অসুখের নাম তুমি ১+২

0
1620

বিবাহের প্রথম রজনীতে প্রথমবারের মতো মেয়েলী সমস্যা দেখা দেয় রেশমি’র! সবে মাত্র চৌদ্দ বছর শেষ হয়েছে তার। সে জানে এর নাম ‘পিরিয়ড’। মা তাকে বলেছিলো এ ব্যাপারে। ক্ষণে ক্ষণে তাকে প্রশ্ন করতো এ নিয়ে। আশুরা বেগমের কত চিন্তা ছিলো এ নিয়ে। কে জানতো বিয়ের রাতেই তার মেয়ে সাবালিকা হয়ে ওঠবে!

নব বধূর বেশে বিছানায় চেপে বসে আছে রেশমি।বুকের ভেতর ডিপডিপ আওয়াজ হচ্ছে। ভয়ে দেহখানা প্রচন্ড কাঁপছে। কি হবে? কি করবে? এমন ভাবনাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।এমন সময় দরজায় হাসি-রসিকতার আওয়াজ ভেসে আসলো।

দরজার সামনেই গেইট পেতে সৌহার্দকে আটকে রেখেছে তার বোন-ভাবীগণ। তাদের দাবী হাজার খানেক টাকা দিলেই তাকে ভেতরে ডুকতে দেওয়া হবে। প্রস্তাব শুনতেই তৎক্ষণাত না করে দেয় সে। ‘নিজের রুমে যেতে আবার কিসের টাকা?’ এমন যুক্তি সে তাদের বুঝাচ্ছে।
এ নিয়েই মিনিট খানেক থেকে তর্ক-বিতর্ক চলছে তাদের মধ্যে।

সৌহার্দর একমাত্র বোন সুমি ন্যাকা কান্নার সুরে বলে ওঠে,—” দাভাই! তুমি এমন ক্যা বলো তো? বিলেত থেকে এত এত টাকা নিয়ে আসলা। আমাগো রে মাত্র কয়ডা টাকা দিতে তোমার হাত কাঁপতাছে?”

—” বিলেতে তো আমার চাঁদপানা মুখ দেখেই টাকা দেয়,না রে?”

সুমি মুখ ফুলিয়ে বলে,–“আচ্ছা বেশ। শ’পাঁশেক টাকা দিলেই হবে।”

সৌহার্দ বোনের ওমন মুখ দেখে আর কথা বাড়ালো না। পকেট থেকে চকচকে একশ টাকার নোট পাঁচখানা বের কর দিলো সুমির হাতে। টাকা পেতেই দরজা থেকে সরে সুমির দিকে অগ্রসর হলো সবাই। সুযোগ বুঝে সৌহার্দ রুমে ডুকে তড়িঘড়ি চিটকানি টা লাগিয়ে দিলো।

হবু বরের উপস্থিতি রুমে বুঝতেই হিমশীতল হাওয়া বয়ে গেলো রেশমি’র শরীরে। তার দেহখানা আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে কাঁপছে। ভয় আর অস্বস্তিতে নয়নমণিতে পানির ঢেউ খেলে গেলো। বেনারসির ভারে সে নুয়ে পড়েছে।মাথার উপরের ঘোমটাখানা ঠৌঁট বরাবর দিয়ে বিছানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।

সৌহার্দ ছোট ছোট কদম ফেলে বিছানায় বসলো। চাপা উত্তেজনা নিয়ে সে তার নব বিবাহিত বউয়ের মুখের ঘোমটা টা তুলে ধরলো।
এ কি! বউয়ের চোখে এত পানি! সে তো ভেবেছিলো লজ্জারাঙ্গা একখানা পূর্নিমার আলোর মতো মুখ দেখতে পাবে। এ তো হলো উল্টো কান্ড!

নববধূর উজ্জ্বল জলমলে মুখ না দেখতে পেয়ে মলিনতা দেখা দিলো সৌহার্দের মুখে।

রেশমি দ্বিগুন ভয় পেয়ে গেলো। সে তাকায় নি,চোখ বন্ধ করে আছে। মামি তাকে বুড়ো টাকলা ব্যাটার সাথে বিয়ে দিয়েছে এ কথা সে বিয়ের আগে একমাত্র মামাতো বোনের কল্যাণে জেনে গিয়েছে। যা রেশমির মনে এক ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। তাই সে তাকাতে চায় না ওই মুখের দিকে।

বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে নিয়ে একমাত্র মামার বাসাতেই মাথা গুজানোর ঠাঁই হয় তার। মামা-মামী প্রথম প্রথম সহানুভূতি দেখালেও ধীরে ধীরে আসল রুপ বের হয়ে আসে তাদের। রেশমির মামী নানারকম নির্যাতন করতেন তার স্বামীর আড়ালে। একমাত্র মেয়ে রুহানীকে দিয়ে রেশমিকে কম মার খাওয়ায় নি তিনি। বলতে গেলে রেশমিকে ঝিঁ এর মতো খাটাতেন।
মায়ের কাছে বলেও কোনো লাভ হতো না রেশমির। বিপরীতে আশুরা বেগম রেশমিকে বকাঝকা করতেন। বেশির ভাগ সময় গালাগালি করতেন। যেদিন তিনি বলেছিলেন,–‘ বাবাকে খেয়েও তোর হয় নি? এখন আবার আমার ভাইয়ের সংসারে আগুন লাগাতে চাস মুখপুড়ী?” সেদিনের পর আর কোনোদিন রেশমি তার মায়ের কাছে কোনোকিছুর বিচার দেয় নি। কথাটা তাকে পাথরের মতো করে দিয়েছিলো। সে জানে না এ কথার অর্থ কত?কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছিলো। কথাটি যখনই মনে আসে তখন ই তার চোখে অটোমেটিক জল চলে আসে।

আজ তার মামাতো বোনকে নতুন ক্লাস ভর্তি করিয়েছেন তার মামা আর এদিকে আজই তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। পড়ালেখার জন্য তার অনেক স্বপ্ন ছিলো, যা পলকেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।

—” পেটে হাত দিয়ে চোখ দিয়ে জল বিসর্জন দিচ্ছো। অর্থাৎ পেট ব্যাথ্যা করছে,তাই না? ”

বাঁশির মধুমাখা সুরের আওয়াজ পেয়ে বিষ্মিত হয়ে যায় রেশমি। সে মনে মনে বলে,’টাকলা ব্যাটার আওয়াজ তো চিকন শুনাচ্ছে,কীভাবে? ব্যাটার কন্ঠ তো- ভাঙ্গা ভাঙ্গা মোটা মোটা শুনানোর কথা? কাহিনী কি?’

কথাটা ভেবে না শেষ করতেই চোখ খুলে ফেলে সে। কিন্তু আফসোস, মুখের উপর বেনারসির লম্বা ঘোমটার কারণে সামনের ব্যক্তিটিকে দেখা নসিবে জুটলো না। ঘোমটার আড়ালেই মাথা নাড়ায় সে। সৌহার্দ ফুশ করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। তার মনে অন্য ধারনা ছিলো।

যাক তাহলে পেট ব্যাথা বলে কাঁদছে। নিশ্চই আজেবাজে কিছু খেয়েছে।

সৌহার্দ প্রশ্ন করে,–” তোমাকে কি ওরা উল্টাপাল্টা কিছু খাইয়েছিলো?”

প্রশ্নের বিপরীতে বোকা বোকা চাহনীতে তাকায় রেশমি। কি বলছে এ বুড়ো ব্যাটা? কে তাকে কি খাইয়েছে? সে ঘোমটার ভেতর থেকেই মিনমিন গললায় প্রশ্ন করে,—” কারা?”

—‘তোমার মামা-মামী? ”

রেশমি জবাব দিলো না। মামা-মামী তো খাবার ই দেয় নি। আবার উল্টাপাল্টা খাবার। তার ভেতর প্রচন্ড লজ্জা আর সংকোচ কাজ করছে।
হঠাৎ পেটের ব্যাথা তীব্র আকার ধারণ করতে লাগলো। রেশমি দাত চেপে কান্টা আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলো। সফল হতে না পেরে হালকা শব্দ করে কেঁদে দিলো। সৌহার্দ ভড়কে যায় তার এমন কান্ডে।

কোনে উপায় না পেয়ে সে তার বোন সুমিকে ডেকে নিয়ে আসে।
‘কি হয়েছে দাভাই?’

‘ তোর ভাবীর কি হয়েছে একটু দ্যাখ তো। সে আমাকে কিছু বলছে না।’

এ বলে সৌহার্দ দরজা টেনে দিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সুমি ভরাক্রান্ত মুখ নিয়ে ফিরে এলো।

‘দাভাই…’

‘হ্যা, কিরে কি হয়েছে?কিছু বলেছে?’

সুমি আমতা আমতা করতে লাগলো। কথাটা সে কীভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সৌহার্দ বোনকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,’ সুমি কি হয়েছে বল? বড় কোনো অসুখ নাকি?ডাক্তার নিয়ে আসা লাগবে নি?’

