অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ৩০

0
465

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

৩০.

একটি তরতাজা প্রাণে স্পন্দন জাগানো ভোর। সতেজ আলোয় ভরে গেছে আঙিনা। নন্দার চোখে-মুখে ভোরের সূর্য চুম্বন এঁকে দিচ্ছে প্রেমিক বেশে। বেশ আদুরে চুম্বন। মিষ্টি মুখের চারপাশে যেন পাঁকা আমের রঙ মাখিয়ে দিয়েছে সূর্য। নন্দার ঘুম হালকা হলো। ভারী চোখের পাতা টেনে জেগে উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু মাথা ব্যাথার নিবিড় অস্বস্তি তার শরীরে কেমন মেজমেজে অনুভূতি দিল। শরীরে কোনো বল পেল না জেগে উঠার জন্য। মৃদু স্বরে ‘আহ্’ করে উঠতেই কোথা থেকে যেন একটি ভরসার বলিষ্ঠ হাত এগিয়ে এলো, ভরসা হলো নন্দার টলতে থাকা শরীরে। শক্ত-পোক্ত হাতটা নন্দাকে যত্ন করে বসিয়ে দিল। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“আমার সানশাইনের ঘুম হইয়াছে তো?”

নন্দা আধো ঘুম, আধো জাগরণের চোখে চাইল, ঘাড় ব্যাথাও অনুভব করতে পারছে মৃদু। কণ্ঠ বসে এসেছে। তবুও ক্ষীণ স্বরে জানাল,
“হয়েছে।”

“অবশেষে সানশাইন মানলো, সে আমার?”

স্টিফেনের ঠোঁট জুড়ে অগণিত হাসির রেখা উলোটপালোট হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নন্দাও কিছুটা থতমত খেলো সেই কথায়। মুখ ঘুরিয়ে দৃষ্টি ফেরালো জানালার দিকে। স্টিফেন এগিয়ে এলো, আলতো হাতে নন্দার কপাল স্পর্শ করল। আজ নন্দা সরে গেলো না কিংবা প্রতিবাদও করল না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কেবল বসে রইল। স্টিফেন তাপমাত্রা পরিমাপ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলল,
“জ্বর নেই। সুস্থ হয়ে গিয়াছ।”

নন্দা এবারও কিছু বলল না। স্টিফেন তা দেখে স্মিত হাসল। নন্দার চুলের ভাঁজে স্নেহের স্পর্শ করে বলল,
“দ্রুত সুস্থ হইয়া উঠিও, সানশাইন। আগুনের তেজ না থাকিলে যে মোটেও ভালো লাগিতেছে না।”

“অতি তেজে কিন্তু ছাই হয়ে যায় সব, জানেন তো?”

নন্দার অসুস্থ কণ্ঠস্বরে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন। স্টিফেনের হাত আগের মতনই চুলের ভাঁজে স্নেহের স্পর্শ দিতে ব্যস্ত। সেই কাজেই সে মগ্ন হয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল,
“আবার অনেককিছু পুড়িয়া খাঁটিও হয়। তুমি কেনো আমাকে ছাই ই করিতে চাও? খাঁটি করিয়া নাহয় নিজের কাছেই রাখিয়া দিতে। কি এমন বড়ো ক্ষতি হইয়া যাইবে, সানশাইন? তোমাকে ধরিয়া কেহ যদি বাঁচিতে চায় তাহলে দোষ কোথায়?”

নন্দার শক্ত চোখের ভারী পল্লব যুগলে অশ্রুর ভার৷ কিঞ্চিৎ কেঁপেও উঠলো বোধহয় খুব গোপনে। কিন্তু তা অগোচরেই রইল স্টিফেনের।

স্টিফেন মিঠে স্বরে তাড়া দিল,
“উঠিয়া পরো, সূর্য জাগিয়া যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর সকল শুভ শক্তি জাগিয়া ওঠে। তবে আমার সানশাইন কেন জাগিবে না শুনি?”

ভালোবাসার তৃষ্ণায় এতদিন হাহাকার করতে থাকা নন্দা হুট করে এত ভালোবাসা পেয়ে যেন খেঁই হারাল। আনমনে বলল,
“ব্যাথা পাবেন জেনেও কেন বুক পেতে দিচ্ছেন?”

