#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা
১৮.
চারদিকে বিভীষিকাময় রাত, আঁধার ভেদ করে ডাকছে কানাকুয়ো। থেমে থেমে হাঁকছে শেয়াল, নেকড়ের দল। মানুষরূপী এক ঝাঁক শেয়ালও চরিত্র ছেঁড়ার উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। কাঁদছে অলকানন্দা। শরীরের চামড়ায় ফুটে ওঠেছে খামচানোর চিহ্ন। জ্বলছে ভীষণ। কিন্তু বাহ্যিক জ্বলনের চেয়েও বেশি জ্বলছে অভ্যন্তরে। যে চরিত্র রক্ষা করার জন্য এত যুদ্ধ, এত হাহাকার – আজ সেই চরিত্র গড়াগড়ি খাচ্ছে ধূলোয়। কলঙ্কের ভার যে এত বেশি তা জানা ছিলো না ছোটো মেয়েটার।
চারপাশে মশাল জ্বলছে দাউ দাউ করে। মনে হচ্ছে অলকানন্দার মৃত চরিত্রের চিতা যেন পুড়ে হচ্ছে ছাঁই। গ্রামবাসীরা তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একজন গিয়েছেন বিহারিণী মহলে খবর পৌঁছাতে। অলকানন্দার চিত্ত বড়ো উৎকণ্ঠিত হলো। বাহিরের মানুষ তাকে অবিশ্বাস করছে সে মেনে নিবে কিন্তু যদি তার কাছের কেউ আঙ্গুল তুলে তার চরিত্রে, তবে বাঁচার উপায় যে নেই। গলায় কলসি বেঁধে ডুবে মরতে হবে তার। প্রায় মিনিট ত্রিশ পেরুতেই বিহারিণী মহলের প্রায় সকলেই উপস্থিত হলো। ফুলো ফুলো চোখ-মুখ তাদের। ঘুম থেকে ওঠেই বোধহয় ছুটে এসেছে। সুরবালা, লক্ষ্মী দেবী, নন্দন মশাই, কাকী শাশুড়ি, মনময়ূরী, পানকৌড়ি, প্রসাদ, ধ্রুবলাল, মনোহর, তরঙ্গিণীসহ দেহরক্ষীরাও ছুটে এসেছে। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাই দেখার জন্য মূলত ছুটে আসা। প্রথমে গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হলেও ধীরে ধীরে মানুষ যেন বাড়তেই থাকল। খোলা মাঠে উজাড় হলো অলকানন্দার বাকি সম্মানটুকুও।
অলকানন্দার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে তরঙ্গিণী এগিয়ে আসতে নিলেই থামিয়ে দিলেন গ্রামবাসীদের একজন,
“খবরদার, আপনাদের মহলের একজনও এই মেয়েকে ছুঁতে পারবেন না।”
তরঙ্গিণী কথা বলতে চাইলেও থামিয়ে দেওয়া হল তাকে। বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুরবালা দেবী। অলকানন্দা আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মানুষটার দিকে। হাউমাউ করে কেঁদে বলল,
“মা, আপনি তো আমায় চেনেন। আমি কী এমনটা করতে পারি বলুন? আপনি বলুন না ওদের আমাকে…..”
অলকানন্দা কথা শেষ করার আগেই সুরবালা দেবী চোখ ঘুরিয়ে নিলেন। তার চোখে কিসের একটা ছোঁয়া পেল অলকানন্দা। ঘৃণা নাকি তাচ্ছিল্য ঠিক ঠাহর করতে পারল না সে। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষের এমন দৃষ্টিই ছোটো অলকানন্দার সকল আশা ভরসার বাঁধ ভেঙে দিল। তবুও, ফাঁসির আসামীও তো শেষ চেষ্টা করে বাঁচার, অলকানন্দা তো ছোটো একটা কিশোরী মাত্র। সে প্রসাদের দিকে তাকাল। আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলল,
“আপনি তো অন্তত মানেন আমি এমন না।”
“মানতাম। তাহলে আপনার এখানে আসার কারণ কী?”
প্রসাদের প্রশ্নের বাণেই যেন সকল উত্তর ছিল। খুব গোপনে ঘৃণার দৃষ্টি ফেলতেও ছাড়ল না মানুষটা। অলকানন্দা ভেতর থেকে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে। আশপাশ হাতড়েও কূল পেল না যেন সে। কাকে সে সবটা বলবে! যারা তার পরম প্রিয় মানুষ তারাই যে বড্ড নিষ্ঠুরতায় মুখ ফিরিয়ে নিল। কাকে বলবে সে তার পবিত্রতার গল্প!