‘ না,না। ডাক্তার লাগবে না। আসলে,’

‘আসলে কি?’

‘ ভাবীর ওইসব দিন চলছে। বুঝেছো তো?’

সৌহার্দের অশান্ত মন হঠাৎ থমকে যায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ করে যায়।

‘ওহ।’

বলেই সৌহার্দ চলে যেতে চাইলো। সুমি বলে উঠে,’ভাই,’

‘হ্যা,হ্যা। কিছু বলবি?’

সুমি মাথা নিচু করে বলে,’ এটাই ভাবীর প্রথম।’

সৌহার্দ হঠৎ করে চেচিয়ে বলে ওঠে,’কিহ।’

সুমি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আর সোহার্দ নির্বাক হয়ে ওখানে দাড়িয়ে রইলো। বিরবির করে বলে,’ ও আল্লাহ। এত ছোট ও! মামার সাথে বিয়ে হলো কি যে হতো? শুকরিয়া খোদা।’

কয়েক সেকেন্ড দরজার বাহিরে থম মেরে দাড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে দরজা টা লাগিয়ে দিলো সোহার্দ। রেশমির বুক দুকদুক করছে। সৌহার্দ ধীর পায়ে এগুতে লাগলো।

চলবে,

#অসুখের_নাম_তুমি
#সোনালী_আহমেদ
প্রথম পর্ব

~
।।।।
।।।।
#অসুখের_নাম_তুমি
#সোনালী_আহমেদ
২য় পর্ব
কয়েক সেকেন্ড দরজার বাহিরে থম মেরে দাড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে, দরজা টা লাগিয়ে দিলো সোহার্দ। রেশমির বুক ধুকধুক করছে। সৌহার্দ ধীর পায়ে এগুতে লাগলো।

রেশমি নিজেকে ভালোমতে কাঁথার ভেতর মুড়িয়ে শুয়ে রইলো। ভীষণ লজ্জা করছে তার। এ প্রথম সে তার মায়ের সাথে না, অন্যকারো সাথে ঘুমাবে। সেও আবার পুরুষ মানুষ। তারউপর আবার নতুন আরেকটা সমস্যা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আজকেই এটা হতে হলো? এতদিন যে এত কিছু করলো তার মা তখন কেনো হলো না? এখন এই পর-পুরুষের সামনে কত লজ্জা পেতে হবে। ভয় আর লজ্জায় তাকাতেই পারছে না সে। না জানি বুড়ো ব্যাটা টা কি করে বসে?

সৌহার্দ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রেশমির দিকে। এ মেয়ে এত পেঁচিয়ে আছে কেনো? তাকে দেখে কি লজ্জা পাচ্ছে? কই মামা যখন বিয়ে করতে গিয়েছিলো তখন তো একদম লালে লাল সেজে বসেছিলো।
সৌহার্দ নিঃশব্দ পায়ে হেটে বিছানার পাশে গিয়ে দাড়ালো। রেশমি তখনও নিজেকে মুড়াতে ব্যস্ত।

সৌহার্দ খুক খুক করে কাশি দিলো, রেশমির মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য। কিন্তু রেশমির কোনো হেলদোল নেই। বিয়ের পর থেকে একবার ও তার দিকে তাকায় নি রেশমি। সে কি কালো নাকি? তাকে তো সবাই বলে দুধের মতো সাদা সে। মেয়েরা তো তাকে দেখলে পলক ফেলে না! তাহলে এ মেয়ে তাকায় না কেনো?
সৌহার্দ রেগে গেলো। জিদ দেখিয়ে দুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

এদিকে রেশমি, ‘বুড়ো ব্যাটা’ নিজের পাশে শুয়েছে বলে আরো ভয় পেয়ে গেলো। একদিকে পেট ব্যাথা আরেকদিকে এই অচেনা ব্যক্তির ভয়। রেশমি শান্তি, স্বস্তি কোনোটাই পাচ্ছে না। হুট করে সে মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে কাঁদতে লাগলো। যাতে এই লোকের কানে আওয়াজ না যায়। শুধুমাত্র মায়ের জন্যই সে এ বিয়ে করেছে নাহলে কবে পুকুরে ঝাপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতো। রেশমির মায়ের খুব বড় অসুখ, ডাক্তার বলেছে শলা চিকিৎসা না করলে মা বাঁচবে না। আর এর জন্য ঢের টাকা লাগবে। সেই টাকার জন্যই রেশমি ওই আধ বুড়ো লোককে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। মামি তো তাকে বলেছিলো এই লোককে বিয়ে করলে তার মা বেঁচে যাবে। আল্লাহ্ জানেন তার মা সুষ্থ হবে কি কি না? মায়ের কথা মনে পড়তেই রেশমির কান্নার বেগ টা স্রোতের মতো বেড়ে গেলো।

