অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ২০

0
606

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

২০.

অবিরত ঝরছে বর্ষণ ধারা। বাহিরের মৃদুমন্দ সমীরণে উড়ছে মুক্ত পাখির ন্যায় ঘরের বাতায়ন ঘেষা ভারী, মোটা সুতোর কারুকাজ শোভিত পর্দা গুলো। বাহিরের নিভু সন্ধ্যার সময়ের কিছু অস্বচ্ছ নীলাভ আলো এসে আলিঙ্গন করছে ঘরের বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা অলকানন্দার কোমল, মায়াময়ী মুখটাকে। নীলাভ আলোতেও বোধহয় একটা বিশেষ মায়া জড়ানো আছে, যেটা কারো শরীরে প্রতিচ্ছবি ঘটালে তা আরও আকর্ষিত হয়ে ওঠে।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা চোখে-মুখে লাগতেই অলকানন্দার ঘুম ভেঙে এলো। পায়ের মাঝে করা তীব্র যন্ত্রণাতেও সে হুট করে আরাম বোধ করছে। যা তার ঘুম আরও দ্রুত ভাঙিয়ে দিল। এত তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা হুট করে এত শীতল হয়ে এলো কেন! সাথে সাথে অলকানন্দা চোখ মেলল, আঁধার মায়াময় রুমটাতে তখন নিস্তব্ধতা খেলা করছে। অলকানন্দা নিজের পায়ের কাছটাতে তাকাতেই দেখল কেউ একজন বসে আছে। অলকানন্দা ভ্রু কুঁচকালো, প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“কে?”

সেকেন্ডের মাঝেই ঘরের চারপাশ আলোকিত করে আলো জ্বলে ওঠলো। হলুদ, সাদার মিশেলে কত গুলো আলো। চকচক করে ওঠলো পুরো রুম। অলকানন্দা অপলক দৃষ্টিতে রুমের চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। খুব দামী কোনে পাথর দিয়ে তৈরী করা বাড়িটা। রুমের মাঝেও সাদা ঝলমলে পাথরের ছোঁয়া। মাথার উপর বিরাট বাতি। সে চেনে এটা, এটাকে ঝাড়বাতি বলে। কী ভয়ঙ্কর সুন্দর বাতি! ঘরটাও বিশাল বড়ো। সেখানে বিশাল খাট হতে শুরু করে বই রাখার আলমারি অব্দি সকল জিনিসই অবস্থিত। গোছানো, পরিপাটি কক্ষ। কোথাও খুঁত খোঁজার উপায় নেই। কোথাও ত্রুটি নেই। অলকানন্দা চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে চোখ গেল ঘরের এক পাশে আরাম করে বসে থাকা স্টিফেনের দিকে। অলকানন্দার পায়ের কাছে বসে আছে বউ মতন একটা মেয়ে। সাজ পোশাকে বলছে কর্মচারী। আর ঠিক সেই মেয়েটার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা হাসি হাসি মুখে। অপূর্ব সুন্দর সেই নারীর হাসি তবে নারীর গায়ের রঙ ঠিক ততটাই কুৎসিত। শরীরে খুব দামী শাড়ি জড়ানো। ঢাকাই মসলিন হয়তো। নরম কাপড় গুলো! অলকানন্দা শুনেই এসেছে এ কাপড়ের কথা, একদিন কৃষ্ণা অবশ্য দেখিয়েছিল তাই চিনতে অসুবিধা হয়নি। সেই কালো মতন নারীটি গাঢ় নীল রঙের ঢাকাই মসলিন শরীরে জড়িয়েছেন , সাথে যুক্ত আছে অনেক নামী-দামী গহনা। তার শরীরে জ্বলজ্বল করছে সকল সৌন্দর্যতা। অলকানন্দার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে কোথায় এসেছে! তার কল্পনার দুনিয়া থেকেও বেশি চমৎকার এই বর্তমান। যা অবিশ্বাস্যকর।

অলকানন্দাকে চেয়ে থাকতে দেখে হাসলেন সেই নারী। অলকানন্দার কিছুটা কাছে এসে খুব আদুরে কণ্ঠে বললেন,
“কী দেখছো, নন্দু?”

অলকানন্দা চমকালো এহেন সম্বোধনে। প্রথম দেখায় কেউ এত ভালোবেসে ডাকতে পারে! এই অকল্পনীয় নারীকে না দেখলে বুঝতোই না সে।

“আমাকে ঠিক চিনতে পারছ না, তাই তো?”