অলকানন্দার যখন কূল বিহীন সমুদ্রে ভরাডুবি অবস্থা ঠিক তখন মুখ খুলল ধ্রুবলাল, পানকৌড়ির স্বামী,
“বৌঠান, আপনি এমনটা করার মানুষ নন আমরা জানি। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি..”
“চুপ একদম, চুপ। এই মা গীর হয়ে খবরদারী করতে হবে না আপনার। ওর চরিত্র খারাপ তা আগেই বুঝে ছিলাম। আজ এমন ভরা গ্রামে আমাদের সকল সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিলো। বে শ্যা একটা।”
ধ্রুবলালকে থামিয়ে ঘৃণার বাণ ছুঁড়ে মারল কৌড়ি। ধ্রুবলাল বুঝানোর চেষ্টা করলেন,
“না কৌড়ি, যে মানুষটার সাথে থেকেছ, এতদিন তাকে নিশ্চয় একটু হলেও চিনো। উনি মোটেও এমন না।”
“তাই নাকি? ওর নিজের শাশুড়িও দেখুন চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে আর আপনি কিনা গুণগান করছেন এত কিছু দেখার পরও! নাকি আপনাকেও ও সুখ দিয়েছিল যার জন্য…… ”
এবার কথা শেষ করতে পারল না কৌড়ি। গতানুগতিক সকল ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে গ্রামবাসীর সামনে সশব্দে তার গালে চড় বসালো তার সরল সোজা স্বামী ধ্রুবলাল। কৌড়ি বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি কখনো ধ্রুবলাল তার গায়ে হাত তুলবে। অথচ এটা বাস্তবে ঘটে গিয়েছে। ধ্রুবলাল পাষাণের মতন চড় বসিয়েছে তার গালে। কৌড়ি তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল,
“আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন!”
“হ্যাঁ তুলেছি। এটা আরও আগে করা উচিৎ ছিল। তাহলে তুমি একটা নারীকে আর নিজের স্বামীকে এতটা অপমান করার সাহস পেতে না। নিজের চরিত্র আগে ঠিক করো তারপর নাহয় অন্যকে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে।”
কৌড়ির চোখ টলমল করে ওঠল। ভাবনাতীত ঘটনা গুলো বরাবরই মানতে আমাদের সময় লাগে। কৌড়ির ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো।
তন্মধ্যেই কোথা থেকে যেন অলকানন্দার বাবা নিতাই দাস ছুটে এলেন। সবাইকে উপেক্ষা করে মেয়েটার বামদিকে কোমড়ে দানবীয় এক লাথি মেরে বসলেন। আকস্মিক এমন আক্রমণে দিকশূন্য অলকানন্দা। আছড়ে পড়ল মাটির বুকে। নাক দিয়ে গলগল করে তার বেরিয়ে আসতে শুরু করল রক্ত। নিতাই দাস কেমন এক হিংস্রতায় মেয়েটার চুলের মুঠি টেনে ধরলেন। যেন পুরোনো আক্রোশ মেটাচ্ছে। চুলের মুঠি ধরে সে বার কয়েক মাটির মাঝে মেয়েটার কপাল বারি দিলেন। অলকানন্দা গগন কাঁপিয়ে হৃদয় বিদারক চিৎকার করে ওঠল। কিন্তু মায়া হলো না পাষণ্ড বাবার। সে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে বেধড়ক মারধর করতে লাগলেন। থেমে থেমে বলতে লাগলেন,
“তুই আমার মেয়ে হয়ে মান সম্মান খেলি। শেষমেশ কি-না বে শ্যা পাড়ায় আসলি! কীভাবে পারলি তুই, কীভাবে?”
ব্যাথায় চোখ-মুখে আঁধার দেখছে মেয়েটা। তবুও বাবার পা জড়িয়ে বলতে লাগল,
“বিশ্বাস করো, বাবা, আমি এমন না। তুমি তো তোমার মেয়েকে জানো তাই না? বাবা, ও বাবা, তুমি অন্তত বিশ্বাস করো আমায়। এমন ভাবে মেরো না গো বাবা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ও বাবা, তুমি তোমার নন্দাকে বিশ্বাস করো না?”
“না, করিনা। সর্বনাশী, কলঙ্কিনী।”
অলকানন্দা নামের শক্ত কঠোর মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদছে। সে কান্নার কী করুণ স্বর! খোদার দরজা অব্দি হয়তো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সে শব্দ অথচ মনুষ্য জাতির হৃদয় গলছে না। মেয়েটা বাবার পা ধরে আহাজারি করতে করতে বলল,
“বাবা, ও বাবা, যেই নন্দার হাত ধরে মেলা ঘুরেছ, যে নন্দাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছ, সেই নন্দাকে তুমি বিশ্বাস করবে না বাবা? ওরা তো আমার কেউ না কিন্তু তুমি তো আমার বাবা, তুমি আমার প্রতি এত নির্দয় হইও না বাবা। তোমার নন্দা এত নিচু হতে পারে বলো? যেই নন্দাকে একদিন মা বলে ডেকেছ তাকে এত নিচু ভাবতে পারছ তুমি, বাবা? এমন পাষাণ বুঝি বাবারা হয়?”
