অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ২৯

4
939

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

২৯.

“আমার প্রিয় কৌটায় সোনালী আস্তরণে রয়েছে কত গীতিকাব্য বন্দী।”

এই একটি কথার ছদ্মবেশে নন্দার যেন ঘুম হারাম হয়েছে। লক্ষ্মী দেবীর এই কথাটায় কী বুঝিয়েছে? সে কী নন্দার জন্য কোনো প্রমাণ রেখে গিয়েছে কোথাও? নন্দা এসব ভাবতে ভাবতেই বিহারিণী মহলে উপস্থিত হলো। বাড়িটা আজকাল বড়ো নীরব। আগে লক্ষ্মী দেবীর কণ্ঠ বড়ো রাস্তা থেকেও শোনা যেত অথচ আজ একটি কালো কুচকুচে কাকের কণ্ঠ ছাড়া আর কোনো শব্দই পাওয়া যাচ্ছে না।

নন্দা আলগোছে বাড়িটার পুকুর পাড়ে গিয়ে বসল। গেইটের পাহারাদারকে পাঠালো তরঙ্গিণীকে ডেকে আনার জন্য। এই বাড়িটার পুকুর পাড় সবসময় সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো। অথচ আজ পুকুরে পড়েছে শুকনো পাতার ঢল। চারপাশেও বহু আগাছা পরে আছে। আগাছা গুলেই যেন বলে দিচ্ছে অযত্নের গল্প গুলো। নন্দা ছোটো একটি শ্বাস ফেলল। সে যখন বাড়ির বউ হয়ে এলো তখন এ বাড়ির ভাব, সাজই ছিল অন্যরকম। কোনো রাজপ্রসাদের চেয়ে কম নয় তা। বিলাসিতায় চারপাশ থৈ থৈ করছিল। অথচ আজ সেই চাকচিক্য নেই, বিলাসিতা নেই। দু’দিন পর হয়তো বাড়িটা অন্য কারো হয়ে যাবে।

নন্দার ভাবনার মাঝেই পুকুর পাড়ে উপস্থিত হলো তরঙ্গিণী। পড়ণে তার বরাবরের মতনই হালকা রঙের শাড়ি। বিশাল চুল গুলো কোমড় ছাড়িয়ে গেছে। বাতাসের মৃদু তালে উড়ছে আঁচল। তরঙ্গিণী বোধহয় এই মুহূর্তে এখানে নন্দাকে মোটেও আশা করেনি। তাই তো বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
“আরে! অলকানন্দা যে!”

নন্দা ঘাড় ঘুরিয়ে তরঙ্গিণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। কোমল কণ্ঠে বলল,
“আপনি সুন্দর হয়ে গেছেন যে!”

তরঙ্গিণী হাসল, নন্দার কাছে এসে ঘাটের একদিকে বসে বলল,
“সত্যি নাকি!”

“তিন সত্যি। অন্যরকম সুন্দর লাগছে আপনাকে। কেন বলেন তো?”

“তেমন কিছুই নয়। তুমি হুট করে দেখেছো তাই এমন লাগছে। তা আছো কেমন?”

“আছি ভালো। আপনি ভালো আছেন?”

“হ্যাঁ ভালো আছি। তা বাড়ির ভেতরে না গিয়ে এখানে বসে আছো যে? ভেতরে চলো।”

তরঙ্গিণীর প্রস্তাবে নন্দা ব্যস্ত কণ্ঠে প্রত্যাখ্যান করে বলল,
“না, বাড়ির ভেতরে যাবো না। আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”

তরঙ্গিণী নন্দার কথায় ভ্রু কুঁচকালো। অবাক কণ্ঠে বলল,
“আমার সাথে! কী কথা, বলো?”

“এই বাড়ির নাম ‘বিহারিণী মহল’ কবে রাখে হয়, জানেন আপনি?”

তরঙ্গিণী কপাল কুঁচকে ফেলল নন্দার প্রশ্নে। নন্দা খেয়াল করল তরঙ্গিণীর মুখভঙ্গি আলাদা রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। নন্দার মনে খটকা লাগে। সে আবার শুধাল,
“আপনি জানেন নিশ্চয়। একটু বলবেন দয়া করে?”