মহিলার দ্বিতীয় প্রশ্নে অলকানন্দার ধ্যান ভাঙলো। আমতা-আমতা করে বলল,
“সত্যিই চিনতে পারছি না। দুঃখীত।”

অলকানন্দার নিরীহ স্বীকারোক্তিতে মহিলার ঠোঁটের হাসি আরও প্রশস্ত হলো। সে ইশারা করতেই অলকানন্দার পায়ের কাছে মেঝেতে বসা মেয়েটা ওঠে দাঁড়াল। মেয়েটা জায়গা ছাড়তেই মহিলা আরেকটু এগিয়ে এলো। অলকানন্দার মাথায় খুব যতানে হাত বুলিয়ে মিষ্টি কণ্ঠে বললেন,
“আমি স্টিফেনের মা। তোমারও মা। কেমন?”

অলকানন্দা মহিলার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ স্টিফেনের দিকে তাকাল। লোকটার সাথে এই মহিলার তেমন কোনো মিলই নেই। লোকটার গায়ের রঙ অসম্ভব রকমের ফর্সা। চুল গুলো কালো বাদামির মিশেলে। চোখের মনি’র রঙটা একটু অস্বাভাবিক। কেমন নীলাভ ভাব। আর আচার আচরণে তো আরও বেশি বিপরীত। মহিলার মুখে হাসি লেপ্টানো অথচ স্টিফেন সবসময় থাকে গম্ভীর। কোন দিক দিয়ে লোকটা এই মহিলার ছেলে হলো সে বুঝেই পেল না।

স্টিফেন এবার ওঠে দাঁড়াল। গম্ভীর পুরুষ মানুষ সে, সবসময় তার মুখে একটা নিবিড় গাম্ভীর্যতা লেপ্টেই থাকে। ওঠে অলকানন্দার দিকে তাকিয়ে রাশভারি কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“পায়ের ব্যাথা এখন কী কমেছে? জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তো!”

অলকানন্দা মুখ ভেংচি দিতে গিয়েও নিজেকে সংযত করল। যে মানুষ বিয়ে করে বউকে নিয়ে বাড়ির চৌকাঠ অব্দি এসে দাঁড়ায়নি, সে মানুষের মুখে এমন একটা প্রশ্ন বেমানানই। তবুও ভদ্রতার খাতিরে অলকানন্দা প্রতিত্তোর করল,
“কমেছে।”

ব্যস্, স্টিফেনের শান্ত ভঙ্গিতে আবার প্রস্থান ঘটলো। মমতাময়ী সে নারী এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। তার ছেলে ঘর ছেড়ে বেরুতেই সে কিছুটা ব্যাখ্যার স্বরেই বললেন,
“স্টিফেন ওর বাবার মতন হয়েছে। তা মা, তুমি ঠিক আছো তো?”

অলকানন্দা মাথা নাড়াল। তন্মধ্যেই স্টিফেনের ডাক ভেসে আসতেই সে ব্যস্ত পায়ে ছুটে গেলো। অলকানন্দা সবটা চুপ করেই পর্যবেক্ষণ করল। কক্ষ খালি হতেই এতক্ষণের চুপ করে থাকা কর্মচারী মেয়েটা কথা বলল,
“আপনি তো নাকি পাশের গেরামের? আপনার নাকি জামাই মরছে মাস খানেক আগে? আপনারে সাহেব কী দেইখা বিয়া করলো? আর আপনিও বা কেমন! বেধবা মেয়েমানুষ হইয়াও বিয়া করলেন আবার?”

বাহিরে খুব দূরে কোথাও ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছে। কর্মচারীর কথা গুলো সেই বজ্রপাতের চেয়েও বোধহয় ভয়ঙ্কর শোনালো। কিন্তু অলকানন্দাও চুপ থাকার পাত্রী নয়। মুখটাকে বেশ কঠোর করে সে জবাব দিল,
“তোমাদের সাহেবকে নিশ্চয় ভালো করেই চেনো? যদি আমি তার কানে তুলি এই কথাগুলো তবে কী পরিণতি হবে জানো তো?”

অলকানন্দা মোক্ষম জায়গায় মোক্ষম কথাটা বলেছে যার ফলস্বরূপ মেয়েটা ভয়ে গুটিয়ে এলো। ভীতু ভীতু তার নড়বড়ে দৃষ্টি নিয়ে কম্পনরত স্বরে বেশ অনুনয় করে বলল,
“সাহেব বধূ, আমার ভুল মাফ কইরা দিবেন। আর কখনোই আমি আপনারে এগুলা বলমু না। সাহেবরে কিছু জানাবেন না। তাহলে আমারে প্রাণে মারতে তার এক মুহুর্তও লাগবে না।”

মেয়েটা কথাটা বলেই অলকানন্দার পায়ের কাছে এসে হা হুতাশ করতে লাগল। একটু আগে যে মেয়েটার চোখে ছিল তাচ্ছিল্য ঠিক কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে সেই মেয়েটার মুখেই ভয়ের প্রলেপ। স্টিফেন নামক মানুষটা কতটা ভয়ঙ্কর তা এই ঘটনা অনুভব করলেই বোঝা যায়।