নিতাই দাসের পাষাণ মন কী একটু গললো? হয়তো গললো, তাইতো আরেকটা লাথি দিতে গিয়েও থেমে গেলেন, পিছিয়ে এলেন দু’পা। তার মনুষ্যত্বহীন স্বত্তাটা বোধহয় একটু মানুষ হতে চাইল।
অলকানন্দার নাক-মুখ দিয়ে গল গল করে বেরুচ্ছে রক্ত। নির্বাক প্রতিটি মানুষ। গ্রামবাসী হৈহল্লা করে সুরবালাকে বললেন,
“এর বিচার কী হবে, জমিদার গিন্নি? আপনার ঘরের বধূর এহেন কর্মের বিচার কী হবে?”
সুরবালা দেবী যেন হুট করে কঠিন হয়ে গেলেন। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বললেন,
”আপনারা কি চান?”
“ওর বিচার আমরা করব।”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুরবালা দেবী জবাব দিলেন না। গ্রামবাসী যেন নিশ্চুপতাকেই সম্মতি ধরে নিলেন। যখন পুরো জনস্রোত এক দিকে ধাবিত হচ্ছিল, স্রোতের বিপরীতে একজন কথা বললেন। অলকানন্দার আদর্শ শিক্ষক মুমিনুল ইসলাম,
“কিসের বিচার করবে তোমরা? আগে ওর কথাটা তো শোনো।”
গ্রামের স্বনামধন্য আদর্শ শিক্ষকের কথাও আজ বড্ড ফিঁকে হলো। একজন যুবক বয়সের ছেলে তেড়ে এসে বলল,
“কোনো কথা হবে না আজ। কেউ যদি ওর পক্ষে কথা বলে তবে তাকেও পিটিয়ে মারা হবে।”
যখন সকলে এক স্রোতে গা ভাসাচ্ছে তখন সকলকে অবাক করে দিয়ে মনোহরের পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ওর বিচার আমরা করব। আমাদের বাড়ির বউ, আমরা বুঝে নিব।”
অলকানন্দা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মনোহরের পানে। এটাই তো চেয়েছিল মানুষটা আর আজ ভালো সাজছে! কৃষ্ণা তাকে ঠকালো! এমন বাজে ভাবে!
মনোহরের কথা শুনলো না কেউ। গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলে ওঠল,
“না না, এই বিচার আমরা করব। নাহয় আমাদের মেয়ে বউরাও খারাপ কাজ করতে দু-বার ভাববে না।”
সুরবালা দেবীও মনোহরের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের হাতে ছেড়ে দেও সবটা।”
“কিন্তু বড়োমা, আপনি তো জানেন বৌঠান….”
“সব জানা সঠিক হয়না, মনোহর।”
নিজের শাশুড়ির এমন উক্তিতে আরেকবার আশাহত হলো অলকানন্দা। কীভাবে মানুষ টা এত পাষাণ হলো!
মুমিনুল ইসলাম আবার বলল,
“ওর কথা না শুনে কোনো বিচার হবে না।”
কেউ ধরল না বৃদ্ধ লোকটার কথা। বরং যুবক বয়সের ছেলেটা কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“বিচার তো হবেই, কী করবেন আপনি?”