“হুট করে এই প্রশ্ন কেন করছ?”

“একটু প্রয়োজনেই করেছি। আপনি বলুন না, দয়া করে।”

তরঙ্গিণী মুখ ঘুরিয়ে ফেলল, শক্ত কণ্ঠে জবাব দিল,
“আমি জানিনা।”

“অথচ আপনার মুখ বলছে, আপনি জানেন।”

তরঙ্গিণী তপ্ত শ্বাস ফেলল। তার দীর্ঘশ্বাসে যেন ভারী হলো প্রকৃতি। অস্বাভাবিক রকমের শীতল কণ্ঠে সে বলল,
“আজ থেকে ছয় বছর আগে কোনো এক জৈষ্ঠ্যমাসে, এই বাড়ির লোহার গেইটের পাশে মার্বেল পাথরে খোদাই করে একজন পুরুষ অনেক ভালোবেসে বাড়ির নাম রেখেছিল বিহারিণী মহল।”

নন্দার চোখে-মুখে সন্দেহের ভাব৷ সে সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
“পুরুষ! কে সে?”

“শুনলে কষ্ট পাবে না তো? কিছু জিনিস অজানা থাকাই ভালো নয় কি?”

তরঙ্গিণীর কণ্ঠে হেয়ালি আর কেমন যেন রহস্য। নন্দা আগ্রহী স্বরে বলল,
“সত্যি জানতে কষ্ট কিসের? আর সত্য সর্বদাই সুন্দর হয় তাভ তাকে সুন্দর ভাবেই মেনে নেওয়া সকলের কর্তব্য।”

“সকল সত্যি সুন্দর নাও হতে পারে।”

“তবুও আমি শুনবো, বলুন। কোন পুরুষ এ নাম রেখেছিল আর কেনই বা রেখেছিল?”

তরঙ্গিণী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, অতঃপর রাশভারি কণ্ঠে বলল,
“সুদর্শন, তোমার স্বামী রেখেছিল এই নাম।”

নন্দার চোখে-মুখে বিস্ফোরিত বিস্ময়। অস্ফুটস্বরে বলল, “কী!”

“হ্যাঁ। যা শুনেছো সেটাই বললাম। কেন এই নাম, কিসের জন্য এই নাম এতকিছু জানিনা। কেবল এতটুকু বলবো, এই নামের মানুষ একজন বিশ্বাসঘাতক।”

নন্দা আরও প্রশ্ন করতো কিন্তু তরঙ্গিণীর দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিতে সে থমকে গেল। ভূত দেখার মতন চমকেও উঠলে। দপ করে জ্বলে উঠল তার চিত্ত। আশ্চর্যান্বিত হয়ে শুধাল,
“আবারও কারও ঘর ভাঙছেন!”

নন্দার কথা যেন বিদ্যুৎ বেগে পৌঁছে গেল তরঙ্গিণীর কাছে। দু’কদম পিছিয়ে গেল সে। দ্রুত আঁচল ঘুরিয়ে এনে কাঁধ ঢাকল, আমতাআমতা করে বলল,
“অদ্ভুত কথা বলছো, অলকানন্দা।”

“আর সেই অদ্ভুত কথাটা সত্যি, তাই না?”

তরঙ্গিণী চোখ ঘুরিয়ে ফেলল। আশেপাশে তাকিয়ে যেন নিজের দোষ হালকা করতে চাইল। বলল,
“বোকা কথা কেন বলছ!”

“কথা আমি বলিনি, কথা বলেছে আপনার গলায় গাঢ় হয়ে পড়ে থাকা দাগটা। কারো গোপনীয় আদরের চিহ্ন বহন করছে সে দাগ। আবারও ঘর ভাঙছেন! একটি মেয়ের ঘর ভাঙা আর মন্দির ভাঙা সমান, তা কী আপনি জানেন না?”