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেলো। কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো সৌহার্দ। পাশ থেকে হেঁচকির আওয়াজ পেয়ে ধরফরিয়ে ওঠে বসে। তার বুঝতে সময় লাগলো না যে রেশমি কাঁদছে। মনে মনে ধারনা করলো হয়তো পেট ব্যাথা করছে তাই কাঁদছে।

সে দুইবার করে ‘এই,এই’ বলে ডাকলো। আসলে সে কি বলে সম্বোধন করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।

সোহার্দের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যায় রেশমি। সে জোরে মুখ চেপে ধরলো যাতে আওয়াজ না হয়।

‘এই যে শুনছেন?’

‘জ্ জ্বি জ্বি।’

সৌহার্দ গম্ভীর গলায় বলে,’ওঠে বসুন।’

রেশমি নড়লো না। তাই সৌহার্দ রাগী গলায় বলে,’ তোমাকে বলেছি না উঠে বসতে।’

ধমক শুনে ভয় পেয়ে ঝড়ের বেগে ওঠে বসে পড়ে রেশমি। সৌহার্দ আর তার দিকে তাকালো না। সোজা ওঠে গিয়ে সন্দুকের উপরে রাখা ডিব্বা( বাক্স) থেকে ব্যাথার ঔষধ আর এক গ্লাস পানি নিয়ে রেশমির সামনে এসে দাড়ালো। রেশমি বসে বসে কাঁপছে, সে তাকাচ্ছে না।

সৌহার্দ প্রশ্ন করে, ‘ কিছু খেয়েছিলেন?’

রেশমি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে, না।

সৌহার্দ দাত চেপে বলে,’ভালো! খুব ভালো।’

রেশমি অবাক হয়। এ বুড়ো লোকটা কি বলে? না খেলে নাকি ভালো? লোকটার দিকে তাকানোর ইচ্ছা করলো। তাকাবে কি তাকাবে না তা নিয়ে সংশয়ে আছে সে!

রেশমিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে দুম করে গ্লাস টা পাশের ছোট টুলের উপর রেখে হনহন করে বেরিয়ে যায় সৌহার্দ। রেশমি চমকে ওঠে দরজার দিকে তাকায়,ততক্ষণে সে বেরিয়ে গিয়েছে।

কিছুক্ষণ বাদে এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে আসে সৌহার্দ। টুলের উপর প্লেট টা রেখে, বের হয়ে চলে আসে। এর মধ্যে রেশমি কে বলে এসেছে যে খাবার টা খেয়ে যেনো ঔষধ খেয়ে নেয়। রেশমি নিচের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ায়। এত কিছুর মধ্যে সে একবার ও সৌহার্দের মুখের দিকে তাকায় নি।

২.
বাহিরে শো শো করে বাতাস বইছে,সাথে ধুলোও উড়ছে। বাতাসের বেগ আজ অন্যন্যা দিনের তুলনায় অনেক বেশি। কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। গাছের ডালপালাগুলো এদিক-ওদিক দুলে নানারকম নৃত্য করছে। আকাশের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে বড়সড় ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌহার্দ এ প্রবল বাতাসের মধ্যেও বাহিরে হাটছে। না লাগছে ভয় না ডর! সে আপনমনে হাটছে। মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ে টা তো করে নিলো সে? কিন্তু এর গতি কি হবে? কত দূর ঠেকবে এই সম্পর্ক?

রেশমি তো বাচ্চা একটা মেয়ে। ওর তো এখনো কোনো কান্ড-জ্ঞান হয় নি। কীভাবে সামলাবে ও সংসার?
আর চাচি? চাচি তো ওকে কিছুতেই মেনে নিবে না। আজকে যা হয়েছে তারপর তো কখনই না। চাচির ভাইয়ের জন্য ঠিক করা মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি তাও আবার চাচির বিরুদ্ধে গিয়ে, এ সম্পর্ক মানা তো দূর, রেশমিকে থাকতে দিবে কি না সন্দেহ!