“প্রেমের বিষে মরিলে কইন্যা, হয়তো দেহ মরিবে তবে আত্মা বাঁচিয়া থাকিবে। মরিয়াও শান্তি, প্রেমের জ্বালা যে বড়ো জ্বালা গো, সাহেব বধূ, সহে না আমার এই অন্তরে।”

স্টিফেনের কথায় নন্দার শরীরের লোমকূপ যেন কেঁপে উঠল। ভালোবাসায় শিহরিত হয়ে গেল যেন শরীরের সকল অঙ্গ গুলো।

_

মায়াপুরী গ্রামের পাশেই রয়েছে বিশাল একটি বিল। সুন্দর, স্বচ্ছ বিলের জল। লোকে তাকে ‘রূপসী দিঘি’ বলেই ডাকে এবং প্রতি পূর্নিমার রাতে এই বিলে একদল কিশোরী স্নান করতে নামে। গ্রামের লোক বিশ্বাস করে যে- এই রূপসী বিলে যখন পূর্নিমার চাঁদের আলো এসে পড়ে, তখন যদি এই বিলে স্নান করা যায় তবে নারীর শরীরের রঙ উজ্জ্বল হয়। নন্দা জানতো না এই অদ্ভুত নিয়ম-নীতির কথা। আজ জেনেছে। কারণ তাদের বাড়ির বেশিরভাগ নারী গৃহ ভৃত্যরা ছুটি নিয়েছে। সকলের একসাথে ছুটি নেওয়ার কারণ জানতে চাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতেই এমন চাঞ্চল্যকর একটি গল্প জানতে পারল সে। নিজের আগ্রহ, কৌতূহলকে দমিয়ে রাখতে না পেরেই সে সারাদিন অপেক্ষা করেছে আজকের পূর্নিমার রাতের জন্য। এমনকি সে তাদের একজন পাহারাদারকে শহরে পাঠিয়েছে জরুরী তলবে ললিতাকে গ্রামে আনার জন্য।

সন্ধ্যা হতেই ললিতা এসে পৌঁছালো নন্দাদের বাড়িতে। সেই চিরপরিচিত পোশাক পরিহিতা হাস্যোজ্জ্বল নারী। শুধু ললিতা আসেনি, সঙ্গে শতাব্দও এসেছে। মহলে প্রবেশ করেই নন্দাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে,
“খালি ললিতাই তোমার বন্ধু হলো? আমি বুঝি কেউ না! এতটা পর ভাবলে আমাকে?”

নন্দা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলেও আপ্রাণ চেষ্টা করে শতাব্দের কথাকে ভুল বলে ঘোষণা করল। তা নিয়ে কিছুক্ষণ হাসি-ঠাট্টাও হলো তাদের। স্টিফেন বাড়িতে নেই। বেশিরভাগ সময়ই সে বাড়িতে থাকে না। তবে অ্যালেন বাড়িতে ছিল। এবং আপ্রাণ চেষ্টা করেছে অতিথিদের আথিতেয়তায় যেন ত্রুটি নাহয় সেটার জন্য।

পূর্বের আকাশে সূর্যের ঈষৎ থেকে ঈষৎ চিহ্ন মিলিয়ে যেতেই আবহাওয়া শীতল হয়ে এলো। সুপারির বন হেলে পড়ল পরম আয়েশে। বাতাসে তখন মৃদুমন্দ আহ্লাদের আবরণ। নন্দা তার শাশুড়ীকেও যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিল। কিন্তু ভদ্রমহিলা গেলেন না। বরং বেশ আন্তরিকতার সাথেই পুত্রবধূর ঝামেলা বিহীন যাত্রার ব্যবস্থা করে দিলেন। নন্দা খুশি হলো। রওনা দিল রূপসী দিঘির পাড়ে।