অলকানন্দার মায়া হলো, কোমল কণ্ঠে বলল,
“সবাই ই বাঁচতে চায়। তুমি যেমন এখন বাঁচতে চাইছো ঠিক আমিও চেয়েছি আর সেজন্যই এই পথ। কখনো নিজের জায়গায় থেকে অন্যকে বিচার করো না। মানুষ কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে থাকতে পারে তা আন্দাজ না করেই কিছু বলা উচিত না। তুমি যাও।”

মেয়েটা শুকরিয়া আদায় করতে করতে রুমটা ত্যাগ করল। অলকানন্দার দৃষ্টি ভাবুক। সে যখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তখন স্টিফেনের মাকে একবারও দেখেনি, তবে উনি ছিলেন কোথায়? আর সেই বউটা? তার সাথে অস্বাভাবিক কাণ্ড করা বউটাও বা কে?

অলকানন্দার দৃষ্টি যায় নিজের পায়ের দিকে, ফোসকা পড়ে আছে ডান পায়ের তালুতে। দুধ আলতার থালাটা মাত্রাতিরিক্ত গরম ছিল যার ফলস্বরূপ এই দশা। বা’হাতের মাঝামাঝি অংশও কিছুটা চোট পেয়েছে বরণডালার আঘাতে। এত ব্যাথা সইতে না পেরে অবশেষে সে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। এখন অবশ্য তেমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না শরীরে। ব্যাথার স্থানে কী একটা যেন মালিশ করেছে, হয়তো সেজন্যই ব্যাথা লাগছে না।

অলকানন্দা বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়াল, পায়ে চাপ পড়াতে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব হলো তবে সে পাত্তা দিল না সেই ব্যাথা। ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে সে জানালার কোণ ঘেঁষে দাঁড়াল। বৃষ্টির ধারা অবিরতই রইলো। কোনো বিশ্রাম নেই তার। অলকানন্দা কোমল হাতটা বাড়িয়ে দিল জানালার বাহিরে। বড়ো বড়ো বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যেন নতুন এক আশ্রয় পেয়ে উন্মাদ হয়ে জমতে শুরু করল ওর হাতের মুঠোয়। মেয়েটা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই আঁধারে। তন্মধ্যেই আবার বজ্রপাত হলো, চারপাশে বিদ্যুৎ চমকালো খুব নিখুঁত ভাবে। পৃথিবীতে যেন ছুঁয়ে গেলো কোনো পরশ পাথরের খোদাই করা আলো। যে আলোয় পৃথিবী হয়ে ওঠেছিল উজ্জ্বল আর দীপ্তিময়। সেই আলোতেই অলকানন্দা দৃষ্টিগোচর হলো বাহিরের অবস্থানটা। যেখানে এই তিমিরাচ্ছন্ন প্রকৃতিতে বৃষ্টি বিলাস করছে একটা নারীর লতার মতন অঙ্গ। অলকানন্দা চিনতে ভুল হলো না নারীটিকে। যার জন্য তার পায়ের পাতায় এই অসহ্যকর ব্যাথা, নারীটি সে-ই। বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা নারীটির কোনো হুশ নেই। সে নিজের মতন আহ্লাদে আটখানা হয়ে ভিজছে। হৈ হৈ করছে। অলকানন্দাও নিবিড় ভাবে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। ঠিক মিনিট পেরুতেই মেয়েটা কী মনে করে যেন উপরে তাকাল। উপরে তাকাতেই অলকানন্দার চেহারা দৃষ্টিগোচর হতেই সে রেগে গেল। চারপাশ হাতড়ে কী যেন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে। আঁধারের মাঝে অলকানন্দা স্পষ্ট দেখতেও পাচ্ছে মেয়েটা ঠিক কী করছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিরাট একটা শব্দ হলো অলকানন্দার জানালায়। আকস্মিক এমন শব্দে ভীত হয়ে যায় অলকানন্দা। মেয়েটা পাথর ছুঁড়েছে।

অলকানন্দা ভীতু নয়ন জোড়া নিয়ে পিছনে যেতেই কারো শরীরের সাথে শক্ত-পোক্ত একটা ধাক্কা খেল। যার জন্য তার ভয়টা বাড়াবাড়ি রূপ নিল। সে ছিটকে দূরে সরে যেতে নিলেই ভরাট পুরুষ কণ্ঠ কানে বাজলো,
“কুল ডাউন। কী হয়েছে এখানে? এমন শব্দ হলো কিসের?”