এমন নানা রকম চিন্তা ঘুরছে সৌহার্দের মষ্তিষ্কে। এসব ভেবে তার দুঃশ্চিন্তা কমছে না বরং আরো বাড়ছে।

সৌহার্দ থাকে তার একমাত্র চাচা-চাচির সাথে। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর, নানুর বাড়ীর লোকজন তার মা কে নিয়ে আবারো বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপর তার ছোট বোনটাকে নিয়ে ঠাঁই হয় একমাত্র চাচা-চাচীর ঘরে। মূলত দাদীর কারণেই তাদেরকে জায়গা দিতে বাধ্য হয় সৌহার্দের চাচা-চাচী। তাদের মা অবশ্য নিতে চেয়েছিলো, কিন্তু তার দাদী নিতে দেন নি।
তাই লিনা বেগম(চাচী) এর দু চোখের বিষ হওয়া স্বত্তেও ভাসুরের ছেলে মেয়েকে নিজের কাছে রেখেছেন তিনি। যদিও তাদের পেছনে আরো একটা কারণ আছে। কারণ টা হলো সৌহার্দের বাবার নামের সম্পদের অংশ গুলো নিজেদের করে নেওয়া।

সৌহার্দ এত প্যাচ বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলেছে। এখন আর তার হাতে কোনো কিছুই নেই। কারণ তার একমাত্র বোনকে তার চাচী নিজের ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে। যার ফলে অর্ধেক সম্পত্তি তাদের হয়ে গিয়েছে আর বাকি অর্ধেক সম্পত্তি তার বোনের ভালো থাকার ভয় দেখিয়ে দখলে নিয়েছে। এ বিষয়গুলো সৌহার্দ ছাড়া বাহিরের কোনো মানুষের জানা নেই।

সবার কাছে সৌহার্দের চাচা-চাচী দেব-দেবীর মতো। সবাই বলাবলি করে,’ মা-বাবা না থাকা স্বত্তেও লিনা তার ছেলের বউ করেছে সুমিকে। আবার ছোট থেকে দেখ-ভালও করছে। তাদের মতো চাচা-চাচী যেনো সবার কপালে জুটে।এরা তো মানুষ নয় দেবতা।’
কিন্তু আফসোস তাদের কারোর ই ভেতরের ঘটনা জানা নেই। জানলে হয়তো কাল নাগিন বলে ডাকতে কেউ দুবার ভাবতো না।

হঠাৎ জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। সৌহার্দ দৌড়ে ঘরে পৌঁছার আগেই খানিকটা ভিজে গেলো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার! বজ্রপাতের সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নিজের কক্ষের কাছে পৌঁছাতেই গোঙানির আওয়াজ পেলো। ভেতরের মানুষটার কথা মনে পড়তেই মুখ দিয়ে বের হলো,’ওহ শিট!’

দ্রুত দরজা খুলে প্রবেশ করতেই দেখলো খাটের একপাশে মেঝের উপর গুটিশুটি মেরে বসে আছে রেশমি। বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে তার ভয়ার্ত চেহারা সৌহার্দের চোখের সামনে জলজল করে জ্বলে ওঠলো। রুমের জানালা গুলো খোলা, বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির ফোঁটাও রুমে এসে পড়ছে। রেশমির কাঁপাকাঁপি দেখে বুঝে গেলো যে মেয়েটা ঝড়-বৃষ্টি ভয় পায়।

সৌহার্দ দ্রুত দরজা লাগিয়ে রেশমির দিকে এগিয়ে গেলো। রেশমির চেহারা দেখে সৌহার্দের তার প্রতি বড্ড মায়া হতে লাগলো। সে বুঝতে পারছে না এ কেমন টান অনুভব করছে সে। এর আগে কখনও এমন অনুভূতি হয় নি তার।

‘রেশমি’
শীতল সুরে ডাক দিলো সৌহার্দ। রেশমি যেনো আরো ভয় পেয়ে গেলো তার আওয়াজ শুনে। সে পেছনের দিকে ঘেষে ধীরে ধীরে দাড়াতে লাগলো। সামনের অবয়বকে তার অশরীরী মনে হচ্ছে। সৌহার্দ চম্বুকের মতো রেশমির দিকে এগোয়। তাদের মধ্যোকার দূরত্ব এক ইঞ্চির ও কম। সৌহার্দের শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হতে লাগলো। আচমকা আকাশে বেশ জোরেই বজ্রপাত হলো। বিকট আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে হুট করে সৌহার্দকে জড়িয়ে ধরে বসলো রেশমি। থরথর করে কাঁপছে সে।

আকাশে ‘বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে’ নাকি সৌহার্দের দেহে? সে বুঝে উঠতে পারলো না। রেশমির স্পর্শ কারেন্টের শকের মতো লাগলো সৌহার্দের নিকট। এড ঠান্ডা তাপমাত্রার মাঝেও সে ঘামতে লাগলো।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here