে পড়ল।


– শুভ্র ঘুমের মেডিসিন খুলতে লাগল। ২০ টা বড়ি নিয়ে একগ্লাস পানি এনে পরীর কাছে বসে বলল আমাদের কাছে থাকতে চাস না তো! ওকে ব্যাপার না।

তার মানে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই তোর বলেই পরীর মুখে হাত দিতেই পরী ঝিটকানি দিয়ে গ্লাস আর মেডিসিন গুলো শুভ্রের হাত থেকে ফেলে দেয়। গ্লাসটা ভেঙ্গে গিয়ে পুরো ফ্লোরে পানি ছিটকে পরে আর মেডিসিন গুলোও ছিটে যায় এদিক ওদিক।



– শুভ্র চুপ করে পরীর কাছে খাটে হেলান দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। জিবনটা কোন দিকে মোড় নিল। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলনা।


– পরী অনেকক্ষন ডুকরে কাঁদল। শুভ্র কিছুই বলছেনা। ওভাবেই বসে আছে।


– এবার পরী এসে শুভ্রের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। শুভ্র বুঝতে পেরে পরীকে সরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,, ওয়েট এত্ত অধর্য্য কেন!
শুভ্র নিজেই শার্ট খুলে ফেলল।


– প্রচন্ড শরীরে ব্যাথা থাকা স্বত্তেও পরী আর এক মুহুত্ব দেরী না করে শুভ্রকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। আমাকে এত্ত কষ্ট দাও কেন শুভ্র! খুব খারাপ তুমি বলেই শুভ্রের ঘাড়ে গায়ের শক্তিতে কামড় বসিয়ে দিল।

– শুভ্রও চোখ বন্ধ করল সাথে সাথে। ২ চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। কিন্তু কিছু বলল না আর। শুভ্র ২ হাত দিয়ে পরীকে আরও জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরল।

পরী,,,,,, তোমার ঠোটতো কেটে গেছে ব্যাথা পাচ্ছো তো!



– অনেকক্ষন পর পরী শুভ্রকে ছেড়ে দিতেই শুভ্র বলে উঠল,,,,,,,,,বউ ! আমার সাথে কেন বাজি ধর বলতো?
বার বার হেরে যাও তবুও জেদ কেন ধর হুম। এবারও হারলে তো! শুধু শুধু মাইর খাইলা আমার হাতে। আমাকেও কষ্ট দিলা নিজেও কষ্ট পাইলা।


– পরী কোন কথা বলেনা। শুভ্রকে শুধু কিস♥♥♥♥ আর আদর♥ করতে থাকে। মনে হয় কত দিন এই মানুষটাকে নিজের মত করে পায়নি। তাই ছাড়তে মন চাচ্ছে না। একসময় ছেড়ে দিয়ে উঠে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে। দেন রুমের সব কিছু পরিষ্কার করতে শুরু করে।




– শুভ্রও আর কিছু না বলে নিজেও চেঞ্জ করে ওযু করে এসে জোহরের নামাযে দাড়িয়ে গেল। পরীও সব ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো পরিষ্কার করে নিচে রেখে এসে ওযু করে শুভ্রর পাশে নামাযে দাড়িয়ে গেল।


– শুভ্র নামায পড়ে জান্নাতকে কোলে নিয়ে নেমে আসলো নিচে। মেয়েটা অনেকক্ষন উঠে গেছে। জান্নাত হয়ে চুপ করে ছিল অন্য বাচ্চা হলে কান্না করে বাসা মাথাই উঠিয়ে রাখত।


– শুভ্র বাহির থেকে খাবার অর্ডার করে এনে নিল বাসায় । কারন ২ টা পার হয়ে গেছে। শুভ্র খাবার গুলো সার্ভ করছে এমন সময় ওর ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই,,,,,,


– Sir! emergency meeting আছে ৪ টায়। আপনি attend করেন।


– রাসেল! মিটিং এ এ্যাটেন্ড না করলে হয়না আজ?