“তালি তো এক হাতে বাজে না। সেটাও কী তোমার অবগত নয়?”- কথাটি বলেই ক্রুর হাসি হাসল তরঙ্গিণী। চোখে-মুখে তার মোহ রঙ্গ খেলে গেল। তার আকর্ষণীয় মুখমন্ডল জুড়ে কেমন রহস্যের হাসি! অলকানন্দা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাতাশার স্বরে বলল,
“আপনি তো তেনাকে ভালোবাসতেন, কই গেল ভালোবাসা?”

“চিতায়। সে তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে, আমার গতি কী? তোমার আবারও বিয়ে হয়েছে অথচ সকলে তোমাকে প্রথম পরিচয় হিসেবে চেনে সুদর্শনের বউ। অথচ তুমি তাকে ভালোও বাসোনি কখনো। আর আমি এত ভালোবেসে, তার শয্যাসঙ্গী হয়েও কী পেলাম? ‘বে শ্যা’ উপাধি ব্যাতিত? আমার ভালোবাসায় কী খাঁদ ছিল?”

“আমি যদি বলি, আপনার ভালোবাসায় ভালোবাসারই অভাব ছিল, আপনি মানবেন?”

নন্দার প্রশ্নে থেমে গেল তরঙ্গিণী। থেমে গেল তার ক্রুর হাসি, থেমে গেল তার রহস্য। থেমে গেল তার চঞ্চল স্বত্তা। সে বিবশ কণ্ঠে বলল,
“আমার ভালোবাসায় খুঁত ছিল বলছো?”

“কেবল খুঁত নয়, কখনো ভালোবাসতেই পারেননি।”

তরঙ্গিণী শক্ত কথার মানুষ হলেও আজ কোনো জবাব দিলনা বরং খুব নিরবে সে স্থান ত্যাগ করল। নন্দা সেই যাওয়ার পানে তাকিয়ে চুপ করে রইল। যেন খুব মাথা উঁচু করে রাখা গাছটা আজ তুমুল সত্যের ভারে মুখ লুকিয়ে ভেঙে পরেছে। অলকানন্দা হাসল। মানুষ কেন সত্য মানতে পারে না? কেন তারা সত্যকে এত ভয় পায়! বুক চিরে বেরিয়ে এলো তার দীর্ঘশ্বাস। মাথায় আবারও খেলে গেল বিহারিণীর ভাবনা। কেন তরঙ্গিণী বলল বিহারিণী নামের মানুষটা বিশ্বাসঘাতক? আর তার স্বামী সুদর্শনের সাথেই বা কী সম্পর্ক ছিল ঐ বিহারিণীর! প্রশ্নের স্তূপে ভার হলো নন্দার মস্তক।

_

নন্দা দাঁড়িয়ে আছে তার বর্তমান শাশুড়ি মায়ের ঘরে। মহিলা বেশ আনন্দিত মনে তার সাথে গল্প করছে। স্টিফেনের ছোটোবেলার গল্প। নন্দা চুপ করে সবটাই শুনছে। কাদম্বরী দেবী কত উৎফুল্লতার সাথে নিজের সন্তানের গর্ব করছে! যেন এমন সন্তান পেলে যেকোনো বাবা-মা ই যেন ধন্য হয়ে যাবে। নন্দা হাসল। সারাদিনের ছুটোছুটিতে তার শরীর ক্লান্ত কিছুটা। শরীরের তাপমাত্রাও অসহ্য রকমের বেড়ে যাচ্ছে। কাদম্বরী দেবী কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বললেন,
“জানো নন্দু, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে, আমি নির্দ্বিধায় বলবো- আমার স্টিফেন।”

মহিলার কণ্ঠে পুত্রের যেন গর্ব। নন্দা হেসে, ক্ষীণ স্বরে বলল,
“এতটা ভালোবাসেন আপনার ছেলেকে?”

“ভালোবাসতে হয়, নন্দু। পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে, আমরা যাদের ভালো না বেসে পারিনা। আমার ছেলে তাদের মাঝে একজন।”

“অথচ, আমি কিন্তু আপনার ছেলেকে দিব্যি ভালো না বেসেই আছি।”

নন্দা ভেবেছিল তার এমন একটা কথায় কাদম্বরী দেবীর হাসি হাসি মুখ উবে যাবে, হয়তো নিমিষেই সে রেগে যাবে, নন্দাকে শক্ত কথা বলবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। বরং কাদম্বরী দেবীর হাসি আরও প্রশস্ত হলো। নন্দাকে অবাক করে দিয়ে সেই নারী হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসি বজায় রেখে নন্দার থুতনি ধরে আদুরে কণ্ঠে বললেন,
“কেন ভালোবাসোনি? সে কেন তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়?”

