অশান্ত বসন্ত পর্ব-৬

0
862

#অশান্ত বসন্ত
(ষষ্ঠ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
(#প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
*******************
বড্ড ক্লান্ত লাগছে অর্নবের।অথচ চোখ দুটো থেকে যেন উধাও হয়ে গেছে ঘুম।
মাঝেমাঝে ভাবে যদি ব্রেনটা অসার হয়ে পরতো,তাহলে সারাক্ষণ মনের সাথে চলতে থাকা এই লড়াইটা ওকে লড়তে হতোনা।

গতকাল থেকেই খুসখুসে কাশি,গলা ব্যথা,মাথাটাও কেমন ভার ভার।সেই কারণেই দুদিন ধরে অফিসেও যাচ্ছেনা।
সারাটা দিন সে একলাই থাকছে।
আর একলা থাকার সুবাদে পুরনো ক্ষত গুলো থেকে রক্ত ক্ষরণ হওয়া শুরু হয়েছে।

আসলে ভুল ভেঙে গিয়ে ঠিকটা বুঝে যাওয়ার পর,এই হঠাৎ বুঝে যাওয়া ঠিকটার জন্য নিজেকে নিজের বিদ্রুপ করা ছাড়া আর কিছুই করবার থাকেনা।
বুকের ভিতর উঁকি মারলে এখন শুধুই জমে থাকা শ্যাওলা।

ভালোবাসার বিয়ে হলেও একটা সময় পর ভালোবাসতেই ভুলে গিয়েছিলো অর্নব।তবু
করুনার নরম শরীরটা তার ঘুমের আগে লাগতোই।যদিও করুনার দিক থেকে তেমন সাড়া মিলতোনা।চুপ করে ন্যাতার মতো পরে থাকতো।

অর্নবের সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য।
কতো স্বপ্ন ছিলো ওকে ঘিরে।আজ জানেও না ওকে ছেড়ে তার আদরের ডলি কেমন আছে!জানেনা ওদের কেমন করে দিন চলছে!

প্রথম দিকে মানি অর্ডার করেছিলো কয়েকবার,কিন্তু ফেরত এসেছে টাকা।
করুনা জিদ করে তার টাকা ছুঁয়েও দেখেনি।

এমন যে হবে কে জানতো!মেয়েটা অফিসে নতুন জয়েন করবার পর,বস অর্নবকে ডেকে দায়িত্ব দিয়েছিলো কাজ শেখাবার।
নাম অদ্রিজা মজুমদার,বয়েস সম্ভবত শিখারই বয়েসী বা ওর চাইতে একটু বড়ো।

প্রথম দিন থেকেই মেয়েটির চোখে অর্নবকে ঘিরে মুদ্ধতা চোখ এড়ায়নি অর্নবের।অর্নব চোখ সরিয়ে নিলেও বুঝতে পারতো এক জোড়া চোখ তাকেই অনুসরণ করছে।

অর্নব এক সময় ব্যস্ততার অজুহাতে অন্য কাউকে কাজ শেখাবার দায়িত্ব দিতে বললেও বস রাজি হননি।অগত্যা মেয়েটি ছুটির আগে ও পরে কাজ শেখার অজুহাতে অর্নবের মাথা চিবোতে শুরু করেছিলো।

একদিন কাজ শিখতে গিয়ে রাত হয়ে যাওয়াতে অদ্রিজা অর্নবকে নিজের বাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে বলে।অর্নব রাজিও হয়ে যায়।কারন অতো রাতে একটা মেয়েকে একা রাস্তায় ছেড়ে দিতে তার নিজেরও বিবেকে আটকাচ্ছিলো।

বাড়ি অবধি এসে অদ্রিজা জোর করেই অর্নবকে বাড়িতে ঢোকায়।তারপর অর্নবকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে নিজে ঘরের ভিতরে যায়।
অর্নব ভেবেছিলো, হয়তো অদ্রিজা ওর বাড়ির লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়।

অতএব চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে ড্রয়িং রুমটা।বেশ সুন্দর ছিমছাম সাজানো।
চারদিকে রুচির ছাপ স্পষ্ট।
অর্নব উঠে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের অয়েল পেন্টিং গুলোতে মনোনিবেশ করে।