– স্যার আসতেই হবে আপনাকে। কারন অনেকে এর মধ্য এসে গেছে। আপনাকে জানানো হয়নি আগে তাই আপনার সুবিধার্থে ৪ টায় দেওয়া হয়েছে। আপনি একটু জলদি আসেন Sir……


– আচ্ছা ঠিক আছে বলে কল কেটে দিল শুভ্র।


– মহা ঝামেলা তো! পরীকে ডাক দিল শুভ্র। কিন্তু পরীর কোন সাড়া পেলনা।


– শুভ্র উপরে গিয়ে দেখে পরী ঘুমাচ্ছে। ঐ অবস্থায় ওকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নেমে আসল।


– চুমকে উঠে চোখ মেলে দেখি আমি শুভ্রর কোলে। কিছু আর বললাম না।


– পরীকে চিয়ারে বসিয়ে রেখে খাবার এনে ওর মুখে খাবার তুলে ধরল শুভ্র।


– আমি একা খেতে পারব বলে প্লেট নিয়ে খেতে লাগলাম। শুভ্র আর কিছু না বলে মেয়ের মুখে ছোট্ট একটা রোষ্টের টুকড়া মুখে পুরে দিয়ে নিজে প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে খেতে লাগল।


– আমাদের মাঝে আর কোন কথা হল না। শুভ্র খেয়ে উঠে চলে গেল জান্নাতকে নিয়ে। আমি সব পরিষ্কার করে গুছিয়ে রেখে সোফায় বসে টিভি অন করলাম।
একটার পর একটা চ্যালেন বদলে যাচ্ছি কিন্তু কিছুই ভাল লাগছেনা।


– পরী! উপরে আসতো বলেই শুভ্র ডাকল।


– আমি উপরে গিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম। কোথাও যাবে হয়ত তাই রেডী হচ্ছে শুভ্র।


– শুভ্র রেডী হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,, পরী! প্লিজ আর কোন পাগলামি করনা। আমি অফিসে যাচ্ছি। সাড়ে ৬টা কিংবা ৭টার দিকে চলে আসবো। এর ভিতর কিছু যেন করনা সোনা। তোমার কিছু হলে আমি মরে যাবে। শুভ্র অনেকগুলো কিস♥♥♥♥ করল পরীকে।

পরী! আমি যেদিনি পৃথিবী থেকে সাড়া জিবনের জন্য চলে যাব তখন আমাকে ছেড়ে যেও। কারন তখন তোমাকে বাধা দেওয়ার মত আর কেউ থাকবেনা। এতটুকু সময় আমাকে দাও প্লিজ।



– শুভ্রর কথা গুলো আমার কলিজাতে আঘাত করল। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,, আমি কই যাবো শুভ্র তোমাকে ছাড়া! অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচেনা তেমন তুমি আমার অক্সিজেন,,,,,, তোমাকে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচি বল?

প্লিজ আমাকে আর দুরে সরিয়ে আর রেখনা শুভ্র। খুব কষ্ট হয় তো! তোমাকে ছাড়া থাকতে বলেই কেঁদে উঠলাম।

আমিতো তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। আর কখনও করবনা এমন কাজ যেটাতে তুমি কষ্ট পাও। আমাকে ক্ষমা করে দাও শুভ্র।


– পরীর কথা শুনে শুভ্র হতবাক হয়ে যায়। এই মেয়ে কি! আমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের জিবন রিক্সে অবদি নিল। এরে আমি আর কিভাবে মানুষ করবো?



– তুমি আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এগুলো কাজ করেছো?

– হুম

– তা কাজগুলো করে সুখ পাইছো!

– প্রচুর বলেই শুভ্রের বুকে কিস♥ করল পরী।

– শুভ্র একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। যাহোক পরী স্বাভাবিক আছে। তবুও বলা যায়না। যে মাথার স্কু ঢিলা। কি করতে কি করে ফেলে এরে দিয়ে কোন বিশ্বাস নাই।


– সব কিছু আমি আজ থেকে ঠিক করে নিব সোনা! জাষ্ট একটু সময় দাও বলে শুভ্র রুমে থেকে বের হয়ে চলে গেল। আমি আমার মেয়েটাকে নিয়ে বসে আছি। শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছে। মনে হয় গায়ে জ্বর আসবে।


– পাঁচ মিনিট পর শুভ্র আবার ফিরে আসলো।


– কিছু ফেলে গেছ শুভ্র! আবার চলে এলে যে?


– হুম,,, বলেই মেডিসিন বক্স থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে আমাকে খাইয়ে দিয়ে বলল সুয়ে থাকবা। একদম রুম থেকে বাহির হবানা। আমি আসার সময় খাবার নিয়ে আসবো বলেই আমার গলার নিচে কয়েকটা কিস♥♥♥♥করে চলে গেল।


– আমার চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। মানুষ কতটা ভাগ্যবান হলে এরকম একটা বর পায় জিবনে। “”আল্লাহ্”” শুভ্রের সাথেই আমাকে দুনিয়া থেকে নিয়ে নিও। সেটা যে কয়দিন হোক না কেন!


– ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে দেখলাম গলা, গাল, পিঠে অনেক দাগ। দাগ গুলো দেখতেও খুব ভাল লাগছে এখন। বর আমার বড্ড অভিমানী। রাগলে যা লাগে না,,,,,,, একদম ফিলিংস এসে বুকে ধাক্কা দেয় বলেই হেঁসে ফেললাম।



– আমি জান্নাতকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গল মাগরিবের আযান শুনে। ইশ্ আসরের নামাযটা মিস হয়ে গেল। জান্নাতও ঘুমিয়ে আছে। আমি উঠে মাগরিবের নামায আদায় করে বসে আছি।


– হঠাৎ মনে হল আম গাছে তো দড়ি বেঁধে রাখছি। ওটা বেয়ে তো চোর আসবে বাসার ভিতর। তাই দেরি না করে রুম থেকে বের হলাম। এই ডিসেশন টা পরীর জন্য খুব মারাত্মক ভুল ছিল।

চলবে——..

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৫



– আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জান্নাতের মাথার দিকে কোরআন শরীর রেখে গেলাম। দোলনা যেহেতু বড় তাই সমস্যা হলনা রাখতে। মেয়েকে একা রুমে রেখে যাচ্ছি তাই এই ব্যবস্হা। তার মধ্য বাসায় কেউ নেই।

♥আল্লাহ্♥ হেফাযতে রাখবেন। তাই নিশ্চিন্তে চলে গেলাম।



– বাসা থেকে বের হলাম একটা টর্চ নিয়ে। চারদিকে লাইট আছে তবুও নিলাম। আম গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি দড়িটা এখনো ঝুলছে ওখানে। তবে অনেক উজ্জল দেখাচ্ছে দড়িটা। আমি কিছু মনে না করে গাছে উঠে দড়ি খুলতেই একটা ঠান্ডা বাতাস আমার শরীর স্পর্শ করল। আমি নিচে নামতে গিয়ে দেখি দড়ি আটকে গেছে। দড়ি আটকালো কেমনে বলেই টানতে লাগলাম।



– পরী! ওখানে কি করছো!


– নিচে তাকিয়ে দেখি বাবা আমায় ডাকছে। বাবা কই থেকে আসলো! সবাই কি বাসায় আসছে নাকি? এখনতো আসার কথা না!


– পরী…… নীচে নেমে আসো এক্ষুনি।
দড়ি ওখানেই রেখে আসো।


– আমি গাছ থেকে নামলাম দড়ি রেখে দিয়ে। বাবার কাছে এসে বললাম,,,,, কখন আসছেন বাবা?


– এই ভর সন্ধায় গাছে কেন উঠছো! যানোনা এই সময়টা খুব খারাপ সময়।


– বাবা দড়িটা নামাতে এসেছিলাম। যদি এদিক দিয়ে চোর আসে তাই।


– মাথায় একবারও বুদ্ধি এল না! এই বাসায় অনেক সিকেরোর্টি গার্ড আছে তারা ব্যাপারটা কি দেখবেনা? এবার গাছের দিকে তাকিয়ে দেখতো! কোন দড়ি আছে নাকি?


– আমি গাছে তাকিয়ে দেখলাম কোন দড়ি গাছে নেই। আমি নিজে হাত দিয়ে দড়ি খুললাম সেটা কই গেল!


– চোখে যা দেখ সবসময় সেটা সত্য হয়না। বাসায় যাও। আগে গোসল করবা। তারপর নিজের রুমে যাবে। তারা তোমাকে ছুয়ে ফেলেছে। তোমার মেয়েকে তোমার কাছ থেকে যতটা সম্ভব পারো দুরে দুরে রাখবে বলে আমাকে এগিয়ে দিল বাসার গেট অবদি।


– বাবা ভিতরে আসেন?


– পরে যাচ্ছি। তুমি জলদি যাও বলে আমার হাতে একটা পাথর দিয়ে বলল,,,,,, এটা বালতির পানিতে রেখে গোসল দিবা ঐ পানি দিয়ে,,,,,,,, জলদি যাও। আর কিছু হলেও পিছে তাকাবেনা।


– এবার আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। ভিতরে ঢুকতে গিয়ে ওনি বলল,,,,, দোয়া না পরে বাথরুমে একদম ঢুকবা না কিন্তু। আর বের হয়েও পরবা দোয়া।

নিশ্চয় ♥আল্লাহ্♥ উত্তম হেফাযত কারী। তিনিই তোমাকে উত্তম রুপে হেফাযত করবেন।


– উনি সর সর করে আবার বাগানের দিকে চলে গেলেন।


– এর মধ্য শুভ্র বাসায় চলে এসেছে। দরজা খোলা দেখে ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। রুমে এসে শুধু জান্নাতকে দেখে। পরী কই গেল। এর মাথায় আবার পাগলামি জাগলোনা তো!
পরী,,,, পরী বলে কয়েকটা ডাকও দিল শুভ্র।