চারদিকের মশালের আলোয় অন্ধকার গুটিয়ে নিয়েছে নিজের আঁধার। হলুদ আভায় চারপাশ যেন ঝলমল করে উঠছে। ঢাক বাজছে বিরতিহীন ভাবে। নন্দাদের গাড়ি এসে থামল বিলের কিছুটা দূরে। নন্দার পড়নে লাল টকটকে মসলিন শাড়ি। জড়োয়া গহনায় রূপ বেড়েছে দ্বিগুণ, তিনগুণ অথবা বলা যায় চারগুণ। তাদের সাথে সাহেবদের কিছু দেহরক্ষী এবং অ্যালেনও এসেছে। গ্রামের মানুষ দ্রুত জায়গা করে দিল নন্দাদেরকে প্রবেশ করার।

গ্রামবাসী সকলে হৈচৈ আর আনন্দ উন্মাদনায় একাকার। বিভিন্ন ধরণের গান নাচে চারপাশ মুখরিত। নন্দারাও সেই অনুষ্ঠানে বেশ আগ্রহ নিয়েই অংশগ্রহণ করেছে। কুমারী মেয়েরা দিঘির জলে নেমে স্নান করছে। আবার গঙ্গাপূজাও হচ্ছে। অনুষ্ঠান যখন জমে উঠেছে তখন কিছুটা দূর থেকেই চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এলো আবছা ভাবে। গ্রামবাসীরা তেমন একটা গুরুত্ব দিল না সেই শব্দে। যেন তারা জানেই কিসের চিৎকার। কিন্তু তা সন্দেহের ঠেকল নন্দার কাছে। সে উঠে দাঁড়াল। দেহরক্ষীর মাঝে একজনাে ডাকও দিল,
“রামু দা, কিসের চিৎকার এটা?”

রামু নামক লোকটা কিয়ৎক্ষণ আমতা-আমতা করে উত্তর দিল,
“হয়তো কারো স্বামী মারা গিয়েছে, সাহেব বধূ।”

নন্দা ভ্রু কুঁচকালো। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিজস্ব অতীত, নিজস্ব ব্যাথা। এইতো স্রোতের তালে ভেসে যাওয়া কিছু মাস আগে, এই আর্তনাদ তো তার কণ্ঠেও ছিল। একটু বাঁচতে চাওয়ার আর্তনাদ, একটু উড়তে চাওয়ার আর্তনাদ। অথচ তাকে কেউ বাঁচতে দিতে চায়নি, উড়তে দিতে চায়নি। তার শখের চুল গুলোও মানুষের স্বার্থপরতায় হারাতে হয়েছিল। প্রিয় রঙ লাল, জীবন থেকে মুছে ফেলতে হয়েছিল। এমনকি চরিত্রহীনার তকমাও শরীরে মেখে নিজের প্রিয় গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। এই আর্তনাদের ভাষা যে তার জানা। বড়ো ভয়ঙ্কর সে ভাষা।

নন্দা আর স্থির থাকতে পারল না। মুহূর্তেই বলল,
” আমি যাব সেখানে। নিয়ে চলুন আমাকে।”

ললিতাও সাঁই দিলো। রামু নামক লোকটা তখন বিলের বিপরীত দিকে থাকা শ্মশানটার দিকে তাদের নিয়ে গেলেন।

বিলের একদিকে আনন্দ অনুষ্ঠানে রমরমা ঠিক অপরদিকে বিষাদের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে এক নারী। নন্দা আসতেই দেখল তার বয়সী একটা নারীর সদ্য স্বামী মারা গিয়েছে। সেই মেয়েটার মৃত স্বামীর সাথে তাকেও দাহ্য করা হবে বলে মেয়েটা এমন চিৎকার করেছে। মেয়েটাকে লাল টকটকে একটি বেনারসি শাড়ি পড়ানো হয়েছে। নববধূর সাজে সজ্জিত করানো হয়েছে। নন্দা ভালো করে খেয়াল করতেই দেখল, মেয়েটা আর কেউ না, তার সহপাঠী প্রতিমা। যে একদিন নন্দার সাথে পরীক্ষা দিতে বসতে চায়নি একমাত্র নন্দার স্বামী মারা গিয়েছিল এবং তার অশৌচ পালন না করেই পরীক্ষা দিতে চলে গিয়েছিল বলে। প্রতিমার চোখ মুখে ভীতি, আকুতি। বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছায় মেয়েটা চিৎকার করছে। কিন্তু কেউ গ্রাহ্য করছে না সেটা।

প্রথম কথা বলল ললিতাই,
“এই এই, আপনারা কী করছেন?”