হঠাৎ একটা মিষ্টি পারফিউম অর্নবের নাকে আসে।চোখ ঘোরাতেই সামনে অদ্রিজা।
স্লিভলেস পিঙ্ক কালারের ক্রপ টপ আর ব্ল্যাক হট প্যান্টে অদ্রিজা রীতিমতো আকর্ষণীয়া।

‘আমি আসছি’,বলে বেরিয়ে যেতে চাইলে ও অদ্রিজা কফির মাগ হাতে ধরালো অর্নবের।
অর্নব বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে গরম কফিতেই চুমুক দিতে থাকে।কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলোনা।

অদ্রিজার সারা শরীর তখন কাম জ্বরে উত্তপ্ত।নিঃশ্বাস পরছিলো দ্রুত। দুচোখে অপেক্ষা, কপালে স্বেদ বিন্দু।হঠাৎই অর্নবের হাতের আধ খাওয়া কফির মাগটা টেনে ছুড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে।তারপর জোর করে অর্নবের মাথাটা টেনে নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরলো।

ঘটনার আকষ্মিকতায় স্তম্ভিত অর্নব।অদ্রিজা এলোপাথাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকলো অর্নবকে।সত্যি বলতে কি,অদ্রিজাকে ঠেলে সরাবার শক্তি পর্যন্ত পাচ্ছিলোনা অর্নব।ভেতরে ভেতরে সে দুর্বল হয়ে পরছিলো অদ্রিজার প্রতি।

তবুও একবার শেষ চেষ্টা করলো অর্নব,এক ধাক্কায় অদ্রিজাকে সরিয়ে নিজেকে সামলাতে। কিন্তু অদ্রিজা দ্রুত নিজের অবশিষ্ট লজ্জা আবরণ ছুড়ে ফেলে দিলো।

কিভাবে পাতাল প্রবেশ করে পুরুষ সেটা জানবার তার প্রবল আকাঙ্খা!
শান্ত নদীতে অশান্ত সব ঢেউ তুলে নিমেষে অর্নবকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো অদ্রিজা।

করুনার কাছ থেকে যে ভালোবাসার উন্মাদনা চাইতো,সেটাই যেন অদ্রিজার রুপে ফিরে পেলো অর্নব।
সাময়িক ভাবে একটা অপরাধ বোধের অস্বস্তি কাজ করলেও সেটা কাটিয়ে ফেলতে দেরি হয়নি অর্নবের।

তাই তো প্রতিদিনই অফিস থেকে বাড়ি ফিরবার আগে উপভোগ করে নিতো জীবন।
যদিও লুকোচুরি খেলাটা বেশিদিন চলেনি।

করুনা জেনে যাওয়ায় এক রকম খুশিই হয়েছিলো অর্নব।সবাইকে ছেড়ে ভালো থাকার উদ্দেশ্যে অদ্রিজার সাথে রেজেস্ট্রি ম্যারেজ সেরে নিয়ে নতুন ভাবে সংসার পেতেছিলো।

অর্নবের এক উকিল বন্ধু অর্নবকে বলেছিলো,করুনার সাথে রেজেস্ট্রি ম্যারেজ না হলেও করুনা চাইলেই আইনের পথ ধরতে পারবে।কেননা রেশন কার্ড,ভোটার কার্ড সব জায়াগাতেই করুনার স্বামী আর শিখা, বহ্নির বাবার জায়গায় অর্নবের নামই জ্বলজ্বল করছে।

ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পরেছিলো অর্নব।
যদিও করুনা আইনের পথে হাঁটেনি।
এককথায় ওর দিকে আর ফিরেও তাকায়নি।
তাকাবেই বা কেন,যার হাত ধরে নিজের ঘরের সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছিলো,সে যদি অন্যের সাথে ব্যক্তিগত সময় কাটায় সেখানে ভালোবাসার জায়গায় চরম নিস্পৃহতাই কাজ করে।

ভালোবাসার উল্টো পিঠে থাকে ঘৃনা,হয়তো সব জেনে যাওয়ার পর থেকে করুনা ঘৃণাই করে অর্নবকে।

তবে কিছুদিনের মধ্যেই অর্নব বুঝতে পেরেছিলো মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছে। অদ্রিজা মোটেও সংসারী মেয়ে নয়।একটু যেন বেশিই স্বাধীনচেতা।