– আমার পুরো শরীর কেঁপে যাচ্ছে ভয়ে। কি বলল বাবা সব। বাসায় কেন ঢুকল না! আমি ডাইনিং রুমে এসে নিচের ওয়াসরুমে দোয়া পড়ে ঢুকে এক বালতি পানি উঠিয়ে পাথরটা পানিতে রেখে গোসল দিলাম।

ড্রেসটা ভাল করে ধুয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। যত উপরে উঠছি আর নিচে মনে হচ্ছে,,,,,,রাগে কারা যেন বিশ্রী ভাবে গড় গড় শব্দ করে যাচ্ছে।

শেষ সিড়িতে উঠে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা কালো কুৎসিত প্রানী দাড়িয়ে আছে যাদের পায়ের হাটু অবদি সাদা উজ্জল লাইট জ্বলছে।



– পরী পিছন দিকে তাকাতেই ওরা বিশ্রী ভাবে হেঁসে উঠে মাটিতে এবার বুকে উপর ভর দিয়ে সড় সড় করে টিকটিকির মত এগুতে লাগল পরীর দিকে।


– এটা দেখে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে রুমের ভিতর চলে আসলাম। শুভ্রকে দেখে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেই বললাম শুভ্র আমার মেয়েকে আমার কাছে আসতে দিও না। ওরা আমার পিছে আসছে।


– শুভ্রকে এভাবে পরী অচমকায় জড়িয়ে ধরা দেখে অবাক হয়ে গেল তাও ভিজা অবস্থায়। তুমি কই গিয়েছিলে! আর এভাবে ভিজা গায়ে কেন আসছো। কি হয়েছে তোমার….. এরকম কাঁপছো কেন।


– পরী কোন কথা না বলে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগল। আর শরীরের পানিতে পুরো ফ্লোর পানি দিয়ে ভেঁসে যাচ্ছে।


– পরী! সমস্যা টা কি তোমার? কিছু বলবে তো……


– শুভ্রর ধমক শুনে পরী চুপ তো করল কিন্তু কেঁপেই যাচ্ছে।


– শুভ্র একটা টাওয়াল এনে পরীর চুল গুলো মুছে দিতে দিতে বলল,,,,, ওকে কিছু বলতে হবে না। চুপ করে দাড়িয়ে থাক এখানে বলে ওর ড্রেস এনে হাতে দিয়ে বলল যাও চেঞ্জ করে আসো আগে তার পর শুনবো কি হয়েছে।


– না না ওরা আমার পিছে পিছে আসছে বলেই শুভ্রকে আবার জড়িয়ে ধরল পরী।


– পরী! এবার কিন্তু মাইর শুরু করব। আগে চেন্জ করে আসো বলছি! বলেই শুভ্র ওকে ছেড়ে দিয়ে একটা কাপড় নিয়ে এসে ফ্লোরটা মুছে ফেলে জলদি।


– পরী জলদি চেন্জ করে এসে শুভ্রকে সব খুলে বলল।



– শুভ্র সব শুনে পরীর উপর প্রচন্ড রেগে গেল। এর ভয় বলতে কি! কিছু নেই?

কোন আক্কেলে তুমি এই ভর সন্ধায় গাছে উঠতে গেছ আমাকে একটু বলবে! আমার জিবনে প্রথম কোন এমন একটা মাকে দেখলাম যার কাছে সন্তান রেখে যাওয়াটা ও রিক্স। নিজের মায়ের কাছেও সন্তান নিরাপদ না। স্যতিই তুমি ইতিহাস সৃষ্টি করবা পরী……….

আমার কথা না হয় ভাবনা তুমি,,,,,,,,, কিন্তু মেয়েটার কথা ভাববা তো! বলে ইচ্ছে মত কথা শুনাল শুভ্র। শেষে শুভ্র ওর মাকে কল দিল……


– হ্যাঁ শুভ্র বল……. কেমন আসিছ?

– মা কবে আসছো তোমরা?

– কাল পরশুর ভিতর। কেন সমস্যা!

– না,,,,, দিদুন কে কল দাওতো। আর বাবা কি ওখানে আছে তোমার কাছে?

– হ্যাঁ আমার কাছেই তো আছে তোর বাবা বলে অনিতা ওর শাশুড়ি কে ফোনটা দিল।


– কিরে শুভ্র কেমন আছিস!


