অশান্ত বসন্ত পর্ব-৭

0
920

#অশান্ত বসন্ত
(সপ্তম পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
(#প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

****************
বায়না করে জানলার পাশের সীটটা দখল করেছে পিউ। বেশ কিছুটা সময় ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়েও ছিলো বাইরের দিকে।এখন অবশ্য দাদাভাই এর ঘাড়ে মাথা রেখে দিব্বি ঘুমোচ্ছে।

পল্লব সময় পেয়ে ফেসবুক খুলে আবার তন্ন তন্ন করে খোঁজে মেয়েটাকে।
নাম না জানা থাকলে কি আর খুঁজে পাওয়া যায়!

আজকাল সাহিত্যের গ্রুপ গুলোতেও জয়েন করেছে পল্লব।ঋতম বলেছিলো,’ মেয়েরা একটু কল্পনাপ্রবণ হয়,তুই গল্প কবিতার গ্রুপ গুলোতে খুঁজে দেখতে পারিস’।

তারপর থেকেই পল্লবের আনাগোনা চলে গল্পের গ্রুপগুলোতে।ঘুমোবার আগে অনেকটা সময় সে গ্রুপগুলোতেই থাকে।

এমনকি ছোটবেলায় নিজের ডায়েরির পাতায় সাজানো বোকা বোকা গল্প ও টাইপ করে দিতে শুরু করেছে।যদি কোনোভাবে সেই মেয়েটির লাইক কমেন্ট পায়।

পল্লব দেখেছে এই গ্রুপ গুলোতে কেউ কেউ বেশ ভালো লেখেন।কিন্তু খুব ভালো লেখায় লাইক কমেন্ট সেই অর্থে জোটেনা,বরং অতি সাধারণ প্লটের ওপরের লেখাগুলোতে কমেন্ট লাইকের বন্যা বয়ে যায়।
যেমন পল্লব ও প্রচুর লাইক কমেন্ট পায়।সুন্দরী কিছু পাঠিকাও জুটেছে পল্লবের।

‘আচ্ছা আপনি এতো সুন্দর লেখেন কি করে!’,কেউ কেউ আবার সরাসরি ইনবক্সে এসে জানতে চায়,’ভালোবাসেন কাউকে?’,পল্লব মেসেজ সিন করে ছেড়ে দেয়,রিপ্লাই দেয়না কোনো।

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।নেট অফ করে ফোনটা পকেটে ভরে নিলো।তারপর পিউকে নাড়িয়ে জাগিয়ে দিয়ে পল্লবের সীটে বসতে বললো।ঘুমের মধ্যে পিউও কথা না বাড়িয়ে দাদাভাই এর সীটে এসে বসলো।

জানালার ধারে বসতেই পল্লবের মুখে গায়ে বৃষ্টির ছাট আসতে লাগলো।
বৃষ্টির আদরে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে পল্লবের।কিন্তু জোর করেই নিজেকে জাগিয়ে রাখলো পল্লব। বুকপকেটে ফোনটা ভাইব্রেট করছে।হাতে নিয়ে দেখলো বসের ফোন।

খারাপ লাগলো পল্লবের না জানিয়ে আসার জন্য।
অবশ্য কি করতো!হয়তো বেশ কিছুদিন থেকে যেতে হবে কাঁথিতে!
এখন কি কারন দেখিয়ে আর কতোদিনের জন্য ছুটির এপ্লিকেশন জমা দিতো!দীর্ঘশ্বাস ফেললো পল্লব।

এরপরেও আদৌ পাবে কিনা মেয়েটিকে,সেটাও তো একটা বড়ো প্রশ্ন।তবে যেভাবেই হোক খুঁজে সে বের করবেই মেয়েটিকে।

হাসি পেলো পল্লবের,এখন ওর যা অবস্থা,তাতে নিজেকে নিয়েও বেশ একটা টানটান প্রেমের গল্প বা বিরহে কাতর প্রেমিকের গল্প লিখে ফেলা যেতো।

যতো সময় এগোচ্ছে ততোই যেন বুকে দামামা বাজছে।গিয়েই আগে ফুলমানিকে কাজে লাগাতে হবে।ফুলমানি নিশ্চয়ই খুঁজে দিতে পারবে মেয়েটিকে।

কলিং বেল দুবার বাজাবার পরেও অর্নব দরজা খুলছেনা দেখে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভেতরে আসে অদ্রিজা।
‘লাইট টাও জ্বালায়নি’,কথাটা বিরবির করে বলে, বিরক্তি মুখে সুইচবোর্ড হাতড়ে লাইটটা জ্বালালো অদ্রিজা।

অর্নবকে ড্রয়িংরুমে দেখতে না পেয়ে বেডরুম,কিচেন,ব্যালকনি,টয়লেট সবেতেই একবার ঢুঁ মারলো অদ্রিজা।
ভ্রুটা কুঁচকে গেলো ওর,’শরীর খারাপ নিয়ে আবার কোথায় গেল অর্নব!করুনাদি আর মেয়েদের কাছে যায়নি তো!’,

হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে অর্নবের মোবাইলে ট্রাই করতেই, ‘সেই ভালো সেই ভালো,আমারে না হয় না জানো’,গানটা বেজে উঠলো।

অবাক লাগলো অদ্রিজার।মোবাইলটা তো হাতছাড়া করেনা অর্নব।টয়লেটে যাওয়ার সময় ও মোবাইলটা হাতেই রাখে।তাহলে কোথায় গেলো!’,আজকাল যদিও অর্নবকে অসহ্য লাগে,তবুও ওর ঘরে না থাকাটা কাঁটার মতো বিঁধছে বুকে।

ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে টয়লেটে ঢুকে শাওয়ারটা চালিয়ে দিলো অদ্রিজা।একে একে নিজেকে উন্মুক্ত করলো শাওয়ারের নীচে।
শাওয়ার থেকে নেমে আসা অবাধ্য জলরাশি অদ্রিজার চুল ছুঁয়ে নেমে যেতে থাকে গভীর থেকে গভীরে।জলের স্পর্শে চনমনে হয়ে ওঠে অদ্রিজা।

প্রথম প্রথম অফিস থেকে ফিরে দুজনে এক সাথেই শাওয়ার নিতো।
রীতিমতো ধস্তাধস্তি চলতো দুজনের।অনেক সময় তো টয়লেটের জল উপচে বাইরে চলে যেতো।অথচ ওদের সেদিকে হুঁশ থাকতোনা।পাগলের মতো একে অপরকে আদর করতো।

অদ্রিজা অনেকক্ষন শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুলটা পেঁচিয়ে মাথার ওপরে তুলে দেয়।তারপর ভেজা জামাকাপড় গুলো তুলে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে বেরিয়ে আসে টয়লেট থেকে।

নরম পায়ে বেড রুমে আসে,তারপর ভেজা গায়েই রাত পোশাকটা জড়িয়ে নেয়।
ঘড়ির কাঁটা নিজের মতোই চলতে থাকে।
অদ্রিজা কিচেনে ঢুকে মাইক্রো ওভেনে জল গরম করে কফি পাউডার মিশিয়ে নেয়।

কফিমাগে হালকা চুমুক দিতে দিতে ড্রয়িং রুমে আসে।তারপর এসিটা অন করে টেম্পারেচার বাইশে সেট করে।অর্নব থাকলেই এখন এসি চালাতে দিতোনা।বলতো ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিতে।অর্নব না থাকাতে অদ্রিজার সেই দম বন্ধ করা অবস্থাটা নেই।

‘এই করবে না’, ‘সেই করবে না’,শুনতে শুনতে মাথা গরম হয়ে যেতো অদ্রিজার।
হতে পারে বয়েসে অর্নব ওর চাইতে অনেকটাই বড়ো।তাবলে ওই বাবা মার্কা হাবভাব বিরক্ত লাগতো অদ্রিজার।

চুল থেকে টাওয়াল টা খুলে সোফাতে গা এলিয়ে দেয় অদ্রিজা।নিমেষে ঘুম নেমে আসে দুচোখে।

ঘুম ভাঙতে দেখে রাত সাড়ে এগারোটা। গলাটা কেমন ব্যথা ব্যথা লাগছে।অদ্রিজা এসিটা বন্ধ করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। মনে হয় বৃষ্টি পড়ছিলো রাস্তা গুলোতে জমা জল।

অদ্রিজা ঘরে ঢুকে অর্নবের ফোনটা নিয়ে আসে।লক খুলতে চেষ্টা করে কিন্তু পাসওয়ার্ডটা যে কি দেওয়া সেটাই বুঝতে পারছেনা।ফোনটা আনলক করতে পারলে অন্তত বুঝতে পারতো লাস্ট কল কাকে করেছিলো।সেখানে ফোন করে হয়তো কোনো খবর পাওয়া যেতো।

মাথাটা দপদপ করছে অদ্রিজার,গলাটাও শুকিয়ে আসছে অজানা ভয়ে।আজকাল একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার শুরু করেছিলো অর্নবের সাথে।

অথচ একটা সময় অদ্রিজা চেয়ার টেনে নিয়ে ব্যালকনিতে বসলেই অর্নব এসে দাঁড়াতো ওর পিছনে। তারপর ওর চুলে হাত ডুবিয়ে ম্যাসেজ করে দিতো,চুলটা আঁচড়ে তেল লাগিয়ে দিতো।অদ্রিজার ঘুম চলে আসতো আবেশে।তখন ঘুমন্ত অদ্রিজাকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুইয়ে দিতো।

ঘুম ও জাগরনের মধ্যেই অদ্রিজা টের পেতো ওর সারাটা শরীর জুড়ে অর্নবের পুরু ঠোঁটের স্পর্শ।
অনেকদিন বাদে আজ অর্নবের স্পর্শটা ভীষণ মিস করছে অদ্রিজা।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here