প্রশ্নটা করেও দাঁড়িয়ে নেই স্টিফেন। পা চালিয়ে সে জানালা দিয়ে তাকাল। মুহূর্তেই কুল বলা মানুষটা নিজেই রণমুর্তি ধারণ করল। ভরাট কণ্ঠে চেঁচিয়ে ডাকল,
“দেবু, দেবু, কোথায় তুই? দেবু……”

হাঁক পারতে পারতেই স্টিফেন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। অলকানন্দা জানালা দিয়ে তাকাল। ততক্ষণে দেবু নামক লোকটাও চলে এসেছে মেয়েটার কাছে। আর কিছু সেকেন্ডের মাঝেই স্টিফেনও উপস্থিত হয় সেখানে। সেখানে পৌঁছেই সে বিশাল দানবীয় এক চড় বসায় দেবু নামক লোকটার গালে। কিছুটা ধমকা ধমকিও হয় যা বৃষ্টির ছাঁট পেরিয়ে অলকানন্দার কর্ণ অব্দি পৌঁছুতে পারল না। কিন্ত বৃষ্টির মাঝেই অলকানন্দা সেই মেয়েটার কেমন হিংস্রতা ভরা দৃষ্টি দেখতে পেল। যেন মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিবে তাকে সেই চোখ। অলকানন্দা জানালা ছেড়ে এসে বিছানায় বসল। বুকের মাঝে তার অস্বাভাবিক ঝর। এই দৃষ্টি তার বড্ড চেনা। বড্ড পরিচিত। কিন্তু এখানে সে এই পরিচিত দৃষ্টির খোঁজ নিতে পারবেনা। সে যে বড়ো গোলকধাঁধায় পরেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

_

রাত তখন মাঝামাঝি। হেমন্তের আকাশ বহু বৃষ্টির পর ক্লান্ত, গম্ভীর। চাঁদও অভিমানী মুখ ঢেকেছে মেঘমালাদের কালো বস্ত্রে। অলকানন্দা বসে দারুণ এক টেবিলের সামনে চেয়ার পেতে। উদ্দেশ্য- নবনীলের কাছে পত্র লিখবে। মনের মাধুরী মিশিয়ে সে পত্র খানা লিখল ঠিক। সবার শেষে এক বুক আশা নিয়ে নবনীলকে লিখল “পত্র দিও”।

চিঠি লিখা শেষ। কত এলোমেলো অনুভূতি লিখেছে সে দোয়াতের কালিতে। লিখতে লিখতে কখনো ভাগ্যের কোঠরতায় কেঁপেও ওঠেছে। কিন্তু চিঠিটা ভাঁজ করার আগেই কেউ একজন কী ভীষণ নিষ্ঠুরতায় টেনে নিল সে চিঠি। যেন দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে চাচ্ছে অলকানন্দার অনুভূতি। অলকানন্দা পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল স্টিফেন। লোকটার চোখ বরাবরের মতন প্রাণহীন নয় আজ কেমন ক্ষুব্ধ। কিছুটা টলছেও মানুষটা। জড়িয়ে আসা কণ্ঠে এলোমেলো ভাবে চিঠিটা পড়লো সে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে খুব বেশি অবগত ছিলো না বিধায় কত জায়গায় পড়তে পড়তে হোঁচট খেল। তবুও পড়লো। অতঃপর পড়া শেষ হতেই সে হো হো করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে কী নির্মম ভাবে দুমড়ে মুচড়ে ফেলল চিঠিটা। তারপর জানালার বাহিরে ছুঁড়ে মেরে ব্যঙ্গ করে বলল,
“তোমারে কেউ পত্র দিবে না, সানশাইন। নোবডি। তোমার চিঠির প্রাপক তার স্থানে নেই। কীভাবে চিঠি দিবে?”

অলকানন্দার চিত্ত অস্থির হয়ে এলো। নবনীল জায়গায় নেই মানে? তবে কী লোকটা নবনীলেরও কোনো ক্ষতি করে ফেলল! অলকানন্দার ভাবনার মাঝেই স্টিফেন অলকানন্দা খুব কাছে চলে এলো। খুব ব্যাক্তিগত ভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“লেটস্ গো, সানশাইন। মধুচন্দ্রিমা সেরে ফেলি।”

অলকানন্দা বাঁধা দিত চাইল কিন্তু এই সুঠাম দেহী মানুষটার কাছে তার শক্তি বড়োই নগন্য। অলকানন্দার চোখে অশ্রু এলো। এই যন্ত্রণার ছোঁয়া তার চেনা। এই কঠোর ছোঁয়া তার পরিচিত। তাকে সুদর্শন কিংবা স্টিফেন, কেউ-ই ভালোবেসে ছোঁয়নি। কেউ না। সে যেখানে গিয়েছে সেখানেই কেবল পুরুষের মুগ্ধতা, মায়া আর কাম হয়েছে। কারো ভালোবাসা হতে পারেনি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here