মুমিনুল অবাক দৃষ্টিতে চাইল ছেলেটার পানে। এই ছেলেটা তার শিক্ষার্থী ছিল একসময় অথচ সে নিজের শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে একবার ভাবলও না! মুমিনুল ইসলামের আদর্শ জীবনে গভীর ভাবে যেন কালো দাগ কেটে গেল এই ঘটনা। সেও জেদি হয়ে বলল,
“এই বিচার হবে না, কী করবে দেখি।”
“তবে আপনাকেও মার খেতে হবে।”
ছেলেটার কণ্ঠে তেজ। মুমিনুল ইসলাম নিজের শিক্ষকতা পেশায় এমন কলঙ্ক মানতে না পেরে বলল,
“ঠিকাছে, আমিও দেখি কেমন মারো।”
কথাটা শেষ করেই সে যেই না অলকানন্দাকে মাটি থেকে ওঠাতে নিবে তার পিঠে বিকট শব্দ করে কেউ আঘাত করল। বৃদ্ধ মুমিনুল মুখ থুবড়ে পড়ল মাটিতে। ঝাপসা চোখে দেখল তার হাতের ছায়ায় মানুষ হওয়া অমানুষটাই তাকে আঘাত করেছে। মুমিনুলের জেদ তখন আর দৃঢ় হল। সে আবার ওঠে অলকানন্দাকে ধরতে নিলে তার শরীরে আবার আঘাত করা হলো। এবার একটা আঘাতে থামেনি ছেলে গুলো। পর পর কয়েকটা আঘাত করলো বৃদ্ধার শরীরে। এতদিনের নিজের গড়া আদর্শে এই বেত্রাঘাত মানতে পারলেন না মুমিনুল ইসলাম। ঝাপসা চোখে চেয়ে মৃদু স্বরে বললেন,
“আমি ব্যর্থ।”
আঘাত থামাতে গিয়ে অলকানন্দাও বিরাট বারি খেল মাথায়। মুহূর্তেই ঘটে গেল একটা রক্তারক্তি কাণ্ড। বিধ্বস্ত অলকানন্দার হাত ধরে টেনে নদীর পাড়ে নিয়ে যেতে লাগল সকলে। বৃদ্ধ মুমিনুল পড়ে রইল মাটিতে। তার চক্ষু বেয়ে গড়িয়ে পড়ল মুক্তোর মতন অশ্রু। যে অশ্রুরা ব্যর্থ, ভাষাহীন। অলকানন্দা নিজের বিধ্বস্ত শরীর নিয়েও বারংবার চিৎকার করতে করতে বলল,
“মাস্টারমশাইকে কেউ বাঁচাও, মানুষটা মরে যাবে। বাঁচাও কেউ তাকে।”
_
ভোর হতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে। একটু ক্ষত-বিক্ষত ভোর। অলকানন্দাকে বেঁধে রাখা হয়েছে নদীর কিনারায় বহু পুরানো বটগাছে। অলকানন্দার ভয়ানক পাপের শাস্তি ঠিক করা হয়েছে মৃত্যু দণ্ড। জীবিত অবস্থায় তার শরীরে আগুন জ্বালানো হবে, যেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত এইখানেই হয়ে যায়। খুব অবাক করা বিষয় হলো, বিহারিণী মহলের কেউ এখানে নেই। তাদের এখানেই আসার কথা কিন্তু কেউ এলো না। কেন এলো না এটা সকলের অজানা। হয়তো নিজেদের আপন মানুষের এমন শাস্তি তারা মানতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কী অলকানন্দা তাদের আপন!
নিতাই দাস দূরে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ। অলকানন্দার শরীরে শক্তি নেই। মৃত্যু সন্নিকটে জেনেও সে আর আহাজারি করছে না। আপন মানুষের প্রবল ঘৃণা যে মৃত্যুর থেকেও কষ্টকর ছিল, তা সে উপলব্ধি করে ফেলেছে। মৃত্যু যেখানে অনিবার্য সেখানে বাঁচতে চাওয়াটাও বৃথা। তাই আর কোনো রকমের বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছে সে প্রকাশ করবে না।
ভোরের আলো ফুটতেই সকলে তৈরী হয়ে গেলো। ভীড় বাড়ল দ্বিগুণ। যে মেয়েটার হাতে পুরো গ্রামবাসী ছিল, যাদের ভালো করার জন্য মেয়েটা ইংরেজি সাহেবদের সাথে অব্দি ঝামেলা করেছে অথচ সেই গ্রামবাসী তার মৃত্যু দেখতে কেমন উন্মুখ। আসলে এই ঘটনা একটা কারণ মাত্র, গ্রামবাসীদের মতের বিপরীতে গেলে কী হতে পারে তার শাস্তি, সেটাই বোধহয় আসল কারণ। অলকানন্দা হাসল। অদ্ভুত ভাবে মিস্টার স্টিফেনের সেই কথাটা তার কানে বাজছে, ‘রাজনীতিতে সত্যিই সে বড্ড কাচা’ নাহয় এমন করে পুড়তে হতো!
সেই কাঙ্খিত সময় চলে এলো। মৃদু মন্দ বাতাসে মশালের আগুন দুলছে, যে আগুন কিছুক্ষণের মাঝে পুড়িয়ে দিবে বাঁচতে চাওয়া একটি মেয়ের অস্তিত্ব। অলকানন্দা চোখ বন্ধ করল। চোখের উপর ভেসে এলো নবনীলের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। সে বিড়বিড় করে বলল,
“আমাদের আর দেখা হবে না, নবনীল। আপনার নির্বাসিত অলকানন্দার গল্প এখানেই শেষ।”
#চলবে
[যেহেতু গল্প আগানো শুরু হয়েছে তাই গঠনমূলক মন্তব্যের আশাবাদী আমি।]