– আর ভাল। তুমি এখুনি পলা আন্টিকে নিয়ে বাসায় আসো জলদি বলে সব ঘটনা খুলে বলল শুভ্র।


– বিমলা সব শুনে আর একমুহত্ত্বও দেরি না করে নিতাই আর পলাকে সাথে নিয়ে বাসায় রওনা দিল।


– শুভ্র! ওনাদের কেন ডাকছো? বাবাতো নিচে আছে। একটু পর আসবে।


– এখনও বুঝতে পারছোনা ওটা কি ছিল? ওটা বাবা ছিল না। তোমার মাথায় কি একটুও বুদ্ধি হবে না! তুমি নিজেও জানোনা ঘাড়ে কত বড় বিপদ নিয়ে আসছো?

♥আল্লাহ্♥ এই মেয়েকে একটু হেদায়াত কর। আমাকে শুধু সে জ্বালাতে শিখছে আর কোন গুন তার নাই।


– শুভ্রর কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় পরী। শুভ্রকে সেই কখন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে ছাড়ার কোন নাম নেই। আস্তে আস্তে পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল পরীর। আর বির বির করে বলছে শুভ্র জান্নাত কে আমার পাশে নিয়ে এসো না। ওর ক্ষতি হয়ে যাবে।


– শুভ্রও কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরীকে সুয়ে দিয়ে একটা গ্লাসে সুরা দিয়ে পানি পড়ে কিছু পানি পরীকে খাওয়ালো আর গায়ে ছিটে দিল। এই জ্বর মেডিসিন দিয়ে ছাড়ানোর না।


– জান্নাত কে আর পরীর কাছে নিয়ে আসল না শুভ্র। জান্নাতের কাছে কোরআন দেখে শুভ্র মনে মনে বলল,,,,, মেয়ের বিপদ হতে পারে তার আগেই পরী সুরুক্ষার ব্যবস্হা করে গেছে নিজের অজান্তেই।



– দশটার দিকে বাসায় চলে আসল ওরা। শুভ্র পরীকে রেখে নিচে এসে দেখল অনেক জিনিস ছড়ানো ছিটানো। সিড়ি, ফ্লোর পানি দিয়ে মাখানো। শুভ্র দরজা খুলে দিয়ে বলল,,,,, আন্টি পানি গুলো একটু মোছেন তো!

এমন সময় পরীর চিৎকারে শুভ্র এক দৌড়ে রুমে এসে দেখল,,,,, পরী সাপ সাপ বলে চিল্লাচ্ছে।

শুভ্র পরীর কাছে গিয়ে বলল,,,,, কই সাপ আমি দেখছিনাতো। তুমি স্বপ্ন দেখেছো পরী।


– না শুভ্র আমি স্পষ্ট সাপ দেখেছি। আমার পা জড়িয়ে ছিল বলেই কেঁদে উঠল।


– বিমলা রুমে এসে সব শুনে পরীর পা ভাল করে চেক করে দেখে ওর দু পায়ে কিছু জড়িয়েই ছিল। স্পষ্ট মোটা দাগ দেখা যাচ্ছে। বিমলা যা বুঝার বুঝে গেল। এর সাথে এখনো জ্বীন আছে।


– পরী কান্না বন্ধ কর। জান্নাত আছে না! তোমার কান্না দেখে ও কান্না করবে।


– পরীর শরীরে তখন প্রচন্ড জ্বর। শুভ্রের গা অবদি ঘেমে যাচ্ছে। কারন পরীকে জড়িয়ে ধরে আছে শুভ্র।


– সেদিন সবাই পরীর সাথেই থাকল। বিমলা কিসের যেন পানি এনে পরীর গায়ে ছিটিয়ে দিল। পরী আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল। সেই রাতে পরী আর জান্নাত ছাড়া আর কারও ঘুম হলনা।


– পরদিন অনিতা আর দেরি করেনি সাবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। পরীর হাল আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগল। শুভ্রকে একদম সহ্য করতে পারেনা। জান্নাতকে অনিতা ওর কাছে রাখে।

পরীর কাছে ভয়ে কেউ আসতে পারেনা। যেসব কথা বলে পরী ,,,,,, শুনলে এমনি যে কারোর পিলে চমকে যাবে।

বিমলা থাকে অল টাইম পরীর পাশে। বিমলা আগের যুগের মানুষ তাই টুকি টাকি জানে। সেগুলো দিয়ে পরীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।


– একদিন শুভ্র ঘুমিয়ে আছে সোফায় আর পরী বেডে। হঠাৎ পরী চোখ মেলে দেখে কেউ তার সামনে দাড়িয়ে আছে।