পুরোহিতসহ আরো কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোক সেখানে উপস্থিত ছিল। ললিতার কথায় তারা ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল। যেই-না নন্দা, অ্যালেনকে দেখলে তারা থতমত খেয়ে গেলো। ব্যস্ত হয়ে পড়ল সমাদারে,
” সাহেব বধূ, সাহেব আপনারা! আপনারা এখানে এসেছেন যে? কোনো প্রয়োজন?”

“কী করিতেছেন আপোনারা?”

অ্যালেনের কণ্ঠেও একই প্রশ্ন শুনে তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। কারণ নন্দার সাথে ঘটা ঘটনা তাদের অগোচরে নেই। এসব যে ইংরেজি সাহেবরা পছন্দ করেন না তাও তাদের অবগত। তাই একজন বয়োজ্যেষ্ঠ চতুরতার সাথে উত্তর দিল,
“আমাদের পুত্র মারা গিয়েছে। আর পুত্রবধূ তার স্বামীর সাথে এক চিতাতেই উঠতে চাচ্ছে। সেটারই আয়োজন করেছি।”

“কীহ্!”

ললিতা কথা বলার সাথে সাথেই প্রতিমা চিৎকার শুরু করল। বার বার মিনতি করে বলছে,
“না, না। আমি মরতে চাই না। আপনারা বাঁচান আমাকে।”

ললিতার আর বুঝতে বাকি রইল না যে তাদের ভুল বুঝানোর চেষ্টা করছে লোক গুলো। যেই না সে প্রতিমাকে ধরার জন্য এগিয়ে গেল তৎক্ষনাৎ একজন লোক হুঙ্কার দিয়ে উঠল,
“একদম আসবেন না। ওকে আমাদের ছেলেদের সাথে দাহ্য করা হবে। আপনারা আপনাদের কাজ করুন।”

ললিতা থামল না। বরং আরও দ্রুত গিয়ে প্রতিমার বাহুতে শক্ত করে ধরল। কঠোর স্বরে বলল,
“কীভাবে আপনারা ওকে দাহ্য করেন আমিও দেখবো।”

লোকগুলো মুহূর্তেই রেগে গেল। ললিতার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই শোনা গেল নন্দার বজ্রকণ্ঠ,
“একদম ওদের গায়ে হাত দিবেন না কেউ। না হয় আপনাদের সাথে কী হতে পারে আপনারা ভাবতেও পারেন না।”

লোকগুলো আর আগানোর সাহস পেলো না। তবে আমতাআমতা করে বলল,
“সাহেব বধূ, আপনি এসবে না এলেই ভালো হয়। আপনি নিজেই কত অনাসৃষ্টি করেছেন তা আমাদের অজানা নয়।”

কথাটা যেন বড়ো আঘাত দিল নন্দার সুপ্ত হৃদয়ে। কী এক বিশ্রী ইঙ্গিত ছিল সেই কথার আড়ালে! নন্দার গা ঘিন ঘিন করে উঠল। অ্যালেন হুঙ্কার দিতে উদ্যত হতেই তাকে থামিয়ে দিল নন্দা। কানের মাঝে প্রতিধ্বনিত হলো স্টিফেনের বলা কিছু কথা। ‘সব জায়গায় রানীর মতন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে যেন সে কঠোর দৃঢ়তা দেখে পাহাড়ও মাথা নামাতে বাধ্য হয়’- আজ নন্দার সেই কথা রাখার দিন। নন্দা সকলের অগোচরেই দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলল। অতঃপর তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“আমি অনাসৃষ্টি করেছি? তা কোন অনাসৃষ্টির কথা বলছেন? আমার বাঁচতে চাওয়াই কী অনাসৃষ্টি? বৈধব্য তো কোনো রোগ কিংবা অপরাধ নয়, তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি পেতে হবে? মারা তো গেছে ওর স্বামী তবে কেন ওরে পুড়তে হবে? ও কী এমন ক্ষতি করেছে সমাজের যে ওর বেঁচে থাকা কেঁড়ে নিবেন?”