তাছাড়া যত দিন যাচ্ছিলো,কেমন যেন ছাড়া ছাড়া ভাব চলে এসেছিলো অদ্রিজার মধ্যে। ভালো মুখে কোনো কথার উত্তর পর্যন্ত দিতোনা।অর্নবের ছোঁয়া ও পছন্দ করতোনা।

সারাক্ষণই একটা বিরক্ত ভাব অদ্রিজার মধ্যে।বয়েসের ফারাক টা যে ধীরে ধীরে দুজনের কমিউনিকেশনে বাঁধা সৃষ্টি করছিলো,সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো অর্নব।

এই ভাবেই হয়তো কাটিয়ে যেতে হবে বাকি জীবনটা। নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দেয় অর্নব।

রান্নাঘরে গিয়ে পিছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরলো পল্লব।’কি হলো রে?হঠাৎ রান্নাঘরে?কিছু খাবি নাকি?খিদে পেয়েছে?’,মায়ের কথায় হেসে ফেললো পল্লব।বললো,’খিদে পাওয়ার কি উপায় আছে মা?খিদে পাওয়ার আগেই তো পেট ভরিয়ে দাও তুমি’,আসলে ভাবছি কাল কাঁথি যাবো, ফুলমানির বাড়িতে,তুমি যাবে মা?।

সীমা অবাক হয়ে বললো,’তা হঠাৎ ফুলের বাড়ি যেতে চাইছিস কেন?এই যে সেদিন বললি,তোর দম ফেলবার ফুরসত নেই,এতো কাজের প্রেসার!’,।

পল্লব মাকে ছেড়ে এবার চেয়ারটা টেনে বসলো।বললো,’আচ্ছা মা তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো গো?’,হেসে ফেলে সীমা বলে,’আসল কথাতে আয়।কি হয়েছে পরিস্কার করে বল’।

‘ভালোবেসে ফেলেছি মা,ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই ওকে।আমার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে পারবে না মা?’,পল্লবের কথাতে হকচকিয়ে যায় সীমা।

বললো,’সেসব তো পরের কথা।আগে বল, ‘মেয়েটি কে?কাঁথিতে থাকে সেটা তো বুঝেছি।টাইটেল কি?কেমন বংশ?জানিস তো তোর বাবাকে।সব ঠিক না থাকলে বিয়ে দেবেনা’।

পল্লব বলে,’কিচ্ছু জানিনা মা।শুধু জানি বিয়ে করলে একমাত্র ওকেই বিয়ে করবো’,পল্লব উঠে মায়ের কাঁধে হাত দিয়ে মাকে নিজের দিকে ফেরিয়ে বললো,’বিশ্বাস করো মা,ওর নাম পর্যন্ত জানিনা।কথা বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমায় দেখে ভয়ে দৌড়োতে শুরু করেছিলো।তাই আর কথা বলা হয়নি’।

সীমা বললো,’সেকিরে তোকে ভয় পেলো কেন?’,পল্লব বললো,’সে কি করে জানবো কেন ভয় পেলো!তবে সত্যিই কিছু জানিনা মেয়েটার সম্পর্কে। শুধু জানি,আই লাভ হার,বাঁচবো না ওকে হারালে।তুমি বাবাকে পরে বুঝিয়ে যা হোক ভাবে ম্যানেজ কোরো’।

সীমা বললো,’তাহলে পিউকে নিয়ে যাস,ও বেচারির কিছু করার নেই এখন।সারাদিন ঘরে থেকে,বিরহের গান গেয়ে আমার কানের পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছে’,একসাথে হেসে উঠলো মা -ছেলে।

পিউয়ের মোটেও ইচ্ছে করছে না কাঁথি যেতে।কিন্তু মা দাদাভাই এর সাথে পাঠিয়েই ছাড়বে ওকে।দুম দাম পা ফেলে ঘরে এসে ব্যাগ গোছাতে বসলো পিউ।কতো ভালো ভালো জায়গা আছে ঘোরবার।না সেসব জায়গায় নয়।কোথায় যাবে,নাকি কাঁথিতে।মুখটা বেঁকিয়ে ভেঙচি কাটলো দাদার উদ্দেশ্যে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here