এমন সময় একটানে কেউ ওকে নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। পরী শুধু একবার চোখ খুলে দেখে ও ওদের বাসার বাহিরে দাড়িয়ে আছে। তারপর আবার চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসে। তারপর আবার চোখ মেলে দেখে একটা ছোট্ট কালভাটের সমানে বসে আছে ও।

আবার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আবার চোখ খুলে দেখে আঠাল মাটির দেশে দাড়িয়ে আছে। যেখানে যতদুর চোখ যায় তত দুর লাল আঠাল মাটির চুলো শুধু। ওকে যেন কেউ কোথাও বার বার নিয়ে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।



– একটা খোলা মাঠে এনে পরী কে নামিয়ে দিল। এবার পরীর হুশ ফিরে আসল। সামনে দেখে সাদা জুব্বা পরা একটা বৃদ্ধ দাড়িয়ে আছে। যার হাতে তসবিহ্ ছিল।



– এবার আমি তাকে দেখে সাহস পেয়ে মুখ খুললাম। আপনিতো বৃদ্ধ নামাজি মানুষ। আপনাকে দেখেতো তাই মনে হচ্ছে।

আমার স্বামী সন্তান আছে তাহলে কেন আমার সাথে এধরনের আচরন করছেন! আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসেন। আমার স্বামীর কাছে যাব আমি।



– বৃদ্ধ এবার বলল,,,,, যেখানেই নিয়ে যাচ্ছি সেখানেই ওরা ধরে ফেলছে।
মা……..! তোমাকে স্বাধে তোমার রুম থেকে নিয়ে আসিনি পিছন দিকে একবার ফিরে তাকাও।


– আমি পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি এত্ত ভয়ঙ্কর চেহারার কিছু দাড়িয়ে আছে যাকে দেখে আমি কেঁপে উঠি ভয়ে। বিকট চেহারার কেউ দাড়িয়ে ছিল যা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্য আমাকে বিছানায় এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। আমার আর কিছু মনে নেই।


– শুভ্র একটা শব্দে জেগে উঠে দেখে পরী এলো মেল হয়ে পড়ে আছে। শুভ্র জলদি পরীর কাছে গিয়ে দেখে ওর দাঁতের সাথে দাঁত লেগে গেছে। শুভ্র চোখ মুখে পানি ছিটিয় দেয় কিন্তু সেন্স ফিরছেনা। শুভ্র এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। প্যারানরমাল সম্পর্কে ওর তেমন ধারনা নাই।


– শুভ্র নিতাইকে কল দিল। কারন এই অবস্থায় পরীকে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।


– নিতাই ঘুম থেকে উঠে বলল এত্ত রাতে কেউ কল দেয়! বলে স্কীনে দেখে শুভ্রের কল।

পরী! বলেই বিমলাকে টেনে তুলে বলল,,,,,,,,,, পরীর আবার সমস্যা হইছে মনে হয়। শুভ্র কল দিচ্ছে জলদি চল।


– দাদু হয়তো ঘুমাচ্ছে কিন্তু কি করব আমি এখন। কোন কিছু দিয়েই তো ঠিক হচ্ছেনা পরী। (শুভ্র)


– এমন সময় দরজায় নক শুনে শুভ্র জলদি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ২ জনে ভিতরে ঢুকে। শুভ্র লাইট জ্বালায়।


– বিমলা এসে পরী কে দেখে বলল,,,,, শুভ্র! পরী তো দাতি লাগছে। নিশ্চয় ওর সাথে বড় কিছু হয়েছে। বিমলা একটা কর্টন এনে পরীর কানের ভিতর দিতেই পরী ঝিকে উঠল। পরী উঠে শুধু ভুলভাল বকেই যাচ্ছে এটা সেটা।


– শুভ্র শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরতেই পরী চোখ খুলে বলল,,,,,, ঐ তুই আবার আমার কাছে আসছোস বলেই শুভ্রকে একটা ধাক্কা দেয় প্রচন্ড শক্তিতে। শুভ্র ছিটকে পড়ে যায়।


– শুভ্র! ওর মত ওকে থাকতে দে বলে বিমলা পরীর পাশে গিয়ে বলল,,,,,, পরী! কি হইছে তোর। শুভ্রর সাথে এরকম ব্যবহার কেন করলি।


– দিদুন শুভ্রকে আমার অসহ্য লাগে। ওকে আমার দেখতে মন চায়না। ও কেন আমার কাছে আসে?


