#অশান্ত বসন্ত।
(অষ্টাদশ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
(প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
*********************
পল্লবকে দেখেই বহ্নি এগিয়ে এসে ওর হাত দুটো ধরে।বহ্নির চোখ দুটো ছলছল করছে।এক রাতেই চেহারা যেন অর্ধেক হয়ে গেছে মেয়েটার।পল্লব বললো,’মনের জোর হারালে চলবে?মনের জোরটাই কিন্তু পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করবার একমাত্র হাতিয়ার’।পল্লবের কথায় একটু যেন ভরসা পায় বহ্নি।নিজেই চোখটা মোছে।পল্লব বলে,’আলাপ করিয়ে দিচ্ছি,ও পিউ, আমার একমাত্র আদরের বোন।আজকেই মা বাবার সাথে ব্যাঙ্গালোরে এসেছে নিজের বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে’।
পিউ রেগে গিয়ে বলে,’দাদাভাই ভালো হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।আমি মোটেও বিয়ে করতে চাইছিনা’,তারপর বহ্নিকে ভালো করে দেখে বলে,’আরে দাদাভাই একেই সেই ফুলমানির বাড়িতে দেখেছিলাম না?’,পল্লব মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই পিউ হেসে বলে ওঠে,’এখন আর চড় মারে নাতো তোকে?’,পিউয়ের কথায় লজ্জা পেয়ে যায় বহ্নি,আর পল্লব হেসে ওঠে বোনুর দুষ্টুমিতে।
‘১২০ নম্বর বেডের পেশেন্টের বাড়ির লোক শিগগিরই হলে এসে দেখা করুন’,কথাটা কানে যেতেই কেঁপে উঠলো বহ্নি।পল্লব বহ্নির হাত ধরে হলের দিকে এগোলো।একটি অল্প বয়েসী নার্স এগিয়ে এসে বলে, ‘১২০ নম্বর বেডের পেশেন্ট পার্টি?’,মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই বলেন,পেশেন্ট
ওটির জন্য রেডি করতে দিচ্ছেন না,ভীষণ রকম হাইপার হয়ে যাচ্ছেন।কাইন্ডলি একজন আসুন’।
বহ্নি এগিয়ে যায়।তারপর নার্সের পিছন পিছন গিয়ে লিফটে ওঠে।নার্সটি জিজ্ঞেস করেন,’পেশেন্ট কে হয় আপনার?’,বহ্নি বলে,’আমার দিদিয়া’।
‘উনি কিছুতেই ওটি ড্রেস পরাতে দিচ্ছেন না,এদিকে টাইমে রেডি না করে দিলে স্যার আমাদের ওপরই রাগারাগি করবেন’,নার্সের কথায় বহ্নি বলে,’আসলে দিদিয়া বাইরের জগতে বের হয়না তো, আর হসপিটালের পরিবেশের সাথে তো আরোই অপরিচিত’।
বহ্নি বেডের কাছে যেতেই শিখা আঁকড়ে ধরলো বহ্নিকে।বহ্নিও পরম মমতায় শিখার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।একটু শান্ত হওয়ার পর বহ্নি নার্সটিকে রেডি করিয়ে দিতে বললো।এবার নার্সটি এগিয়ে এসে শিখার চুল আঁচড়ে দুটো বেনী করে দিয়ে,ওটি ড্রেস পরিয়ে দিলো।বহ্নি হাত ধরে থাকায় শিখা আর কোনো আপত্তি করেনি।নার্সটি বহ্নিকে বললো,’একটু বাদেই ওটি বয়রা এসে স্ট্রেচারে করে এসে পেশেন্ট কে ওটিতে নিয়ে যাবে।কাইন্ডলি ততোক্ষণ আপনি পাশে থাকুন’।
বহ্নি এবার শিখার বেডের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে।বহ্নির দুচোখের জল আর বাঁধ মানছেনা।মনে মনে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,’মা মাগো তুমি তোমার শিখার পাশে ঢাল হয়ে থেকো।ওকে যেন কোনো বিপদ ছুঁতে না পারে।পাথরের ভগবান নয়,তুমি বেঁচে থাকতেও আমার কাছে তুমিই আরাধ্যা ছিলে।সব কাজের আগে বরাবর তোমাকে স্মরণ করেছি,এখনো করছি।তুমি দিদিয়াকে সুস্থ করে দাও মা,স্বাভাবিক করে দাও’।
এর মাঝেই নার্সটি এসে বিপি চেক করে যায়।সেলাইন এর চ্যানেল করা হাতটা দেখিয়ে শিখা ইশারায় বহ্নিকে বোঝায় হাতটা ব্যথা।বহ্নি নার্সটিকে কথাটা জানাতে তিনি একটি থম্বোফোব জেলের টিউব এনে হাতে লাগিয়ে দেন।আর বহ্নিকে বলে একটা থম্বোফোব জেলের টিউব এনে জমা দিয়ে যেতে,কারন বেশ কয়েকদিন চ্যানেল করা থাকবে।এর ভিতর দিয়ে ইঞ্জেকশন ও চলবে।বহ্নি মাথা নাড়িয়ে জানায় ও এনে দেবে।
বহ্নি এবার ইশারায় শিখাকে বোঝাবার চেষ্টা করে, অপারেশন এর পর শিখার মুখ থেকে আর লালা পরবে না।শিখা কথাও বলতে পারবে,হাসতে পারবে মন খুলে।শিখা কি বুঝলো কে জানে,কিন্তু ফ্যালফ্যাল অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো বহ্নির দিকে,ওর চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পরতে থাকে।
‘একটু উঠে সাইডে গিয়ে দাঁড়ান,পেশেন্টকে ওটিতে নিয়ে যাবো’,কথাটা কানে যেতেই বহ্নি সরে দাঁড়ায়। দুজন ওটি বয় শিখাকে স্ট্রেচারে তুলে ওটির দিকে নিয়ে যায়।যাওয়ার আগে শিখার হাতে চাপ দিয়ে বহ্নি বোঝাবার চেষ্টা করে যে কোনো ভয় নেই,ও ওর দিদয়ার সাথেই আছে।
ওটি রুম বন্ধ হোতেই কান্নায় ভেঙে পরে বহ্নি।একজন নার্স এসে বলেন,’প্লিজ এখানে একদম কান্নাকাটি নয়,প্রে করুন গডকে,এভরিথিং উইল বি অলরাইট’,বহ্নি চোখ বুজে নিজের মায়ের চেহারা সামনে এনে প্রার্থনা শুরু করে।ততোক্ষনে পল্লব আর পিউ বহ্নির দুপাশে বসে,বহ্নির হাত নিজেদের হাতের মুঠোতে আবদ্ধ রেখে দিয়ে বোঝায়,বহ্নি একা নয়,ওর লড়াইয়ে ওরা ও সামিল।
(চলবে)