“কারণ আপনার ছেলের নিষ্ঠুরতা বেশি।”

“অথচ আমার ছেলের কোমলতা পুরো পৃথিবী মাত।”

নন্দা ভ্রু কুঁচকালো। বলল, “পৃথিবী মাত! কীভাবে?”

“আমার ছেলেটা অনেকটা বেশিই ভালো। কিন্তু তুমি তখনই দেখবে যখন দেখার দৃষ্টি বদলাবে। প্রতিটা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ যে থাকে, নন্দু। খারাপটা দেখার পর কখনো ভালোটা দেখতে চেয়েছিলে বলো? চাওনি, তাই পাওনি। এই যে অ্যালেন, সে কী হয় আমার স্টিফেনের বলো তো?”

“বন্ধু।”

নন্দাে উত্তরে কাদম্বরী দেবীর হাসির রোল বাড়ল। নন্দার বাহুতে মৃদু চাপর দিয়ে বলল,
“ভুল কথা, মাই গার্ল। তুমি নিশ্চয় জেনেছো আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী আমি? আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী ছিলো যিনি, তার আর তার প্রেমিকের পুত্র কিন্তু অ্যালেন।”

কাদম্বরী দেবীর কথায় বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল নন্দা বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
“কী!”

“হ্যাঁ, শুধু তাই নয়। আমার পুত্র আমার কলঙ্কও মোচন করেছিল। আমি যখন….”

কাদম্বরী দেবী কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনা, তার আগেই ঘরে প্রবেশ করল স্টিফেন। মাকে দেখেই শক্ত পুরুষ মুখে ঝুলিয়েছে মিষ্টি হাসি। স্বচ্ছ কণ্ঠে বলে,
“প্রিয় মা, ভালোবাসি।”

বিদেশি পুরুষের কণ্ঠে কত শ্রুতিমধুর ঠেকে সে বাক্য! যদিও স্টিফেনের নিত্য স্বভাব এটা। কাদম্বরী দেবীও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ছেলের কপালে ‘চাঁদ মামার’ মতন আদুরে চুম্বন এঁকে বললেন,
“আমিও ভালোবাসি, মাই সন।”

কথাটা বলেই তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ঘরে বসে রইল নন্দা। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। শরীরের তাপমাত্রাও যে ধীরে ধীরে বাড়ছে তা আর বলার অপেক্ষা করছে না।

স্টিফেন ভ্রু কুঁচকালো, ঠাট্টার স্বরে বলল,
“বাহ্! আজিকে একজন দেখিতেছি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইতেছে না! সূর্য কোন দিকে তার অস্তিত্ব জানান দিয়াছিল শুনি!”

নন্দা কথা বলল না। চুপ করে বিছানার এক ধারে বসে রইল। স্টিফেন হেলেদুলে এগিয়ে এলো হাসিমুখেই। কিন্তু নন্দার চোখ-মুখ দেখে সে হাসি আর স্থায়ী হলো না। বরং সে ছুটে এলো, বিচলিত কণ্ঠে বলল,
“হেই সানশাইন, হোয়াট হ্যাপেন ডিয়ার? এমন ফ্যাকাসে লাগিতেছে কেন, সুইটহার্ট? কী হইয়াছে তোমার?”

নন্দা কেমন অদ্ভুত ভাবে ভ্রু কুঁচকালো। নন্দার থুঁতনিতে থাকা স্টিফেনের হাতটা কিছুটা বল প্রয়োগ করেই সে ছাড়িয়ে নিতে চাইল, অথচ স্টিফেন তা করতে দিল না। বরং রাশভারি আর চিন্তিত কণ্ঠে ধমক দিয়ে বলল,
“আর কিছু করিবে না, চুপ একদম। তোমার টেম্পারেচার কতটা বাড়িয়া গিয়াছে ধারণা আছে তোমার? এতটা জ্বর বাঁধাইলা কী করিয়া?”

“আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না, সরুন।”

নন্দার জরিয়ে জরিয়ে আসা কণ্ঠের কথা স্টিফেন দূরে না গিয়ে বরং আরও এগিয়ে এলো, শান্ত কণ্ঠে বলল,
“একদম কথা বলিবে না। আমার সানশাইনকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার তোমার নাই।”

অতঃপর নন্দার জ্বর গুরুতর ভাবে বাড়তে শুরু করল এবং থেমে গেল তার বাক্য। ক্লান্ত স্টিফেন পত্নী সেবায় ব্যস্ত হয়ে উঠল ভীষণ। নন্দার শরীর মুছিয়ে দিল, মাথায় দিয়ে দিল জলপট্টি। সাহেবী ডাক্তার ডাকাল। মুহূর্তেই এলাহী কান্ড সব। নন্দা ঘোরগ্রস্ত অবস্থায় সবই দেখল। বুক ফেটে তার কেমন কান্না পেল। বাবা-মায়ের সংসারে তিন মেয়ের মাঝে একটি মেয়ে ছিল সে। বাবা-মায়ের ছেলে ছিলনা বলে ছোটোবেলা থেকেই তারা অবজ্ঞার পাত্রী ছিল। জ্বর এলে যে আহ্লাদ করে কেউ তা তারা কখনো অনুভব করেনি। অথচ আজ! তার অপ্রিয় মানুষটাকে তাকে সুস্থ করার জন্য কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছে! কাদম্বরী দেবী এমনকি অ্যালেনও থেকে থেকে এসে তার খোঁজ নিচ্ছে। স্টিফেন কেবল মরিয়া হয়ে পায়চারী করছে এবং থেমে থেমে বলছে,
“তুমি চিন্তা করিও না, সানশাইন। তুমি দ্রুত সুস্থ হইয়া যাইবে। আমি আছি তো!”

‘আমি আছি তো’- বাক্যটার অভাবে নন্দা জীবনে কতকিছুই করতে পারেনি। অথচ আজ তার ভরসা হয়ে একজন মানুষ আছে। যাকে সে ভালোবাসতে পারছে না। এই ভালো না বাসতে পারার যন্ত্রণা তার ভেতরে ছেয়ে গেলে। কেঁদে উঠল সে অস্ফুটস্বরে। স্টিফেন কান্নার শব্দে ছুটে এলো, ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“কী হইয়াছে, সানশাইন? কষ্ট হইতেছে? কই হইয়াছে, বলিবে তো?”

নন্দা ঠোঁট উল্টে ফেলল, কেমন অসহায় কণ্ঠে বলল,
“আমি কেন আপনাকে ভালোবাসতে পারছি না, ভিনদেশী সাহেব?”

এমন সময়ে নন্দার এমন কথায় স্টিফেন হতভম্ব। অসুস্থ অবস্থায় মানুষের মস্তিস্ক খুব ধীরে কাজ করে। তাই তারা উলটোপালটা বলে। স্টিফেন জানে, তবুও মুচকি হেসে বলল,
“তোমার ভালোবাসিতে হইবে না, সানশাইন। আমাদের সম্পর্কের জন্য, আমার ভালোবাসাই বেশি হইবে। তোমার ভাগের ভালোবাসাও নাহয় আমি বাসিবো। তুমি কেবল আমার হইয়া থাকিও?”

#চলবে

4 COMMENTS

  1. গল্পঃ টা সত্যিই সুন্দর অলকানন্দার চরিত্র টাই সবচেয়ে বেশি মন কাড়া হয়েছে। স্টিফিনের চরিত্রটা অনেকটা রহস্যময় আর বিহারিনী নামটাও যেরকম সুন্দর তার চরিত্রটা হয়েছে অনেকটা রহস্যময়। এই অসাধারণ গল্পটা আমি রোজ রোজ করতে চাই। প্লিজ দয়া করে রোজ রোজ এ গল্পটা দিবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here