– শুভ্র আর আসবে না কখনও তোর কাছে বলেই বিমলা চলে গেল।


– শুভ্র চুপ করে বসে আছে ট্রী টেবিলে আর পরীর দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র তো সব বুঝতে পারছে কিন্তু কি করবে।


– শুভ্র আর দরজা বন্ধ করে দিলনা। কখন কি হতে কি হয়। শেষে রুমের ভিতর আর কেউ ঢুকতে পারবেনা।


– ভোরের দিকে অনেকটা ঠিক হয়ে যায় পরী। শুভ্র নামায পড়ছিল সেটা দেখে পরীও ওযু করে শুভ্রের পাশে এসে নামাযে দাড়িয়ে গেল। পরী কেবল সালাম ডান দিক থেকে বাম দিক ফিরিয়েছে অমনি দক্ষিন দিক থেকে শুধু একটা বিশাল মাথা ভাসতে ভাসতে ওর দিকে হাঁ করে ওকে খেতে আসে। আর এটা দেখে পরী জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে জায়নামাযে পড়ে যায়।


– শুভ্র জলদি নামায কমপ্লিট করে ওকে তুলে বেডে সুয়ে দেয়। পরী! এই পরী কি হয়েছে তোমার! এরকম কেন করলে বলেই শুভ্র বার বার ডাকতে থাকে পরীকে। শুভ্র একদম ভেঙ্গে পড়ে। কি হচ্ছে এসব।


– অনেকক্ষন চেষ্টার পর পরীর ঙ্গান ফিরে আসে। কিন্তু প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। শুভ্র পরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,, তোমার কি হইছে সোনা! ওরকম করে কেন চিৎকার দিয়ে উঠলা?


– শুভ্র আমি মনে হয় বাঁচবোনা। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ঐ যে দেখ দাড়িয়ে আছে বলেই শুভ্রর বুকে মুখ লুকালো পরী।


– শুভ্রর কষ্টে বুক মনে হয় ফেটে যাচ্ছে। কিছু হবেনা সোনা আমি আছিতো! ভাল চিন্তা ভাবনা কর। দুর্বল হয়ে পরোনা। আমি আছি জান্নাত আছে। আমাদের ছেড়ে কই তুমি যাবা বল!


– আমি জানিনা শুভ্র ওরা দেখতে খুব ভয়ঙ্কর। ওরা বাজে ভাবে আমাকে স্পর্শ করে। আমাকে নিয়ে যাবে বলেই পরী প্রচন্ড জোরে কান্না করতে লাগল।


– শুভ্র পরীকে একটা একটা করে কিস করছে আর বলছে ওরা কিছু করতে পারবেনা। ♥আল্লাহ্♥ অবশ্যই আমাদের কিছুনা কিছু পথ দেখাবে সোনা। প্রতিটা মানুষকে ধর্য্যর পরীক্ষা দিতে হয়। এটাও আমাদের সেরকম একটা সময়।


– পরীর চিৎকারে বাসার সবাই রুমে চলে আসে। পরী কান্না করেই যাচ্ছে আর শুভ্র ওকে থামানোর চেষ্ট করছে কিন্তু মেয়েটা থামছেই না।


– এবার শুভ্র পরীকে এত্ত জোরে একটা ধমক দেয় যে রুমের সবাই চমকে ওঠে। কত বার বলছি চুপ কর তবুও শুনছো না কেন? সবাই কে প্যারা দিতে খুব ভাল লাগে তাইনা?


– মা! আপনি এখানে কেন! জান্নাতের কাছে যান। ওকে কখনও একা রাখেন না। ওর ক্ষতি হয়ে যাবে। ওরা বাচ্চা খুব পছন্দ করে। আমি তো আমার মেয়ের কাছে যেতে পারিনা। আপনি দয়া করে ওর কাছে যান বলে আবার পরী কেঁদে উঠল।


– কথাটা শুনে এবার অনিল দৌড়ে ওর রুমে চলে গেল। জান্নাত কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। বাসার সবাই হতাশায় ডুবে গেল। অনিতা কয়েকটা পুরোহিতের সাথে যোগাযোগ করল। কিন্তু কিছুই হল না। সমস্যা আরও প্রকট হয়ে যাচ্ছে।


– শুক্রবার ছুটির দিনে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
পরীও বসেছে এমন সময় জান্নাতের দিকে এক নজরে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে থাকে ও। সেটা বিমলার চোখ এড়ায় না। জান্নাত একটু দুরে অনিলের কোলে বসে ছিল আর অনিল ফোনে কথা বলছিল।


– বিমলা সোজা খাবার ছেড়ে উঠে গিয়ে জান্নাতের সোজাসুজি দাড়িয়ে গিয়ে বলল,,,,, পরী! কিছু বলবি?