“বিধবা মেয়ে বেঁচে থাকলেই অন্য পুরুষদের মাথা ঘুরাবে রূপ দিয়ে। সমাজে পাপ তৈরী হবে।”

“তাহলে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর স্বামীকে কেন মেরে ফেলা হয় না? পাপ কী তবে মেয়েরাই সৃষ্টি করে? ছেলেরা কী চির পূর্ন বান? হাহ্! অথচ শাস্ত্র নারীকে দেবীর স্থানে বসিয়েছে, ধর্ম বলেছে নারী ছাড়া উদ্ধার নাই, সংসার বলেছে নারীই মাতা। আর নিছক মানুষ হয়ে কি-না আপনারা নারীকেই কোনঠাসা করছেন! বড়োই হাস্যকর।”

পুষ্পকাননের কোল ঘেঁষে বৈরী সমীরণ ছুঁয়ে দিচ্ছে মানবদেহ অথচ সুচালো অনুশোচনা ছুঁতে পারেনি ঘূণেধরা মস্তিষ্ক গুলো। উন্মাদ মস্তিষ্কের মানুষ গুলো দীর্ঘ কুসংস্কারে আবৃত জীবনে যেন বেশ মানিয়ে নিয়েছে নিজেদের। সেই জীবন ছেড়ে তারা বেরিয়ে আসতে চায় না যার ফলস্বরূপ নন্দার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর গুলোও তাদের কাছে কেবল আর কেবল মাত্র নারীদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বলে বোধ হলো। আর তারা সেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির বিপরীতে সচেতন মানুষ হয়ে প্রতিবাদ করা কোনো ভাস্কর্য। নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবনায় আঘাত করার জন্য নন্দার উপর ক্ষ্যাপে গেল সকলে। তাদের মাঝে একজন বলল,
“আপনি এত কথা বলছেন, লজ্জা করেনা সাহেব বধূ? আপনার রাত কাটানোর ঘটনা আমরা সকলেই জানি। এই, তোমরা তোমাদের কাজ করো। আমাদের পুত্রবধূর আজই দাহ্য হবে।”

নন্দার তীক্ষ্ণ সত্তায় ধারালো আঁচড় কাটতেই সে হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় রূপ লাভ করল। উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় গর্জন করে অ্যালেনের উদ্দেশ্যে বলল,
“ঠাকুরপো, এখুনিই দারোগা সাহেবদের ডাকান। সতীদাহকে সঠিক বলা প্রত্যেককে যেন কারাগারে বন্দী করা হয় তার ব্যবস্থা করুন। আর পুরো গ্রামে কালই এই বার্তা ছড়িয়ে দিবেন যে, ভুলেও কেউ যদি নিজের বাড়ির বউকে দাহ্য করতে চায় তবে তার শাস্তি কারাগার হবে না, হবে মৃত্যুদন্ড। জনসম্মুখে তাকেই দাহ্য করা হবে। দ্রুত এবার ব্যবস্থা করুন।”

নন্দার নির্দেশ পেতেই সে মোতাবেক কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে অ্যালেন। চারপাশে বাতাসের বেগ বাড়ছে। প্রতিমা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে নন্দাকে। মশালের আগুন জ্বলছে দাউদাউ করে। সকলের চোখে-মুখে ভয়। যুগ বদলের কবিতা তখন ছন্দ তুলতে ব্যস্ত। সুর তুলেছে পরিবর্তনের গান। নারীর হাত ধরে সমাজ বদলানোর গল্প মানুষ হতভম্ব হয়ে দেখছে।

#চলবে

[অনেকদিন পর গল্প লিখাতে মনে হবে খেঁই হারিয়েছে কিন্তু পড়তে পড়তে ঠিক হয়ে যাবে। আর চেষ্টা করবেন ছোটো করে হলেও একটা কমেন্ট করতে যেহেতু পেজের রিচ ডাউন। ভালোবাসা নিবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here