– পরী রাগী চোখে বিমলাকে ধমক দিয়ে বলল,,,,, তুমি ওখানে কেন দাড়ালা?

– সখে দাড়াইছি। তোর কোন সমস্যা?

– বিমলার কথা শুনে সবাই পরীর দিকে তাকাল। ওর চোখ তখন হালকা লাল হয়ে আছে।

– পরী আর কিছু না বলে ভাত নাড়াচারা করতে লাগল।

– বউদি! তোমাকে কি আবার জ্বীনে ভর করেছে?(অর্পিতা)

– অনিতা চোখ গরম করে অর্পিতার দিকে তাকাল। অর্পিতা চুপ হয়ে গেল একদম।

– অর্পিতা তুমি বড্ড বেশি কথা বল। নিজের খাওয়ার দিকে মন দাও বলেই পরী উঠে চলে গেল না খেয়ে।


– শুভ্রর আর গলা দিয়ে খাবার নামলনা। পরী নামায, খাওয়া দাওয়া সব কিছু দিন দিন বাদ দিচ্ছে। প্রচুর দুর্বল হয়ে পড়ছে পরী।


– সেদিন রাতে শুভ্র ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় পরী এসে হাত দিয়ে শক্ত করে শুভ্রর গলা চিপে ধরে । শুভ্র চোখ মেলে পরীর হাত সরাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। প্রচন্ড শক্তি নিয়ে পরী ওর গলা ধরে আছে। আজ শুভ্রকে যেন মেরেই ফেলবে। শুভ্রর দম আটকে কাঁশি দিতে শুরু করল।

এমন সময় একটা অদৃশ্য শক্তি এসে পরীকে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।


– শুভ্র তোমাদের ডাইনিং রুমের বাথরুমে একটা পাথর আছে বেসিনের উপর। ওটা একটা গ্লাসে পানির মধ্য ডুবিয়ে আন জলদি বলেই রুমের সব লাইট অফ হয়ে গেল। আমি একে সামলাচ্ছি।


– শুভ্র জানেনা ওটা কি ছিল তবুও নিচে দৌড়ে এসে বাথরুমে দেখে ঐ পাথরটি। ওটা একটা বড় মগে পানি নিয়ে তাতে পাথরটি ডুবিয়ে জলদি রুমে আসলো।


– রুমের ভিতর এসে দেখল পরী শুয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরের আবছা আলোতে ওর চোখ গুলো লাল দেখাচ্ছে।


– শুভ্র ওকে ধর এবার। তোমার বিবির সাথে ওরা শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করছে।

শুভ্র গিয়ে পরীর ২ হাত শক্ত করে ধরে ৩৩ আয়াত পড়তে শুরু করল জোড়ে জোড়ে। আর কেউ একজন সুমধুর কন্ঠে পরীর কানে আযান দিচ্ছে।

পরী বার বার ঝিকে উঠছে। এক পর্যায় থেমে যায়। পরী নিস্তেজ হয়ে শুভ্রর বুকে ঢলে পড়ে। চোখ দিয়ে পানি পরে গেল পরীর কয়েক ফোটা।


– তোমার “”বিবি”” খুবই রিক্সে আছে তাই তুমি ভাল কোন রাকিকে ডাকো। আমার দ্বারা এতজন কে আটকানো সম্ভব না। তাছাড়া এখানে ঢুকতে আমার কষ্ট হচ্ছে।

একটু পর আবার আসবে ওরা। পানি গুলো দিয়ে জলদি ওকে গোসল করাও। অবশ্যই দোয়া পড়ে বাথরুমে ঢুকবা।


– শুভ্র অদৃশ্য অবয়কের কথা মত সব কাজ করে পরীকে বিছানায় শুয়ে দেয়। কিন্তু একটু পর আবার চিৎকার দিয়ে ওঠে পরী কিছুক্ষন পর।


– এত্ত রাতে পরীর কন্ঠ অনেক দুর পর্যন্ত যায়। ছটফট করছে পরী শুধু। আমার গা জ্বলে যাচ্ছে কেন। শুভ্র তুমি কি করেছো আমার সাথে জলদি বল। তাছাড়া এর ফল কিন্তু ভাল হবেনা।


– এবার শুভ্র প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে হুংকার দিয়ে বলল,,,,,, আমি শুভ্র বেঁচে থাকতে তুই জ্বীনদের নিয়ে সংসার করবি! আর সেটা এই শুভ্র বসে বসে দেখব?
এমন অবস্থা করব জন্মের মত সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুর সুর করে আমার কাছে আসবি।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here